হাকীকী শহীদগনের মর্যাদা-৩য় অংশ

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

২১. শহীদগণের শাহাদাতের পর আলমে বারযাখের প্রতিটি মানযিলে বিশেষ মর্যাদা লাভ হয়।এমনকি তাঁরা শাফায়াতও করতে পারবেন।

*(i.) হযরত উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল ﷺ বলেনঃ কিয়ামতের দিন ৩ শ্রেনীর লোক শাফায়াত করতে পারবেন, সকল নবীগন,আউলিয়াগন,শহিদগণ।

****দলিল*****

*(ক.) ইবনে মাজাহ: ৩৩০ পৃষ্টা

*(খ.) মেশকাত: ৪৯৫ পৃষ্টা

*(গ.) শরহে মেশকাত: ১০ ম খন্ড,২৮০ পৃষ্টা

*(ঘ.) তাফসিরে মাজহারী: ৫ম খন্ড,৩২৫ পৃষ্টা

*(ঙ.) তাফসিরে রুহুল মায়ানী: ২৮ তম, খন্ড ২৯৯পৃষ্টা

[হাদিস সহিহ]

*(ii.) হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে

عَنْ المِقْدَامِ بْنِ مَعْدِي كَرِبَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم -: لِلشَّهِيدِ عِنْدَ اللَّهِ سِتُّ خِصَالٍ: يُغْفَرُ لَهُ فِي أَوَّلِ دَفْعَةٍ، وَيَرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الجَنَّةِ، وَيُجَارُ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ، وَيَأْمَنُ مِنَ الفَزَعِ الأَكْبَرِ، وَيُوضَعُ عَلَى رَأْسِهِ تَاجُ الوَقَارِ، اليَاقُوتَةُ مِنْهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا، وَيُزَوَّجُ اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِينَ زَوْجَةً مِنَ الحُورِ العِينِ، وَيُشَفَّعُ فِي سَبْعِينَ مِنْ أَقَارِبِهِ

হযরত মিক্বদাম ইবনে মাহদী-কারাব (রা.) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন-“শহীদের জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট ছয়টি বিশেষ মর্যাদা রয়েছে :

*১. তাঁর রক্তের প্রথম ফোটা পতনের সাথে সাথে তাঁকে ক্ষমা করে দেয়া হয়।

*২. সে জান্নাতে তাঁর মর্যাদা অবলোকন করে।

*৩. তাকে কবরের আযাব থেকে মুক্তি দেয়া হয়।

*৪. তাঁর মাথায় সম্মানের মুকুট স্হাপন করা হয়-যার একটি ইয়াকূত (মূল্যবান হিরা জাতীয় পাথর) দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তার থেকে উত্তম।

*৫. তাকে আনত-নয়না ৭২জন হুরের সাথে বিবাহ দেয়া হয়।

*৬. তার আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে সত্তরজনের ব্যাপারে তার সুপারিশ কবূল করা হয়।”

[জামে‘ তিরমিযী,হাদীস ১৬৬৩]

🌻মিকদাদ ইবনু মা’আদী কারাব (রাঃ) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,রাসুল ﷺ বলেছেন,“আল্লাহর নিকট শহীদের জন্য ছয়টি বিশেষ পুরস্কার রয়েছে।

*(ক.) শরীরের রক্তের প্রথম ফোঁটা ঝরতেই তাকে মাফ করে দেওয়া হয় এবং প্রাণ বের হওয়ার প্রাক্কালে জান্নাতের মধ্যে তার অবস্থানের জায়গাটি চাক্ষুষ দেখানো হয়।

*(খ.) কবরের আযাব হতে তাঁকে নিরাপদে রাখা হয়।

*(গ.) ক্বিয়ামতের দিনের ভয়াবহতা হতে তাঁকে নিরাপদে রাখা হয়।

*(ঘ.) তার মাথায় সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরানো হবে। তার একটি ইয়াকুত দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে সমস্ত কিছু হতে উত্তম।

*(ঙ.) তার স্ত্রী হিসেবে বড় বড় চক্ষু বিশিষ্ট ৭২ জন হুর দেওয়া হবে।

*(চ.) তার নিকট আত্মীয়দের মধ্য হতে ৭০ জনের জন্য সুপারিশ কবুল করা হবে।”

[জামে তিরমীযী,আবওয়াবুল ফাদায়িলিল জিহাদ ১/২৯৫,ইবনু মাজাহ, মিশকাত-হাদিস সহিহ]

🌺নবিজী ﷺ বলেন,আল্লাহর নিকট শহীদের জন্য রয়েছে ৬টি দান; তার রক্তের প্রথম ক্ষরণের সাথে তার পাপ ক্ষমা করা হবে,জান্নাতে তার বাসস্থান দেখানো হবে,কবরের আযাব থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হবে, কিয়ামতের মহাত্রাস থেকে নিরাপত্তা পাবে,ঈমানের অলঙ্কার পরিধান করবে সুনয়না হুরীদের সাথে তার বিবাহ দেওয়া হবে এবং তার নিজ পরিজনের মধ্যে ৭০ জনের জন্য তার সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হবে।”

[তিরমিযী-১৫৮৬, ইবনে মাজাহ-২৭৮১, আহমাদ-১৬৫৩,সহীহ তিরমিযী ১৩৫৫]

*(iii.) অপর বর্ননায় রয়েছে।হযরত উবাদা বিন সামিত রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত।হুযুর পাক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “একজন শহীদ আল্লাহর পক্ষ থেকে সাতটি পুরষ্কার লাভ করেন।”

*(ক.) তাঁর রক্তের প্রথম ফোটা পতনের সাথে সাথে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে।

*(খ.) তিনি জান্নাতে তাঁর মর্যাদা দেখতে পারেন।

*(গ.) ঈমানের পোশাকে তাকে আচ্ছাদিত করা হয়ে থাকে।

*(ঘ.) তাকে কবরের আযাব থেকে মুক্তি দেয়া হয়।

*(ঙ.) হাশরের ময়দানের ভয়াবহ চিন্তা-উৎকন্ঠা থেকে তিনি নিরাপদে থাকবেন।

*(চ.) তাঁর মাথায় একটি সম্মানের মুকুট স্থাপন করা হবে।

*(ছ.) তিনি তাঁর পরিবারের সত্তর জন সদস্যের জন্য শাফায়াত করার সুযোগ পাবেন”।

[মুসনাদে আহমাদ, তাবারানী, আত তারগিব ওয়া তাহরিব,পৃ:৪৪৩,২য় খন্ড]

*(iv.) রাসুল ﷺ বলেছেন,একজন শহিদ তার বংশের ৭০জন কে শাফায়াত করতে পারবে।

[তাফসিরে মাজহারী, ৫/৩২৬ পৃষ্টা,আবু দাউদ,ইবনে মাজাহ ২০৬ পৃষ্টা,সনদ সহিহ]

❏ ২২. হযরত আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর কোন বান্দা এমতাবস্থায় মারা যায় যে, আল্লাহর কাছে তার সাওয়াব রয়েছে তাকে দুনিয়াতে এর সব কিছু দিলেও দুনিয়াতে ফিরে আসতে আগ্রহী হবে না।একমাত্র শহীদ ব্যাতীত।সে শাহাদাতের ফযিলত দেখার কারণে আবার দুনিয়াতে ফিরে এসে আল্লাহর পথে শহীদ হওয়ার প্রতি আগ্রহী হবে।[সহীহ বুখারী/ইফা ২৬০৩]

❏ ২৩. হাকীকী শহীদগণের বিশেষ কারামত হিসেবে তাদেরকে গোসল দেয়া হয় না এবং তাদের রক্তমাখা কাপড়েই তাদেরকে দাফন করা হয়।এ সম্পর্কে (উহুদের শহীদগণের ব্যাপারে) বর্ণিত আছে,রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন-

ادْفِنُوهُمْ فِي دِمَائِهِمْ

“তোমরা তাদেরকে তাদের রক্তমাখা অবস্থায়ই দাফন করো”।

এরপর সেই হাদীসে বলা হয়েছে-

وَلَمْ يُغَسِّلْهُمْ

“(এ কারণে) তিনি তাদেরকে গোসল দিলেন না।”

[সহীহ বুখারী,হাদীস নং ১৩৪৬]

❏ অবশ্য হযরত হানযালা (রা:) উঁনার ব্যাপারে যে ফেরেশতাগণ কর্তৃক আসমানে গোসল দেয়ার বর্ণনা রয়েছে, তা তার জানাবাতের কারণে গোসল ফরজ থাকায় অলৌকিকভাবে সংঘটিত হয়েছে।তাই যদি জানাবাত অবস্থায় থাকে এবং তা জানা যায়,তাহলে সেই শহীদের গোসল দেয়া হবে।

[মুস্তাদরাকে হাকিম,হাদীস নং ৪৯১৭/ সুনানে কুবরা-বাইহাকী, হাদীস নং ৬৮১৪]

❏ বস্তুত শহীদগণের বিশেষ কারামত হিসেবেই রাসূলূল্লাহ ﷺ উহুদের শহীদগণকে তাদের যার যার পরিহিত রক্তমাখা কাপড়েই দাফন করার নির্দেশ দেন।এ সম্পর্কে তিনি ইরশাদ করেন-

زَمِّلُوهُمْ فِي ثِيَابِهِمْ

“তোমরা তাদেরকে তাদের (পরিহিত) কাপড়েই জড়িয়ে দাও।” [মুসনাদে আহমাদ,হাদীস নং ২৩৬৮৭]

🌺অপর হাদীসে রয়েছে,শুহাদায়ে উহুদগণের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন-

لاَ تُغَسِّلُوهُمْ، فَإِنَّ كُلَّ جُرْحٍ -أَوْ كُلَّ دَمٍ- يَفُوحُ مِسْكًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ

“তোমরা তাদেরকে গোসল দিয়ো না কেননা, প্রত্যেকটি যখম বা প্রত্যেকটি রক্ত কিয়ামতের দিন মিশক হয়ে সুঘ্রাণ ছড়াতে থাকবে।”

[মুসনাদে আহমাদ,হাদীস নং ১৪১৮৯]

❏ উল্লেখ্য, উক্ত হাদীসে এরপর রয়েছে-

وَلَمْ يُصَلَّ عَلَيْهِمْ

“আর রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদের জানাযা পড়লেন না।” এ কারণে অনেকে বলেন, শহীদগণের জানাযা পড়া হবে না।

কিন্তু অপর অনেক হাদীসে রয়েছে যে,

أن النبي صلى الله عليه وسلم صلى على حمزة وعلى سائر شهداء أحد

“রাসূলুল্লাহ ﷺ হযরত হামযা ও সকল শুহাদায়ে উহুদের জানাযা পড়েছেন।”

[দ্রষ্টব্য : শরহে মা‘আনিল আছার লিত্ব ত্বহাবী,কিতাবুল জানায়িয, হাদীস নং ২৮৮৫-২৮৮৯]

❏ তেমনি ইমাম হাকিম (রহ.)

شَهَادَةِ حَمْزَةَ وَالصَّلَاةِ عَلَيْهِ وَالشُّهَدَاءِ كُلِّهِمْ

(হামযা রা.-এঁর শহীদ হওয়া,তার জানাযা ও সকল শহীদগণের জানাযার বর্ণনা) বাব কায়েম করে صَحِيحُ الْإِسْنَادِ (সহীহ সনদ) বলে উল্লেখ করে স্বীয় মুস্তাদরাক আলাস সহীহাঈন কিতাবে হাদীস বর্ণনা করেছেন।উক্ত হাদীসে রয়েছে-

ثُمَّ جِيءَ بِحَمْزَةَ ، فَصَلَّى عَلَيْهِ ، ثُمَّ يُجَاءُ بِالشُّهَدَاءِ ، فَتُوضَعُ إِلَى جَانِبِ حَمْزَةَ ، فَيُصَلِّي ، ثُمَّ تُرْفَعُ ، وَيَتْرُكُ حَمْزَةَ حَتَّى صَلَّى عَلَى الشُّهَدَاءِ كُلِّهِمْ

“অতঃপর হামযা (রা.)কে আনা হলো। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর জানাযা পড়লেন।অতঃপর অন্য শহীদগণকে আনা হয়। তারপর তাদেরকে হামযা (রা.)-এঁর পাশে রাখা হয়।তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদের জানাযার নামায পড়েন। তারপর তাদেরকে উঠিয়ে নেয়া হয় এবং হামযা (রা.) কে রেখে দেয়া হয়।এভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ সকল শহীদগণের জানাযা পড়েন।

[মুস্তাদরাকে হাকিম,হাদীস নং ২৬০৩০]

🌻এ জন্য ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এবং কুফা, বসরা, শাম প্রভৃতি অঞ্চলের ফক্বীহগণ এ শহীদগণের জানাযা পড়ার কথা বলেছেন।তবে গোসল ব্যতীত দাফন করার ব্যাপারে সাঈদ ইবনে মুসায়্যাব, হাসান বসরী (রহ.) প্রমুখগণ ছাড়া সকলেই একমত পোষণ করেছেন।তবে যে ব্যক্তি জখমী হয়ে জীবনের কিছু সুযোগ-সুবিধা লাভের পর মারা যাবেন, তাকে গোসল দেয়া হবে বলে ফকীহগণ বর্ণনা করেছেন।কারণ,তখন তিনি উহুদের সাহাবীগণের হুকুমে গণ্য হবেন না।

বলা বাহুল্য, হানাফী মাযহাব অনুযায়ী, সেই প্রকৃত শহীদগণকে গোসল দেয়া হবে না এবং তাদের জানাযা পড়তে হবে। অতঃপর তাদের সেই পরিহিত কাপড়ে জড়িয়ে দাফন করতে হবে।তবে অস্ত্র–শস্ত্র ও মোজা খুলে নেয়া হবে।কেননা,এগুলো কাফন জাতীয় নয়।আর কাফনের কাপড় পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে (প্রয়োজন অনুযায়ী) ইচ্ছামত বাড়ানো কিংবা কমানো যাবে।

তারাই হলেন আসল শহীদ-যারা ই‘লায়ে কালিমাতুল্লাহর জন্য সরাসরি জিহাদের ময়দানে কাফিরদের সাথে জিহাদ করে রক্ত ঝরিয়েছেন এবং আল্লাহর রাস্তায় জীবন দিয়েছেন।তাদের জন্যই এ সকল মহা-মর্তবা ও অনন্য মর্যাদা।এটা হাকীকী শহীদগণের ব্যাপারে শরীয়তের নিদের্শিত হুকুম। যা তাদের অনন্য বৈশিষ্ট্য ও বিশেষ মর্যাদার পরিচায়ক।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment