প্রথম হাদিসঃ
হযরত ইবনে আমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-‘‘আমার উম্মতের মধ্যে সে সমস্ত জিনিসের আবির্ভাব ঘটবে, যা বনী ইসরালের মধ্যে ছিল। দু‘টি জুতার একটি অপরটির সাথে যেমন মিল থাকে। এমনকি বনী ইসরাঈলের কেউ যদি প্রকাশ্যে মায়ের সাথে যিনা করে, তবে আমার উম্মতের মধ্যেও এমন লোকের আবির্ভাব হবে, যে তা করবে। নিশ্চয় বনী ইসরাঈল বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে এবং আমার উম্মত তিয়াত্তার দলে বিভক্ত হবে। তাদের সকলেই জাহান্নামে যাবে তবে একটি দল ব্যতীত। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, তারা কারা? রাসূল (ﷺ) উত্তর দিলেন, قَالَ مَا أَنَا عَلَيْهِ وأصحابي -‘‘আমি এবং আমার সাহাবার আদর্শের ওপর যারা প্রতিষ্ঠিত থাকবে।’’
➤খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবিহ, ১/৬১পৃষ্ঠা, কিতাবুল ই‘তিসাম বিস্-সুন্নাহ, হাদিস নং ১৬১, তিরমিযি, আস্-সুনান, ৫/২৬পৃষ্ঠা, হাদিস, ২৬৪১, আহলে হাদিস আলবানী সুনানে তিরমিযির তাহক্বীকে হাদিসটি ‘হাসান’ বলেছেন, তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১৩/৩০পৃষ্ঠা, হাদিস, ৬২, ১৪/৫২পৃষ্ঠা, হাদিস, ১৪৬৪৬, মাকতুবাতু ইবনে তাইমিয়া, কাহেরা, মিশর, প্রকাশ-১৪১৫হিজরি। বায়হাকি, ই‘তিক্বাদ, ১/২৩৩পৃষ্ঠা, বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১/২১৩পৃষ্ঠা, হাদিস, ১০৪
প্রথম এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসদের অভিমতঃ
আমরা এখন দেখবো যে উপরের হাদিসের ব্যাখ্যায় বিজ্ঞ মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ফকিহগণ কোন দলের কথা বলেছেন।
১.এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله) বলেন-
فَلَا شَكَّ وَلَا رَيْبَ أَنَّهُمْ هُمْ أَهْلُ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ
-‘‘এতে কোন সন্দেহ নেই যে, নাজাতপ্রাপ্ত দলটিই হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত।’’
➤মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ১/ ২৫৯পৃষ্ঠা, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ- ১৪২২হিজরি।।
২. আল্লামা ইমাম ইরাকী (رحمة الله) বলেন-
أهل السّنة وَالْجَمَاعَة -‘‘এটাই হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জা‘আমাত।’’
➤ইমাম ইরাকী, তাখরীজে ইহইয়াঊল ঊলূম, ১/ ১১৩৩পৃষ্ঠা, দারুল ইবনে হাযম, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ- ১৪২২হিজরি।।
৩. বিখ্যাত তাফসিরকারক আল্লামা ইসমাঈল হাক্কি (رحمة الله) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন- وفرقة ناجية وهم اهل السنة والجماعة -‘‘নাজাতপ্রাপ্ত দলই হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত।’’
➤ ইসমাঈল হাক্কী, তাফসীরে রূহুল বায়ান, ১/১৩পৃষ্ঠা, সুরা ফাতেহার ব্যাখ্যা, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
৪. আহলে হাদিসদের মুহাদ্দিস মোবারকপুরী এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন-
ولا شك أنهم أهل السنة والجماعة. -‘‘এতে কোন সন্দেহ নেই নাজাত প্রাপ্ত দলটিই হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত।’’
➤মোবারকপুরী, মের‘আতুল মাফাতিহ, ১/ ২৭৫পৃষ্ঠা।
দ্বিতীয় হাদিসঃ
এ বিষয়ে উপরের হাদিসের ন্যায় সাহাবি হযরত মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান (رحمة الله) হতে আরেকটি সূত্র বর্ণিত এভাবে আছে যে, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন ‘‘তোমাদের পূর্বে আহলে কিতাব (ইহুদি ও খ্রিষ্টান) বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে। আর আমার উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে।
كُلُّهَا فِي النَّارِ إِلَّا وَاحِدَةً، وَهِيَ الْجَمَاعَةُ
‘বাহাত্তর দল জাহান্নামে যাবে এবং একটি দল জান্নাতে যাবে। আর তারা হল জামাত অথার্ৎ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত।’ আর আমার উম্মতের মাঝে এমন একদল লোকের আবির্ভাব হবে, যাদের মধ্যে প্রবৃত্তিপূজা এমনভাবে প্রবেশ করবে, যেমন জলাতঙ্ক রোগ, এ রোগ আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতিটি শিরা-উপশিরায় প্রবেশ করে।’’ ➤ খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবিহ, ১/৬১পৃষ্ঠা, কিতাবুল ই‘তিসাম বিস্-সুন্নাহ, হাদিস নং ১৬২, মুসনাদে আহমদ,আবু দাউদ, আস্-সুনান, ৪/১৯৮পৃষ্ঠা, কিতাবুস্-সুন্নাহ, হাদিস, ৪৫৯৭, আহলে হাদিস আলবানী সুনানে আবি দাউদের তাহক্বীকে হাদিসটি ‘হাসান’ বলেছে কিন্তু পাগলের মত আবার মিশকাতে সহিহ বলেছে।
এই দ্বিতীয় হাদিসের বিষয়ে বিজ্ঞ উলামাদের ব্যাখ্যাঃ
১.আল্লামা শায়খ মাতুলী শা‘রাভী {ওফাত.১৪১৮হি.}এ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেন-
والجماعة: هم أهل السنة والجماعة
-‘‘এখানে জামাত বলতে রাসূল (ﷺ) আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতকে বুঝিয়েছেন।’’
➤শায়খ শারাভী, তাফসীরে শারাভী, ৭/৪০০২পৃষ্ঠা,।
২-৩. এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম আব্দুর রউফ মানাভী (رحمة الله) বলেন-
والجماعة أي أهل السنة والجماعة-
‘‘এখানে জামাত বলতে রাসূল (ﷺ) আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতকে বুঝিয়েছেন।’’
➤ মানাভী, ফয়যুল কাদীর, ২/২০পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ১২২৩, মাকতুবাতুল তাযারিয়াতুল কোবরা, মিশর, প্রকাশ- ১৩৫৬হিজরি।।
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় তিনি আরও বলেন-
الفرقة الناجية هي أهل السنة والجماعة
-‘‘নাজাত প্রাপ্ত দলই হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত।’’
➤ মানাভী, ফয়যুল কাদীর, ২/২০পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ১২২৩, মাকতুবাতুল তাযারিয়াতুল কোবরা, মিশর, প্রকাশ-১৩৫৬হিজরি।।
৪. আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের আলেম আযিমাবাদী (ওফাত.১৩২৯হি.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন-
هُمْ أهل السنة والجماعة وهي الفرقة الناجية
-‘‘এটা দ্বারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতকে বুঝানো হয়েছে, যা একমাত্র নাজাত প্রাপ্ত দল।’’
➤ আযিমাবাদী, শরহে সুনানে আবি দাউদ, ১২/২২৩পৃষ্ঠা,দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ- ১৪১৫ হিজরি।।
৫. আহলে হাদিস মোবারকপুরী (ওফাত.১৩৫৩হি.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন-
هُمْ أَهْلُ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ وَهِيَ الْفِرْقَةُ النَّاجِيَةُ -‘‘এটা দ্বারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতকে বুঝানো হয়েছে, যা একমাত্র নাজাত প্রাপ্ত দল।’’
➤ মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযি, ৭/৩৩২পৃষ্ঠা, ও মের‘আতুল মাফাতিহ, ১/২৭১পৃষ্ঠা, ও ১/২৭৮পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
তৃতীয় হাদিসঃ
এ ছাড়া এ বিষয়ে উপরের হাদিসের অনুরূপ সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে আরেকটি সূত্র পাওয়া যায়।
➤ ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, হুলিয়াতুল আউলিয়া, ৯/১৩৮পৃষ্ঠা, দারু ইহইয়াউত্-তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন।
চতুর্থ হাদিসঃ
ইমাম আবু লাইস সমরকন্দী {ওফাত.৩৭৩হি.} এ হাদিসটি কিছুটা মতন পরিবর্তন করে সংকলন করেন এভাবে-
قالوا: يا رسول الله ما هذه الواحدة؟ قال: أهْلَ السُّنَّةِ وَالجَمَاعَةِ الَّذِي أنا عَلَيْهِ، وأصْحَابِي
-‘‘সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! নাজাতপ্রাপ্ত একমাত্র দল কোনটি? তিনি বললেন, তারা হলো আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জা’মাত যারা আমার এবং সাহাবিদের আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত।’’
➤ ইমাম আবু লাইস সমরকন্দী, তাফসীরে বাহারুল উলূম, ১/৪৫৬পৃষ্ঠা, দারু ইহইয়াউত্-তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন।
উপরের হাদিসে প্রমাণিত হলো যে রাসূল (ﷺ)‘র মুখেই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের নাম উচ্চারিত হয়েছে বা প্রচলন ছিল। তার আরেকটি প্রমাণ পাওয়া যায় সাহাবিদের যুগেই এ সঠিক দলের নামের প্রচলন ছিল। যেমন আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বর্ণনা করেন-
سُئِلَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ عَنْ عَلَامَاتِ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ؟ فَقَالَ: أَنْ تُحِبَّ الشَّيْخَيْنِ، وَلَا تَطْعَنَ الْخَتَنَيْنِ، وَتَمْسَحَ عَلَى الْخُفَّيْنِ.
-‘‘হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) কে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আলামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বলেছেন- শায়খাইন অর্থাৎ হযরত আবু বকর ও উমর (رضي الله عنه) কে মুহাব্বত করা। এবং হযরত আলী য ও হযরত উসমান (رضي الله عنه)‘র সমালোচনা না করা এবং চামড়ার মৌজাদ্বয়ের উপরে মাসেহ করা। (মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত, ২/৪৭২পৃ.) এ রকম বর্ণনা হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর পাওয়া যায় (তথ্য সূত্রঃ মোল্লা জিওন, তাফসীরে আহমদিয়্যাহ তে সুরা আনআমের ১৫৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যায়।) এ ছাড়া আমরা সুরা আলে ইমরানের ১০৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় আমরা বিস্তারিত আলোকপাত করেছি।
এ সমস্ত হাদিসে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত দলের পরিচয় দেওয়া হয়েছে, যারা রাসূল (ﷺ) এবং সাহাবায়ে কেরামের আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। আর রাসূল (ﷺ) এবং সাহাবিদের আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত একমাত্র দল হলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত। এ বিষয়ে আরও অনেক হাদিসে পাক জানতে আপনারা আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ দ্বিতীয় খন্ড দেখুন।
এ ছাড়া যত সম্প্রদায় তথা রাফেযী, খারেজী, মুরজিয়া, ক্বাদারীয়া, জাহমিয়া, হারুরিয়া, শিয়া, আহলে হাদিস, কওমী-দেওবন্দী সকলেই ভ্রান্ত এবং পথভ্রষ্ট।
পঞ্চম হাদিসঃ
হযরত মুয়াবিয়া বিন কুররাতা (رضي الله عنه) তিনি তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي مَنْصُورِينَ، لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ
-‘‘আমার উম্মতের মাঝে একদল কিয়ামত পর্যন্ত (শত্রু পক্ষের উপর) সর্বদা সাহায্যপ্রাপ্ত থাকবে। যে তাদেরকে লাঞ্ছিত করতে চায়, সে তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।’’
➤ ইমাম ইবনে মাযাহ, আস্-সুনান, ১/৪পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৬, আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, হুলিয়াতুল আউলিয়া, ৯/৩০৭পৃষ্ঠা, সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিসঃ ৬৮৩৫, মুসনাদে আহমদ, হাদিসঃ ৮২৭৪
পঞ্চম হাদিসের ব্যাখ্যায় বিজ্ঞ উলামাদের ব্যাখ্যা
১.এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম কাযি আয়াজ মালেকী (رحمة الله) এবং ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন-
قَالَ الْقَاضِي عِيَاضٌ إِنَّمَا أَرَادَ أَحْمَدُ أَهْلَ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ وَمَنْ يَعْتَقِدُ مَذْهَبَ أَهْلِ الْحَدِيثِ
-‘‘ইমাম কাযি আয়ায (رحمة الله) বলেন, নিশ্চয় ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) এ হাদিস থেকে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতকে উদ্দেশ্য বা ইচ্ছা পোষণ করেছেন যারা হাদিস বিশারদগণের আক্বিদার উপর রয়েছেন।’’ ➤ ইমাম নাওয়াবী, শরহে মুসলিম, ১৩/৬৭পৃষ্ঠা, দারু ইহ্ইয়াউত-তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ- ১৩৯২হিজরি।
২. আল্লামা ইমাম বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) এর ব্যাখ্যায় লিখেন-
وَقَالَ الإِمَام أَحْمد: إِن لم يَكُونُوا أهل الحَدِيث فَلَا أَدْرِي من هم. وَقَالَ القَاضِي عِيَاض: إِنَّمَا أَرَادَ الإِمَام أَحْمد أهل السّنة وَالْجَمَاعَة.
-‘‘ইমাম আহমদ (رحمة الله) বলেন, যদি (সে দলের লোকেরা ) তারা হাদিস বিশারদগণ না হয় তাহলে তাদের সম্পর্কে আমি জানি না। ইমাম কাযি আয়ায (رحمة الله) বলেন, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) (এ হাদিসে পাকের ব্যাখ্যায়) (এখানে তায়েফা বা একটি দল বলতে) আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতকেই উদ্দেশ্য বা ইচ্ছা পোষণ করেছেন।’’
➤ ইমাম বদরুদ্দীন আইনী, শরহে বুখারী, ২/৫২পৃষ্ঠা, এবং ১৬/১৬৪পৃষ্ঠা, দারু ইহ্ইয়াউত – তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন।
৩. এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (ওফাত.৯১১হি.) বলেন-
قَالَ أَحْمد بن حَنْبَل فِي هَذِه الطَّائِفَة إِن لم يَكُونُوا هم أهل الحَدِيث فَلَا أَدْرِي من هم أخرجه الْحَاكِم فِي عُلُوم الحَدِيث قَالَ القَاضِي عِيَاض وَإِنَّمَا أَرَادَ أهل السّنة وَالْجَمَاعَة وَمن يعْتَقد مَذْهَب أهل الحَدِيث
-‘‘ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) ঐ দল সম্পর্কে বলেন যদি তারা হাদিস বিশারদগণ না হন তাহলে আমি তাদেরকে চিনি না। ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) তাঁর ‘উলূমুল হাদিস’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ইমাম কাযি আয়ায (رحمة الله) বলেছেন, (ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল) যারা হাদিস বিশারদগণের আক্বিদার উপরে তিনি তাদেরকেই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত বলে বুঝিয়েছেন।’’
➤ ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী, শরহে সুনানে ইবনে মাযাহ, ১/২পৃষ্ঠা, (শামিলা)
৪. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন- فَالْمُرَادُ بِهِمْ أَهْلُ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ.-
-‘‘এখানে তায়েফা বা একদল দ্বারা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে।’’
➤ ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৯/৪০৫২পৃষ্ঠা, হাদিস নং ৬২৯২, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ-১৪০৫ হিজরি।
৫. আহলে হাদিস আযিমাবাদী (ওফাত.১৩২৯হি.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন-
وقال أحمد بن حنبل إن لم يكونوا أهل الحديث فلا أدري من هم -قال القاضي عياض إنما أراد أحمد أهل السنة والجماعة ومن يعتقد مذهب أهل الحديث
-‘‘ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) ঐ দল সম্পর্কে বলেন যদি তারা হাদিস বিশারদগণ না হন তাহলে আমি তাদেরকে চিনি না। ইমাম কাযি আয়ায (رحمة الله) বলেছেন, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) এখানে যারা হাদিস বিশারদগণের আক্বিদার উপরে রয়েছেন তথা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতকেই ইচ্ছা পোষণ বা উদ্দেশ্য করেছেন।’’
➤আযিমাবাদী, শরহে সুনানে আবি দাউদ, ৭/১১৭পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ- ১৪১৫ হিজরি।
৬. আহলে হাদিস মোবারকপুরী (ওফাত.১৩৫৩হি.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন-
وَقَالَ الْحَافِظُ فِي الْفَتْحِ وأخرج الحاكم فِي عُلُومِ الْحَدِيثِ بِسَنَدٍ صَحِيحٍ عَنْ أَحْمَدَ إِنْ لَمْ يَكُونُوا أَهْلَ الْحَدِيثِ فَلَا أَدْرِي مَنْ هُمْ وَمِنْ طَرِيقِ يَزِيدَ بْنِ هَارُونَ مِثْلُهُ انْتَهَى قَالَ الْقَاضِي عِيَاضٌ إِنَّمَا أَرَادَ أَحْمَدُ أَهْلَ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ وَمَنْ يَعْتَقِدُ مَذْهَبَ أَهْلِ الْحَدِيثِ
-‘‘ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তাঁর ‘ফতহুল বারী’ গ্রন্থে এবং ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) তার ‘উলূমুল হাদিস’ গ্রন্থে সহিহ সনদে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন ঐ দল সম্পর্কে বলেন যদি তারা হাদিস বিশারদগণ না হন তাহলে আমি তাদেরকে চিনি না। বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ইয়াযিদ ইবনে হারুন (رحمة الله) ও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইমাম কাযি আয়ায (رحمة الله) বলেছেন, (ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল) যারা হাদিস বিশারদগণের আক্বিদার উপরে রয়েছেন তিনি তাদেরকেই তথা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত বলে উদ্ধেশ্য বা ইচ্ছা পোষণ করেছেন।’’
➤ মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযি, ৬/৩৬০পৃষ্ঠা,দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
আল্লামা ইবনে কাসির দামেস্কী (رحمة الله) ও এ মত পেশ করেছেন যে, তায়েফা বা সে দলটি হলো আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত।
➤ ইবনে কাসির, বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ৬/৭৩পৃষ্ঠা,দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ- ১৪০৭হিজরি।।