হায়াতুন্নবী (ﷺ) সম্পর্কিত ১৫টি হাদিসঃ

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

□ হায়াতুন্নবী [ﷺ] সম্পর্কে কিছু দলীলঃ

❏ হাদিসের আলোকে হায়াতুন্নবী
সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ●❖● নং: (১)

হযরত আউস ইবনে আউস [رضي الله عنه] থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযূর নবী আকরাম [ﷺ] ইরশাদ ফরমায়েছেনঃ

“নিশ্চয়ই তোমাদের দিনসমূহের মধ্যে জুমু’আর দিনই সর্বোত্তম। সেদিন হযরত আদম [عليه السلام] কে সৃষ্টি করা হয়েছে। সেদিনেই তিনি ওফাত বরণ করেছেন। সেদিনেই সিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং সেদিনই বিকট শব্দ প্রকাশিত হবে। অতএব সেদিনই আমার উপর অধিকহারে দরুদ শরীফ প্রেরণ করো, কেননা তোমাদের দরুদ আমার উপর পেশ করা হয়। সাহাবায়ে কেরাম [ رضى الله عنهما ] আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ [ﷺ]! আমাদের দরুদ আপনার ওফাতের পর আপনার উপরে কিরুপে পেশ করা হবে? আপনার বরকতময় মোবারক দেহ কি মাটিতে মিশে যাবে না? হুযূর ﷺ ফরমালেন, (না, এরুপ নয়) আল্লাহ তা’আলা ভূমির জন্য সম্মাণিত নবীগণের দেহ (খেয়ে ফেলা বা কোনরুপ ক্ষতিসাধন করা) কে হারাম করে দিয়েছেন।”

অপর বর্ণনায় আছে যে, হুযূর [ﷺ] বলেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ আমাদের দেহকে খেয়ে ফেলা ভূমির উপর হারাম করে দিয়েছেন।

☞ এ হাদিসকে ইমাম আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ্, দারেমী, অাহমদ, ইবনু খুজায়মা এবং ইবনু হিব্বান বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাকেম বলেন, এ হাদিস ইমাম বুখারীর শর্তাবলীর ভিত্তিতে সহীহ্ এবং ইমাম ওয়াদিয়াশীও বলেন, ইহাকে ইমাম ইবনু হিব্বান সহীহ্ নির্ধারণ করেছেন এবং ইমাম আসক্বালানী বলেন, ইহাকে ইমাম ইবনু খুজায়মা সহীহ্ নির্ধারণ করেছেন। ইমাম আজলুনী বলেন, ইহাকে ইমাম বায়হাকী উত্তম, মজবুত সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন। ইবনু কাছির বলেন, ইহাকে ইমাম ইবনু খুজায়মা, ইবনু হিব্বান, দারু কুতনী এবং ইমাম নববী ‘আল-আযকার’ -এ সহীহ্ নির্ধারণ করেছেন।

[ সূত্রঃ
১|| আবূ দাউদ: আস্ সুনান, কিতাবুস সালাত, ১/২৭৫, হা-১০৪৭ এবং কিতাবুস সালাত, ২/৮৮, হা-১৫৩১;
২|| নাসাঈ: আস্ সুনান, কিতাবুল জুমু’আ, ৩/৯১, হা-১৩৭৪;
এবং আস্ সুনানুল কুবরা, ১/৫১৯, হা-১৬৬৬;
৩|| ইবনু মাজাহ্: আস্ সুনান, কিতাবু ইকামাতিস সালাত, ১/৩৪৫, হা-১০৮৫;
৪|| দারেমী: আস্ সুনান, ১/৪৪৫, হা-১৫৭২;
৫|| আহমদ ইবনে হাম্বল: আল মুসনাদ, ৪/৮, হা-১৬২০৭;
৬|| আবূ শায়বাহ্: আল মুসান্নাফ, ২/২৫৩, হা-৭৬৯৭;
৭|| ইবনে খুজায়মা: আস্ সহীহ, ৩/১১৮, হা-১৭৩৩-১৭৩৪;
৮|| ইবনে হিব্বান: আস্ সহীহ, ৩/১৯০, হা-৯১০;
৯|| হাকেম: আল মুসতাদরাক, ১/৪১৩, হা-১০২৯;
১০|| বাযার: আল মুসনাদ, ৭/৪১১, হা-৩৪৮৫;
১১|| তাবরানী: আল মু’জামুল আওসাত, ৫/৯৭, হা-৪৭৮০;
এবং মু’জামুল কবীর, ১/২৬১, হা-৫৮৯;
১২|| বায়হাকী: আস্ সুনানুস সগীর, ১/৩৭১, হা-৬৩৪; আস্ সুনানুল কুবরা, ৩/২৪৮, হা-৫৭৮৯; শু’আবুল ঈমান, ৩/১০৯, হা-৩০২৯;
১৩|| যাহদ্বামী: ফাদ্বলুস্ সালাতি আলান্ নবী, হা-২২;
১৪|| ওয়াদীয়াশী: তুহফাতুল মুহতাজ, ১/৫২৪, হা-৬৬১;
১৫|| আসকালানী: ফাতহুল বারী, ১১/৩৭০;
১৬|| আযলূনী: কাশফুল খিফা, ১/১৯০, হা-৫০১;
১৭|| ইবনে কাসীর, তাফসীরিল কুরআনিল আযীম, ৩/৫১৫]
।।।
❏ হাদিসের আলোকে হায়াতুন্নবী
সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম●❖● নং: (২)

হযরত আবূ দারদা [رضي الله عنه] থেকে বর্ণিত হয়েছে, ফরমানে মোস্তফা [ﷺ]  হচ্ছেঃ

” জুমু’আর দিন আমার উপর অধিকহারে দরুদ শরীফ প্রেরণ করো। কারণ তা হল ‘য়াউমে মশহুদ’ (আমার দরবারে ফেরেশতাদের বিশেষ হাজিরার দিন)। ঐদিনে ফেরেশতাগণ(বিশেষভাবে) উপস্থিত হন। এমন কেউ নেই, যে আমার প্রতি দরুদ পাঠ করে যার দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয় না, যতক্ষণ না তা (দরুদ পাঠ) থেকে অবসর হয়। হযরত আবূ দারদা [رضي الله عنه] বলেন, আমি আরজ করলাম, (ইয়া রাসূলাল্লাহ [ﷺ]! আপনার) ওফাতের পরেও?

হুযূর [ﷺ] ফরমালেন, হ্যাঁ, ওফাতের পরেও। (আমার সম্মুখে এরুপে পেশ করা হবে কেননা) নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ভূমির জন্য আম্বিয়ায়ে কেরাম [ عليهم السلام ] -এর শরীর মোবারক খেয়ে ফেলা হারাম করে দিয়েছেন। অতএব আল্লাহ্ তা’আলার নবী জীবিত থাকেন এবং তাঁকে রিযিকও প্রদান করা হয়।”

এ হাদিসকে ইমাম ইবনু মাজাহ্ সহীহ্ সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুনযেরী বলেন, ইহাকে ইমাম ইবনু মাজাহ্ উত্তম-মজবুত সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুনাবী বর্ণনা করেন যে, ইমাম দমীরী বলেন, ইহার রাভীগণ (বর্ণনাকারীগণ) নির্ভরযোগ্য। ইমাম আজলুনীও ইহাকে হাসান বলেছেন।

[সূএঃ(১) ইবনে মাজাহ্ঃ কিতাবুল জানাযা, খন্ড- ১/৫২৪পৃ, হাদিস: ১৬৩৭;
(২) মুনজারীঃ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব, খন্ড- ২/২২৮পৃ, হাদিস: ২৫৮২;
(৩) ইবনে কাসীরঃ তাফসীরু কুরআনিল আযীম, খন্ড- ৩/৫১৫পৃ, খন্ড- ৪/৪৯৩পৃ;
(৪) মুনাবীঃ ফয়যুল কদীর, খন্ড- ২/৮২পৃ;
(৫) আযুলুনীঃ কাশফুল খিফা, খন্ড- ১/১৯০পৃ, হাদিস: ৫০১]
।।।
❏ হাদিসের আলোকে হায়াতুন্নবী
সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম●❖● নং: (৩)

হযরত আবূ হুরাইরা [رضي الله عنه] থেকে বর্ণিত হয়েছে, ফরমানে মোস্তফা [ﷺ] হচ্ছেঃ

“যখনই কেউ আমার প্রতি সালাম পেশ করে, মহান আল্লাহ তা’আলা আমার আত্মাকে ফিরিয়ে দেন যাতে আমি সালামের উত্তর প্রদান করি।”

এ হাদিসকে ইমাম আবূ দাউদ, আহমদ, তাবরানী এবং বায়হাকী বর্ণনা করেছেন। ইমাম আসক্বালানীও বলেন, ইহাকে ইমাম আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন এবং ইহার বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। ইমাম হায়ছমীও বলেন, ইহার সনদে আব্দুল্লাহ ইবনু ইয়াজিদ আল-ইস্কান্দারানী বর্ণনাকারীকে আমি চিনি না, যখন মাহদী ইবনু জাফর এবং অপরাপর সমস্ত বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য।

[সূত্রঃ ক. আবূ দাউদ: আস্ সুনান, কিতাবুল মানাসিক, ২/২২৮, হাদিস: ২০৪১;
খ. আহমদ ইবনে হাম্বল: আল মুসনাদ, ২/৫২৭, হাদিস: ১০৮৬৭;
গ. তাবরানী: আল মু’জামুল আওসাত, ৩/২৬২, হাদিস: ৩০৯২, ৯৩২৯;
ঘ. বায়হাকী: আস্ সুনানুল কুবরা, ৫/২৪৫, হাদিস: ১০০৫০; শু’আবুল ঈমান, ২/২১৭, হাদিস: ৫১৮১, ৪১৬৪;
ঙ. ইবনে রাহবীয়া: আল মুসনাদ, ১/৪৫৩, হাদিস: ৫২৬;
চ. হায়ছুমী: মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ১০/১৬২]
।।।
❏ হাদিসের আলোকে হায়াতুন্নবী
সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ●❖● নং: (৪)

হযরত আনাস ইবনে মালিক [رضي الله عنه] থেকে বর্ণিত, গায়েবের খবর দেনে ওয়ালা হুযূর পুরনূর [ﷺ] -এর মোবারক ফরমান হচ্ছেঃ

[ عن أنس بن مالك، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : ” أتيت – وفي رواية هداب : مررت – على موسى ليلة أسري بي عند الكثيب الأحمر، وهو قائم يصلي في قبره “] (رواه مسلم والنسائي،)

“আমি মে’রাজের রাতে হযরত মূসা [عليه السلام] -এর নিকট আসলাম (হাদ্দার এর এক বর্ণনা মতে) লাল টিলার পাশ দিয়ে আমার গমন হলো (তখন আমি দেখলাম যে,) হযরত মূসা [عليه السلام] নিজ কবরে দন্ডায়মান অবস্থায় নামাযরত ছিলেন।”

এ হাদিসকে ইমাম মুসলিম, নাসাঈ, আহমদ এবং ইবনু আবি শায়বাহ্ বর্ণনা করেছেন।

[সূত্রঃ ক.  মুসলিম: আস্ সহীহ, কিতাবুল ফাযায়েল, ৪/১৮৪৫, হাদিস: ২৩৭৫;
খ. নাসাঈ: আস্ সুনান, কিতাবু কিয়ামিল লাইয়লি ওয়া তাত্বাওউয়িন নাহারি, ৩/২১৫, হাদিস: ১৬৩২; এবং আস্ সুনানুল কুবরা, ১/৪১৯, হাদিস: ১৩২৮]
।।।
❏ হাদিসের আলোকে হায়াতুন্নবী
সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম●❖● নং: (৫)

হযরত আনাস ইবনে মালিক [رضي الله عنه] থেকে বর্ণিত, রাহমাতুল্লীল আলামীন, শাফিউল মুযনেবীন, হুযূর পুরনূর [ﷺ] এর মোবারক ফরমানঃ

[ عن أنس بن مالك ، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : الأنبياء أحياء في قبورهم يصلون. ]

“আম্বিয়ায়ে কেরাম [ عليهم السلام ] নিজ নিজ কবরে জীবিত আছেন এবং নামাযও পড়েন।”

এ হাদিসকে ইমাম আবু ইয়ালা, ইবনে ‘আদী, বায়হাক্বী এবং দায়লমী নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীগণ থেকে বয়ান করেন এবং ইবনে ‘আদী বলেন, এ হাদিসের সনদে কোন ক্রুটি নেই।
ইমাম হায়ছমীও বলেন, ইমাম আবু ইয়ালার বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য এবং আল্লামা শওকানী বলেন, ইহাকে ইমাম বায়হাক্বী সহীহ্ নির্ধারণ করেছেন এবং আম্বিয়ায়ে কেরাম [ عليهم السلام ] -এর জীবনের উপর তিনি একটি জুয্ (সহীহ্ হাদীস সমূহের সংক্ষিপ্ত কিতাব) সংকলন করেছেন। এরুপে ইমাম যুরকানীও বলেন যে, ইমাম বায়হাক্বী আম্বিয়ায়ে কেরাম [ عليهم السلام ] -এর জীবনের উপর একটি নিতান্ত সূক্ষ কিতাব সংকলন করেছেন। যার মধ্যে হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর) মারফু বর্ণনাসমূহ সহীহ সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন।

[সূত্রঃ ক. আবু ইয়ালা(২১০-৩০৮হি.): আল মুসনাদ, খন্ড ৬/১৪৭ পৃ, হাদিস: ৩৪২৫;
খ. ইবনে আদী(২৭৭-৩৮৫হি.):আল কামেল, ২/৩২৭, হাদিস: ৪৬০;
গ. দায়লামী(৪৪৫-৫০৯হি.): মুসনাদুল ফিরদাউস, ১/১১৯, হাদিস: ৪০৩;
ঘ. আস্কালানী(৭৭৩-৮৫২হি.): ফতহুল বারী, ৬/৪৮৭, এবং লিসানুল মিযান, ২/১৭৫, ২৪৬, হাদিস: ৭৮৭, ১০৩৪;
ঙ. হায়ছুমী(৭৩৫-৮০৭হি.): মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ৮/২১১;
চ. সুয়ূতী(৮৪৯-৯১১): শরহু আলা সুনানিন নাসায়ী, ৪/১১০;
ছ. আযীমাবাদীঃ আওনুল মা’বুদ, ৬/১৯, (তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি ‘আল ইনতিবাহিল আযকিরা বি হায়াতি আম্বিয়া’ নামে পুস্তক রচনা করেছি।)
জ. মানাভী(৯৫২-১০৩১হি.): ফয়যূল কাদীর শরহে জামেউস সগীর;
ঝ. শাওকানী(জন্ম-১২৫৫হি.): নায়লুল আওতার, ৫/১৭৮;
ঞ. যুরকানী(১০৫৫-১১২২হি.): শরহু আল মুয়াত্তায়ে লিল ইমামিল মালেক, ৪/৩৫৭]

ইমাম আসক্বালানী (৭৭৩-৮৫২হি.) স্বীয় গ্রন্থ ‘ফতহুল বারী’তে বয়ান করেছেন যেঃ

“ইমাম বায়হাক্বী (৩৮৩-৪৫৮হি.) আম্বিয়ায়ে কেরাম [ عليهم السلام ] তাঁদের কবরে জীবিত থাকার বিষয়ে (সহীহ্ হাদীস সম্বলিত) একটি সুন্দর কিতাব লিখেছেন, যার মধ্যে তিনি হযরত আনাস [رضي الله عنه] -এর হাদিসও উদ্ধৃত করেছেন যে,

“আম্বিয়ায়ে কেরাম [ عليهم السلام ] নিজ কবরে (জাহেরী জীবনের ন্যায়) জীবিত আছেন এবং নামাযও আদায় করেন।”

এ হাদিস তিনি ইয়াহয়া ইবনে আবি কাছির এর নিয়মে বর্ণনা করেছেন, তিনি সহীহ্ হাদিস বর্ণনাকারীদের একজন। তিনি মুস্তালিম ইবনে সাঈদ থেকে বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলও তাঁকে নির্ভরযোগ্য নির্ধারণ করেছেন। ইমাম ইবনে হিব্বান এ হাদিসটি হাজ্জাজ আস্ওয়াদ থেকে বর্ণনা করেছেন এবং তিনি আবু জিয়াদ আল বসরী’র পুত্র হন এবং তাকেও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল নির্ভরযোগ্য নির্ধারণ করেছেন। ইমাম ইবনে মুঈনও হযরত ছাবেত থেকে এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবু ইয়া’লাও নিজ মুসনদে এভাবে এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম বাজ্জারও ইহা বাহির করেছেন। এবং ইমাম বায়হাক্বীও ইহাকে সহীহ্ নির্ধারণ করেছেন।

[সূএঃ ফতহুল বারী ফী শরহে বুখারী; কৃত- ইমাম ইবনে হাজর আসক্বালানী  (৭৭৩-৮৫২হি.), ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃ. ৪৮৭, লাহোর, পাকিস্থান, দারু নশরিল কুতুবিল ইসলামিয়া, ১৪০১হি./১৯৮১খ্রি.]
।।।
❏ হাদিসের আলোকে হায়াতুন্নবী
সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ●❖● নং: (৬)

হযরত আনাস ইবনে মালিক [رضي الله عنه] বয়ান করেন যে, হুযূর নবী আকরাম [ﷺ] ইরশাদ ফরমানঃ

“(মি’রাজ এর রাত্রি) আল্লাহ্ তা’আলা আমার উম্মতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করলেন, তখন আমি ঐ (নামায) গুলোকে নিয়ে ফিরে আসি। এ পর্যন্ত যে আমি মূসা [عليه السلام] এর পাশ দিয়ে চললাম তখন তিঁনি জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহ্ তা’আলা আপনার উম্মতের জন্য আপনার উপর কি ফরয করেছেন? আমি বললাম, আল্লাহ্ তা’আলা ৫০ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন।

তিঁনি বললেন, আপনি রবের দিকে ফিরে যান, কেননা আপনার উম্মত ইহা আদায়ের শক্তি রাখে না। তখন তিঁনি আমাকে ফিরায়ে দিলেন। (আমার আবেদনের প্রেক্ষিতে) আল্লাহ্ তা’আলা উহার একভাগ কমিয়ে দিলেন। আমি হযরত মূসা [عليه السلام] এর নিকট ফিরে আসলাম এবং বললাম যে, আল্লাহ্ তা’আলা একভাগ কমিয়ে দিয়েছেন। তিঁনি বললেন, আপনার রবের নিকট পুনরায় গমন করুন, কেননা আপনার উম্মতের মধ্যে ইহা আদায়ের শক্তিও নেই। তারপর আমি ফিরে গেলাম তখন আল্লাহ্ তা’আলা আরও একভাগ কমিয়ে দিলেন। আমি তাঁর নিকট এলাম। তিঁনি আবারও বললেন, আপনার রবের নিকট যান, কেননা আপনার উম্মতের মধ্যে ইহা আদায়ের শক্তিও নেই।

আমি ফিরে গেলাম তখন (আল্লাহ্ তা’আলা) বললেন, এই (হল যে) পাঁচ (নামায) কিন্তু (পূণ্যের হিসেবে) পঞ্চাশ (এর বরাবর), আমার নিকট নির্দেশাবলী পরিবর্তন হয় না। আমি হযরত মূসা [عليه السلام] এর নিকট আসলাম তখন তিঁনি বললেন, আপনার রবের নিকট যান (আরও বেশী করে কমিয়ে দেয়ার আবেদন করুন)! আমি বললাম, এখন আমার রবের নিকট আমার লজ্জাবোধ হচ্ছে।

অতঃপর (জিব্রাইল আমীন) আমাকে নিয়ে চললেন, শেষ পর্যন্ত ‘সিদরাতুল মুনতাহা’র উপর পৌঁছলেন, যাকে বিভিন্ন রঙে আবৃত করে রেখেছে, জানিনা উহা কি? অতঃপর আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করা হলো যেখানে মুক্তার হারসমূহ রয়েছে এবং উহার মাটি যেন মেশক (এর ন্যায় সুগন্ধিযুক্ত)। — এ হাদিস মুত্তাফাকুন আলায়হি।

[সূএঃ ক) বুখারীঃ আস্ সহীহ, কিতাবুয সালাত, খন্ড-১, পৃ.১৩৬, হাদিস: ৩৪২
এবং কিতাবুল আম্বিয়া, খন্ড-০৩, পৃ. ১২১৭, হাদিস: ৩১৬৪;
খ) মুসলিমঃ আস্ সহীহ, কিতাবুল ঈমান, খন্ড-১, পৃ. ১৪৮, হাদিস: ১৬৩]
।।।
❏ হাদিসের আলোকে হায়াতুন্নবী
সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ●❖● নং: (৭)

হযরত আবু হুরাইরা [رضي الله عنه] থেকে বর্ণিত আছে যে, হুজুর নবী আকরাম [ﷺ] এর মোবারক ফরমানঃ

“মি’রাজের রাত্রে হযরত মূসা [عليه السلام] এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হল। হাদিস বর্ণনাকারী বর্ণনা করেন যে, হযরত [ﷺ] হযরত মূসা [عليه السلام] এর গুণ এরুপে বর্ণনা করলেন যে, তিঁনি হালকা-পাতলা, দীর্ঘকায় এলোমেলো চুলবিশিষ্ট। তিঁনি শানুয়াহ গোত্রের লোক সাদৃশ্য।

হযরত [ﷺ] বলেন, হযরত ঈসা [عليه السلام] এর সাথেও আমার সাক্ষাৎ হলো, তখন হুযূর নবী আকরাম [ﷺ] তাঁর ভূষণের বর্ণনা দিলেন যে, তিঁনি মধ্যম কায়বিশিষ্ট লাল বর্ণওয়ালা যেমন এখনই হাম্মাম থেকে (গোসল সেরে) বের হয়েছেন।

এবং আমি হযরত ইব্রাহিম [عليه السلام] এর সাথে সাক্ষাৎ করেছি এবং আমি তাঁর সকল আওলাদের মধ্যে সবচেয়ে অধিক তাঁর সাদৃশ্যপূর্ণ হই।
     —— এ হাদিস মুত্তাফাকুন আলায়হি।

[সূএঃ ক) বুখারীঃ আস্ সহীহ, কিতাবুল আম্বিয়া, খন্ড-৩, পৃ. ১২৬৯, হাদিস: ৩২৫৪;
খ) মুসলিমঃ আস্ সহীহ, কিতাবুল ঈমান, খন্ড-১, পৃ. ১৫৪, হাদিস: ১৬৮]
।।।
❏ হাদিসের আলোকে হায়াতুন্নবী
সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ●❖● নং: (৮)

হযরত আবু হুরাইরা [رضي الله عنه] থেকে বর্ণিত আছে যে, গায়েবের খবর দেনে ওয়ালা, হুজুর পূরনূর [ﷺ] এর মোবারক ফরমানঃ

“হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম [عليه السلام] ন্যায় প্রতিষ্ঠাকারী হুকুমদাতা এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী নেতা হিসেবে নিশ্চয়ই অবতীর্ণ হবেন, তিনি অবিলম্বে হজ্ব বা ওমরা অথবা উভয়টির নিয়্যতে বের হবেন এবং নিশ্চয়ই তিঁনি আমার কবরে (রওজা পাকে) আসবেন এবং আমাকে সালাম দেবেন আর আমি নিশ্চয়ই তাঁকে (সালামের) উত্তর দিব। হযরত আবু হুরাইরা [رضي الله عنه] (বর্ণনাকারীকে) বললেন, হে আমার ভাতিজা! যদি আপনি তাঁর যেয়ারতের ভাগ্য হাসিল করেন, তখন তাঁর নিকট আরজ করবেন যে, আবু হুরাইরা আপনার খেদমতে সালাম পেশ করেছে।”

এ হাদিসকে ইমাম হাকেম, ইবনে আসাকির এবং মুত্তাকী হিন্দী বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাকেম বলেন, ইহা সহীহ সনদ বিশিষ্ট হাদিস।

[সূএঃ ক) হাকেমঃ আল মুসতাদরাক, ২/৬৫১, হাদিস: ৪১৬২, মক্কা, সৌদি আরব, দারুল বায্ লিন্ নাশরে ওয়াত তাওযীঈ;
খ)  ইবনে আসাকিরঃ তারিখে মদীনা-এ দামেস্ক, ৪৭/৪৯৩; বৈরুত, লেবানন, দারুল ফিকর;
গ) হিন্দীঃ কানযুল উম্মাল, ১৪/১৪৬, হাদিস: ৩৮৮৫১, বৈরুত, লেবানন, মুয়াস্সাতুর রিসালাহ]
।।।
❏ হাদিসের আলোকে হায়াতুন্নবী
সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ●❖● নং: (৯)

হযরত আবু হুরাইরা [رضي الله عنه] থেকে বর্ণিত আছে যে, হুজুর নবী আকরাম [ﷺ] এর মোবারক ফরমানঃ

“আমি ‘হাজরে আসওয়াদ’- এর নিকট দাড়ানো ছিলাম, এই সময় কুরাইশগণ আমাকে আমার মে’রাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করতে শুরু করিল। তারা আমাকে বায়তুল মুকাদ্দাসের এমন সব বস্তুর কথা জিজ্ঞেস করতে লাগিল, যা আমি বিশেষভাবে লক্ষ্য করে দেখি নাই। যার ফলে খুবই চিন্তিত হইয়া পড়িয়াছিলাম।

হুযূর [ﷺ] বলেন, তখন আল্লাহ তা’আলা আমার সামনে বায়তুল মুকাদ্দাসকে উঠিয়ে নিয়ে প্রকৃত দৃশ্যটি তুলিয়া ধরিলেন। আমি তাহা দেখে দেখে কুরাইশদের প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগিলাম।

এরপর আমি নবীদের এক জামাতেও নিজেকে উপস্থিত দেখিলাম। আমি দেখলাম হযরত মূসা [عليه السلام] দন্ডায়মান অবস্থায় নামাযরত ছিলেন। তিনি শানুয়াহ গোত্রের লোকদের ন্যায় দীর্ঘাকৃতি বিশিষ্ট। তার কেশরাজি ছিল কুঞ্চিত।

ঈসা ইবনে মরিয়ম [عليه السلام]-কেও দন্ডায়মান অবস্থায় নামাযরত দেখিলাম। উ’রওয়া ইবনে মাসউদ ছাক্বাফী তাঁর সাদৃশ্য ছিলেন।

হযরত ইবরাহীম [عليه السلام]-কেও নামাযে দাড়ানো দেখিলাম। তাঁর চেহারা তোমাদের সঙ্গীরই (অর্থাৎ- হুযূর মোস্তফা ﷺ’র সাথেই অধিক) সাদৃশ্যপূর্ণ।

অতঃপর নামাযের সময় হল। আমি সকল নবী [عليهم السلام] গণের ইমামতী করলাম।

যখন নামায থেকে অবসর হলাম একজন প্রবক্তা আমাকে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! [ﷺ] ইনি মালিক, জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক, তাঁকে সালাম দিন, আমি তাঁর অভিমুখী হলাম তখন তিঁনি (আমার) পূর্বেই আমাকে সালাম করলেন।”

    _______ইহাকে ইমাম মুসলিম ও নাসাঈ বর্ণনা করেছেন।

[সূএঃ ক) মুসলিম: আস্ সহীহ, কিতাবুল ঈমান , ১/১৫৬ হাদিস: ১৭৮; এবং
খ)  নাসাঈ: আস্ সুনানুল কুবরা, ৬/৪৫৫; হাদীসঃ ১১৪৮০]
।।।
❏ হাদিসের আলোকে হায়াতুন্নবী
সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ●❖● নং: (১০)

হযরত আবু সাঈদ খুদরী [رضي الله عنه] বয়ান করেন যে, আমি হুজুর নবী আকরাম [ﷺ] কে বলতে শুনলামঃ

“সে সময় তিঁনি হযরত ইউসূফ [عليه السلام]’র গুণাবলী বয়ান করতে ছিলেন। যখন হুযূর [ﷺ] তাঁকে (মে’রাজের রাতে) তৃতীয় আসমানে দেখলেন, হযরত [ﷺ] বললেন, আমি এমন এক ব্যক্তিকে দেখলাম যাঁর অাকৃতি চৌদ্দ তারিখের চাঁদের ন্যায় ছিল। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিব্রাইল! ইনি কে? তিনি আরজ করলেন, ইনি আপনার ভাই হযরত ইউসূফ [عليه السلام]।”

ইবনে ইসহাক বলেন, আল্লাহ তা’আলা হযরত ইউসূফ [عليه السلام]’কে ঐ সৌন্দর্য ও প্রভাব দান করেছিলেন যা সারাজগতে তাঁর আগে বা পরে কাউকে দান করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত বলা যেত যে, আল্লাহর শপথ আমি ইহা জানি যে, হযরত ইউসূফ [عليه السلام]’কে পূর্ণ সৌন্দর্য্যের অর্ধাংশ এবং অপর অর্ধাংশ (সারা দুনিয়ার) লোকদেরকে দেয়া হল (কিন্তু আল্লাহ তাঁর হাবীব [ﷺ]’কে রুপ ও সৌন্দর্য্যের সম্পূর্ণটা দান করেছেন)।

এ হাদিসকে ইমাম হাকেম এবং ইবনে কুতায়বাহ্ বর্ণনা করেছেন।

[সূএঃ ক) হাকেমঃ আল মুসতাদরাক, ২য় খন্ড, পৃ. ৬২৩; এবং
খ) ইবনে কুতায়বাহঃ তাবীলু মুখতালিফিল হাদিস, ১ম খন্ড, পৃ. ৪২১]
।।।
❏ হাদিসের আলোকে হায়াতুন্নবী
সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ●❖● নং: (১১)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ [رضي الله عنه] বয়ান করেন যে, শাফাআতের কান্ডারী, হুজুর নবী আকরাম [ﷺ] বললেনঃ

“আমি (সে সময়েও) যেমন হযরত মূসা ইবনে ইমরানকে সে উপত্যকায় দু’খানা ক্বিতওয়ানী চাদরের মধ্যখানে ইহরাম অবস্থায় দেখতে ছিলাম।”

এ হাদিসকে ইমাম তাবরানী, আবু ইয়া’লা এবং আবু নাঈম বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুনযেরী এবং হায়ছমী বলেন, “ইহার ইসনাদ হল হাসান”।

[সূএঃ ক). তাবরানীঃ আল মু’জামূল কবীর, ১০/১৪২, হাদীস: ১০২৫৫; এবং মু’জামুল আওসাত, ৬/৩০১, হাদীস: ৬৪৮৭;
খ). আবূ ইয়ালাঃ আল মুসনাদ, ৭/২৭, হাদীস: ৫০৯৩;
গ). মুনযিরঃ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/১১৮, হাদীস: ১৭৪০;
ঘ). হায়ছুমীঃ মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ, ৩/২২১, এবং ৮/২০৪]
।।।
❏ হাদিসের আলোকে হায়াতুন্নবী
সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ●❖● নং: (১২)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস [رضى الله عنهما] বয়ান করেন যে, গায়েবের খরব দাতা, হুজুর পুরনূর [ﷺ] ওয়াদিয়ে আজরকের দিকে আসলেন এবং জানতে চাইলেন ইহা কি?

সাহাবায়ে কেরাম [رضي الله عنهم] আরজ করলেন, (ইয়া রাসূলাল্লাহ!) ইহা ‘ওয়াদিয়ে আজরক’। তখন হযরত [ﷺ] বললেন-

“আমি যেমন হযরত মূসা ইবনে ইমরান [عليه السلام]’কে দেখতে ছিলাম যে, তিনি এ উপত্যকায় আল্লাহ তা’আলার মহত্ব বয়ান করতঃ অবতীর্ণ হচ্ছেন।”

তারপর হুজুর [ﷺ] জানতে চাইলেন, ইহা কোন পাহাড়ী পথ? সাহাবায়ে কেরাম [رضي الله عنهم] আরজ করলেন, ইহা অমুক অমুক পাহাড়ী পথ। তখন তিঁনি [ﷺ] বললেন-

আমি যেমন হযরত ইউনুছ ইবনে মাত্তা [عليه السلام]’কে লাল রঙের এলোমেলো কেশওয়ালা উষ্টীর উপর বসা অবস্থায় দেখতে ছিলাম। সে উষ্টীর লাগাম খেজুরের ছালের ছিল। এবং তিঁনি তলবিয়াহ বলতে ছিলেন এমতাবস্থায় তাঁর পরনে পশমের জুব্বা ছিল।”

এ হাদিসকে ইমাম হাকেম, ইবনে হিব্বান,আবূ নাঈম, আবূ উ’য়ানা এবং তাবরানী বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাকেম বলেন, “এ হাদিস ইমাম মুসলিম এর শর্তাবলীর ভিত্তিতে ‘সহীহ”।

[সূএঃ ক). হাকেমঃ আল মুসতাদরাক, ২/৩৭৩, ৬৩৮, হাদীস: ৩৩১৩;
খ). ইবনে হিব্বানঃ আস্ সহীহ, ১৪/১০৩, হাদীস: ৬২১৯;
গ). তাবরানীঃ আল মু’জামূল কবীর, ১২/১৫৯, হাদীস: ১২৭৫৬;
ঘ). আবূ নাঈমঃ হিলইয়াতুল আউলিয়া, ২/২২৩, ৩/৯৬;
ঙ). আবূ আওনাঃ আল মুসনাদ, ২/৪২১, হাদীস: ৩৬৮২]
।।।
❏ হাদিসের আলোকে হায়াতুন্নবী
সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ● ❖ ● নং: (১৩)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস [رضى الله عنهما] বয়ান করেন যে:

“সত্তর(৭০) জন আম্বিয়ায়ে কেরাম [عليهم السلام] হজ্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে রাওহাহ্ এর পথে রওয়ানা দিলেন, যাদের পরনে পশমের কাপড় ছিল এবং সত্তর(৭০) জন আম্বিয়ায়ে কেরাম [عليهم السلام] মসজিদে খাইফে নামায আদায় করেন।” (সুবহানআল্লাহ)!

এ হাদিসকে ইমাম হাকেম, তাবরানী এবং বায়হাকী বর্ণনা করেছেন। ইমাম হায়ছমী বলেন, এ হাদিসের বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।

[সূএঃ ক). হাকেমঃ আল মুসতাদরাক, খন্ড-০২, পৃ. ৬৫৩, হাদীস নং: ৪১৬৯;
খ). ইবনে হিব্বানঃ আস্ সহীহ, ১৪/১০৩, হাদীস: ৬২১৯;
গ). তাবরানীঃ আল মু’জামূল কবীর, ১২/৪৭৪, হাদীস: ১৩৫২৫;
ঘ). বায়হাকীঃ আস্ সুনানুল কুবরা, ৫/১৭৭, হাদীস: ৯৬১৮;
ঙ). ফাকেহীঃ আখবারু মক্কা, ৪/২৬৬, হাদীস: ২৫৯৪;
চ). হায়ছমীঃ মাজমাউয যাওয়াইদ, ৩/২৯৭]
।।।
❏ হাদিসের আলোকে হায়াতুন্নবী
সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ● ❖ ● নং: (১৪)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস [رضى الله عنهما] থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযূর নবীয়ে আকরাম [ﷺ] ইরশাদ ফরমায়েছেনঃ

“মসজিদে খাইফে ৭০ (সত্তর) জন আম্বিয়ায়ে কেরাম [عليهم السلام] নামায আদায় করেছেন। যাঁদের মধ্যে হযরত মূসা [عليه السلام]ও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। (সে সময়েও) আমি যেমন তাঁকে দেখতে ছিলাম এবং তাঁর পরনে দু’খানা ক্বিতওয়ানী চাদর ছিল। এবং তিঁনি ইহরাম পরা অবস্থায় শানুয়াহ গোত্রের উষ্ট্রীসমূহের একটি উষ্ট্রীর উপর আরোহী ছিলেন। যার লাগাম খেজুরের ছালের ছিল। যাতে দুইটি রশি ছিল।” (সুবহানআল্লাহ!)

এ হাদিসকে ইমাম তাবরানী, আবূ নাঈম এবং ফাকেহী বর্ণনা করেছেন। ইমাম হায়ছমী বলেন, ইহার বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।

[সূএঃ (ক) তাবরানীঃ আল মু’জামূল কবীর, ১১/৪৫২, হাদীস: ১২২৮৩;
(খ) আবূ নাঈম: হিলইয়াতুল আউলিয়া; ২/১০;
গ) ইবনে আদী: আল কামেল, ৬/৫৮;
ঘ) ফাকেহীঃ আখবারু মক্কা, ৪/৬২২, হাদীস: ২৫৯৩;
(ঙ) দায়লমী: আল মুসনাদুল ফিরদাউস; ২/৩৯২, হাদীস: ৩৭৪০;
চ) হায়ছমীঃ মাজমাউয যাওয়াইদ, ৩/২২১, ২৯৭]
।।।
❏ হাদিসের আলোকে হায়াতুন্নবী
সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ● ❖ ● নং: (১৫)

হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির [رضى الله عنهما] থেকে বর্ণিত যে, হুযূর পুরনূর [ﷺ] ইরশাদ ফরমায়েছেনঃ

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা আমার কবরের উপর একজন ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন, যাকে আল্লাহ তা’আলা সমস্ত সৃষ্টকুলের শব্দ শ্রবণের (এবং বুঝার) শক্তি দান করেছেন, তখন কেয়ামত পর্যন্ত যে কেউ আমার উপর দরুদ শরীফ পাঠ করবে সে ফেরেশতা ঐ দরুদ শরীফ পাঠকের নাম এবং পিতার নাম আমার কাছে পৌঁছাবেন এবং আবেদন করবেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! [ﷺ] অমুকের পুত্র অমুক আপনার উপর দরুদ শরীফ প্রেরণ করেছেন।”
(সুবহানআল্লাহ!)

এ হাদিসকে ইমাম বাজ্জার এবং বুখারী ‘আত-তারিখুল কবীর’ -এ এবং মুনজেরীও বর্ণনা করেছেন। ইমাম হায়ছমী বলেন, ইহার সনদে ইবনে হুমায়রী বর্ণনাকারীকে আমি চিনি না। তিনি ছাড়া (বাকী রাভীগণ) সকল বর্ণনাকারীগণ সহীহ হাদিসের বর্ণনাকারী হন।

আবূ শায়খ ইবনে হাইয়্যান -এর বর্ণনার শব্দসমূহ এরুপ যে, ফরমানে মোস্তফা [ﷺ] হচ্ছেঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলার এক ফেরেশতা আছে, যাকে আল্লাহ তা’আলা সমস্ত সৃষ্টিকুলের শব্দ শ্রবণের শক্তি দান করেছেন, তখন সে ফেরেশতা আমার ওফাতের পর কেয়ামত পর্যন্ত আমার কবরের উপর দন্ডায়মান থাকবে, অতঃপর আমার উম্মতের মধ্য থেকে যে কেউ আমার উপর দরুদ প্রেরণ করবে সে ফেরেশতা তার নাম এবং তার পিতার নাম নিবেন এবং আরজ করবেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! [ﷺ] অমুক ব্যক্তি আপনার খেদমতে দরুদ প্রেরণ করেছেন। তখন আল্লাহ তা’আলা সে ব্যক্তির উপর প্রতিটি দরুদের বিনিময়ে দশটি রহমত অবতীর্ণ করবেন।”

[সূএঃ (ক) তাবরানীঃ আল মু’জামূল কবীর, খন্ড-০৪, পৃষ্ঠা-২৫৫, হাদীস: (১৪২৫, ১৪২৬)
(খ) বুখারী: তারিখুল কবীর; খন্ড-০৭, পৃষ্ঠা-৪১৬, হাদীস:২৮৩১;
গ) ইবনে হাইয়ান: আল আযমা; খন্ড-০২, পৃষ্ঠা-৭৬২;
ঘ) হায়ছমীঃ মাজমাউয যাওয়াইদ, খন্ড-১০, পৃষ্ঠা-১৬২]

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment