আজ ১৭ ই রমজান। উম্মাহাতুল মুমিনীন হযরত আয়িশা সিদ্দিকা রাঃ এঁর ওফাত দিবস, যিনি ছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হাদিস বর্ণনাকারী (২২১০ টি)।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন ‘আয়িশা (রাঃ) এঁর মর্যাদা নারীদের উপর এমন যেমন সারীদের** মর্যাদা অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের উপর। (সহীহ বুখারী ৩৭৭০, ৫৪২৮) **গোশত এবং রুটি দ্বারা তৈরী খাদ্য বিশেষ এর মর্যাদা অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের উপর।
এক লোক আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ)-এঁর নিকটে বসে আম্মাজান আয়িশা (রাঃ) প্রসঙ্গে কিছু বিরুপ মন্তব্য করলে আম্মার (রাঃ) বলেনঃ দূর হও পাপিষ্ঠ এখান থেকে! তুমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর প্রিয়তমাকে কষ্ট দিচ্ছ। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) বলেন, তিনি (আম্মাজান আয়িশাহ রাঃ) নবী ﷺ-এঁর স্ত্রী দুনিয়াতে এবং আখিরাতেও। (সূনান আত তিরমিজী ৩৮৮৮, ৩৮৮৯)
আম্মাজান আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, হে আয়িশা! জিব্রীল (আঃ) তোমাকে সালাম দিচ্ছেন। তখন তিনি বললেন, ওয়া আলাইহিস্ সালাম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহু। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর উদ্দেশ্যে বললেনঃ আমরা যা দেখছি না, তা আপনি দেখছেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আপনি এমন কিছু দেখেন যা আমি দেখতে পাই না। (সুবহানাল্লাহ)
(সহীহ বুখারী ৩২১৭, ৩৭৬৮, ৬২০১, ৬২৪৯)
আম্মাজান আয়িশা রাঃ রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর রওজা জিয়ারতে যেতেন। বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং আবূ বকর রাঃ এঁর ওফাতের পর, উমর রাঃ এঁর ওফাতের আগে, আম্মাজান আয়িশা (রাঃ) সাধারণ কাপড় পরিধান করেই তাঁদের রওজা মোবারকে যেতেন। কারণ- আয়িশাহ (রা.) মনে মনে বলতেন, “তিনি ﷺ তো আমার স্বামী, আর অপরজনও আমার পিতা। (আয়িশা রা. বলেন) কিন্তু যখন ‘উমার (রাঃ) কে এখানে তাঁদের সাথে দাফন করা হলো, আল্লাহর কসম, তখন থেকে আমি যখনই ঐ ঘরে (রওজায়) প্রবেশ করেছি, ‘উমরের কারণে লজ্জায় শরীরে চাদর (অতিরিক্ত পর্দা সহকারে) পেঁচিয়ে রেখেছি। [মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৭১, মুসনাদে আহমাদ ২৫৬৬০, মুসতাদরাক লিল হাকিম ৪৪০২]
[এর ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহঃ লিখেন- ‘ইমাম তিব্বী রহঃ বলেন, (এ হাদিস থেকে বুঝা গেল) ওফাত হওয়ার পরে তেমনই তা‘যিম করতে হবে যেমনটি জীবিত অবস্থায় (জাহিরী হায়াতে) করা হতো।’’ (মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, হা/১৭৭১)]
একবার মদীনাবাসী ভীষণ অনাবৃষ্টির কবলে পড়েছিল। লোকজন আম্মাজান আয়িশা রাঃ এঁর নিকট অভিযোগ করলে তিনি বলেন, নবী ﷺ এঁর রওজার দিকে দেখ (যাও), আর তাতে আসমানের দিকে একটি ফুটো করে দাও, যেন আসমান ও তাঁর মাঝে কোনো আচ্ছাদন না থাকে। তখন তারা তা-ই করলো। ফলে মুষলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হল। সেই বৃষ্টিতে এত বেশি ঘাস জন্মেছিল যে, উট হৃষ্টপুষ্ট হয়ে মনে হয় যেন চর্বিতে ফেটে পড়বে। ফলে সেই বছরের নামকরণ করা হয়েছিল ‘উর্বরতার বছর’। (সুনান আদ-দারেমী ৯৩, মিশকাত ৫৯৫০)
আম্মাজান আয়িশা রাঃ এঁর কাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর ব্যবহৃত জুব্বা মুবারক সংরক্ষিত ছিল যা রোগ নিরাময়ের উসিলা হিসেবে ব্যবহৃত হত যেভাবে আমরা আল্লাহ’র হুকুমে ওষুধ সেবন করে সুস্থ হয়। বর্ণিত আছে যে,
হযরত আসমা বিনতে আবূ বকর (রাঃ) এঁর নিকট রাসুলুল্লাহ ﷺ এঁর ব্যবহৃত সবুজ রঙের জুব্বা ছিল। তিনি বলেন, এটি আয়িশা (রা.) এঁর ওফাত পর্যন্ত তাঁর কাছেই ছিল। তাঁর ওফাতের পর আমি এটি নিয়েছি। নবী ﷺ এটি পরিধান করতেন। তাই আমরা রোগীদের শেফা হাসিলের জন্য এটি ধৌত করি এবং সে পানি তাদের কে পান করিয়ে থাকি। (সহীহ মুসলিম ৫৩০২)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা যেন আমাদের অন্তরকে আহলে বাইত এবং সকল সাহাবীদের ভালবাসা দ্বারা পূর্ণ করে দেন এবং আম্মাজানের উসিলায় আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।