সাহাবাগণ কী ঈদে মিলাদুন্নাবী পালন করেছেন ? 

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

রাসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ), আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)  , ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)   ও আমীর আনসারী (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)   (আল্লামা জালাল উদ্দীন সূয়ুতী (রাহ) এর বিখ্যাত কিতাব “সুবলুল হুদা ফি মাওলেদে মুস্তাফা (সা)” এ উল্লেখিত) রাসুলের জীবদ্দশায় ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করেছেন। চলুন হাদিসগুলো  পরে নেই> 

***হযরত আবু কাতাদা (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)   হতে বর্নিত, রাসুলে পাক (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )  এর দরবারে আরজ করা হলো তিনি প্রতি সোমবার রোজা রাখেন কেন? উত্তরে নবীজি ইরশাদ করেন, “এই দিনে আমি জন্ম গ্রহন করেছি, এই দিনেই আমি নবুয়ত প্রাপ্ত হয়েছি অর্থাৎ এই দিনেই আমার উপর প্রথম পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছে।” [সহীহ মুসলিম ২৬১৩-২৬১৬ বা ই সে, ২৬০৩-২৬০৬ ইংরেজী মুসলিম শরীফ]

*** উম্মুল মুমিনিন আয়েশা সিদ্দিকা (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)  বণর্না করেছেন যে, রসুল পাক (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )  এবং আবুবকর সিদ্দিক (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)   আমার নিকট নিজ নিজ মিলাদ শরীফের বণর্না করেছেন (ইমাম বায়হাকী এই বণর্নাকে হাসান বলেছেন)। [দেখুনঃ আল যামুল কাবীর লিত তাবরাণী ১ম খন্ড ৫৮ পৃঃ, মযমাঊল যাওয়াঈদ ৯ম খন্ড ৬৩ পৃঃ]}

*** রাসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )   নিজের মিলাদ বণর্না করে বলেন অবশ্যই আমি আল্লাহর নিকট শেষ নবী নির্বাচিত হয়েছি ওই সময় যে সময় হযরত আদাম (আলাইহিস সালাম)  মাটি ও পানীতে মিশ্রিত অবস্থায় ছিলেন। আমি তোমাদেরকে আমার প্রাথমিক অবস্থার খবর দিচ্ছি-আমি হচ্ছি হযরত আদাম (আলাইহিস সালাম) ও হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম)  এর দোয়া আর আমার মাতার স্বপ্ন যা তিনি আমার জন্মের সময় দেখেছিলেন যে তাঁর মধ্য হতে একটি নূর নির্গত হয়েছে যার দ্বারা শাম ও পারস্য দেশের বহু মহল আলোকিত হয়ে গিয়েছিল। 

[মিশকাতুল মাসাবিহ ৫১৩ পৃঃ, তারিখে মাদিনা ও দামাশক – ইবনে আশাকিড় ১ম খণ্ড ১৬৮ পৃঃ, কানযুল উম্মাল ১১খন্ড১৭৩ পৃঃ, মুসনাদে ইমাম আহমদ ৪ খন্ড ১৬১ পৃ, আল মুজমাল ক্বাদির ১৮ খন্ড ২৫৩ পৃঃ, মুসনাদ আফযার হাদিস নং ২৩৬৫, তাফসির দুররে মান্সুর ১ম খন্ড ৩৩৪ পৃঃ, মাওয়ারেদুল জাম্মান ১ খন্ড ৫১২ পৃঃ, সহী ইবনে হিব্বান ৯ম খন্ড ১০৬ পৃঃ, আল মুস্তাদ্রাক লিল হাকিম ৩য় খণ্ড ২৭ পৃঃ , আল বেদায়া অয়ান নেহায়া ২য় খণ্ড ৩২১ পৃঃ, মাযমাউল যাওয়ায়েদ ৮ম খন্ড ৪০৯ পৃ প্রভৃতি]

***আবু দারদা (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)   থেকে বর্ণিত, একদা তিনি রসূলে পাক (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর সাথে আমির আনছারী (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) এর গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে তাঁর সন্তানাদি, আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী ও পাড়া-প্রতিবেশীকে নিয়ে নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )  এর বিলাদত শরীফের ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, “এই দিবস; এই দিবস” (অর্থাৎ এই দিবসে রাসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )  যমীনে তাশরীফ এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে)। নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )  তা শ্রবণ করে অত্যন্ত খুশি হয়ে বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর রহমতের দরজা তোমার জন্য উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতাগণ তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন আর যে কেউ তোমার মতো এরূপ করবে সেও তোমার মতো নাজাত (ফযীলত) লাভ করবে। 
***আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)   হতে বর্ণিত। তিনি একদা বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে তাঁর নিজগৃহে সাহাবীগণকে সমবেত করে নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )  এর বিলাদত শরীফের ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং আল্লাহ পাকের প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং রাসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর উপর দুরূদ (সালাত-সালাম) পাঠ করছিলেন। এমন সময় রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) তথায় উপস্থিত হয়ে বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করতে দেখে বললেন: “আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেলো।” {আল্লামা জালাল উদ্দীন সূয়ুতী (রাহ) এর বিখ্যাত কিতাব “সুবলুল হুদা ফি মাওলেদে মুস্তাফা (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) “ এ শেষের হাদিস দুটি উল্লেখিত হয়েছে। # দুররুল মুনাযযাম – সপ্তম অধ্যায় – প্রথম পরিচ্ছেদ 
# ইশবাউল কালাম # হাক্বীকতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী ৩৫৫ পৃষ্ঠা}

***হযরত হাসান বিন সাবিত (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)   রাসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )  এর নির্দেশে মিম্বারে দাঁড়িয়ে কবিতার মাধ্যমে মীলাদুন্নাবী (দঃ) পাঠ করেছেন। দীর্ঘ কবিতার একাংশ নিচে উদ্ধৃত করা হলঃ 

ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি সমস্ত দোষত্রুটি হতে মুক্ত হয়েই জন্মগ্রহণ করেছেন। আপনার এই বর্তমান সুরত মনে হয় আপনার ইচ্ছানুযায়ীই সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীর নাম আযানে নিজের নামের সাথে যুক্ত করেছেন, যখন মুয়াজ্জিন পাঞ্জেগানা নামাযের জন্য “আসহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ” বলে আযান দেয়। আল্লাহ তা’আলা আপন নামের অংশ দিয়ে আপনার নাম রেখেছেন- আপনাকে অধিক মর্যাদাশীল করার লক্ষ্যে। আরশের অধিপতির নাম হল ‘মাহমুদ’ এবং আপনার নাম হল ‘মুহাম্মদ’ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) । [দিওয়ানে হাসান]

***হযরত হাসান (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)   এর এই মিলাদ শুনে নবী করীম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )  বলতেন ‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে জিবরাইল মারফত সাহায্য কর’। 
তাফসীরে কাজাইনুল ইরফানে উল্লেখ আছে, যারা নবী করিম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )  এর প্রশংসাগীতি করে তাদের পিছনে জিবরাইল (আঃ) এর গায়েবী মদদ থাকে (সূরা মুজাদালাহ এবং সহীহ মুসলিম শরীফের কিতাব ৩১ এবং অধ্যায় ৩৪ এ অনেকগুলো হাদীসে এর উল্লেখ রয়েছে); মিলাদ কিয়ামের জন্য এটি একটি শক্ত ও উতকৃষ্ট দলীল।

কাজেই যারা ঈদে মীলাদুন্ননী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )  এর নাম শুনলে কষ্ট পান তাদের ঈমান দুর্বল আর ঈমানের পরীক্ষায় তারা ফেইল মেরেছেন। 

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment