২য় অধ্যায় : রাসূলুল্লাহ [ﷺ] এর দেহ মুবারক কিসের তৈরি?

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

আমরা  প্রথম সৃষ্টিতে প্রমাণ পেলাম – আল্লাহর যাত হতে,  অর্থাৎ যাতি নূরের জ্যোতি হতে রাসূল  [ﷺ] পয়দা হয়েছেন। সাহাবী জাবের (رضي الله عنه) কর্তৃক বর্ণিত মারফু হাদীস- অর্থাৎ স্বয়ং নবী করিম [ﷺ]-এঁর জবানে বর্ণিত হাদিস দ্বারা হুযূর [ﷺ] নূরের সৃষ্টি বলে প্রমাণিত হয়েছে। মাটি, পানি আগুন, বায়ু এই উপাদান চতুষ্টয় যখন   পয়দাই হয়নি তখন আমাদের প্রিয় নবী  [ﷺ] পয়দা হয়েছেন। সুতরাং তিনি যে মাটির সৃষ্টি নন এবং মাটি সৃষ্টির পূর্বেই পয়দা  -একথা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হলো।

কিন্তু আলমে নাছুত – অর্থাৎ পৃথিবীতে আত্মপ্রকাশের সময় যে বশরী সূরত বা মানব শরীর ধারণ করেছেন, তা কিসের তৈরী- এ নিয়ে বিভিন্ন মতামত লক্ষ্য করা যায়। যেমন- তাবেয়ী হযরত কা’ব আহবার (رحمة الله عليه) এবং সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) কর্তৃক বর্ণিত কথিত দুটি হাদীস বা রেওয়ায়েতে দেখা  যায় যে,   নবী  করিম [ﷺ]-এঁর  দেহ মোবারক মদিনা শরীফের রওযা মোবারকের খামিরা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।

এ দু’খানা রেওয়ায়েতকে পুঁজি করে একদল ওলামা বলেন- হুযূর  [ﷺ] মাটির তৈরী। বাতিলপন্থী  কোন কোন আলেম আবার ঠাট্টা করে বলেন- তিনি তো সাদা মাটির তৈরী (নাউযুবিল্লাহ)। মাওলানা মুহাম্মদ ফজলুল করিম রচিত ‘তাওহীদ  রিসালাত ও নূরে মুহাম্মদী সৃষ্টি রহস্য’ নামক বইখানা দ্রষ্টব্য। উক্ত বইয়ে আল্লাহকেও নূর বলে অস্বীকার করা হয়েছে। (নাউযুবিল্লাহ)।

আবার সহীহ রেওয়ায়েতে দেখা   যায় যে, হুযূর [ﷺ] নূর  হয়েই আদম (عليه  السلام)-এঁর  সাথে জগতে তশরীফ এনেছেন এবং আল্লাহর কুদরতে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঐ নূর এক দেহ থেকে অন্য দেহে স্থানান্তরিত হতে হতে অবশেষে হযরত আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه)-এঁর পৃষ্ঠ  হতে ঐ পবিত্র  নূর সরাসরি হযরত আমেনা (رضي  الله عنها)-এঁর গর্ভে স্থান লাভ করেছেন এবং যথাসময়ে নূরের দেহ ধারণ করে মানব আকৃতি নিয়ে দুনিয়াতে তাশরীফ এনেছেন।

পর্যালোচনাঃ উক্ত দুই মতবাদের মধ্যে কোনটি সঠিক তা  যাচাই-বাছাই করলে দেখা যাবে যে,  ইলমে হাদীসের নীতিমালার আলোকে দ্বিতীয় মতবাদটি  সঠিক ও নির্ভরযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়। তাই প্রথমে মাটির রেওয়ায়েত দুটি উসূলে হাদীসের নীতিমালার আলোকে পর্যালোচনা করা দরকার। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي  الله  عنه) বর্ণিত কথিত হাদীসখানা নিন্মরূপঃ

عن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه-قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما من مولود إلا وفي سرته من تربته التي خلق منها حتى يدفن فيها وانا وابوبكر وعمر خلقنا من تربة واحدة وفيها ندفن. (تفسير مظهري وخطيب بغدادي المتفق والمفترق)

“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)-এঁর রেওয়ায়েতে রাসূলাল্লাহ [ﷺ] বলেন- ‘নবজাতক প্রত্যেক শিশুর নাভিতে মাটির একটি অংশ রাখা হয়। সেখানেই সে সমাধিস্থ  হয়।’ তিনি আরো বলেন- “আমি, আবু বকর ও ওমর একই মাটি হতে সৃজিত হয়েছি এবং  সেখানেই সমাধিস্থ হবো।”  (তাফসীরে মাযহাবী  ও খতীবে বাগদাদীর ‘আল মুত্তাফিক ওয়াল মুফতারিক)

উক্ত হাদিসের  বিশুদ্ধতা সম্পর্কে মোহাদ্দিসগণের মতামতঃ
খতীবে বাগদাদী (رحمة الله عليه) এই রেওয়ায়েতটি তাঁর গ্রন্থে বর্ণনা করে বলেন- ‘হাদিসটি গরীব।’ ‘গরীব হাদিস’ বলা হয় প্রতি যুগে মাত্র একজন বর্ণনাকারীই উক্ত রেওয়ায়েতটি বর্ণনা  করেছেন- দ্বিতীয় কোন বর্ণনাকারী নেই। গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে গরীব হাদীস দ্বারা কোন আইনী বিষয় প্রতিষ্ঠা করা যায় না। [উসূলে হাদীস দ্রষ্টব্য।]

হাদীস শাস্ত্র বিশারদ আল্লামা ইবনে জওযী বলেন- ‘এই হাদিসটি মওযু ও বানোয়াট। এই দুটি মতামত স্বয়ং তাফসীরে মারেফুল কোরআন-এর  বাংলা সংক্ষিপ্ত সংস্করণ, সৌদি আরবে ছাপা, পৃষ্ঠা- ৮৫৬ এ উল্লেখ করা হয়েছে। রেওয়ায়েত হিসাবে প্রত্যেক লেখকের কিতাবেই এটি পাওয়া যায়। কিন্তু এর নির্ভরযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করেন হাদীসের ‘জোরাহ ও তাদীল’ বিষয়ক  বিশেষজ্ঞগণ।  ইবনে জওযী’র মতামতের গুরুত্ব প্রত্যেক হাদীস বিশারদের নিকটই স্বীকৃত।

সুতরাং একটি গরীব, জাল,  ভিত্তিহীন ও বানোয়াট রেওয়ায়েতের উপর নির্ভর  করে  রাসূলে পাক [ﷺ]-এঁর দেহ মোবারককে মাটির দেহ বলা অসঙ্গত। জাল হাদীস তৈরীতে রাফেযী ও বাতিল ফেরকাগুলি ঐ যুগে তৎপর ছিল। তারা সাহাবী ও তাবেয়ীগণের নাম ব্যবহার করে ভিত্তিহীন হাদীস তৈরী করতো।

কা’ব আহবারের রেওয়ায়েত বিশ্লেষণঃ
عن كعب الاحبار قال لما اراد  الله تعالى ان يخلق محمدا صلى الله عليه  وسلم امر جبريل ان يأتيه بالطينة التي هى قلب الارض وبهاؤها ونورها قال فهبط جبريل في ملائكة الفردوس وملائكة الرقيع الاعلى. فقبض قبضة رسول الله صلى الله عليه وسلم من موضع قبره الشريف وهي بيضاء منبرة فعجنت بماء التسنيم في معين انهار الجنة حتى صارت كالدرة البيضاء لها شعاع عظيم ثم طافت بها الملائكة حول العرش والكرسي  والكرسي وفي السموات والارض والجبال والبحار. فعرفت الملائكة وجميع الخلق سيدنا محمد وفضله قبل ان تعرف آدم عليه السلام (المواهب اللدنية)

অর্থঃ হযরত কা’ব আহবার (তাবেয়ী) বলেন, “যখন আল্লাহ  পাক   হযরত মুহাম্মদ  মোস্তফা [ﷺ]-কে (দেহকে) সৃষ্টি করার ইচ্ছা করলেন।  তখন তিনি জিব্রাইল (عليه السلام) কে এমন একটি খামিরা নিয়ে  আসার জন্য নির্দেশ  করলেন- যা ছিল পৃথিবীর “কলব, আলো ও নূর” (মাটি নয়)। এই নির্দেশ পেয়ে জিব্রাইল  (عليه السلام) জান্নাতুল   ফেরদাউস এবং সর্বোচ্চ আসমানের ফেরেশতাদের নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ  করলেন অতঃপর রাসূলে পাকের রওযা শরীফের স্থান থেকে এক মুষ্টি খামিরা নিয়ে নিলেন। তা ছিল সাদা আলোময় নূর। পরে উক্ত খামিরাকে   বেহেশতে প্রবাহিত নহরসমূহের মধ্যে ‘তাছনীম’ নামক নহরের পানি দিয়ে গোলানোর ফলে সেটি এমন একটি শুভ্র মুক্তার আকার ধারণ করলো, যার মধ্যে ছিল বিরাট আলোশিখা।  অতঃপর ফেরেশতারা প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে উক্ত মুক্তা আকৃতির আলোময় খামিরা  নিয়ে আরশ-কুরছি, আসমান-জমিন, পাহাড়-পর্বত ও সাগর-মহাসাগরের চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করলেন। এভাবে ফেরেশতাকূল ও অন্যান্য সকল মাখলুক   হযরত আদম (عليه السلام)-এঁর পরিচয় পাওয়ার পূর্বেই আমাদের সর্দার ও  মুনিব  হযরত  মুহাম্মদ  মোস্তফা  [ﷺ]-এঁর ফযীলত সম্পর্কে পরিচিতি লাভ করলো। (মাওয়াহেবে লাদুনিয়া)

হাদীসখানার পর্যালোচনাঃ
উপরোক্ত কা’ব  আহবার  (رحمة الله عليه)-এর রেওয়ায়েতখানার বিচার বিশ্লেষণ করলে  নীচের জ্ঞাতব্য বিষয়গুলো বের হয়ে আসে। যথাঃ-

(১) কা’ব আহবার (رحمة الله عليه) পূর্বে একজন বড় ইহুদী  পন্ডিত    ছিলেন।   রাসূল [ﷺ]-এঁর যুগে তিনি মুসলমান হন নি। সুতরাং সাহাবী নন। তিনি হযরত ওমর (رضي الله عنه)-এঁর খেলাফতকালে মুসলমান হয়ে তাবেয়ীনদের মধ্যে গণ্য হন। সাহাবী’র বর্ণিত হাদীস রাসূলের জবান থেকে শ্রুত হলে তাকে মারফু মুত্তাসিল বলা হয়। আর রাসূলের সুত্র  উল্লেখ না থাকলে সাহাবী’র বর্ণিত হাদিসকে মাওকুফ বলা হয়। তাবেয়ী’র বর্ণিত হাদীস, যার মধ্যে সাহাবী ও রাসূলের সূত্র উল্লেখ নেই, তাকে বলা হয় মাকতু। উক্ত হাদীসখানা তাঁর নিজস্ব ভাষ্য। সাহাবী বা রাসূল বর্ণিত হাদীস নয়।

হাদীসের প্রত্যেক শিক্ষার্থীই এই সুত্র ভালভাবে জানেন যে, তাবেয়ী’র  মাকতু হাদীস যদি রাসূলের বর্ণিত মারফু হাদীসের সাথে গরমিল বা বিপরীত হয়, তাহলে রাসূলের বর্ণিত মারফু হাদীসই গ্রহণযোগ্য হবে। কা’ব আহবারের খামিরার হাদীসখানা তাঁর  নিজস্ব ভাষ্য এবং তৃতীয়  পর্যায়ের। পূর্বে হযরত জাবের বর্ণিত নূরের হাদীসখানা ১ম পর্যায়ের। গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে ১ম  পর্যায়ের হাদীসই অগ্রগণ্য। সুতরাং উসূলের বিচারে কা’ব আহবারের হাদীসখানা দূর্বল ও মুরসাল এবং সহীহ সনদেরও খেলাফ। সোজা  কথায়  – তাবেয়ী’র বর্ণিত ‘মাকতু হাদীস’ রাসূলর বর্ণিত ‘মারফু হাদীস’ এর সমকক্ষ হতে পারে না।

(২) আল্লামা যারকানী  বলেন- কা’ব আহবার পূর্বে ইহুদী পন্ডিত ছিলেন। সম্ভবতঃ তিনি পূর্ববর্তী কোন গ্রন্থে ইসরাইলী বা ইহুদী বর্ণনার মাধ্যমে এই তথ্য  পেয়ে থাকবেন। এই সম্ভাবনার কারণে ইসরাইলী বা ইহুদী বর্ণনা আমাদের শরীয়তে গ্রহণযোগ্য হবে না – যদি তা অন্য হাদীসের বিপরীত হয়। কা’ব আহবারের বর্ণিত হাদীসটি হযরত জাবেরের হাদীসের পরিপন্থী। তাই এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

(৩) তদুপরি “ত্বিনাত” (طينة) শব্দটির অর্থ মাটি নয় – বরং খামিরা। এই খামিরার ব্যাখ্যা করা হয়েছে قلب الارض بهاء الارض نور الارض দ্বারা  অর্থাৎ- উক্ত খামিরা ছিল পৃথিবীর ক্বলব, আলো ও নূর – তথা নূরে মুহাম্মদী [ﷺ] (যারকানী)। সুতরাং জিব্রাইলের সংগৃহীত  খামিরাটি মাটি ছিল না, বরং রওযা’র  মাটিতে রক্ষিত নূরে  মুহাম্মদীর খামিরা (যারকানী)। খামিরা সূরতের এই নূরে মুহাম্মদীকেই পরে বেহেশতেরর ‘তাছনীম’ ঝরনার  পানি দিয়ে গুলিয়ে এটাকে আরো অণু-পরমাণুতে পরিণত করা হয়েছিল। যেমন পানি হতে বিদ্যুৎ সৃষ্টি হয়, তাই বলে বিদ্যুৎকে পানি বলা  যাবে না।  নবী  করিম [ﷺ]-এঁর  দেহ মোবারক ছিল  সৃষ্টিজগতের মধ্যে সবচেয়ে সূক্ষ্মতম। এ মর্মে একখানা হাদীস ‘মিলাদে মুহাম্মদী’ ও হাক্বীকতে আহমদী’ নামক বাংলা গ্রন্থে উল্লেখ আছে। বইখানার লেখক ফুরফুরার খলিফা মেদিনীপুরের মরহুম মাওলানা বাশারাত আলী সাহেব।

হাদীসখানা হচ্ছেঃ-
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم  نحن معاشر الانبياء. أجسادنا كأجساد الملائكة

অর্থঃ “আমরা নবীগণের শরীর হলো ফিরিশতাদের শরীরের মত নূরানী ও অতিসূক্ষ্ম।”

তাইতো নবী করিম [ﷺ] সূক্ষ্মতম শরীর  ধারণ পূর্বক আকাশ ও  ফেরেশতা জগত এমনকি আলমে আমর তথা আরশ-কুরছি ভেদ করে নিরাকারের দরবারে কাবা কাওছাইনে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছিলেন। মাটির দেহ ভারী এবং তা লক্ষ্যভেদী নয়। মাটির শরীর হলে ভস্ম হয়ে যেত।

মোদ্দা কথা উপরের দু’খানা হাদীস পর্যালোচনা করলে ইবনে মাসউদ (رضي  الله عنه)  বর্ণিত প্রথম হাদীসখানা জাল এবং  কা’ব আহবারের ভাষ্যটি ইসরাইলী ও ইহুদী সুত্রে প্রাপ্ত যা সরাসরি হাদিসে  মারফু’র  খেলাফ। তদুপরি- কা’ব আহবারের  হাদীসখানায় বিভিন্ন তাবিল বা ব্যাখ্যা করার অবকাশ রয়েছে। এটা মোহ্‌কাম বা সংবিধিববদ্ধ নয়। সুতরাং হযরত জাবের (رضي  الله عنه)-এর মারফু হাদীস ত্যাগ করে কাবে আহবারের বর্ণিত মাকতু রেওয়াত গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আবার নূর  ও মাটির সমন্বিত রূপও বলা যাবে না। যেমন বলেছেন অনেক জ্ঞানপাপী মুফতী। হাদীসের বিশ্লেষণ  না জানার কারণেই তারা এরূপ ফতোয়া দিয়েছেন।  কা’ব  আহবার বর্ণিত খামিরাটি ছিল নূরে মুহাম্মদীর ঐ অংশ- যা  দ্বারা দুনিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ঐ অংশই রওজা  মোবারকের স্থানে রক্ষিত ছিল-(যারকানী দেখুন)।

নুরের দেহ মোবারকঃ ১০টি দলীল
===================
এবার আমরা নূরের দেহের পক্ষের কিছু রেওয়ায়াত পেশ করে  প্রমাণ   করবো-  নবী করিম [ﷺ]-এঁর দেহ মোবারকও  নূরের তৈরী ছিল। যথাঃ-

(১) যারকানী শরীফ ৪র্থ  খন্ড ২২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছেঃ
لَمْ يَكُنْ لَهٗ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ظِلُّ فِى شَمْسٍ وَلاَ قَمَرٍ لِاَنَّهٗ كَانَ نُوْرًا

অর্থঃ- “সূর্য চন্দ্রের আলোতে  নবী  করিম  [ﷺ]-এঁর দেহ মোবারকের  ছায়া পড়তো না। কেননা, তিনি ছিলেন আপাদমস্তক নূর।” (যারকানী)

(২) ইমাম কাযী  আয়ায  (رحمة الله عليه) শিফা শরীফের ১ম খন্ড ২৪২ পৃষ্ঠায় লিখেনঃ
وَمَا ذُكِرَمِنْ اَنَّهٗ كَنَ لاَ ظِلَّ لِشَخْصِهٖ فِى شَمْسٍ وَلاَ قَمَرٍ لِاَنَّهٗ كَانَ نُوْرًا

অর্থঃ- নূরের দলীল হিসেবে  ছায়াহীন দেহের যে রেওয়ায়াত পেশ করা হয়, তা হচ্ছে- “দিনের সূর্যের আলো কিংবা রাতের চাঁদের আলো- কোনটিতেই হুযুর [ﷺ]-এঁর  দেহ মোবারকের ছায়া পড়তো না। কারণ তিনি ছিলেন আপাদমস্তক নূর।” (শিফা শরীফ)

(৩) আশ্রাফ আলী থানবী সাহেব তার شُكْرُ النِّعْمَةِ بِذِكْرِرَحْمَةِ الرَّحْمَة গ্রন্থের ৩৯ পৃষ্ঠায় স্বীকার করেছেন:-
يه بات مشهور هے كه همارے حضور صلى الله عليه وسلم  كے جسم كا سايه  نهين تها (اس لۓكے) همارے حضور صلى الله عليه  وسلم سرتاپا نور هى نور تہے

অর্থঃ- “একথা সর্বজন স্বীকৃত ও প্রসিদ্ধ যে, আমাদের হুযুর [ﷺ]-এঁর দেহের ছায়া ছিল না। কেননা আমাদের হুযুর  [ﷺ]-এঁর মাথা মোবারক হতে পা মোবারক পর্যন্ত শুধু নূর আর নূর ছিলেন।” (শোক্‌রে নে’মত)

(৪)  ইমাম ইবনে হাজর হায়তামী (رحمة الله عليه) ’আন-নে’মাতুল কোবরা’  গ্রন্থের ৪১ পৃষ্ঠায় হাদীস লিখেনঃ
عن عائشة رضي الله عنها انها قالت كنت اخيط في السحر ثوبا لرسول الله صلى الله عليه وسلم فانطفا المصباح وسقطت الابرة من يدي فدخل على رسول الله صلى الله عليه وسلم فأضاء البيت من نور وجهه فوجدت الابرة.

অর্থঃ- হযরত আয়েশা (رضي الله عنها) হতে বর্ণিত- “তিনি বলেন, আমি রাত্রে বাতির আলোতে বসে নবী করিম [ﷺ]-এঁর কাপড় মোবারক সেলাই করছিলাম।  এমন সময় প্রদীপটি (কোন কারণে) নিভে গেল এবং   আমি সুঁচটি হারিয়ে ফেললাম।  এর  পরপরই  নবী  করিম  [ﷺ] অন্ধকারে আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। তাঁর চেহারা মোবারকের নূরের জ্যোতিতে আমার অন্ধকার ঘর আলোময় হয়ে গেল এবং আমি (ঐ আলোতেই) আমার হারানো সুঁইটি খুঁজে পেলাম।”

সুবহানাল্লাহ! মা আয়েশা (رضي الله عنها)  বলেন নূরের চেহারা- আর   তারা বলে মাটির চেহারা। নাউযুবিল্লাহ!

(৫) মাওলানা আবদুল আউয়াল জৌনপুরী সাহেব তাঁর عُمْدَةُ النُّقُوْل গ্রন্থে লিখেছেনঃ-
والذي يدل على أنه كان نورا في بطن أمه ايضا ما روى زكريا يحى ابن عائذ  أنه بقي في بطن أمه تسعة أشهر فلا تشكو وجعا ولا مغضا ولا ريحا.

অর্থঃ-  “নবী করিম [ﷺ] মায়ের গর্ভেই যে নূর ছিলেন-এর দলীল  হচ্ছে যাকারিয়ার বর্ণিত হাদীস”- নবী করিম [ﷺ] নয় মাস মাতৃগর্ভে ছিলেন, এ সময়ে বিবি আমেনা (رضي الله عنها) কোন ব্যাথা বেদনা অনুভব করেননি বা বায়ু আক্রান্ত হননি এবং গর্ভবতী অন্যান্য মহিলাদের মত কোন  আলামতও  তাঁর  ছিলনা।  হুযুর  [ﷺ]-এঁর দেহ যে মাতৃগর্ভে নূর ছিল, এটাই তার প্রমান।

(৬) মিশকাত শরীফের  হাদিসে   নবী করিম [ﷺ] এরশাদ করছেনঃ-
وَاَنَا رُؤْيَا اُمِّي اَلَّتِيْ رَاْتُ اَنَّه خَرَجَ نُوْرٌمِّنْ بَطْنِهَا وَاَضَائَتْ لَهَا قُصُوْرُ الشَّام

অর্থঃ-“আমার জন্মের প্রাক্কালে তন্দ্রাবস্থায় আম্মাজান দেখেছিলেন-  একটি নূর তাঁর গর্ভ হতে বের হয়ে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ পর্যন্ত আলোকিত করেছে। আমি আমার মায়ের দেখা সেই নূর।” (মিশকাত শরীফ)

(৭) ইমামে আহ্‌লে সুন্নাত  শাহ আহমাদ রেযা খান বেরলভী (رحمة الله عليه) হাদায়েকে বখ্‌শিশ গ্রন্থের ২য় খন্ড ৭ পৃষ্ঠায় ছন্দে লিখেনঃ
سايه كا سايه نه هوتا هے نه سايه نوركا توهے سايه نور كا هر عضو ٹکڈا نوركا

অর্থঃ-“হে প্রিয় রাসুল! আপনিতো  আল্লাহর নূরের প্রতিচ্ছবি বা ছায়া। আপনার প্রতিটি অঙ্গই এক একটি নূরের টুক্‌রা। নূরের যেমন ছায়া হয়না, তদ্রূপ ছায়ারও প্রতিচ্ছায়া হয়না। কাজেই আপনারও প্রতিচ্ছায়া নেই, কেননা আপনি নূর এবং আল্লাহর নূরের ছায়া।”

(৮) মাকতুবাতে ইমামে রাব্বানী ৩য় জিলদ, মাকতুব নং ১০০ তে হযরত মোজাদ্দেদে আলফেসানী (رحمة الله  عليه) লিখেছেন- “হযরত  রাসুলে করিম [ﷺ]-এঁর সৃষ্টি কোন মানুষের মত নয়। বরং নশ্বর জগতের কোন বস্তুই হযরত নবী করিম [ﷺ]-এঁর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কারণ, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে স্বীয়  নূর দ্বারা সৃষ্টি করছেন।”

(৯) আশ্রাফ আলী থানবী তার নশরুতত্বীব গ্রন্থের ৫ম পৃষ্টায় একটি হাদীস উল্লেখ করেহচেন- “হে জাবের! আল্লাহ তায়ালা আপন নূরের ফয়েয বা জ্যোতি হতে তোমার নবীর  নূর সৃষ্টি করেছেন।” (নশরুতত্বীব ৫ পৃষ্ঠা)

(১০) তাফসীরে সাভী, সূরা মায়েদা, ১৫ নং আয়াত قَدْ جَائَكُمْ مِّنَ اللهِ  نُوْرٌ এর ব্যাখ্যায় লিখেছেনঃ- “আল্লাহপাক তাঁকে নূর বলে আখ্যায়িত করার কারণ হচ্ছে- তিনি সকল দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান নূর সমূহের মূল উৎস।”

এছাড়াও দেহ মোবারকের প্রতিটি অঙ্গ নূর হওয়ার বহু দলীল বিভিন্ন কিতাবে উল্লেখ আছে। সুতরাং সৃষ্টির আদিতেও তিনি  নূর, মায়ের গর্ভেও নূর এবং  দুনিয়াতেও দেহধারী নূর- এতে কোন সন্দেহ নেই। সে নূরকে বাশারী সুরতে  ও কভারে আবৃত করে রাখা হয়েছে মাত্র। যেমন তাঁরের কাভারে বিদ্যুতকে আবৃত করে রাখা হয়। এতসব  প্রমাণ সত্ত্বেও নবী করিম [ﷺ]-কে মাটির সৃষ্টি বলার কোনই অবকাশ নেই। এরকম ধারণা পোষণের কারণে ঈমান ও আক্বীদা গোমরাহ হবার উপাদান নিহিত রয়েছে। আর সঠিক ঈমান ও আক্বীদা আমলের পূর্ব শর্ত।

নূরে মোহাম্মদীর [ﷺ]  স্থানান্তরঃ আদম (عليه السلام)-এঁর ললাটেঃ
হযরত আদম (عليه السلام)-এর দেহ পৃথিবীর মাটি দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে। বিবি হাওয়া (عليها السلام) হযরত আদম (عليه السلام)-এঁর বাম পাঁজরের হাড় দ্বারা পয়দা হয়েছেন। হযরত ঈসা (عليه السلام) শুধু রূহের দ্বারা  পয়দা হয়েছেন। সাধারণ মানব  সন্তান  পিতা-মাতার মিলিত বীর্যের নির্যাস তথা শুক্রাণু থেকে সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রিয় নবী ও আল্লাহর প্রিয় হাবীব হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা [ﷺ] আল্লাহর নূর হতে পয়দা  হয়েছেন। কোরআন ও হাদীসের দ্বারাই এ  সত্য প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং “সকল মানুষই মাটির সৃষ্টি”- এরূপ দাবী করা গোমরাহী ছাড়া আর কিছুই নয়।  (“মিন্‌হা খালাক্‌নাকুম” আয়াতের ব্যাখ্যা দেখুন।)

পৃথিবীর চল্লিশ হাজার বছরের সমান ঐ  জগতের চল্লিশ দিনে হযরত আদম (عليه السلام)-এঁর খামিরা শুকানো  হয়েছিল। তারপর হযরত আদম (عليه السلام)-এঁর  দেহে রূহ্‌ ফুঁকে দেয়া হয়েছে। বর্ণিত আছে- প্রথমে  আদম (عليه السلام)-এঁর অন্ধকার দেহে রূহ প্রবেশ  করতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁর ললাটে  হযরত     মুহাম্মদ  মোস্তফা [ﷺ]-এঁর   নূর মোবারকের অংশবিশেষ স্থাপন করা হয় এবং এতে দেহের ভিতর আলোর সৃষ্টি হয়। তখনই  আদম (عليه السلام) মানবরূপ  ধারণ  করেন   এবং হাঁচি দিয়ে “আল্‌হামদুলিল্লাহ” পাঠ করেন। আমাদের প্রিয় নবী [ﷺ]ও সৃষ্টি হয়েই  প্রথমে পাঠ করেছিলেন “আল্‌হামদুলিল্লাহ”। তাই আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির  প্রথম প্রতিনিধি হযরত আদম (عليه السلام) এবং বিশ্ব জগতের প্রতিনিধি হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা [ﷺ]-এঁর প্রথম  কালাম “আল্‌হামদুলিল্লাহ”  দিয়ে কোরআন মজিদ শুরু  করেছেন (তাফসীরে নঈমী)।

এভাবে ঐ জগতের একহাজার আট কোটি বৎসর পর মুহাম্মদী নূর হযরত আদম (عليه السلام)-এঁর দেহে স্থানান্তরিত হয়। প্রথমে ললাটে, তারপর ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুলীতে এবং পরে পৃষ্ট দেশে সেই নূরে মোহাম্মদী [ﷺ] কে স্থাপন করা হয়। এরপর জান্নাতে, তারপর দুনিয়াতে পাঠানো হয় সে নূরকে। ১০৬ মোকাম পাড়ি দিয়ে তিনি অবশেষে মা আমেনার   উদর হতে মানব সূরতে ধরাধামে আত্মপ্রকাশ করেন। (১০৬ মাকামের বর্ণনা সুন্নীবার্তা মীলাদুন্নবী সংখ্যায় দেখুন)।

হযরত আদম (عليه السلام) কে বলা হয় প্রথম বাশার অর্থাৎ প্রকাশ্য দেহধারী মানুষ। এর পূর্বে কোন বাশার ছিল না। আমাদের প্রিয় নবী [ﷺ] তো হযরত আদম (عليه  السلام)-এঁর  সৃষ্টির লক্ষ-কোটি বৎসর  পূর্বেই পয়দা হয়েছিলেন। তখন তিনি বাশারী সুরতে ছিলেন না এবং তাঁর নামও বাশার ছিল না। তাঁর বাশারী সুরত প্রকাশ হয়েছে দুনিয়াতে এসে। এটা উপলব্ধি  করা এবং হৃদয়ঙ্গম  করা ঈমানদারের কাজ- (জাআল হক- বাশার প্রসঙ্গ)। তাই তাঁকে “ইয়া বাশারু” বলে ডাকা হারাম (১৮ পারা)।

হযরত আদম (عليه السلام)-এঁর সৃষ্টির পূর্বে নবীজী ছিলেন  মোজাররাদ  এবং নবী খেতাবে ভূষিত- (মাওয়াহেব ও মাদারেজ)। মৌলুদে বরজিঞ্জি নামক বিখ্যাত আরবি কিতাবের লেখক ইমাম ও মোজতাহেদ আল্লামা জাফর বরজিঞ্জি  মাদানী (رحمة الله عليه) লিখেন- “যখন আল্লাহ  তায়ালা হাকিকতে মুহাম্মদী প্রকাশ করার ইচ্ছে করলেন-  তখন হযরত আদম (عليه السلام) কে পয়দা করলেন এবং তাঁর ললাটে হযরত মুহাম্মদ [ﷺ]-এঁর পবিত্র নূর স্থাপন করলেন।” আহ্‌সানুল মাওয়ায়েয কিতাবে উল্লেখ আছে, একদিন আল্লাহর কাছে হযরত আদম (عليه السلام) নূরে মুহাম্মদী [ﷺ] দর্শনের জন্য প্রার্থনা করলেন। তখন আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম  (عليه السلام)-এঁর ডান হাতের শাহাদাত অঙ্গুলীর মাথায় নূরে মুহাম্মদী প্রদর্শন করালেন। মধ্যমা আঙ্গুলীতে হযরত আবু বকর, অনামিকায় হযরত ওমর, কনিষ্ঠায় হযরত ওসমান ও বৃদ্ধাঙ্গুলীতে হযরত আলী (رضي الله عنهم), এই সাহাবী চতুষ্ঠয়ের দেদীপ্যমান নূরও প্রদর্শন করালেন। অতঃপর সেই নূর  স্থাপন করলেন হযরত আদম (عليه السلام)-এঁর পৃষ্ঠদেশে, যাঁর দেদীপ্যমান ঝলক চমকাতো তাঁর  ললাটে। আল্লামা ইউসুফ নাবহানীর আনওয়ারে মুহাম্মদী নামক জীবনী গ্রন্থের ১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।
لَمَّا خَلَقَ  اللهُ ﺁدَمَ جَعَلَ ذَالِكَ النُّوْرُ فِى ظَهْرِه فَكَانَ يَلْمَعُ فِى جَبِيْنِــه
অর্থঃ- “যখন আল্লাহ তায়ালা হযরত আদমকে পয়দা করলেন, তখন ঐ নূরে মুহাম্মদী [ﷺ] তাঁর পৃষ্টে স্থাপন করলেন। সে নূর তাঁর ললাটদেশে চমকাতো।”

বেদায়া ও  নেহায়া  গ্রন্থে উল্লেখ আছে- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) একদিন নবী করীম [ﷺ]-এঁর খেদমতে আরয করলেন- “ইয়া রাসুলাল্লাহ! [ﷺ]  হযরত আদম (عليه السلام) যখন জান্নাতে ছিলেন, তখন  আপনি কোথায় ছিলেন”?  হুযুর পুরনূর [ﷺ] মুচকি  হাসি দিয়ে বললেন- “আদমের ঔরসে। তারপর হযরত নূহ (عليه السلام) তাঁর ঔরসে আমাকে ধারণ করে নৌকায়  আরোহণ করেছিলেন।  তারপর হযরত ইব্রাহীম  (عليه السلام)-এঁর পৃষ্ঠদেশে। তারপর পবিত্র (ঈমানদার) পিতা  মাতাগণের মাধ্যমে আমি পৃথিবীতে আগমন করি। আমার পূর্ব পুরুষগণের মধ্যে কেহই চরিত্রহীন ছিলেন না” (বেদায়া-নেহায়া ২য় খন্ড  ২৫ পৃষ্ঠা)। সুতরাং হযরত আদম (عليه السلام) ও  তাঁর  বংশধরগণ ছিলেন প্রিয় নবীর বাহন মাত্র।

এখানে একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। তা হচ্ছে, নিজের আদি বৃত্তান্ত বর্ণনা করা আল্লাহ প্রদত্ত ইলমে গায়েব ছাড়া সম্ভব নয়। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ  বিষয় হলো,  হুযুর [ﷺ]-এঁর আদি জীবন বৃত্তান্ত বর্ণনা করার  প্রথা তিনি নিজেই চালু করেছেন। মিলাদ মাহফিলের মূল প্রতিপাদ্যই হলো  নবী জীবনী  আদি-অন্ত আলোচনা করে দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করা। হযরত আদম (عليه السلام) থেকে হযরত ঈসা (عليه السلام) পর্যন্ত সমস্ত নবীদের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব ছিল নবী করীম [ﷺ]-এঁর জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা। হযরত ঈসা  (عليه  السلام) তো   নবী  করিম [ﷺ]-এঁর বেলাদতের ৫৭০ বৎসর পূর্বেই মিলাদ মাহফিল করেছেন বনী  ইসরাইলের লোকজন নিয়ে। কোরআন মাজীদের ২৮ পারা সুরা সাফ-এর মধ্যে আল্লাহ  তায়ালা হযরত ঈসা (عليه السلام)-এঁর এই সম্মিলিত মিলাদ মাহফিলের বর্ণনা দিয়েছেন। বেদায়া ও নেহায়া গ্রন্থের ২য় খন্ডে ২৬১ পৃষ্ঠায় ইবনে কাছির হযরত আব্বাস (رضي  الله عنه)-এঁর সূত্রে বর্ণনা করেছেন- “হযরত ঈসা (عليه السلام) সে সময় কেয়াম অবস্থায় মিলাদ  মাহফিল করেছিলেন।”

সুতরাং  মিলাদ মাহফিল নতুন কোন অনুষ্ঠান নয়। ফেরেশতা এবং নবীগনের অনুকরণের পরবর্তী যুগে বুযুর্গানে দ্বীন কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে বর্তমান মিলাদ মাহফিল প্রচলিত হয়েছে। মিলাদ কিয়াম ভিত্তিহীন নয়। যারা ভিত্তিহীন বলে, তাদের কথারই কোন ভিত্তি নেই। মিলাদ মাহফিলের বৈধতার উপর তিন শতাধিক  কিতাব রচিত  হয়েছে। তন্মধ্যে মওলুদে বরজিঞ্জি গ্রন্থখানি আরব-আজমের সর্বত্র অধিক সমাদৃত হয়ে আসছে। পাক-ভারত উপমহাদেশে শেখ আবদুল হক মোহাদ্দেছ  দেহ্‌লভী (رحمة   الله عليه)-এর ’মাদারিজুন্নবুয়ত’ ও আল্লামা কাজী  ফযলে আহ্‌মদ (লুধিয়ানা) লিখিত ’আন্‌ওয়ারে আফতাবে’ সাদাকাত গ্রন্থদ্বয় মিলাদ শরীফের বৈধতার প্রমাণিক  দলীল। যথাস্থানে বিস্তারিত আলোচনা করার ইচ্ছা রইলো।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment