★★★ দশম হাদীছ( اسناده ضعيف )
উছমান ইবনু আবিল আস নবী করীম (সঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ যখন শা’বান মাসের পনের তারিখ রাত আগমণ করে তখন জনৈক আহবানকারী আল্লাহর পক্ষ থেকে আহবান করতে থাকেন যে, আছো কি কোন ক্ষমার ভিখারী তাকে আমি ক্ষমা করে দিবো? আছো কি কোন যাচনাকারী যাকে আমি দান করবো? অতঃপর যে কেউ চায় আল্লাহ তাআলা তাকে তাই দান করেন। কিন্তু ব্যভিচারিনী এবং মুশরিক ছাড়া।
উক্ত হাদীছটি ইমাম বায়হাকী তাঁর শুয়াবুল ঈমানে সংকলন করেছেন।
░▒▓█► হাদীসটির মান :
উক্ত হাদীছের সনদ সম্পর্কে পর্যালোচনাঃ
১। উক্ত হাদীছটি ইমাম বাইহাকী আলী ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আবদিল্লাহ ইবনু বিশর থেকে বর্ণনা করেন।
যার সম্পর্কে খতীব আল বাগদাদী বলেনঃ
“ তিনি সত্যবাদী, নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত এবং উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। ”
( তারীখে বাগদাদঃ খ-১২, পৃ-৯৯ )
২। আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনু আমর আর রাযযায (মৃঃ ৩৩৯ হিঃ)
যার সম্পর্কে হাকেম বলেনঃ
“ তিনি নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য ছিলেন। ”
( সিয়ারু আলামিন নুবালাঃ খ-১৫, পৃ-৩৮৬ )
খতীব আল বাগদাদী বলেনঃ
“ তিনি নির্ভরযোগ্য ও আস্থাযোগ্য ছিলেন। ”
( তারীখে বাগদাদঃ খ-৩, পৃ-১৩২ )
৩। মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আর রিয়াহী (মৃঃ ২৭৬ হিঃ)
যাঁর সম্পর্কে ইমাম দারা কুতনী বলেনঃ
“ তিনি সত্যবাদী। ”
খতীব আল বাগদাদী বলেনঃ
“ আমি তাঁর সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনু আহমদকে জিজ্ঞেস করেছি, তিনি বলেছেনঃ মুহাম্মদ সত্যবাদী। ”
( তারীখে বাগদাদঃ খ-১, পৃ-৩৭২ )
৪। জামি ইবনুস সবীহ আর রমলী
হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী বলেনঃ
“ তাঁর সম্পর্কে আব্দুল গণী ইবনু সাঈদ মুশতাবিহ এর মধ্যে আলোচনা করেছেন এবং বলেছেন তিনি একজন দুর্বল রাবী। এবং ইবনে আবী হাতিম স্বীয় গ্রন্থ আল জরহি ওয়াততাদীলে যাকে উল্লেখ করে কোন আলোচনা ও সমালোচনা করেন নি এবং বলেছেন যে তাঁর থেকে ইমাম আবু যুরআ ও ইবনে মাঈন হাদীছ গ্রহণ করেছেন। ”
( খ-১, পৃ-৫৩০ )
( উল্লেখ্য যে, ইবনু আবী হাতীম কারো ব্যাপারে চুপ থাকলে ঐ রাবী নির্ভরযোগ্য বলে সাব্যস্ত হয়। )
৫। মারহূম ইবনু আবদিল আজীজ
হাফিয ইবনু হাজার তার সম্পর্কে বলেছেনঃ
“ তিনি অষ্টম স্তরের একজন নির্ভরযোগ্য রাবী। ”
( তাক্বরীবুত তাহযীবঃ খ-২, পৃ-১৬৯ )
ইমাম আহমদ, নাসাঈ, ইবনু মাঈন প্রমুখও তাঁকে ছিক্বাহ বলেছেন। হাফিয যাহাবী, ইবনু হিব্বানও তাঁকে ছিকাহ এর মধ্য থেকে বিবেচনা করেছেন।
৬। দাউদ ইবনু আবদির রহমান আল আততার
তাঁর সম্পর্কে আবু হাতিম বলেছেনঃ
“ তিনি গ্রহণযোগ্য। একজন নেককার ছিলেন। ”
( তাহযীবুল কামালঃ খ-৮, পৃ-৪১৫ )
যাহাবী (রহঃ) বলেনঃ
ثقة তিনি নির্ভরযোগ্য।
ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন বর্ণনা করেন যে,
তিনি নির্ভরযোগ্য ছিলেন।
হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী বলেনঃ
তিনি ছিকাহ রাবী।
৭। হিশাম ইবনু হাসসান আল আযদী
তাঁর সম্পর্কে হাদীছ পর্যালোচকদের মন্তব্য সমষ্টিগতভাবে নিম্নে পেশ করা হলঃ
হাফিজ ইবনু হাজার, উছমান বিন আবী শায়বা, ইবনে হিব্বান, ইমাম আবু হাতিম, ইবনু মঈন, আল আজালী, ইবনু সাআদ, ইবনু আদী প্রমূখ ইমামদের দৃষ্টিতে তিনি নির্ভরযোগ্য সত্যবাদী বহু হাদীছের বর্ণনাকারী ছিলেন।
( তাহযীবুত তাহযীবঃ খ-১১, পৃ-৩৩; জরাহ ওয়াত তাদীলঃ খ-৯, পৃ-৫৪ )
তবে ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) তার সম্পর্কে বলেনঃ
“ হিশাম হাসান বসরী এবং আতা থেকে যেসব হাদীছ বর্ণনা করেছেন, সেগুলোর ব্যাপারে মুহাদ্দিছগণ প্রশ্ন তুলেছেন, কারণ হিশাম হাদীছের মধ্যে ইরসাল (রাবী এর নাম উল্লেখ না করা) করতেন। তাই মুহাদ্দিছগণ মনে করেন, হিশাম এসব হাদীছ হাওশাব এর কিতাব থেকে নিয়েছেন। (সরাসরি আতা ও হাসান থেকে নেননি।) ”
( তাহযীবুত তাহযীবঃ খ-১১, পৃ-৩৫ )
ইবনু আদী বলেনঃ
“ আরআরা বলেনঃ আমাকে জারীর বলেছেনঃ আমি সাত বছর যাবৎ হাসান বসরী (রহঃ) এর দরসে বসেছি। কিন্তু হিশামকে কখনো তাঁর সাথে দেখিনি। আমি (আরআরা) বললামঃ হে আবু নাসর (জারীর)! হিশাম তো আমাদেরকে হাসান বসরী (রহঃ) এর সূত্রে বহু হাদীছ বর্ণনা করেছেন। আর আমরা হিশাম থেকে বর্ণনা করেছি। সুতরাং আপনার ধারণা মতে হিশাম এসব হাদীছ কার নিকট থেকে গ্রহণ করেছেন? জারীর প্রতি উত্তরে বললেনঃ আমার ধারণা মতে তিনি হাওশাব থেকে গ্রহণ করেছেন। ”
( সিয়ারু আলামিন নুবালাঃ খ-৬, পৃ-৩৫৫; মীযানুল ইতিদালঃ খ-৪, পৃ-২৯৫ )
পর্যালোচনাঃ
অতএব, ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) এবং আরআরা (রহঃ) কর্তৃক উল্লেখিত বিবরণ দ্বারা বুঝা যায় যে, হিশাম ইবনু হাসসান সরাসরি হাসান বসরী (রহঃ) থেকে হাদীছ বর্ণনা করেননি। বরং মাঝখানে আরো একজন রাবী আছেন, হিশাম যাঁর নাম তাঁর সনদে উল্লেখ করেন নি। হাদীছ শাস্ত্রের পরিভাষায় এটাকে তাদলীস বলা হয়। আর মুহাদ্দিছীনে কেরামের কাছে সিকাহ (ثقة) রাবী এর তাদলীছ গ্রহণযোগ্য।
যথা তাদরীবুর রাবী ও কাওয়ায়িদ ফী উলূমিল হাদীছ গ্রন্থে এ নীতিমালা উদ্ধৃত হয়েছে যে,
“ বাযযার এর ভাষ্যমতে ছিকাহ রাবীগণের মধ্য থেকে কেউ তাদলীস করলে তাঁর তাদলীস উলামাদের নিকট গ্রহণযোগ্য। ”
( তাদরীবুর রাবীঃ খ-১, পৃ-২২৯; ক্বাওয়ায়িদ ফী উলূমিল হাদীছঃ পৃ-১৫৯ )
৮। হাসান ইবনু আবিল হাসান আল বাসরী
তিনি একজন প্রসিদ্ধ তাবেঈ।
হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ
তিনি হযরত আলী (রঃ), হযরত তালহা (রঃ) এবং হযরত আয়শা (রঃ) এর সাক্ষাত লাভ করেছেন। সওবান (রঃ), আম্মার ইবনে ইয়াসির (রঃ), উসমান ইবনু আবিল আস (রঃ) এবং মা’কাল ইবনু সিনান (রঃ) প্রমূখ থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তাঁদের থেকে শ্রবণের মর্যাদা লাভ করেন নি।
আজলী তাঁর সম্পর্কে বলেনঃ হাদীছ বিশারদগণের মন্তব্য এরকমঃ
“ আল আদাভী বলেন, সকলেই এই শায়খ অর্থাৎ হাসানের নিকট যাও, হাদীছ গ্রহণ কর, তিনি সবচেয়ে বড় আলেম। তিনি বসরাবাসীদের শায়খ (ইমাম), তিনি তাবেঈ, নির্ভরযোগ্য বুজুর্গ, হাদীছের বাহক। ”
( জরাহ ওয়াত তাদীলঃ খ- ৩, পৃ-৪০; তাবকাত; তাহযীবুত তাহযীব )
এসব দ্বারা প্রমাণ হয় তিনি কত বড় আলেম ও ছিক্বাহ নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিছ।
তবে তাঁর ব্যাপারে দুটি মন্তব্য ব্যতিক্রম যা নিম্নে পেশ করা হলোঃ
১। বাযযার তাঁর মুসনাদে এ বলেনঃ
“ হাসান বসরী তিনি ইবনু আব্বাস, আসওয়াদ, উবাদা এবং উছমান থেকে শ্রবণমর্যাদা লাভ করেন নি। ”
( তাহযীবুত তাহযীবঃ খ-২, পৃ-২৩৫ )
২। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ
“ হাসান বসরী একজন ছিক্বাহ রাবী, প্রসিদ্ধ ফক্বীহ। তিনি ইরসাল ও তাদলীস করতেন। ”
( তাহযীবুত তাহযীবঃ খ-১, পৃ-২০২ )
পর্যালোচনাঃ
বাযযার এবং হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) এর উক্ত মন্তব্য দ্বারা বুঝা যায় যে, ইমাম হাসান বসরী (রহঃ) উছমান উবনু আবিল আস থেকে হাদীছটি সরাসরি বর্ণনা করেন নি। বরং তিনি তাদলীস করেছেন। তবে হাসান বসরী (রহঃ) যেহেতু একজন নির্ভরযোগ্য হাদীছ বর্ণনাকারী, ফিক্বহ-হাদীছের ইমাম এবং একজন সুপ্রসিদ্ধ তাবিঈ, তাই তাঁর কৃত তাদলীস গ্রহণযোগ্য হবে। হাদীছটির প্রমাণে কোন অন্তরায় হবে না তা তাদরীব ও কাওয়ায়েদ ফী উলূমিল হাদীছ-এ সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।
৯। উছমান আবিল আস আস সাক্বাফী
তিনি একজন প্রসিদ্ধ সাহাবী। হযরত মুআবিয়া (রঃ) এর খেলাফতকালে তিনি ইন্তেকাল করেন।
হাদীছটির অবস্থানঃ
উল্লেখিত বিবরণ দ্বারা একথা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত হাদীছটির সনদে জামী ইবনুস সাবীহ আর রামালী ব্যতীত সকল রাবীই নির্ভরযোগ্য ও আস্থাযোগ্য। হাদীছটির সনদের মাত্র একজন রাবী আছেন, যিনি বিতর্কিত হেতু কেউ কেউ যঈফ বলেছেন। ইবনু আবি হাতিম চুপ থেকে তার নির্ভরযোগ্যতা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এই হাদীছের সমর্থনেও যেহেতু আরো হাদীছ বিদ্যমান, বিধায় হাদীছটি উন্নীত হয়ে হাসান স্তরে পৌছে যায়। একারণেই শুয়াবুল ঈমানের মুহাক্কিক আদনান আব্দুর রহমান اسناده حسن বলে সূত্রের দিক থেকে হাদীছটিকে হাসান বলে রায় প্রদান করেছেন।
( দেখুন শুয়াবুল ঈমানঃ খঃ ৩, পৃ – ৩৮৩ )
তবে শুআবুল ঈমানে মুহাক্কিক শাইখ যাগলুল এর মন্তব্য হলোঃ
“ হাদীছটির সনদ দুর্বল। হাসান বসরী তাবেঈ এর সাক্ষাত উসমান বিন আবিল আস (রঃ) সাহাবীর সাথে হয়নি, (মাঝখানে রাবীর উল্লেখ নেই।) ”
( হাশিয়াহ শুয়াবুল ঈমান )
এ ব্যাপারে تدريب الراوى এবং قواعد فى علوم الحديث এর উপরোক্ত বর্ণনার দ্বারা প্রমাণ হয় যে, হাসান বসরীর মত বিখ্যাত তাবেঈ ও মুহাদ্দিছ এর এধরণের তাদলীস সূত্র বিশুদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে অন্তরায় নয় বরং তা সকল উলামার নিকট গ্রহণযোগ্য বিধায় এ হাদীছকে হাসান বা সহীহ বলে যে মন্তব্য আদনান আব্দুর রহমান করেছেন তা যথাযথ এবং সঠিক বলে সাব্যস্ত।
★★★ একাদশ হাদীছ( اسناده ضعيف لكن ليس فيه كذاب )
হযরত আলী ইবনু আবি তালিব (রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সঃ) ইরশাদ করেছেনঃ শা’বান মাসের পনের তারিখ রাত আসলে তখন তার রাতের অংশে ইবাদত করো এবং দিনের অংশে রোজা রাখো। কারণ ওই রাতে সূর্যাস্ত যাওয়ার পর মহান আল্লাহ প্রথম আসমানে অবতরণ করে বলতে থাকেন, আছো কি কোন মাগফিরাতের প্রত্যাশী? তাকে আমি মাগফিরাত দান করবো। আছো কি কোন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি তাকে আমি সুস্থতা দান করবো। আছো কি অমুক আছো কি অমুক – এভাবে প্রভাতের সূচনা পর্যন্ত ডাকতে থাকেন।
উক্ত হাদীছটি
১। ইবনে মাজাহ তাঁর সুনানে
২। ইমাম বায়হাকী তাঁর শুয়াবুল ঈমানে
৩। মুনযিরী তাঁর তারগীব ওয়াত তারহীবে
সংকলন করেছেন।
░▒▓█► হাদীসটির মান :
উক্ত হাদীছের সনদ পর্যালোচনাঃ
হাদীছটির সনদে নিম্নোক্ত রাবীগণ রয়েছেনঃ
১। হাসান ইবনু আলী আল খিলাল (মৃঃ ২৪২ হিঃ)
ইমাম নাসাঈ (রহঃ) ব্যতীত সিহাহ সিত্তাহর প্রত্যেকেই তাঁর থেকে হাদীছ গ্রহণ করেছেন।
খতীব আল বাগদাদী বলেনঃ ثقة حافظ , তিনি নির্ভরযোগ্য এবং হাফিযুল হাদীছ ছিলেন।
ইয়াকুব ইবনু শাইবাহ বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য ও আস্থাযোগ্য রাবী।
ইবনু হিব্বান তাঁকে নির্ভরযোগ্যদের মধ্যে পরিগণিত করেছেন।
হাফিয ইবনু হাজারও তাঁকে নির্ভরযোগ্য এবং হাফিযুল হাদীছ সাব্যস্ত করেছেন।
২। আব্দুর রাজ্জাক ইবনু হুমাম ইবনু নাফি (মৃঃ ২১১ হিঃ)
আসহাবে সিত্তাহর প্রত্যেকেই তাঁর কাছ থেকে হাদীছ গ্রহণ করেছেন।
তিনি ইবনু জুরাই আওযায়ী, মালিক, সুফিয়ান সওরী প্রমূখের ন্যায় বড় বড় ইমামদের শাগরিদ।
আলী ইবনুল মাদীনী থেকে কথিত আছে যে, হিশাম ইবনু ইউসুফ বলেছেন, আব্দুর রাজ্জাক আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আলেম এবং হাফিযে হাদীছ।
আহমদ ইবনু হাম্বল থেকে বর্ণিত যে, তিনি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হাদীছ বর্ণনাকারী ছিলেন।
৩। ইবনু আবি সাবুরাহ (মৃঃ ১৬২ হিঃ)
তাঁর সম্পর্কে পরে উল্লেখ করা হচ্ছে।
৪। ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মদ।
ইমাম বুখারী আত-তারীখুল কাবীর গ্রন্থে এবং ইমাম যাহাবী মীজানুল ইতিদাল গ্রন্থে তাঁর সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। উভয়ের কেউই তাঁকে দুর্বল বলেন নি।
হাফিয ইবনু হাজার তাঁর ব্যাপারে বলেনঃ
صدوق من السادسة
“ তিনি ষষ্ঠ স্তরের একজন সৎ রাবী। ”
( তাক্বরীবুত তাহযীবঃ খ-১, পৃ-৬৫; তাহযীবুল কামালঃ খ-২, পৃ-১৯৩ )
ইবনে হিব্বান তাকে কিতাবুছছিক্বাতে উল্লেখ করে নির্ভরযোগ্য বলে সাব্যস্ত করেছেন।
( দেখুনঃ كتاب اثقات পৃ – ১৯, খ – ১ )
৫। মুআবিয়া ইবনু আবদিল্লাহ ইবনু জাফর।
ইমাম নাসাঈ এবং ইবনু মাজাহ তাঁর কাছ থেকে হাদীছ গ্রহণ করেছেন।
হাফিয আজালী তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন।
ইবনু হিব্বানও তাঁকে নির্ভরযোগ্যদের মধ্যে উল্লেখ করেছেন।
হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ তিনি চতু্র্থ স্তরের একজন গ্রহণযোগ্য বর্ণনাকারী।
হাফিয যাহাবী বলেনঃ “ ثقة ” নির্ভরযোগ্য।
( দেখুনঃ আল কাশেফ – ২/২৭৬ )
৬। আব্দুল্লাহ ইবনু জা’ফর।
আল ইসাবা ফী তাময়িযিস সাহাবা গ্রন্থে ( ২য় খন্ড পৃঃ ২৮৯ ) রয়েছে যে, তিনি নবী করীম (সঃ) এর সাহাবা হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছেন। তিনি সাধারণ স্তরের সাহাবাদের মধ্যে পরিগণিত। ইতিহাসের কিতাবসমূহে তাঁর অনেক ফযীলত ও গুণাগুণ উল্লেখ রয়েছে।
৭। আলী ইবনু আবি তালিব (রঃ)।
একজন জলীলুল ক্বদর সাহাবী, খুলাফায়ে রাশেদীনের একজন।
রাবী ইবনু আবি সাবুরাহ (মৃঃ ১৬২ হিঃ) সম্পর্কে অস্পষ্ট সমালোচনাঃ
ইমাম নাসাঈ বলেনঃ তাঁর বর্ণিত হাদীছ মাতরূক তথা পরিত্যাজ্য।
আব্দুল্লাহ এবং সালিহ স্বীয় পিতা ইমাম আহমদ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি হাদীছ জাল করতেন।
তবে একথাগুলো অতিশয়োক্তি থেকে মুক্ত নয়, কারণ হাদীছ শাস্ত্রবিদদের নিকট সর্বজনবিদিত একটি মূলনীতি এও আছে যে, একজন বর্ণনাকারী দোষ-ত্রুটির কারণ ও বিবরণ উল্লেখ ব্যতীত কেবল দোষ ত্রুটি বর্ণনা করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। উপরন্তু উক্ত কারণ ও বিবরণ এর উপর প্রমাণও থাকতে হবে।
( দেখুনঃ الرفع والتكميل পৃ-৪১ )
★★★ প্রাসংগিক অন্যন্য আলোচনা :-
এখানে জরাহ-তা’দীল’ শাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি সম্পর্কে সবার অবগত হওয়া দরকার।
জরাহ এবং তা’দীল প্রত্যেকটি মূলত দুই প্রকার। জরহে মুবহাম (অস্পষ্ট সমালোচনা), জরহে মুফাসসার (ব্যাপক বিস্তৃত সমালোচনা), তা’দীলে মুবহাম (অস্পষ্ট স্বীকৃতি), তা’দীলে মুফাসসার (বিশদ সত্যয়ন ও স্বীকৃতি)।
মুবহাম বলতে সেই সব জরাহ-তা’দীলকে বুঝায় যেগুলোতে জরাহ-তা’দীলের কারণসমূহ বিবৃত হয়নি। পক্ষান্তরে যেখানে জরাহ-তা’দীলের কারণসমূহ বিশদভাবে বিবৃত হয়ে থাকে, তাকে মুফাসসার বলা হয়। ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম সহ জরাহ তা’দীলের অধিকাংশ বিদগ্ধ ইমামগণের মতে, তা’দীলে মুবহামও গ্রহণযোগ্য। এতে এর কারণগুলো উল্লেখ করার কোন আবশ্যকতা নেই। পক্ষান্তরে জরাহ যদি মুবহাম হয়, তার কোন গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। এক্ষেত্রে সমালোচনার কারণ সমূহ উল্লেখ থাকা একান্ত আবশ্যক। খতীব বাগদাদী, হাফেজ ইবনুস সালাহ ও ইমাম নববী এই মতকে অন্যান্য মতামত থেকে অত্যধিক সঠিক ও সমধিক প্রসিদ্ধ বলে আখ্যায়িত করেন এবং একে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইমামগণের মতামত বলে উল্লেখ করেন।
( বিস্তারিত জানতে দেখুন – আল কিফায়াহ ফী উলূমির রেওয়ায়েহঃ পৃ-১০০, ১০৮, ১০৯; মুকাদ্দিমায়ে ইবনুস সালাহঃ পৃ-১১৭; আত তাকরীবঃ পৃ-২০২ )
অর্থাৎ যখন কোন রাবী বা ব্যক্তি সম্পর্কে সমালোচনা করা হবে, তখন তা বিস্তারিত আকারে প্রমাণ সহকারে কারণ সহ উল্লেখ থাকতে হবে, নতুবা তা মুহাদ্দিসীনে কেরামের কাছে কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হবে না।
আলী ইবনে আল মাদীনী এবং ইমাম নাসাঈ, যারা দুজনেই ইবনে আবি সবুরাহর কিছু শতক পরে এসেছেন, তারা বলেন যে, ইবনে আবি সবুরাহ “মাতরুকুল হাদীস” ছিলেন (যাঁর হাদীস বর্ণনা করা যাবে না, কারণ তিনি ঐটুকু যোগ্যতা রাখেন না।)
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল এর পুত্র, আব্দুল্লাহ এবং সালিহ স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি হাদীস জাল করতেন।
ইবনে আদীও ইবনে আবি সবুরাহকে হাদীস জালকারী ব্যক্তিদের মধ্যে গণ্য করেছেন।
কিন্তু, এ সমস্ত বক্তব্য তাদের নয় যারা ইবনে আবি সবুরাহ এর সমসাময়িক বড় বড় জ্ঞানী লোক ছিলেন, বরং তাদের মত যারা ইবনে আবি সবুরাহর অনেক যুগ পরে এসেছেন। তাছাড়া এই মতগুলো অতিরঞ্জিত বা অতিশয়োক্তি থেকেও মুক্ত নয়। কারণ এসব মুহাদ্দিসীনের কেউই তার দোষ ত্রুটির কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত লিখে যান নি এবং কোন প্রমাণও দিয়ে যান নি।
এমনকি, ইমাম বুখারী, উলূমিল হাদীস শাস্ত্রে তার সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং গভীর অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও, ইবনে আবি সবুরাহ সম্পর্কে কোন ধরণের ব্যাখ্যা ছাড়াই সংক্ষিপ্ত মন্তব্য করেছেন। তিনি ইবনে আবি সবুরাহকে শুধুমাত্র যঈফ বলে উল্লেখ করেছেন। এটা তাই আরও ব্যাখ্যার দাবি রাখে। এটা হতে পারে যে, ইবনে আবি সবুরাহ কিছুটা দুর্বল স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিলেন, যার ফলে তিনি ইমাম বুখারীর কাছে রাবীর যোগ্যতার যে মানদণ্ড আছে, সেটা পূর্ণ করতে পারেন নি। তাই, তাঁর এ মতটি রাবীর পদমর্যাদা এবং ন্যায়পরায়ণতা বা পূর্ণতার ক্ষেত্রে নয়; বরং ইমাম বুখারীর নিজের কঠোর মানদণ্ড অনুযায়ী রাবীর যে যোগ্যতা দরকার ছিল, শুধুমাত্র তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
ইমাম যাহাবী এ বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত আকারে আলোচনা করেছেন।
যাই হোক না কেন, এটা সুস্পষ্টভাবে বুঝে রাখা দরকার যে, হাদীস শাস্ত্রের নীতিমালা অনুযায়ী, একজন জাল হাদীস বানানো ব্যক্তি বা রাবী কখনই ‘যঈফ’ রাবীর তালিকাভুক্ত হতে পারে না।
ইমাম বাযযার এই হাদীসকে “লীন হাদীস” বলে যে মন্তব্য প্রদান করেছেন, তাও সম্পূর্ণ সঠিক নয়।
হাদীস তালিকাভুক্ত (কোন হাদীস কোন তালিকায় পড়বে) করার ক্ষেত্রে, হাদীস শাস্ত্রে “লীন হাদীস” এবং “ইয়াদা উল হাদীস” এই ২ টি গ্রুপের মাঝে বিশাল পার্থক্য বিদ্যমান।
( দেখুনঃ কাশফুল আসতার আন জাওয়াইদিল বাযযার )
কোন ভাবেই এই দাবী করা সঠিক হবে না যে, ইবনে আবি সবুরাহ জাল হাদীস রচনাকারী ছিলেন। যদি তাই হত, তাহলে ইমাম মালিক এবং অন্যান্য অসংখ্য প্রসিদ্ধ ফকীহর উপস্থিতিতে ইবনে আবি সবুরাহকে কখনোই মদীনা মুনাওয়ারাতে ইফতা তথা কাযীর পদের দায়িত্ব ও সুবিধা দেয়া হত না, এক কথায় সম্ভবও নয়।
ঠিক একই ভাবে, ইমাম মালিকের পক্ষে এটাও কখনও সম্ভব হত না যে, ঐ সময়ের পবিত্র নগরীর ৩ জন বুজুর্গ এবং প্রসিদ্ধ স্বীকৃত ব্যক্তির একজন হিসেবে তিনি ইবনে আবি সবুরাহর নাম উল্লেখ এবং প্রস্তাব করেছিলেন। খলিফা মনসুর যখন মদীনা মুনাওয়ারাতে কাযী পদের জন্য লোক খুঁজছিলেন, তখন ইমাম মালিক এই প্রস্তাব করেছিলেন অন্য ২ জনের সাথে ইবনু আবি সবুরাহকে কাযী পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য।
( দেখুনঃ সিয়ারু আলামিন নুবালা এবং তাহযীবুত তাহযীব; আরও দেখতে পারেনঃ মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানীর কিতাব লাইলাতুল বারাআত )
তাছাড়াও, আহমদ ইবনে হাম্বল এবং ইবনে আদী বাদে, অন্য কোন মুহাদ্দিসীন তাদের আগে ইবনে আবি সবুরাহর সত্যবাদীতা বা মর্যাদার ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেন নি। শুধুমাত্র ইমাম বুখারীর মন্তব্য পাওয়া যায় এবং তাঁর কঠোর মূলনীতি ও মানদণ্ডের আলোকে তিনি শুধুমাত্র এই মন্তব্যটিই করেছেন যে, ইবনে আবি সবুরাহ যঈফ। (হাদীসের মতন সম্পর্কেও কিছু বলা হয় নি)।
ইমাম আবু দাউদ বলেন, সে (ইবনে আবি সবুরাহ) আহলুল মদীনার (মদীনার মানূষ) কাছে গ্রহণযোগ্য মুফতি ছিলেন।
হযরত মা’আন উল্লেখ করেন যে, আমিরুল মুমিনীন আবু জাফর আল মনসুর ইমাম মালিকের কাছে জানতে
চান,
” বড় বড় প্রসিদ্ধ মাশায়েখদের মধ্যে এখন কারা কারা বেঁচে আছেন? ” তিনি (সাহিবুল মুতহুব) তাদের নাম পরপর উল্লেখ করে উত্তর দেন, বলেনঃ ” ইবনে আবি তাঈব, ইবনে আবি সবুরাহ এবং ইবনে আবি সুলামাহ আল মাজিশুন বেঁচে আছেন এখন। “
এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, মদীনা মুনাওয়ারাহ ইসলাম এবং খাইরুল কুরুনের জমানার মুসলিমদের একটি প্রধান কেন্দ্র ছিল। ইবনে আবি সবুরাহ প্রথমে ইরাকের একজন মুফতী এবং কাযী ছিলেন। এটা ছিল ইমাম আবু ইউসুফের নিয়োগের আগের কথা। অতঃপর, তাঁকে মদীনা মুনাওয়ারাহর মুফতী এবং কাযী পদের সুবিধা (নিয়োগ) দেওয়া হয়।
এরকম একজন প্রসিদ্ধ, নামকরা, গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি কি কখনো সাদিক এবং আদিল ( সত্যবাদী এবং নির্ভরযোগ্য ) না হয়ে পারে ??
তিনি কি হাদীস জাল কারী হতে পারেন এবং রসূলুল্লাহ (সঃ) এর উপর মিথ্যা আরোপ করতে পারেন ??
ইবনে আবি সবুরাহ হযরত আলী (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীছের নিছক একজন রাবী মাত্র। তাছাড়া, এই মন্তব্যগুলো আলী (রঃ) এর হাদীসের মতন (বক্তব্য) এর উপর করা হয় নি। “যঈফ” শুধুমাত্র ইবনে আবি সবুরাহকেই বলা হয়েছে।
ইবনে আবি সবুরাহ প্রসিদ্ধ, বুজুর্গ, ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি যেমনঃ হযরত আতা ইবনে আবি রুবাহ, ইমাম আরুজ এবং হিশাম ইবনে আবি ওরওয়াহ প্রভৃতি বুজুর্গদের ছাত্র ছিলেন এবং তাঁদের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেছেন।
তাছাড়াও, ইবনে আবি সবুরাহ, বিখ্যাত মুহাদ্দিস এবং হাদীসের উস্তাদ ইমাম আব্দুর রাজ্জাক ইবনুল হুইমাম এর উস্তাদ ছিলেন। আবার ইমাম আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন ইমাম বুখারীর উস্তাদ। পাশাপাশি ইমাম ইবনে জুওরাযী, ইমাম আবু আসিয়াম আন নাবিলেরও উস্তাদ ছিলেন।
( আরও দেখুনঃ তাহযীবুল কামাল )
যাই হোক না কেন, যারা ইবনু আবি সবুরাহকে “জাল হাদীস রচনাকারী বা যঈফ” বলেছেন, তাদের মধ্যে কেউই এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে যাননি, কিংবা কোন স্পষ্ট দলীল বা প্রমাণও দিয়ে যান নি। এমনকি আমাদের জ্ঞানের আওতায় ঐসব মুহাদ্দিসীনগণ ইবনে আবি সবুরাহ কর্তৃক সম্পৃক্ত এমন কোন হাদীসকেও মওযু (জাল) বলেন নি।
অথচ ইবনে আদী, ইবনে আবি সবুরাহর অনেক হাদীস নিয়েই আলোচনা করেছেন, কিন্তু তার একটি হাদিসও তিনি মওযু বলে চিহ্নিত করেন নি, কিংবা তার ঐসব কিতাব যেখানে তিনি মওযু হাদীসগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন, সেখানেও স্থান পায়নি। বাস্তব সত্য হল, ইবনে আদী যেসব হাদীস নিয়ে আলোচনা করেছেন, তার প্রত্যেকটি হাদীসই অন্যান্য নির্ভরযোগ্য রাবীদের কাছ থেকেও বর্ণিত। যার ফলে, সেসব হাদীসগুলোও প্রসিদ্ধ এবং নির্ভরযোগ্য রাবীদের কাছ থেকেই বর্ণিত। আর ইবনে আদী নিজেই ইবনে আবি সবুরাহর অনেক হাদীস নিয়ে আলোচনা করেছেন।
মুফতী তকী উসমানী লিখেছেনঃ হযরত আলী (রঃ) এর হাদীসটি সিহাহ সিত্তার একটি বিখ্যাত কিতাব সুনানে ইবনে মাজাহতে উল্লেখ আছে এবং ইমাম বায়হাকীর বিখ্যাত কিতাব শুয়াবুল ঈমানেও উল্লেখ আছে। তাদের উভয়েই এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, কিন্তু এর বিশুদ্ধতা নিয়ে কোন মন্তব্য করেন নি।
ইবনে আবি সবুরাহ নামক একজন রাবী থাকায় হাদিসের স্কলাররা তথা মুহাদ্দিসীনগণ এই হাদীসকে দুর্বল বা যঈফ বলেছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তিনি হাদীস জাল করতেন, তা সঠিক নয়। বাস্তব সত্য কথা হচ্ছে, তিনি মদীনার মুফতী ছিলেন; মনসুরের আমলে ইরাকের কাযী (বিচারক) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, তিনি ইমাম আবু ইউসুফের সাথে অত্যন্ত সফলও ছিলেন। তিনি ইমাম মালিকের সহযোগী ছিলেন।
একদা মনসুর, আব্বাসী খলিফা, ইমাম মালিকের কাছে ৩ জনের নাম জিজ্জেস করেন, ইমাম মালিক তার মধ্যে একজনের নাম বলেন ইবনে আবি সবুরাহ। তিনি যদি সত্যিকার অর্থেই হাদীস জালকারী হতেন, তাহলে ইমাম মালিক কখনোই তার নাম বলতেন না। তবে তার উচ্চ পদমর্যাদা থাকা সত্ত্বেও তার স্মৃতিশক্তি কিছুটা কম থাকায়, অনেক ইমামগণ যেমন ইমাম বুখারী তার কিছুটা সমালোচনা করেছেন এবং তাকে যঈফ বলেছেন; কিন্তু তাকে জাল হাদীস রচনাকারি কিংবা মিথ্যুক ঘোষণা করেন নি।
ইমাম আহমদ তাকে মিথ্যুক ও হাদীস জালকারী বলেছেন। কিন্তু তার এই মন্তব্য একজনকে হাদীস জালকারী সাব্যস্ত করার জন্য যথেষ্ট নয়। কারণঃ
প্রথমত, ইমাম আহমদ ইবনে আবি সবুরাহর অনেক পরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ইবনে আবি সবুরাহর সমসাময়িক কোন বুজুর্গ বা মুহাদ্দিস তার সম্পর্কে এ মত পোষণ করেন নি।
আর দ্বিতীয়ত, যে আরবী শব্দটি ইমাম আহমদ ব্যবহার করেছেন, তা মাঝে মাঝে এক রেওয়ায়েতের সাথে আরেক রেওয়ায়েতের মাঝে অসমাঞ্জস্যতা বা বিশৃংখলা (confusion) ইত্যাদি বুঝাতে ব্যবহৃত হয়, কাউকে মিথ্যাবাদী বা হাদীস জালকারী সাব্যস্ত করার জন্য নয়।
এই কারণে অধিকাংশ মুহাদ্দিসীনগণ আবু বকর ইবনে আবি সবুরাহকে দুর্বল রাবী হিসেবে সনাক্ত করেছেন, হাদীস জালকারী হিসেবে নয়।
পূর্ব যুগের মুহাদ্দিসীনদের মওযু হাদীস নিয়ে বিশাল বিশাল অনেক কিতাবই রয়েছে, কিন্তু এই হাদীসটি সেসব কিতাবের কোনটিতেই স্থান পায়নি।
এমনকি এটা সবার জানা কথা যে, ইবনে মাজাহ নিজেই প্রায় ২০ টি হাদীসকে মওযু বা জাল হিসেবে সনাক্ত করেছেন। এই হাদীসের তালিকাগুলো এখনও বিদ্যমান, কিন্তু সেখানেও ইবনে মাজাহ তার সুনানে উল্লেখিত এই হাদীসটিকে স্থান দেন নি। অতএব, এই হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যা এই যে, হাদীসটি মওযু বা জাল নয়, শুধুমাত্র দুর্বল।
মোদ্দা কথা হল, যারা ইবনু আবি সবুরাহকে জাল হাদীস রচনাকারী বলেছেন তারা কোন প্রমাণ দেখাতে পারেন নি। الرفع والتكميل পৃ-৪১ কিতাবে কথাটি এভাবে বলা হয়েছেঃ
“ ইবনু আবি সবুরাহ মাতরূকুল হাদীছ কিংবা জাল হাদীছ রচনাকারী হওয়ার ব্যাপারে মুহাদ্দিছীনে কেরামের কেউই বিস্তারিত কারণসহ বিবরণ দেন নি। ”
তাছাড়া হাফিয যাহাবী তাঁর জীবনী আলোচনা করতে গিয়ে এভাবে শুরু করেনঃ মহান ফক্বীহ, ইরাকের কাজী, আবু বকর ইবনু আবদিল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আবি সাবুরাহ।
ইমাম আবু দাউদ বলেনঃ তিনি মদীনাবাসীর মুফতী ছিলেন।(المدينة مفتى)
ইমাম বুখারী (রহঃ) তাকে যঈফ ছাড়া অধিক কিছু বলেন নি।
হাফিয শামসুদ্দীন আয-যাহাবী বলেন, তাঁর স্মৃতিশক্তি দুর্বল বিধায় তিনি হাদীছশাস্ত্রে দুর্বল। মূলত এটাই বিশুদ্ধ এবং চূড়ান্ত রায়।
হাদীছটির অবস্থানঃ
উল্লেখিত বিবরণ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত হাদীছটিতে “ ابن أبى سبره ” ইবনু আবি সবুরাহ নামে জনৈক রাবী ব্যতীত অন্যান্য সকল রাবী নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত। সুতরাং হাদীছটিকে বড় জোর যঈফ বলা যেতে পারে। কোন কোন মুহাদ্দিছ ইবনু আবি সবুরাহকে জাল হাদীছ রচনাকারী বলেছেন বিধায় হাদীছটিকে জাল বলা যাবে না। কারণ তিনি জাল হাদীছ রচনাকারী – কথাটি সঠিক নয়। তাঁর সম্পর্কে বিশুদ্ধ ও চূড়ান্ত রায় সেটাই যা হাফিয যাহাবী সূত্রে আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি যে, স্মৃতি শক্তির দুর্বলতার কারণে তিনি যঈফ রাবী ছিলেন।
এই কারণেই ইমাম যুরকানী হাদীছটি সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, যদিও তার সনদ দুর্বল কিন্তু তার রাবীগণ মিথ্যুক নন, কিংবা জাল রচনাকারী নন। সর্বোপরি তার সমর্থনে আরো হাদিছ পাওয়া যায় বিধায় হাদীছটির ভিত্তি রয়েছে।
যেমন শারহুল মাওয়াহিবিল লাদুনিয়া (৭/৩১২) তে এসেছেঃ
সুনানে ইবনু মাজাতে আলী (রঃ) থেকে মারুফ হিসেবে যঈফ সনদ দ্বারা হাদীছটি উল্লেখ হয়েছে। তেমনিভাবে আল মুনযিরী ও হাফিয আল ইরাকী তাঁর দুর্বলতার কারণ উল্লেখ করতঃ নিশ্চয়তার সাথে বলেছেন। কিন্তু হাদীছটির মধ্যে কোন মিথ্যুক ও জাল হাদীছ রচনাকারী নেই এবং তার সমর্থনে আরো হাদীছ আছে যা তার ভিত্তি আছে বলে প্রমাণ করে।
অনুরূপ ভাবে আল্লামা ইরাকীও হাদীছটিকে দুর্বল বলেছেন ঠিক কিন্তু জাল বলেন নি। তাঁর ভাষায়ঃ
“ শবে বরাতের ফজীলত ও আমল সম্পর্কীয় যে হাদীছ আলী (রঃ) সূত্রে ইবনু মাজাহতে রয়েছে তার সনদ দুর্বল। ”
মোট কথা, হাদীছটি একজন রাবীর কারণে দুর্বল তবে তার ভিত্তি রয়েছে অন্যান্য হাদীছের সমর্থন পাওয়া যাওয়ায় তার উপর আমল করা যাবে।
সার কথাঃ
ইবনু আবি সবারাহ নামক একজন রাবী থাকায় আহলে হাদীস/সালাফীদের কিছু আলেম হযরত আলী (রঃ) এর এই হাদীসটিকে জাল বলার চেষ্টা করে থাকেন। কিন্তু কথাটি সঠিক নয়। হাদীসটি শুধুমাত্র দুর্বল। এ কারণেই আল্লামা ইরাকী, ইমাম আল মুনযিরী, ইমাম যুরকানীর মত বিজ্ঞ মুহাদ্দিসরা এই হাদীসটি জাল বলেন নি, শুধুমাত্র দুর্বল বলেছেন। অনেক বড় বড় বুজুর্গরা এই হাদীসটি তাদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন এবং এর উপর আমল করা যাবে বলে মত প্রকাশ করেছেন। যেহেতু হাদীস শাস্ত্রের মূলনীতি অনুযায়ী কোন রাবীর সমালোচনা গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য শুধুমাত্র দুর্বল বা মিথ্যক, এতটুকু উল্লেখ থাকলেই হয় না, বরং এর স্বপক্ষে কারণসহ পর্যাপ্ত পরিমাণ দলীল-প্রামাণাদি থাকা আবশ্যক, সেহেতু যারা এই রাবীকে মিথ্যুক বা জাল হাদীস রচনাকারী বলে থাকেন, তারা দয়া করে প্রমাণ দেখিয়ে যাবেন কেন তিনি মিথ্যুক বা জাল হাদীস রচনাকারী।
★★★ দ্বাদশ হাদীছ(حديث ضعيف)
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন, পাঁচটি রাত এমন আছে যে রাতগুলোতে দু’আ ফেরত দেয়া হয় না। জুমআর রাত, রজবের প্রথম রাত, শাবানের পনের তারিখ এর রাত এবং দু’ঈদের রাতে।
উক্ত হাদিছটি
১। হাফেয আব্দুর রাজ্জাক তাঁর মুসনাদে
২। ইমাম বায়হাকী তাঁর শুয়াবুল ঈমানে
░▒▓█► হাদীসটির মান : দুর্বল
সুতরাং সনদের দিক দিয়ে হাদীছটি দুর্বল হলেও ফাযায়েলের ক্ষেত্রে এরূপ হাদীছ গ্রহণযোগ্য। এ ব্যাপারে কোন মতানৈক্য নেই।
রাবী পর্যালোচনা ও হাদীছটির অবস্থানঃ
হাফিয আব্দুর রাজ্জাক উক্ত হাদীছটি একজন অজ্ঞাত উস্তাদ থেকে তিনি ইবনুল বীলমানী এবং তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন।
১। তাঁর সরাসরি উস্তাদ অজ্ঞাত, অপরিচিত।
ইবনু বীলমানী এবং তাঁর পিতা সম্পর্কে মুহাদ্দিছদের মন্তব্য নিম্নে প্রদত্ত হলো।
২। মুহাম্মদ ইবনু আবদির রহমান আল বীলমানী।
তাঁর সম্পর্কে ইমাম দারাকুতনী বলেনঃ তিনি একজন দুর্বল রাবী।
হাফিয যাহাবী বলেনঃ মুহাদ্দিছগণ তাঁকে যঈফ বলেছেন।
হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ তিনি সপ্তম স্তরের একজন যঈফ রাবী।
( দেখুনঃ تقريب التهذيب খ-২, পৃ-১০৩ )
৩। আব্দুর রহমান আল বীলমানী।
ইমাম দারাকুতনী বলেনঃ
ضعيف لاتقوم به حجة
তিনি একজন দুর্বল রাবী। তাঁর হাদীছ দ্বারা দলীল পেশ করা যাবে না।
( তাক্বরীবুত তাহযীবঃ খ-১, পৃ-৫৬৩ )
ইমাম আবু হাতিম বলেনঃ তিনি ” لين ” অনির্ভরযোগ্য রাবী।
হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ তিনি তৃতীয় স্তরের একজন দুর্বল রাবী।
★★★ উপরোক্ত বারটি হাদীছ সম্পর্কে আলোচনার নির্যাসঃ
এ সকল হাদীছের বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, শবে বরাত সম্পর্কীয় হাদীছগুলো সূত্রের দিক দিয়ে বিভিন্ন স্তরের। কিছু হাদীছ হাসান (حسن) কিছু হাদীছ মুরসাল (مرسل) এবং কিছু হাদীছ যঈফ (ضعيف) স্তরের। কিন্তু এসব হাদীছকে সমষ্টিগত মিলালে হাদীছ শাস্ত্রের উসূল ও মূলনীতি অনুযায়ী হাদীছগুলো সহীহ কিংবা হাসান-এর (যা সহীহ’ই বটে) স্তরে উন্নীত হয়। আর এর দ্বারাই শবে বরাতের ভিত্তি ও ফযীলতের প্রমাণ মিলে। যা হঠকারিতা ছাড়া অন্য কোনভাবে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। মুহাদ্দিছগণ যদিও কোন কোন হাদীছের দোষ ত্রুটি আলোকপাত করেছেন কিন্তু কেউ সেগুলোকে ভিত্তিহীন জাল হাদীছ বা অগ্রহণযোগ্য হাদীছ বলেন নি। যেহেতু প্রতিটি হাদীছ পরস্পর পরস্পরের জন্য সহযোগী স্বরুপ, সেহেতু মুহাদ্দিছীনে কেরামের সমালোচনামূলক এজাতীয় হাদীছ প্রমাণের জন্য কখনো অন্তরায় হতে পারে না। সর্বোপরি হাদীছগুলো যেহেতু ফাযাইলে আমাল এর সাথে সংশ্লিষ্ট, তাই হাদীছ শাস্ত্রের মূলনীতির দৃষ্টিকোণে এ বিষয়ে উদারতা প্রদর্শনের অবকাশ আছে এবং এর উপর আমল করার ক্ষেত্রে অমান্য করার কোন সুযোগ নেই।
অতএব উল্লেখিত বিস্তারিত পর্যালোচনার পর আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, শবে বরাতের সংশ্লিষ্ট এসব হাদীছ সহীহ। কিংবা অন্তত হাসান যা দলীল হিসেবে অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। এর পরেও কেউ যদি চোখ বন্ধ করে বলে দেয় যে, শবে বরাতের হাদীছগুলো মওজু বা জাল কিংবা নিতান্তই দুর্বল অথবা এ উক্তি করে বসে যে, শবে বরাতের ফজীলতের কোন ভিত্তি নেই। তাহলে সে ব্যক্তি হাদীছ ও হাদীছের মূলনীতি সম্পর্কে একেবারে অজ্ঞ, সরাসরি স্পষ্ট ভুলে লিপ্ত এবং এ ধরণের উক্তি সহীহ ও হাসান হাদীছকে নয় শুধু বরং পুরো হাদীছশাস্ত্রকে অস্বীকার করারই নামান্তর।
শবেবরাতের হাদীছগুলোর ব্যাপারে মুহাদ্দিছীনে কেরামের অগ্রগণ্য ও চূড়ান্ত অভিমতঃ
প্রথম অভিমতঃ আল্লামা মুবারকপুরী
একারণেই হাফিয মুহাম্মদ আব্দুর রহমান ইবনু আব্দির রহিম আল মুবারকপূরী বলেছেনঃ
” জেনে রাখো যে, শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে বিভিন্ন ধরণের হাদীছ এসেছে। যার ফলে শরীয়তে তার ভিত্তি আছে বলে বুঝা যায়। তন্মধ্য থেকে আলোচ্য অধ্যায়ের হাদীছ এবং আয়শা (রঃ) এর হাদীছ, মুআয (রঃ) এর হাদীছ, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রঃ) এর হাদীছ এবং আলী (রঃ) এর হাদীছ। সুতরাং এসব হাদীছের সমষ্টি তাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণস্বরূপ যারা শরীয়তের মধ্যে শবে বরাতের কোন ভিত্তি নেই বলে মনে করে। “
( তুহফাতুল আহওয়াজীঃ খ-৩, পৃ-৪৪২, ১৩৫৩, দারুল ফিকির )
দ্বিতীয় অভিমতঃ আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ)
মুহাদ্দিছুল আসর আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ) বলেনঃ
” এ রাতটি বরাতের রাত। রাতটির ফজীলত সম্পর্কে সহীহ হাদীছসমূহে এসেছে। “
( আলারফুস শাযীঃ পৃ-১৫৬ )
তৃতীয় অভিমতঃ নাসির উদ্দীন আলবানী
নাসিরুদ্দীন আলবানী শবে বরাত সম্পর্কীয় সকল হাদীছ এক সাথে করে সেগুলোর সনদ নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করেছেন এবং পর্যালোচনার শেষে তার সার নির্যাস পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেছেন এভাবেঃ
” সারকথা হলো এ সকল সূত্রের সমষ্টির কারণে (শবে বরাত সম্পর্কীয়) হাদীছ নিঃসন্দেহে সহীহ। কোন হাদীছ অত্যধিক দুর্বলতা থেকে নিরাপদ হলে এর চেয়ে কম সূত্রের মাধ্যমে সহীহ প্রমাণিত হয়। যেমনটি আয়শা (রঃ) এর বর্ণিত হাদীছটি যা অত্যধিক দুর্বলতা থেকে নিরাপদ। সুতরাং কাসেমী হাদীছ পর্যালোচক ও সমালোচকদের থেকে নকল ইসলাহুল মাসাজিদ গ্রন্থে যা উল্লেখ করেছেন যে, শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে কোন সহীহ হাদীছ নেই। তার এ কথার উপর আস্থা রাখা উচিত নয়। “
( সিলসিলাতুল আহাদিসা সহীহাঃ খ-৩, পৃ- ১৮৩ )
চতুর্থ অভিমতঃ শাইখ শুয়াইব আল আরনাউত
সময়কালীন বিশিষ্ট হাদীছ পর্যালোচক শাইখ শুয়াইব আল আর নাউত মুসনাদে আহমদের টীকায় আব্দুল্লাহ বিন আমর (রঃ) কর্তৃক শবে বরাতের হাদীছটির উপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেনঃ
” হাদীছটি তার সহযোগী হাদীছগুলো দ্বারা সহীহ বলে বিবেচিত। সহযোগী হাদীছগুলো হচ্ছে
১। আয়শা (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীছ
২। মুআয বিন জাবাল (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীছ
৩। আবু মূসা আল আশআরী (রঃ) এর হাদীছ
৪। আবু বকর (রঃ) এর হাদীছ
৫। আবু ছালাবাহ আল খুশানী (রঃ) এর হাদীছ
৬। আবু হুরায়রা (রঃ) এর হাদীছ
৭। আউফ বিন মালিক এর হাদীছ
এ সকল সহায়ক বা সমর্থক হাদীছের প্রত্যেকটির সূত্রের মধ্যে যদিও কিছু অসুবিধা আছে তবে এসব হাদীছের সমষ্টি দ্বারা মূল হাদীছ সহীহ ও শক্তিশালী বলে সাব্যস্ত হয়েছে। সুতরাং কাসেমী (রহঃ) হাদীছ পর্যালোচক ও সমালোচকদের থেকে ইসলাহুল মাসাজিদ গ্রন্থে যা উল্লেখ করেছেন যে, মধ্য শা’বানের রাতের ফজীলত সম্পর্কে সহীহ হাদীছ নেই এর অর্থ হলো এ ব্যাপারে কোন হাদীছ সহীহ সূত্রে প্রমাণিত নেই। কিন্তু সবগুলো হাদীছের সমষ্টিগত সূত্রের দ্বারা হাদীছগুলো পরস্পরে শক্তিশালী ও মজবুত হয়ে বিষয়টি প্রমাণিত এতে কোন সন্দেহ নেই। “
( মুসনাদে আহমদঃ খ-১১, পৃ-১৬, ৬৬৪২ )
আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা বলেনঃ
” এ রাতের ফজীলতে বেশ কিছু মরফূ হাদীস এবং আছার বর্ণিত আছে যে প্রমাণ করে যে এ রাতটি ফজীলতপূর্ণ। পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ এ রাতে বিশেষভাবে সালাত আদায় করতেন। … যে মতের উপর আমাদের মাযহাবের বা অন্যান্য মাযহাবের বহু সংখ্যক বরং বেশিরভাগ আলেম রয়েছেন তা হলো এই রাতটি অন্যান্য রাতের উপর ফজীলত রাখে। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এর স্পষ্ট কথার মাধ্যমে এটিই জানা যায়। আর যেহেতু এ বিষয়ে একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং পূর্ববর্তীদের আমল সেসকল হাদীসকে সত্যয়ন করে। “
( ইক্তিদাউস সিরাত আল মুস্তাকিম )