সিজদার অবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

৩৩ – بَابُ مَا جَاءَ فِي هَيْئَةِ السُّجُوْدِ

১০৭ – أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَاصِمٍ، عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ  إِذَا سَجَدَ وَضَعَ رُكْبَتَيْهِ قَبْلَ يَدَيْهِ، وَإِذَا قَامَ رَفَعَ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ.

বাব নং ৪৮. ৩৩. সিজদার অবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা

১০৭. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আসিম থেকে, তিনি তাঁর পিতা থেকে, তিনি হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ)  সিজদা করার সময় উভয় হাত রাখার পূর্বে মাটির উপর স্বীয় হাঁটুদ্বয় রাখতেন এবং উঠার সময় হাঁটুর আগেই উভয় হাত উঠাতেন। (ইবনে মাজাহ, ১/২৮৬/৮৮২)

ব্যাখ্যা:- ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله), ইমাম শাফেঈ (رحمة الله) এবং ইমাম আহমদ (رحمة الله)’র মতে সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে মাটির উপর হাঁটুদ্বয়, এরপর দু’হাত রাখতে হবে এবং সিজদা থেকে উঠার সময় প্রথমে দু’হাত, এরপরে দু’হাঁটু উঠাতে হবে। দলীল হিসেবে তাঁরা এই হাদিসকে পেশ করে থাকেন। ইমাম মালিক (رحمة الله) ও ইমাম আওযাঈ (رحمة الله)’র মতে সিজদায় যাওয়ার সময় মাটির উপর প্রথম দু’হাঁটুর পূর্বে হাত রাখতে হবে। তাঁরা দলীল হিসেবে আবু দাউদ শরীফে হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) বর্ণিত মারফু হাদিস পেশ করে থাকেন:-

 اذا سجد احدكم فلا يبرك كما يبرك البعير ويضع يديه قبل ركبتيه

“যখন তোমাদের কেউ সিজদা করবে, তখন উটের ন্যায় বসবে না, বরং হাঁটুর আগে স্বীয় হাত (মাটিতে) রাখবে।”  ➥ আবু দাউদ (رحمة الله), (২৭৫ হিঃ) আবু দাউদ শরীফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠাঃ  ৩১১, হাদীস নং ৮৪০, বৈরুত

তারা ইবনে ওমর (رضي الله عنه)’র মাওকূফ হাদিসও পেশ করেন যাতে আছে- তিনি হাঁটু রাখার আগে হাত রাখতেন।

প্রথম তিন ইমামের মত অধিক সহীহ ও সঠিক। কেননা হযরত ওয়ায়েলের হাদিস হযরত আবু হোরায়রা বর্ণিত হাদিসের চেয়ে সহীহ, সুস্পষ্ট ও অগ্রগণ্য। ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) এটাকে গরীব বলেছেন। এর সনদের ক্রমধারায় আব্দুল্লাহ ইবনে সাঈদ ইবনে মাকবুরী রয়েছেন, ইবনে খুযাইমা যার থেকে রেওয়ায়েত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা হাঁটুর পূর্বে হাত রাখতাম। কিন্তু পরে আমাদেরকে হাতের পূর্বে হাঁটু লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه)’র হাদিসের মূল বিষয়ের সাথে বিরোধ রয়েছে। কেননা, আগে হাত পরে হাঁটু রাখলেই উট বসার সাদৃশ্য হয়। অথচ এরূপ করা নিষেধ।

১০৮ – أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ طَاوُسٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، أَوْ غَيْرِهِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ ، قَالَ: أُوْحِيَ إِلَى النَّبِيِّ  أَنْ يَسْجُدَ عَلَىٰ سَبْعَةِ أَعْظُمَ.

১০৮. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা তাউস থেকে, তিনি ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) অথবা অন্য সাহাবী থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) ’র নিকট ওহী প্রেরণ করা হয় যে, তিনি যেন হাড়ের উপর সিজদা করেন।  (বুখারী, ১/১৬৩/৮১৫)

ব্যাখ্যা:- বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদিসে বর্ণিত আছে:- اُمرت ان اسجد على سبعة اعظم على الجبهة واليدين والركبتين واطراف القدمين “আমি আর্দিষ্ট হয়েছি যে, যেন আমি সাত হাড়ের অর্থাৎ কপাল, দু’হাত, দু’হাঁটু এবং দু’পা’র উপর সিজদা করি।”   

➥  ইমাম বুখারী (رحمة الله), (২৫৬ হিঃ), সহীহ বুখারী, খন্ড ১, পৃষ্ঠাঃ  ২৮০, হাদীস নং ৭৭৯, বৈরুত

এই হাদিসের দৃষ্টিকোণে ইমাম শাফেঈ (رحمة الله)’র মতে উপরে বর্ণিত অঙ্গসমূহ সিজদার সময় মাটিতে রাখা ফরয এবং তিনি اُمرت শব্দ দ্বারা দলীল পেশ করেন। হিদায়া গ্রন্থে আছে আমাদের (হানাফীদের) মতে দু’হাত ও দু’হাঁটু মাটিতে রাখা সুন্নত অর্থাৎ ফরয-ওয়াজিব নয়। কারণ পবিত্র কুরআনে মুতলাক সিজদার কথা উল্লেখ রয়েছে। খরবে ওয়াহিদ দ্বারা এর উপর অতিরঞ্জিত করা জায়েয নয়। আর ওয়াজিব এই জন্য নয় যে, রাসূল (ﷺ)  গ্রাম্য ব্যক্তিকে নামাযের যে ওয়াজিব শিক্ষা দিয়েছিলেন এর মধ্যে ঐ সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কথা উল্লেখ নেই। তাই এখানে اُمرت শব্দটি ندب অর্থে ব্যবহৃত, ফরয-ওয়াজিব হিসেবে নয়।

109 – أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ أَبِيْ سُفْيَانَ، عَنْ أَبِيْ نَضْرَةَ، عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : «اَلْإِنْسَانُ يَسْجُدُ عَلَىٰ سَبْعَةِ أَعْظُمَ: جَبْهَتِهِ، وَيَدَيْهِ، وَرُكْبَتَيْهِ، وَمُقَدِّمِ قَدَمَيْهِ، وَإِذَا سَجَدَ أَحَدُكُمْ، فَلْيَضَعْ كُلَّ عُضْوٍ مَوْضِعَهُ، وَإِذَا رَكَعَ فَلَا يُدَبِّحْ تَدْبِيْحَ الْـحِمَارِ».

১০৯. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবু সুফিয়ান থেকে, তিনি আবু নাদ্বরাহ থেকে, তিনি আবু সাঈদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, মানুষ (নামাযে) সাতটি হাড়ের উপর সিজদা করে থাকে- কপাল, দু’হাত, দু’হাঁটু ও উভয় পায়ের অগ্রভাগ। আর যখন তোমাদের কেউ সিজদা করবে, তখন (উল্লেখিত) প্রত্যেকটি অঙ্গ এর স্বীয় স্থানে রাখবে। যখন রুকু করবে তখন গাধার মত মাথা ঝুকাবে না। 

ব্যাখ্যা: এই হাদিসে সিজদার সাথে সাথে রুকু করার পদ্ধতিও সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, রুকু’র মধ্যে মাথাকে পিটের বরাবর রাখতে হবে। মাথা যখন পিঠ থেকে অধিক নিচু হবে তখন পিঠের মধ্যে বক্রতা সৃষ্টি হবে। ফলে উটের পিঠের কুঁজের আকৃতি ধারণ করবে এবং রাসূল (ﷺ) ’র নির্দেশের বিরোধী হবে, তাই এরূপ নিষিদ্ধ। 

ইবনে মাজাহ (رحمة الله) ইবনে মা‘বাদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে নামায আদায় করতে দেখেছি। যখন তিনি রুকু আদায় করতেন তখন পিঠ এমনভাবে সমান রাখতেন যে, যদি এর উপর পানি ঢালা হতো তাহলে তা স্থির থাকত।

110 – أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ أَبِيْ سُفْيَانَ، عَنْ أَبِيْ نَضْرَة، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : «إِذَا سَجَدَ أَحَدُكُمْ فَلَا يَمُدَّ رِجْلَيْهِ، فَإِنَّ الْإِنْسَانَ يَسْجُدُ عَلَىٰ سَبْعَةِ أَعْظُمَ: جَبْهَتِهِ، وَيَدَيْهِ، وَرُكْبَتَيْهِ، وَرِجْلَيْهِ، وَقَدَمَيْهِ».  وَفِيْ رِوَايَةٍ: «إِذَا سَجَدَ أَحَدُكُمْ فَلَا يَمُدَّ صُلْبَهُ»وَفِيْ رِوَايَةٍ: قَالَ: نَهَىٰ رَسُوْلُ اللهِ  أَنْ يَمُدَّ الرَّجُلُ صُلْبَهُ فِيْ سُجُوْدِهِ.

১১০. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবু সুফিয়ান থেকে, তিনি আবু নাদ্বরাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, সিজদা করার সময় তোমাদের কেউ যেন স্বীয় পা (উপরের দিকে) না উঠায়। কেননা মানুষ সাতটি হাড়ের উপর সিজদা করে থাকে। কপাল, উভয় হাত, উভয় হাঁটু এবং উভয় পা (এর হাড়ের উপর)।

অপর এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন সিজদা করবে, তখন যেন স্বীয় পিঠ বিছিয়ে না দেয়। অন্য এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, রাসূল (ﷺ)  সিজদার সময় মানুষকে স্বীয় পিঠ বিছানো থেকে নিষেধ করেছেন।

111 – أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : «أُمِرْتُ أَنْ أَسْجُدَ عَلَىٰ سَبْعَةِ أَعْظُمَ، وَلَا أَكُفُّ شَعْرًا وَلَا ثَوْبًا».

১১১. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা ইকরামা থেকে, তিনি হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, সাতটি হাড়ের উপর সিজদা করা এবং চুল ও কাপড় ধরে না রাখার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি। (মুসান্নিফে ইবনে আবি শায়বা, ২/৪৩৫/৮১৩৪)

ব্যাখ্যা: নামাযে সিজদা করার সময় সামনে ও পিছনে চুল বা কাপড় ধরে না রাখার কথা বলা হয়েছে। জামার হাত গুটানোও এই নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। কারণ এতে নামাযের আদব, বিনয় ও নম্রতার পরিপন্থী হয়। নামাযের দ্বারা সফলতা অর্জিত হয় বিনয় ও নম্রতার মাধ্যমে। তাই আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে বলেছেন-قد افلح المؤمنون الذين هم فى صلوتهم خاشعون“নিশ্চয়ই ঐ মু’মিনগণ সফলতা লাভ করেছে যারা বিনয় ও নম্রতার সাথে নামায আদায় করেছে।” (সূরা আল মু’মিনুন, আয়াত, ১-২)

112 – أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ جَبَلَةَ بْنِ سُحَيْمٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : «مَنْ صَلَّىٰ فَلَا يَفْتَرِشْ ذِرَاعَيْهِ افْتِرَاشَ الْكَلْبِ».

১১২. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা জাবলা ইবনে সুহাইম থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নামায আদায় করবে, সে যেন (সিজদায়) স্বীয় বাহু কুকুরের ন্যায় (মাটিতে) বিছিয়ে না দেয়। (শরহে মা’আনিউল আসার, ১/২৬০/১৪৩৮)

ব্যাখ্যা: এই হাদিস সিহাহ সিত্তাহ্র সকল গ্রন্থে বিভিন্ন বাক্যের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। এমন কি রাসূল (ﷺ)  কখনো কুকুরের সাথে আবার কখনো অন্য প্রাণীর সাথে এর উদাহরণ দিয়েছেন। যেমন আবু দাউদ ও নাসাঈ শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূল (ﷺ)  (নামাযের মধ্যে) কাকের ন্যায় ঠোকর মারা, বিভিন্ন প্রাণীর বাহু বিছানো এবং উটের ন্যায় মসজিদে স্থান নির্দিষ্ট করতে নিষেধ করেছেন।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment