পৃথিবীতে সুন্দর ও উপভোগ্য জীবন যাপনে সচ্চরিত্র নারী-পুরুষের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অনস্বীকার্য। ইসলাম নারী-পুরুষ প্রত্যেককে যার যার উপযুক্ত সম্মান ও অধিকার দিয়েছে। কোরআন এবং হাদিসের গ্রন্থসমূহে পুরুষের আলোচনার পাশাপাশি গুণবতী নারীদের আলোচনাও বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। কারণ নারী পথভ্রষ্ট হয়ে গেলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
তাই একটি আদর্শ সমাজ গঠনে একজন পুন্যময়ী নারীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে হাদিসের আলোকে পুণ্যময়ী নারীর পাঁচটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো—
পুণ্যময়ী নারী স্বামীর অনুগতা
পৃথিবীতে একজন স্বামীর সবচেয়ে মূল্যবান এবং দামি বস্তু একজন পুণ্যময়ী স্ত্রী। স্ত্রী যত ভালো হবে, স্বামীর সংসার তত সুখের হবে। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পার্থিব জগত্টাই হলো ক্ষণিক উপভোগের বস্তু।
আর পার্থিব জগতের সর্বোত্তম সম্পদ (উপভোগের বস্তু) পুণ্যময়ী নারী।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৪৬৭)
আরেক বর্ণনায় এসেছে। নবী (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুমিন ব্যক্তি আল্লাহভীতির পর উত্তম যা লাভ করে তা হলো পূণ্যময়ী স্ত্রী। স্বামী তাকে কোনো নির্দেশ দিলে সে তা পালন করে; সে তার দিকে তাকালে (তার হাস্যোজ্জ্বল চেহারা ও প্রফুল্লতা) তাকে আনন্দিত করে এবং সে তাকে শপথ করে কিছু বললে সে তা পূর্ণ করে।
আর স্বামীর অনুপস্থিতিতে সে তার সম্ভ্রম ও সম্পদের হেফাজত করে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৮৫৭)
সতীত্ব ও স্বামীর ধন-সম্পদ রক্ষাকারী
একজন নারীর প্রধান সৌন্দর্য আপন সতীত্বের হেফাজত করা। যে নারী তার সতীত্ব রক্ষা করতে পারে না সে নারী চরম হতভাগা। বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আল্লাহর নবী (সা.) বলেছেন, ‘নারী যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে, রমজান মাসের রোজা রাখবে, নিজ লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে এবং স্বামীর আনুগত্য করবে তখন তাকে বলা হবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৬৬১)
স্বামীর সম্পদ রক্ষার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘উত্তম স্ত্রী সে, যার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে তোমাকে আনন্দিত করে, আদেশ করলে আনুগত্য করে, তুমি দূরে থাকলে তার নিজের ব্যাপারে এবং তোমার সম্পদের ব্যাপারে তোমার অধিকার রক্ষা করে।
(মুসনাদে তয়ালিসি, হাদিস : ২৩২৫)
দ্বিনদার ও চরিত্রবান
নারীর আরেকটি সৌন্দর্য হচ্ছে, দ্বিনদারির পাশাপাশি চরিত্রবান হওয়া। যে নারীর চরিত্র নষ্ট সে নারী সর্বমহলে ধিকৃত। তাই সর্বদা নারীদের চরিত্র সুন্দর থেকে সুন্দর করার চেষ্টা অব্যাহত রাখা।
এক হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) দ্বিনদার ও চরিত্রবান নারীদের বিবাহ করার উৎসাহ প্রদান করে বলেছেন, ‘তিন গুণের যেকোনো একটি গুণের কারণে নারীকে বিবাহ করা হয়। ধন-সম্পদের কারণে, রূপ-সৌন্দর্যের কারণে ও দ্বিনদারির কারণে। তুমি দ্বিনদার ও চরিত্রবানকেই গ্রহণ করো।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১১৭৬৫)
গৃহে অবস্থান করা
অপ্রয়োজনে বাইরে না যাওয়া গুণবতী ও পুণ্যময় নারীর অনন্য বৈশিষ্ট্য। ইসলামপূর্ব যুগে নারীরা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে লাগামহীনভাবে ঘোরাফেরা করত। পর্দা ছাড়া তাদের এই চলাফেরা আল্লাহর কাছে পছন্দ হয়নি। তাই তো এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা নারীদের পর্দা সহকারে চলাফেরার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করো। (পর পুরুষকে) সাজসজ্জা প্রদর্শন করে বেড়িও না। যেমন প্রাচীন জাহেলি যুগে প্রদর্শন করা হতো।’
(সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩৩)
বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে আল্লাহর রাসুল (সা.) এক হাদিসে এভাবে তুলে ধরেছেন, ‘নারী হলো আবরণীয়। যখন সে বের হয় শয়তান তার অনুসরণ করে। যখন সে ঘরে আবদ্ধ থাকে তখন আল্লাহর রহমত লাভের অতি নিকটবর্তী থাকে।’ (মুসনাদে বাজজার, হাদিস : ২০৬১ )
শরীরে উল্কি-ট্যাটু না আঁকা
ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য শরীরে উল্কি-ট্যাটু অঙ্কন করা সম্পূর্ণরূপে হারাম। কারণ এর মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন করা হয়। ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যেসব নারী সৌন্দর্যের জন্য উল্কি অঙ্কন করে এবং যাদের জন্য করে এবং যেসব নারী ভ্রু উৎপাটন করে এবং দাঁত ফাঁকা করে, আল্লাহ তাআলা তাদের অভিসম্পাত করেছেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৬০৪)
আল্লাহ তাআলা সব মুসলিম নারীর এই গুণগুলো অর্জন করে পুণ্যময়ী ও আল্লাহর নৈকট্যভাজন বান্দী হওয়ার তাওফিক দান করুন।