সামর্থ্যবানদের উপর কুরবানী ওয়াজিব

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

মুফতী মুহাম্মদ বখতিয়ার উদ্দীন

عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من كان له سعة ولم يضح فلا يقربن مصلانا-

অনুবাদ:- হযরত আবু হোরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। (সূত্র:- ইবনে মাজাহ)

প্রাসঙ্গিক আলোচনা : 

ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে পশু যবেহ করার নাম কুরবানী। সামর্থ্যবানদের উপর কুরবানি ওয়াজিব। বস্তুত: মানব ইতিহাসের সর্বপ্রথম কুরবানি হযরত আদম আলায়হিস সালামের দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের কুরবানি। যেমন ইরশাদ হয়েছে – 

وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ابْنَيْ آدَمَ بِالْحَقِّ إِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنْ أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الْآخَرِ –

অর্থাৎ, আদমের দুই সন্তানের বৃত্তান্ত আপনি তাদেরকে যথাযথভাবে শুনান, যখন তারা উভয়ে কুরবানি করেছিল তখন একজনের কুরবানি কবুল হল এবং অন্যজনের কবুল হল না। (সূরা মায়েদা, আয়াত-২৭)

আল্লাহ্‌র  সন্তুষ্টির জন্য প্রিয়বস্তু উৎসর্গ করার নামই কুরবানি। ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় হযরত ইব্রাহিম আলায়হিস সালাম প্রভুর প্রেমে সারাজীবন সাধনায় লিপ্ত ছিলেন আর কঠিন কঠিন অনেক পরীক্ষার সম্মুখীন হন। চরম ধৈর্য আর প্রেমের মাধ্যমে সফলভাবে উত্তীর্ণ হন। বর্ণিত আছে – একদিন তিনি আল্লাহ্‌র মুহব্বতে একশত উট, এক হাজার গরু এবং দশ হাজার বকরি কুরবানি করেন- এতে মানুষতো বটে ফেরেশতারাও আশ্চর্যান্বিত হন। তখনই হযরত ইবরাহীম আলায়হিস সালাম আবেগাপ্লুত হয়ে বলে ফেললেন আমার রবের প্রেমে যা করেছি তা নিতান্তই অপ্রতুল। বরং আমার যদি একটা সন্তান থাকত প্রয়োজনে আমার সে সন্তানকে কুরবানি দিতেও দ্বিধাবোধ করতাম না। মূলতঃ তখনই তিনি আল্লাহ্‌র  সন্তুষ্টির জন্য স্বীয় সন্তান কুরবানির মান্নত করেন। পরবর্তীতে হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম এর জম্ম হয় এবং পর্যায়ক্রমে উপযুক্ত হয়ে ওঠেন। তাঁর বয়স যখন সাত মতান্তরে ১২ তথা উপযুক্ত হন, তখনই হযরত ইবরাহীম আলায়হিস সালাম স্বপ্নে নির্দেশপ্রাপ্ত হন। হে ইব্রাহীম! তুমি তোমার মান্নত পূরণ করো। ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে সারাদিন চিন্তা করলেন, পরের দিন আবারও স্বপ্নে দেখলেন হে ইব্রাহীম! তুমি তোমার প্রিয় বস্তু আল্লাহ্র রাস্তায় কুরবানি দাও। সে দিনও সারাদিন চিন্তামগ্ন হয়ে কাটিয়ে দিলেন পরের রাত একেবারে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়া হল। 

অবশেষে জানলেন, বুঝলেন এবং নিশ্চিত হলেন, আর প্রাণাধিক প্রিয় সন্তানকে ডেকে বললেন। প্রিয় বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি তোমাকে জবেহ (কুরবানী) করতে। এখন তোমার অভিমত কী? শিশু ইসমাইল আলাইহিস সালাম নির্দ্বিধায় বলে দিলেন বাবা – আপনাকে যা নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তা-ই পালন করুন। নিশ্চয়ই আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মাঝে পাবেন। 

আদরের দুলালের মুখে এমন কথা শুনে পিতা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম মহান আল্লাহ্র দরবারে শোকরিয়া আদায় করলেন। যিলহজ্বের দশ তারিখ যথারীতি পিতা-পুত্র উভয়ে মিনার প্রান্তরে গিয়ে কুরবানির প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন সময় শিশুপুত্র বাবার কাছে কিছু আবেদন করলেন, আব্বাজান! আমি আমার মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসতে পারিনি। আমি প্রস্তুত। আমাকে জবেহ করার পূর্বে ভাল করে আমার হাত- পা বেঁধে ফেলবেন। কারণ, জবেহের কষ্টে যদি আমার হাত-পা নড়াচড়া করি আপনার শরীরে লেগে যেতে পারে, যা হবে চরম বেআদবী। জবেহের পর আমার রক্তমাখা কাপড়-চোপড় আমার মায়ের কাছে নিয়ে যাবেন; যা দেখে অন্তত আমার মা পুত্র হারার বেদনায় কিছুটা শান্তনা খুঁজে পাবেন। আর জবেহের পূর্বে আপনার দু’চোখ বেঁধে ফেলবেন, যাতে আমার প্রতি কোন মায়া সৃষ্টি হয়ে না যায়, যা আপনার পরীক্ষা ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ছুরিটা ভাল করে ধারালু করে নিবেন যাতে আপনার কষ্ট না হয়। 

শুরু হল কুরবানীর মূল পর্ব। শিশুপুত্রকে মাটিতে শুইয়ে ধারালো ছুরি চালনা শুরু করলেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। এক পর্যায়ে রাগ করে ছুরি নিক্ষেপ করলে গিয়ে পড়ল একটা কঠিন পাথরের উপর। ছুরি এতই ধারালো ছিল যে পাথর টুকরো টুকরো হয়ে গেল। হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম বলে উঠলেন-হে ছুরি তুিম কঠিন পাথর কেটে টুকরো টুকরো করতে পার কিন্তু আমার সন্তানের কোমল চামড়া কাটতে পার না। ঐ ছুরি থেকে আওয়াজ বের হল – ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ আমাকে কাটার নির্দেশ দিলেও মহান আল্লাহ আমাকে নিষেধ করে রেখেছেন।হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম আল্লাহ্‌র দরবারে আবারও কান্নাকাটি করলেন – আল্লাহ আমার পরীক্ষায় কামিয়াব কর। তিনি আবারো চোখ বেঁধে ছুরি চালালেন। এবার অনুভব করলেন জবেহ হয়ে গেল। তখন বলছিলেন বিসমিল্লাহ, পার্শ্ব থেকে আওয়াজ শোনা গেল ওয়ালিল্লাহিল হামদ। তাড়াতাড়ি চোখের বাঁধন খুলে দেখলেন এক পার্শ্বে জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম আর অন্যপাশে শিশুপুত্র ইসমাইল আলাইহিস সালাম। আর সামনে একটি দুম্বা জবেহকৃত অবস্থায় পড়ে আছে। 

ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম অবস্থা দর্শনে বিব্রত বোধ করলে গায়েব থেকে আওয়াজ আসলো যা পবিত্র কুরআনের ভাষায়-

 وَنَادَيْنَاهُ أَنْ يَا إِبْرَاهِيمُ (১০৪) قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ (১০৫)

অর্থাৎ: আমি আহবান করলাম হে ইবরাহীম নিশ্চয় তুমি তোমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছ। এভাবেই আমি পুণ্যবানদের পুরস্কৃত করে থাকি। মূলত একটি দুম্বার মাধ্যমে হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম-এর কুরবানি আল্লাহ পাক কবুল করলেন এবং পরবর্তীতে আমাদের শরিয়তে সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের উপর কুরবানি আবশ্যক করে দেয়া হলো। 

হাদীসে পাকে এসেছে – সাহাবীগণ নবীজির কাছে জানতে চাইলেন। কুরবানি কী? হুযূর বললেন – তোমাদের পিতা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম – এর সুন্নাত। তারা আবার জানতে চাইলেন এতে কী ফজিলত? কুরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকী লেখা হবে। 

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment