হযরত ফাতেমা (عليه السلام) আমার (ﷺ) সত্তার অংশ

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

হাদিস পর্যালোচনাঃ হযরত ফাতেমা (عليه السلام) আমার (ﷺ) সত্তার অংশ।  যে তাকে অসন্তুষ্ট করল, সে আমাকেই অসন্তুষ্ট করলঃ

❏ হাদীস ১:

 عن المسور بن مخرمة: رضي الله عنه: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: فاطمة بضعة مني، فمن أغضبها أغضبني

মিসওয়ার ইবনে মাখরামাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “ফাতেমা আমার একটি অংশ।  সুতরাং, যে কেউ তাঁকে ক্রোধান্বিত করে সে আমাকে ক্রোধান্বিত করে।”

 তথ্যসূত্রঃ

●বুখারী, আস-সহিহ (৩: ১৩৬১ # ৩৫১০)

●বুখারী, আস-সহিহ (৩: ১৩৭৪ # ৩৫৫৬)

●মুসলিম, আস-সহিহ (৪: ১৯০৩ # ২৪৪৯)

●ইবনে আবী শায়বাহ আল-মুসান্নাফে (৩৮৮ # ৩২২৬৯) আলি (كرم الله وجهه) এর মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন।

●শায়বানী, আল-আহাদ ওয়াল-মাসানী (৫: ৩৬১, ২৯৫৪)

●তাবারানী, আল-মুজাম-উল-কবির (২২: ৪০৪ # ১০১৩)

●হাকিম, আল-মুস্তাদরাক (৩: ১৭২ # ৪৭৪৭)

●বায়হাকী, আস-সুনান-উল-কুবরা (১০: ২০১)

●দায়লামী, মুসনাদুল ফিরদাওস (৩: ১৪৫ # ৪৩৮৯)

●আবু আওয়ানা, আল-মুসনাদ (৩: ৭০ # ৪২৩৩)

❏ হাদীস ২:

বুখারী বর্ণনা করেছেন : আবুল ওয়ালিদ, ➠ আবু উয়াইনা থেকে ➠ তিনি আমর ইবনে দিনার থেকে ➠ তিনি ইবনে মুলাইকা থেকে ➠ তিনি মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, মহানবী (ﷺ) বলেছেন, 

« ﻓﺎﻃﻤﻪ ﺑﻀﻌﺔ ﻣﻨﻰ ﻓﻤﻦ ﺍﻏﻀﺒﻬﺎ ﺍﻏﻀﺒﻰ ».

‘ফাতেমা আমার সত্তার অংশ। যে কেউ তাকে অসন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত করল,সে আমাকেই অসন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত করল।’

(১) বুখারীঃ আস-সহীহ, ‘মানাকিবুল মুহাজিরিন ওয়া ফাযলুহুম’ অধ্যায়, ৩য় খন্ড, পৃ.১৩৬১, ১৩৬৪, ১৩৭৪, হাদীস: ৩৫১০,৩৫২৩,৩৫৫৬; এবং ৫ম খন্ড, পৃ.২৩০৩, হাদীস: ৪৯৩২।

(২) মুসলিমঃ আস-সহীহ, ৪/১৯০৩, হাদীস: ২৪৪৯।

❏ হাদীস ৩:

মুসলিম বর্ণনা করেছেন : আবু মুয়াম্মার ইসমাঈল ইবনে ইবরাহীম আল হাযালি,➠সুফিয়ান থেকে,➠তিনি ইবনে আবি মুলাইকা থেকে ➠ আবি মুলাইকা মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন : ‘ফাতেমা আমার অস্তিত্বের অংশ,যে তাকে কষ্ট দিল সে আমাকেই কষ্ট দিল।’

[মুসলিমঃ আস-সহীহ, ৭/১৪১, হাদীস: ৬৪৬১]

❏ হাদীস ৪:

হাকিম স্বীয় সূত্রে মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (رضي الله عنه) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন : 

‘ফাতেমা আমার অস্তিত্বের অংশ। যা তাকে অসন্তুষ্ট করে আমিও তাতে অসন্তুষ্ট হই এবং যা তাকে আনন্দিত করে আমিও তাতে আনন্দিত হই।’

[মুসতাদরাক আলাস সাহীহাইন,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৫৮,দারুল ফিকর,বৈরুত,১৩৯৮ হিজরি।]

❏ হাদীস ৫:

হাকেম তাঁর ‘মুসতাদরাক’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন : আবুল আব্বাস মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াকুব,➠হাসান ইবনে আলী ইবনে আফ্ফান আল আমেরী থেকে,➠তিনি কুফার অধিবাসী মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে দুহাইম থেকে,➠তিনি আহমাদ ইবনে হাতিম থেকে,➠তিনি তাঁর পিতার সূত্রে ➠আলী ইবনে হুসাইন থেকে এবং তিনি তাঁর পিতার সূত্রে ➠ আলী ইবনে আবি তালিব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ফাতেমাকে বলেন : 

« ﯾﺎ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﯾﻐﻀﺐ ﻟﻐﻀﺒﮏ ﻭ ﯾﺮﺿﻰ ﻟﺮﺿﺎﮎ ».

“নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমার ক্রোধে ক্রোধান্বিত হন এবং তোমার সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট হন।”

[হাকেম নিশাবুরী, আল- মুসতাদরাক আলাস সাহীহাইন, ৩য় খণ্ড,পৃ. ১৫৩]

হাকেম এ হাদীসটির টীকায় বলেন : ‘হাদীসটি সহীহ সূত্রে বর্ণিত। 

❏ হাদীস ৬:

যাহ্হাক বর্ণনা করেছেন : আবদুল্লাহ্ ইবনে সালিম আল-মাফলুয,➠ যিনি সর্বজন প্রশংসিত ব্যক্তি ছিলেন,➠ তিনি হুসাইন ইবনে যাইদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব থেকে,➠ তিনি উমর ইবনে আলী ইবনে জাফর ইবনে মুহাম্মাদ থেকে,➠ তিনি তাঁর পিতার সূত্রে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, মহানবী (ﷺ) ফাতেমা (رضي الله عنه) কে বলেন : 

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমার ক্রোধে ক্রোধান্বিত এবং তোমার সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট হন।’

[আল-আহাদ ওয়াল মাসানী, ৫ম খণ্ড,পৃ. ৩৬৩]

❏ হাদীস ৭:

তাবারানী বর্ণনা করেন : মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ্ আল হাদরামী,➠আবদুল্লাহ্ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে সালিম আল-কাবযাজ হতে,➠তিনি হুসাইন ইবনে যাইদ ইবনে আলী হতে,➠তিনি আলী ইবনে উমর ইবনে আলী হতে,➠তিনি জাফর ইবনে মুহাম্মাদ হতে,➠তিনি তাঁর পিতা হতে,➠তিনি আলী ইবনে হুসাইন হতে,➠তিনি হুসাইন ইবনে আলী (رضي الله عنه) হতে, ➠তিনি আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ ফাতেমা (رضي الله عنه) কে বলেন : 

‘নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমার ক্রোধে ক্রোধান্বিত হন এবং তোমার সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট হন।’

[আল-মোজামুল কাবীর,১ম খণ্ড,পৃ. ১০৮]

➡হাইসামী বলেন : হাদীসটি তাবারানী হাসান সূত্রে বর্ণনা করেছেন। [মাজমাউয যাওয়ায়িদ ওয়া মানবাউল ফাওয়ায়িদ,৯ম খণ্ড,পৃ. ২০৩]

➡সালিহী আশ-শামীও হাদীসটির সনদকে হাসান বলেছেন। [সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফি সিরাতি খাইরিল ইবাদ,১১তম খণ্ড,পৃ. ৪৪]

❏ হাদীস ৮:

আহমদ ইবনে শুয়াইব নাসায়ী তাঁর ‘ফাযায়েল’ গ্রন্থে মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, মহানবী (ﷺ) বলেছেন : 

‘নিশ্চয় ফাতেমা আমার অস্তিত্বের অংশ,যে তাকে ক্রোধান্বিত করল,সে আমাকেই ক্রোধান্বিত করল।

[নাসায়ী, ফাযায়েলুস সাহাবা, পৃ. ৭৮, দারুল কুতুব আল- ইলমিয়া, বৈরুত।]

❏ হাদীস ৯:

আহমাদ ইবনে হাম্বাল তার নিজস্ব সনদে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন :

« ﺍﻧﻤﺎ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﺑﻀﻌﺔ ﻣﻨﻰ ﯾﻮﺫﯾﻨﻰ ﻣﺎ ﺍﺫﺍﻫﺎ ﻭ ﯾﻨﺼﺒﻨﻰ ﻣﺎ ﺍﻧﺼﺒﻬﺎ ».

অনুবাদ : “ফাতেমা আমার শরীরের অংশ স্বরূপ, যা তাকে কষ্ট দেয় তা আমাকে কষ্ট দেয়, আর যা কিছু তাকে অসন্তুষ্ট করে তা আমাকেও অসন্তুষ্ট করে। [মুসনাদে আহমদ]

❏ হাদীস ১০:

হযরত মোহাম্মদ (ﷺ) বলেছেন, “নিশ্চয় ফাতেমা আমারই একটি অংশ।”

 তথ্যসূত্রঃ

●বাজজার, আল-মুসনাদ (২: ১৬০ # ৫২৬)

●হাইসামি, মাজমাউয জাওয়াইদ (৪: ২৫৫)

●হাইসামি, মাজমাউয জাওয়াইদ (৯: ২০২)

●আবু নুয়াইম, হিলিয়াত-উল-আউলিয়া ওয়া তাবাকাত-উল-আসফিয়া (২:৪০, ৪১,১৭৫)

●দারকুতনি, সুলাত হামযাহ (পৃষ্ঠা.২৮০ # ৪০৯)

❏ হাদীস ১১:

রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন : ‘নিশ্চয় ফাতেমা আমার মাংসপিণ্ড।’

[আবদুর রহমান আস সোহাইলী, আর-রাউজুল আনিফ ফি শারহিস সিরাতিন্নাবাভীয়া লি ইবনে হিশাম,২য় খণ্ড,পৃ. ২৮৮]

————®————

প্রথমটি হলো ‘ফাতিমা আমার অংশ বা আমার অস্তিত্বের অংশ’। হাদীসটিতে ‘বাদআ’ বা ‘বিদআ’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। ইবনে কাসীর বলেন : ‘বাদআতুন’ অর্থ মাংসের টুকরা বা অংশ। কখনও কখনও এটি ‘বিদআতুন’ও উচ্চারিত হয়ে থাকে। উভয় ক্ষেত্রেই বাক্যটির অর্থ ‘সে আমার অংশ।’ যেহেতু কারো মাংসের টুকরা তার দেহের ও তার সত্তার অংশ বলে গণ্য সেহেতু হাদীসটির ‘বিদআতুন’ শব্দকে অস্তিত্বের অংশ বা সত্তার অংশ অর্থ করা যায়।

[আন-নিহায়া ফি গারীবিল হাদীস,১ম খণ্ড,পৃ. ১৩৩,দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া,বৈরুত,১৪২৩ হিজরি।]

ইবনে মানযুর বলেন : ‘অমুক অমুকের অংশ, এর অর্থ সে তার অনুরূপ।’ অতঃপর তিনি আলোচ্য হাদীসটিকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

[লিসানুল আরাব,‘বাদ’ ধাতুমূল।]

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment