হযরত ইমাম জায়নুল আবিদিন রাদিআল্লাহু আনহু’র জীবনী ও উপদেশাবলী

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

ইন্নাল তিয়া রিহ হাস-সাবা, 

ইয়াওমান ইলা আরদ ইল-হারাম

বাল্লিগ সালামি রৌদাতান,

ফিহ আন-নাবি উল-মুহতারাম ﷺ।

হে সমীরণ ! যদি কোনদিন প্রবাহিত হও সেই পবিত্রভূমে,

তবে আমার নিবেদিত শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করিও সেই রওজাতে,  

                                      যাতে বিশ্রামরত উপমাহীন প্রাণের রাসূল ﷺ ।               – অনুবাদ সংগৃহীত

হযরত ইমাম জায়নুল আবিদিন (রাদি আল্লাহু আনহু) এর পূর্ণ নাম আলী আসগর ইবনে হোসাঈন। তাঁর ডাক নাম ছিল আবুল হাসান। উপাধি ছিল ‘জায়নুল আবিদিন’ অর্থাৎ ধার্মিকগনের অলংকার এবং আল সাজ্জাদ।  তিনি ছিলেন ইমাম হোসাঈন (রাদি আল্লাহু আনহু) এঁর  চতুর্থ পুত্র  সন্তান। তাঁর জন্ম হয়েছিল ৩৮ হিযরী /৬৫৯ খৃঃ পবিত্র নগরী মদীনায়। তাঁর মাতা ঘাযালা শাহযানান ওরফে শহর বানু ছিলেন সর্বশেষ পারস্য রাজ ইয়াজদিজার্দের সর্ব কনিষ্ঠা কন্যা।  জন্মের সময়েই তিনি মাতৃহীন হন।  হযরত ইমাম হোসাঈন।(রাদি আল্লাহু আনহু) এঁর একজন নিঃসন্তান স্ত্রী তাঁকে পুত্রস্নেহে লালন পালনের দায়িত্ব গ্রহন করেন। 

কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনারাজির একজন চাক্ষুষ সাক্ষী ছিলেন পঁচিশ বছরের হযরত ইমাম জায়নুল আবিদিন (রাদি আল্লাহু আনহু)। আপন তিন বড় ভাই ও নিকটাত্মীয়দের নির্মম হত্যাকান্ড তিনি দেখেছিলেন খুবই কাছ থেকে। আজীবন এ দুঃসহ স্মৃতির বোঝা বয়ে বেড়াতে হয়েছে  তাঁকে। নিজে শারিরীকভাবে অসুস্থ থাকার কারণে তিনি এ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করতে পারেন নি। কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনাবলীর পর তিনি স্বপরিবারে পবিত্র নগরী মদিনায় ফিরে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। অতঃপর হযরত ইমাম হাসান (রাদি আল্লাহু আনহু) এঁর কন্যা বিবি ফতিমাকে বিবাহ করে তিনি সংসার জীবন শুরু করেন। প্রথম যুগের তাবেয়ীগনের মধ্যে তিনি ছিলেন নেতৃত্বস্থানীয়।

সম্পূর্ণ দ্বীনী পরিবেশে বেড়ে উঠেছিলেন ইমাম জায়নুল আবিদিন (রাদি আল্লাহু আনহু)। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন খুবই ধার্মিক ও পরহেযগার প্রকৃতির। তিনি খুবই সাদাসিধা ও ফকীরী জীবন যাপন করতেন।  কয়েকজন বিখ্যাত  ও প্রজ্ঞাবান সাহাবায়ে কিরামের সান্নিধ্যের সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন হযরত ইমাম জায়নুল আবিদিন (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) । তিনি হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাসের (রাদি আল্লাহু আনহু) কাছ থেকে কুরআন ও তাফসীর, হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদের (রাদি আল্লাহু আনহু) কাছ থেকে ফিকাহ শাস্ত্রের  জ্ঞান অর্জন করেন।  অতি অল্প বয়সেই তিনি পবিত্র কুরআনের হাফিজ হবার মর্যাদা লাভ করেছিলেন । তাঁর অগাধ পান্ডিত্য, দানশীলতা, হৃদয়ের কোমলতা ও ইবাদাত বন্দেগী ছিল প্রবাদতুল্য।  তিনি অতি সুগন্ধময় আতর ব্যবহার করে উত্তম পোষাকে নামাজে দাঁড়াতেন। সফর বা হজ্ব কোন অবস্থাতেই তিনি তাহাজ্জুদ নামাজ ছেড়ে দিতেন না। তিনি অধিক পরিমানে মুনাজাত, জিকির-আযকার এবং আল্লাহ্ পাকের ধ্যানে নিমগ্ন থাকতেন।  কাকুতি-মিনতি এবং একাগ্রতার সাথে সিজদারত অবস্থায় দীর্ঘ মুনাজাতে ব্যাকুল হয়ে তিনি আল্লাহ্-র দরবারে কান্নাকাটি করতেন। হযরত ইমাম জায়নুল আবিদিন (রাদি আল্লাহু আনহু) জীবনে বহুবার হজ্ব ও ওমরাহ পালন করেন।  এর মধ্যে অনেকবার তিনি পায়ে হেঁটে হজ্বের সফর সমাপ্ত করেছেন। তিনি উটে আরোহণ করে ২০ বার পবিত্র হজ্ব পালন করেন বলে জানা যায়। দান খয়রাতের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন খুবই দরাজ দিল। 

প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আবু নায়ীম, উতাবীর সূত্রে ‘হিলিয়া’ গ্রন্থে লিখেছেন, “হযরত ইমাম জায়নুল আবিদিন (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) অযু করে ফারেগ হলে অধিক প্রকম্পিত হতেন এবং তাঁর পবিত্র শরীর থেকে ঘাম ঝরতে থাকতো। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হলে তিনি উত্তরে বলতেন,“ আমি কার সাথে কথোপকথন করেছি, তা কী তোমরা অনুভব করতে পার না”।                        

ইবনে শিহাব যুহরী বলেন,“ কুরাঈশ বংশে আলী ইবনে হোসাঈনের মত এত উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন লোক সমকালীন যুগে আমার দৃষ্টি গোচর হয় নি”।                 

সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেব বলেন, “ইবাদাত, রিয়াজত, তাকওয়া, উদারতা, মধুর চরিত্র এবং শিষ্টাচারীতার কারনে তিনি ‘ইসলামের প্রশান্তি ও সৌন্দর্যের নিদর্শন’হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেন”।     

হযরত  ইমাম জায়নুল আবিদিন (রাদি আল্লাহু আনহু)কে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছিল। তিনি ৫৮ বছর বয়সে ৯৪ হিজরী সনের ২৫ মুহররম , কোন কোন বর্ণনায় ১৮ই মুহাররম ৭১৩ খৃষ্টাব্দে মদীনায় পরলোক গমন করেন। তাঁকে জান্নাতুল বাকীতে পিতৃব্য হজরত ইমাম হাসান (রাদি আল্লাহু আনহু) ও চাচাত ভাই হযরত ইবনে আব্বাস (রাদি আল্লাহু আনহু) এঁর পাশে দাফন করা হয়। তাঁর পুত্র মুহাম্মাদ আল বাকীর (রাদি আল্লাহু আনহু)) পিতার লাশ মোবারক কবরে নামান।     

হযরত ইমাম জায়নুল আবিদিন  (রাদি আল্লাহু আনহু) এঁর নসীহতসমুহ:

পাঁচ ব্যক্তির সোহবত হতে তোমরা আত্মরক্ষা করে চলবে। তাদের সাথে কথা বলবে না । এমনকি পথ চলতে গিয়েও তাদের সাথী হবেনা। তারা হলো ঃ

১। ফাসেক ব্যক্তিঃ কেননা সে তোমাকে এক লোকমার বিনিময়ে বরং তার চেয়েও কম দামে বিক্রি করে দেবে। এক লোকমার বিনিময়ে বিক্রি করার অর্থ কি ? এক লোকামার আশাায় তোমাাকে বিক্রি করে দিল কিন্তু পরে তাও তার ভাগ্যে জুটলো না। শুধুই মিছে আশার উপর তোমাকে বিক্রি করে দিল। 

২। কৃপণ ব্যক্তিঃ কৃপণ ব্যক্তির ধারে কাছেও যেয়ো না। কেননা সে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে এমন এক সময় যখন তোমার খুব প্রয়োজন ছিল।

৩। মিথ্যাবাদীঃ মিথ্যাবাদীর নিকটবর্তী হয়ো না। কারন, সে মিথ্যা ধোকা দিয়ে নিকটকে দুরে আর দুরকে নিকটবর্তী করে দেবে।

৪। বেওয়াকুফ ব্যক্তিঃ বেওয়াকুফ ব্যক্তির নিকট দিয়েও যাতায়াত করোনা। কারন সে তোমার উপকার করতে গিয়ে অপকার করে বসবে।    

৫। আত্মীতার সম্পর্ক ছেদকারীঃ আত্মীতার সম্পর্ক ছেদকারীদের ধারে কাছেও যেয়ো না। কারন পবিত্র কুরআন শরীফের তিন জায়গায় আমি তাদের উপর লানত আসতে দেখেছি। 

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment