হুকমি/বিধানগত/ফজীলতের শহীদের মর্যাদা-৪র্থ অংশ

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

২৪. হাকীকী শহীদ ছাড়াও ফজীলতের দিক দিয়ে কিছু শহীদের বর্ণনা হাদীস শরীফে এসেছে।এরা হচ্ছেন ফজীলতের শহীদ/হুকুমী/বিধানগত শহীদ।তারা দুনিয়াতে সেই মূল শহীদগণের হুকুমে গণ্য হবেন না।এ শহীদগণ শুধু আখিরাতে বিশেষ মর্তবা পাবেন।কিন্তু দুনিয়াতে তাদেরকে হাকীকী শহীদগণের ন্যায় গোসল ব্যতীত তাদের পরিহিত কাপড়ে জড়িয়ে দাফন করার হুকুম প্রযোজ্য হবে না। বরং যথারীতি স্বাভাবিক নিয়মেই তাদের গোসল ও কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে।

তবে তাদের মৃত্যু অস্বাভাবিকভাবে এবং অবর্ণনীয় কষ্টের হওয়ায় সে জন্য তারা পরকালে বিশেষ ফজীলত বা মর্তবা পাবেন।আর তাদের সেই মরণ-কষ্ট অনুপাতে তাদের মর্যাদা বা ফজীলতেও তারতম্য হবে।

❏ অবশ্য কোন বিধর্মী অথবা সন্ত্রাসী বা ডাকাত কিংবা জালিমের হাতে ধারালো অস্ত্র দ্বারা নিহত মুমিন-বালিগ ব্যক্তির উপরও উহুদের শহীদগণের হুকুম প্রযোজ্য হবে এবং তাদেরকে সেরূপে তাদের পরিহিত কাপড়ে বিনা গোসলে দাফন করতে হবে বলে ফিক্বহে হানাফীতে বলা হয়েছে। এ জন্য সেখানে গোসল ছাড়া স্বকাপড়ে দাফন হওয়ার ফজীলতপ্রাপ্ত শহীদ-এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে–“(ফিক্বহের হুকুমের দৃষ্টিতে) শহীদ ঐ ব্যক্তি,যাকে মুশরিকরা হত্যা করেছে কিংবা যুদ্ধের প্রান্তরে মৃত পাওয়া গেছে আর তার দেহে জখমের চিহ্ন রয়েছে, কিংবা যাকে কোন কাফের বা মুসলমান অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে এবং তাকে হত্যা করার কারণে দিয়াত ও্য়াজিব হয়নি (অর্থাৎ কিসাস ওয়াজিব হয়ে তা নিরেট খুন গণ্য হয়েছে)। এমন ব্যক্তিকে তার পরিহিত কাপড়ে কাফন দেয়া হবে এবং তার উপর জানাযা পড়া হবে, কিন্তু তাকে গোসল দেয়া হবে না।কেননা সে উহুদের শহীদগণের শ্রেণীভুক্ত।

❏ হুকুমের দিক দিয়ে সেই পার্থক্যের কারণে প্রথম প্রকার বা হাকীকী শহীদগণকে

شهداء في الدنيا والآخرة

(দুনিয়া ও আখিরাতে বিশেষ মর্যাদাপ্রাপ্ত শহীদগণ) বলা হয় এবংদ্বিতীয় প্রকার তথা ই‘তিবারী শহীদ বা ফজীলতের শহীদগণকে

شهداء في الآخرة

(আখিরাতে বিশেষ মর্যাদাপ্রাপ্ত শহীদগণ) বলে।

❏ এ সকল ফজীলতের শহীদগণের শ্রেণী অনেক।ফজীলতের শহীদগণ সাত শ্রেণী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।সেটা উক্ত শহীদগণের শ্রেণীর সীমাবদ্ধতা হিসেবে নয়,বরং কিছু অবস্থার বর্ণনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।কেননা, তাদের শ্রেণী সেই সাতপ্রকারে সীমাবদ্ধ নয়।বরং সেই হাদীসে যেমনিভাবে সাত শ্রেণীর শহীদের কথা বলা হয়েছে,আবার অন্য হাদীসে পাঁচ শ্রেণীর এরূপ শহীদের কথা বলা হয়েছে। তেমনি অপরাপর হাদীসে অারো অনেক শ্রেণীর শহীদের বর্ণনা এসেছে। যা সব মিলিয়ে অর্ধশতাধিক শ্রেণী হয়ে যায়।

আবার সেই ফজীলতের শহীদগণের সকলের মর্তবাও একসমান নয়।বরং মৃত্যুকষ্ট ও পারিপার্শ্বিক বিবেচনায় কারো থেকে কারো মর্তবা বেশী বা কম হয়ে থাকে। তাই তাদের ব্যাপারে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে-

غَيْرَ أَنَّ الشَّهَادَةَ تَتَفَاضَلُ

“এতদব্যতীত শহীদী মর্তবায় কমবেশ হয়।”

[আল-মা‘রিফাহ লিল হাসান ইবনে আলী আল-হালওয়ানী/ফাতহুল বারী,জিহাদ ও সিয়ার অধ্যায়, ৫২ পৃষ্ঠা]

❏ ২৫. পবিত্র কুরআন বলে হ্যাঁ যারা প্রকৃত মোমিন তারাও শহীদ!وَالَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ أُولَٰئِكَ هُمُ الصِّدِّيقُونَ ۖ وَالشُّهَدَاءُ عِندَ رَبِّهِمْআর যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ইমান (কামিল ইমান)আনে তারাই তাদের রবের নিকট সিদ্দীক ও শহীদ বলে বিবেচিত….

[সুরা হাদীদ,আয়াত নং ১৯]

আবার অপর আয়াতে আরও বলা হয়েছে: “এবং যারা আল্লাহর পথে গমন করেছে এবং পরে নিহত হয়েছে অথবা (স্বাভাবিক) মৃত্যুবরণ করেছে তাদেরকে আল্লাহ অবশ্যই উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করবেন এবং তিঁনিইতো (আল্লাহ তাআলা) সর্বোৎকৃষ্ট জীবিকা দাতা।তিঁনি তাদেরকে (পরকালে) অবশ্যই এমন জায়গায় স্থান দেবেন যা তাঁরা পছন্দ করবে এবং আল্লাহতো সম্যক প্রজ্ঞাময়, পরম সহনশীল”।

[সুরা হাজ্জ্ব,আয়াত নং ৫৮-৫৯]

❏ ২৬. হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে

باب بَيَانِ الشُّهَدَاءِ ‏‏

وَحَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ سُهَيْلٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ مَا تَعُدُّونَ الشَّهِيدَ فِيكُمْ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ قُتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَهُوَ شَهِيدٌ قَالَ ‏”‏ إِنَّ شُهَدَاءَ أُمَّتِي إِذًا لَقَلِيلٌ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا فَمَنْ هُمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ‏”‏ مَنْ قُتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَهُوَ شَهِيدٌ وَمَنْ مَاتَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَهُوَ شَهِيدٌ

আবূ হুরাইরাহ্ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমরা তোমাদের মধ্যকার কাদেরকে শহীদ বলে গণ্য কর? তারা বললেন, “হে আল্লাহর রসূল! যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জীবন দেয় সে তো শহীদ।” তিঁনি বললেন,তবে তা আঁমার উম্মাতের শহীদের সংখ্যা অতি অল্প হবে… قَالُوا فَمَنْ هُمْ يَا رَسُولَ তখন তারা বললেন, তাহলে তারা কারা হে আল্লাহর রসূল! مَنْ قُتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَهُوَ شَهِيد….ٌ বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে (জিহাদে) নিহত হয় সেও শহীদ …. وَمَنْ مَاتَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَهُوَ شَهِيد.ٌ …. আবার যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে (আত্মউতসর্গ করে ) মৃত্যুবরণ (স্বাভাবিক)করে সেও শহীদ *****দলিল******

*(ক.) সহীহ বুখারী,কিতাবু জিহাদ,হাদীস নং- ৬৫৪,২৪৭

*(খ.) মুসলিম শরীফ,কিতাবু জিহাদ , হাদীস নং-১৯১৪,১৯১৫

*(গ.) তিরমিযী শরীফ,হাদীস নং- ১০৬২, ১৯৫৮

*(ঘ.) সুনানেআবূ দাউদ,হাদীস নং-৫২৪৫

*(ঙ.) ইবনে মাজাহ,হাদীস নং-২৮০৪, ৩৬৮

*(চ.) মুসনাদে আহমাদ,হাদীস নং-৭৭৮২, ৭৯৭৯, ৮১০৬, ৮৩১৫, ৯১১৫।

❏ ২৭. অপর হাদিস শরীফেও ইরশাদ হয়েছে

مات على فراشه أو بأي حتف شاء الله فإنه شهيد وإن له الجنة

আল্লাহর রাযামনদিতে বা আল্লাহর মরজি বা ইচ্ছার উপর নিজেকে উৎসর্গিত করে বিছানায় মৃত্যুবরণ করলেও সে শহীদ হয় এবং তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে যায়।

*****দলিল******

*(ক.) হাকিম আল মুস্তাদরাক,হাদীস নং-২৪৬৩

*(খ.) সুনান আল কুবরা,হাদীস নং- ১৭৯৭১

*(গ.) সুনানে আবু দাউদ কিতাবু জিহাদ, হাদীস নং- ২৪৯৯

❏ ২৮. রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,”নিশ্চয়ই তোমাদের পিছনে রয়েছে ধৈর্যের যুগ।সে সময়ে যে ব্যক্তি সুন্নাতকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকবে,সে তোমাদের সময়ের ৫০ জন শহীদের নেকী পাবে।”[ত্বাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর হা/১০২৪০; নাসিরুদ্দিন আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিস আস সহিহাহ, সহিহুল জামে হা/২২৩৪]

❏ ২৯. আমর ইবনু মুররাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন,”কুযা’আহর এক লোক রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এঁর কাছে এসে বললো : আমি সাক্ষ্য দেই যে আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। আর আঁপনি আল্লাহর রাসুল।আমি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করি, রমযান মাসের সওম পালন করি ও রামাযানের তারাবীহ সালাত আদায় করি এবং যাকাত দেই।”এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেন : “যে ব্যাক্তি এঁর উপর মৃত্যু বরন করবে সে সিদ্দীকগন ও শহীদগণের অন্তর্ভুক্ত”।

[সহীহ ইবনে খুজাইমা হাদিস-২২১২, তাহকিক আলবানি, সনদ সহিহ, সহিহ তারগিব-৭৪৫]

❏ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : “সৎ ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী (ক্বিয়ামতের দিন) নবীগণ, সিদ্দীকগন ও শহীদ্গনের সাথে থাকবে।”

[শাইখ আলবানি হাদিসটিকে সহিহ লিগাইরিহি বলেছেন সহীহ আত-তারগীব গ্রন্থে হাদিস-১৭৮২, মাকতাবা শামেলা]

❏ ছিদ্দিক বান্দারা শহীদদের মত ( জিবীত) হবে।আর ছালেহীন অর্থাৎ আওলিয়াগণও তাঁদের সাথে মিলিত হবে [তাফছিরে মাজহারী,১ম খন্ড,১৭০ পৃঃ]

❏ ৩০. হজরত মাকাল ইবনে ইয়াসার (রা:) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; কেউ যদি সকালে ‘আউযু বিল্লাহিস সামীয়িল আলিমি মিনাশ্শায়তানির রাজিম’ তিনবার পড়ে সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পড়ে, তাহলে তার জন্য সত্তর হাজার ফেরেশ্তা নিযুক্ত করা হয় যারা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য রহমতের দোয়া করতে থাকে। যদি ওই দিন সে মারা যায় তাহলে শহিদের মর্যাদা লাভ করবে। তদ্রুপ কেউ যদি সন্ধ্যায় এ আমল করে তাহলেও সে মর্যাদা পাবে।

[তিরমিজি-২৯২২,৩০৯০,দারেমি-৪৫৮]

❏ আরবি দোআ:

তিনবার أعوذ بالله السميع العليم من الشيطان الرجيم

বাংলা উচ্চারণ: আউজুবিল্লাহিস সামিউল আলিম মিনাশ মাইতানিররাজিম।

هُوَ ٱللَّهُ ٱلَّذِى لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ عَٰلِمُ ٱلْغَيْبِ وَٱلشَّهَٰدَةِ هُوَ ٱلرَّحْمَٰنُ ٱلرَّحِيمُ

هُوَ ٱللَّهُ ٱلَّذِى لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلْمَلِكُ ٱلْقُدُّوسُ ٱلسَّلَٰمُ ٱلْمُؤْمِنُ ٱلْمُهَيْمِنُ ٱلْعَزِيزُ ٱلْجَبَّارُ ٱلْمُتَكَبِّرُ سُبْحَٰنَ ٱللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ

هُوَ ٱللَّهُ ٱلْخَٰلِقُ ٱلْبَارِئُ ٱلْمُصَوِّرُ لَهُ ٱلْأَسْمَآءُ ٱلْحُسْنَىٰ يُسَبِّحُ لَهُۥ مَا فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ

[সূরা আল-হাশর,আয়াত নং ২২-২৪]

উচ্চারণঃ হুওয়াল্লা-হুল্লাযী লাইলা-হা ইল্লা-হুওয়া ‘আ-লিমুল গাইবি ওয়াশশাহা-দাতি হুওয়াররাহমা-নুর রাহীম।হুওয়াল্লা-হুল্লাযী লাইলা-হা ইল্লা-হুওয়া আলমালিকুল কুদ্দূছুছ ছালা-মুল ম’মিনুল মুহাইমিনুল ‘আঝীঝুল জাব্বা-রুল মুতাকাব্বিরু ছুবহা-নাল্লা-হি ‘আম্মা-ইউশরিকূন।হুওয়াল্লা-হুল খা-লিকুল বা-রিউল মুছাওবিরু লাহুল আছমাউল হুছনা-; ইউছাব্বিহুলাহূ মা-ফিছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি ওয়াহুওয়াল ‘আঝীঝুল হাকীম।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment