সাহাবী ব্যতিত অন্য কারো জন্য রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ব্যবহার করা যাবে কি…! (শানে সাহাবা ও শানে আউলিয়া)
—-
মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করছেনঃ
“আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা ইহসানের সাথে (সুন্দরভাবে) তাদের অনুসরণ করে, আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) এবং তারাও তাঁর উপর সন্তুষ্ট। আর তিনি তাদের জন্য তৈরী করেছেন জান্নাত, যার নিচে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। এটাই তো মহাসাফল্য। (সূরা তাওবা, আয়াত ১০০)
উক্ত আয়াতসহ আরো কিছু আয়াতে মুবারকা দ্বারা ইমামগণ একমত হয়েছেন যে, সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত (দুনিয়াতে কারো কারো দ্বারা ভুলত্রুটি প্রকাশিত হওয়ার পরেও)। কিন্তু তাবেয়ীনদের ব্যাপারে পূর্ববর্তীদের পরিপূর্ণ সুন্দর অনুসরণের শর্ত আরোপ করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, “এবং যারা ইহসানের সাথে (সুন্দরভাবে) তাদের অনুসরণ করে” এর মধ্যে কিয়ামত পর্যন্ত যারা অনুসরণ করবে সকলকেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে এই হিসেবেও তাদের নামের পরেও রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলা যেতে পারে। যাই হোক, যারা তাঁদের অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরামদের অনুসরণ করে আল্লাহ’র প্রিয় বান্দা (অলি/ আউলিয়া/ বন্ধু) হয়ে যায় তাদের জন্য আলাদাভাবে পরবর্তী সূরাতেই ইরশাদ হচ্ছে,
‘‘জেনে রেখো! আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না। যারা ঈমান আনে আর তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য সুসংবাদ দুনিয়ার জীবনে আর আখেরাতেও। আল্লাহ’র কথার /বাণীসমূহের কোন হেরফের/ পরিবর্তন হয় না, এটাই তো মহাসাফল্য।” (সূরা ইউনুস, আয়াত ৬২- ৬৪)
উভয়ের উপর সন্তুষ্ট হয়েই তো আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে মহাসাফল্য দান করেছেন কিংবা দান করার অঙ্গীকার করেছেন। আর তাই-ই উভয়ের নামের শেষে রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম (আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট) ব্যবহার করা যাবে (পূর্ববর্তী ইমামগণের কিতাবেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়)। কিন্তু মনে রাখা উচিৎ সকল সাহাবায়ে কেরামের নামের শেষে রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ব্যবহার করলেই যেমন সকল সাহাবীর মর্যাদা সমান হয়ে যায় না, তেমনিভাবে আউলিয়ায়ে কেরাম বা বুযূর্গানে দ্বীনের নামের শেষে রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ব্যবহার করলেও তাদের মর্যাদা সাহাবায়ে কেরামের সমান হয়ে যায় না। [এখানে আরো উল্লেখ্য যে, ইমাম বুখারী (র.) সহীহ বুখারীতে আহলে বাইতের সদস্য যেমনঃ হযরত আলী, ফাতেমা, হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম এঁর নামের শেষে আলায়হিস সালাম ব্যবহার করেছেন যদিও সাধারণভাবে আমরা নবীদের নামের পর আলায়হিস সালাম ব্যবহার করি।] সাহাবী, তাবেঈ, তাবে তাবেঈদের মর্যাদা, সাধারণভাবে যাদের আউলিয়া বলা হয় তাদের অনেক অনেক উর্ধ্বে (যদিও ইনারাও আল্লাহ’র প্রিয় বান্দা তথা আউলিয়াদের অন্তর্ভুক্ত কিন্তু উপরের স্তরের)। কারণ এরা প্রিয় নবীজি ﷺ’র সাক্ষাৎ পেয়েছেন, কিংবা তাঁর সাক্ষাত লাভকারীর সাক্ষাৎ পেয়েছেন….। ঈমান আনয়নের পর কোন আমল করতে পারার আগেই ওফাতবরণ করেছেন এমন সাহাবী, তাবেঈ, তাবে তাবেঈন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) এঁর মর্যাদাও গাউস কুতুব আবদালদের চেয়ে বেশি।
হায়! মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা এত সুন্দর করে পরপর দুটি সূরায় এ বিষয়ের সমাধান দিয়ে দেয়ার পরেও কেন এত বিতর্ক!! কেন কেউ কেউ সাহাবীদেরকেও জাহান্নামের আযাব ভোগ করতে হবে বলে ফতোয়া দিচ্ছে!! কেন আউলিয়াদের নামের শেষে রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ব্যবহার করা যাবে না বলে ফতোয়া দিচ্ছে!! “এটা সে-ই (উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন) কিতাব (ক্বোরআন), যা কোন সন্দেহের ক্ষেত্র নয়। তাতে হিদায়ত রয়েছে খোদাভীতি সম্পন্নদের (মুত্তাকীদের) জন্য। তারা কি কোরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা করে না? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?” (আল কুরআন)
এছাড়াও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা অন্যত্র বলছেন,
“যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে, তারা নবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং নেককার লোকদের সঙ্গী হবে, যাঁদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, তাঁরা কতই না উত্তম সঙ্গী!” (সূরা নিসা, আয়াত ৬৯)
সুবহান আল্লাহ। যাঁদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন সেসব নেককার-রা কতই না মর্যাদাবান!! এজন্যই তো আল্লাহ পাক আমাদেরকে এভাবে দোয়া করতে শিখিয়ে দিচ্ছেন যে,
“আমাদেরকে সোজা পথে পরিচালিত করো। তাঁদেরই পথে, যাঁদের উপর তুমি অনুগ্রহ করেছো।”
(সূরা ফাতিহাঃ আয়াত ৫, ৬)