হযরত ইমাম হোসাঈন রাদিআল্লাহু আনহু’র জীবনী ও উপদেশাবলী

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

হযরত ইমাম হোসাঈন ইবনে আলী রাদিআল্লাহু আনহু’র পবি্র মাযার শরীফ, কারবালা 

জন্ম- ৩রা শাবান ৪র্থ হিজরী/৬২৬ খৃষ্টাব্দ, শাহাদাত-১০ই মুহররম,৬১ হিজরী / ৬৮০ খৃষ্টাব্দ।

হযরত ইমাম হোসাঈন ইবনে আলী রাদিআল্লাহু আনহু ৪র্থ হিজরীর ৩রা শাবান, শনিবার মুতাবিক ৬২৬ খৃষ্টাব্দের ৮ই জানুয়ারী পবিত্র মদীনা নগরীতে জন্ম গ্রহন করেন।  তাঁর জন্মের শুভ সংবাদ শুনে স্বয়ং রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দেখতে তাঁর মাতা বেহেশতী রমণীকুল সরদার বিবি ফাতিমার (রাদিআল্লাহু আনহা)’র কাছে ছুটে আসেন এবং পরম স্নেহে তাঁকে কোলে তুলে নিয়ে তাঁর কানে আজান দেন।  তাঁর পিতা হজরত আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) প্রথমে ছেলের নাম রেখছিলেন ‘হরব’। কিন্তু তাঁর নানাজান মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে নাম পাল্টে তাঁর নাম রাখেন হোসাঈন। তাঁর ডাকনাম ছিল ‘আবু আবদিল্লাহ্’।  তাঁর উপাধি ছিল রাশীদ,তাইয়্যেব, সাইয়্যেদ, মুবারাক ইত্যাদি।  হযরত হোসাঈনের দৈহিক গঠন প্রকৃতি অন্যান্যদের তুলনায় নবীজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাথে অনেক বেশী সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল।  

এ প্রসঙ্গে হজরত আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন,“হোসাঈনের দেহের নিম্নাংশের গঠন প্রকৃতি নবীজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মত ছিল”। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে অতিশয় স্নেহ করতেন। রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঈমাম হাসান (রাদিআল্লাহু আনহু) ও ইমাম হোসাঈনকে (রাদিআল্লাহু আনহু) বেহেশতী যুবকদলের সর্দার হবার সুসংবাদ দিয়েছেন। তিনি হজরত বিবি ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা), হজরত আলী (রাদিআল্লাহু আনহু), এবং নবীয়ে করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কোলে লালিত পালিত হন  এবং নবীজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) গৃহেই যাবতীয় ধর্মীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। একাদশ হিজরীতে নুর নবীজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওফাতের সময় তিনি ছিলেন মাত্র সাত বছরের বালক। নবীজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইন্তেকালের ছয় মাসের মধ্যেই হজরত বিবি ফাতিমাও (রাদিআল্লাহু আনহা) ইন্তেকাল করেন। এভাবে তিনি মাত্র সাত থেকে আট বছরের মধ্যেই নবীজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মত স্নেহপ্রবণ নানা ও বিবি ফাতিমার (রাদিআল্লাহু আনহা) মত মমতাময়ী মায়ের আদরের ছায়া থেকে বঞ্চিত হন। ইমাম হোসাঈনের (রাদিআল্লাহু আনহু) বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা মোট ১৮টি। তাঁর সম্পর্কে মহানবী  (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,“ যে ব্যক্তি (ইমাম) হোসাঈনকে (রাদিআল্লাহু আনহু) ভালবাসে সে যেন আমাকে ভালবাসে। আর যে ব্যক্তি (ঈমাম) হোসাঈনের (রাদিআল্লাহু আনহু) সাথে শত্রুতা করে সে যেন আল্লাহ্র  সাথে শত্রুতা করে”। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো  বলেছেন, “হোসাঈন -এর (রাদিআল্লাহু আনহু) উৎপত্তি আমা হতে। যে হোসাঈনকে (রাদিআল্লাহু আনহু) বন্ধুভাবে, আল্লাহ্ তাঁকে বন্ধু হিসেবে গ্রহন করেন”। ব্যক্তিগত জীবনে হোসাঈন (রাদিআল্লাহু আনহু) তাঁর পিতা হজরত আলীর (রাদিআল্লাহু আনহু) মতই সৎ, ন্যায়নিষ্ট, সাহসী, ধর্মপ্রান ও উদার স্বভাবের ছিলেন। হজরত হোসাঈন (রাদিআল্লাহু আনহু) পবিত্র কুরআনের হাফিজ ছিলেন। নবীজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অনুসরণের প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপোষহীন। 

৬৮০ খৃষ্টাব্দের ১১ই অক্টোবর মুতাবিক ৬১ হিজরী সনের ১০ই মুহররম ৫৪ বছর বয়সে হযরত ইমাম হোসাঈন ইবনে আলী রাদিআল্লাহু আনহু পবিত্র আশুরার দিনে কারবালার প্রান্তরে স্বৈরাচারী,দুরাত্মা ইয়াজিদ এর সেনাবাহিনীর হাতে স্বপরিবারে ৭২জন সঙ্গীসহ অকাতরে শাহাদাত বরণ করেন।  হযরত ইমাম হোসাঈন ইবনে আলীর (রাদিআল্লাহু আনহু) শাহাদৎ বরণের পর তাঁর পবিত্র শরীর মুবারাকে নেযার (বর্শা) ৩৩ টি, তরবারীর ৩০ টি এবং তীরের ৪৫টি আঘাতের ক্ষত চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল। এ সময়ে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর।  কারবালাতেই ইসলামের এ মহান বীর সৈনিকের শেষ শয্যা রচিত হয়। যেখানে তাঁর মাজার অবস্থিত, সেস্থান আজ পূণ্য তীর্থভূমির মর্যাদায় অভিসিক্ত – গণ মানুষের আন্তরিক ভক্তিতে নন্দিত। 

প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ভক্ত অশ্রুসিক্ত নয়নে এ মহাত্মার মাযার প্রাঙ্গণে সমবেত হয়ে তাঁর প্রতি অন্তরের শ্রদ্ধাপূর্ণ ভালবাসার অর্ঘ্য নিবেদন করে। “এভাবে সত্য প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত, জালিমশাহীর বিরূদ্ধে মূর্তিমান প্রতিবাদ, ইসলামী আদর্শের পূণরুজ্জীবনকারী, অকুতোভয় বীর সেনানী হযরত ইমাম হোসাঈন ইবনে আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) তাঁর পিতা ও জেষ্ঠ্যভ্রাতার ন্যায় উমাইয়া গোত্রের ক্রোধ-লালসা-ষড়যন্ত্র ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নির্মম শিকার হন। কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করে আপোষহীন মনোভাব গ্রহনের কারনে তাঁকে নিজের অমুল্য জীবন দিয়ে সত্য নিষ্টার মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছিল”। মহাত্মা হযরত ইমাম হোসাঈন ইবনে আলী রাদিআল্লাহু আনহু সম্পর্কে এটাই হচ্ছে বিজ্ঞ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যদেশীয় ঐতিহাসিকদের সুচিন্তিত রায়। বিখ্যাত পাশ্চাত্যদেশীয় ঐতিহাসিক গীবন কারবালার হত্যাকান্ড প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন, “সেই সুদূর যুগের আবহাওয়ায়  হোসাঈন -এর মৃত্যুর বিয়োগান্ত দৃশ্য কঠিনতম পাঠকের অন্তরেও সমবেদনার সঞ্চার করবে”। 

তাঁর স্বেচছায় মৃত্যুকে আলিঙ্গনের এ সুবিরল দৃশ্য প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে অনুসন্ধিৎসু পাঠকের মন। মনের খোলা প্রান্তর আলোড়িত করে প্রশ্ন জাগে কেন এ স্বেচ্ছা আত্মত্যাগ ? সংঘর্ষ এড়ানোর কোন পথই কি খোলা ছিল না ? শান্তির পথ ছেড়ে সংগ্রামের পথে কেন গেলেন তিনি ?

বিদেশ বিভূঁইয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে শত্রু পরিবেষ্টিত অবস্থায়, অনাহারী-অসহায়-নিরস্ত্র একদল মানুষ কী কারনে নারী-শিশু-বৃদ্ধ-যুবা নির্বিশেষে সকলে একযোগে  আত্মত্যাগর চরম সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছিল ? তাবৎ প্রশ্ন সকলের মনে  অপার বিস্ময়ের সঞ্চার করে।

এ সকল প্রশ্নের জবাব একটাই – অবিচল সত্যনিষ্ঠা আর দুনিয়ার ভোগ লালসার প্রতি পরম ঘৃণাসূচক দৃষ্টিভঙ্গি।  দাম্ভিক ও ক্ষমতালোভী ইয়াজিদের অন্যায় আবদার সমর্থন করে তাঁরা সহজেই পার পেয়ে যেতে পারতেন।  ব্যক্তিগত জীবনের তুচ্ছাতিতুচ্ছ সুখ-সম্পদের প্রতি নির্মোহ থেকে সত্যের পথে অবিচল পদচারণা হয়তো সম্ভব।  কিন্তু সত্যের খাতিরে জীবনকে অস্বীকার করে নিশ্চিত মৃত্যুকে বেছে নেয়ার মধ্যে যে বীরত্ব আছে তার তুলনা নাই। মহামানবেরা যুগে যুগে এ পৃথিবীতে আর্বিভূত হয়েছেন সত্য-ন্যায়নীতি ও আত্মত্যাগের শিক্ষাকে বাস্তবে  রূপ দেবার জন্যই। সাধারন মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথে সদা অবিচল থাকার শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করতে গিয়ে তাঁরা অকুন্ঠিত  চিত্তে আত্মোৎসর্গ করেছেন। আর তাই তো দুরাত্মা ইয়াজিদের শত প্রলোভন ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন তাঁদেরকে এতটুকু বিচলিত করতে সক্ষম হয়নি। পারেনি হৃদয় দিয়ে অনুভব করা সত্যের পক্ষালম্বন থেকে তাঁদেরকে সামান্যতম দুরত্বে সরিয়ে নিতে। 

প্রবল দায়িত্বানুভুতি এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবনের অসীম আবেগে তিনি পাপিষ্ঠ ইয়াজিদ বাহিনীর বিরুদ্ধে  সংগ্রাম করার সুদৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়েছিলেন। খেলাফতে রাশেদাকে ‘কাইসার ও কিসরার’ অনুসৃত পথে চলার জন্য স্বাধীনতা দানের চেয়ে নিজের ও স্বীয় পরিবার-পরিজনের জীবন কুরবানী করাই তাঁর নিকট সহজ ছিল। তাই দেখা যায়, তার কাছে রূখসতের (আপোষ রফা) পথ খোলা থাকা সত্বেও তিনি আযিমতের (মহত্ব ও ত্যাগের) পথ অবলম্বন করে দুনিয়ার সামনে এক বিরল নিদর্শন কায়েম করলেন। তিনি সুস্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন, ইসলামী খিলাফত অক্ষুন্ন রাখা এবং তা বাদশাহীর পথে  ধাবিত হওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য আযিমতের পথ অবলম্বন করতে হবে। নিজের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে হলেও খিলাফতকে সঠিক পথে আনয়নের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে পরামর্শ ভিত্তিক খলিফা নিয়োগ ও নির্বাচন ব্যতিরেকে উত্তরাধিকারী মনোনয়নের যে অসুস্থ্য ধারার সূচনা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে তুমুল প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন। নিজের ও তাঁর পরিবারবর্গের মুল্যবান জীবনের বিনিময়ে তিনি প্রমান করেছিলেন যে, ইসলামী রাষ্ট্রে কোন রকম বিদআত মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে তা কোন অবস্থাতেই বরদাস্ত করা  যাবে না। বরং অন্যায়কে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করাই হবে প্রকৃত ঈমানদারীর লক্ষন।  নবগঠিত  ইসলামী রাষ্ট্রে গনতান্ত্রিক মুল্যবোধকে সঠিক ধারায় পরিচালনা করার ক্ষেত্রে তাঁর এ অবদান ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। ইমাম হোসাঈনের (রাদিআল্লাহু আনহু) নেতৃত্বে  মাত্র ৭৮ জন মুসলমানের এ ক্ষুদ্র কাফেলাটি কারবালার ময়দানে এক অশ্রুতপূর্ব ইতিহাসের জন্ম দিয়েছিল। ইয়াজিদের সুশিক্ষিত দশ সহস্র সেনা সদস্যের মুকাবিলায় তাঁরা ছিলেন নিতান্তই নগন্য ও অসহায়। কিন্তু তাঁদের মনোবল ছিল অটুট আর প্রতিজ্ঞা ছিল সুদৃঢ়। শক্তি দিয়ে তাঁদেরকে কিছুতেই কাবু করা যায় নি। পরম সাহসিকতার সাথে নিশ্চিত মৃত্যুকে সাদরে আলিঙ্গনের মধ্য দিয়ে তাঁরা হয়ে উঠেছিলেন মৃত্যুঞ্জয়ী। নারী ও শিশুসহ তাঁদের মধ্যে মোট ৭২ জন শাহাদাত বরণ করেছিলেন।      

মহামানব ইমাম হোসাইনের (রাদিআল্লাহু অনহু) এ ত্যাগ শোকের নয় বরং মহা গৌরবের। তাঁর এ জীবন উৎসর্গে গৌরবদীপ্ত হয়েছে সত্য নিজেই। অবিচলিতচিত্তে আমরণ সত্যনিষ্ঠার পরম পারাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে তিনি মহিমান্বিত করেছেন জীবন ও জগৎসংসারকে। তিনি দেখিয়ে গিয়েছেন কী করে ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে অকাতরে জীবন বলি দিতে হয়।  বিংশ শতকের দার্শনিক কবি মোহাম্মদ আলী গওহর ইমাম হোসাঈনের (রাদিআল্লাহু আনহু) এ মহান আত্মত্যাগের তাৎপর্য তুলে ধরে বড় সুন্দর কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, “ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হার কারবালা কা বাদ”।  অর্থাৎ ইসলামের স্বার্থেই তাঁর এ আত্মত্যাগ। কারবালা প্রান্ত্ররে জীবন উৎসর্গের যে রক্তেভেজা ও হৃদয়বিদারক মহোৎসব সংঘটিত হয়েছিল তারই ভিত্তিমুলে দাঁড়িয়ে আছে আজকের ইসলাম ধর্ম। যুগে যুগে এভাবে চরম ত্যাগের বিনিময়ে সংকটের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে নব্য জীবন লাভ করেছে পবিত্র ধর্ম ইসলাম।

বাংলা সাহিত্যে নবধারার প্রবর্তক কবি মাইকেল মধুসদন দত্তের একটা উক্তি এখানে উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক হবে বলে মনে করছি। কারবালার বীর শহীদানদের মহান বীরত্ব গাথা অবগত হয়ে তিনি বলেন,“মুসলমানদের মত এ রকম মহান আত্মত্যাগের ঘটনা হিন্দুদের ইতিহাসে একটাও নেই বিধায় তারা মারাঠা জাতির বীরযোদ্ধাদের কাহিনী স্মরন করে নিজেদেরকে উদ্দীপিত করার প্রয়াস পায়। এ জাতীয় ঘটনা একটা জাতিকে নবচেতনায় জাগরিত করতে পারে”। বলাবাহুল্য, প্রখ্যাত সাহিত্যিক মীর মোশাররফ হেসেন এর পর পরই তাঁর অমর গদ্যগ্রন্থ ‘বিষাদ সিন্ধু’ রচনায় উদ্যোগী হন। কারবালা প্রান্তরে সংঘটিত বিয়োগান্ত ঘটনাপ্রবাহ অবলম্বনে রচিত তাঁর এ গ্রন্থখানা অতি পবিত্র জ্ঞানে সুদীর্ঘকাল যাবৎ মুসলিম সমাজে পঠিত হচ্ছে ।  যদিও এতে বর্ণিত বহু ঘটনা ইতিহাস দ্বারা সমর্থিত নয়, তারপরও এ গ্রন্থের কদর আজো এতটুকু কমেনি।              

বিংশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ট সংস্কারক হজরতুল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহিমাতুল্লাহি আলাইহি সত্যই বলেছেন, “ইসলামের জন্য ইমাম হোসাঈনের (রাদিআল্লাহু আনহু) মত এত বড় কুরবানী আর কেউ দিতে সক্ষম হয় নি”। বস্তুতঃ  কারবালা প্রান্তরে ইমাম হোসাঈনের পবিত্র  রক্তে লেখা হলো মানব ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়। সত্য প্রতিষ্ঠার মহান সংগ্রামে ঐতিহাসিক কারবালার প্রাšরে হযরত ইমাম হোসাঈন (রাদিআল্লাহু আনহু) ত্যাগের যে বিরল নজীর স্থাপন করে গেলেন মানব ইতিহাসে তা চিরদিন অম্লান হয়ে থাকবে। আর সত্যানুরাগীদের জন্য তাঁর পবিত্র জীবনাদর্শ বিবেচিত হবে অনুপ্রেরণার অফুরন্ত উৎস রূপে ।                                            

তাই আমরাও যদি মহাত্মা হযরত ইমাম হোসাঈন এর (রাদিআল্লাহু আনহু) সংগ্রামী আদর্শ ও সত্যাশ্রয়ী চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে বাস্তব জীবনে এর চর্চা করতে পারি, তবে ইসলামের বিজয় অতি নিকটে। যেদিন ইসলামের কালজয়ী আদর্শ বিশ্বের আপামর মানুষের জীবনে বাস্তবরূপ লাভ করবে, সেদিনই শেষ হবে যুগ যুগ ধরে চলে আসা সত্য ও মিথ্যার এ দ্বন্দ। পৃথিবীতে নেমে আসবে স্বর্গের নির্মল সুবাতাস। সার্থক হবে মহাত্মা হযরত ইমাম হোসাঈন এর (রাদি আল্লাহুতায়ালা আনহু) কুরবানী ! জয়ী হবে তাঁর সংগ্রামী আদর্শ ।

হযরত ইমাম হোসাঈন (রাদিআল্লাহু আনহু) এর বাণীসমুহ ঃ

১। আল্লাহ্ এর  নিকট এমন এক রেজিষ্ট্রার রয়েছে, যাতে ছোট-বড় নির্বিশেষে সকল গুনাহই লিপিবদ্ধ থাকে।               

২। খোদার আনুগত্যের প্রতি সন্তুষ্ট থাকাই উত্তম। 

৩। ধৈর্য্য ও সহনশীলতা মানব চরিত্রকে সুসজ্জিত করে। 

৪। লোভ ও অধিক প্রাপ্তির আশা শুধুমাত্র খারাপই নয় বরং তা মানুষকে ধ্বংস করে। 

৫। বদান্যতা এবং নেক কাজ আজমত ও বুজুর্গীর উৎকৃষ্টতম মাধ্যম। 

৬। ভাল কাজ নিজেই মানুষকে প্রশংসার যোগ্য করে তোলে। 

৭। আল্লাহ্ পাক দুনিয়াকে পরীক্ষার জন্য সৃষ্টি করেছেন ।

৮।  আল্লাহ্ এর কিতাবের উপর আমল, ইনসাফ, দিয়ানত এবং খোদার উপর ভরসা না করা পর্যন্ত কেউ ইমাম হতে পারবে না।

৯। সবচাইতে খারাপ শাসক সেই ব্যক্তি, যে নিজের বিরোধীদের সামনে নতশির এবং হিম্মতহীন। 

১০। যে সম্পদের মাধ্যমে ইজ্জত-আবরু সংরক্ষিত থাকে, সে সম্পদই উত্তম। 

১১। কাল যদি তোমার মাথাও উড়িয়ে দেয়া হয় তবুও সৃষ্টির প্রতি আকৃষ্ট হবে না। 

১২। জিল্লতি বরদাশ্ত করার চেয়ে মৃত্যুই উত্তম। 

১৩। শরীরের জন্য মৃত্যু অনিবার্য হলেও আল্লাহ্ এর পথে শহীদ হওয়াই মানুষের জন্য  উত্তম। 

১৪। যে ব্যক্তি নিজের মতকে কিয়াসের পাল্লায় মেপে থাকে, সে সন্দেহ-সংশয়ে গ্রেফতার হয়। 

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment