হাদিসের আলোকে ঈদঃ
যে সকল হিংসুক বলে দুই ঈদ ছাড়া তৃতীয় কোন ঈদ নেই এবং আরো বলে ঈদে মিলাদুন্নবীর ঈদের জামাত কই সে সকল জাহিল মূর্খদের জন্যে নিম্নে ঈদের হাদিস তুলে ধরা হলোঃ
অতএব, জাহিল সম্প্রদায় এইসব দিনে কেন ঈদের জামাত আদায় করেনা। জবাব দিক যদি সত্যিকারের হকপন্থী হয়ে থাকে। আর যদি গোমরাহ হয়ে থাকে তাহলে কানা দাজ্জালের ন্যায় চিৎকার করো হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই দুই ছাড়া আরো অনেক ঈদের কথা উল্লেখ করেছেন। পবিত্র জুমুয়ার দিন মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন।
পবিত্র সহীহ হাদীস শরীফের মধ্যে ইরশাদ হয়েছেঃ
ﻋﻦ ﺣﻀﺮﺕ ﻋﺒﻴﺪ ﺑﻦ ﺍﻟﺴﺒﺎﻕ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻣﺮﺳﻼ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻬﺼﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﺟﻤﻌﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺠﻤﻊ ﻳﺎ ﻣﻌﺸﺮ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﺍﻥ ﻫﺬﺍ ﻳﻮﻣﺠﻌﻠﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻴﺪﺍ
অর্থ : হযরত ওবায়িদ বিন সাব্বাক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু মুরসাল সূত্রে বর্ননা করেন, হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক জুমুয়ার দিন বলেন, হে মুসলমান সম্প্রদায় ! এটি এমন একটি দিন যাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈদ নির্ধারণ করেছেন !”
[সূত্রঃ ইবনে মাজাহ : হাদীস নম্বর ১১৯৮, মুয়াত্তা মালিক- কিতাবুত ত্বহারাত: হাদীস নম্বর ১৪৪, বায়হাক্বী : হাদীস ১৩০৩, মা’য়ারিফুল সুনান ওয়াল আছার বায়হাক্বী: হাদীস ১৮০২, মুসনাদে শাফেয়ী: হাদীস ২৬৮, মুজামুল আওসাত তাবরানী ৩৪৩৩, মিশকাত শরীফ]।
ﻋَﻨِﺎﺑْﻨِﻌَﺒَّﺎﺱٍ،ﻗَﺎﻟَﻘَﺎﻟَﺮَﺳُﻮﻟُﺎﻟﻠَّﻬِـﺼﻞﻯﺎﻟﻠﻬﻌﻠﻴﻬﻮﺳﻠﻤـ ” ﺇِﻧَّﻬَﺬَﺍﻳَﻮ ﻪَﻠَﻌَﺟٍﺪﻴِﻌُﻣْﺲُﻤْﻠِﻠُﻬَّﻠﻟﺍُﺞْﻨَﻤَﻔَﻨﻴِﻤِﻟْﻢُﺠْﻟﺎﻯَﻟِﺇَﺀﺍََﺖْﻐَﻴْﻠَﻓِﺔَﻋُﺳِﻠْﻮَﺇِﻧْﻜَﺎﻥَ ﻃِﻴﺒٌﻔَﻠْﻴَﻤَﺲّْﻲَﻠَﻋَﻮُﻬْﻨِﻣَﻛُﻤْﺒِﺎﻟﺴِّﻮَﺍﻙ ِ
অর্থ: হযরত উবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয় আল্লাহ এই দিনকে মুসলিমদের ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি জুমুআহর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য।
[সূত্রঃ সুনানে ইবনে মাজাহ ১০৯৮, আল মুজামুলি আওসাত তাবরানী ৭৩৫৫]।
কতবড় ঈদের দিন ও শ্রেষ্ঠ দিন জানেন কি? দেখুন হাদীস শরীফে কি বলা হয়েছে-
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻥ ﻳﻮﻡ ﺍﻟـﺠﻤﻌﺔ ﺳﻴﺪ ﺍﻻﻳﺎﻡ ﻭﺍﻋﻈﻤﻬﺎ ﻋﻨﺪﺍﻟﻠﻪ ﻭﻫﻮ ﺍﻋﻈﻢ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﻳﻮﻡ ﺍﻻﺿﺤﻰ ﻭﻳﻮﻡ ﺍﻟﻔﻄﺮ
অর্থ: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, জুমুআর দিন সকল দিনের সর্দার এবং সকল দিন অপেক্ষা আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এটি ঈদুল আযহার দিন ও ঈদুল ফিতরের দিন অপেক্ষাও আল্লাহ পাক-উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত।
[সূত্রঃ ইবনে মাজাহ : হাদীস নম্বর ১১৩৭,মুজামুল কবীর তাবরানী ৪৫১১, শুয়াইবুল ঈমান বায়হাকী : হাদীস ২৯৭৩, মিশকাত শরীফ]।
এবার দেখূন কেন জুমুয়ার দিন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চাইতে বেশি শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত:
ﺍﻥ ﻣﻦ ﺍﻓﻀﻞ ﺍﻳﺎﻣﻜﻢ ﻳﻮﻡ ﺍﻟـﺠﻤﻌﺔ ﻓﻴﻪ ﺧﻠﻖ ﺍﺩﻡ ﻭﻓﻴﻪ ﻗﺒﺾ
অর্থ: ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে জুমুআর দিন। এ দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালাম পয়দা হয়েছেন এবং এ দিনেই তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেছেন।’
[সূত্রঃ নাসায়ী শরীফ- কিতাবুল জুমুয়া: হাদীস ১৩৮৫, মুসলিম শরীফ- কিতাবুল জুমুয়া: হাদীস ৮৫৫, তিরমিযী :হাদীস ৪৯১, মুসনাদে আহমদ : ৮৯৫৪, হাদীস নম্বর ৮৯ ইবনে মাজাহ : হাদীস ১৭০৫, সুনানে আবু দাউদ –কিতাবুস সালাত: হাদীস ১০৪৭, ইবনে খুযায়মা: হাদীস ১৬৩২]।
হযরত আদম আলাইহিস সালাম এঁর সৃষ্টি (প্রথম মানুষ হওয়ায় তাঁর মীলাদ হয়নি, তিনি মীলাদ ছাড়া সৃষ্টি হয়েছিলেন), দুনিয়ায় আগমন, বিছাল শরীফ এর জন্য পবিত্র জুমুয়ার দিন এত শ্রেষ্ঠ। এতটাই শ্রেষ্ঠ যে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চাইতেও বেশি শ্রেষ্ঠ, এবং ঈদের দিন।
সহীহ হাদীস শরীফে আছে আরাফার দিন ঈদের দিনঃ
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎﻋَﺒْﺪٍﺪْﻴَﻤُﺤُﻨْﺑُ،ﺃﻱِﺰَﻳﺎَﻧَﺮَﺒْﺧَﺩُﺑْﻨُﻬَﺎﺭُﻭﻥَ،ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧَﺎﺣَﻢّﺔَﻤَﻠَﺴُﻨْﺑُﺩﺍَ ،َﻋَﻨْﻌَﻤَّﺎﺭِﺏﺭﺎَّﻤَﻌﻴِﺑَﺄِﻧْ،ٍﻗَﺎﻟَﻘَﺮَﺃَﺍﺏٍﺱﺎَّﺒَﻌُﻧْ : ( ﺍﻟْﻴَﻮْﻣَﺄَﻙْﻣَﻠْﺘُﻠَﻜُﻤْﺪِﻱ ﻧَﻜُﻤْﻮَﺃَﺗْﻤَﻢِﻦْﻤُﻜْﻴَﻠَﻌُﺗْﻋْﻤَﺘِﻴﻮَﺭَﺿِﻴﺖﻼْﺳِﻹﺎُﻤُﻜَﻟُﺎًﻨﻳِﺪَﻣَ ) ﻭَﻉ ﻱِﺩﻮُﻬَﻴُﻫَﺪْﻧُِﺃْﻮَﻠَﻟﺎَﻘَﻓٌّﻧْﺰِﻟَﺘْﻬَﺬِﻫِﻊﺦَّﺗَﻻﺎَﻨْﻴَﻟَﺎَﻬَﻣْﻮَﻳﺎَﻧْﺫَﻋِﻴﺪًﺍ . ﻗَﺎﻟَﺎ ﺑْﻨُﻌَﺒَّﺎﺳٍﻔَﺈْﺖَﻟَﺰَﻧﺎَﻬَّﻧِﻓِﻴﻴَﻮْﻣِﻌِﻴﺪٍﻑﺔَﻌُﻤُﺠِﻣْﻮَﻴﻳَِﻑَﺮَﻌِﻣْﻮَﻳَﻭٍﺓَ . ﻗَﺎﻟَﺄَﺑُﻮ ﻋِﻴﺴَﻯﻬَﺬَﺍﺣَﺪِﻳﺜٌﺤَﺴَﻨٌﻐَﺮِﻳﺐْﺏﺎِﺜﻳِﺪَﺤْﻨِﻣٌﻧِﻌَﺒَّﺎﺳٍﻮَﻫُﻮ َﺻَﺤِﻴﺢٌ
অর্থ : হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত আছে যে, তিনি একদা –” আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ন করে দিলাম ” ( সূরা মায়েদা ৩) এ আয়াত শরীফ খানা শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন! তখন তাঁর নিকট এক ইহুদী ছিল সে বলে উঠলো, যদি এমন আয়াত শরীফ আমাদের ইহুদী সম্প্রদায়ের প্রতি নাযিল হতো, আমরা আয়াত শরীফ নাযিলের দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা করতাম !’ এটা শুনে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এ আয়াত শরীফ সেই দিন নাযিল হয়েছে যেদিন একসাথে দুই ঈদ ছিলো – (১) জুমুয়ার দিন এবং (২) আরাফার দিন!”
[সূত্রঃ দলীল: তিরমীযি শরীফ- কিতাবুত তাফসীর : হাদীস ৩৩১৮]।
ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻴﺄَﺑُﻮﺧَﻴْﺜَﻤَﺔَ،ﺯُﻩَﻳْﺮُﺑْﻨُﺤَﺮْﺑٍﻮﺎُﻨْﺑُﺪَّﻤَﺤُﻣَﻟْﻤُﺜَﻨَّﻰ – ﻭَﺍﻟﻠَّﻔْﻈُﻼِﺏ ﻰَّﻨَﺜُﻤْﻟﺎِﻧْ – ﻗَﺎﻻَﺣَﺪَّﺛَﻦَﺍﻋَﺒْﺪُﺍﻟﺮَّﺣْﻢِﻥَ، – ﻭَﻫُﻮَﺍﺑْﻨُﻤَﻪْﺩِﻱٍّ – ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎﺳُﻔْﻲُﻥﺍَ،ﻋَﻨْﻘَﻴْﺲِﺑْﻨِﻤُﺴْﻠِﻢٍ،ﻉَﻧْﻄَﺎﺭِﻕِ،ﺑْﻨِﺶﻲْﻟﺎَّﻧَﺄٍﺑﺎَﻫِ َﺩﻮُﻫَ،ﻗَﺎﻟُﻮﺍﻝﻢُﻜَّﻧِﺇَﺮَﻤُﻋَِﻱﺂَﻧﻭُﺀَﺮْﻘَﺗْﺓًﻟَﻮْﺃُﻧْﺰِﻟَﺖَﺦَّﺗَﻻﺎَﻨﻴِﻓْﺫْﻧَﺎﺫَﻟِﻜَﺎﻟْﻲ ﺍًﺪﻴِﻌَﻣْﻭَ . ﻑﻥِﺇُﺮَﻤُﻌَﻟﺎَﻗَﻲَﺤُﻤَﻠْﻋَﻸﻳَِّﻮْﺘَﻟِﺰْﻧُﺄُﺛْﺃَﻯَّﻴَﻮْﻣٍﺄُﻥْﺯِﻟَﺘْﻮَﺃَﻳْﻨَﺮ ﻞﺼِﻬَّﻠﻟﺎُﻟﻮُﺳَﻯﺎﻟﻠﻬﻌﻠﻴﻬﻮﺳﻠﻤﺢَﻳْﺜُﺄُﻧْﺰِﻟَﺘْﺄَﺮَﻌِﺒْﺘَﻟِﺰْﻧُﻓَﺔَﻭَﺭَﺳُﻮﻟُﺎﻝ ﻟَّﻬِﺼﻠﻯﺎﻟﻠﻬﻌﻠﻲﻫﻮﺳﻠﻤﻮَﺍﻗِﻔٌﺒِﻊ َﺭَﻓَﺔَ
অর্থ : আবূ খায়সামা যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না রহমতুল্লাহি আলাইহি … তারিক ইবনু শিহাব (রহমতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াহুদী লোকেরা হযরত উমার আলাইহিস সালাম কে বললো, আপনারা এমন একটি আয়াত পাঠ করে থাকেন তা যদি আমাদের সম্পর্কে নাযিল হতো, তবে এ দিনটিকে আমরা উৎসবের দিন হিসাবে গ্রহণ করতাম। হযরত উমার আলাইহিস সালাম বললেন, আমি জানি, ঐ আয়াতটি কখন (কোথায়) ও কোন দিন নাযিল হয়েছিল। আর যখন তা নাযিল হয়েছিল তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় কোথায় অবস্থান করছিলেন (তাও জানি)। আয়াতটি আরাফার দিন নাযিল হয়েছিল; রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আরাফাতেই অবস্থান করছিলেন।”
[সূত্রঃ মুসলিম শরীফ – কিতাবুত তাফসীর : হাদীস ৭২৪৪, নাসাঈ শরীফ শরীফ- কিতাবুল হজ্জ: হাদীস ৩০০২, মুসনাদে আহমদ ১৯০]।
সহীহ হাদীস শরীফের মধ্যে আইয়ামে তাশরীকের দিন ঈদের দিনঃ
ﻋَﻦْ ﻋُﻘْﺒَﺔَ ﺑْﻦِ ﻋَﺎﻣِﺮٍ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗَﺎﻝَ ” ﺇِﻥَّ ﻳَﻮْﻡَ ﻋَﺮَﻓَﺔَﻭَﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟﻨَّﺤْﺮِ ﻭَﺃَﻳَّﺎﻡَ ﺍﻟﺘَّﺸْﺮِﻳﻘِﻌِﻲﺩُﻧَﺎ ﺃَﻫْﻞَ ﺍﻹِﺳْﻼَﻡِ
অর্থ: হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, আরাফার দিন, নহর বা কুরবানীর দিন এবং আইয়্যামে তাশরীক (অর্থ্যাৎ ১১, ১২ ও ১৩ ই জিলহজ্জ) আমাদের মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন।
[দলীল: নাসাঈ শরীফ কিতাবুল হজ্জ : হাদীস নম্বার ৩০০৪, আবু দাউদ – কিতাবুছ সিয়াম : হাদীস ২৪১৯, তিরমিযী শরীফ- কিতাবুছ ছিয়াম: হাদীস ৭৭৩]।
উক্ত হাদীস শরীফে জুমুয়ার দিনের সাথে সাথে আরাফার দিনকেও ঈদের দিন হিসাবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।
হাদীস শরীফে আছে মুসলমানদের জন্য প্রতি মাসে চারদিন বা পাঁচদিন ঈদের দিনঃ
ﻟﻜﻞ ﻣﺆﻣﻦ ﻓﻲ ﻛﻞ ﺷﻬﺮ ﺍﺭﺑﻌﺔ ﺍﻋﻴﺎﺩ ﺍﻭﺧﻤﺴﺔ ﺍﻋﻴﺎﺩ
অর্থ : হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, মু’মিন মুসলমানদের প্রতি মাসে চারটি অথবা পাঁচটি ঈদ রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিমাসে চারটি অথবা পাঁচটি সোমবার শরীফ হয়ে থাকে।’
[সূত্রঃ কিফায়া শরহে হিদায়া ২য় খন্ড – বাবু ছালাতিল ঈদাইন, হাশিয়ায়ে লখনবী আলাল হিদায়া]।
রোজদারদের জন্য ইফতারের সময় ঈদের সময়ঃ
ﻟِﻠﺼَّﺎﺋِﻤِﻔَﺮْﺣَﺘَﺎﻥِ : ﻓَﺮْﺣَﺔٌﻋِﻨْﺪَﻑِﻩِﺮْﻃِ،ﻭَﻓَﺮْﺡﺀﺎَﻘِﻟَﺪْﻨِﻋٌﺓَ ِﺭَﺑِّﻪِ ٌ
অর্থ : হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, রোযাদারের জন্য দুটি ঈদ বা খুশি। একটি হলো তার প্রতিদিন ইফতারের সময়। আর অন্যটি হলো মহান আল্লাহ পাকের সাক্ষাতের সময়।”
[দলীল– বুখারী শরীফ – কিতাবুস সাওম, মুসলিম শরীফ কিতাবুস সাওম : হাদীস ১১৫৩,মিশকাত শরীফ ,সুনানে নাসাঈ : ২২১৫, রোজার অধ্যায়]।
দেখুন, উক্ত হাদীস শরীফে রোজাদার দের জন্য দুটি ঈদ বা খুশির কথা বলা হইছে।
একটা তার ইন্তেকালের পর আল্লাহ পাকের সাক্ষাত। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে , ইফতার করার সময়। ইফতিার দুই প্রকার – (১) ইফতারে কুবরা। (২) ইফতারে ছোগরা। কুবরা হচ্ছে, ঈদুল ফিতর যা হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমানিত। আর ছুগরা হচ্ছে, রোজাদার প্রতিদিন মাগরিবের সময় করে থাকেন। এটি প্রতিবছর ২৯ বা ৩০ দিন হয়ে থাকে। এছাড়া সুন্নত রোজা হিসাবে আরো রোজা রয়েছে, যেমন- মুহররম শরীফ মাসে ৯,১০ বা ১০,১১ তারিখ দুইটি রোজা এবং এর সাথে আরো ১ টি রাখা হয়, মোটা ৩ টি। শাওয়াল মাসে ৬ টি রোজা রোজা। যিলহজ্জ শরীফ মাসে ১ হতে ৯ তারিখ পর্যন্ত ৯ টি রোজা। এবং বাকি ১১ মাসে ৩ করে সুন্নত রোজা, মোট ৩৩ টি রোজা। এই রোজাদার দের প্রতিটি ইফতার হলো ঈদ। সুবহানাল্লাহ্! আসুন আমারা মোট ঈদ সংখ্যা হিসাব করি — বছরে ৫২ টি শুক্রবার + ৫২ টি সোমবার শরীফ + আরফার দিন+ আইয়ামে তাশরীক ৩ দিন+ রমাদ্বান শরীফে ৩০ টি + বাকি ১২ মাসে ৩ করে ৩৪ টি + যিলহজ্জ মাসে ৯ টি + মুহররম মাসে ২ টি + পহেলা রজব ১ টি + ২৭ শে রজব ১টি + ১৫ শাবান ১ টি = (৫২+৫২+৩০+১+৩+৩৩+৯+২+১+১) = ১৮৪ টি ঈদ! সুবহানাল্লাহ্! সূতরাং হাদীস শরীফ থেকেই ১৮৪ টা ঈদ প্রমাণিত হলো।
বিশেষ কোন নিয়ামত নাযিলের দিন ঈদের দিন:
ﻗَﺎﻟَﻌِﻴﺴَﻯﺎﺑْﻦﻪَّﻠﻟﺎَﻤَﻳْﺮَﻣُﻥَﺃﺎَﻨَّﺑَﺮَّﻣُﺯِﻟْﻌَﻠَﻴْﻨَﺎﻡَﺁﺋِﺪَﺓًﻣِّﻨَﺎﻟﺲَﻞُﻧﻮُﻜَﺗﺀﺎَﻣَّ ﻧَﺎﻋِﻴﺪﺍًﻟِّﺄَﻭﻥِﺮِﺧﺁَﻭﺎَﻨِﻟََّﻚﻨِّﻣًﺔَﻳﺁَﻭﺍَﻭَﺍﺭْﺯُﻗْﻨَﺎﻭَﺃَّﺮﻟﺍُﺮْﻴَﺨَﺘﻧَﺍﺯِﻗِﻴﻦَ
অর্থঃ হযরত ঈসা ইবন মারিয়ম আলাইহিস সালাম বললেন- হে আল্লাহ! আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা নাযিল করুন। এ দিন আমাদের জন্য ঈদ হবে। আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার জন্যও তা হবে ঈদের দিন।
[সূরা মায়িদা ১১৪]।
শবে বরাত শরীফ হচ্ছে ফেরশতা আলাইহিমুস সালামদের ঈদের দিন:
“লাইলাতুর বরাত ও লাইলাতুল কদর ফিরিশতা আলাইহিমুস সালামদের ঈদের দিন”।
[সূত্রঃ গুনিয়াতুত ত্বলেবীণ ৩৬৫ পৃষ্ঠা]।
দুইয়ের অধিক ঈদের কথা একসাথে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে:
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎﻋَﺒْﺪﻩُﻮُﻨْﺒِﻬَّﻠﻟﺍُّﻱِّﺰَﻐْﻟﺎٍﺒْﻳَ،ُﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎﻣُﺢﻢْﺣَﺄُﻨْﺑُﺪَّﻣَﺲﻟﺎﻴِﺑَﺄِﻨْﺑَﺩَ ﻖْﺴَﻌْﻟﺎِّﻳِﺭَُّّﻲِﻧﻻَ،ﺣَﺪَّﺙْﺏُﺔَّﻴِﻘَﺑﺎَﻧَﻧُﺎﻟْﻮَﻟِﻴﺪِ،ﺡَﺩَّﺛَﻨَﺎﻋُﻤَﺮُﺏ َﻲْﻟﺍٍﺪِﺷﺍَﺮُﻧْﻣَﺎﻣِﻲُّ،ﺣَﺪَّﺙﺮﻴِﺜَﻛﻮُﺑَﺃﺎَﻧَﺐَﻌُﻨْﺑُﺪﻳِﺰَﻳٍِﻦَﻤْﺣَّﺮﻟﺍِﺩْ، ﻋَﻨْﺄَﺑِﻴﻬُﺮَﻱْﺭَﺓَﺭَﺿِﻴَﺎﻟﻞَّﻫُﻌَﻨْﻪُ،ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻟَﺮَﺳُﻮﻟُﺎﻟﻞَّﻞﻟﺎﻯَّﻠَﺼِﻫَّ ﻫُﻌَﻠَﻴْﻬِﻮَﺁﻝِﻫِﻮَﺳَﻠَّﻢَ : ” ﺯَﻳِّﻨُﻮﺍ ﺃَﻋْﻴَﺎﺩَﻛُﻢْ ﺑِﺎﻟﺘَّﻜْﺒِﻴﺮِ
অর্থ: তোমরা তোমাদের ঈদগুলোকে তাকবীর ধ্বণী দ্বারা সৌন্দর্য্যন্ডিত কর
[দলীল: মুজামুল আওছাত তাবরানী ৪৫০৯]।
হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলোচ্য হাদীসে ﺍﻋﻴﺎﺩ (আইয়াদ) শব্দ ব্যবহার করেছেন। আর ﺍﻋﻴﺎﺩ (আইয়াদ) শব্দ ঈদ ﻋﻴﺪ শব্দের বহুবচন। অর্থাৎ একটি ঈদকে আরবীতে বলা হয়ﻋﻴﺪ (ঈদ) দু’টি হলেﻋﻴﺪﺍﻥ (ঈদাইনে) আর দু’য়ের অধিক ঈদকে বলেﺍﻋﻴﺎﺩ (আইয়াদ)। সূতরাং হাদীস শরীফে আইয়াদ শব্দ দ্বারা প্রমানিত হলো দুই ঈদের বেশি ঈদ রয়েছে। অতএব হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ শব্দ চয়নই প্রমাণ করে ঈদ দু’য়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং অসংখ্য হতে পারে। এই সহীহ হাদীস শরীফ থেকেই দেখা গেলো, এক হাদীস শরীফেই তিনটা ঈদের কথা বলা হয়েছে। এখন বলুন কিভাবে বলা যায় দুই ঈদের বেশি ঈদ নাই?
একমাত্র চরম স্তরের মূর্খ ছাড়া কেউ বলতে পারে না দুই ঈদের বাইরে ঈদ নাই।