হাদিস শাস্ত্রের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি (অসম্পুর্ণ) :-

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।
  • হাদীসের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদঃ

হাদীস : রাসুল (স:) এর নবুয়াতী জীবনের সকল কথা,কাজ এবং অনুমোদনকে হাদীস বলে।



হাদীসের প্রসিদ্ধতম সংজ্ঞা হল,

اقوال النبى صلى الله عليه وسلم وأفعاله وأحواله (فتح الملهم-1/6

রাসূল সাঃ এর কথা,কর্ম এবং অবস্থাকে বলা হয় হাদীস। {ফাতহুল মুলহিম-১/৬}
আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহঃ লিখেন-

وَقَالَ الطِّيبِيُّ: الْحَدِيثُ أَعَمُّ مِنْ أَنْ يَكُونَ قَوْلَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالصَّحَابِيِّ وَالتَّابِعِيِّ وَفِعْلَهُمْ وَتَقْرِيرَهُمْ.

আল্লামা তীবী রহঃ বলেন- হাদীস এটি আম শব্দ। এর মাঝে রাসূল সাঃ এর কথা এবং সাহাবী এবং তাবেয়ীদের কথা এবং তাদের কর্ম ও তাকরীর তথা কোন কিছু দেখে চুপ থাকা বিষয়ও শামিল। {তাদরীবুর রাবী-৬}

তাহলে আল্লামা তীবী রহঃ এর মতে হাদীস হল ৯টি বস্তুর সমন্বয়। তথা-

১- রাসূল সাঃ এর কথা।
২- রাসূল সাঃ এর কর্ম।
৩- রাসূল সাঃ এর তাকরীর।
৪- সাহাবী রাঃ এর কথা।
৫- সাহাবী রাঃ এর কর্ম।
৬- সাহাবী রাঃ এর তাকরীর।
৭- তাবেয়ীগণ রহঃ এর কথা।
৮- তাবেয়ীগণ রহঃ এর কর্ম।
৯- তাবেয়ীগণ রহঃ এর তাকরীর।

আল্লামা তীবী রহঃ এর মত ৯ প্রকারকেই হাদীস বলেছেন হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ। দেখুন-

وَقَالَ شَيْخُ الْإِسْلَامِ فِي شَرْحِ النُّخْبَةِ: الْخَبَرُ عِنْدَ عُلَمَاءِ الْفَنِّ مُرَادِفٌ لِلْحَدِيثِ، فَيُطْلَقَانِ عَلَى الْمَرْفُوعِ وَعَلَى الْمَوْقُوفِ وَالْمَقْطُوعِ.

{তাদরীবুর রাবী-৬}




  • ★ হাদিস শাস্ত্রের কিছু মৌলিক বিষয়াদির সংজ্ঞাঃ



★ সুনান: হাদীসের ঐ কিতাবকে সুনান বলা হয় যা ফিক্হ এর তারতীব অনুয়াযী সাজানো হয়েছে।
★ সুনানে আরবায়া: আবুদাউদ শরীফ+ নাসায়ী শরীফ+তিরমীযী শরীফ+ ইবনে মাজায় শরীফ এই চার হাদীস গ্রন্থকে এক সাথে সুনানে আরবায়া বলা হয়।
★ মুসনাদ: হাদীসের ঐ কিতাবকে বলা হয় যা সাহাবায়ে কিরামের তারতীব অনুয়াযী লিখা হয়েছে।
★ সহীহাইন: বুখারী শরীফ ও মুসলীম শরীফকে এক সাথে সহীহাইন বলা হয়।
★ মুত্তাফাকুন আলাইহি: ইমাম বুখারী (র) ইমাম মুসলিম (র:) উভয়ে একই সাহাবী হতে যে হাদীস স্ব-স্ব প্রান্তে সংকল করেছেন তাকে মুত্তাফাকুন আল্লাইহি বলে।
★ জামে: যে গ্রন্থে হাদীস সমূহকে বিষয় বস্তু অনুসারে সাজানো হয়েছে এবং যার মধ্যে আকাইদ ছিয়ার তাফসির আহকাম, আদব, ফিতান, রিকাক ও মানাকিব এ আটটি অধ্যায় রয়েছে তাকে জামে বলা হয় যেমন জামে তিরমিযী
★ সনদ: হাদীস বর্ণনা কারীদের ধারাবাহিকতাকে সনদ বলে,
★ মতন: হাদীসের মূল শব্দ সমূহকে মতন বলে।


প্রকারভেদঃ






  • (A) মূল বক্তব্য হিসাবে হাদীস তিন প্রকারঃ


১) কাওলী হাদীস : রাসুল(স:) এর পবিত্র মুখের বানীই কাওলী হাদীস।
২) ফিলী হাদীস: যে কাজ রাসূল (স:) স্বয়ং করেছেন এবং সাহাবীগণ তা বর্ণনা করেছেন তাই ফিলী হাদীস।
৩) তাকরীরী হাদীস : সাহাবীদের যে সব কথাও কাজের প্রতি রাসূল (স:) সমর্থন প্রদান করেছেন তাহাই তাকরীরী হাদীস।

  • (B) রাবীদের সংখ্যা হিসেবে হাদীস তিন প্রকারঃ

(1) খবরে মুতাওয়াতির।যা বিশাল জনগোষ্ঠি বর্ণনা করেছেন, যা মিথ্যা হওয়া স্বাভাবিকভাবে অসম্ভব।

খবরে মুতাওয়াতির আবার দুই প্রকার।

(i)- মুতাওয়াতিরে লফজী তথা শব্দ ও অর্থ হিসেবে মুতাওয়াতির।
(ii)- মুতাওয়াতিরে মানুয়ী তথা যা অর্থ হিসেবে মুতাওয়াতির শব্দ হিসেবে নয়।

(2) খবরে ওয়াহিদ।যা শুধু একজন বর্ণনা করেন।

খবরে ওয়াহিদ আবার তিন প্রকার। যথা-

(i)- মাশহুর।প্রতিটি স্তরেই যা তিনজন বা তার চেয়ে বেশি ব্যক্তি করে বর্ণনা করেছেন কিন্তু তাওয়াতুরের পর্যায়ে পৌছেনি।
(ii)- গরীব।যাতে একজন বর্ণনাকারী থাকে।
(iii)- আজীজ। যার প্রতিটি স্তরে দুইজনের থেকে কম বর্ণনাকারী নেই।

খবরে ওয়াহিদের মাশহুর, আজীজ এবং গরীব শক্তিশালী ও দুর্বল হওয়া হিসেবে আবার দুই প্রকার।
যথা-

(a) মাকবুল।
(b) মারদূদ।

মাকবুল হাদীস স্তর হিসেবে আবার দুই প্রকার। যথা-

(★) সহীহ।
(★) হাসান।

  • (C) রাবীদের সিলসিলা হিসেবে হাদীস তিন প্রকারঃ

১। মারফু হাদীস: যে হাদীসের সনদ রাসুল(স:) পর্যন্ত পৌছেছে তাকে মারফু হাদীস বলে।
২। মাওকুফ হাদীস : যে হাদীসের সনদ সাহাবী পর্যন্ত পৌছেছে তাকে মাওকুফ হাদীস বলে।
৩। মাকতু হাদীস: যে হাদীসের সনদ তাবেয়ী পর্যন্ত পৌছেছে তাকে মাকতু হাদীস বলে।


  • (D) রাবী বাদ পড়া হিসাবে হাদীস দুই প্রকারঃ


(1) মুত্তাছিল হাদীস: যে হাদীসের সনদের ধারাবাহিকতা সর্বস্তরে ঠিক রয়েছে কোথা ও কোন রাবী বাদ পড়ে না তাকে মুক্তাছিল হাদীস বলে।

(2) মুনকাতে হাদীস: যে হাদীসের সনদের মধ্যে কোন রাবীর নাম বাদ পড়েছে তাকে মুনকাতে হাদীস বলে।

→ মুনকাতে হাদীস তিন প্রকারঃ

(i) মুরসাল হাদীস: যে হাদীসে রাবীর নাম বাদ পড়া শেষের দিকে অথাৎ সাহাবীর নামই বাদ পড়েছে তাকে মুরসাল হাদীস বলে।

(ii) মুয়াল্লাক হাদীস: যে হাদীসের সনদের প্রথম দিকে রাবীর নাম বাদ পড়েছে অথার্ৎ সাহাবীর পর তাবেয়ী তাবে তাবেয়ীর নাম বাদ পড়েছে তাকে মুয়াল্লাক হাদীস বলে।

(iii) মুদাল হাদীস: যে হাদীসে দুই বা ততোধীক রাবী ক্রমান্বয়ে সনদ থেকে বিলুপ্ত হয় তাকে মুদাল হাদীস বলে।

  • (E) বিশ্বস্ততা হিসেবে হাদীস তিন প্রকারঃ


 (1) সহীহ হাদীস: যে হাদীসের বর্ণনাকারীদের বর্ণনার ধারাবাহিকতা রয়েছে, সনদের প্রতিটি স্তরে বর্ণনাকারীর নাম, বর্ণানাকারীর বিশ্বস্ততা, আস্তাভাজন, স্বরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর কোনস্তরে তাদের সংখ্যা একজন হয়নি তাকে সহীহ হাদীস বলে।

সহীহ হাদীস আবার দুই প্রকার। যথা-

(i)- সহীহ লিজাতিহী।
(ii)-সহীহ লিগাইরিহী।


(2) হাসান হাদীস: সহীহ সবগুনই রয়েছে, তবে তাদের স্বরণ শক্তির যদি কিছুটা দুর্বলতা প্রমাণিত হয় তাকে হাসান হাদীস বলে। 
ইহা আবার ২ প্রকারঃ

হাসান হাদীসও দুই প্রকার। যথা-

(i)-হাসান লিজাতিহী।
(ii)-হাসান লিগাইরিহী।


(3) যায়ীফ হাদীস: হাসান, সহীহ হাদীসের গুন সমুহ যে হাদীসে পাওয়া না যায় তাকে যায়ীফ হাদীস বলে।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment