হযরত কেল্লা শাহ (রহঃ)
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ার খড়মপুরে অবস্থিত হজরত সৈয়দ আহম্মদ (রঃ) এর দরগাহ যা কেল্লা শহীদের দরগাহ নামে সমগ্র দেশে পরিচিত । কেল্লা শহীদ রহঃ সর্ম্পকে যে কাহিনী প্রচলিত আছে তা হচ্ছে এই যে, তৎকালীন বাংলার রাজা ছিলো গৌর গোবিন্দ। তিনি ছিলেন তান্ত্রিক শক্তিতে বলিয়ান। রাজা গৌর গোবিন্দের “জীয়ন কূপ” নামে একটা আশ্চর্য জনক কূপ ছিল । সেই কূপে মৃত লাশ ফেলে দিলে তা সাথে সাথেই জীবিত হয়ে যেত। বাবা শাহ্ জালাল ও ৩৬০ আওলিয়ার ইসলাম প্রচারের লক্ষে গৌর গোবিন্দের তুমল যুদ্ধ বাধে,
এই যুদ্ধে গোবিন্দের যে সৈন্য মারা যেত তাকে রাজা জীয়ন কূপে ফেলে আবার জিবিত করে ফেলতেন।
এ ভাবে গৌড় গোবিন্দের সাথে হাজার চেষ্টা করেও যখন বাবা শাহ্ জালাল যুদ্ধে জয় লাভ করতে পারছিলেন না।
তখন তিনি ধ্যানে জানতে পারলেন যে ঐ জিয়ন কূপের শক্তি না নষ্ট করা পর্যন্ত এই যুদ্ধে জয় লাভ সম্ভব না।
তখন তিনি তার ৩৬০ আউলিয়াদের ডেকে জীয়ন কূপ নষ্ট করার জন্য বললে কেউ রাজি হয়নি। কারন সেই কূপের পাহারায় থাকতো ৪০ জন উলঙ্গ নারী,
ইসলামে অশ্লীলতার নিকট হওয়া হারাম। যখন শাহ্ জালাল রহঃ খুব চিন্তায় মগ্ন ছিলেন, তখন শাহ্ জালাল বাবার অনুরাগি ভক্ত গিয়াসু দারাজ শাহ্ জালালের চিন্তা মাখা মুখ সহ্য করতে না পেরে এই কঠোর কাজে রাজি হলেন। এরপর যখন গিয়াসু দারাজ সেই কূপের সামনে যান তখন ইসলামের মান অক্ষুন রাখতে নিজের ধারালো তরবারি দিয়ে আল্লাহু আকবারবলে এক কোপে নিজের কল্লা কেটে তিতাস নদীতে ফেলে দেন। কল্লা ছাড়া গিয়াসু দারাজ রহঃ তরবারি হাতে যখনই জিয়ন কূপের সামনে গেলেন তখন বাবার এই ভয়াবহ রূপ দেখে ৪০ জন উলঙ্গ নারী দিক বিদিক হয়ে পালিয়ে যান। গিয়াসু দারাজ রহঃ তখন এক টুকরা গরুর মাংস ঐ কূপে ফেলে দিলে সাথে সাথে ঐ কূপের সকল ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
এরপর কল্লা ছাড়া কেল্লা শাহ্ রহঃ’র দেহ শাহ্ জালাল রহঃ নিকট তার পায়ের সামনে গিয়ে প্রান ত্যাগ করেন।
এরপর হযরত শাহ্ জালাল রহঃ কল্লা শাহ্ রহঃ এর পাক দেহ নিজ হাতে সিলেটে দাফন করেন। সে সময় খড়মপুরের জেলেরা তিতাস নদীতে মাছ ধরত ।
একদিন চৈতন দাস ও তার সঙ্গীরা উক্ত নদীতে মাছ ধরার সময় হঠাৎ তাদের জালে একটি খন্ডিত শির আটকা পড়ে যায় । তখন জেলেরা ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে এবং খন্ডিত শিরটি উঠাতে গেলে আল্লাহর কুদরতে খন্ডিত শির বলতে থাকে ‘‘একজন আস্তিকের সাথে আর একজন নাস্তিকের কখনো মিল হতে পারে না। তোমরা যে পর্যন্ত কলেমা পাঠ করে মুসলমান না হবে ততক্ষণ আমার মস্তক স্পর্শ করবে না ।’’ খন্ডিত মস্তকের এ কথা শুনে মস্তকের কাছ থেকে কলেমা পাঠ করে চৈতন দাস ও সঙ্গীরা হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হয়ে যায়। মস্তকের নির্দেশ মোতাবেক ইসলামী মতে খড়মপুর কবরস্থানে মস্তক দাফন করে । ধর্মান্তরিত জেলেদের নাম হয় শাহবলা, শাহলো, শাহজাদা, শাহগোরা ও শাহর ওশন ।
তাঁরাই এ দরগাহের আদিম বংশধর । এই দরগাহের খ্যতি ধীরে ধীরে চর্তুদিঁকে ছড়িয়ে পড়ে । এ থেকেই শাহ পীর সৈয়দ আহম্মদ গেছুদারাজ কেল্লাশহীদের পবিত্র মাজার শরীফ নামে পরিচিতি লাভ করে । ২৬০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত দরগা শরীফের জায়গা তৎকালীন আগরতলা রাজ্যের মহারাজা দান করেন । বিভিন্ন ঐতিহাসিকগণ অনুমান করেন যে, আউলিয়া হজরত শাহ জালাল (রঃ) এক সঙ্গে সিলেটে যে ৩৬০ জন শিষ্য এসেছিলেন হজরত সৈয়দ আহম্মদ গেছুদারাজ ছিলেন তাঁদের অন্যতম । তরফ রাজ্যেও রাজা আচক নারায়নের সঙ্গে হজরত শাহজালাল রহঃ ওনার প্রধান সেনাপতি হজরত সৈয়দ নাসিরউদ্দিন রহঃ যে যুদ্ধ পরিচালনা করেন সে যুদ্ধে হজরত সৈয়দ আহম্মদ গেছুদারাজ রহঃ শহীদ হন এবং তাঁর মস্তক তিতাস নদীর স্রোতে ভেসে আসে।
প্রতি বছর ওরসে কেল্লাশহীদের মাজারে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়।