সিররুল আসরার [ প্রথম কিস্তি]

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

মূল: গাউসুল আজম শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (র.)

অনুবাদ: ড. এ. এস. এম. ইউসুফ জিলানী

————–+++++———–

মাহবুবে সুবহানি কুতুবে রাববানী গাউসুল আজম শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (র.) এর “সিররুল আসরার ওয়া মজহারুল আনোয়ার ফিমা ইয়ুহতাজু ইলায়হিল আবরার” কিতাবটি একটি প্রসিদ্ধ কিতাব যা শরীয়ত ও তরিকতপন্থীদের জন্য একটি বড় সম্পদ। ২০০৪ সালে আমি কিতাবটি উপহার পেয়েছিলাম আরবের বিখ্যাত শায়েখ, আলেম, মুহাদ্দিস মুফাসসির, লেখক গবেষক ৫০০” শতাধিক কিতাবের লেখক, মুহাদ্দিসে হেরমে মক্কা শায়খুল মাশায়েখ ড. আল্লামা শায়খ সৈয়দ মুহাম্মদ আলভী মক্কী মালেকী (র.) থেকে। এরপর সেটা অনুবাদ করে এর কিছু অংশ দৈনিক ইনকিলাব ও দৈনিক চট্টগ্রাম মঞ্চে প্রকাশিত হয়েছিল। তবে কিতাবাকারে প্রকাশিত হয় নি। অনেকের অনুরোধে কিতাবটি ঢাকার একটি প্রকাশনী ছাপানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। আশা করি সহসা হাতে পাবেন।

গাউছে পাকের মাস হিসেবে এর কিছু অনুবাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পেজবুকে প্রচার করার আশা রাখি যদি আল্লাহ তায়ালা তাওফিক দান করেন।

আজকে ভুমিকাটি দেয়া হলো।

بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد الله الْقَادِرِ العَلِيمِ، وَالنَّاظِرِ الحَلِيمِ ، الجَوادِ الْكَرِيمِ ، الرَّبِّ الرَّحِيمِ ، مُنَزَّلِ الذَّكْرِ الحكيمِ وَالْقُرْآنِ الْعَظِيمِ ، عَلي المَبعُوتِ بِالدِّينِ القَوِيمِ ، وَالصِّرَاطِ المَسْتَقِيمِ ، وَالصَّلاةُ وَالسَّلامُ عَلي خَاتَمِ الرِّسَالِةِ ، وَالهَادِي مِنَ الضَّلَالَةِ ، المُشرَّفِ الْمُرْسَلِ بِأَشْرَفِ الْكُتُبِ إِلى العَجْمِ وَالْعَرْبِ ، مُحَمَّدُ النَّبِيُّ الْأُمِّي العَرْبِيُّ الْآمِيْنِ صَلَّي اللهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلى الهِ هُداةُ المُهْتَدِينَ ، وَأَصْحَابِهِ الْأَخْيَارِ [المُنتَجِبِينَ] ، وَسَلَّمَ تَسْلِيا ، وَحَمدًا كَثِيرًا كَثِيرًا ،

সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞানী, সর্বদ্রষ্টা, পরম সহিঞ্চু, পরম দাতা, পরম সম্মানিত, যিনি সমগ্র জাহানের রব, পরম দয়ালু। তিনিই তাঁর প্রিয় প্রিয় নবী উপর কুরআনের মত মহান কিতাব ও হেকমতপূর্ণ কিতাব নাযিল করেছেন। এ কিতাবের মধ্যে রয়েছে সত্য-সুদৃঢ় দ্বীন ও সিরাতে মুস্তাকিম।

অসংখ্য-অগণিত দরুদ ও সালাম রেসালতের সমাপ্তকারী, হাদিয়ে বরহক, সাহেবে ইজ্জত ও তাকরিম, সাদিক ও আমীন সেই পবিত্র সত্তার উপর যিনি সকল জ্ঞানবিজ্ঞানের মূল ও উৎস, নবীয়ে আরবী এবং আরব ও আজমের প্রতি সর্বোত্তম কিতাব আনয়নকারী, যার নাম মুহাম্মদ মুস্তফা (দ.) আর সালাত ও সালাম তাঁর আহলে বায়তে আতহারের উপর যারা হেদায়তপ্রাপ্তদের হেদায়ত দানকারী এবং সম্মানিত ও নির্বাচিত সাহাবায়ে কেরামের উপর। হামদ ও সালাতের পর:

ইলম বা জ্ঞান হলো সবচেয়ে সম্মানজনক, সর্বোচ্চ মর্যাদাশীল এবং মহিমান্বিত গৌরব ও খ্যাতিময় এবং সবচেয়ে উৎকৃষ্টতম লাভজনক ও উপকারী সম্পদ। এই ইলমের মাধ্যমেই মানুষ আল্লাহ তায়ালার পরিচিতি লাভ করেন এবং রাব্বুল আলামানিন পর্যন্ত পৌছতে পারেন এবং সম্মানিত নবী ও রাসূলগণের সত্যায়ন করেন। আলেমগণ হলেন আল্লাহ তা’আলার বিশেষ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। যাঁদেরকে আল্লাহ তা’আলা স্বীয় দ্বীনের প্রচার প্রসার ও তাঁর বান্দাগণের হেদায়ত ও সৎপথপ্রদর্শন করার জন্য নির্বাচিত করেছেন এবং তাঁর বিশেষ কৃপা ও অনুগ্রহ দ্বারা তাদেরকে হেদায়ত দান করেছেন। তারা সম্মানিত নবী ও রাসূলগণের উত্তরাধিকারী, নায়েব ও প্রতিনিধি এবং মুসলমানদের নেতা ও অভিভাবক। প্রকৃত পক্ষে তাঁরাই মারিফাতের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। যেমন, আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,

ثُمَّ أَوْرَثْنَا الْكِتَبَ الَّذِينَ اصْطَفَيْنَا مِنْ عِبَادِنَا فَمِنْهُمْ ظَالِمٌ لِنَفْسِهِ وَمِنْهُم مُّقْتَصِدٌ وَمِنْهُمْ سَابِقٌ بِالْخَيْرَاتِ –

অতঃপর আমি কিতাবের উত্তরাধিকারী করেছি আমার বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে, যাদেরকে আমি মনোনীত করেছি। অতঃপর তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ নিজের প্রতি জুলুমকারী এবং কেউ কেউ মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী। আর তাদের কেউ কেউ আল্লাহর ইচ্ছায় কল্যাণকর কাজে অগ্রগামী। এটাই হলো মহা অনুগ্রহ।

[আল কুরআন সূরা ফাতির, (৩৫):৩২]

নবীয়ে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

‎‫العُلَمَاءَُ وَرَثَةُ الْأَنْبِيَاءِ بِالْعِلْمِ وَيُحِبُّهُمْ أَفْضَلُ السَّمَاءِ وَيَسْتَغْفِرُ هُمْ الْجَيْنَانُ فِي الْبَحْرِ،‬‎ –

আলেমগণ হলেন নবীগণের জ্ঞান ভাণ্ডারের উত্তরাধিকারী। আসমানীজগতের সর্বোত্তম সৃষ্টি (ফেরেস্তাকুল) তাদেরকে মহব্বত করে এবং সমুদ্রের মাছেরাও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।

[আবূ দাউদ, আস্ সুনান, ১০:৪৯ হাদিস নং 3641, তিরমিযি, আস সুনান, 5:48; ইবনে মাজা, 1: 81, ইবনে হিব্বান, 1: 289, বায়হাকী, শোয়াবুল ঈমান, 2: 262, মাহামেলী, আমালিয়া, 1: 330]

রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

يَبْعَثُ اللَّهُ تَعَالَى الْعِبَادَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثُمَّ يُمَيِّزُ الْعُلَمَاءُ فَيَقُولُ : يَا مَعَشَرَ الْعُلَماءِ إِنِّي لَمْ أَضَعْ فِيْكُمْ عِلْمِي لِأَعْذَبِكُمْ أَذْهَبُوْا فَقَدْ غَفَرْتُ لَكُمْ ،

কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা যখন বান্দাদেরকে উঠাবেন, তখন (হাশরের ময়দানে) আলিমদেরকে বিশেষ মর্যাদায় আলাদাভাবে রাখবেন। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা বলবেন, হে আলেমের দল। আমি তোমাদেরকে এ জন্য আমার ইলম দিয়েছিলাম যে, তোমরা এর উপযোগী ছিলে। আর আমি তোমাদেরক শাস্তি প্রদানের জন্য তোমাদের নিকট ইলম গচ্ছিত রাখেনি। অতএব, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করো, ‘আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি। [রুইয়ানি, আল মুসনাদ, 1: 353, তাবরানি, আল আওসাত, 4: 302]

সর্বাবস্থায় সকল প্রশংসা বিশ্বজগতের রব আল্লাহ তা’আলার জন্য। তিনি এমন মহান সত্তা যিনি জান্নাতের পদমর্যাদাসমূহ ইবাদতকারীদের জন্য এবং নৈকট্যের স্তরসমূহ আরেফগণের জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন।

[চলবে]

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment