সুলতান মুহাম্মদ ফাতেহ’র কন্সট্যান্টিনোপল বিজয়াভিজান

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

২৯ মে, ১৪৫৩ সুলতান মুহাম্মদ ফাতেহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) কন্সট্যান্টিনোপল জয় করেন

খিলাফতে উসমানিয়া

ইংরেজী তেরশত শতকের প্রারম্ভে মোঙ্গলরা প্রবলভাবে মুসলিম উম্মাহকে তছনছ করতে উঠে-পড়ে লাগে। বাগদাদসহ মধ্য এশিয়া থেকে শুরু করে খোরাসান এবং আনাতোলিয়া পর্যন্ত সকল বড় বড় মুসলিম অধ্যুষিত শহর মোঙ্গল আক্রমণের তোড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।  কিন্তু কে-ই বা ধারনা করতে পেরেছিল যে মাত্র অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইচ্ছায় এই মৃতপ্রায় মুসলিম সভ্যতা আবার জেগে উঠবে এবং এমন এক শানদার সভ্যতা গড়ে তুলবে যা স্বীয় মহিমায় সমগ্র জগতে কিয়ামত পর্যন্ত দ্যুতি ছড়াবে।  

বহু মোঙ্গল এসময় ইসলাম গ্রহণ করে যদিও মোঙ্গলদের একটা বড় অংশ তখনও উম্মাহর জনা বিরাট সমস্যা তৈরী করে চলেছিল।  এমনকি ইসলাম গ্রহণ করার পরও তাদের মধ্যে প্রচণ্ড অসিষ্ণুতা, নিষ্ঠুরতা, বর্বরতা ও পাপাচারী মনোভাব থেকে গিয়েছিল।  তখনও তারা ইসলামী তাহজীব-তামাদ্দুন থেকে দূরে সরে ছিলো।   কিন্তু তখন-ই এক আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে।

মোঙ্গল আক্রমণে হতবুদ্ধি এক তুর্কিগোত্র খোরাসান, পারস্য ও অন্যান্য স্থানে স্থায়ী আবাসের আশায় ঘুরে ফিরছিলো।  তারা সেলজুক সুলতান আলাউদ্দীন সেলজুকের সাম্রাজ্যে প্রবেশ করবে বলে ঠিক করে।যখন এই ক্ষুদ্র তুর্কিগোত্র সেলজুক সাম্রাজ্যে প্রবেশ করে, তারা এক শোচনীয় যুদ্ধের সামনে পড়ে যায়।একটি ছোট সৈন্যদল এক বিশাল সৈন্যদলের সাথে যুদ্ধে ব্যতিব্যস্ত ছিলো এবং ছোট সৈন্যদলটি পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলো। ইসলামী আধ্যাত্মিকতা এবং মূল্যবোধে বলীয়ান তুর্কি গোত্রটি ক্ষুদ্র সৈন্যদলটিকে সাহায্য করবে বলে মনস্থির করে।তারা প্রাণপণে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। এহেন আকস্মিক সাহায্য পেয়ে ক্ষুদ্র সৈন্যদলটি বিশাল সৈন্যদলটিকে পরাস্ত করে। বিশাল সৈন্যদলটির যোদ্ধারা অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রেই নিহত হয়, অনেকেই পালিয়ে যায়।যুদ্ধ শেষে তুর্কি গোত্রটি জানতে পারে যে, তারা যে ক্ষুদ্র সৈন্যদলটিকে সাহায্য করেছে, তারা ছিলো সেলজুক সুলতান আলাউদ্দীন সেলজুকের সেনাবাহিনী যার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন সুলতান স্বয়ং এবং তারা মোঙ্গলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ছিলেন। 

সুলতান আলাউদ্দীন সেলজুক এই তুর্কি গোত্রটির প্রতি এতোটাই সন্তুষ্ট হন যে, তিনি তাদের নিজ সাম্রাজ্যে নিয়ে আসেন এবং সাম্রাজ্যের বিরাট এক প্রদেশের শাসনকর্তা হিসেবে তাদের নিযুক্ত করেন।যে তুর্কি গোত্রটি স্থায়ী আবাসের আশায় এশিয়া ছেড়ে এসেছিল তারা নিজস্ব আবাসস্থল পেলো এমনকি সেলজুক সালতানাতের নিজেদের প্রদেশের শাসনকর্তা হয়ে গেলো। সুলতান আলাউদ্দীন সেলজুকের ইনতিকালের পর এই তুর্কি গোত্রটি সমগ্র সালতানাতের শাসনভার গ্রহণ করে এবং গোত্রটির এক ব্যক্তি উসমানের নামানুসারে এক নতুন সালতানাতের গোড়াপত্তন করে যা ইসলামের শত্রুদের ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং পরবর্তী প্রায় ছয়শত বছর মুসলিম উম্মাহর ইজ্জত-আব্রুকে সুরক্ষা প্রদান করে।আর এই সালতানাতকে আ’লে উসমান বা খিলাফতে উসমানিয়া বা অটোমান নামে আজও স্মরণ করাহয়।

ক্রুসেড

খোলাফায়ে রাশেদীন থেকে শুরু করে ইংরেজী চৌদ্দশত শতাব্দী পর্যন্ত যতো ক্রুসেড সংঘটিত হয়, সবগুলোতেই খ্রিস্টান ক্রুসেডারগণ মুসলিম ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে কনস্টান্টিনোপল ব্যবহার করে এবং শাম(সিরিয়া)ও আনাতোলিয়ায় মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। আ’লে উসমান বা খিলাফতে উসমানিয়া(Usmania/Osmania) প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ইতিহাসে প্রথমবারের মত পাল্টা আক্রমণের সূচনা হয়। এরপর বাইজেন্টাইনরা আর কখনও মুসলিম ভূখণ্ডে আক্রমণ চালাতে পারেনি বরং মুসলমানরা বাইজেন্টাইন হামলা চালালেন। 

মুসলমানরা কন্সট্যান্টিনোপল জয় করেন এবং সমগ্র পূর্ব ইউরোপ মুসলমানদের কব্জায় চলে আসে। খিলাফতে উসমানিয়া প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলের সকল প্রদেশ ও এশিয়ায় তাদের সকল দূর্গ উসমানিয়দের হস্তগত হয়।কিন্ত ইউরোপীয় অংশে মুসলিমগণ কোন এলাকা বা দূর্গ কব্জা করতে পারছিলেন না।  ১৩৪৭ ঈসায়ী সনে মুসলিমগণ প্রথম এশিয়া হতে সমুদ্রপথে ইউরোপে পৌঁছান ও গেলিপোলিতে অবতরণ করে তাঁদের প্রথম দূর্গ নির্মাণ করেন। 

১৩৪৭ ঈসায়ী সনে মুসলিমগণের ইউরোপে প্রবেশ ইতিহাসের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।  আমরা যদি ওই সময়কালের প্রতি দৃষ্টিপাত করি, তাহলে অনুধাবন করতে পারব যে, এটা এমন এক সময় যখন স্পেন মুসলমানদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল, মুসলিম সালতানাতসমূহ ক্রমশ দুর্বল হয়ে যাচ্ছিল আর খ্রিস্টানরা ধীরে ধীরে মুসলমানদেরকে ইবেরিয়ান পেনিনসুলা ও হিস্পনিয়া থেকে আফ্রিকার দিকে তাড়িয়ে দিতে চাইছিলো। স্পেনে শেষ মুসলিম সালতানাত গ্রানাডা অস্তিতের লড়াইয়ে ব্যস্ত ছিলো। ওই দিনগুলোতে খ্রিস্টানদের মূল লক্ষ্য ছিলো মুসলমানদেরকে ইউরোপ থেকে বের করে দেয়া আর পোপ ও অন্যান্য খ্রিস্টান শাসকদের দৃষ্টি ইউরোপের পূর্বে নিবদ্ধ না হয়ে পশ্চিম ইউরোপের আন্দালুসিয়ার মুসলিম সালতানাতের প্রতি নিবদ্ধ ছিল। এটা ছিলো কুদরতের এক বিস্ময়কর লীলা যে, মুসলমানরা একই সময়ে যেমন স্পেন হতে বিতাড়িত হচ্ছিল তেমনি আবার আনাতোলিয়া দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করছিলো।

১৩৮৯ খৃস্টাব্দে তুর্কি উসমানিয়রা(Usman/Osman) তথা অটোমানরা (Ottoman)সুলতান মুরাদের নেতৃত্বে আলবেনিয়া আক্রমণ করেন, আলবেনিয়ায় কসভো যুদ্ধচলাকালীন সুলতান মুরাদ সার্ব বাহিনী কর্তৃক শহীদ হন এবং যুদ্ধক্ষেত্রেই সুলতান মুরাদের পুত্র বায়েজিদ ইয়ালদরম সালতানাতের শাসনভার গ্রহণ করেন।  বায়েজিদ ইয়ালদরম ছিলেন অত্যন্ত সাহসী সুলতান যিনি কুছতুনতুনিয়া তথা কন্সট্যান্টিনোপল ও সমগ্র ইউরোপ জয়ের জন্য মনস্থির করেন। তুর্কি ‘ইয়ালদরম’ শব্দের অর্থ ‘বজ্র’।তিনি এমনই তেজস্বী ব্যক্তি ছিলেন যে, জনগণই তাঁকে ‘ইয়ালদরম’ নামে অভিহিত করতো। ১৩৯৭ খৃস্টাব্দে তিনি এতটাই ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন যে কুছতুনতুনিয়া তথা কন্সট্যান্টিনোপল অবরোধ করেন এবং বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যান।কিন্তু কন্সট্যান্টিনোপলের খ্রিস্টান শাসক জিজিয়া কর দিতে সম্মত হয় ও বায়েজিদ ইয়ালদরমের নিকট আরও শপথ করে যে, তাঁকে না জানিয়ে কন্সট্যান্টিনোপলে নতুন কোন শাসনকর্তা কখনও নিয়োগ করবে না এবং এ বিষয়ে বায়েজিদ ইয়ালদরমের নিকট থেকে অনুমতি লাভ করে। এই শর্তাবলী বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক ছিলো যারা কিনা একসময় সমগ্র খ্রিস্টান জগতকে নেতৃত্ব দিয়েছিলো, এখন তারা এমন নাজুক পরিস্থিতিতে পতিত হল যে তাদের শাসকগণ মুসলমানদের অনুমতির মুখাপেক্ষী হয়ে পড়লো।

সুলতান বায়েজিদ ইয়ালদরম যখন কন্সট্যান্টিনোপল অবরোধ ও ইউরোপ জয়ের জন্য ব্যস্ত ছিলেন, তখন এক অপ্রত্যাশিত আপদ এসে তাঁকে লক্ষ্য অর্জনে বাঁধা দেয়। মধ্য এশিয়া থেকে তৈমুর লং নামের এক মুসলমান নামধারী শাসকের আবির্ভাব হয় যার তরবারি মুসলিম উম্মাহর-ই সবচেয়ে বেশী ক্ষতিসাধন করে। ১৪০২ খৃস্টাব্দে সুলতান বায়েজিদ ইয়ালদরম যখন কন্সট্যান্টিনোপল দ্বিতীয়বার অবরোধ করেন এবং বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যান, ওই সময় তৈমুর লং আনাতোলিয়াতে উসমানিয় সালতানাতে হামলা চালায়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সুলতান বায়েজিদ কন্সট্যান্টিনোপল অবরোধ প্রত্যাহার করে তৈমুর লং এর বিশাল বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন এবং আংকারা-তে পরাজিত ও বন্দী হন এবং বন্দী অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তৈমুর লং এর এহেন আহাম্মকীর কারণে মুসলমানগণ ইউরোপে খ্রিস্টানদের যে চাপের মুখে রেখেছিলো তা থেকে খ্রিস্টানরা রেহাই পেয়ে যায়। 

সুলতান বায়েজিদ ইয়ালদরম বন্দী অবস্থায় ইন্তেকালের পর অনেকেই মনে করতে শুরু করেন যে উসমানিয় সালতানাতের রবি অস্তমিত হলো বুঝি; কিন্তু বিস্ময়করভাবে অল্প কয়েক বছরেই তা আবারো স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়। ১৪৫১ খৃস্টাব্দে উসমানীয় বংশধারা হতে এক সুলতান শাসনভার গ্রহণ করেন যাঁর নাম সুলতান মুহাম্মদ(১৪৩২-১৪৮১ খৃস্টাব্দ), যিনি পরবর্তীকালে কন্সট্যান্টিনোপল জয় করে ফাতেহ(ফাতাহ) নামে ভূষিত হন।

সুলতান মুহাম্মদ ফাতেহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)

তু্র্কী মুদ্রায় সুলতান মুহাম্মদ ফাতেহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)

উসমানী খিলাফতের সপ্তম খলীফা সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)ছিলেন একজন মুজাহিদ সুলতান,যাঁর মাধ্যমে নবীকারিম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)- এর একটি ভবিষ্যতবাণী বাস্তবায়িত হয়েছে। হযরত বিশর বিন সুহাইম(রাদিআল্লাহুআনহু) থেকে সে ভবিষ্যতবাণীটি বর্ণিত হয়েছে- 

 لتفتحن القسطنطنية فلنعم الأمير أميرها ولنعم الجيش ذلك الجيش

“নিশ্চয়ই তোমরা কুছতুনতুনিয়া (কন্সট্যান্টিনোপল তথা ইস্তাম্বুল) বিজয় করবে। তার আমীর উত্তম আমীর হবে এবং সেই বাহিনী উৎকৃষ্টতম সেনাবাহিনী হবে।”

 (মুসনাদে আহমদ ১৪:৩৩১# হাদীস : ১৮৮৫৯- সহীহ রেওয়ায়েত-হামজা আল জাঈন; মুসতাদরাকে হাকেম ৪:৪২১-৪২২# হাদীস:৮৩৪৯- সহীহ রেওয়ায়েত-দাহাবী; তাবারানী,মুজাম আল  কাবীর ২:৩৪# হাদীস: ১২১৬- সহীহ রেওয়ায়েত- আল হাইতামী; বুখারী, আল তারিখ আল কাবীর ২:৮১ এবং আল সগীর ১:৩০৬; সুয়ুতি, আল জামী আল সগীর) 

১৬ই মুহরম ৮৫৫ হিজরী মোতাবেক ১৮ ফেব্রুয়ারী ১৪৫১ খৃস্টাব্দে সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) উসমানী খিলাফতের দায়িত্বগ্রহণ করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর,কিন্তু অসম সাহস,অতুলনীয় প্রজ্ঞা, নিপুণ রণকৌশল ও গভীর ঈমানী জযবায় অল্প সময়েই তিনি তাঁর পূর্বসূরীদের ছাড়িয়ে যান। মাত্র ২৪ বছর বয়সে তিনি বাইজেন্টাইন সম্রাজ্যের রাজধানী কন্সট্যান্টিনোপল জয় করেন। তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর খিলাফত পরিচালনা করেন। তাঁর শাসনামলে যেমন ইসলামের বিজয়াভিজানে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছিল তেমনি সকল শ্রেণীর ও ধর্মের মানুষ ন্যায়বিচার, জান-মালের নিরাপত্তা এবং ধর্মীয় ও মানবিক অধিকার লাভ করেছিল। প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল ইসলামী শাসন ব্যবস্থার সুফল।

সুলতান মুহাম্মদ ফাতেহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)’র পবিত্র মাজার শরীফ,ইস্তাম্বুল

সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ(রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর শাসনামল বিভিন্ন দিক থেকে বৈশিষ্ট্য মন্ডিত। তবে যা তাঁকে উম্মাহর হৃদয়ে অমর করে রেখেছে তা হলো কন্সট্যান্টিনোপল বিজয়।   ধর্মীয়,রাজনৈতিক ও ভৌগলিক দিক থেকে কন্সট্যান্টিনোপল ছিল পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর। খৃস্টীয় তৃতীয় শতক থেকেই তা ছিল বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণনগরী। কন্সট্যান্টিনোপল নগরীর তিন দিকে জল,একদিকে স্থল। পশ্চিমে বসফরাসপ্রণালী,দক্ষিণে গোল্ডেন হর্ণ ও উত্তরে মারমারা উপসাগর।  তাই ভৌগলিক অবস্থানের কারণে একে তখন বিশ্বের সুরক্ষিত নগরীগুলোর মধ্যে গণ্য করা হত। 

এছাড়া নগরীর প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থাও ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী।গোটা নগরীর চারপাশে ছিল একাধিক দুর্ভেদ্য প্রাচীর ও সার্বক্ষণিক সশস্ত্র প্রহরা।  এ সব কারণে কন্সট্যান্টিনোপল ছিল সে বিচারে এক অজেয় দুর্গ। কন্সট্যান্টিনোপল জয়ের জন্য সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) তৎকালীন বিশ্বের সর্বাধুনিক রণপ্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন। সে সময়ের সবচেয়ে দূরপাল্লার কামান তিনিই তৈরি করেছিলেন। প্রস্তুতি সমাপ্ত করার পর সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) অভিযান আরম্ভ করেন।তার স্থল বাহিনী নগরীর পূর্ব দিকে অবস্থান নিল এবং নৌবাহিনীর জাহাজগুলো বসফরাস প্রণালীতে ছড়িয়ে পড়ল।কিন্তু বসফরাস প্রণালী থেকে ‘গোল্ডেন হর্ণে’ প্রবেশ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না।কেননা গোল্ডেন হর্নের মুখ শিকলদ্বারা বন্ধ করা দেওয়া হয়েছিল এবং বাইজেন্টাইন রণতরীগুলো সেখানে অবস্থান নিয়ে গোলা নিক্ষেপ করছিল।

সুলতান মুহাম্মদ ফাতেহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) কর্তৃক ব্যবহৃত সে সময়ের সবচেয়ে দূরপাল্লার কামান                

প্রচন্ড যুদ্ধের পরও উসমানী নৌবহর গোল্ডেন হর্ন পদানত করতে সক্ষম হল না।   অন্যদিকে বন্দর সুরক্ষিত থাকায় বাইজেন্টাইন বাহিনী তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল পূর্বদিকে,সুলতানের স্থল বাহিনীকে মোকাবেলাকরার জন্য। তাই তাদের শক্তিকে বিভক্ত করার জন্য এবং দুই দিক থেকে একযোগে আক্রমণ করার জন্য উসমানী নৌবহরের গোল্ডেন হর্নে প্রবেশ করা ছিল অপরিহার্য। প্রায় দুই সপ্তাহ অবিরামযুদ্ধের পরও নৌপথে বিজয়ের কোন লক্ষণ দেখা গেল না।  অবশেষে সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) এমন এক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, যা পৃথিবীর যুদ্ধেরইতিহাসে একমাত্র বিরল ও বিস্ময়কর ঘটনা হয়ে আছে। পাশ্চাত্যের কট্টর ঐতিহাসিকরা পর্যন্ত এ ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ না করে পারেনি। গিবনের মত ঐতিহাহিকও একে ‘মিরাকল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ(রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) মুজাহিদদের আদেশ দিলেন রণতরীগুলো ডাঙ্গায় তুলে দশ মাইল পথ অতিক্রম করে গোল্ডেন হর্নে নামাতে হবে, এই দীর্ঘ পথ পুরোটাই ছিল পাহাড়ী উঁচু-নিচু ভূমি। এর উপর দিয়ে সত্তরটি রণতরী টেনে নেয়া ছিল এক কথায় অসম্ভব। সুলতানের সকল সামরিক উপদেষ্টা ও সেনাপতি প্রথমে একে উন্মত্ততা মনে করলেন। কিন্তু সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ(রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) যিনি স্বপ্নে নবীকারিম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)- এর প্রিয় সাহাবী হযরত আবু আইউব আনসারী (রাদিআল্লাহুআনহু) এর কাছে থকে কন্সট্যান্টিনোপল জয়ের সুসংবাদ পেয়েছিলেন, তিনি এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন।

পুরো পথে কাঠের পাঠাতন বিছানো হল, তাতে চর্বি মাখিয়ে পিচ্ছিল করা হল এবং এর উপর দিয়ে রণতরীগুলো টেনে নিয়ে যাওয়া হল।এভাবে টিলা ও পাহাড়ের উপর দিয়ে রাতের মধ্যে সত্তরটি রণতরী তিনি গোল্ডেন হর্ণেপ্রবেশ করাতে সক্ষম হলেন। সত্তরটি জাহাজের এই মিছিল সারারাত্রি মশালের আলোতে ভ্রমণ করতে থাকে। বাইজেণ্টাইন সৈন্যরা কন্সট্যান্টিপোলের প্রাচীর থেকে বসফরাসের পশ্চিমতীরে মশালের দৌড়াদৌড়ি লক্ষ্য করে।কিন্তু অন্ধকারের কারণে কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি।  

অবশেষে ভোরের আলোয় যখন রহস্যের পর্দা উন্মোচন করে দেয়, ততক্ষণে সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)-র সত্তরটি রণতরী ও ভারী তোপখানা গোল্ডেন হর্নের উপরাংশে পৌঁছে গেছে। গোল্ডেন হর্নের মুখে প্রহরারত বাইজেন্টাইন নৌ সেনারা বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে দেখল যে, উসমানী রণতরীগুলো মৃত্যুদূতের মতো তাদের পিছন দিক থেকে ধেয়ে আসছে।  এই ঘটনা ত্থেকেএকটি প্রবাদ তৈরিহলঃ”যখন পানির জাহাজ ডাঙ্গায় চলবে তখন বুঝবে কন্সট্যান্টিনোপলের পতন অত্যাসন্ন।”

চূড়ান্ত আক্রমণের আগে সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ(রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)বাইজেন্টাইন সম্রাট কন্সট্যানটাইনকে নগরী সমর্পণের পয়গাম পাঠালেন এবং নগরবাসীর জানমালের পূর্ণ নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিলেন, কিন্তু সম্রাট তা গ্রহণ করলেন না। এবার সুলতান চূড়ান্ত আক্রমণের প্রস্তুতি নিলেন। ঐতিহাসিকগণ লেখেন,আক্রমণের আগে সুলতান ফাতেহ মুহাম্মাদ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বাহিনীর অধিনায়কদের তলব করে সকল মুজাহিদকে এই পয়গাম পৌঁছে দেওয়ার আদেশ করলেন যে, কন্সট্যান্টিনোপলের বিজয় সম্পন্ন হলে নবীকারিম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর একটি ভবিষ্যতবাণী সত্য হবে এবং তাঁর একটি মুজিজা প্রকাশিত হবে।  অতএব কারো মাধ্যমে যেন শরীয়াতের কোন বিধান লঙ্ঘিত না হয়।  গীর্জা ও উপসানালয়গুলোর যেন অসম্মান না করা হয়,পাদ্রী,মহিলা,শিশু এবং অক্ষম লোকদের যেন কোন ধরনের কষ্ট না দেওয়া হয়।

৮৫৭ হিজরীর ২০ জুমাদাল উলার রজনী মুজাহিদগণ দোআ ও ইবাদাতের মধ্যে অতিবাহিত করেন।ফজরের নামাজের পর সুলতান চূড়ান্ত আক্রমণের আদেশ দিলেন এবং ঘোষণা করলেন যে,”ইনশাআল্লাহ আমরা যোহরের নামাজ সেন্ট সুফিয়ার গীর্জায় তথা আয়া সোফিয়ায় আদায় করব।” দ্বিপ্রহর পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে ভীষণ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলতে থাকে।কিন্তু মুসলিম বাহিনীর অসাধারণ বীরত্ব সত্বেও একটি মুসলিম সৈন্যও শহরে প্রবেশ করতে পারেনি।  অবশেষে সুলতান তার বিশেষ বাহিনীকে সাথে করে সেন্ট রোমান্সএর ফটকের দিকে অগ্রসর হন। বিশেষ বাহিনীর প্রধান হাসান তার ত্রিশজন বীর সঙ্গীকে সাথে করে প্রাচীরের উপর আরোহণ করেন।  হাসান ও তার আঠার সাথীকে প্রাচীর থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। তারা শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন।অবশিষ্ট বারোজন প্রাচীরের উপর দৃঢ় অবস্থান করতে সক্ষম হন।  তারপর উসমানী বাহিনীর অন্যান্য দলও একের পর এক প্রাচীরে আরোহণ করতে সক্ষম হন। এমনিভাবে কন্সট্যান্টিনোপলের প্রাচীরে চন্দ্রখচিত লাল পতাকা উড়িয়ে দেয়া হয়।

বাইজেন্টাইন সম্রাট কন্সট্যানটাইন এতক্ষণ পরিস্থিতি মোকাবেলা করছিল।কিন্তু সে তার কিছু বীর যোদ্ধার সাহস হারানোর পর নিরাশ হয়ে পড়ে।সে উচ্চস্বরে বলে-“এমন কোন খৃস্টান নেই কি, যে আমাকে খুন করবে !”কিন্তু তার আহ্বানে সাড়া না পেয়ে সে রোম সম্রাটের(কায়সারদের) বিশেষ পোশাক খুলে দূরে নিক্ষেপ করে,উসমানী সেনাবাহিনীর উন্মত্ত তরঙ্গের মধ্যে প্রবেশ করে নিহত হয়।  তার মৃত্যুতে ১১০০ বছরের বাইজেন্টানের সেই রোম সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি ঘটে, যার সূচনা হয়েছিল প্রথম কন্সট্যানটাইনের হাতে এবং বিলুপ্তও হল আরেক কন্সট্যানটাইনের হাতে। তারপর থেকে কায়সায় উপাধিই ইতিহাসের উপখ্যানে পরিণত হয়ে যায়। 

এভাবে  ইহ-পরকালের সর্দার নবীকারিম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এই বাণী সত্য প্রমাণিত হয়-“কায়সারের ধ্বংসের পর আর কোন কায়সার জন্ম নিবে না।” প্রকৃতপক্ষে নবীকারিম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ইলমে গাইবকে ইসলামী আক্বিদার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দৃঢ় বিশ্বাস রাখায় সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)- এর পক্ষে কন্সট্যান্টিনোপল জয় সম্ভব হয়েছিলো। এরপরও যেসব মুসলিম নামধারীরা হায়াতুন্নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ইলমে গাইবকে অস্বীকার করে, তারা নিঃসন্দেহে মুসলিম উম্মাহর শত্রু, ঈমানহারা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইলমে গাইব “জ্বাতী” অর্থাৎ স্বত্তাগত অপরদিকে হায়াতুন্নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ইলমে গাইব “আত্বায়ী” তথা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রদত্ত।সুতরাং যারা জেনেশুনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রদত্ত হায়াতুন্নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ইলমে গাইবকে অস্বীকার করে, তারা অবশ্যই আর কোন বিচার-বিবেচনা ছাড়াই ইসলামের গণ্ডী হতে বহিষ্কৃত।

আল্লাহ তাআলা তাঁর মুজাহিদ বান্দা সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)-র কথাকে সত্য্ করেছেন।  জোহরের সময় সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বিজয়ীর বেশে কন্সট্যান্টিনোপল নগরীতে প্রবেশ করেন। অর্থাৎ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ কৃপায় ওলী-আল্লাহগণের মুখনিঃসৃত ভবিষ্যতবাণীও সত্যে পরিণত হয়। ইংরেজী তারিখ হিসাবে দিনটি ছিল ২৯ মে ১৪৫৩ ঈসায়ী। সেন্ট রোমান্সের উপর (বর্তমান নাম Topkapi Palace) উসমানী পতাকা উড়ছিল। সুলতান ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে সিজদায় পড়ে গেলেন। সুলতান কন্সট্যান্টিনোপলের নাম পরিবর্তন করে ‘ইস্তাম্বুল’(এমন স্থান যা ইসলাম প্রচার করে) রাখেন।

সাহাবী হযরত আবু আইউব আনসারী (রাদিআল্লাহুআনহু) এর মাজার

আয়া সোফিয়ায় যোহরের নামাজ আদায় করে সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) সর্বপ্রথম সাহাবী হযরত আবু আইউব আনসারী (রাদিআল্লাহুআনহু) এর সমাধির খোঁজে বের হলেন এবং সেখানে এক আলিশান মাজার তৈরী করে দেন। যারা ওলী-আল্লাহগণের মাজার শরীফের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব রাখেন, তাদের জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) কর্তৃক নির্মিত হযরত আবু আইউব আনসারী (রাদিআল্লাহুআনহু) এর মাজার শরীফ আজও ইস্তামবুলে অত্যন্ত শানদার অবস্থায় বিদ্যমান। প্রতিদিন হাজারো নবী-ওলীপ্রেমিক নবীকারিম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)- এর প্রিয় সাহাবী হযরত আবু আইউব আনসারী (রাদিআল্লাহুআনহু) এর মাজার শরীফ যিয়ারত করে ফুয়ূয ও বরকত হাসিল করেন।

ইস্তাম্বুল নগরীর অধিকাংশ খৃস্টান সেন্ট সোফিয়ায় আশ্রয় নিয়েছিল। সুলতান তাদেরকে অভয় দিলেন এবং তাদের জানমালের নিরাপত্তা দান করলেন।এরপর আযান দেওয়া হল। সাড়ে এগারোশত বছর যাবৎ যেখানে ‘তিন খোদা’র উপাসনা হচ্ছিল সেখানে আজ তাওহীদের ধ্বনি উচ্চারিত হল। সকল ছবি ও মূর্তি সরিয়ে ফেলা হল। মুসলিম বাহিনী জোহরের নামাজ সেন্ট সোফিয়ায় আদায় করেন। সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) একে মসজিদে পরিণত করার ফরমান জারি করলেন। কেননা প্রথমত কন্সট্যান্টিনোপলের সম্রাট আত্মসমর্পণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল তাই সুলতান এই গীর্জাকে পূর্বাবস্থায় বহাল রাখতে বাধ্য ছিলেন না ।  তদুপরি এটি ছিল অর্থডক্স খ্রিস্টানদের কেন্দ্রীয় গীর্জা। তাই এর সাথে বহু কুসংস্কার ও অলৌকিকতার বিশ্বাস জড়িত হয়েছিল। এই কুসংস্কারের মূলোৎপাটন প্রয়োজন ছিল।

কুছতুনতুনিয়া বিজয়ের পর সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ(রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) নগরীর খ্রিস্টান অধিবাসীদের জান-মালের নিরাপত্তা বিধান করলেন এবং তাদেরকে তাদের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করেন। কুছতুনতুনিয়া বিজয়ের এই ঘটনার পর কন্সট্যান্টিনোপল যা বর্তমানে ইস্তাম্বুল নামে পরিচিত উসমানী খিলাফতের রাজধানীর রূপ লাভ করে। কুছতুনতুনিয়া হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় সমগ্র ইউরোপে হায় হায় বর ওঠে।  পোপ আরেকবার ক্রুসেডের ঘোষনা দেন কিন্তু উসমানীয় সুলতানদের হাত থেকে কুছতুনতুনিয়া ছিনিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য ইউরোপের ছিল না। এই বিজয়ের পর তুর্কি ইসলামী সালতানাত সমগ্র মুসলিম উম্মাহতে পরিশক্তি হিসেব বিবেচিত হয় এবং উম্মাহর ইজ্জত-আব্রুর হিফাজতকারী হিসেবে তুর্কি ইসলামী সালতানাতকে খিলাফতের মর্যাদা দিয়ে জমহুর ওলামা ফতোয়া দেন কারণ ওই সময় আর এমন কোন মুসলিম-শক্তি অবশিষ্ট ছিল না যারা চীন থেকে ইউরোপ হয়ে উত্তর আফ্রিকা ও ইয়েমেন পর্যন্ত মুসলমানের ইজ্জত-আব্রুর হিফাজত করবে।  এরপরই তুর্কি সালতানাত খিলাফতে উসমানিয়া নামে পরিচিত হয়।

তুর্কি মুসলমানরা ছিলেন বীর যোদ্ধা। জিহাদ থেকে তাঁরা কখনও পিছপা হননি।তাঁদের সমগ্র জীবন কেটে যেত যুদ্ধের ময়দানে কিন্তু অন্তরে তাঁরা ছিলেন কুসুম-কোমল। হায়াতুন্নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও ইসলামের প্রতি ছিল তাঁদের সঠিক আক্বিদা ও সুগভীর ভাসবাসা যার পুরষ্কার স্বরূপ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তুর্কি মুসলমান ও তাঁদের সুলতানকে এমন শানদার বিজয় দান করেন যে বিজয়ের জন্য হযরত আবু আইউব আনসারী (রাদিআল্লাহুআনহু) হতে সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ(রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) পর্যন্ত বহু মুসলমান চেষ্টা করেছেন।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment