স্ত্রী খারাপ ব্যবহার বা আচরণ করলে স্বামীর কি করনীয় ও বর্জনীয় তা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো । সুখময় দাম্পত্য জীবন উপভোগ করতে এ বিষয়গুলি জানা অত্যন্ত জরুরি ।
স্ত্রী যদি স্বামীর সাথে খারাপ আচরণ করে বা দুর ব্যবহার করে, অনেক স্বামী নিজের স্ত্রীকে মারধর করে,বকাবকি করে ঠান্ডা করতে চায় । বাস্তব সত্য এটাই যে স্ত্রীকে কখনোই মারধর করে ঠান্ডা/অয়িত্বে করা যায় না ।
এ প্রসঙ্গে নবী (সাঃ) বলেছেন, ’’তোমরা স্ত্রীদের জন্য মঙ্গলকামী হও। কারণ নারীকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়ের সবচেয়ে বেশী বাঁকা হল তার উপরের অংশ। যদি তুমি এটাকে সোজা করতে চাও, তাহলে ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তাকে ছেড়ে দাও তাহলে তো বাঁকাই থাকবে। তাই তোমরা নারীদের জন্য মঙ্গলকামী হও।’’ (বুখারী ৩৩৩১)
স্ত্রী খারাপ আচরণ করলে একজন স্বামী খুব ঠান্ডা মাথায় ৫টি কাজ করবে ।
- কারণ খুঁজে বের করবে:
- স্ত্রীর প্রতি ঘৃণা করা বর্জন করবে:
- ইনসাফ করবে:
- মাথা ঠান্ডা রাখবে:
- স্ত্রীর প্রয়োজন মেটাবে:
এগুলো পালন করলে স্বামী-স্ত্রীরমধ্যে কার সম্পর্ক ভালো থাকবে । ইনশাল্লাহ
(১) কারণ খুঁজে বের করবে:
স্ত্রী দুর্ব্যবহার করছে কেন, একজন স্বামীর প্রথম দায়িত্ব হল তার কারণ খুঁজে বের করা । তারপর দুজনের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সেগুলোর সমাধান করা । যদি নিরপেক্ষ দৃষ্টি নিয়ে সঠিক কারণ খুঁজে বের করতে পারেন এবং তার সমাধান করতে পারেন,তাহলে দুজনের মধ্যেকার সম্পর্ক ভালো থাকবে এবং স্ত্রী আপনার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে ।
(২) স্ত্রীর প্রতি ঘৃণা করা বর্জন করতে হবে:
বর্তমানে সমাজে একটি বড় সমস্যা খুব বেশি দেখা যাচ্ছে তা হল, ছেলেরা নিজের পছন্দমত বিয়ে করছে ঠিকই কিন্তু বিয়ের কয়েক বছর পর স্ত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে শুরু করছে, তোমার চরিত্র ভালো না, তোমার নাক চ্যাপ্টা, তুমি নোংরা, কথা বলতে জানো না, ইত্যাদি পেট বানানো বহু দোষ ত্রুটি বের করে সংসারে আগুন লাগাচ্ছে । এগুলো চরম অন্যায়। যদি শরীরের রং কালোও হয়ে থাকে তবুও তাকে ভালবাসতে হবে, কারণ আপনি নিজের পছন্দে অথবা পরিবারে পছন্দে বিয়ে করেছেন । এখানে সেই নারীর কোন দোষ নেই ।
মনে রাখবেন যকি ভাগ্যের উপর বিশ্বাস রেখে,আল্লাহ তায়ালার সন্তষ্টি লাভের আশায় স্ত্রীকে মন থেকে ভালোবাসতে পারেন তাহলে তার মাধ্যমে আল্লাহ আপনাকে অনেক কল্যাণ দান করবেন ।
হাদীস শরীফের মধ্যে এসেছে । রাসুল (সাঃ) বলেছেন, কোন মুমিন পুরুষ স্ত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করবে না । স্ত্রীর দু একটা অভ্যাস ভালো না লাগলেও তার অনেক ভালো গুন আছে । যা পুরুষের জীবনে কল্যাণ বয়ে আনে (মুসলিম)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “কোন মুমিন স্বামী যেন মুমিন স্ত্রীকে ঘৃণা না করে। যদি তার কোন একটি আচরণ অপছন্দনীয় হয় অন্য আরেকটি আচরণ সন্তোষজনক হবে।” সহিহ মুসলিমে (১৪৬৯)
ইতিহাস আজও সাক্ষী আছে অনেক কালো কালো মায়ের গর্ভ থেকে বড় বড় আল্লাহর অলি জন্মগ্রহণ করেছেন । আবার অনেক সুন্দরী নারীর গর্ভ থেকে জন্ম লাভ করেছে কুখ্যাত শয়তান, দুষ্টু, মদ্যপায়ী, ব্যভিচারী, চোর ডাকাত গুন্ডা ।
অতএব স্ত্রীকে কখনোই মন থেকে ঘৃনা করবেন না । একজন স্ত্রী এইসব দেখে দেখে যখন বিরক্ত হয়ে যায় তখন পাল্টা উত্তর দিতে শুরু করে এতে স্বামী কষ্ট পেয়ে যাই । ফলে স্বামীর প্রথম কর্তব্য হল স্ত্রী প্রতি ঘৃণা বর্জন করা ।
(৩) ইনসাফ করবে:
ইনসাফ করতে হলে নিজের দোষ গুলো কেও দোষ বলে ধরতে হবে । নিজের দোষ গুলোকে এড়িয়ে শুধু স্ত্রীর ওপর দোষারোপ করা ইনসাফ কারী ব্যক্তির পরিচয় নয় ।
স্ত্রীর হক সঠিকভাবে আদায় করতে হবে । নিজে যা পছন্দ করে স্ত্রীর জন্য পছন্দ করবে । তবে কিছু ক্ষেত্রে দুজনের পছন্দের পার্থক্য হতে পারে । তখন আলোচনার মাধ্যমে যেটা ভালো মনে হবে সেটা করবে । যদি স্বামী নিজের যাবতীয় প্রয়োজন মিটাই আর স্ত্রীর প্রয়োজন মেটাতে কৃপণতা করে তাহলে সেটা বে-ইনসাফি বলে গণ্য হবে । আর বে-ইনসাফি বন্ধ করতে হবে ।
(৪) মাথা ঠান্ডা রাখবে:
দেখবেন যাদের জ্ঞান বুদ্ধি একটু কম তারা ঝগড়া-বিবাদে দ্রুত জড়িয়ে পড়ে । ছোটখাটো কথাতে রেগে যায়, উত্তেজিত হয়ে যায় । কিন্তু যাদের জ্ঞান বুদ্ধি বেশি তারা ঠান্ডা মাথায় ভেবে চিন্তে কাজ করে । পৃথিবীর সকলেই জানে এমনকি বিজ্ঞান এটা প্রমাণ করেছে যে,ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মাথার মগজ কম থাকে । ফলে দ্রুত তাদের মাথা গরম হয়ে যায় । আবার একটু ভালোবাসা দিলে দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যায় ।
গরম হয়ে দু-এক কথা বললে স্বামী ঠান্ডা মাথায় সেটার সমাধান করবে । স্বামীও যদি উত্তেজিত হয়ে যায় তাহলে সংসার ভাঙতে সময় লাগবে না । স্বামী হল অভিভাবক আর অবিভাবকের দায়িত্ব হল ঠান্ডা মাথায় হিকমতের সঙ্গে কাজ করা ।
৫) স্ত্রীর প্রয়োজন মেটাবে:
একজন স্বামীর একটি বড় দায়িত্ব হল,তার সাধ্যমত স্ত্রীর সব চাওয়া-পাওয়া পূরণ করা । সাধারণভাবে জীবন যাপন করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন একজন স্বামী তা অবশ্যই পূরণ করবে । স্ত্রীর ভরণপোষণ ও তার চাওয়া পাওয়া পূরণ করার দায়িত্ব স্বামীর উপর । কারণ সবকিছু ভেবেই তাকে বিবাহ করেছে । তবে স্বামীর সাধ্যের বাইরে খুব বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত স্ত্রী কিছু চাইবে না । স্বামীর উপার্জনের কথা একজন স্ত্রীকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে ।
সংসার জীবনে স্বামীর নিজের দায়িত্ব আগ্রহের সাথে পালন করবে, সমস্যা হলে কারণ খুঁজে বের করে সমাধান করবে । স্ত্রী রাগ করলে বা খারাপ ব্যবহার করলে একজন স্বামী এ সমস্ত পদ্ধতিগুলি প্রয়োগ করে দেখতে পারে । ইনশাল্লাহ ফল পাবে ।