হযরত আবু যর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি পবিত্র কা’বা ঘরের দরজা হাত দিয়ে ধরা অবস্থায় বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে আমার আহলে বায়তের দৃষ্টান্ত হযরত নূহ আলায়হিস্ সালামের কিস্তির মত। যে এতে আরোহণ করেছে, সে মুক্তি পেয়েছে। আর যে এটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, সে ধ্বংস হয়েছে। [মসনদে আহমদ]
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আরো এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আহলে বায়তের মহব্বতের উপর এন্তেকাল করবে; সে শহীদী মর্যাদা লাভ করবে। যে ব্যক্তি আহলে বায়তের মহব্বতের উপর ইন্তেকাল করবে; সে ক্ষমাপ্তপ্রাপ্ত হিসেবে গণ্য হবে। যে ব্যক্তি আহলে বায়তের মহব্বতের উপর মারা যাবে; তাকে মালাকুল মাউত জান্নাতের শুভ সংবাদ দান করবে। [তাফসীরে কবীর, কাশ্শাফ]
অপর বর্ণনায় হযরত যায়েদ বিন আরকাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন এমন এক জায়গায় যাতে পানি ছিল। ওই স্থানের নাম ছিল খাম। যার অবস্থান মক্কা মোকাররমা ও মদীনা মোনাওয়ারার মধ্যখানে। খুতবার প্রারম্ভে তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করলেন। তিনি আমাদেরকে উপদেশ দিলেন এবং সওয়াব ও আযাবের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। অতঃপর এরশাদ ফরমালেন, হে মানব সকল! আমি সংবাদ দিচ্ছি। অতি সত্ত্বর আমার নিকট আমার প্রভুর দূত আসবে, আমি আল্লাহর নির্দেশ গ্রহণ করবো। আমি তোমাদের মাঝে দু’টি মহামূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি; প্রথমটি হলো আল্লাহর কিতাব। সেখানে হেদায়ত ও নূর রয়েছে। অতএব, তোমরা আল্লাহর কিতাবের উপর আমল কর এবং একে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধর। তিনি কিতাবুল্লাহর উপর আমলের জন্য উদ্বুদ্ধ এবং উৎসাহিত করেছেন। দ্বিতীয়টি হল আমার আহলে বায়ত। আমি তোমাদেরকে আমার আহলে বায়তের ব্যাপারে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। [সহীহ্ মুসলিম শরীফ]
অনুরূপভাবে হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বিদায় হজ্বে আরাফাতের দিন রসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে ‘কাসওয়া’ নামক উস্ট্রের উপর আরোহিত অবস্থায় বলতে শুনেছি, নবীজি এরশাদ ফরমান- হে লোক সকল! আমি তোমাদের মধ্যে যা রেখে যাচ্ছি যদি তোমরা তা দৃঢ়ভাবে ধারণ কর তাহলে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তা হল আল্লাহর কিতাব এবং আমার বংশধর তথা আহলে বায়ত।
[তিরমিযী শরীফ]
এভাবে অসংখ্য হাদীস শরীফে আল্লাহ্ তা‘আলার প্রিয় হাবিব সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আহলে বায়তের মর্যাদা বর্ণনা করেছেন, তন্মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করার প্রয়াস পাচ্ছি।
শানে মওলা আলী শেরে খোদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু
হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, আল্লাহ্ তা‘আলা সকল নবীর বংশধর তাঁদের ঔরশজাত পুত্র সন্তানের মাধ্যমে বিদ্যমান রেখেছিলেন। আর আমার বংশধারা আলী ইবনে আবু তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর ঔরশজাত সন্তানের মাধ্যমে জারী থাকবে। [আল মু’জামুল কবীর]
হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাবুকের যুদ্ধের মধ্যে রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত আলীকে খলীফা (স্থলাভিষিক্ত) মনোনীত করেন। অতঃপর হযরত আলী বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে নারী ও শিশুদের খলীফা মনোনীত করলেন? রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আলী! তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমি আমার এভাবে স্থলাভিষিক্ত হবে যেভাবে হারুন আলায়হিস্ সালাম মুসা আলায়হিস্ সালামের স্থলাভিষিক্ত ছিলেন। তবে আমার পরে আর কোন নবী হবে না। [সহীহ্ বুখারী ও মুসলিম শরীফ]
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে সম্বোধন করে বললেন, ‘হে আলী! আমি আর তুমি ব্যতীত অন্য কারো জন্য জানাবাত তথা অপবিত্র অবস্থায় এ মসজিদে (মসজিদে নববী শরীফ) অবস্থান কিংবা প্রবেশ বৈধ নয়। [আল মু’জামুল কবীর]
উল্লেখ্য, হযরত আলীর শান এত সুউচ্চ হওয়ার কারণ হলো, হযরত আলীর সাথে নবীজির পবিত্র শরীর আর রূহের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এক বিশেষ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল।
মাওলা আলী শেরে খোদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ঐ সত্তার শপথ! যিনি বীজ উৎপন্ন করেছেন ও প্রাণীকুল সৃষ্টি করেছেন, নবীজি আমাকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, আমার সাথে শুধু মু’মিনরাই ভালবাসা রাখবে। আর শুধু মুনাফিকরা আমার সাথে শত্রুতা পোষণ করবে। [সহীহ্ মুসলিম শরীফ]
হযরত বারা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলে আত্বহার সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত আলীকে সম্বোধন করে এরশাদ ফরমান, তুমি আমি হতে আর আমি তুমি হতে। [সহীহ্ বোখারী শরীফ]
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান আমি ইলমের শহর, আর আলী সেই শহরের দরজা। সুতরাং যে কেউ ইলম অর্জন করতে চাইলে; তাকে সে দরজায় আসতেই হবে। [মুসতাদরাক লিল হাকিম]
হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী এ দো জাঁহা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, আমি হিকমতের ঘর। আর আলী সে ঘরের দরজা। [তিরমিযী শরীফ]
হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে মসজিদে বসে আছেন।
হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু সেখানে আগমন করলেন এবং বসার জন্য জায়গা দেখতে লাগলেন। এদিকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম দেখছিলেন যে, কে তাঁকে বসার জায়গা করিয়ে দেয়। হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নবীজির ডান পাশে বসা ছিলেন, তিনি তাঁর জায়গা থেকে সরে গিয়ে মাওলা আলীকে ডেকে বসালেন। আহলে বায়তের প্রতি সিদ্দিকে আকবরের এ ভক্তি শ্রদ্ধা দেখে নবীজির নূরানী চেহারা মোবারক এ আনোয়ারা আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো এবং সিদ্দিকে আকবরের দিকে ফিরে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ফরমালেন, হে আবু বকর! সম্মানিত ব্যক্তি থেকেই সম্মান প্রকাশ পায়। [আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া]
হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের নিকট আরয করলাম, হে আল্লাহর রসূল! লোকেরা আমার সাথে হিংসা করছে, অতঃপর নবীজি ফরমান, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমি চারজনের মধ্যে চতুর্থ হবে। অর্থাৎ খেলাফতের মধ্যে। সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারীদের মধ্যে আমি, তুমি, হাসান-হোসাইন এবং আমাদের বিবিগণ। আমাদের বিবিগণ আমাদের ডানে ও বামে থাকবে এবং আমাদের অন্যান্য সন্তানগণ তথা আমার বংশধর আমাদের বিবিদের পেছনে থাকবে। [তাফসীরে রুহুল বয়ান]
শানে খাতুনে জান্নাত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা
হযরত আনাস বিন মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, আমি আমার মেয়ের নাম রাখলাম ফাতেমা। কেননা, আল্লাহ্ তাকে ও তার প্রতি ভালবাসা পোষণকারীগনকে দোযখ থেকে মুক্ত করে দিয়েছেন।
[সাওয়াঈক্বে মুহরিকা]
হযরত আনাস বিন মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, আমার উম্মতের নারীদের মধ্যে আমার মেয়ে ফাতেমাই হলো সর্বোত্তম।
[আল মুস্তাদরিক-হাকেম]
উম্মুল মু’মেনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, হে ফাতেমা! তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমি সমগ্র বিশ্ব ও জান্নাতের রমণীদের সরদার হবে? [সহীহ্ বুখারী ও মুসলিম শরীফ]
হযরত হোযায়ফা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমি আমার আম্মাকে বললাম, আমাকে অনুমতি দিন, আমি গিয়ে রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের সাথে মাগরিবের নামায আদায় করব। অতঃপর তাঁর খেদমতে আমার এবং আপনার ক্ষমার জন্য দো‘আর আবেদন করব। আম্মা অনুমতি দিলেন। আমি নবীজির খেদমতে হাযির হয়ে মাগরিবের নামায তাঁর সাথে আদায় করলাম। অতঃপর তিনি নফল নামায পড়লেন। তারপর ইশার নামায পড়লেন। যখন তিনি নামায থেকে অবসর হয়ে চলে যাচ্ছিলেন; তখন আমিও তাঁর পেছনে পেছনে চললাম। তিনি আমার পদধ্বনি শুনে বললেন, তুমি কি হোযাইফা? আমি আরয করলাম, হ্যাঁ, তিনি ফরমান, তোমার কী প্রয়োজন? আল্লাহ্ তোমাকে ও তোমার মাকে ক্ষমা করুন। ইনি একজন ফেরেশতা; যিনি এ রাতের পূর্বে কখনো পৃথিবীতে অবতীর্ণ হননি।
এ ফেরেশতা তাঁর প্রতিপালকের নিকট হতে আমাকে এসে সালাম করার অনুমতি নিয়েছেন এবং আমাকে এ সুসংবাদ দিচ্ছেন যে, ফাতেমা জান্নাতের রমণীদের সরদার এবং হাসান ও হোসাইন জান্নাতের যুবকদের সরদার।
[তিরমিযী শরীফ]
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে হাশেমী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, বেহেশতের নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম হল খাদীজা বিনতে খোয়ালিদ, ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ, মরিয়ম বিনতে ইমরান ও ফেরআউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুযাহিম। [আল ইস্তিহাব]
হযরত জামী’ বিন ওমাইর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমি আমার ফুফুর সাথে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার খেদমতে হাজির হলাম।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের নিকট সর্বাধিক প্রিয় কে ছিল? উত্তরে হযরত আয়েশা বললেন, ফাতেমা। অতঃপর আরয করা হলো, আর পুরুষদের মধ্যে? তিনি বললেন, তাঁর স্বামী (আলী)।
[তিরমিযী শরীফ]
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই রাসূলে আনোয়ার সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম যখন সফরে যেতেন তখন সবার পরে এবং যখন সফর থেকে আসতেন তখন সবার আগে হযরত ফাতেমার সাথে সাক্ষাৎ করতেন। [আল মুস্তাদরিক হাকেম]
হযরত মিসোয়ার বিন মাখরামা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলে আক্রাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, ফাতেমা আমার শরীরের অংশ। যে ব্যক্তি তাকে অসন্তুষ্ট করে, সে আমাকে অসন্তুষ্ট করে। অপর বর্ণনায় রয়েছে, আমাকে অস্থির করে তুলে, যা তাকে অস্থির করে তুলে এবং আমাকে কষ্ট দেয় যা তাকে কষ্ট দেয়। [সহীহ্ বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী শরীফ]
শানে হাসনাইনে করীমাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা
হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে আত্বহার সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, যে ব্যক্তি হাসান ও হোসাইনকে ভালবাসল, বস্তুত সে আমাকে ভালবাসলো এবং যে ব্যক্তি এ দু’জনের সাথে বিদ্বেষ রাখল, বস্তুত সে আমার সাথে বিদ্বেষ রাখল। [ইবনে মাজাহ্ শরীফ]
হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন হুযূর পুরনুর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হোসাইনের হাত ধরে এরশাদ ফরমান, যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসবে এবং এ দু’জন (হাসনাইন), তাদের পিতা (আলী) ও তাদের মাতা (ফাতেমা)কে ভালবাসবে সে কিয়ামত দিবসে আমার সাথে একই স্তরে থাকবে। [তিরমিযী শরীফ]
হযরত সালমান ফারসী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে এরশাদ করতে শুনেছি, হাসান ও হোসাইন দু’জনই আমার পুত্র। যে ব্যক্তি এ দু’জনকে ভালবাসল সে আমাকে ভালবাসল, যে আমাকে ভালবাসল সে আল্লাহকে ভালবাসল এবং যে আল্লাহকে ভালবাসল আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এ দু’জনের প্রতি বিদ্বেষ রাখল, সে আমার প্রতি বিদ্বেষ রাখল, যে আমার প্রতি বিদ্বেষ রাখল সে আল্লাহর প্রতি বিদ্বেষ রাখল এবং যে আল্লাহর প্রতি বিদ্বেষ রাখল আল্লাহ্ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। [আল মুস্তাদরিক হাকেম]
হযরত উসামা বিন যায়েদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমি জানে দো আলম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি যে, তিনি হাসান ও হোসাইন উভয়কে কোলে নিয়ে এরশাদ করেন, এ দু’জন আমার ও আমার কন্যার পুত্র। হে আল্লাহ্! আমি তাদেরকে ভালবাসি। তুমিও তাদেরকে ভালবাস এবং তাকেও ভালবাস যে তাদেরকে বালভাসবে। [তিরমিযী শরীফ] হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি হাসানকে নবীজির কোল মোবারকে দেখলাম যে, তিনি তাঁর আঙ্গুলসমূহ হুযূর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের দাড়ি মোবারকে ঢুকিয়ে দিচ্ছিলেন এবং নবীজি নিজের জিহ্ববা মোবারক তাঁর মুখে ঢুকালেন। অতঃপর এরশাদ করলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি তাকে ভালবাসি। তুমিও তাকে ভালবাস। [আল মুস্তাদরিক হাকিম]
হযরত ইয়া’লা বিন মুররা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সরকারে দো আলম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, হোসাইন আমি হতে আর আমি হোসাইন থেকে। আল্লাহ্ তাকে ভালবাসুন যে হোসাইনকে বালভাসে। [তিরমিযী শরীফ]
সাওয়ায়িকে মুহরিকা গ্রন্থের বর্ণনায় এসেছে, একদিন হযরত ইমাম হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু, হযরত ওমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর খেলাফতকালে তাঁর দরবারে আগমন করেন। সেখানে গিয়ে দেখতে পান, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর দরজায় দাঁড়িয়ে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করছেন। যে কোন কারণে তাঁকে অনুমতি দেয়া হয়নি। ইমাম হাসান এ মনে করে চলে গেলেন যে, তিনি যেখানে তাঁর পুত্রকে অনুমতি দেননি, সেখানে আমাকেও দেয়া হবে না।
পরবর্তীতে হযরত ওমর জানতে পারলেন যে, ইমাম হাসান প্রবেশ না করেই ফিরে গেছেন। তখন তিনি কালবিলম্ব না করে তাঁর নিকট গেলেন এবং বললেন আপনার আগমনের সংবাদ আমি পাইনি। ইমাম হাসান বললেন, যেখানে আপনি আপনার পুত্রকে অনুমতি দেননি, সেখানে কি আমাকে দেবেন? উত্তরে ওমর ফারুক বললেন, আপনি তার চাইতে অনুমতি লাভের অধিক যোগ্য। আল্লাহ্ তা‘আলার পর আপনারা ব্যতীত মাথায় ওই চুলকে উৎপন্ন করেছে? অর্থাৎ আপনাদের ওসীলায় সৎ পথ পেয়েছি এবং আপনাদের বরকতেই এ মর্যাদায় উপনীত হয়েছি। অপর বর্ণনায় হযরত ওমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, আপনি যখনই আসবেন, অনুমতি ছাড়াই আসবেন। [সাওয়ায়িক্বে মুহরিকা]
একদিন হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু তাঁর কাপড়ের আঁচল দ্বারা ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর চরণযুগল হতে ধুলাবালি পরিস্কার করছিলেন। ইমাম হোসাইন বললেন, ‘হে আবু হুরায়রা! একি করছেন? আবু হুরায়রা আরয করলেন, হুযুর আমাকে ক্ষমা করুন। আল্লাহর কসম! আপনার পদ মর্যাদা সম্পর্কে যতটুকু আমি জানি যদি লোকেরা তা জানতো তাহলে তারা আপনাকে কাঁধে নিয়ে ঘোরাফেরা করতো।
[ইজহারুস্ সা’দাত]
হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, মহান প্রভু আল্লাহ তা‘আলার শপথ করে বলছি, যার কুদরতী হাতে আমার জান। নিশ্চয়ই আমার আত্মীয়-স্বজন অপেক্ষা রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের আত্মীয়-স্বজন তথা নবীজির আহলে বায়ত (ইমাম হাসান-হোসাইন) আমার নিকট অধিক প্রিয়। [সহীহ্ বুখারী শরীফ]
হযরত ওমর বিন খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদিন হাসান এবং হোসাইন উভয়কে নবীজির কাঁধ মোবারকের উপর আরোহী অবস্থায় দেখে বললাম, কতই না উত্তম সাওয়ারীতে তোমরা আরোহন করেছ। একথা শুনে নবীজি সাথে সাথে বলে উঠলেন, আরোহণকারীদ্বয় কি কম উত্তম? [মাজমুয্ যাওয়ায়িদ]
আহলে বায়তে রসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার শান, মান-মর্যাদার উপর প্রিয় নবীজির অনেক অনেক নূরানী বাণী রয়েছে। এ নিবন্ধে মহান রাব্বুল ইজ্জতের দরবারে ফরিয়াদ জানাই, তিনি যেন আমাদেরকে আহলে বায়তের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করার তাওফিক দান করেন। আমিন।