হে রাসুল (ﷺ) আপনাকে সৃষ্টি না করলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না – হাদিসটির পর্যালোচনাঃ
সংকলক : মাসুম বিল্লাহ সানি
(প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন নামক কিতাব থেকে অধিকাংশ তথ্য সংগ্রহীত)
হাদিস ১ :
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্নিত,
عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لما أذنب آدم صلى الله عليه وسلم الذنب الذي أذنه رفع رأسه إلى العرش فقال أسألك حق محمد ألا غفرت لي فأوحى الله إليه وما محمد ومن محمد فقال تبارك اسمك لما لما خلقتني رفعت رأسي إلى عرشك فإذا هو مكتوب لا إله إلا الله محمد رسول الله فعلمت أنه ليس أحد أعظم عندك قدرا ممن جعلت اسمه مع اسمك فأوحى الله عز وجل إليه يا آدم إنه آخر النبيين من ذريتك وإن أمته آخر الأمم من ذريتك ولولاه يا آدم ما خلقتك
অনুবাদ-
রাসূল ﷺ ইরশাদ করেছেন, হযরত আদম আঃ থেকে যখন অপ্রত্যাশিত ভাবে ভুল সংঘটিত হয়, [যার দরূন তাকে জান্নাত থেকে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়, তখন তিনি সর্বদা কাঁদতে ছিলেন। আর দুই ও ইস্তেগফার পড়তে ছিলেন।] তখন তিনি আল্লাহর দরবারে আরজ করলেন,
হে আল্লাহ! মুহাম্মদ ﷺ এর ওসীলায় আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তখন অহী নাজীল হয়- মুহাম্মদ (ﷺ) কে (তুমি কিভাবে জানলে তুমি তো তাকে কখনো দেখ নি)? তখন তিনি বলেন-যখন আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমার অভ্যন্তরে রুহ প্রবেশের পর মাথা তুলে আমি আরশে লেখা দেখলাম- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।
তখনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, মুহাম্মদ ﷺ এর চেয়ে সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তিত্ব আর কেউ নেই
যার নাম আপনি স্বীয় নামের সাথে রেখেছেন।
তখন অহী নাজীল হল-তিনি সর্বশেষ নবী। তোমার সন্তানদের অন্তর্ভূক্ত হবে।
যদি তিনি না হতেন, তাহলে তোমাকেও সৃষ্টি করা হতো না।
Reference :-
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) সূত্রে।
(মানঃ সহিহ)
১. ইমাম বায়হাকী (রহঃ) : দালায়েলুন-নবুওয়াত : ৫/৪৮৯ পৃ
২. ইমাম হাকেম নিশাপুরী (রহঃ) : মুসতাদরাকে হাকেম : ২/৪৮৬ পৃ : হাদিস : ৪২২৮
৩. ইমাম হাকেম নিশাপুরী (রহঃ) : আল মাদখাল : ১/১৫৪
৪. ইমাম তাবরানী (রহঃ) : আল মুজামুল আওসাত : ৬/৩১৩ : হাদীস নং-৬৫০২
৫. ইমাম তাবরানী (রহঃ) : আল মুজামুস সগীর : ২/১৮২ : হাদীস নং-৯৯২,
৬. ইমাম তাবরানী (রহঃ) : মুজমায়ে কবীর’
৭. ইমাম দায়লামী (রহঃ) : আল মুসনাদিল ফেরদাউস : ৫/২২৭
৮. ইমাম আজলুনী (রহঃ) : কাশফুল কাফা : ১/৪৬ ও ২/২১৪
৯. ইমাম আবূ নুয়াইম ইস্পাহানী (রহঃ) : ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া।
১০. ইমাম তকিউদ্দীন সুবকী (রহঃ) : শিফাউস সিকাম, পৃ-১২০
১১. ইমাম ইবনে আসাকির (রহঃ) : ‘তারিখে দামিষ্ক’: ৭/৪৩৭ পৃ
১২. ইমাম ইবনুল জাওজী (রহঃ) : আল ওয়াফা বি আহওয়ালিল মোস্তফা (ﷺ) : ৩৩
১৩. ইমাম ইবনুল জাওজী (রহঃ) : বয়ানুল মীলাদুন্নবী (ﷺ) : ১৫৮
১৪. ইমাম ইবনে কাসীর (রহঃ) : আল বিদায়া ওয়ান নেহায়া : ১/১৮ পৃ
১৫. ইবনে হাজর হায়সামী (রহঃ) : মাযমাউজ যাওয়ায়েদ : ৮/২৫৩
১৬. শিহাবউদ্দীন খাফাজী (রহঃ) : ‘নাসীম আর-রিয়াদ’
১৭. ইমাম সুয়ুতী (রহঃ) : খাসায়েসুল কুবরা : ১/১২ : হাদিস ১২
১৮. ইমাম সুয়ুতী (রহঃ) : আদ দুররে মানসুর : ১/১৪২
১৯. আল্লামা কাসতাল্লানী (রহঃ) : আল মাওয়াহেবুল লাদুনিয়্যাহ : ১/ ৮২ ও ২/৫২৫
২০. ইমাম যুরকানী (রহঃ) : শরহে মাওয়াহিব : ১/১৭২
২১. ইমাম হালাবী (রহঃ) : সীরাতে হালাবিয়্যাহ : ১/৩৫৫
২২. মুহাদ্দিসে শাহ আব্দুল আজিজ দেহলভী (রহঃ) : তফসীরে আজিযী : ১/১৮৩
২৩. ইমাম নাবহানী (রহঃ) : শাওয়াহিদুল হক : ১৩৭
২৪. ইমাম নাবহানী (রহঃ) : আনোয়ার-ই-মোহাম্মাদীয়া : ৯-১০
২৫. ইমাম নাবহানী (রহঃ) : জাওয়াহিরুল বিহার : ২/১১৪
২৬. ইমাম নাবহানী (রহঃ) : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন : ৩১ পৃ ও ৭৯৫ পৃ
(মাকতুবাত এ তাওফিক হিয়্যাহ, কাহেরা,মিশর)
২৭. ইমাম তকী উদ্দীন (রহঃ) : দাফউ শুবহাহঃ ১/৭২
২৮. ইমাম সামহুদী (রহঃ) : ওয়াফাউল ওয়াফাঃ২/৪১৯
২৯. ইবনু তাইমিয়্যাহঃ মাজমাউল ফাতাওয়াঃ২/১৫৯
৩০. ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) : আস সীরাতুন নাবাওইয়্যাহ- ১/১৯৫
৩১. ইমাম সুলতান মোল্লা আলী কারী (রহঃ) : আল আসরারুল মারফুআহ- ১/২৯৫
৩২. আল্লামা শফী উকারবী (রহঃ) : যিকরে হাসীন : ৩৭
৩৩. আশরাফ আলী থানবীঃ নুশরাত্বীব ২৮
৩৪. আশরাফ আলী থানবী : শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) : প্রথম অধ্যায়।
৩৫. ফাযায়েলে আমাল, ৪৯৭, উর্দু এডিশন
৩৬. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান: ২/৩৭০ পৃ. সূরা মায়েদা: আয়াত নং-১৫
৩৭. আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : শরহে শামায়েল : ১/১১৫ পৃ:
হাদিসের মান পর্যালোচনা :
যে সকল মুহাদ্দিসগন এ হাদিস সহিহ বলেছেনঃ
১) ইমাম হাকিম বলেছেন হাদিসটি সহীহ।
আল মুস্তাদরাক-২/৬১৫
২) ইমাম তকি উদ্দীন সুবকী বলেন, হাদিসটি হাসান।শিফাউস সিকাম, পেইজ-১২০
৩) ইমাম তকী উদ্দীন দামেশকী বলেন, হাদীসটি বিশুদ্ধ। দাফউ শুবহাহঃ ১/৭২
৪) ইমাম কস্তল্লানী বলেন, হাদিসটি বিশুদ্ধ।মাওয়াহিবুল লাদুনিয়াহঃ১/১৬৫
৫) ইমাম সামহুদী বলেন, হাদিসটি সহীহ। ওয়াফাউল ওয়াফাঃ২/৪১৯
৬) ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী বলেন, বিভিন্ন সনদে বর্ণিত এ হাদিসটি বিশুদ্ধ।আল খাসাইসঃ১/৮
৭) ইবনু তাইমিয়্যাহ এ হাদীসটি দলীল হিসাবে তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন। মাজমাউল ফাতাওয়াঃ২/১৫৯
‘যদি মুহাম্মাদ না হতেন, তবে আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না’-এ হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেন,
এ হাদীসটি পূর্বের কথাকে কথাকে শক্তিশালী করেছে। মাজমু উল ফাতাওয়া- ২/১৫৯
৮) বাতিল দের জবাবে ইমাম ইবনু কাসীর পরিস্কার বলেছেন, এই হাদীসটি বানোয়াট নয়। এটা দ্বারা নির্দ্বিধায় দলীল প্রদান করা যাবে।
আস সীরাতুন নাবাওইয়্যাহ- ১/১৯৫
৯) বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস মুল্লা আলী কারী বলেন, একথাটি সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ।রেফারেন্সঃ
আল আসরারুল মারফুআহ- ১/২৯৫
হাদিস ২ :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন: “আল্লাহ পাক হযরত ঈসা (আঃ)-কে বলেছেন, ওহে ঈসা! মহানবী (ﷺ)-এর প্রতি ঈমান আনো এবং তোমার উম্মতকেও তা করতে বলো।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) না হলে আমি আদমকে সৃষ্টি করতাম না, বেহেশত বা দোযখও সৃষ্টি করতাম না।”
Reference :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) সূত্রে।
(মানঃ হাসান)
১. ইমাম হাকিম নিশাপুরী : আল মোসতাদরেক’ : ২/৬৭১ : হাদিস ৪২২৭
২. ইমাম দায়লামী : আল মুসনাদিল ফেরদাউস : ৫/২৪২
৩. ইমাম ইবনে সাদ : তানাকাতুল কোবরা
৪. ইমাম তাকিউদ্দীন সুবকী : ‘শিফাউস্ সিকাম ৪৫
৫. শায়খুল ইসলাম আল-বুলকিনী : ফতোওয়ায়ে সিরাজিয়া ১/১৪০
৬. ইবনে হাজর রচিত ‘আফদ্বালুল কোরা।
৭. আবূ নুয়াইম : ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া,
৮. ইমাম নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ২/১১৪ ও ৪/১৬০
৯. ইবনে কাসীর : কাসাসুল আম্বিয়া : ১/২৯ পৃ
১০. ইবনে কাসীর : সিরাতে নববিয়্যাহ (ﷺ) ১/৩২০
১১. ইবনে কাসীর : মুজিজাতুন্নবী (ﷺ) : ১/৪৪১
১২. ইবনে হাজর আসকালানি : লিসানুল মিযান : ৪/৩৫৪
১৩. ইমাম যাহাবী : মিজানুল ইতিদাল : ৫/২৯৯, রাবী নং ৬৩৩৬
১৪. ইমাম শামী : সুবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ : ১২/৪০৩
১৫. ইবনে হাজর হায়সামী : শরহে শামায়েল : ১/৪২
১৬. ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহিব : ১/১২/২২০
১৭. আবু সাদ ইব্রাহীম নিশাপুরী : শরহে মোস্তফা : ১/১৬৫
১৮. ইমাম সুয়ুতী : কাসায়েসুল কুবরা : ১/১৪ : হাদিস ২১
১৯. ইমাম ইবনে হাইয়্যান : ‘তাবকাত আল-ইসফাহানী : ৩/২৮৭
২০. কানযুল উম্মাল- হাদীস ৩২০২২
২১. মোল্লা আলী কারী : মাওজুয়াতুল কবীর : ১০১
২২. মোল্লা আলী কারী : মাওজুয়াতুল কবীর : ১/২৯৫, হাদিস : ৩৮৫
হাদিসের মান পর্যালোচনা :
★ ইমাম দায়লামী : হাদিসটির মান সনদের দিক থেকে হাসান।
আল মুসনাদিল ফেরদাউস : ৫/২৪২
হাদিস ৩ :
হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন,
“আমি যদিও ইব্রাহীম (আঃ) কে খলিল বানিয়েছি কিন্তু আপনাকে বানিয়েছি হাবীব। আমি যদিও মুসা (আঃ) এর সাথে দুনিয়াতে কথা বলেছি, আপনার সাথে কথা বলেছি আসমানে। আমি ঈসা (আঃ) কে রুহুল কুদ্দু্স থেকে সৃজন করলেও আপনাকে করেছি সমগ্র সৃষ্টি জগত সৃষ্টির দু’হাজার বছর পূর্বে। আপনার কদম আসমানের এমন জায়গায় পৌঁছেছে যেখানে আপনার পূর্বে কারাে কদম পৌঁছেনি এবং ভবিষ্যতেও পৌঁছবে না। আমি আদম (আঃ) কে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করলেও। আপনার মাধ্যমে ঘটিয়েছি নবুয়তের ধারার পরিসমাপ্তি। আপনার চেয়ে অধিক সম্মানী আর কাউকে আমি সৃষ্টি করেনি। কিয়ামত দিবসে আমার আরশের ছায়া আপনার উপর প্রসারিত হবে। প্রশংসার জয়মুকুট আপনার নূরানী মস্তকে শােভা পাবে। আমি আপনার নাম আমার নামের সাথে মিলিয়ে রেখেছি। যেখানে আমার যিকির চর্চা হবে সেখানে আপনার যিকিরও চর্চা হবে। আমি পৃথিবী এবং পৃথিবীবাসীকে সৃষ্টি করেছি,আমার নিকট আপনার মর্যাদা ও সম্মান কতটুকু তা দেখানাের জন্য জেনে রাখুন, “আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি দুনিয়া সৃষ্টি করতাম না।”
রেফারেন্সঃ
১. ইমাম ইবনে আসাকীর ও তারীখে দামেস্ক ৩/৫১৭ পৃষ্ঠা।
২. আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী হানাফী : মওদুআতুল কবীর : ১০১ পৃষ্ঠা
৩. আল্লামা ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহেব : ১/১৮২ পৃ
৪. শায়খ ইউসূফ নাবহানী : যাওয়াহিরুল বিহার : ১/২৮৯ পৃষ্ঠা
৫. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফঃ ১০৫ পৃ.
হাদিস ৪ :
হযরত আলী ইবনে আবী তালেব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি নবি করীম (ﷺ) হতে বর্ননা করেন, আল্লাহ বললেন, হে মুহাম্মদ (ﷺ)! আমার ইজ্জত ও জালালিয়াতের শপথ! যদি আপনাকে সৃষ্টি না করতাম তাহলে আমি না যমিন সৃষ্টি করতাম, না আসমান সৃষ্টি করতাম, না কিছুই সৃষ্টি করতাম না আর আমি উঁচু করতাম না উর্ধ্বের ঐ নীল বর্ণের ছাদ এবং নিন্মের এ ধূসর বর্ণের পৃথিবী।”
১. ইমাম বুরহানুদ্দীন হালবী ও সিরাতে হালবিয়াঃ ১/৩৭৫ পৃ.
২. আল্লামা ফকীহ খতিব আবু রবীঈ : আল মুখতাসার : ১/১১৫
৩. আল্লামা ইবনে হাজর হায়সামী : শরহে শামায়েল : ১/১১৫
৪. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী : যাওয়াহিরুল বিহার : ২/১১৫ পৃ:
৫. আল্লামা বুরহান উদ্দিন হালবী : ইনসানুল উয়ূন : ১/৩৭৫ পৃ:
৬. শিফাউস সুদূর
হাদিস ৫ :
তাবেয়ী হযরত কাবুল আহবার (রা) থেকে বর্নিত,
(বিশাল বর্ননার পর)….
যদি তিনি [রাসুল (ﷺ)] না হতেন তাহলে আমি না তোমাকে [আদম (আঃ)] সৃষ্টি করতাম, না আসমান, জমীন সৃষ্টি করতাম।
Reference :
১. ইমাম কুস্তালানী : আল মাওয়াহেব : ১/৩৩
২. ইমাম নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩৫২
৩. ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহিব : ১/৭৮
৪. আল্লামা শফী উকারবী : যিকরে হাসীন : ৩১
৫. ইমাম তুগরিব : আল মাওলুদ শরীফ : ১৪২
হাদিস ৬ : এই হাদিসের ২টা সনদ সহকারে উল্লেখ্য করলাম :
১ম সনদ :
হযরত ইমাম হাকিম নিসাপুরী
↓
হযরত আলী বিন হামশাদ আদল ইমলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
↓
হারূন বিন আব্বাস হাশেমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
↓
জানদাল বিল ওয়াকিল রহমাতুল্লাহি আলাইহি
↓
হযরত আমর বিন আউস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত,
২য় সনদ :
ইমাম হাকিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি
↓
হযরত সাঈদ বিন আবু উরূবাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি , তিনি
↓
হযরত ক্বাতাদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি,
↓
সাঈদ বিন মুসাঈয়িব রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি
↓
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত,
-حدثنا علي بن حمشاد العدل املاء هرون بن العباس الهاشمي ثنا جندل بن والق ثنا عمرو بن أوس الانصاريحدثنا سعيد بن ابي عروبة عن قتادة عن سعيد بن المسيب عن ابن عباس رضي الله عنه قال اوحي الله الي عيسي عليه السلام يا عيسي امن بمحمد صلي الله عليه و سلم وامر من ادركه من امتك ان يؤمنوا به فلو لامحمد صلي الله عليه و سلم ما خلقت ادم عليه السلام ولولا محمد صلي الله عليه و سلم ما خلقت الجنة و النار ولقد خلقت العرش علي الماء فضطرب فكتبت عليه “لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه وسلم فسكن. هذا حديث صحيح الاسناد
” মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনাকে ওহী করলেন। হে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ! আপনি হুজুর পাক ﷺ উনার প্রতি ঈমান আনুন এবং আপনার উম্মতের মধ্যে উনাকে যারা পেতে চায় তাঁদের নির্দেশ করুন, তাঁরা যেন উনার প্রতি ঈমান আনে।
যদি মুহম্মদ ﷺ না হতেন হতেন তবে আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করতাম না, যদি মুহম্মদ ﷺ সৃষ্টি না হতেন তবে জান্নাত এবং জাহান্নাম সৃষ্টি করতাম না।
আর যখন আমি পানির উরর আরশ সৃষ্টি করলাম তখন তা টলমল করছিলো, যখনই আরশের মধ্যেلا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم লিখে দেই তৎক্ষণাৎ আরশ স্থির হয়ে যায়।”
এই হাদীস শরীফের সনদ সহীহ।
Reference :
★ মুসতাদরাক আলাছ ছহীহাঈন লিল হাকীম নিশাপুরী (রহ),
কিতাব : তাওয়ারীখিল মুতাক্বাদ্দিমীন- যিকরু আখবারী সাইয়্যিদুল মুরসালীন ওয়া খাতামুন নাব্যিয়িন মুহম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব মুছতাফা ছলাওয়াতুল্লাহিআলাইহি ওয়া আলিহীত ত্বহীরিন
খন্ড : ৪র্থ খন্ড ১৫৮৩ পৃষ্ঠা
★ মুখতাছারুল মুসতাদরাক ২য় খন্ড ১০৬৭ পৃষ্ঠা
মুহাদ্দিসে কেরাম থেকেঃ
১
ইমাম সাইফুদ্দীন আবূ জা’ফর বিন উমর আল-হুমাইরী আল-হানাফী নিজ ‘আদ-দুররূল তানযীম ফী মওলিদিন্ নাবিই-ইল করীম’ শীর্ষক কেতাবে বলেন: আল্লাহতা’লা যখন হযরত বাবা আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করেন, তখন তিনি তাঁর মনে এই ভাবের উদয় করেন যার দরুণ তিনি মহান প্রভুকে প্রশ্ন করেন, ”এয়া আল্লাহ! আপনি আমার কুনিয়া (বংশ-পরম্পরার নাম) কেন ’আবূ মোহাম্মদ’ (মোহাম্মদ ﷺ’র পিতা) করেছেন?” আল্লাহ উত্তরে বলেন, “ওহে আদম! তোমার মাথা তোলো।” তিনি শির উঠিয়ে আরশে মহানবী (ﷺ)-এর নূর (জ্যোতি) দেখতে পান। হযরত আদম (আঃ) জিজ্ঞেস করেন, “এয়া আল্লাহ! এই নূর কোন্ মহান সত্তার?” আল্লাহতা’লা জবাবে বলেন, “তোমার বংশেই এই মহান নবী (ﷺ)-এর জন্ম। আসমানে তাঁর নাম আহমদ (ﷺ) এবং জমিনে মোহাম্মদ (ﷺ)। আমি তাঁকে সৃষ্টি না করলে তোমাকে বা আসমান ও জমিনকে সৃষ্টি করতাম না।”
২
সাইয়্যেদ আবূল হুসাইন হামদূনী শাযিলী তাঁর ‘কাসিদায়ে দা’লিয়া’তে লেখেন: “প্রিয়নবী (ﷺ) হলেন সারা বিশ্বজগতের মধ্যমণি এবং সকল সৃষ্টির কারণ (অসিলা)। তিনি না হলে কিছুই অস্তিত্ব পেতো না।”
৩
ইমাম শরফউদ্দীন আবূ মোহাম্মদ বুসিরী তাঁর কৃত ‘কাসিদা-এ-বুরদা’ কাব্য-পুস্তকে লেখেন: “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) না হলে দুনিয়া অস্তিত্বশীল হতো না।”
৪
ইমাম বুসিরী (রহ:)-এর কাব্যের ব্যাখ্যামূলক পুস্তকে ইমাম শায়খ ইবরাহীম বাইজুরী লেখেন: “হুযূর করীম (ﷺ) অস্তিত্বশীল না হলে বিশ্বজগত-ই অস্তিত্বশীল হতো না। হযরত আদম (আ:)-কে আল্লাহ বলেন, ‘মহানবী (ﷺ) অস্তিত্বশীল না হলে আমি তোমোকে সৃষ্টি করতাম না। হযরত আদম (আ:) হলেন মনুষ্যজাতির আদি পিতা, আর পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই মানুষের জন্যে সৃষ্ট। তাই হযরত আদম (আ:)-কে যেহেতু রাসূলে খোদা (ﷺ)-এর অস্তিত্বের কারণে সৃষ্টি করা হয়েছে, সেহেতু সমগ্র জগতই মহানবী (ﷺ)-এর কারণে সৃষ্ট বলে প্রতীয়মান হয়। অতএব, সকল অস্তিত্বশীল সত্তার সৃষ্টির কারণ হলেন বিশ্বনবী (ﷺ)।”
৫
কাসিদা-এ-বুরদা কাব্য সম্পর্কে আল্লামা খালেদ আযহারী মন্তব্য করেন: “রাসূলে পাক (ﷺ)-এর কারণেই দুনিয়া অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব পেয়েছে।”
৬
মোল্লা আলী কারী লেখেন: ”রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আশীর্বাদ ও মহত্ত্ব ছাড়া সমগ্র এই বিশ্বজগত অস্তিত্ব পেতো না এবং আল্লাহ ছাড়া কিছুই অস্তিত্বশীল থাকতো না।”
৭
ইমাম শেহাবউদ্দীন ইবনে হাজর আসকালানী বলেন, “এই সকল বর্ণনা ব্যক্ত করে যে মহানবী (ﷺ)-কে সৃষ্টি করা না হলে আল্লাহতা’লা আসমান-জমিন, বেহেশ্ত-দোযখ, চন্দ্র-সূর্য কিছুই সৃষ্টি করতেন না।”
৮
আল্লামা আবূল আয়াশ আবদুল আলী লাখনৌভী নিজ ‘ফাওয়াতিহ আর-রাহমূত শরহে মোসাল্লাম আস্ সুবূত’ পুস্তকে লেখেন: “রাসূলে খোদা (ﷺ) অস্তিত্বশীল না হলে সৃষ্টিকুল আল্লাহর রহমত-বরকত (আশীর্বাদ)-ধন্য হতো না।”