হজ্জের শর্তাবলী

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

হজ্জের শর্তাবলী

হজ্জের শর্তসমূহ চার ভাগে বিভক্ত

১. شرائط وجوب বা হজ্জ ওয়াজিব বা ফরয হওয়ার শর্তাবলী।

২. হজ্জ আদায় করা ওয়াজিব বা ফরয হওয়ার শর্তসমূহ।

৩. হজ্জ পালন বিশুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলী। 

৪. হজ্জ আদায়ের পর দায়িত্বমুক্ত হওয়ার শর্তাবলী।

১. হজ্জ ওয়াজিব বা ফরয হওয়ার শর্তসমূহ

যে সকল শর্তাবলী বিদ্যমান থাকলে মানুষের উপর হজ্জ সম্পাদন ফরয হয় এর একটি অনুপস্থিত হলেও হজ্জ ফরয হয় না। এ প্রকারের সাতটি শর্ত রয়েছে-

ক. মুসলমান হওয়া।

খ. হজ্জ ফরয হওয়া সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া

গ. বালেগ হওয়া।

ঘ. বিবেকসম্পন্ন হওয়া।

ঙ. স্বাধীন হওয়া।

চ. হজ্জ সম্পাদনের সামর্থ্য থাকা।

ছ. হজ্জের সময় হওয়া।

অতএব কাফির যত বড় ধনবানই হোক না কেন তার উপর হজ্জ ফরয নয়। এমনকি কোন ধনাঢ্য কাফির দারিদ্র হয়ে ‍যাওয়ার পর ঈমান আনলো, তার জন্যও হজ্জ ফরয হবে না। কেউ কাফির অবস্থায় নিজে হজ্জ করলো কিংবা অন্য কোন মুসলমান দ্বারা হজ্ব করালো, পরে মুসলমান হলো তার পূর্বের হজ্জ দ্বারা ফরয আদায় হবে না।

২. হজ্জ আদায় করা ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলীঃ-

অর্থাৎ এমন কিছু শর্তাবলী যেগুলোর উপর হজ্জ ওয়াজিব বা ফরয হওয়া নির্ভরশীল নয় তবে এগুলো বিদ্যমান থাকলে হজ্জ সম্পাদন করা ওয়াজিব বা ফরয হয়ে যায়। যদি ১নং ও ২নং শর্ত দু’টি কারো মধ্যে একত্রে পাওয়া যায়, তখন নিজে হজ্জ সম্পাদন করতে হয়। আর কেবল ১নং শর্তগুলো কারো মধ্যে বিদ্যমান থাকলেও যদি ২নং শর্তাবলী একটিও অনুপস্থিত হয় তখন নিজে হজ্জ সম্পাদন করতে হয় না এবং তাৎক্ষণিকভাবে অথবা পরবর্তী সময়ে অন্য কারো দ্বারা হজ্জ করার ব্যবস্থা করবে। এ প্রকারের পাঁচটি শর্ত রয়েছে-

১. সুস্থ বা রোগ মুক্ত হওয়া।

২. বন্দী বা সরকার আইনে বাধাগ্রস্থ না হওয়া।

৩. রাস্তা নিরাপদ হওয়া।

৪. মহিলা হলে তার সাথে মুহরিম থাকা।

৫. স্ত্রী লোকের হায়েয-নিফাস ইত্যাদি ইদ্দত থেকে মুক্ত থাকা। (অবশ্য হায়য সম্পন্না নারী হায়য চলাকালে মসজিদে হারামে প্রবেশ করা ব্যতীত অন্যান্য বিধান পালন করতে পারবে। তারপর সুস্থ হলে তাওয়াফ ইত্যাদি করে নেবে।)

প্রথমোক্ত তিনটি শর্ত নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য আর শেষোক্ত দুটি শর্ত কেবল মহিলাদের জন্য। কেউ সুস্থাবস্থায় হজ্জ ফরয হওয়ার সত্ত্বেও হজ্জ আদায় করেনি পরে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে তার ওযর গ্রহণযোগ্য হবে না। সে অন্য দ্বারা হজ্জ করাবে অথবা হজ্জের অসীয়ত করে যাবে, হজ্জের উপর সামর্থবান এক ব্যক্তি কারো পাওনা আদায়ের ব্যাপারে গ্রেফতার হয়ে পড়লো এবং তার কাছে এই পাওনা পরিশোধের ক্ষমতাও আছে, তবে ওই বন্দি অবস্থায় অপরাগতা বলে গণ্য হবে না। তাকে হজ্জে বদলের আদেশ অথবা অসীয়ত করে যেতে হবে।

৩. হজ্জ আদায় বিশুদ্ধ হবার শর্তাবলীঃ-

অর্থাৎ এমন কিছু শর্ত যেগুলো ব্যতীত হজ্জ পালন শুদ্ধ হবে না-

১. মুসলমান হওয়া।

২. ইহরাম পরিধান করা। ইহরাম ব্যতীত কেউ হজ্জে সমাধা করলেও তা শুদ্ধ হবে না।

৩. হজ্জের নির্ধারিত সময়ে হজ্জ সম্পাদন করা।

৪. প্রত্যেকটা কাজ সংশ্লিষ্ট স্থানে যথা নিয়মে আদায় করা।

৫. বিবেকবান ও চেতনা সম্পন্ন হওয়া।

৬. হজ্জের কার্যাবলী নিজেই আদায় করা।

৭. বালেগ হওয়া।

৮. ইহরাম অবস্থায় স্ত্রী সহবাসসহ যাবতীয় নিষিদ্ধ কার্য থেকে বিরত থাকা।

৯. যে বৎসর ইহরাম পরিধান করেছে সে বৎসরই হজ্জ পালন করা।

৪. হজ্জ আদায়ের পর দায়িত্বমুক্ত হওয়ার শর্তাবলীঃ-

শরা-ইত্বে রুকন- ফরয বা ওই সমস্ত শর্তাবলী যেগুলো পূরণ হলে হজ্জ আদায় করে দায়িত্বমুক্ত হওয়া যায়। এমন শর্তাবলী নিম্নরূপ-

১. হজ্বের সময় মুসলমান হওয়া।

২. মুসলমান হিসাবে জীবনের শেষমূহুর্ত পর্যন্ত অবিচল থাকা। আল্লাহ না করুন, কোন মুসলমান যদি হজ্জ আদায় করার পর কাফির হয়ে যায়ও তার হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে। পরবর্তীতে সে পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করলে এবং সামর্থ্যবান হলে পুনরায় তার উপর হজ্জ ফরয হবে।

৩. স্বাধীন হওয়া।

৪. বালেগ হওয়া। নাবালেগ অবস্থায় হজ্জ করলে তা নফল হিসেবে গন্য হবে। বালেগ হওয়ার পর সামর্থ্যবান হলে তাকে অবশ্যই পুনরায় হজ্জ পালন করতে হবে।

৫. বিবেকবান হওয়া।

৬. শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান ব্যক্তি নিজেই হজ্বের কার্যাদি সম্পাদন করা

৭. স্ত্রী সহবাস বা নিষিদ্ধ কার্য দ্বারা হজ্বকে নষ্ট না করা

৮. অন্য কারো পক্ষ থেকে হজ্জের নিয়্যত না করা।

৯. নফলের নিয়্যত না করা।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment