সুফি ধারার ক্রমবিকাশ

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

সুফি ধারার ক্রমবিকাশ:

কৃতঃ মোহাম্মদ হাসান শামস উদ্দিন

তাসাউফের তরিকাগুলোর মূল উপাত্ত রাসূলুল্লাহ (সা:) থেকেই সংগৃহীত। প্রতিটি তরিকার সিলসিলা বা ক্রমধারা রাসুলুল্লাহ (সা:) পর্যন্ত সংযুক্ত রয়েছে (শুধুমাত্র তরিকার সিলসিলা নয় প্রতিটি আদম সন্তানই রাসুলুল্লাহ (সা:) পর্যন্ত সংযুক্ত)। রাসূলুল্লাহ (সা:) অবস্থা ও স্তরভেদে সাহাবীদের একেকজনকে একেক প্রকার তালিম দিতেন। হযরত আলী (রা:) রাসূলুল্লাহ (সা:) থেকে নফি ইসবাত “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” জিকির রপ্ত করেছিলেন। আর হযরত আবু বকর (রা:) রপ্ত করেছিলেন ইসমে মুফরাদ তথা “আল্লাহ” জিকির। পরে এ দুটি ধারা বা তরিকা “তরিকায় আলুবিয়া” এবং “তরিকায় বকরিয়া” নামে প্রসিদ্ধ হয়। এরপর এ দুটি ধারা গিয়ে একত্রিত হয় ইমাম আবুল কাশেম জুনাইদ(রহ:) এর কাছে।

পরবর্তীকালে স্তরগুলো গিয়ে এ ধারা আবার দুই ভাগে ভাগ হয় ১) খালওয়াতিয়া (মুহাম্মদ খালওয়াতিয়া) এবং নকশবন্দিয়া (বাহাউদ্দিন নকশবন্দী)। এ ধারা চলতে থাকে। পরে তাসাউফের চার দিকপালের আবির্ভাব হয়। তারা

এই ধারাকে আরো পরিমার্জিত ও সুগঠিত করেন। এ চারজন হলেন ১) সাইয়েদ আহমাদ রিফায়ি (রহ:) ২) সাইয়েদ আব্দুল কাদির জিলানি(রহ:) ৩) সাইয়েদ আহমাদ বাদাবি (রহ:) ৪) সৈয়দ ইবরাহিম আদ্দাসুকি(রহ:)।

হযরত আবু বকর (রা:) এর মাধ্যমে বর্তমানেও দুটি তরিকার

অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এইগুলো হল নকশবন্দিয়া- মোজাদ্দেদিয়া। হযরত ওমর (রা:) এর মাধ্যমে প্রচারিত তরিকার বর্তমানে কোন অস্তিত্ব নেই। হযরত সালমান ফারসি(রা:) ইয়েমেন অঞ্চলে তরিকত প্রচার করতেন। নকশবন্দিয়া ও  মোজাদ্দেদিয়া তরিকার শাজরাহতেও তার নাম রয়েছে। হযরত আলী (রা:) এর মাধ্যমে প্রচারিত তরিকার উপর ভিত্তি করেই কাদরীয়া ও চিশতিয়া তরিকা সহ বিভিন্ন তরিকা ও উপ-তরিকা বর্তমানে বিদ্যমান রয়েছে।তার প্রচারিত তরিকা প্রধানত তার দুই ছেলে হযরত ইমাম হাসান (রা:) ও হযরত ইমাম হোসাইন (রা:) এবং বিশিষ্ট তাবেঈন হযরত হাসান বসরি (রা:) এর মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।অন্যদের মাধ্যমে প্রচারিত কোন তরিকার সন্ধান তেমন পাওয়া যায় না। অবশ্য বিশিষ্ট তাবেঈন হযরত ওয়াইস করনি (রহ:) এর মাধ্যমে প্রচারিত ওয়াইসিয়া তরিকা বিদ্যমান রয়েছে।

বিভিন্ন তরিকার নিয়ম-কানুন, আধ্যাত্বিক সুলুক ও তালিম সু-সংগঠিত ও সুসংবদ্ধ হয় খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীর দিকে। এর আগে সুফিদের আধ্যাত্বিক অনুশীলন মুখে মুখে চলে আসছিল। সে কারণেই আধ্যাত্মিক অনুশীলনকে বাতেনি এলম বলা হত। সেই সময় আধ্যাত্বিক সাধনার সুবিখ্যাত কুতুব ও পীর মুর্শিদরা বিভিন্ন তরিকার প্রতিষ্ঠা করেন। সুফিবাদ উৎকর্ষ লাভ করে পারস্যে। সেখানকার প্রখ্যাত সুফি দরবেশ, কবি সাহিত্যিক, দার্শনিকরা নানা শাস্ত্র, কাব্য ও ব্যাখ্যার মাধ্যমে পুস্তক রচনা করে এই সুফিদর্শন কে সাধারণের কাছে জনপ্রিয় করে তোলেন। কালক্রমে বিখ্যাত সুফিদের অবলম্বন করে নানা তরিকা গড়ে ওঠে। তরিকাগুলোর সংখ্যা নির্দিষ্ট করে বলা দুষ্কর। কারো মতে, ৩০০০ বা তার চেয়েও বেশি।এই সব তরিকার মধ্যে বহু সংখ্যক তরিকা অবলুপ্ত হয়ে গেছে। এখনো প্রায় চারশত তরিকার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

হযরত আলী (রা:) এর নাতি ইমাম জাফর সাদেক (রাহ:) মূলত ইলমে মারেফত অর্থাৎ পীর তরিকতের শিক্ষার প্রবর্তক। তার শিক্ষা কে অবলম্বন করে চার তরিকা ও ১৪ খানদান জারি হয়েছে যা এই পৃথিবীতে এখনো বর্তমান(খুবই সংক্ষিপ্ত আকারে তাসাউফ,সুফিবাদ, ইসলামি আধ্যাত্বিকতার ক্রমবিকাশ কে উপস্থাপন করা হল)।

পদ্মা মেঘনা যমুনার উৎস স্থল হিমালয় পর্বতমালা। ঠিক তেমনি ভাবে তাশাউফ বা সুফিবাদের উৎপত্তি স্থলের মাধ্যম হচ্ছে “জিকির”। আর এই জিকিরের ভাষা ছিল প্রধানত দুইটি যা এখনো বহমান। আর তাহল – “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এবং “আল্লাহ”।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment