সুন্দর আচরণ ইবাদত

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

সুন্দর আচরণ ইবাদত. মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ এহছানুল হক মোজাদ্দেদী

একজন মুমিনের মূল্যবান সম্পদ হলো সুন্দর ব্যবহার। সুন্দর ব্যবহার, ভালো আচরণের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহ তায়ালার এমন নৈকট্য অর্জন করে, যা অনেক নফল ইবাদতের চেয়েও বড় মাকামে পৌঁছে দেয়। তাই আমরা দেখি, প্রত্যেক নেককার পরহেজগার মানুষই ইবাদতের পাশাপাশি সুন্দর ব্যবহার, মানুষের সঙ্গে ভালো আচরণকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। সুন্দর ব্যবহার ও আচার-আচরণ বলতে আমরা বুঝি কারও সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলা।

দেখা হলে সালাম দেওয়া। কুশলাদি জিজ্ঞেস করা। কর্কশ ভাষায় কথা না বলা। ঝগড়া-ফ্যাসাদে লিপ্ত না হওয়া।

ধমক বা রাগের সুরে কথা না বলা। পরনিন্দা না করা। কাউকে অপমান-অপদস্ত না করা। উচ্চ আওয়াজে কথা না বলা।

গম্ভীর মুখে কথা না বলা। সর্বদা হাসিমুখে কথা বলা। অন্যের সুখে সুখী হওয়া এবং অন্যের দুঃখে দুঃখী হওয়া। এ ছাড়া কারও বিপদ-আপদে সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করাও সুন্দর আচরণের অন্তর্ভুক্ত। মানুষের সঙ্গে ভালো আচরণ করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলছেন, ‘আর ইবাদত কর আল্লাহর, শরিক কর না তাঁর সঙ্গে অন্য কাউকে। পিতা-মাতার সঙ্গে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্মীয়, ইয়াতিম-মিসকিন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর সঙ্গেও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-গর্বিতজনকে। (সূরা নিসা, আয়াত : ৩৬)।

প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোমলতা যেখানেই থাকবে সেটাই হবে সৌন্দর্যমণ্ডিত। আর যেখান থেকেই তা উঠিয়ে নেওয়া হবে, সেটাই হবে দোষযুক্ত। (সহিহ মুসলিম)। হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, ‘যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তুমি তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন কর। যে তোমাকে বঞ্চিত করে তুমি তাকে দান কর। আর যে তোমার ওপর জুলুম করে তুমি তাকে ক্ষমা কর। (মুসনাদে আহমদ। ) আরেকটি হাদিস শরীফে নূর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা দোজখের আগুন থেকে বেঁচে থাক, একটি খেজুর দিয়ে হলেও। যদি তা না পাও, তাহলে মধুর ভাষা ও সুন্দর ব্যবহারের বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে বাঁচো। ’ (বুখারি)।

উত্তম চরিত্রের মর্যাদা সম্পর্কে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে সে ওই ব্যক্তির চেয়ে বেশি মর্যাদায় পৌঁছে যায়, যে রাতে দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদ পড়ে এবং দিনে রোজা রাখে। ’ (মুসনাদে আহমাদ। ) হাঁসিমুখে মানুষের সঙ্গে কথা বলাও সুন্দর ব্যবহারের অন্তর্ভুক্ত। কেউ যদি কারও সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলে সেও উত্তম ব্যবহার করার সাওয়াব অর্জন করবে। আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কেউ যদি এই নিয়তে তার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলে যে, আমার হাসিমুখ দেখে আমার ভাইয়ের মুখেও হাসি ফুটবে, এর বিনিময়ে কিয়ামতের কঠিন দিন আল্লাহ তায়ালা তাকে খুশি করবেন। (মুসনাদে আহমাদ। )

মানুষের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ করা ভালো চরিত্রের পরিচয় নয়। তাই কেউ যেন কারও সঙ্গে ঝগড়া না করে সে উপদেশ দিয়ে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার কোনো উম্মত যদি হকের ওপর থেকেও শুধু ঝগড়ায় থেকে বাঁচার জন্য নীরব থাকে, আমি নবী তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ির নিশ্চয়তা দিচ্ছি। কেউ যদি ঠাট্টাচ্ছলেও মিথ্যা বলা থেকে বেঁচে থাকে, তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে বাড়ির গ্যারান্টি দিচ্ছি। ’

(আবু দাউদ)।

সুন্দর ব্যবহারের মর্যাদা শুধু আখিরাতে নয় দুনিয়াতেও রয়েছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘খুব অবাক ব্যাপার হলো, মানুষ অর্থ দিয়ে গোলাম কিনে আজাদ করে সওয়াব অর্জন করছে। কিন্তু সুন্দর ব্যবহার দিয়ে মুক্ত মানুষগুলোকে কিনতে পারছে না। সওয়াবও অর্জন করছে না। অথচ প্রথমটি থেকে দ্বিতীয়টি থেকে বেশি সহজ। ’ (জামে সগির। ) রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পরিপূর্ণ মোমিন সে ব্যক্তি, যার আচরণ সবচেয়ে ভালো। যে তার পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে নরম আচরণ করে, সেই আল্লাহর কাছে প্রিয় বান্দা। ’ (তিরমিজি)। তবে যারা জুলুমের স্বীকার তারা অবশ্যই অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে। এ প্রতিবাদই জুলুমকারীর সাথে উত্তম ব্যাবহার।

আল্লাহ তায়ালা প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উসিলায় আমাদের সবাইকে পরিচিত অপরিচিত সকল মানুষের সাথে ভালো-সুন্দর-নম্র, ভদ্র আচরণ করার মাধ্যমে আল্লাহর নেককার বান্দাহ হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : বাংলাদোশের শ্রেষ্ঠ ইমাম, মুফাসসিরে কোরআন, বেতার, টিভির ইসলামী উপস্থাপক, খতিব, মনিপুর বায়তুল আশরাফ (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর-০২, ঢাকা।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment