হক্ব বাতিলের পরিচয় ও ঈমান রক্ষা

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

হক্ব বাতিলের পরিচয় ও ঈমান রক্ষা

গ্রন্থনা ও সংকলনে:

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অবঃ)

সম্পাদনায়

মুফ্তি মাওলানা আলাউদ্দিন জিহাদী

প্রকাশনায়

আবতাহী ফাউন্ডেশন প্রকাশনা বিভাগ

টেক্সট রেডীঃ ডা. মাসুম বিল্লাহ সানি

গ্রন্থ সত্ব : উন্মুক্ত

[যে কেউ যে কোন নামে প্রকাশ করতে পারবেন। লেখক ও প্রকাশকের পক্ষ থেকে কোন আইনি বাঁধা থাকবে না।]

প্রকাশকাল

১ম সংস্করণ ঃ ১০ জুন ২০১৬

২য় সংস্করণ ঃ ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

৩য় সংস্করণ ঃ ০৯ জানুয়ারি ২০১৬

প্রকাশনায়

আবতাহী ফাউন্ডেশন প্রকাশনা বিভাগ

কম্পিউটার কম্পোজ

সৈয়দ আমিরুল হক

কম্পিউটার ডিজাইন

মুহাম্মদ মাহাদী হাসান তুহিন

মোবাইল: ০১৮ ২৫৩৩ ৯৪৯৪

মূদ্রণ

জয়নাব প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজেস্

২০৩/২, ফকিরাপুল, মতিঝিল, ঢাকা

মোবাইল: ০১৭১১১৭৬৭২৩

শুভেচ্ছা মূল্যঃ ৪০ টাকা মাত্র।

-ঃ উৎসর্গঃ-

অলীয়ে কামেল, হাদীয়ে আগা, কুতুবুজ্জামান, আশেকে রাসূল (ﷺ), ঢাকার নিকুঞ্জস্থ (টানপাড়া) মকিমীয়া মোজাদ্দেদীয়া দরবার শরীফের পীর সাহেব কেবলা ও আমার মহান মুরশিদ শাহ সূফী হযরত মাওলানা শেখ আবদুস সালাম ফরিদপুরী নকশ্বন্দী মোজাদ্দেদী (মাঃ জিঃ আঃ) এর পবিত্র করকমলে

সূচিপত্র

১. উপক্রমনিকা  

২. হক্ব – বাতিলের পরিচয় ও ঈমান রক্ষা  

৩. এ’সকল খারেজী সম্প্রদায়ের আক্বীদা ও লক্ষণ সম্বন্ধে পূর্বাভাষ  

৪. শিয়া আক্বিদা

৫. কাদিয়ানী মতবাদ  

৬. আহলে হাদিস ও ইবনে তাইমিয়ার আক্বীদা 

৭. আব্দুল ওহাব নজদীর (ওহাবী) আক্বীদা

৮. দেওবন্দী মুরুব্বিদের আক্বীদা

৯. বিস্তারিত দেওবন্দী আক্বীদা

১০. কওমী/হেফাজতে ইসলামের আক্বীদা  

১১. তাবলীগ জামাতের মূখ্য উদ্দেশ্য ও মৌঃ আশরাফ আলী থানভীর আক্বীদা  

১২. এক নজরে তাবলীগী মতবাদ/আক্বীদা

১৩. হুজুর (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরামের তাবলীগের সাথে প্রচলিত তাবলীগের পার্থ্যকের কিছু নমুনা

১৪. জামাতী/মওদুদী আক্বীদা

১৫. ওহাবী চিনার সহজ উপায়  

১৬. আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদা  

১৭. মুক্তির পথ বেছে নিন  

১৮. তথ্য প্রাপ্ত গ্রন্থসমূহ  

উপক্রমনিকা

আমার উম্মত গোমরাহীর উপর একমত হবে না। -[আল-হাদিস]

সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জগতের স্রষ্টা ও প্রতিপালক মহান আল্লাহ্ তা’য়ালার দরবারে, অসংখ্য দরূদ ও সালাম উম্মতের কান্ডারী ও দরদী নবী আল্লাহর হাবীব হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা আহমদ মুজতবা (ﷺ) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইয়েতগনের উপর। অত:পর তাঁদের উপরও সালাম যুগে যুগে যাঁদের আত্মদান ও আত্মনিয়োগের কারনে তামাম বিশ্বে আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছে।

প্রিয় পাঠক আজকাল আমরা একটা কথা অহরহ শুনতে পাই, তাহলো- ‘আল্লাহ্ এক, কোরআন এক, নবী এক; তবে আমাদের মধ্যে এত বিভক্তি কেন?’ কথাটা শুনতে ভাল লাগে এবং মনে দাগ কাটে। তবে এ’কথার মধ্যে ও অনেক ক্ষেত্রে ভেজাল থাকে। সাধারনত দুই শ্রেনীর লোক এ’ কথাটা বলে ও পছন্দ করে। প্রথমত: সাধারন মুসলমান যারা হয়ত ধর্মের বিস্তারিত জ্ঞান রাখে না, অথচ আমাদের এই দ্বিধা-বিভক্তি দেখে দুঃখ পায় এবং বিরক্ত হয়। আর দ্বিতীয়ত: তারা স্বয়ং যারা আমাদের ধর্মকে দ্বিধা-বিভক্ত করেছে। তাদের উদ্দেশ্য বিভক্তির প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করে নিজেদের পাল্লা ভারী করা। আবার অনেক ক্ষেত্রে যখন কিছু বরকতময় আমল, যথা- মিলাদ/কিয়াম, ঈদে মিল্লাদুন্নবী (ﷺ), শ’বে বরাত, শ’বে মেরাজ ইত্যাদি পালনের (ইবাদতের) কথা বলা হয়, তখন প্রতি উত্তরে কিছু লোককে বলতে শোনা যায়, ‘ফরজ- ওয়াজিবের খবর নাই, নফল নিয়ে যতসব বাড়াবাড়ি’। এহেন মন্তব্য ও খুব যুক্তিযুক্ত মনে হয়। কিন্তু এমন মন্তব্যও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এর মাধ্যমে কিছু লোক তাদের বদ-আক্বীদাকে গোপন করে। আর পক্ষান্তরে যারা মিলাদ-কিয়াম করে এবং বর্নিত বরকতময় রজনীতে ইবাদতে মশগুল হয়, তারা সাধারনত ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত আমল সমূহ ও নিষ্ঠার সাথে আদায় করে থাকে।

আমাদের ধর্মের মধ্যে কিছু বিভক্তি ও ভিন্নতা আছে যা কল্যাণকর। যেমন:- চার মাযহাব, চার তরিকা ইত্যাদি। আবার কিছু বিভক্তি আছে যা গোমরাহী ও বরবাদী। যেমন:- শিয়া, খারেজী, রাফেজী, কাদিয়ানী, লা-মাযহাবী, ওহাবী ইত্যাদি। অনাকাঙ্খিত হলেও আমাদের অবশ্যই মানতে হবে যে, ধর্মের এই বিভক্তি অমোঘ ও অনিবার্য। কারন আমাদের পেয়ারা নবী (ﷺ) নিজেই বলে গেছেন-এই উম্মত ৭৩ ভাগে বিভক্ত হবে, যার একটি হবে জান্নাতী আর বাকীরা জাহান্নামী। আর আল্লাহ্ তা’য়ালা ফরমান-তিনি আমাদের হাশরের মাঠে আমাদের নেতাদের (ইমামদের) সাথে ডাকবেন। তাতে বুঝা যায় বিভিন্ন দল ও থাকবে এবং তাদের নেতা ও থাকবে। কাজেই বিভক্তি মানতেই হবে। তা’হলে বাঁচার উপায়? তাই বাঁচতে হলে জানতে হবে, আমি কোন দলের অন্তভর্‚ক্ত এবং ঐ দলের নেতা কে বা কারা, আর তাদের আক্বীদাই বা কি। এমন চিন্তা মাথায় রেখে এবং ঢাকার নিকঞ্জস্থ (টানপাড়া) মকিমীয়া মোজাদ্দেদীয়া দরবার শরীফের পীর সাহেব ক্বেবলা ও আমার মহান মুর্শিদ হযরত শেখ আবদুস সালাম (মাঃ জিঃ আঃ) এর ইলমি সোহবত, দোয়া ও উৎসাহে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি বিভিন্ন দলের এবং তাদের নেতাদের আক্বীদা সমূহ বিভিন্ন সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্য হতে সংকলন করে এই ক্ষুদ্র পুস্তিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি। যাতে আমরা সঠিক দল ও সঠিক নেতা (ইমাম) নির্বাচন করতে পারি। এর উদ্দেশ্য মোটেও কাউকে খাট করা বা কষ্ট দেওয়া নয়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আজও যদি মুসলিম উম্মাহ সঠিক ও অভিন্ন আক্বীদায় বিশ্বাসী হয়ে এবং দয়াল নবী (ﷺ) মহব্বত বুকে ধারন করে এক কাতারে দাঁড়ায়, তা’হলে ইসলামের শত্রুদের পালানো ছাড়া অন্য কোন পথ থাকবে না। আল্লাহ্ আমাদের সঠিক দিশা দিন। আমিন।

বিনীত

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অবঃ)

খাদেম, দরবারে মকিমীয়া মোজাদ্দেদীয়া

টানপাড়া, নিকুঞ্জ-২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯।

হক্ব – বাতিলের পরিচয় ও ঈমান রক্ষা

আজ মুসলিম উম্মাহর মধ্যে আক্বীদাগত বিভক্তি তুঙ্গে। আলেম-ওলামাগণও বিভিন্ন আক্বীদায় বিভক্ত এবং নিজ নিজ আক্বীদার প্রচার-প্রসারে তৎপর। এমতাবস্থায় সাধারন মানুষ সঠিক-বেঠিক, সত্য-মিথ্যার আলোচনা- সমালোচনায় বিভ্রান্ত ও দিশেহারা। দ্বীনের সঠিক পথ বেছে নেওয়া সাধারন মুসলমানদের জন্য এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দীর্ঘ সাড়ে চৌদ্দশত বৎসর যাবৎ মুসলিম উম্মাহ কোরআন, হাদীস, ইজমা, কেয়াসের ভিত্তিতে যে সকল আমল আক্বীদাকে হক্ব, জায়েয এবং সওয়াব-বরকতের কাজ হিসাবে গন্য করে আসছে, সেগুলির অনেক আমল-আক্বীদাকেই আজ কিছু আলেম-ওলামা বেদআত, হারাম, শিরক্, কুফর বলে ফতোয়া জারী করে তাদের নিজ ভ্রান্ত মতের পক্ষে জোর প্রচারনা চালাচ্ছে। শরিয়তের বিধি-বিধান অনুসারে প্রতিষ্ঠিত আমল যদি বেদআত হয়ে যায়, তবে এর বিপরীতে নব্য এই ফেৎনাবাজ ও ফতোয়াবাজদের আমল-আক্বীদা কেমন করে হক্ব হয়?

আমাদের ধর্মের মূল হলো ঈমান, আর ঈমানের মূল হলো আক্বীদা। আক্বীদা দুরস্ত না হলে ঈমান থাকবে না, আর ঈমানহীন লোক নাজাত পাবে না। যেমন একজন অমুসলিম লক্ষ কোটি টাকাও জনকল্যানে ব্যয় করলে তার জন্য পরকালীন কোন কল্যান নাই, তেমন একজন আক্বীদাভ্রষ্ট লোকের বেশুমার এবাদতও তার জন্য পরকালীন কোন উপকারে আসবে না।

বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে যে আক্বীদাগত বিভক্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে তার অধিকাংশই হুজুর পুরনূর (ﷺ)-এর শান-মান এবং আল্লাহ্ প্রদত্ত তাঁর বৈশিষ্ট সংক্রান্ত। ইবলিসও আল্লাহ্তে বিশ্বাসী এবং আল্লাহ্কে ভয় পায়। কিন্তুু তার অধপতনের কারন হলো আদম (عليه السلام) কে হিংসা ও অসম্মান করা। তেমনিভাবে বর্তমান যুগে ইসলামের মধ্যে যেসব “শয়তানের শিং” গজিয়েছে, তারাও কিন্তু আল্লাহ্কে মানে। তবে প্রিয় নবী (ﷺ)-এর বিষয় আসলেই তাদের যত জ্বালা-যন্ত্রনা। হুজুর (ﷺ)-কে মুখে স্বীকার করলেও তাঁর শান-মানকে খর্ব করার প্রচেষ্টায় তারা বিভোর। তারা হুজুর (ﷺ)-কে আমাদের মত মানুষ জ্ঞান করে এবং তাঁকে (ﷺ) সাধারন মানুষের কাতারে দাঁড় করানোর জন্য সদা সচেষ্ট।

তাই মুসলমানগনের জীবনের সব চাইতে মূল্যবান সম্পদ ‘‘ঈমান’’ বাঁচানোর জন্য এই সব পথভ্রষ্ট লোক ও তাদের দলসমূহের ভ্রান্ত আক্বীদা সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারনা থাকা অত্যন্ত জরুরী। আর এই সব ভ্রান্ত আক্বীদার অনুসারীরাই হলো খারেজী সম্প্রদায় যাদের সাথে বর্তমান যুগের ওহাবী, তাবলীগী, জামাতী, দেওবন্দী / কওমী / হেফাজতী, সালাফী / আহলে-হাদীস / লা-মাযহাবী ইত্যাদি বাতিল ফিরকার সাথে আক্বীদাগতভাবে অনেক বিষয়ে পারস্পরিক মিল ও ঐক্য রয়েছে।

এ’সকল খারেজী সম্প্রদায়ের আক্বীদা ও লক্ষণ সম্বন্ধে পূর্বাভাষ

অসংখ্য দলিলাদির ভিত্তিতে খারেজীদের অন্যতম লক্ষণ ও সুষ্পষ্ট নিদর্শন সমূহ নিম্নে বর্নিত হলো:

১।এরা হবে স্বল্পবয়স্ক ছেলেপিলে। (বুখারী ও মুসলিম)

২।বিবেক বুদ্ধি ও মস্তিস্কের দিক থেকে এরা হবে নেহায়েতই অপরিপক্ক (Immature)। (বুখারী ও মুসলিম)

৩।(এদের বাহ্যিক দ্বীনি আমলগুলি অতিরঞ্জিত হবে) এরা দাঁড়ি ঘন করে রাখবে। (বুখারী ও মুসলিম)

৪।এরা লুঙ্গি পরবে অনেক উপরে। (বুখারী ও মুসলিম)

৫।এসব খারেজী (হেরেমদ্বয়ের) পূর্ব দিক থেকে বের হবে। (বুখারী)

৬।এরা সর্বদা বের হতেই থাকবে। এমনকি এদের সর্বশেষ দল দাজ্জালের সাথেই বের হবে। (নাসাঈ শরীফ)

৭।ঈমান এদের গলদেশের নিচে পৌছবে না। (বুখারী ও মুসলিম) (অর্থাৎ এদের ঈমান হবে লোক দেখানো। কিন্তু প্রকৃত ঈমানী বৈশিষ্ট তাদের মনোভাব ও কর্মকান্ডতে প্রতিফলিত হবে না।)

৮।এরা এবাদত-বন্দেগীতে ও দ্বীন পালনে অতিশয় চরমপন্থী ও সীমাতিরিক্ত হয়ে থাকবে। (আব্দুর রায্যাক: আল মুসান্নাফ)

৯।“তোমাদের যে কেউ তাদের নামাজের সামনে নিজেদের নামাজকে তুচ্ছ মনে করবে। আর তাদের রোজার সামনে নিজেদের রোযাগুলোকে হীন জ্ঞান করবে।” (বুখারী ও মুসলিম)

১০।তাদের নামাজ তাদের গলদেশের নিচে পৌছবে না। (মুসলিম)

১১।এরা কুরআন মজীদ এমনভাবে তেলাওয়াত করবে যে, তাদের তেলাওয়াতের সামনে তোমাদের তেয়াওয়াত কিছুই নয় মনে হবে। (মুসলিম)

১২।তাদের কুরআন তেলাওয়াত তাদের গলদেশের নিচে পৌছবে না। (বুখারী ও মুসলিম) অর্থাৎ তাদের অন্তরে কুরআনের কোন সৌন্দর্য ও প্রভাব পড়বে না।

১৩।তারা এই বুঝে কুরআন পড়বে যে, সম্পূর্ন কুরআন তাদেরই পক্ষে; অথচ বাস্তবে কুরআন তাদের বিপরীতে হুজ্জত হয়ে থাকবে। (মুসলিম)

১৪।তারা (বল পূর্বক) লোকজনকে আল্লাহর কিতাবের প্রতি আহবান করবে; অথচ কুরআনের সাথে তাদের বাস্তবিক কোন সম্পর্কই থাকবে না। (আবু দাউদ)

১৫।তারা (বাহ্যত) খুবই ভাল ভাল কথাবার্তা বলবে। (বুখারী ও মুসলিম) অর্থাৎ ইসলামী শ্লোগান দিবে ও ইসলামে প্রচার-প্রসারের দাবী করবে।

১৬।তাদের শ্লোগানগুলো এবং বাহ্যিক কথাবার্তা অপরাপর লোকজন থেকে উত্তম হবে এবং তা মানুষের মনে দাগ কাটবে। (তাবরানী)

১৭।কিন্তু এরা হবে অসৎকর্মপরায়ন, বড়ই জুলুমবাজ, রক্ত পিপাসু ও অসাধু প্রকৃতির লোক। (আবু দাউদ)

১৮।এরা সুন্দর ও ভাল কথা বলবে এবং খারাপ কাজ করবে। (তাবরানী)

১৯।তারা হবে সমগ্র সৃষ্টিজগতের মাঝে সর্ব নিকৃষ্ট লোক। (মুসলিম)

২০।তারা বিদ্যমান সরকার ও প্রশাসকদের বিরূদ্ধে অতিশয় গালমন্দ করবে। আর তাদের (সরকারের) বিরূদ্ধে দিবে গোমরাহীর ফতোয়া। (ইবনে আবী আসেমঃ আস সুন্নাহ)

২১।তারা তখনই জনসমক্ষে প্রতিভাত হবে, যখন লোকজনের মাঝে বিভেদ ও বৈষম্য সৃষ্টি হয়ে যাবে। (বুখারী ও মুসলিম)

২২।তারা কতল করবে মুসলমানদেরকে; আর রেহাই দেবে মুর্তি পূজারীদেরকে। (বুখারী ও মুসলিম)

২৩।তারা অন্যায়ভাবে রক্তপাত ঘটাবে। (মুসলিম) অর্থাৎ এরা নিরপরাধ মুসলিম ও অমুসলিমকে নির্বিচারে হত্যা করা বৈধ মনে করবে।

২৪।তারা হবে ডাকাত ও ছিনতাইকারী। অন্যায়ভাবে রক্তপাত করবে এবং সংখ্যালঘু অমুসলিমদের হত্যা করা বৈধ জ্ঞান করবে। [হাকেম: আল মুসতাদরাক; রাবী-হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه)]

২৫।তারা ঈমান আনবে কুরআনের মুহকাম (স্পষ্টভাবে নির্দেশিত) আয়াত সমূহে এবং ধ্বংস হয়ে যাবে মুতাশাবিহ (অস্পষ্ট) আয়াত সমূহের কারনে। (তাবারী) (ইহা হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর বানী)

২৬।তারা মুখে সত্যের বানী উচ্চারন করবে। কিন্তু তা তাদের গলদেশের নিচে পৌছবে না। (মুসলিম)(হযরত আলী (رضي الله عنه) এর বানী)

২৭।কাফেরদের উদ্দেশ্যে নাযিল হওয়া আয়াতগুলোকে তারা মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেবে। (বুখারী)

অনুরূপভাবে তারা অপরাপর মুসলমানদেরকে গোমরাহ, কাফের, মুশরিক ঘোষনা দেবে। যাতে করে তারা এদেরকে অবৈধভাবে হত্যা করতে পারে। (হযরত ইবনে ওমর (رضي الله عنه) এর বানী)

২৮।তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বহিস্কৃত হবে, যেমন ধনুকের তীর শিকার থেকে বের হয়ে যায়। (বুখারী ও মুসলিম)

২৯।তাদের যারা হত্যা করবে তাদের মিলবে মহান প্রতিদান। (মুসলিম)

৩০।সে ব্যক্তি সর্বোত্তম মৃত (শহীদ) হবে, যাকে তারা কতল করে। (তিরমিযী)

৩১।তারা হবে আসমানের নিচে যে-কোন মৃতের মাঝে সর্ব নিকৃষ্ট। (তিরমিযী) অর্থাৎ সেই সব খারেজী সন্ত্রাসী যারা মুসলিম বাহিনীর হাতে নিহত হবে তারা হবে সর্ব নিকৃষ্ট মৃত।

৩২।এ সব (সন্ত্রাসী-খারেজী) লোক হবে জাহান্নামের কুকুর। (তিরমিযী)

৩৩।কবীরা গুনাহে অপরাধী ব্যক্তিদেরকে এরা চিরস্থায়ী জাহান্নামী মনে করবে। আর তাদের জান-মাল বৈধ ঘোষনা করবে।

৩৪।জালিম ও ফাসিক সরকারের বিরূদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ ও অসহযোগিতা ফরজ বলে ঘোষনা করবে। (ইবনে তাইমিয়া: মাজমূয়ে ফতোয়া, ১৩/৩১)

৩৫।খারেজী সন্ত্রাসীরা কোন বিশেষ অঞ্চলকে অবরোধ করে নিজেদের সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ডের কেন্দ্র বানিয়ে নিবে। যেমন তারা হযরত আলী (رضي الله عنه) এর খেলাফতকালে হারূরিয়াকে তাদের কেন্দ্র বানিয়ে নিয়েছিল।

৩৬।এরা সত্য পন্থীদের সাথে সাধারনত কোনরূপ গঠনমূলক আলোচনায় বসতে রাজি হবে না।

উপরোক্ত হাদীস সমূহের আলোকে খারেজীদের বিষয়ে যে সব আলামত বর্নিত হয়েছে এতে করে বুঝা যায়, যে সব সশস্ত্র গোষ্ঠী বা দল সমূহ হক্কানী মুসলিম উম্মাহকে গোমরাহ, বেদআতী, মুশরিক ও কাফের ইত্যাদি বলে থাকে, মুসলিম কি অমুসলিম সকল মানুষের জান-মালকে বৈধ মনে করে, সত্য বানীকে অস্বীকার করে, শান্তিপূর্ন ও নিরাপদ পরিস্থিতিকে ঘোলাটে ও আশঙ্কাময় করে তোলে তারাই হলো খারেজী।

শিয়া আক্বিদা

খোলাফায়ে রাশেদীনের তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান যিন নূরাঈন (رضي الله عنه) এর খিলাফতকালীন রাজনৈতিক গোলযোগের সময় ইহুদি সম্প্রদায় থেকে আসা কৃত্রিমভাবে ইসলাম গ্রহনকারী কুখ্যাত মুনাফিক আবদুল্লাহ্ ইবনে সাবা শিয়া ফিরকার মূল প্রবক্তা। সে রাসূল (ﷺ)-এর আহ্লে বায়তের প্রতি অতি ভালবাসা প্রদর্শনপূর্বক ইসলাম বিরোধী কিছু মারাত্বক বদ আক্বিদার প্রচার-প্রসার করে মুসলমানদের মধ্যে একটি ভ্রান্ত দলের জন্ম দেয় – সেই দলটির নাম হলো “শিয়া”। এদের মধ্যে অনেক দল-উপদল রয়েছে। অর্থাৎ তারা নিজেরাই বহু র্ফিকায় বিভক্ত। তাদের কিছু ভ্রান্ত আক্বিদা নিম্নে প্রদত্ত হলোঃ

১। আল্লাহ্ তা’আলাকে দেল বিশিষ্ট মনে করা। (নাউযুবিল্লাহ্)

২। তাদের কালেমা – “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্ ওয়া আলীউন খলিফাতুল্লাহ্”।

৩। শিয়াদের ইমামের মর্যাদা নবীগণও ফেরেস্তা থেকেও উত্তম।

৪। প্রিয় নবী (ﷺ)-এর ওফাতের পর সকল সাহবায়ে কেরাম ইমাম হযরত আলী (رضي الله عنه) হাতে বায়াত না করার কারনে কাফির ও মুরতাদ হয়ে গেছেন।

৫। খোলাফায়ে রাশেদীনের শানে তারা চরম বেয়াদবীপূর্ন মন্তব্য করে। যেমন- হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)-কে হুজুর (ﷺ) কখনো দ্বীনি কার্যক্রমের অভিবাবক নিযুক্ত করেননি, হযরত ওমর (رضي الله عنه) অজ্ঞ ছিলেন, হযরত ওসমান (رضي الله عنه) এর উপর সকল সাহাবা অসন্তুুষ্ট ছিলেন, হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) রাসূলে খোদা (ﷺ)-এর বিরোধীতা করেছেন ইত্যাদি।

৬। তাদের মতে পবিত্র কুরআনে সূরাতুল বেলায়েত নামে একটি সূরা ছিল যা কুরআন থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।

৭। তাদের বিশ্বাস হচ্ছে যিনি ইমাম তিনি আল্লাহর প্রতিচ্ছবি।

৮। তাদের মতে মুতা বিবাহ জায়েয এবং সওয়াবের কাজ।

৯। শিয়াদের দৃষ্টিতে তাকীয়া (তাকীয়া মানে আসল উদ্দেশ্য গোপন করে মুখে ভিন্ন ধরনের মত প্রকাশ করা বা কথায় ও কাজে অমিল সৃষ্টি করা) ও কিতমান (কিতমান মানে আসল মাযহাব ও আক্বিদা অন্তরে পোষন করা এবং অন্যের কাছে অসৎ উদ্দেশ্যে ইহা প্রকাশ না করা) জায়েয।

১০। তাদের মতে নফল নামাজ ও তেলাওয়াতে সিজদায় কেবলামুখী হওয়া জরুরী নয়।

১১। নাপাক অবস্থায় নামাজ জায়েয।

১২। আশুরার রোজা ভোর হতে আসর পর্যন্ত মোস্তাহাব।

১৩। ব্যবসায়ীদের জন্য কসরের নামাজ নেই।

১৪। শিয়াদের একটি বড় জামায়াত বিশেষ করে ইসমাইলিয়ারা বিশ্বাস করে যে, তাদের ইমাম আখেরী নবী। (নাউযুবিল্লাহ্)

কাদিয়ানী মতবাদঃ

কাদিয়ানী মতবাদের প্রবক্তা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ১৮৬৫ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারী ভারতের পূর্ব পাঞ্জাবের কাদিয়ান গ্রামে জন্মগ্রহন করে। এই মির্যা সাহেব ২৩ মার্চ ১৮৮৯ সালে “আহমাদিয়া মুসলিম জামায়াত” নামক ইসলামের নতুন এক ভ্রান্ত মতবাদের জন্ম দেয়। তার অনুসারীদের সংক্ষেপে কাদিয়ানী বলা হয়। এদের মূল পৃষ্ঠপোষক হলো ইহুদি-নাসারারা।

কাদিয়ানীদের মতবাদগুলো-

১। কাদিয়ানী সাহেব বলে – “আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি স্বয়ং খোদা, আমি বিশ্বাস করে ফেলি যে, আমি তাই।” (নাউযুবিল্লাহ্)

২। “আমার প্রভু আমার হাতে বায়াত গ্রহন করেছেন।” (নাউযুবিল্লাহ্)

৩। “তুমি আমার কাছে আমার (খোদার) সন্তানতুল্য”, আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে এ বলে সম্বোধন করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ্)

৪। আমি এক শরীয়তধারী নবী। আমার শরীয়তে আদেশও রয়েছে, নিষেধও রয়েছে। (নাউযুবিল্লাহ্)

৫। “সর্বশেষ নবীর প্রকাশের মাধ্যমে আমিই সেই প্রতিশ্রুত জ্যোতি।” (নাউযুবিল্লাহ্)

৬। পবিত্র নবীর ৩০০০ মুজিযা ছিল। অথচ আমার মুজিযা দশ লক্ষ।

৭। মির্যা সাহেব গোসল ফরজ হওয়া সত্তে¡ও গোসল না করে ইমামতি করতে আসত। (তথ্য সূত্র: বাহারে শরীয়ত-১ম খন্ড)

উপরোক্ত জঘন্য আক্বিদার জন্য ওলামায়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে এক বাক্যে কাফের ফতোয়া দিয়েছেন এবং কোন কোন মুসলিম রাষ্ট্রও তাদের কাফের ঘোষনা করেছে। এমতাবস্থায় কাদিয়ানীদের বিষয়ে আর বিশেষ কোন বর্ণনার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।

আহলে হাদিস ও ইবনে তাইমিয়ার আক্বীদা

হিজরী সপ্তম শতকের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (পুরা নাম-তকিউদ্দিন আহমদ ইবনে হালিম তাইমিয়া-৬৬১ হিঃ-৭২৮ হিঃ) জ্ঞানের ভারে বিভ্রান্ত হয়ে আক্বীদাগত বিষয়ে বেশ কিছু নতুন ও ভ্রান্ত ধ্যান-ধারনার জন্ম দেয় যা কালক্রমে মারাত্বক কিছু ফেৎনার সূচনা করে। ইবনে তাইমিয়াই হলো সৌদীআরবসহ তামাম বিশ্বের নব্য ফেৎনা-ওহাবী আক্বীদার একজন শীর্ষ স্থানীয় গুরু এবং সালাফী ও আহলে হাদিস বা লা-মাযহাবী আক্বিদার প্রতিষ্ঠাতা। ভ্রান্ত আক্বীদা প্রচারের জন্য তৎকালীন খলিফা তাকে দূর্গে রাখেন এবং ঐখানেই তার মৃত্যু হয়। “সালাফ আস্ সালেহীনের” সাথে ইবনে তাইমিয়া যেসব বিষয়ে মতভেদ সৃষ্টি করেছিল, সেগুলো আল্লামা তাজউদ্দীন সুবকী (رحمة الله) তালিকাভুক্ত করেছেন। তালিকা নিম্নরূপঃ-

১। সে বলেছে, তালাক (ইসলামী পন্থায়) প্রকৃত হয় না, (যদি কোনোক্রমে হয়ে যায়) শপথের জন্যে কাফ্ফারা দেয়া অবশ্য কর্তব্য। ইবনে তাইমিয়ার পূর্বে আগত কোন ইসলামি আলেমই বলেননি যে, কাফ্ফারা দিতে হবে।

২। সে বলেছে, হায়েজ (ঋতুস্রাব) সম্পন্ন নারীকে প্রদত্ত তালাক প্রকৃত হয় না, তার পবিত্রতার সময় প্রদত্ত তালাকও প্রকৃত হয় না।

৩। সে আরো বলেছে, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে তরককৃত নামাযের কাজা (পূরণ) পড়া অপরিহার্য নয়।’

৪। তার মন্তব্য, ‘হায়েয সম্পন্ন নারীর জন্যে কাবা শরীফের তাওয়াফ করা মোবাহ (অনুমতিপ্রাপ্ত)। সে যদি তা করে, তবে তাকে কাফ্ফারা দিতে হবে না।’

৫। ইবনে তাইমিয়া বলেছে, ‘তিন তালাকের নামে প্রদত্ত এক তালাক এক তালাকই থাকবে। অথচ এ কথা বলার আগে সে বহুবার বলেছে যে এজমা আল মুসলিমিন এ রকম নয়।’

৬। ইবনে তাইমিয়ার অভিমত হলো, ‘যখন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কর আদায় করা হয়, তখন তা যাকাত হয়ে যায়, যদিও তা যাকাতের নিয়্যতে দেয়া না হয়’।

৭। সে বলেছে, ‘একটি ইঁদুুর’ কিংবা একটি বিড়াল যদি (হাউজের) পানিতে মরে পড়ে থাকে তাতেও পানি নাজস্ বা অপবিত্র হবে না’।

৮। সে আরো বলেছে, ‘জুনুব বা স্ত্রী সহবাসের পর নাপাক ব্যক্তি রাতের গোসল ছাড়াই নফল নামায পড়তে পারবে। এটা অনুমতিপ্রাপ্ত।’

৯। সে বলেছে, ‘যে ব্যক্তি এজমা আল উম্মতের সাথে দ্বিমত পোষণ করে, সে অবিশ্বাসী (কাফের) কিংবা পাপী (ফাসিক) হয় না’।

১০। ইবনে তাইমিয়া মত প্রকাশ করেছে, ‘আল্লাহ্ তা’লা হলেন মহল্ল-ই-হাওয়াদিস (সৃষ্টির উৎপত্তিস্থল) এবং তিনি সমাবিষ্ট অণুর দ্বারা তৈরি’।

১১। সে আরো বলেছে, ‘কুরআনুল করীম আল্লাহ্ পাকের যাত বা সত্তার মধ্যে সৃষ্ট হয়েছে’।

১২। সে আরো বলেছে, ‘আলম তথা সৃষ্টি জগত তার প্রজাতি নিয়ে চিরন্তন থাকবে’।

১৩। ইবনে তাইমিয়ার ধারনা হলো, ‘আল্লাহ্ তা’লাকে ভাল জিনিস সৃষ্টি করতে হয়’।

১৪। সে বলেছে, ‘আল্লাহ্ পাকের দেহ ও দিক আছে; তিনি তাঁর স্থান পরিবর্তন করেন এবং তিনি আরশের মতই বড়’।

১৫। সে বলেছে, ‘জাহান্নাম চিরস্থায়ী নয়। এটাও বিলীন হয়ে যাবে’।

১৬। ইবনে তাইমিয়া নবী (আলাইহিমুস সালাম)-গণের ত্রুটি বিচ্যুতিহীনতার প্রতি অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

১৭। সে বলেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (ﷺ) অন্যান্য সাধারণ মানুষ হতে ভিন্ন কিছু নন। তাঁর মধ্যস্থতায় দোয়া করা অনুমতিপ্রাপ্ত নয়’।

১৮। ইবনে তাইমিয়া মত প্রকাশ করেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর রওজা মোবারক যেয়ারত করার নিয়্যতে মদীনা শরীফ যাওয়া পাপ’।

১৯। সে বলেছে, ‘মহানবীর (ﷺ) রওযায়ে আক্দসে শাফায়াত প্রার্থনা করতে যাওয়া হারাম’।

২০। সে আরো বলেছে, ‘তওরাত ও ইনজিল শব্দসম্ভারে পরিবর্তিত হয়নি, বরং অর্থে পরিবর্তিত হয়েছে’। (তথ্য সূত্র: আল্লামা যিয়াউল্লাহ্ কাদেরী, ওহাবী মাযহাবের হাকীকত)

কিছু আলেমের মতে উপরোক্ত মন্তব্য/আক্বীদার সবগুলো ইবনে তাইমিয়ার ছিল না। তবে ‘খোদা তা’লার দিক আছে এবং আল্লাহ্ সমাবিষ্ট অনুর দ্বারা তৈরী ’ মর্মে ইবনে তাইমিয়ার মন্তব্যকে কেউই অস্বীকার করেননি।

বর্তমান যুগের সালাফীরা হলো ইবনে তাইমিয়ার অনুসারী। তারা “ আহলে হাদীস” বা “লা-মাযহাবী” নামেও পরিচিত। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে সালাফী পতাকা বহনকারী ছিল কুখ্যাত নাসির উদ্দিন আলবানী নামে এক ঘড়ির মেকানিক যার মৃত্যু ১৯৯৯ খৃ। এই আলবানী তাহকিক (নিরিক্ষা) করার নামে আরবী ভাষার অসংখ্য হাদীস ও অন্যান্য ইসলামী মূল্যবান গ্রন্থের উপর নির্মম এক পরিবর্তন/পরিবর্ধন যজ্ঞ পরিচালনা করে। তার অপকর্মের দরূন ইসলামের এমন ক্ষতি হয়েছে যা বোধ হয় কোনদিন আর শোধরানো যাবে না। উদাহরন স্বরুপ- ইমাম বোখারী (র:) এর “আল-আদাবুল মুফরাদ” নামক হাদীস গ্রন্থখানা এই নাসির উদ্দিন আলবানীর সম্পাদনায় “সহিহ আল-আদাবুল মুফরাদ” নামে পরিবর্তন ও সংক্ষিপ্ত করন করে প্রকাশ করা হয়। এই গ্রন্থে বোখারী (র:) এর ৬৪৫টি বাব (অধ্যায়/চ্যাপ্টার) হতে ৮৩টি বাদ দিয়ে শুধু ৫৬২টি বাব প্রকাশ করা হয়। ইহার ফলে মূল গ্রন্থের ১৩৩৯ খানা হাদীসের মধ্যে আলবানী কর্তৃক ৩২৯ খানা হাদীস বাদ দিয়ে ১০১৩ খানা হাদীস প্রকাশ করা হয়। তাহকিককৃত এবং বাদ দেওয়া হাদীস সমূহ হলো আদব, মহাব্বত, তাজিম ইত্যাদি সংক্রান্ত।

বর্তমানে সালাফী পতাকা বহনকারী হলো ভারতের জাকির নায়েক

ইসলামী দাওয়াতের নামে সে বর্তমান যুগের অসংখ্য লোককে গোমরাহীর দিকে নিমজ্জিত করছে। আমাদের যুব সমাজের এক বিরাট অংশ তার অন্ধ অনুসারী। সৌভাগ্যক্রমে ভারত ও পাকিস্তানের হক্কানী ওালামাগন তার মুখোশ খুলে আসল চেহারার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে তার জনপ্রিয়তায় এখনও ভাটা পড়েনি। “পিস টিভি” তার মূখ্য হাতিয়ার যা বহুলাংশে যাকাতের টাকায় পরিচালিত। বাংলাদেশে “পিস স্কুল” স্থাপন করে সে কোমলমতি শিশুদের মগজ ধোলাই করে বাংলাদেশের মুসলমানদিগকে এক অপূরনীয় ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। (যদিও পিস টিভির সম্প্রচার অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু ঐ টিভির বাংলাদেশি বক্তারা এখনো বহাল তবিয়তে আছেন এবং আমাদের কয়েকটি টিভি চ্যানেলে তাদের বাতিল আক্বীদা প্রচার করে যাচ্ছেন। অনুরূপ ভাবে পিস স্কুল গুলো বন্ধ ঘোষণা হলেও এগুলোর স্থানীয় পৃষ্টপোষকরা ভিন্ন নামে এ প্রতিষ্ঠান গুলো পরিচালনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।) 

জাকির নায়েকের কিছু ভ্রান্ত আক্বীদা নিম্নে প্রদত্ত হলো:-

১। আল্লাহ্কে ব্রাম্ম, বিষ্ণু প্রভৃতি নামে ডাকা যাবে।

২। চারজন মহিলা নবী এসেছিলেন।

৩। রাম ও কৃষ্ণ নবী হতে পারেন।

৪। শিয়া সুন্নী পার্থক্য রাজনৈতিক।

৫। খৃষ্টান পাদ্রী কুরআনে ভূল আছে-এমন মন্তব্য করলে সে (জাকির নায়েক) তা সমর্থন করে।

৬। কুরআন শরীফ স্পর্শ করার ক্ষেত্রে পবিত্রতা লাগে না।

৭। সুবহে সাদিক হলেও সাহরী খাওয়া যায়।

(জাকির নায়েকের ভ্রান্ত আক্বীদা সম্বদ্ধে বিস্তারিত জানতে হলে, মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর কর্তৃক প্রনীত “ডাক্তার জাকির নায়েকের স্বরূপ উম্মেচন” নামক বইখানা পড়া যেতে পারে।)

ইবনে তাইমিয়ার অনুসারী এই আহলে হাদীস/ সালাফী/ লা-মাযহাবী 

-এরা আসলে গায়ের মুকাল্লিদ (কোন মাযহাবের ইমামের অনুসারী নয়)। শুরুতে এরাও ওহাবী নামেই পরিচিত ছিল। কিন্তু ১৮১৮ সাল থেকে তারা এই উপমাহাদেশে সর্বপ্রথম “আহলে হাদীস” নামে পরিচয় দেওয়া শুরু করে। তারপর ও তাদের বদ আক্বীদার কারনে মানুষ তাদের ঘৃনা করত এবং ওহাবী বলেই সম্বোধন করত। 

১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহে তারা ইংরেজদের সহযোগীতা করায় রাজকীয় আনুকুল্য পেয়ে আসছিল। তারই ধারাবাহিকতায় তাদের নেতা “মাও: মুহাম্মদ হোসাইন বাটলাভী” ওহাবী নামের কলঙ্ক মুছার জন্য “ওহাবী” নামের পরিবর্তে “আহলে হাদীস” নামকরন পাঞ্জাবের ইংরেজ শাসকের মাধ্যমে আবেদন পূর্বক রেজিষ্ট্রেশন লাভ করে (১৮৮৬ সালে)।

মূলত সালাফী, আহলে হাদীস, লা-মাযহাবী, নজদী, মওদুদী, জামাত, তাবলীগ, দেওবন্দী, কওমী-ওরা সবাই হলো ওহাবী, তবে বিভিন্ন নামে পরিচিত।

দ্রষ্টব্য:- হুজুর (ﷺ) বলেছেন – “তোমরা আমার সুন্নতের অনুসরন কর।” ইহা বলেননি যে, তোমরা আমার হাদীসের অনুসরন কর।

আব্দুল ওহাব নজদীর (ওহাবী) আক্বীদা

ওহাবী সম্প্রদায়ের প্রবক্তা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদী (সক্ষেপে শেখ নজদী) ১৭০৩ সালে আরবের নজদে তামিম গোত্রে জন্ম গ্রহন করে। তার ভাই, বাবা, চাচা, দাদা, সকলেই হক্কানী আলেম ছিলেন। কিন্তুু শেখ নজদী শৈশবকাল থেকেই নবী বিদ্বেষী এবং ভ্রান্ত আক্বিদায় বিশ্বাসী ছিল। যার কারনে তার পিতা ও ভাইয়ের সাথে তার বিরোধ সৃষ্টি হয়। তার আক্বিদাকে প্রাতিষ্ঠানিকরূপ দেয়ার জন্য সে একজন শক্তিশালী পৃষ্ঠপোষকের প্রয়োজন অনুভব করে। এই উদ্দেশ্যে শেখ নজদী সুকৌশলে ১১৪৭ হিজরীতে (১৭৩৯ সালে) দেরঈয়ার গভর্নর মুহাম্মদ ইবনে সউদের সাথে আতœীয়তার সম্পর্ক স্থাপন করে, তথায় নিজ কন্যাকে বাদশা ইবনে সউদের নিকট বিবাহ দিয়ে তাকে নিজ আক্বীদার সমর্থনে সহযোগিতামূলক চুক্তিতে আবদ্ধ করে। তা’ছাড়া বৃটিশ সরকারের অর্থে ও গোয়েন্দা বাহিনীর স্বক্রিয় সহযোগিতায় কালক্রমে তারা (ওহাব ও সৌদ পরিবার) সম্পূর্ন নজদ এবং ১৮০১ সালে পবিত্র মক্কা এবং ১৮০৩ সালে পবিত্র মদিনা দখল করে নেয়। ফলে তুর্কী শাসন বিলুপ্ত হয়। কিন্তু মিশরের শাসনকর্তা মুহাম্মদ আলী পাশা ও তুর্কী সুলতান একত্র হয়ে তাদের যৌথ বাহিনী মিশরীয় সেনাপতি স্কটিশ-টমাস কীর্থ এর নেতৃত্বে ১৮১২ সালে মদিনা, ১৮১৩ সালে মক্কা এবং ১৮১৮ সালে দেরঈয়া দখল করে নেয়। ফলে ওহাবীদের পরাজয় ঘটে এবং তাদের শক্তি প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে আসে। কিন্তুু ক্রমান্বয়ে আল-সাউদ পরিবার শক্তি সঞ্চয় করে তুর্কী বিন আবদুল্লাহর নেতৃত্বে হারানো এলাকা তুর্কী অটোম্যানদের থেকে পুনরুদ্ধার করে দেরঈয়া হতে তাদের রাজধানী ২০ মাইল দূরে রিয়াদে প্রতিষ্ঠা করে। তুর্কী বিন আবদুল্লাহ্, তার ছেলে ফয়সাল ও নাতী আব্দুর রহমান ১৮২৮ সাল হতে ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করে। ১৮৬৫ সালে তুর্কী অটোম্যান বাহিনী পুনরায় আরব ভূখন্ড আক্রমন করে এবং এই সংগ্রাম সাউদ পরিবারের শাসন অবসানের মাধ্যমে ১৮৯১ সালে সমাপ্ত হয় এবং সাউদী শাসক আবদুল্লাহ্ কুয়েতে আশ্রয় নেয় এবং ১৯০২ সাল পর্যন্ত তথায় অবস্থান করে। ১৯০২ সালে আব্দুর রহমানের পুত্র আবদুল আজিজ ৪০ জন অনুসারী নিয়ে রিয়াদ শহরের মূল দূর্গটি দখল করে নেয় যার ফলশ্রুতিতে এবং বৃটিশ সহায়তায় কালক্রমে সমস্ত আরব ভূখন্ড (১৯২৪ ও ১৯২৫ সালে যথাক্রমে মক্কা ও মদিনা সহকারে) সাউদ পরিবারের দখলে চলে আসে এবং ১৯৩২ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর সাউদী রাজতন্ত্র (করহম ড়ভ ঝধঁফর অৎধনরধ) প্রতিষ্ঠিত হয়। যদিও শেখ নজদী ৮৯ বৎসর বয়সে (১৭৯২ সালে) মৃত্যুবরন করে, কিন্তুু তার সাথে ১৭৩৯ সালে মুহাম্মদ ইবনে সাউদের সাথে সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক নজদীর মতবাদ (ওহাবী আক্বীদা) অদ্যাবধি সৌদী আরবে প্রচলিত আছে এবং সৌদী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এই মতবাদ তামাম বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, আল্লাহর রাসুল (ﷺ)-এর ভবিষ্যৎবানীতে নজদ হইতে যেই দু’টি অভিশপ্ত শয়তানের শিং এর আবির্ভাবের কথা উল্লেখ রয়েছে, তন্মধ্যে একটি হলো মুসায়লামা কাযযাব (যাকে ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) এর আমলে নবুয়তের দাবী করলে কতল করা হয়) এবং অপরটি হলো আব্দুল ওহাব নজদী। উল্লেখ্য, মুহাম্মদ বিন আবদুল ওহাব নজদী ও তার জামাতা শেখ ইবনে সৌদ, উভয়ে ছিল বৃটিশদের গুপ্তচর এবং পোষা গোলাম। ইংরেজরা ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্রমূলক মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ‘দাবার গুটি’ হিসাবে এদেরে সফল ভাবে কাজে লাগিয়েছে।

নজদীর মৌলিক আক্বীদা ০৪টি, যা নিম্নরূপঃ-

১। আল্লাহ্ তা’লাকে সৃষ্টির মত মনে করা। অর্থাৎ পবিত্র কুরআনে আল্লাহর হাত, চেহারা ইত্যাদির শাব্দিক অর্থ গ্রহন করা।

২। রবুবিয়াত ও উলুহিয়াতের একত্ববাদকে একইরূপ বলিয়া বিশ্বাস করা।

৩। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মান না করা।

৪। মুসলমানকে কাফের আখ্যায়িত করা। অর্থাৎ যারা ওহাবী আক্বীদা পোষন করবে না, তাদের প্রতি কুফরী ফতোয়া দেয়া।

তার অন্যান্য আক্বীদাসমূহ নিম্নে লিপিবদ্ধ করা হলোঃ-

১। নবী করীম (ﷺ)-কে সম্মান না করা। ওহাবীদের অধিকাংশ ফেৎনা ও আপত্তিই হলো রাসুল (ﷺ)-এর সম্মান সংক্রান্ত অর্থাৎ হুজুর (ﷺ)-এর শান-মানকে খর্ব করার প্রচেষ্টার অন্তর্ভূক্ত। অথচ আল্লাহ্ তাঁর হাবীব (ﷺ)-কে সর্বাধিক সম্মান করার জন্য কুরআনে নির্দেশ দিয়াছেন। তাই ঈমানদারদের জন্য হুজুর (ﷺ)কে সম্মান করা ফরজ এবং জানের চাইতে বেশী ভালবাসা ঈমানের পরিচায়ক।

২। নজদীর মতে যে ব্যক্তি নবীর (ﷺ) উসিলা গ্রহন করবে, নিশ্চয়ই সে কাফের হয়ে যাবে। অথচ কুরআন ও হাদীসে উসিলা গ্রহনের অসংখ্য দলিল ও প্রমান বিদ্যমান।

৩। শেখ নজদী হুজুর (ﷺ)-এর উপর দরূদ শরীফ পাঠকে নিরুৎসাহিত করেছে। অথচ আল্লাহ্ নিজে ফেরেস্তাগনকে নিয়ে হুজুর (ﷺ)-এর উপর দরূদ পাঠান এবং মু’মিনদিগকে যথাযথভাবে দরূদ ও সালাম পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তাই দরূদ পাঠ করা কখনো ফরজ, কখনো ওয়াজিব এবং কখনও মুস্তাহাব।

৪। শেখ নজদী কুরআনের মনগড়া তাফসীর করতো। অথচ মনগড়া ও ভিত্তিহীন তাফসীর করা হারাম ও নিষিদ্ধ। ‘‘যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের মনগড়া তাফসীর করলো, সে তার স্থান জাহান্নামে করে নিল।”

৫। হুজুর পুরনুর (ﷺ)-এর রওজা শরীফ ও নবী-অলীদের মাজার শরীফের যিয়ারত শিরক এবং এতদুদ্দেশ্যে সফর করা বেদআত। অথচ আহলে সুন্নাতওয়াল জামাতের মতে রওজা শরীফ যিয়ারত উত্তম ইবাদত ও সর্বোত্তম মুস্তাহাব আমল এবং আওলিয়া কেরামের মাজার যিয়ারত সুন্নত এবং সওয়াবের কাজ।

৬। উসীলা গ্রহনের বেলায় হুজুর (ﷺ)-কে এবং অলীগনকে আহ্বান করা (যেমনঃ-ইয়া-রাসুলাল্লাহ (ﷺ), হে দয়াল পীর ইত্যাদি) র্শিক। অথচ ইহা সম্পুর্ন জায়েয এবং হুজুর (ﷺ) নিজেই এক অন্ধ সাহাবীকে এই পদ্ধতিতে আহ্বান করতে বলেছিলেন। এমনকি কবরবাসীগনকেও আমরা ‘‘ইয়া আহলাল কুবুর” বলে সালাম জানাই।

৭। হুজুর (ﷺ) এবং অলীগনের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা (ইস্তেগাছা) ও শাফায়াত কামনা করা র্শিক। অথচ মুসিবতের সময় আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সাহায্য প্রার্থনা করা জায়েজ।

৮। নবী করীম (ﷺ)-কে সে সংবাদদাতা ডাক পিয়ন বলেছে। (নাউযুবিল্লাহ)

৯। তার মতে হোদাইবিয়ার সন্ধি মিথ্যা ও বানোয়াট।

১০। তার মতে নবী করীম (ﷺ) ইহকালে ও পরকালে কোন উপকারে আসবেন না। (নাউযুবিল্লাহ)

১১। তার মতে চার মাযহাবের চার ইমাম ভ্রান্ত ও মিথ্যা।

১২। আযানে “আশহাদু আন্না মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” উচ্চারনকারী একজনকে সে হত্যা করেছে।

১৩। সে দরূদ, ফেকাহ, তাফসীর ও হাদীসের গ্রন্থসমূহ জ্বালিয়ে দিয়েছে।

১৪। কাফের, মুশরিক ও মোনাফেককে খাঁটি ঈমানদার বলে আক্বীদা পোষন করত।

১৫। ওলামায়ে আহলে সুন্নাতকে হত্যা করা জায়েজ মনে করত।

১৬। ঈমানদার মুসলমানদের মালামাল লুন্ঠন করে যাকাতের নিয়মে ওহাবীদের মধ্যে তা বন্টন করত।

১৭। সে লা-মাযহাবী ছিল। কিন্তুু মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য নিজকে হাম্বলী বলে দাবী করত।

১৮। নামাযের পর দোয়া করা হারাম আক্বীদা পোষন করত।

১৯। তার উপর বিশ্বাস স্থাপনকারীই শুধু মুসলমান আর যারা তার বিরোধীতা করে তারা কাফের ও মোনাফিক। তাই ওলামায়ে আহল সুন্নাতকে হত্যা করা জায়েয আক্বীদা পোষন করত।

নজদীর- ৬ দফা

১। যারা ওহাবী আক্বীদায় সামীল হবে না তারা এক বাক্যে কাফের। তাদের ধন-সম্পদ, ইজ্জত, সম্মান বিনষ্ট করা হালাল। তাদের পশুর হাটে নিয়ে বেচাকেনা অপরিহার্য।

২। মূর্তিপূজার বহানায় কা’বা ঘরকে ধ্বংস করা, মুসলমানকে হজ্বব্রত থেকে বিরত রাখা এবং হাজীদের মালামাল লুন্ঠনের জন্য আরব যাযাবর জাতিকে উত্তেজিত করা।

৩। ওসমানিয়া (তুর্কী) খলিফার আদেশ অমান্য করা এবং যুদ্ধের মাধ্যমে খলিফাকে উৎখাত করা।

৪। নবী, সাহাবা, আওলীয়া ও বুর্জগানে দ্বীনকে অবহেলা করা।

৫। মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে মাযহাব প্রচারের নামে ফেৎনা ফাসাদ সৃষ্টি করা।

৬। নবী ওলী সংক্রান্ত আয়াতসমূহ বাদ দিয়ে সংক্ষেপে একটি আধুনিক কোরআন তৈয়ার করা।

চরম বিরোধীতার মুখে নজদী সাহেব ২নং এবং ৬নং দফা স্থগিত করে নিম্নোক্ত দফাসমূহ ৬ দফার সাথে সংযোজন করেঃ

১। মহানবী (ﷺ)-এর রওজা শরীফ যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর সূচী গ্রহন করা হারাম ও নিষেধ। যেমন ইবনে তাইমিয়া ৬২৬হিঃ রওজা শরীফ যিয়ারত হারাম ফতোয়া দিয়েছিল যার জন্য দামেশকের ধর্মপ্রান মুসলমান তাকে গ্রেফতার করে অবশেষে দামেশকের কিল্লায় কতল করে।

২। হযরত নবী করিম (ﷺ)-এর জীবদ্দশায় অচল মানুষরূপে চিহ্নিত ছিলেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর থেকে কোন উপকারের আশা করা যায় না। (নাউযুবিল্লাহ)

৩। হযরত নবী করিম (ﷺ)-এর গায়েবের জ্ঞান বলতে কিছুই ছিল না। গায়েব জানার আক্বীদা পোষন করা র্শিক। (দেওবন্দীরা ঐক্যমত)

৪। আম্বীয়া, সাহাবা, গাউস, কুতুবদের সঙ্গেঁ মহব্বত রাখা হারাম। (দেওবন্দীরা ঐক্যমত)

৫। সাহাবা, আওলাদে রাসুল ও নবীদের কবর ভেঙ্গেঁ দেয়া ফরজ।

দেওবন্দী মুরুব্বিদের আক্বীদা

১। দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা কাশেম নানুতবী বলেন- যুগে যুগে বিভিন্ন নবীর আগমন সম্ভব (তাহযিরুন্নাস)। তার এই আক্বীদার সূত্র ধরে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নবুয়ত দাবী করে।

২। রশিদ আহম্মদ গঙ্গুহী ও খলিল আহম্মদ আম্বোটি বলেন – নবী করিম (ﷺ)-এর এলেম/জ্ঞান বুদ্ধি শয়তান লায়িনের জ্ঞান বুদ্ধির চেয়েও কম ছিল। (বারাহেনে কাতেয়া) (নাউযুবিল্লাহ)

৩। আশরাফ আলী থানবী বলেন – নবী করিম (ﷺ)-এর সামান্য এলেম ছিল যা যায়েদ, আমর, হাউওয়ান ও জীবজন্তুুরও অর্জিত হয়। (হিফজুল ঈমান) (নাউযুবিল্লাহ)

৪। ইসমাইল দেহলভীর আক্বীদা – তিনি গায়রুল্লাহর জন্য এলমে গায়েব এর ঘোর বিরোধী। তার মতে কেউ গায়রুল্লাহর জন্য এলমে গায়েব সাব্যস্ত করবে সে কাফের মুশরিক ভুক্ত হবে। (তাকভিয়াতুল ঈমান)

নোট : ১। ওলামায়ে আহলে সুন্নাতের আক্বীদা – যারা নবী করিম (ﷺ) সম্বদ্ধে উপরোক্ত আক্বীদা পোষন করবে তারা নিজেরাই ধর্মচ্যুত ও কাফের। তাদের পিছনে নামাজ পড়া, তাদের সাথে আদান-প্রদান, শাদী-বিবাহ ইত্যাদি কার্যক্রম বৈধ নয়।

২। দেওবন্দী একটি ধারা হক্বের উপর এবং একটি বাতিল অক্বীদার উপর প্রতিষ্ঠিত। তবে বর্তমানে অধিকাংশই ভ্রান্ত আক্বীদা পোষণকারী।

বিস্তারিত দেওবন্দী আক্বীদা

১। নামাজে নবী করিম (ﷺ)-এর খেয়াল/ধ্যান গরু-গাধার চেয়ে শতগুনে নিকৃষ্ট; বরং শিরক পর্যায় (ইসমাইল দেহলভী, সিরাতুল মুস্তাকিম)। (অথচ নামাজে নবী করিম (ﷺ) এবং আল্লাহর নেক বান্দার প্রতি সালাম পাঠ করা ওয়াজিব। অতএব তাঁদের খেয়াল ও জায়েয।)

২। শয়তান ও মালাকুল মউতের জ্ঞান হুজুর (ﷺ)-এর জ্ঞানের তুলনায় অধিক (খলীল আহমদ আম্বোটি, বারাহেনে কাতেয়া)। (অথচ সৃষ্টির মধ্যে হুজুর (ﷺ)-এর জ্ঞান হইতে অন্য কারো বেশী জ্ঞান আছে বলে বিশ্বাস রাখা কুফর।)

৩। হুজুর (ﷺ) উর্দু বলার ক্ষমতা দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে অর্জন করেছেন। (খলীল আহমদ আম্বোটি, বারাহেনে কাতেয়া)। (আল্লাহ্ সকল ভাষা জ্ঞান আদম (عليه السلام) কে শিক্ষা দিয়েছেন। হুজুর (ﷺ)-এর জ্ঞান আদম (عليه السلام) হইতে অধিক। অতএব হুজুর (ﷺ) দেওবন্দ থেকে উর্দু শিখেছেন এমন দাবী শুধু জাহেলই করতে পারে।)

৪। হুজুর (ﷺ)-এর নিকট দেওয়ালের পিছনের ইলমও নাই (খলীল আহমদ আম্বোটি, বারাহেনে কাতেয়া)। (অথচ হুজুর (ﷺ) বলেছেন-‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের রুকু-সিজদা ও তোমাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে কিনা তাও দেখি।’)

৫। নামাজে “আত্তাহিয়াতু” পড়ার সময় “আস্সালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবী” দ্বারা সালামের সময় হুজুর (ﷺ)কে হাজির-নাজির আছেন এমন ধারনা পোষন করা শিরক (খলিল আহমদ আম্বোটি, বারাহেনে কাতেয়া)। (অথচ হুজুর (ﷺ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ আমাকে সালাম দেয় আল্লাহ্ আমার মনোযোগ ফিরিয়ে দেন। তখন আমি তার সালামের জবাব দেই। (মেশকাত শরীফ)

৬। অধিকাংশ মানুষ মিথ্যা বলে, আর আল্লাহ্ যদি বলতে না পারেন তাহলে মানুষের ক্ষমতা খোদার ক্ষমতা থেকে বেড়ে যাবে (ইসমাইল দেহলভী)। (অথচ আল্লাহ্ তা’আলার পবিত্র সত্ত¡া সকল প্রকার দোষ ত্রুটি থেকে পূূত:পবিত্র। মিথ্যা বলতে না পারা আল্লাহর দূর্বলতা নয় বরং পবিত্রতা।)

৭। হুজুর (ﷺ)-এর যে ইলমে গায়েব আছে এ ধরনের ইলমে গায়েব যায়েদ, আমর এবং প্রত্যেক শিশু, পাগল এমনকি সকল জীব-জন্তুরও আছে (মৌঃ আশরাফ আলী থানভী, হিফজুল ঈমান)। 

(অথচ হুজুর (ﷺ)-এর কোন গুন বা বৈশিষ্টকে কোন নিকৃষ্ট জন্তুুর সাথে তুলনা করা বা তাঁর সমকক্ষ বলা তাঁর শানে স্পষ্ট ও চরম অবমাননা ও বেয়াদবী; তাই এটা কুফর। তা’ছাড়া মহান রাব্বুল আ’লামিন তাঁর হাবীব (ﷺ)-কে অফুরন্ত এলমে গায়েব দান করেছেন যাহা সন্দেহাতীতভাবে কোরআন-হাদীস দ্বারা প্রমানিত।)

৮। মীলাদ শরীফে কেয়াম করা বেদআত, শিরক। (অথচ মীলাদ শরীফে কেয়াম করা অর্থাৎ নবী (ﷺ)-কে সম্মান প্রদর্শন আল্লাহর নির্দেশেরই প্রতিপালন এবং ইহা সুন্নী বুজর্গদের মতে মুস্তাহাব।)

৯। হুজুর (ﷺ)-কে বড় ভাইয়ের মত সম্মান করা উচিত (ইসমাইল দেহলবী, তাকবিয়াতুল ঈমান-পৃ:৭১)। (অথচ সম্মানের দিক দিয়া মহান রাব্বুল আ’লামীনের পরই হুজুর (ﷺ)-এর মর্যাদা। নবীর মর্যাদা পিতা-মাতার মর্যাদার চাইতেও অনেক বেশী; তাই তাঁর সম্মান ও অনুরূপভাবে করতে হবে এবং তা’ না হলে ঈমানই থাকবে না।)

১০। যে কোন ব্যক্তি যত বড়ই হোক বা নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেস্তাই হোক আল্লাহর কাছে তার মর্যাদা চামারের চাইতেও নিকৃষ্ট (ইসমাইল দেহলভী-তাকবিয়াতুল ঈমান- পৃ:২৩)। (অথচ এমন ধারনা ও উক্তি অত্যন্ত ভ্রান্ত এবং জঘন্য বেয়াদবী ও অবমাননাকর। এমন আক্বীদা কোরআন ও হাদীসের পরিপন্থি। নবী-রাসুল, শহীদান, আউলিয়া কেরাম ও ঈমানদারগন আল্লাহর নিকট মর্যাদা সম্পন্ন। নবী-রাসুলগন আল্লাহর মহত্বের প্রমান। আল্লাহ্ বলেন,“নিশ্চয়ই ঐ ব্যক্তি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে অধিক সম্মানিত যিনি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে অধিক পরহেজগার।”)

১১। হুজুর (ﷺ)-এর কোন ক্ষমতা নাই। তিনি দূর থেকে শুনতে পান না। অনুরূপভাবে এ’ধরনের ক্ষমতা কোন অলী বুযুর্গেরও নাই। আছে বলে বিশ্বাস করা শিরক (তাকবিয়াতুল ঈমান-পৃ:৩২-৩৩)। (অথচ হুজুর (ﷺ)-এর আল্লাহ্ প্রদত্ত ক্ষমতা (মোজেযা) রয়েছে। নবীগন দূর থেকে শুনতে পান। তাই তো হুজুর (ﷺ) আশেকদের সালামের জবাব সরাসরি প্রদান করে থাকেন। যুদ্ধাবস্থায় মদিনা শরীফ থেকে হযরত ওমর (رضي الله عنه) এর হুশিয়ারী/ নির্দেশ বার্তা হযরত সারিয়া (رضي الله عنه) এক মাসের দূরত্বের জায়গা থেকে শুনতে পেয়েছিলেন।)

১২। মিলাদ মাহফিল করা নাজায়েজ এবং সর্বাবস্থায় নাজায়েজ (ফতোয়ায়ে রশিদিয়া-পৃ:১৬)। (অথচ মিলাদ মাহফিল করা জায়েজ এবং সওয়াবের কাজ। হুজুর (ﷺ) নিজেই মিলাদ বা তাঁর বেলাদত শরীফের বর্ননা করেছেন। তিরমিযী শরীফে মিলাদুন্নবী নামে পৃথক একটি অধ্যায় রয়েছে।)

১৩। নামাজের পর ইমাম ও মোক্তাদী সবাই মিলে হাত তুলে মুনাজাত করা বেদআত। (অথচ সুন্নীদের মতে ইহা মোস্তাহাব।)

১৪। খাদ্যসামগ্রী সামনে রেখে ফাতেহা পাঠ ভাত পূঁজা, গোমরাহদের কাজ (তাকবিয়াতুল ঈমান-পৃ:৯০ ও ৯৩)। (অথচ খাদ্যসামগ্রী সামনে রেখে ফাতেহা পাঠ ও ইসালে সওয়াব জায়েজ। খাদ্য সামগ্রী সামনে রেখে স্বয়ং হুজুর (ﷺ) ফাতেহা দিয়েছেন। (বোখারী ও মেশকাত শরীফ)

১৫। ঈদে মিলাদ্ন্নুবী (ﷺ) উদ্যাপন বেদআত। (অথচ নিঃসন্দেহে ইহা জায়েয ও সওয়াবের কাজ। হুজুর (ﷺ) তাঁর বেলাদত শরীফের দিন অর্থাৎ প্রতি সোমবার রোজা রাখতেন।)

১৬। হুজুর (ﷺ)-কে হাজির-নাযির মনে করা শিরক (তাকবিয়াতুল ঈমান-পৃ:২৭)। (অথচ হুজুর (ﷺ) আল্লাহ্ প্রদত্ত ক্ষমতায় পৃথিবীর যেকোন স্থানে হাজির হতে পারেন, অবস্থার পর্যবেক্ষন করতে পারেন এবং তলবকারীকে সাহায্য করতে পারেন। তিনি (ﷺ) হাজির-নাযির না হলে হাশরের মাঠে সাক্ষী দিবেন কিভাবে?)

১৭। গোলাম আলী, গোলাম মোস্তফা, গোলাম মুহিউদ্দিন ইত্যাদি নাম রাখা শিরক (তাকবিয়াতুল ঈমান- পৃ:১২)। (অথচ এইরূপ নাম রাখা বৈধ ও জায়েয।)

কওমী/হেফাজতে ইসলামের আক্বীদা

সদ্য প্রকাশিত এবং বর্তমানে বহুল আলোচিত বদ্-আক্বীদার সংগঠনটির নাম “হেফাজতে ইসলাম”। এরা হলেন কওমী মাদ্রাসার প্রডাক্ট আর কওমী ধারা হলো দেওবন্দী ধারা। দেশে বর্তমানে নাকি ১৫০০০ কওমী মাদ্রাসা আছে যেখান থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ বাতিল ফিরকার বিষ-বাষ্প সারাদেশে মহামারির মত ছড়িয়ে পড়েছে। শুনা যাচ্ছে দেশের সিংহভাগ মসজিদই নাকি ওহাবী ও কওমী ধারার বাতিল পন্থী আলেমগন দখল করে নিয়েছে। ইয়াজিদ, আবদুল্লাহ ইবনে সাবা, নজদী, মওদুদী, ইলিয়াস গং-রা জীবিত না থাকলেও তাদের প্রেতাত্মারা এই বাতিল পন্থীদের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে এ দেশের আপামর মুসলিম জনতাকে হক্ব বাদ দিয়ে বাতিলের দিকে ধাবিত করছে।

এ দেশের মানুষ অত্যন্ত ধর্মপ্রান। আর এ ধর্মকে পুঁজি করেই তথাকথিত এই মুসলিম ছদ্মবেশী প্রতারক ধর্ম ব্যবসায়ীরা মানুষকে ধোঁকা দিয়ে আসছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এরা নিজেদের অজান্তেই বিদেশী প্রভূ ইহুদি-নাসারা কিম্বা তাদের তেল সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দালাল সরকারদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করায় সক্রিয়। কওমী মাদ্রাসার শিক্ষা পদ্ধতি ও সিলেবাস পরিবর্তন এবং দেশের মসজিদসমূহে বাতিল পন্থী ইমামদিগকে অপসারন/পরিশুদ্ধ ব্যতিত আমাদের কোন পরিত্রান নাই। যাহা হউক, হেফাজতে ইসলামের এবং এই সংগঠনের নেতার আক্বীদা সংক্রান্ত বিষয়গুলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত, বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত একটি লিফলেট হইতে সংগ্রহপূর্বক নিম্নে প্রদত্ত হইলঃ-

১। আল্লাহ্ মিথ্যা কথা বলতে পারেন; কিন্তুু বলেন না। আল্লাহ্ ওয়াদা খেলাপি করতে পারেন; কিন্তুু করেন না। (আহমদ শফি কৃত, ভিত্তিহীন প্রশ্নাবলীর মূলোৎপাটন, পৃষ্ঠা-২/৩)

২। আহমদ শফী তার “ধর্মের নামে ভন্ডামীর মুখোশ উম্মোচন” নামক গ্রন্থের ৭ পৃষ্ঠায় মুসলিম শরীফের হাদীসে “আঈম্যাতুল মুসলিমীন” দ্বারা মন্ত্রী মিনিস্টার উদ্দেশ্য বলে ব্যাখ্যা করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ)। অথচ ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন, এখানে চার মাযহাবের ইমামগণকে বুঝানো হয়েছে। (মিনহাজ শরহে মুসলিম, ১/৪৫২)

৩। সম্বোধনের বাক্যে ‘ইয়া রাসুল’, ‘ইয়া নবী’ ইত্যাদি বলা প্রকাশ্য শিরক। (সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়, পৃষ্ঠা-৯৫) অথচ সকল ইমামগণ ও মুহাক্কিক ওলামায়ে কেরাম রাসুল (ﷺ)-কে ইয়া রাসুল ও ইয়া নবী ইত্যাদি বলে আহবান করেছেন।

৪। হাযির-নাজির আক্বীদা পোষনকারীদের সম্পর্কে আহমদ শফী বলে, হাযির-নাজির অর্থ নিজেকে নিজে সাহাবী দাবী করা। (ধর্মের নামে ভন্ডামীর মুখোশ উম্মোচন, পৃষ্ঠা-২২)

৫। রাসুল (ﷺ)-এর হাযির-নাজির আক্বীদা পোষনকারীদের সম্পর্কে আহমদ শফী বলে, এই আক্বীদা পোষণকারী আবু জেহেল, আবু লাহাবের মতো। (ধর্মের নামে ভন্ডামীর মুখোশ উম্মোচন, পৃষ্ঠা-২২) অথচ, রাসুল (ﷺ)-এর হাযির-নাজির হওয়া কোরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত। আর কোরআন-সুন্নাহর বিধানের অমান্য করা সুষ্পষ্ট কুফরী। ইসলামের অপব্যাখ্যাকারী আহমদ শফী নাস্তিক-কাফিরদের কোন কাতারে?

৬। রাসুল (ﷺ)-এর ইলমে গায়েব সংক্রান্ত ইবনে ওমর (رضي الله عنه) বর্ণিত হাদীসে প্রিয়নবী (ﷺ) বলেন, আল্লাহ্ আমার সামনে সম্পূর্ণ দুনিয়াকে তুলে ধরেছেন। এতে যা হচ্ছে এবং যা হবে সব আমি দেখতেছি। উক্ত হাদীস সম্পর্কে আহমদ শফী বলে, কানযুল উম্মাল গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, এই হাদীসটি সনদসূত্রে অত্যন্ত দুর্বল। (কানযুল উম্মাল ১১/৪২০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩১৯৭১)

৭। ইলমে গায়েব সংক্রান্ত মুয়াজ ইবনে জাবাল (رضي الله عنه) বর্ণিত হাদীস, মি’রাজে আল্লাহ্ তাঁর স্বীয় কুদরতী হাত রাসূল (ﷺ)-এর কাঁধ মোবারকে রাখলে তিনি সবকিছু জেনে যান। আহমদ শফী বলেন যে, ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) উক্ত হাদীসের সনদ তথা বর্ণনার সূত্রকে দুর্বল বলেছেন। আহমদ শফী কত বড় মিথ্যাবাদী! ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) কোথায় বলেছেন তাও সে উল্লেখ করেনি। (সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়, পৃষ্ঠা-১৪৭)

দেখুন, ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ। তিনি আরও বলেন, আমি ইমাম বুখারী (رحمة الله)-কে বলতে শুনেছি হাদীসটি সহীহ। (মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-৭২)

৮। আহমদ শফী বলে, নবী করিম (ﷺ)-এর ইলমে গায়েব বা অদৃশ্যের জ্ঞানই ছিল না। (সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়, পৃষ্ঠা-১৩৪) অথচ নবী শব্দের অর্থ-যিনি অদৃশ্যের সংবাদ দেন। (মিসবাহুল লুগাত, পৃষ্ঠা-৮৪৭)

৯। আহমদ শফী বলে, নবী (ﷺ)-কে পূর্বাপর সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ মানা চরম বেয়াদবীর শামিল। (সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়, পৃষ্ঠা-১৩৪)

১০। আহমদ শফী রাসুল (ﷺ)-এর ইলমে গায়েবের প্রতি আক্বীদা পোষণ সম্পর্কে বলে, যা পরিষ্কার কুফরী, বরং সমস্ত কুফরীর চেয়েও বড় কুফরী। (সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়, পৃষ্ঠা-১৪৩)

১১। আল্লাহ্ তা’য়ালা সূরা আর রহমানের শুরুতে বলেন যে, আমি আমার হাবীবকে কোরআন শিক্ষা দিয়েছি। অথচ আহমদ শফী বলে, আল্লাহ্ তা’য়ালা নবীকে আংশিক জ্ঞান দান করেছেন, অর্থাৎ আংশিক কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন। (সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়, পৃষ্ঠা-১৪১)

১২। আহমদ শফী বলে, ইসলামে দুটি ঈদ ব্যতীত অন্য কোন ঈদ নেই। (ধর্মের নামে মুখোশ উম্মোচন, পৃষ্ঠা-১৫) অথচ রাসূল (ﷺ) জুমার দিনকেও ঈদের দিন বলেছেন। (মুসনাদে আহমদ: হাদীস নং ৮০১২, সহীহ ইবনে খুযাইমা: হাদীস নং ২১৬১, মুসতাদরাকুল হাকেম: হাদীস নং ১৫৯৫)

১৩। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) সম্পর্কে আহমদ শফী বলে, আমাদের বাংলাদেশে এই ভাইরাস আগে ছিল না। মাত্র ১০-১২ বৎসর আগে থেকে এর অপপ্রচার শুরু হয়েছে। সে আওলাদে রাসূল পীরে ত্বরিকত ও রাহনুমায়ে শরিয়ত আল্লামা তাহের শাহ (মা.জি.আ.) কে অকথ্য ভাষায় (যা উল্লেখ করার মতো নয়) কটাক্ষ করে মন্তব্য করেছে। (ধর্মের নামে ভন্ডামীর মুখোশ উম্মোচন, পৃষ্ঠা-১৫) অথচ, সে নিজেই উক্ত গ্রন্থের একই পৃষ্ঠায় আবার বলে, “বাস্তব কথা হলো! ইতিহাস সাক্ষী যে, ৬০৪ হিজরী সনের পর এই ঈদে মিলাদুন্নবীর আবিষ্কার ঘটে।” আহমদ শফীর এমন মন্তব্য তার দ্বিমুখী মুনাফিকী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ।

১৪। উক্ত সংগঠনের সেক্রেটারি জোনায়েদ বাবুনগরী তার “প্রচলিত জাল হাদীস” বইয়ে “রাসুল (ﷺ)-কে সৃষ্টি করা না হলে কিছুই সৃষ্টি হত না”, এ হাদীসকে জাল হিসেবে উল্লেখ করে বলে যে, এটা মিথ্যুক ও দাজ্জালদের বানানো। অথচ আহমদ শফী উক্ত হাদীসটিকে সহীহ বলে বর্ণনা করেছেন। (সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়, পৃষ্ঠা-১৬৪)

১৫। আহমদ শফী আল্লাহর ওলীদের মাজার যিয়ারতকে হিন্দুদের পুজার সাথে তুলনা করেছে। (ধর্মের নামে ভন্ডামীর মুখোশ উম্মোচন, পৃষ্ঠা-১৮) অথচ রাসুল (ﷺ) জান্নাতুল বাকীতে সাহাবীদের মাজার যিয়ারত করতেন।

১৬। ওরশ পালনকারীদের সম্পর্কে আহমদ শফী বলে, ধর্ম ব্যবসায়ীরা সাধারন মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য বছর বছর ওরশের আয়োজন করে থাকে। (ধর্মের নামে ভন্ডামীর মুখোশ উম্মোচন, পৃষ্ঠা-১৪)

১৭। আহমদ শফী ইমামে আহলে সুন্নাত শেরে বাংলা (رحمة الله) সম্পর্কে বলে, তিনি তো শুধু পেট পূজারীর পেছনে ছিলেন। (ধর্মের নামে ভন্ডামীর মুখোশ উম্মোচন, পৃষ্ঠা-১৪)

১৮। আহমদ শফী মাজার যিয়ারতকারীদের সম্পর্কে বলে, আসলে এ মাজারীরা (মাজার যিয়ারতকারীগণ) হিন্দুুদের অনুসারী। (ধর্মের নামে ভন্ডামীর মুখোশ উম্মোচন, পৃষ্ঠা-২০)

১৯। আহমদ শফী বলে, মাজারীরা ওলীকে নবী বানিয়ে দেয় আর নবীকে বাড়াতে বাড়াতে খোদা পর্যন্ত নিয়ে যায়। (ধর্মের নামে ভন্ডামীর মুখোশ উম্মোচন, পৃষ্ঠা-২০) 

অথচ কোরআনুল কারীম সাক্ষ্য প্রদান করে যে, আল্লাহর ক্ষমতা ও মর্যাদা অসীম। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। আল্লাহর মর্যাদা পর্যন্ত যেতে হলে আল্লাহর মর্যাদা সসীম হতে হবে। আর আহমদ শফী আল্লাহর ক্ষমতা ও মর্যাদাকে সসীম বিশ্বাস করে বিধায় এমন উক্তি করতে বিন্দুুমাত্র কুন্ঠাবোধ করেনি; যা ইসলামী শরিয়তের বিধান মতে সুষ্পষ্ট শিরক।

২০। রাসুল (ﷺ)-এর নাম মোবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বনকারীদের ব্যঙ্গ বিদ্রæপ করে আহমদ শফী বলে, তাদের আযান দানকারীর মুখেই চুম্বন দেয়া উচিৎ। (সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়, পৃষ্ঠা-১১১) তার প্রতি আমাদের প্রশ্ন, নবীজির নাম মোবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলী চুমু খেয়ে চোখে লাগানোর হাদীস যদি জাল হয়, তাহলে মুয়াজ্জিনের মুখে চুমু খাওয়ার ব্যাপারে সহীহ হাদীস কোথায়? নাকি সে জাল হাদীস বানায়? 

২১। আহমদ শফী বলে, প্রচলিত ফাতেহা (সুরা ফাতেহা, ইখলাস তিনবার পাঠ করা) বাহ্যত একপ্রকার ভাত পূজা। কোন ভাত পূজা হয়ে থাকলে এটাকেই আখ্যায়িত করতে হবে। (সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়, পৃষ্ঠা-১৭০) 

অথচ রাসূল (ﷺ) নিজেই ফাতেহা দিয়েছেন। আহমদ শফীর কথা অনুসারে রাসূল (ﷺ) একজন ভাতপূজক ছিলেন। আহমদ শফী আবু লাহাব ও আবু জেহেলের চেয়েও বড় ধরনের কুফরী করেছে।

২২। আহমদ শফী বলে, আমাদের বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানে ওহাবী বলতে কিছু নেই। (ধর্মের নামে ভন্ডামীর মুখোশ উম্মোচন, পৃষ্ঠা-১৭) অথচ সে অন্যত্র বলে, বর্তমান যুগের জামায়াতে ইসলামীকে ওহাবী বলা যেতে পারে। (সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়, পৃষ্ঠা-১৬৪) মুনাফিকদের বক্তব্য বিভিন্নরকম হওয়াটা-ই স্বাভাবিক।

২৩। আহমদ শফী বিদআতের প্রকার সম্পর্কে বলে, কোন বিদয়াতকেই হাসানা বা ভাল বলা যাবে না। (সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়, পৃষ্ঠা-৩০) অথচ আহমদ শফী উক্ত বইয়ের ৩১ পৃষ্ঠায় বিদাতকে এক প্রকার ওয়াজিবও বলেছে।

তাবলীগ জামাতের মূখ্য উদ্দেশ্য ও মৌঃ আশরাফ আলী থানভীর আক্বীদা

তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মৌঃ ইলিয়াস বলেন- ‘‘হযরত থানবী বহুত বড় কাজ করে গিয়েছেন, আমার অন্তর চায় তা’লীম হবে তার- আর তাবলীগের তরীকা হবে আমার। এভাবে তার তা’লীম (শিক্ষা) যেন ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে” (মালফুজাত নং-৫৬)। তাই নি:সন্দেহে ইহা বলা যায় যে তাবলীগ জামাতের মূখ্য উদ্দেশ্য হলো মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর শিক্ষা ও আক্বীদার প্রচার ও প্রসার। এখন দেখা যাক তার আক্বীদা কিরূপ ছিল।

থানবী সাহেবের আক্বীদাঃ-

১। তার এক মুরীদের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আশরাফ আলী রাসুলুল্লাহ’ এইরূপ স্বপ্নের ব্যখ্যায় বলেন- “আমার প্রতি তোমার মহব্বত খুব বেশী, এসব তারই ফল।” (রেসালায়ে ইমদাদ)

২। হিফজুল ঈমানের ১৫ পৃষ্ঠায়- “রাসুলের যে এলমে গায়েব আছে এমন এলমে গায়েব তো যায়েদ, ওমর বরং সমস্ত শিশু, পাগল এবং সমস্ত জীব জানোয়ারের ও চতুষ্পদ জন্তুু (গরু, ছাগল, শিয়াল, কুকুর ইত্যাদি) সবার মধ্যেই আছে।” (নাউজুবিল্লাহ)

৩। “কছদুস সাবিল” গ্রন্থে বলেন- আকীকা, খাতনা, ছেলে মেয়েদের বিসমিল্লাহখানী (সর্বপ্রথম আরবী সবকদান অনুষ্ঠান), মৃত ব্যক্তির চল্লিশা, শবে বরাতের হালুয়া, মহররমের অনুষ্ঠান ইত্যাদি ছেড়ে দাও, নিজেও করোনা অন্যের ঘরে হলেও যোগদান করো না।

৪। মৃত ব্যক্তির জন্য ‘‘তিজা” (তৃতীয় দিনের দোয়া অনুষ্ঠান), দশওয়া, বিশওয়া এবং চল্লিশার অনুষ্ঠানকে নাজায়েয বলেছেন এবং এই কাজ থেকে বিরত থাকার আহবান করেছেন।

৫। আলী বখশ্, গোলাম আলী ইত্যাদি নাম রাখা এবং এভাবে বলা- যদি আল্লাহ্ ও রাসুল চান তাহলে অমুক কাজ সম্পন্ন হবে- শিরক। 

৬। ঈদে মিলাদুন্নবীতে খুশী হওয়া জায়েয নয় এবং পরকালে ইহা পালনে সওয়াব পাওয়া যাবে না।

অথচ উপরোক্ত ৬টি বিষয়ই হলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার পরিপন্থি।

এক নজরে তাবলীগী মতবাদ/আক্বীদা

তাবলীগের প্রতিষ্ঠাতা মৌঃ ইলিয়াস মেওয়াতী খুশকির কারনে অনিদ্রায় ভুগছিলেন। হাকীমের পরামর্শে মাথায় তেল ব্যবহার করে নিদ্রায় গেলে তাহার অন্তরে সহী ইলম ঢেলে দেওয়া হয়। ঐ ইলমের উদ্দেশ্য হলো উম্মতে মোহাম্মদীকে “নবীদের মতই মানুষের উপকারের জন্য বের করা হয়েছে”- এই আক্বীদা বাস্তবায়ন করা। অথচ ইসলামী শরিয়ত মতে নবীগন ছাড়া অন্যের জন্য সপ্নে প্রাপ্ত কোন বিধানের গ্রহনযোগ্যতা নাই। তাবলীগের মুরুব্বীদের আক্বীদার সার সংক্ষেপ নিম্নরূপ:-

১। নামাজের চেয়েও তাবলীগের গুরুত্ব বেশী। দ্বীনি উদ্দেশ্যে নূতন লোক এসে ফিরে যাচ্ছে এবং পুনরায় তাকে পাবার সম্ভবনা নাই-এমতাবস্থায় নামাজ ভেঙ্গেঁ ঐ ব্যক্তির সাথে দ্বীনী আলোচনা সেরে নেওয়া উচিত। অথচ ইসলামী শরিয়তে দ্বীনের কথা বলার জন্য নামাজ ভাঙ্গাঁর অনুমতি নাই।

২। যারা তাবলীগ জামাত করে এবং যারা তাবলীগীদের সাহায্য করে একমাত্র তারাই মুসলমান। এ’ছাড়া কোন মুসলমান নাই। (মলফুজাত-৪২)

৩। ১২ই রবিউল আউয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা বৈধ নয়। তার বৈধতার পক্ষে কোরআন হাদীসে কোন দলিল নাই। (রাহবার)

৪। বর্তমান তাবলীগ অনুসারীরা কোন পীরের হাতে বায়আত হয় না। পীরের হাতে বায়আত হওয়াকে বেদআতী কাজ মনে করে। অথচ জনাব ইলিয়াস মেওয়াতী নিজেই প্রথমত হযরত রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী (رحمة الله) এর মুরীদ ছিলেন এবং গাঙ্গুহী সাহেবের মৃত্যুর পর খলীল আহমদ আম্বেটির।

৫। রাসুল (ﷺ) যে পরিমান ইলমে গায়েব জানেন, সে পরিমান ইলমে গায়েব সমস্ত শিশু, পাগল, জীব-জানোয়ার ও চতুষ্পদ জন্তুুও (ভেড়া, বকরী, গরু, ছাগল ইত্যাদি) জানে। (নাউযুবিল্লাহ) (হিফজুল ঈমান)

৬। রাসুল (ﷺ) শুধু একাই রাহমাতুল্লিল আলামীন নন। আরো অনেকে রাহমাতুল্লিল আলামীন হতে পারেন। (ফতোয়ায়ে রশিদীয়া)

৭। কোন সাহাবী (رضي الله عنه)কে কেউ কাফের বললে সে ইসলামের সঠিক দলেই অন্তর্ভূক্ত থাকবে। (ফতোয়ায়ে রশিদীয়া)

৮। ওরস শরীফ ও মিলাদ মাহফিলে শরীয়ত পরিপন্থী কোন কাজ না হলেও উহা নিষিদ্ধ ও হারাম। (ফতোয়ায়ে রশিদীয়া)

৯। মিলাদ ও কেয়াম নাজায়েয। (ফতোয়ায়ে রশিদীয়া)

১০। প্রচলিত ফাতেহা পাঠ করা বিদআত ও হিন্দুুদের পূজার মত। (ফতোয়ায়ে রশিদীয়া)

১১। দূর থেকে কোন মাজার শরীফ যিয়ারতে যাওয়া এমনকি ওরস শরীফের দিন কোন অলীর মাজার যিয়ারত করতে যাওয়া হারাম। (ফতোয়ায়ে রশিদীয়া)

১২। মহররমে হযরত হুসাইন (رضي الله عنه) এর শাহদাতের আলোচনার মাহফিল করা এবং এই উপলক্ষে শরবত, দুধ ও নেওয়াজ ইত্যাদি বিতরন করা হারাম ও নাজায়েয। (ফতোয়ায়ে রশিদীয়া)

১৩। হিন্দুদের হুলি, দেওয়ানী, পূজা ইত্যাদির প্রসাদ খাওয়া বৈধ। (ফতোয়ায়ে রশিদীয়া)

১৪। দুই ঈদের দিনে কোলাকুলি করা বেদআত। (ফতোয়ায়ে রশিদীয়া)

১৫। রাসুল (ﷺ)-এর এলমে গায়েব নাই। তাই ‘ ইয়া রাসুলাল্ল­াহ ’ বলাও নাজায়েয। (ফতোয়ায়ে রশিদীয়া)

১৬। আল্লাহ্ মিথ্যা কথা বলা সহ অন্যান্য মন্দ কাজ সম্পাদন করতেও সক্ষম। (নাউযুবিল্লাহ) (ফতোয়ায়ে রশিদীয়া)

১৭। রাসুল (ﷺ) দেওবন্দী আলেমদের সংষ্পর্শে এসে উর্দু শিখেছেন। (বারাহেনে কাতেয়া)

১৮। শয়তান ও আজরাইল (عليه السلام) এর ব্যপক জ্ঞানের বিষয় দলিল প্রমান দ্বারা সাব্যস্ত। কিন্তু রাসুল (ﷺ)-এর এমন ব্যাপক জ্ঞানের ব্যাপারে কোন দলিল প্রমান নাই। (বারাহেনে কাতেয়া)

১৯। যত বড় নবী, ওলী বা ফেরেস্তা হোক না কেন আল্লাহর নিকট তাঁরা চামার থেকেও নিকৃষ্ট। (নাউযুবিল্লাহ) (হিফজুল ঈমান)

২০। রাসুল (ﷺ)-এর শরীয়তের ব্যাপারে কথা বলার কোন অধিকার নাই। রাসুল (ﷺ)-এর নিকট চাওয়ায় কিছু হয় না। (ইসমাইল দেহলবী, হিফজুল ঈমান)

২১। বান্দার সাথে আল্লাহ্পাক দুনিয়াতে, কবরে ও পরকালে কি ব্যবহার করবেন তা কেউ জানে না। এমন কি কোন নবী বা অলীও তাঁদের নিজেদের সাথে বা অপরের সাথে কি ব্যবহার করা হবে তা জানেন না।

২২। নামাজের মধ্যে রাসুল (ﷺ)-এর প্রতি খেয়াল করা নিজের গরু-গাধার প্রতি খেয়াল করা হতেও অনেক নিকৃষ্ট। (নাউযুবিল্লাহ) (সিরাতুল মুস্তাকিম)

২৩। আমলের দিক দিয়ে উম্মতগন অনেক সময় নবীদের সমান, এমনকি নবীদের থেকেও বড় হয়ে যায়। (তাহযিরুন্নাস)

২৪। খাতামুন্নবী অর্থ শেষ নবী বলা-এটা মূর্খদের ধারনা। (তাহযিরুন্নাস)

২৫। রাসুল (ﷺ)-এর পরে যদি কোন নতুন নবী পয়দা হয় তাহলেও রাসুল (ﷺ)-এর খাতামুন্নবী হওয়ার ব্যাপারে ত্রুটি হবে না। (তাহযিরুন্নাস)

২৬। আল্লাহ্ তা’আলা কোন কাজ সংঘটিত হওয়ার পূর্বে ঐ বিষয়ে অবগত নন। (বুলগাতুল হায়রান)

২৭। নবী করিম (ﷺ) বলেছেন, আমিও একদিন মৃত্যুবরন করে মাটির সাথে মিশে যাব। (নাউযুবিল্লাহ) (হিফজুল ঈমান)

২৮। আব্দুল ওহাব নজদী ভাল লোক ছিলেন, হাদীস অনুযায়ী আমল করতেন, বিভিন্ন বেদআতী ও শিরকী কাজ বন্ধ করতেন, লোকেরা তাকে ওহাবী বলে, তার আক্বীদা খুব ভাল ছিল। (ফতোয়ায়ে রশিদীয়া)

দ্রষ্টব্যঃ তাবলীগি ও ওহাবী আক্বীদার শিক্ষা কেন্দ্র হলো ১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা (দেওবন্দের অর্থ হলো শয়তানের দল)। আর তাদের ইজতেমা ও প্রচার কেন্দ্র হলো বাংলাদেশের টঙ্গ্ীঁর “কহর দরিয়ায়” (ইজতেমার স্থানটির আসল নাম-কহর দরিয়া)। কুদরতিভাবেই এই নাম দুইটি মনে হচ্ছে রহমত বরকত বিবর্জিত। তা’ছাড়া কহর দরিয়ার ইজতেমার স্থানটি বারংবারই আল্লাহর আযাব-গজবে নিপতিত হচ্ছে। বিষয়গুলি গুনীজনদের বিবেচনার দাবী রাখে। ঢাকায় ১৯৬৫ সালে প্রথম ইজতিমা শুরু হয় (কাকরাইল মসজিদে)। পরবর্তীতে টঙ্গীর কহর দরিয়ায়।

হুজুর (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরামের তাবলীগের সাথে প্রচলিত তাবলীগের পার্থ্যকের কিছু নমুনা

১। হুজুর (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه)-দের তাবলীগে ঈমান ও ইসলামের দাওয়াত ছিল শুধু কাফের মোশরেকদের নিকট। আর প্রচলিত তাবলীগে ঈমান ও ইসলামের দাওয়াত দেওয়া হয় মসজিদের মুসল্লিদের নিকট।

২। প্রচলিত তাবলীগ ছয় উছূল ভিত্তিক; কিন্তুু হুজুর (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরামের তাবলীগে ছিল পাঁচ উছূল বা রোকন।

৩। প্রচলিত তাবলীগে গাশ্ত ও বিভিন্ন প্রকার চিল্ল­ার ব্যবস্থা রয়েছে, কিন্তু হুজুর (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরামের তাবলীগে এ ধরনের কোন ব্যবস্থা ছিল না।

৪। প্রচলিত তাবলীগ জামাতের কর্মীরা তাদের থাকা খাওয়ার জন্য মসজিদকে ব্যবহার করছেন, অথচ হুজুর (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরামের তাবলীগে এ ধরনের কোন ব্যবস্থা ছিলনা।

৫। প্রচলিত তাবলীগে যে ধরনের বড় বড় সওয়াবের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, বিশেষ করে টঙ্গীর ইজতেমায় গেলে হজ্জের সওয়াব পাওয়া যায়। অথচ হুজুর (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরামের তাবলীগে এ ধরনের সওয়াবের কোন ঘোষনা ছিল না।

৬। হুজুর (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরামের তাবলীগের মধ্যে দ্বীনের দাওয়াতের দায়িত্ব পালন করতেন শুধুমাত্র দ্বীন সম্পর্কে বিজ্ঞজন, অথচ প্রচলিত তাবলীগে সাধারন শিক্ষিত ও মুর্খ ব্যক্তিবর্গও দ্বীনের দাওয়াতের দায়িত্ব পালন করে থাকেন ইত্যাদি।

৭। হুজুর (ﷺ) এবং সাহাবায়ে কেরামদের তাবলীগের মূল বিষয় ছিল ইসলাম। ইলিয়াসী তাবলীগের আসল উদ্দেশ্য হলো মৌঃ আশরাফ আলী থানভীর তালীম (দর্শন) প্রচার করা। (মালফুযাতে ইলিয়াস; মালফুজাত নং- ৫৬ ও ৫৭)

৮। হুজুর (ﷺ) এবং সাহাবায়ে কেরামগনের আমলে এমন কি বিগত সাড়ে চৌদ্দশত বৎসরে মহিলাদের তাবলীগ বা ইজতেমার কোন নজির আছে বলে জানা নাই। অথচ ইদানিং তাবলীগ জামাত মহিলাদের তাবলীগ ও ইজতেমার প্রচলন শুরু করেছে। 

অনেকে প্রশ্ন করেন, তাবলীগ জামাতের অনুসারীগণ তো আমাদেরকে নামাজ, রোজা, অযু ও গোসল ইত্যাদি বিষয় শিক্ষা দেন। তাদের বিরোধিতা করা হয় কেন? এর জবাবে বলতে চাই; নামাজ, রোজা, অযু, গোসল ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ায় কোন দোষ নাই এবং বিরোধিতাও নাই। তবে তাবলীগ জামাতের অনুসারীদের এমন কিছু আক্বীদা ও আমল রয়েছে যেগুলো সঠিক ইসলামের পরিপন্থি। তারা সঠিক শিক্ষার অন্তরালে ভ্রান্ত আক্বীদার প্রচার ও প্রসার করেন। এ কারনেই আপত্তি ও বিরোধীতা। উদাহরন স্বরূপ- দুধ-ভাত বিড়ালের জন্য ক্ষতিকর নয় যতক্ষন না উহাতে বিষ মিশানো হয়। তদ্রূপ তাবলীগের অনুসারীদের ভাল কাজে আপত্তি নাই। আপত্তি হলো তাদের ভালো কাজের সাথে ভ্রান্ত আক্বীদার সংমিশ্রন যা মুসলিম উম্মাহর জন্য ঈমান বিনষ্টকারী বিষ টোপের কাজ করছে। (ভ্রান্ত আক্বীদাগুলো উপরে বর্নিত হয়েছে)

তাবলীগ জামাতের সর্বশেষ সর্বনাশা সংযোজন হলো মহিলাদের তাবলীগ ও মহিলাদের ইজতেমা। যেখানে উম্মাহর ইজমা হলো, মহিলাদের জন্য সর্বোত্তম ইবাদতের স্থান ঘরের নিভৃত কোন, সেখানে মহিলাদের তাবলীগ ও ইজতেমা কতটুকু যুক্তিসংগত তা সম্মানিত পাঠকগণের বিবেচনার জন্যই ছেড়ে দিলাম।

জামাতী/মওদুদী আক্বীদা

১। “রাসুল না অতি মানব, না মানবীয় দুর্বলতা থেকে মুক্ত। তিনি যেমন খোদার ধনভান্ডারের মালিক নন, তেমনি খোদার অদৃশ্য জ্ঞানেরও অধিকারী নন বলে সর্বজ্ঞও নন। তিনি অপরের কল্যান বা অকল্যান সাধন তো দূরে নিজেরও কোন কল্যান বা অকল্যান করতে অক্ষম।”

২। খোলাফায়ে রাশেদার চার খলিফাকেই সুক্ষভাবে সমালোচনা করেছেন এবং তাঁদের শান খর্ব করার চেষ্টা করেছেন। অথচ তাঁদের সমালোচনা হারাম।

৩। দাজ্জালের আবির্ভাব সম্বদ্ধে হুজুর (ﷺ)কে জানানো হয়নি। হাদীস শরীফে এই সম্বন্ধে হুজুর (ﷺ) যা বলেছেন-তা তাঁর কাল্পনিক ও অনুমান মাত্র। অথচ আল্লাহ্ বলেন তিনি (ﷺ) নিজ থেকে কিছুই বলেননি।

৪। রাসুলে খোদা ব্যতিত কোন মানুষকে সত্যের মাপকাঠি মানা যাবে না। কাউকে সমালোচনার উর্দ্ধে মনে করা যাবে না। অর্থাৎ সে সাহাবায়ে কেরামগনে সত্যের মাপকাঠি মানতে নারাজ এবং তাঁদের সমালোচনা করা যাবে যা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ইমামগনের মতে হারাম।

৫। আলেম ব্যক্তির জন্য ‘তাক্বলীদ’ বা মাযহাব গ্রহন কবীরা গুনাহ, বরং তার চেয়েও জঘন্য। (নাউযুবিল্লাহ)

৬। ফাতেহা, জেয়ারত, নজর-নেওয়াজ ও ওরস ইত্যাদি শিরক। (অথচ এ’সকল অনুষ্ঠান জায়েজ এবং সওয়াব-বরকত হাসিলের মাধ্যম।)

৭। মোরাকাবা, মোশাহাদা, কাশ্ফ ও ওজীফা পাঠ ইত্যাদি তরীকতের কার্যাদি শিরক। (ইসলামী রেনেঁসা আন্দোলন)। (অথচ হীরা পর্বত আজও হুজুর (ﷺ)-এর মোরাকাবার নিরব স্বাক্ষী হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে।)

৮। ইবনে তাইমিয়া ইমাম গাজ্জালী আপেক্ষাও শক্তিশালী মোজাদ্দেদ ছিলেন। (অবশ্যই না। ইমাম গাজ্জালী মুসলিম বিশ্বের এক অনন্য নক্ষত্র। তাঁর তুলনা শুধু তিনি নিজেই।)

৯। নবীগন ‘মাসুম’ বা গুনাহ থেকে পবিত্র নন। মূসা (عليه السلام) নবুয়তের পূর্বে এক কিবতী/মিসরীয়কে হত্যা করে কবীরা গুনাহ করেছেন। (অথচ নবীগন নবুয়তের পূর্বে ও পরে সম্পূর্ন নিষ্পাপ। মূসা (عليه السلام) কিবতীকে ন্যায় বিচারের উদ্দেশ্যে শাস্তি দিয়েছিলেন যাতে তার মৃত্যু হয়। তাই ইহা গুনাহ ছিল না।)

১০। পীর সাহেবান ও বুজুর্গানে দ্বীনের রূহানী শক্তি থেকে কোন সাহায্য আশা করা এবং তাদের ভয় করা পরিষ্কার শিরক। (ইহা অবশ্যই জায়েয।)

১১। কোন নবী বা অলীর মাজার জিয়ারত করার উদ্দেশ্যে সফর করা হারাম। (অথচ ইহা সর্বসম্মতভাবে বৈধ/ জায়েয এবং সওয়াবের কাজ)।

১২। বর্তমান যুগে চারিত্রিক গুনাবলী অবনতির দিকে বিধায় অবৈধ সম্পর্কসমূহকে বেশী দোষনীয় বলে মনে করা হয়না। সেখানে যেনার অপবাদ এবং শারীরিক শাস্তি প্রয়োগ করা নিঃসন্দেহে জুলুম। (এই আক্বীদা কুরআন বিরোধী)

১৩। কোরআনুল করীম নাজাতের জন্য নয় এবং নিছক হেদায়াতের জন্য। (অথচ কুরআন নাজাত ও হেদায়াত উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য)

১৪। মওদুদীর মতে নবী করীম (ﷺ)-এর আরবের মধ্যে যে বিশেষ সফলতা অর্জন করেছেন, তার কারন ছিল যে তাঁর পক্ষে কিছু সাহসী লোক ছিল। (এই ধারনার মাধ্যমে সে হুজুর (ﷺ)-এর মান মর্যাদাকে খর্ব করার চেষ্টা করেছে।)

১৫। কোরআন বুঝার জন্য কোন তাফসীরের প্রয়োজন নাই। একজন দক্ষ প্রফেসর যথেষ্ট, যিনি গভীর দৃষ্টিতে কুরআন অধ্যায়ন করেছেন। (অথচ উপযুক্ত আলেম ব্যতিত অন্যের ব্যাখ্যা/তাফসীর সঠিক হলেও তা গ্রহন/অনুসরন করা নিষিদ্ধ।)

১৬। রাম, কৃষ্ণ, বিষ্ণু, কন্ফুশিয়াস- তারা রাসুল ছিল (বর্তমান যুগের সালাফী নেতা জাকির নায়েক এর মতে তারা নবী না ও হতে পারে, আবার হতেও পারে)।

“জামাতে ইসলাম” নামে পরিচিত দলটি আবুল আলা মওদুদী (১৯০৩-১৯৭৯খৃঃ) কর্তৃক ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইহা ইহুদী-নাসারদের আশীর্বাদপুষ্ট একটি ‘রাজনৈতিক ইসলামি’ দল। এই দলকে যুক্তরাষ্ট্র মডারেট ইসলামি দল হিসাবে বিবেচনা করে। এই দলের ছাত্র সংগঠনের নাম হলো ছাত্র শিবির। এই দলটি উপমহাদেশের তিনটি দেশেই বিদ্যমান। এই দল যেমনিভাবে আমাদের স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিল, তেমনি করেছিল ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির সময়। এই দল ইসলামের নামে- আবার ইসলামেরই বিরুদ্ধে কাজ করছে। তারা অনেক প্রতিষ্ঠিত ইসলামি আক্বীদার পরিবর্তন করে আমাদের সমাজে ভীষন এক ফেৎনার সৃষ্টি করেছে। তাদের মূখ্য উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে এ’ দেশে তাদের মনগড়া ও ভ্রান্ত আক্বীদাপূর্ন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা। জামাতে ইসলামের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই হক্কানী আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, মুসলিম পন্ডিত-বুদ্ধিজীবি, সবাই তাদেরে প্রত্যাখান করেছে। কিন্তু দুঃভাগ্যবশত: আমাদের দেশের সাধারন ধর্মপ্রান মুসলমানদের একটি বড় অংশই তাদের মত-পথ ও উদ্দেশ্যের বিষয়ে অন্ধকারে রয়েছে। আর এই সুযোগে সাধারন ধর্মপ্রান মানুষকে ধর্মের নামে ধোকা দিয়ে তারা বিপথগামী করছে এবং রাজনীতিক হিংসাত্বক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। তাদের আয়ত্তে থাকা বিশাল অর্থ ভান্ডার ব্যবহার করে তারা তাদের মতবাদের ব্যাপক প্রচার প্রসার করছে।

বর্তমানে আমাদের দেশে যে বিশৃঙ্খলা ও টার্গেটেড গুপ্ত হত্যার লীলাখেলা চলছে তার পিছনে রয়েছে নাম সর্বস্ব কিছু উগ্র-জঙ্গী ইসলামি সংগঠন; যেমন-আনসার উল্লাহ্ বাংলা টিম, জেএমবি, হিজবুত তাহিরীর ইত্যাদি। আর এই সংগঠনগুলোর অধিকাংশ কর্মীই হচ্ছে জামাত-শিবিরের প্রাক্তন সদস্য। কাজেই আমাদের দেশে বর্তমান অস্থিরতা, গুপ্ত হত্যা ও সন্ত্রাসের মূলে কারা রয়েছে তা’ সহজেই অনুমেয়।

ওহাবী চিনার সহজ উপায়

১। তাহারা ঘন ঘন মাথা মুন্ডায়।

২। উচ্চস্বরে, সম্মিলিতভাবে দরূদ সালাম পড়ে না। শুধু প্রয়োজনে দুই একবার দরূদে ইব্রাহিমী পড়ে। মুলত: তারা মিলাদ ও কিয়ামের ঘোর বিরোধী। 

৩। আযানের পরে হাত তুলে মোনাজাত করে না।

৪। আযানে মুনাজাত/দোয়ায় “ওয়ার যুকনা শাফায়াতাহু ইয়াওমাল কিয়ামাহ্” বলে না।

৫। খাবার পর শোকরানা মোনাজাত করে না।

৬। কুরআন শরীফ পাঠান্তে “ওয়াসাদাকা রাসুলুহুন্নাবীউল কারীম” বলে না।

৭। হাট হাজারী পন্থী ওহাবীরা ফরজ নামাজের পর হাত উঠিয়ে মোনাজাত করে না। অবশ্য অন্যান্য ওহাবীরা ফরজ নামাজের পর সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করে।

৮। তাদের ওয়াজ নসিহতে নবী অলীর শান-মান ও মর্যাদার কোন আলোচনা স্থান পায় না।

৯। শ্লোগানে তারা শুধু “আল্লাহু আকবর” বলে, “নারায়ে রেসালাত – ইয়া রাসুলাল্লাহ” বলে না। কারন তাদের মতে “ইয়া-রাসুলাল্লাহ” বলা শিরক।

১০। দাফনের পর “কবরে তালকীন” করে না।

১১। জানাযার নামাজের পর তারা মুনাজাত করে না। পুরা জানাযার নামাজকেই তারা দোয়া মনে করে।

১২। হুজুর (ﷺ)-এর নাম মোবারক সম্মান সূচক শব্দ দ্বারা উল্লেখ করে না।

১৩। ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) রজনীতে, শ’বে বরাতের রজনীতে তাদেরকে মসজিদে পাওয়া যায় না।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদা

১। নবী করীম (ﷺ) নূর এর সৃষ্টি (যাতী বা সিফাতি এ’ নিয়ে বিতর্ক করা উচিত নয়)।

২। নবী করীম (ﷺ)-এর মা-বাবা – নাজী/মুক্ত/জান্নাতী।

৩। নবী-রাসুলগন (সমস্ত নবীগন) নিষ্পাপ।

৪। নবী করীম (ﷺ) শাফায়াতের অধিকারী/তিনি শফীউল মুজনবীন (গুনাহগারের শাফায়াতকারী)।

৫। মিলাদ ও কেয়াম জায়েয।

৬। হুজুুর (ﷺ) এবং আউলিয়া কেরামের উসিলা গ্রহন জায়েয।

৭। আল্লাহ্ তা’য়ালা হুজুর পুরনূর (ﷺ)-কে অফুরন্ত এলমে গায়েব আ’তা করেছেন।

৮। নবী করীম (ﷺ) আমাদের মত মানুষ নন।

৯। হুজুর (ﷺ) আখেরী নবী এবং তাঁর পরে আর কোন নবীর আগমন হবে না।

১০। নবী করীম (ﷺ) নাম উচ্চারিত হলে আদব দেখাতে হবে (সাল্লালাহু আলাইহিসালাম বলা, নখ চুম্বন (ইমাম দায়লামী (رحمة الله), কিতাব- আল মুসনাদুল ফেরদাউস) করা ইত্যাদি।

১১। হুজুর (ﷺ) হলেন হায়াতুন্নবী (ﷺ)। নিয়ত করে তাঁর রওজা যিয়ারত ও তাঁকে দাড়িয়ে সালাম জায়েয।

১২। হুজুর (ﷺ) হাজির-নাযির ।

১৩। ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন করা ও দাঁড়িয়ে সালাম করা উত্তম কাজ।

১৪। হুজুর (ﷺ)-এর মি’রাজ স্বশরীরে হয়েছে এবং শ’বে মি’রাজ উদযাপন জায়েয।

১৫। সাহাবায়ে কেরাম ও আহলে বাইয়েতের ব্যাপারে কোন বেয়াদবীপূর্ন আচরন করা যাবে না। তাঁরা সত্যের মাপ-কাঠি।

১৬। মোনাজাত-০৫ ওয়াক্ত নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করতে হবে। ইহা হাদীস সমর্থীত।

১৭। মাযার/কবর যিয়ারত মুস্তাহাব কাজ। ভাল কাজ। কবর যিয়ারতের নিয়তে বের হওয়া জায়েয।

১৮। তাসউক চর্চা করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং অপরিহার্য্য কাজ।

১৯। কারামতে আউলিয়া হক্ব।

২০। মাযহাবের অনুসরন অপরিহার্য্য।

২১। কদমবুচী জায়েয এবং হাদীস সমর্থীত।

২২। শ’বে বরাত উদযাপন জায়েজ এবং ঐ রাত্রের এবাদত অত্যন্ত বরকতময়।

বর্তমান যুগে কিছু অল্প বয়স্ক ও স্বল্প শিক্ষীত মানুষ উপরোক্ত আক্বীদা সমূহকে শুধু অস্বীকারই করেনা, বরং এ’সমস্ত আক্বীদায় বিশ্বাসী মুরুব্বিগণের বিরুদ্ধে মারাত্বক কুৎসা রটনা করছে ও মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। এমনকি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের জীবিত অনুসারীদের হত্যার ফতোয়া দিচ্ছে। তাদের আক্রমন থেকে ইমামে আযম আবু হানিফা (رحمة الله) ও বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী (رحمة الله) পর্যন্ত বাদ পড়েননি। এ প্রসঙ্গে রাসুল (ﷺ)-এর একখানা হাদীস স্মরন করা যেতে পারে। যখন স্বল্প শিক্ষিত লোকজন কুরআন-হাদীসের সাথে সামঞ্জস্যহীন নতুন নতুন চিন্তা-চেতনার অবতারনা করবে, তখন তার পরিনতিতে পৃথিবীতে রক্তিম ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, ভুমিধস, আকাশ থেকে প্রস্তর নিক্ষেপ ইত্যাদি আযাব উপর্যুপরি আসতে থাকবে। যে সমস্ত বদ আক্বীদার কারণে এমন সব আযাব আসবে তার সংখ্যা হাদীস শরীফ অনুযায়ী মোট ১৫টি। তন্মধ্যে শেষোক্তটি হলোঃ-

“উম্মতের নবীনরা প্রবীনদেরকে অভিশপ্ত করবে।” (তিরমিযী শরিফ)

মুক্তির পথ বেছে নিন

দয়াল নবী (ﷺ)-এর বানী – এই উম্মত ৭৩ ফিরকায় (দলে) বিভক্ত হবে, তন্মধ্যে একটি হবে জান্নাতী আর বাকীরা জাহান্নামী। আর আল্লাহর ঘোষনা- প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ লইয়া উৎফুল্ল থাকিবে (সূরা-২৩ (মু’মিনুন); আয়াত: ৫৩ এবং সূরা-৩০ (রূম); আয়াত: ৩২)। 

আল্লাহ্ আরো বলেন- প্রত্যেক জাতির জন্য তাদের কার্যকলাপ সুশোভন করিয়াছেন। তাছাড়া আল্লাহ তা’য়ালা হাশরের মাঠে প্রত্যেককে তাদের নেতাদের (ইমামদের) সাথে ডাকবেন। এই যদি হয় অবস্থা- তা’ হলে দুনিয়ার সব চাইতে মূল্যবান সম্পদ ‘ঈমান-আক্বীদা’, ইহার সঠিক নির্বাচন ও অনুসরন কি আমাদের জন্য অপরিহার্য্য নয়? এই বিষয়ে প্রত্যেকের একবার ভেবে দেখা উচিত-যদি তার গৃহিত/অনুসৃত পথ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর পছন্দনীয় পথ না হয় তবে তার পরিনতি কি হবে? তাই আসুন দ্বীনের সঠিক পথটি নিজের জন্য নির্বাচন করি। কাজটি কিন্তু অত সহজ নয়। তবে আল্লাহ্ যার প্রতি সহায় হন তার জন্য ইহা কঠিনও নয়। নাবিক পথ চলে বাতিঘরের আলো বা জিপিএস-এর অনুসরনে। আর দ্বীনের পথ চলার জন্য সাহাবায়ে কেরাম, চার তরিকার চার ইমাম, চার মাযহাবের চার ইমাম, আল্লামা জালালউদ্দিন রুমী (رحمة الله), ইমাম গাজ্জালী (رحمة الله), হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (رحمة الله), হযরত শাহজালাল (رحمة الله), হযরত জোনায়েদ বাগদাদী (رحمة الله), হযরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া (رحمة الله), হযরত শেখ ফরিদ (رحمة الله), হযরত জুন্নুন মিসরী (رحمة الله), হযরত জালাল উদ্দিন সূয়তী (رحمة الله), ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (رحمة الله), হযরত আবদুল হক মোহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله)-এরা কি হতে পারেন না আমাদের পথের দিশারী-ঈমানের বাতিঘর? উল্লেখ্য, এরা সবাই ছিলেন কোন না কোন মাযহাবের এবং কোন না কোন তরিকতের অনুসারী। এরাই হলেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী এবং এদের দলই হলো জান্নাতী দল।

হাদীসে আছে, ‘আমার উম্মত (কখনো) ভ্রষ্ঠতার উপর ঐক্যমত হবে না।’ তাই পূর্বকার ইমামদের ইজতেহাদী রায় এবং স্বর্বজন কর্তৃক স্বীকৃত ও অনুসরণকৃত আমল সমূহ ইজমায়ে উম্মত হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। আর এ সকল প্রতিষ্ঠিত আমল পরিহার বা অস্বীকার করা গোমরাহী ও বদনসিবী। অন্য হাদীসে আছে, ‘আমার উম্মত যে কাজকে উত্তম বিবেচনা করে, আল্লাহ্ তা’য়ালাও তা উত্তম বলে বিবেচনা করেন’ (মুসনাদে আবি দাউদ ত্বয়ালসী)।

অর্থাৎ মুসলমানগন যে কাজকে পছন্দ করে, আল্লাহর নিকটও তা পছন্দনীয়। তাই আল্লাহ্ এই উম্মতের পূর্ববর্তী জামানার যেই সকল আমলকে পছন্দ করেছেন, পরবর্তী জামানায় এসে তা অপছন্দ করবেন- এমনটা হতে পারে না। হাদীস হতে আরো জানা যায়, ‘সর্বোত্তম যুগ ছিল হুজুর (ﷺ)-এর যুগ। তারপর সাহাবাদের যুগ, তারপর তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীদের যুগ।’ ইহাকে বলা হয় উত্তম জামানা (খায়রুল কুরুন)। এই হাদীসের আলোকে পূর্ববর্তী যুগ বর্তমান যুগের চাইতে অধিক আলোকময়। তাই উত্তম যুগের (খায়রুল কুরুনের) প্রতিষ্ঠিত ও স্বীকৃত আমল ও আক্বীদা কিছুতেই এই যুগে এসে পরিহার বা বাতিল হতে পারে না। তা’ছাড়া উত্তম যুগের ওলামাগন এই যুগের ওলামাদের চাইতে উত্তম ও অধিকতর আলোকিত ছিলেন। এ কথাগুলো আমাদের স্মরণ রাখা উচিত।

মুসলিম উম্মাহর বাতিল পন্থীদের মধ্যে আক্বিদাগত বিভক্তির তিনটি কুফল কম বেশী বিদ্যমান। 

প্রথমতঃ তাদের নিজেদের জন্য ইহা ঈমান বিনষ্টকারী। 

দ্বিতীয়তঃ অনেক ক্ষেত্রে ইহা রাষ্ট্রদ্রোহী রূপ ধারন করে। 

তৃতীয়তঃ অধিকাংশ বাতিল পন্থীরা উম্মাহর অন্যদেরে মুসলমানই মনে করে না এবং অনেকে আবার অন্য মুসলমানদের জান-মালকে নিজেদের জন্য হালাল মনে করে। প্রথম কুফলের কারনে তারা নিজেরাই ধ্বংসের পথে এগুচ্ছে। আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় কুফলের কারনে তারা দেশকে ফেৎনা, আরজকতা ও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যার পরিনিতিতে আজ আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ম এবং দেশের মানুষের ঈমান-আমল, দু’টি বিষয়ই মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। ইহাই অত্যন্ত ভয়াবহ ভীতিকর।

নতুন-পুরাতন বাতিল ফিরকার প্রবর্তক ও অনুসারীগণ, যাদের ঈমান-আক্বীদা বিতর্কীত, নবী বিদ্বেষী, নবীর শানকে খর্ব করার জন্য সদা সচেষ্ট, বিধর্মীদের মদদপুষ্ট, নতুন নতুন ফেৎনা সৃষ্টিকারী, জনজীবনে সন্ত্রাস ও তান্ডব সৃষ্টিকারী, কোরআন-হাদীস-ইজমা-কেয়াস সমর্থিত অনেক প্রচলিত আমল আক্বীদাকে বেদআত,শিরক,কুফর আখ্যা প্রদানকারী, নতুন নতুন বেদআতী মতাদর্শের প্রচারকারী- এদের মত ও পথ থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে। গুপ্তহত্যা, গলাকাটা, রগকাটা, ভাংচুর, জ্বালাও-পোড়াও, বোমাবাজী ইত্যাদি আর যাই হউক ইসলামী কর্মকান্ড নয় এবং এ’গুলি ইসলামের রীতিনীতি বহির্ভূত কাজ। 

দেশকে ভালবাসা, দেশকে রক্ষা করা, দেশের মানুষের জানমালের হেফাজত করা, দেশের শত্রুকে প্রতিহত করা ইত্যাদি হলো ঈমানী দ্বায়িত্ব। তাই যারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে, দেশের মানুষকে ঢালাওভাবে নাস্তিকতার অপবাদ দেয়, কাফের বেদআতী ফতোয়া দেয়, দেশে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে, নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করে, ভিন্ন ধর্মের মানুষকে ও ভিন্ন মতের মুসলমানদিগকে নির্বিচারে হত্যা করে, তাদের এবং তাদের অনুসারীদের সকলে মিলে প্রতিহত করতে হবে। কারন এ’দের দ্বারা আজ আমাদের দেশ ও ধর্ম দু’টাই মারাত্বক হুমকির সম্মুখিন। তাই সকলের প্রতি বিনীত আহবান, আসুন আমরা সঠিক ও হক্কানী ঈমানী পথ, নাজাতের পথ, মুক্তির পথ, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পথ, রাসুল (ﷺ)-এর গোলামীর পথ বেছে নেই এবং সকলে মিলে গোমরাহ, ধর্মান্ধ, দেশদ্রোহীদের প্রতিহত করি এবং এদের হাত থেকে দেশ ও ধর্মকে রক্ষা করি। আল্লাহ্ আমাদের সহায় হউন। আমীন।

 সমাপ্ত 

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment