সাইনবোর্ড মার্কা আহলে হাদীসদের আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে শিরকী আকীদাঃ সহিহ্ আক্বিদার ভণ্ডামীতে ভূঁয়া সালাফীদের নিজেদের মধ্যেই মোরগ লড়াই ▆
এযুগের সাইনবোর্ড মার্কা আহলে হাদীসরা বিভিন্ন ভ্রান্ত অজুহাত দেখিয়ে আল্লাহ তা’আলাকে সর্বত্র বিরাজমান (Omnipresent, Omnipotent) মানে না।
এ অজুহাতের মাধ্যমে তারা পবিত্র কোরআনের কিছু আয়াত কেবল অবিশ্বাস করে না, এসবের অপব্যাখ্যাও করে। এটির ভিত্তিতে নিজেদেরকে সহীহ আকীদার লোক বলে দাবী করে। অথচ তাদের এই আকীদার সাথে ইহুদী আকীদারই মিল। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বিদা এর সম্পূর্ণ বিপরীত।
আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে কাররামিয়া ফেরকাটি মূলত: মুসলমানদের মাঝে ইহুদী আক্বিদার প্রতিনিধিত্ব করেছে।
প্রাচীন সেই কাররামিয়া ফেরকার উত্তরসূরী হলো বর্তমান সময়ের সালাফী ও আহলে হাদীস ফেরকা। নতুন মোড়কে পুরনোরই পুনঃ প্রচার। পুনঃ আত্মপ্রকাশ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সর্বত্র বিরাজমান এই সহিহ আক্বিদাটি পবিত্র কোরআনের স্পষ্ট আয়াত থেকে চয়ন করা হয়েছে।
তবে একটা কথা মনে রাখবেন, তারা যখন পবিত্র কোরআনের আয়াতগুলোতে আটকে যাবে তখন হঠাৎ আপনাকে বলে দেবে যে, আপনাদের ইমাম আবু হানীফাও তো এরূপ আকীদা রাখতেন। তাহলে আপনাদের আকীদা আর আপনাদের ইমামের আকীদের মধ্যে মতভেদ আছে।
আরো বলবে আকীদার ক্ষেত্রে আপনারা আহলে সুন্নাহ থেকে বের হয়ে মাতুরদী আকীদা মানেন আর আমলের ক্ষেত্রে মানেন ইমাম আবু হানীফাকে।
এগুলো তাদের প্রতারণামূলক কথা।
ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এঁর ইস্তিওয়া মানা আর তথাকথিত আহলে হাদীসদের ইস্তিওয়া মানা এক নয়। সেটা নিয়েও আমরা আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
যেহেতু তাদের দাবী হলো কোরআন হাদীস মানে। আর তারা কোরআন হাদীসের ভিত্তিতে দুনিয়ার মুসলমানকে এক করার চেষ্টা করছে। সেকারণে তাদের এসব প্রতারণামূলক কথাগুলো আপনি সহজে অনুমান করতে পারবেন নিচের এই কলামগুলো পড়লে।
কোরআন হাদীস মানলে এবং কোরআন হাদীস ছাড়া কিছুই না মানলে তারা কোন মুখে আকীদার বেলায় এসে ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এঁর কথা বলে থাকে? আমলের বেলায় ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)’কে মুশরিক পর্যন্ত বলতে বাকী রাখে না। কিন্তু আকীদার ব্যাপারে এলে তাদের সবচেয়ে বড় দলীল হলো ইমাম আবু হানফা (রঃ)।
তাদের দাবী হলো তারা কোরআন হাদীসের ভিত্তিতে মুসলমানদের এক করবে। অথচ এই লেখা পড়ার পর বিজ্ঞ পাঠক বুঝতে পারবেন স্বয়ং কয়েকটা আকীদা নিয়েও তাদের মধ্যে কত হাজার (Thousands) মতবিরোধ। তাহলে এর দ্বারা কি তারা এক করবেন, নাকি যারা এপর্যন্ত এক (United) আছেন তাদের ঐক্য ভেঙ্গে তছনছ (Desperate) করবেন?
বিষয়গুলো ভাল করে পড়ে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন। আমীন।
আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র বিরাজমান (Omnipresent, Omnipotent) :-
০১-
ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ
অর্থাৎঃ অতঃপর তিনি আরশে সমাসিন হন।
[সূরা হাদীদ; আয়াত ৩।]
০২-
قوله تعالى {وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ}
অর্থাৎঃ আর যখন আমার বান্দা আমাকে ডাকে, তখন নিশ্চয় আমি তার পাশেই (থাকি)। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই যখন সে ডাকে।
[সূরা বাকারা; আয়াত ১৮৬।]
০৩-
قوله تعالى {وَنَحنُ أَقرَبُ إِلَيهِ مِن حَبلِ الوَرِيدِ} [ق 16]
অর্থাৎঃ আর আমি বান্দার গলদেশের শিরার চেয়েও বেশি নিকটবর্তী।
[সূরা কাফ; আয়াত ১৬।]
০৪-
فَلَوْلا إِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُومَ (83) وَأَنْتُمْ حِينَئِذٍ تَنْظُرُونَ (84) وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْكُمْ وَلَكِنْ لا تُبْصِرُونَ (85)
অর্থাৎঃ অতঃপর এমন কেন হয়না যে, যখন প্রাণ উষ্ঠাগত হয়। এবং তোমরা তাকিয়ে থাক। এবং তোমাদের চেয়ে আমিই তার বেশি কাছে থাকি। কিন্তু তোমরা দেখতে পাওনা।
[সূরা ওয়াকিয়া; আয়াত ৮৩, ৮৪, ৮৫।]
০৫-
{ وَللَّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ فَأَيْنَمَا تُوَلُّواْ فَثَمَّ وَجْهُ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ وَاسِعٌ عَلِيمٌ } [البقرة-115]
অর্থাৎঃ পূর্ব এবং পশ্চিম আল্লাহ তায়ালারই। সুতরাং যেদিকেই মুখ ফিরাও, সেদিকেই রয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সর্বব্যাপী সর্বজ্ঞাত।
[সূরা বাকারা; অায়াত ১১৫।]
০৬-
قوله تعالى { وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَمَا كُنتُمْ } [ الحديد – 4 ]
অর্থাৎঃ তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তিনি তোমাদের সাথে আছেন।
[সূরা হাদীদ; অায়াত ৪।]
০৭-
وقال تعالى عن نبيه : ( إِذْ يَقُولُ لِصَاحِبِهِ لا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا (التوبة من الآية40
অর্থাৎঃ যখন তিনি তাঁর সাথীকে (সাহাবী হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাঃ’কে) বললেন-ভয় পেয়োনা, নিশ্চয় আমাদের সাথে আল্লাহ আছেন।
[সূরা হাদীদ; অায়াত ৪০।]
০৮-
قوله تعالى مَا يَكُونُ مِن نَّجْوَى ثَلاثَةٍ إِلاَّ هُوَ رَابِعُهُمْ وَلا خَمْسَةٍ إِلاَّ هُوَ سَادِسُهُمْ وَلا أَدْنَى مِن ذَلِكَ وَلا أَكْثَرَ إِلاَّ هُوَ مَعَهُمْ أَيْنَ مَا كَانُوا ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا عَمِلُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ ( المجادلة – 7 )
অর্থাৎঃ কখনো তিন জনের মাঝে এমন কোন কথা হয়না যাতে চতুর্থ জন হিসেবে তিনি উপস্থিত না থাকেন, এবং কখনও পাঁচ জনের মধ্যে এমন কোনও গোপন কথা হয় না, যাতে ষষ্ঠজন হিসেবে তিনি উপস্থিত না থাকেন। এমনিভাবে তারা এর চেয়ে কম হোক বা বেশি, তারা যেখানেই থাকুক, আল্লাহ তাদের সঙ্গে থাকেন। অতঃপর কিয়ামতের দিন তিনি তাদেরকে অবহিত করবেন তারা যা কিছু করত। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছু জানেন।
[সূরা মুজাদালা; আয়াত ৭।]
০৯-
وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ
অর্থাৎঃ আল্লাহ তায়ালার কুরসী আসমান জমিন ব্যাপৃত।
[সূরা বাকারা; আয়াত ২৫৫।]
কতিপয় প্রশ্ন ও তার উত্তরঃ
প্রশ্ন- ক/ আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান হলে আকাশের দিকে কেন হাত উঠিয়ে দুআ করা হয়?
উত্তরঃ আদবের জন্য। যদিও আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র বিরাজমান। তিনি ডান দিকেও আছেন, বাম দিকেও আছেন, উপরেও আছেন, নিচেও আছেন। সামনেও আছেন। বাম দিকেও আছেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার শান হল উঁচু, তাই আদব হিসেবে উপরের দিকে হাত উঠিয়ে দুআ করা হয়।
যেমন কোন ক্লাশরুমে যদি লাউডস্পীকার ফিট করা হয়। চারিদিক থেকে সেই স্পীকার থেকে শিক্ষকের আওয়াজ আসে। তবুও যদি কোন ছাত্র শিক্ষকের দিকে মুখ না করে অন্যত্র মুখ করে কথা শুনে তাহলে শিক্ষক তাকে ধমক দিবেন। কারণ এটা আদবের খেলাফ। এই জন্য নয় যে, অন্য দিক থেকে আওয়াজ শুনা যায় না। তেমনি আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র বিরাজমান থাকা সত্বেও উপরের দিকে মুখ করে দুআ করা হয় আল্লাহ তায়ালা উচুঁ, সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই আদব হিসেবে উপরের দিকে হাত তুলে দুআ করা হয়।
প্রশ্ন- খ/ জিবরাঈল উপর থেকে নিচে নেমে আসেন মানে কি?
উত্তরঃ এর মানে হল-যেমন পুলিশ এসে কোন অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে এর কারণ হিসেবে বলে যে, উপরের নির্দেশ। এর মানে কি পুলিশ অফিসার উপরে থাকে? না সম্মান ও ক্ষমতার দিক থেকে যিনি উপরে তার নির্দেশ তাই বলা হয় উপরের নির্দেশ? তেমনি আল্লাহ তায়ালা ফরমান নিয়ে যখন জিবরাঈল আসেন একে যদি বলা হয় উপর থেকে এসেছেন, এর মানেও সম্মানসূচক ও পরাক্রমশালীর কাছ থেকে এসেছেন। তাই বলা হয় উপর থেকে এসেছেন। এই জন্য নয় যে, আল্লাহ তায়ালা কেবল আরশেই থাকেন।
প্রশ্ন- গ/ আল্লাহ তায়ালা কি সকল নোংরা স্থানেও আছেন? নাউজুবিল্লাহ্!
উত্তরঃ এই উদ্ভট যুক্তি যারা দেয় সেই আহমকদের জিজ্ঞেস করুন। তার কলবে কি দু’একটি কুরাআনের আয়াত কি সংরক্ষিত আছে? যদি বলে আছে। তাহলে বলুন তার মানে সীনায় কুরআনে কারীম বিদ্যমান আছে। কারণ সংরক্ষিত সেই বস্তুই থাকে, যেটা বিদ্যমান থাকে, অবিদ্যমান বস্তু সংরক্ষণ সম্ভব নয়। তো সীনায় যদি কুরআন বিদ্যমান থাকে, সেটা নিয়ে টয়লেটে যাওয়া কিভাবে জায়েজ? কুরআন নিয়েতো টয়লেটে যাওয়া জায়েজ নয়। তখন ওদের আকল থাকলে বলবে-কুরআন বিদ্যমান, কিন্তু দেহ থেকে পবিত্র কুরআন। তেমনি আমরা বলি আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র বিরাজমান। কিন্তু তিনি দেহ থেকে পবিত্র। সেই হিসেবে সর্বত্র বিরাজমান।
ভ্রান্ত মতবাদ- ০১:
“আল্লাহ তায়ালা দৌড়ান”- সালাফীদের এই ভ্রান্ত মতবাদ :-
পূর্বের আলোচনায় আমরা উল্লেখ করেছি যে, সালাফীদের আকিদা হলো আল্লাহ তায়ালা আরশে বসে আছেন। এরা আল্লাহর জন্য উঠা, নামা, দৌড়ানো, স্থানান্তর হওয়া সব কিছুই সাব্যস্ত করে। এ পর্বে তাদের বিশ্বাসে “আল্লাহর দৌড়ানো”- সম্পর্কে আলোচনা করবো, ইনশা আল্লাহ্।
আলোচনা:
হাদীসে রয়েছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আমার নিকট যে হেটে হাসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যায়। ” এই হাদীস থেকে তারা প্রমাণ দিয়েছে যে আল্লাহ পাক দৌঁড়ান। অথচ সহীহ আকিদার একজন শিশুও বুঝবে যে, এখানে দৌড়ানো দ্বারা আল্লাহ তায়ালা তাকে সাহায্য করা ও কবুল করা উদ্দেশ্য।
যাই হোক, কতো বড় আশ্চর্যের বিষয়, এজাতীয় ভ্রান্ত বিশ্বাস রাখার পরেও এরা সহীহ আকিদার দাবী করে?
সউদি মুফতী বোর্ডের ফতোয়াঃ
সউদি মুফতী বোর্ডে প্রশ্ন করা হয়, আল্লাহ তায়ালার কী দৌড়ানোর গুণ রয়েছে। তারা উত্তর দেয়, হ্যা আল্লাহর জন্য দৌড়ানোর গুণ রয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা দৌড়ান। এ ফতোয়ায় সাক্ষর করেছে, ইবনে বাজ, আব্দুর রাজ্জাক আফিফী, আব্দুল্লাহ ইবনে গাদইয়ান, আব্দুল্লাহ বিন কুউদ।
ফতোয়া নং-৬৯৩২
[খ.৩, পৃ.১৪২]
ইবনে উসাইমিনের বক্তব্য:
ইবনে উসাইমিন বলেন,
“আল্লাহ তায়ালার জন্য দৌড়ানোর গুণ প্রমাণিত। …….সুতরাং এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা আবশ্যক”
[সূত্রঃ মাজমুউ ফাতাওয়া ও রসাইল, খ., ১, পৃ., ১৮২।]
বিরোধী বক্তব্য:
ইবনে জিবরীনের বক্তব্য:
ইবনে জিবরীন বলেন, ”দৌড়ানো আল্লাহর গুণ নয়। বরং দৌড়ানো দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, বান্দার প্রয়োজন পূরণে বিলম্ব না করা।”
বিস্তারিত:
http://audio.islamweb.net/audio/Fulltxt.php?audioid=149331
সালেহ আল-ফাউজানের বক্তব্য:
শায়খ সালেহ আল -ফাউজানের মতে, দৌড়ানো আল্লাহর কোন গুণ নয়।
আলবানীর আশ্চর্যজনক উত্তর:
আলবানী দৌড়ানোর বিষয়ে আশ্চর্যজনক স্ববিরোধীতার আশ্রয় নিয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে আলবানী বলেছে,
”আল্লাহর তায়ালার অবতরণ ও আসার মতো দৌড়ানো আল্লাহর একটি গুণ”
[সূত্রঃ মাউসুয়াতুল আলবানী, খ., ১, পৃ., ২৫৮।]
ভ্রান্ত মতবাদ- ০২:
“আল্লাহর আকার”- সম্পর্কে ভ্রান্ত আকিদা:-
এটি প্রমাণের ধারনাটি মূলত: ইহুদী ধর্ম থেকে এসেছে।
ইহুদীরা আল্লাহ তায়ালাকে মানুষের আকৃতিতে বিশ্বাস করে। মানুষের প্রায় সব গুণাগুণ আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করে থাকে।
দেহবাদী আকিদার ক্ষেত্রে ইহুদীদের এসব জঘন্য আকিদা কাররামিয়া ও শিয়াদের মাধ্যমে ইসলামী আকিদায় প্রবেশ করে। পরবর্তীতে কাররামিয়াদের অনুসারী তথাকথিত সালাফীরাও এসব বাতিল আকিদা লালন করে এবং সমাজে দেহবাদী আকিদা প্রচার করতে থাকে।
আল্লাহর আকার সম্পর্কে ইহুদী আকিদা:
ওল্ড টেস্টামেন্টের বুক অব জেনেসিসে রয়েছে,
And God said, Let us make man in our image, after our likeness: and let them have dominion over the fish of the sea, and over the fowl of the air, and over the cattle, and over all the earth, and over every creeping thing that creepeth upon the earth.
“প্রভূ বললেন, আমি আমার আকৃতিতে, আমার সাদৃশ্যে মানুষ সৃষ্টি করবো, যারা মাছ, সমুদ্র…..জয় করবে”
[সূত্রঃ বুক অব জেনেসিস, পরিচ্ছেদ-১, শ্লোক-২৬।]
একই বইয়ের ২৭ নং শ্লোকে রয়েছে,
So God created man in his own image, in the image of God created he him; male and female created he them.
অর্থাৎ সুতরাং প্রভূ মানুষকে নিজের আকৃতিতে সৃষ্টি করলেন; প্রভূর আকৃতিতে মানুষকে সৃষ্টি করলেন। আর তাদেরকে সৃষ্টি করলেন পুরুষ ও মহিলা হিসেবে।
[সূত্রঃ বুক অব জেনেসিস, পরিচ্ছেদ-১, শ্রোক, ২৭।]
অনলাইন ভার্সন:
http://studybible.info/KJV/Genesis%201:27
ইহুদীদের কিতাব থেকে আল্লাহর আকার প্রমাণ:
তথাকথিত সালাফীরা যে ইহুদীদের কিতাব থেকে তাদের এই আকিদাটি নিয়েছে, এটি আমাদের মৌখিক কোন দাবী নয়। বরং তাদের কিতাবেই বিষয়গুলো স্পষ্ট রয়েছে।
দেহবাদী সালাফীদের বক্তব্য:
সালাফীদের অন্যতম শায়খ হলো আব্দুল আজিজ রাজেহী ও শায়খ সালেহ ইবনে আব্দুল আজিজ আলুশ শায়খ।
তাদের মতে আল্লাহ তায়ালার সুরত বা আকৃতি রয়েছে। এই সুরত হলো আল্লাহর স্ট্রাকচার বা শেকল্ বা গঠন ও অবকাঠামো। আল্লাহ তায়ালার এই গঠন ও অবকাঠামোর মাধ্যমে তিনি অন্যদের থেকে পৃথক হয়ে থাকেন। আল্লাহ তায়ালার বিদ্যমান হওয়ার জন্য এমন একটি সুরত বা গঠন প্রয়োজন, যার মাধ্যমে তিনি অস্তিত্বশীল হয়ে থাকেন।
[সূত্রঃ বয়ানু তা’লবিসিল জাহমিয়া, পৃ., ৪৫৫।]
সৌদি মুফতী বোর্ডের ফতোয়া:
সালাফীরা শুধু আল্লাহ তায়ালার আকার আছে, একথা বলেই ক্ষ্যান্ত হয় না। বরং তাদের মতে আল্লাহর আকার হলো মানুষের মতো।
এর স্বপক্ষে তারা দলিল দিয়ে থাকে, “আল্লাহ তায়ালা আদম আ. কে নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন”- এই হাদীস দ্বারা। তাদের মতে আল্লাহ তায়ালা আদম আ. কে আল্লাহর নিজের আকৃতি অনুযায়ী সৃষ্টি করেছেন। বরং তাদের নিকট আল্লাহর আকার ও মানুষের আকারের মাঝে একটি মা’নায়ে কুল্লী বা সামষ্টিক অর্থ রয়েছে। অর্থাৎ উভয়ের আকৃতি একই রকম। তবে এই মা’নায়ে কুল্লী বা সামষ্টিক অর্থ থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর আকৃতি মানুষের সাথে সাদৃশ্য রাখে না। অর্থাৎ আল্লাহর একটি গঠন বা আকৃতি রয়েছে যেটা মানুষের মতো। কিন্তু এই গঠন হুবহু মানুষের আকৃতির সাইজ, রং বা পরিমাপ এক নয়। তাদের নিকট আল্লাহর আকার ও মানুষের আকারের মাঝে গুণগত পার্থক্য বিদ্যমান কিন্তু সমষ্টিগতভাবে উভয় আকৃতি একই রকম। এই কথাটি সৌদি মুফতী বোর্ডের পক্ষ থেকে ফতোয়া দেয়া হয়েছে। (নাউযুবিল্লাহ) ফতোয়া নং-২৩৩১
ইবনে উসাইমিনের বক্তব্য:
“ইবনে উসাইমিনের মতে আল্লাহর গুণের সাথে মানুষের সাদৃশ্য রয়েছে। তার মতে আল্লাহর হাত ও মানুষের হাতের মাঝে সাদৃশ্য রয়েছে। আল্লাহর চোখ ও মানুষের চোখের মাঝে সাদৃশ্য রয়েছে। আল্লাহর চেহারার সাথে মানুষের চেহারার সাদৃশ্য রয়েছে। তবে আল্লাহর হাত হুবহু মানুষের হাতের মতো নয়।”
অর্থাৎ ইবনে উসাইমিনের মতে আল্লাহর সাথে মানুষের সাদৃশ্য রয়েছে কিন্তু আল্লাহর হাত হুবহু মানুষের হাতের মতো নয়।
এই হুবহু জিনিসটা বোঝার জন্য ছোট্ট একটি উদাহরণ দিচ্ছি,
আমরা জানি ত্রিভুজ কয়েক প্রকার। এর মধ্যে এক প্রকার ত্রিভুজ হলো, সমবাহু ত্রিভুজ। অর্থাৎ একটা ত্রিভুজকে অপর আরেকটি ত্রিভুজের কোণ ও বাহুর দিক থেকে সমান। একটাকে আরেকটা দিয়ে রিপ্লেস করা যায়। কিন্তু সমবাহু ত্রিভুজ ছাড়া অন্যান্য সব ত্রিভুজই একটা আরেকটার সাথে সাদৃশ্য রাখে। কিন্তু এগুলো তো একটা আরেকটা হুবহু একই রকম নয়।
সারকথা হলো, ইবনে উসাইমিনের মতো আল্লাহ তায়ালা ও মানুষের মাঝে সাদৃশ্য রয়েছে কিন্তু আল্লাহ ও মানুষ হুবহু এক নয়। আল্লাহর চেহারার সাথে মানুষের চেহারার সাদৃশ্য রয়েছে, কিন্তু আল্লাহ ও মানুষের চেহারা হুবহু এক নয়।
সালাফীদের শায়খ হামুদ বিন আব্দুল্লাহ তুয়াইজারী একটি কিতাব লিখেছে। কিতাবের নাম, আকিদাতু আহলিল ইমান ফি খালকি আদম আলা সুরতির রহমান ( মু’মিনের বিশ্বাস: আল্লাহ তায়ালা আদম আ. কে আল্লাহর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন)। সৌদি শায়খ ইবনে বাজ এই কিতাবের উপর একটি ভূমিকা লেখে দিয়েছে। কিতাবের ভূমিকায় ইবনে বাজ লিখেছে, আল্লাহ তায়ালার নিজ আকৃতিতে আদম আ. কে সৃষ্টি করেছেন এটি সালাফে সালেহীনের আকিদা। তিনি অন্যান্য আলেমদেরকে এটি বিশ্বাস করার আহ্বান জানিয়েছেন। হামুদ বিন আব্দুল্লাহ আত-তুয়াইজারীর এ কিতাবটি একটি জঘন্য কিতাব। তার বক্তব্যগুলো স্পষ্ট মুজাসসিমাদের বক্তব্য। সে মূলত: দেহবাদী আকিদা প্রমাণের জন্য এই বই লিখেছে। এই তুয়াইজারী আল্লাহর আকৃতি প্রমাণের জন্য তাউরাত থেকে প্রমাণ দিয়েছে যে, আল্লাহর আকৃতি রয়েছে।
কথিত সালাফী আলেমদের বিরোধীতা:
সালাফী আলেমদের মাঝে শায়খ আলবানী আল্লাহর আকার বা আকৃতি অস্বীকার করেছেন। এছাড়াও ইবনে খোযাইমা তার কিতাবুত তাউহীদে আল্লাহর আকৃতি অস্বীকার করেছেন।
আলবানীর ছাত্র নাসীব রিফায়ীও আল্লাহর আকৃতি অস্বীকার করেছেন।
আলবানীর বক্তব্য:
শায়খ আলবানী ইবনে বাজের ভূমিকা সমৃদ্ধ কিতাব “আকিদাতু আহলিল ইমান ফি খালকি আদম আলা সুরতির রহমান” (মু’মিনের বিশ্বাস: আল্লাহ তায়ালা আদম আ. কে আল্লাহর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন) কঠোর সমালোচনা করেছে।
তুয়াইজারীর লেখা এই কিতাব সম্পর্কে আলবানী তার সহীহু আদাবিল মুফরাদে লিখেছে,
”তুয়াইজারী “আকিদাতু আহলিল ইমান ফি খালকি আদম আলা সুরতির রহমান” ( মু’মিনের বিশ্বাস: আল্লাহ তায়ালা আদম আ. কে আল্লাহর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন) এই কিতাব লিখে সালাফী আকিদা ও রাসূল স. এঁর হাদীসের প্রতি নিকৃষ্ট কাজ করেছে।”
তুয়াইজারী সম্পর্কে শায়খ আলবানী বলেছে, সে হাদীস নিয়ে কথা বলার যোগ্য নয় এবং আলেমদের বক্তব্য বিকৃত করে থাকে। অর্ধেক বক্তব্য উল্লেখ করে এবং অর্ধেক ছেড়ে দেয়।
[সূত্রঃ আলবানীর সহীহু আদাবিল মুফরাদ, ৩৭৫ পৃ.।]
এছাড়াও দেখুন, ফাতাওয়াশ শায়খ আলবানী ফিল মদিনাতি ওয়াল ইমারত, পৃ,১৬-১৭। মুখতাসারু সহীহিলি বোখারী, খ.২, পৃ.১৭৮।
আলবানী আল্লাহর আকৃতি অস্বীকার করায় অন্যান্য সালাফী শায়খরা তার উপর বেশ চটেছে।
এই সালাফীদের দু’জন শায়খ স্পষ্ট আলবানীর সমালোচনা করেছে। এরা হলো, শায়খ আব্দুর রাজ্জাক আফিফী ও শায়খ আব্দুল্লাহ দাবিশ।
আব্দুর রাজ্জাক আফিফীর বক্তব্য:
“আল্লাহ তায়ালা আদম আ. কে নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। এটিই সঠিক। যদিও আলবানী ও নাসীব রিফায়ী এর বিরোধীতা করেছে”
[সূত্রঃ ফাতাওয়া ও রসাইল, পৃ., ১৬০,, খ., ১।]
আব্দুল্লাহ দাবিশ এর বক্তব্য:
শায়খ আব্দুল্লাহ দাবিশ আলবানী সম্পর্কে লিখেছে,
”আলবানীর মতটি আমি দেখেছি। এটি আহলে সুন্নতের বক্তব্যের বিরোধী এবং পথভ্রষ্ট জাহমিয়াদের বক্তব্যের অনুরুপ”
[সূত্রঃ দিফাউ আহলিস সুন্নাহ, পৃ., ৫।]
যারা আল্লাহর আকার সাব্যস্ত করে তাদের সম্পর্কে ইমাম কুরতুবী রহ. এঁর বক্তব্য:
যারা আল্লাহর আকার সাব্যস্ত করেছে এবং আল্লাহর আকৃতিতে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে এধরনের বিশ্বাস রাখে, ইমাম কুরতুবী (রঃ) তাদেরকে মুশাববিহা বলেছেন। ইমাম কুরতুবী এধরনের আকিদা পোষণকারীদেরকে কাফের পর্যন্ত বলেছেন।
[সূত্রঃ আল-মুফহিম, খ., ৬, পৃ., ৫৯৮।]
ভ্রান্ত মতবাদ- ০৩:
“আল্লাহর সীমা আছে”- বলে সালাফীদের ভ্রান্ত মতবাদ :-
ইবনে বাজের বক্তব্য :-
“ইবনে বাজের মতে আল্লাহর সীমা রয়েছে (অর্থাৎ আল্লাহ অসীম নন, নাউযুবিল্লাহ্)। তবে আল্লাহর সীমা তিনি ছাড়া আর কেউ জানেন না।”
আমরা কুরআন ও হাদীসের কোথাও এধরনের কোথা পাইনি। আল্লাহ পাক ভালো জানেন, ইবনে বাজ এধরনের কথা কোথায় পেলো।
সীমা থাকা সম্পূর্ণরুপে সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য। এটি আল্লাহর জন্য সাব্যস্তের ব্যাপারে কেন এতো মরিয়া, আল্লাহ পাকই ভালো জানেন।
ত্বহাবী শরীফে স্পষ্ট লেখা রয়েছে, আল্লাহ তায়ালা সীমা-পরিসীমা থেকে পবিত্র। এই স্পষ্ট বক্তব্যের বিকৃত ব্যাখ্যা করে সে লিখেছে,
ইবনে বাজ তার মাজমুউ ফাতাওয়া তে বলেছেন,
”আল্লাহর সীমা রয়েছে, তবে সেটা তিনিই জানেন, বান্দা জানেন না”
[সূত্রঃ মাজমুউ ফাতাওয়া, খ., ২, পৃ., ৭৮।]
ইবনে উসাইমিনের বক্তব্য:
ইবনে উসাইমিনের মতে হদ বা সীমা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি থেকে পৃথক। সৃষ্টি ও আল্লাহর মাঝে পার্থক্যের যে সীমা রয়েছে, সেটি আল্লাহর জন্য সত্য। অর্থাৎ ইবনে উসাইমিনের নিকট হদ বা সীমার অর্থ হলো, সৃষ্টি ও আল্লাহর মাঝে পার্থক্যের সীমা।
[সূত্রঃ শরহুল আকিদাতিল ওয়াসিতিয়া, খ., ১, পৃ., ৩৭৯।]
ইবনে জিবরীনের বক্তব্য:
সালাফী শায়খ ইবনে জিবরীনের মতে আল্লাহ ও সৃষ্টির মাঝে একটি সীমা রয়েছে। এর মাধ্যমে সৃষ্টি ও আল্লাহর মাঝে পার্থক্য করা হয়।
[সূত্রঃ আর-রিয়াজুন নাদিয়্যা, খ., ২, পৃ., ১৫।]
সালেহ আল-ফাউজানের বক্তব্য:
সালেহ আল-ফাউজানের মতে হদ বা সীমার অর্থ হলো, বাস্তবতা। অর্থাৎ আল্লাহর হদ আছে এর অর্থ হলো, আল্লাহ প্রকৃত পক্ষেই আরশের উপর সমাসীন হয়েছেন।
সালেহ আল-ফাউজানের মতে, হদ দ্বারা কোন সীমা উদ্দেশ্য নয়।
[সূত্রঃ শরহু লুময়াতিল ই’তেকাদ, পৃ., ২৯৭]
আলবানী সাহেবের বক্তব্য:
হাম্বলী মাজহাবের একজন আলেম মাহমুদ ইবনে আবিল কাসিম দাশতী একটা কিতাব লিখেছেন। তার কিতাবের নামটা আশ্চর্যজনক। ইসবাতুল হদ্দি লিল্লাহি তায়ালা ও বিয়ান্নাহু কাইদুন ও জালিসুন আলাল আরশ ( আল্লাহর সীমার প্রমাণ এবং আল্লাহ তায়ালা যে আরশে বসে আছেন, এর প্রমাণ)। সৌদি আরবের কয়েকজন শেইখ আবার এই নিকৃষ্ট কিতাবটিও তাদের আকিদার কিতাব হিসেবে ছেপেছে।
আলবানী সাহেব দাশতীর এই কিতাব সম্পর্কে বলেন,
”কুরআন ও সুন্নাহে (আল্লাহর সীমা ও বসার) কোন প্রমাণ নেই”
[সূত্রঃ মাখতুতাতু দারিল কুতুবিজ জাহিরিয়া, পৃ., ৩৭৬।]
ভ্রান্ত মতবাদ- ০৪:
“আল্লাহর ছায়া”- সম্পর্কে সালাফীদের ভ্রান্ত আকিদা :-
আল্লাহ তায়ালার ছায়া (নাউযুবিল্লাহ) :
ইবনে বাজের বক্তব্য:
সালাফীদের বিখ্যাত শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনে বাজের মতে আল্লাহ তায়ালার ছায়া রয়েছে। সে তার কিতাবে স্পষ্ট বলেছে, আল্লাহ তায়ালার ছায়া রয়েছে। আর কিয়ামতের দিন আল্লাহর এই ছায়ার নীচে সাত শ্রেণির মানুষকে আশ্রয় দিবেন।
ইবনে বাজ তার মাজমুউ ফাতাওয়া ও মাকালাতে লিখেছে,
“প্রশ্ন: হাদীসে রয়েছে, যে দিন কোন ছায়া থাকবে না, সেদিন আল্লাহ তায়ালা সাত শ্রেণির মানুষকে তার নিজ ছায়ার তলে স্থান দিবেন। আল্লাহ তায়ালার ক্ষেত্রে এই গুণ সাব্যস্ত করা যাবে যে, আল্লাহর ছায়া রয়েছে?
উত্তর: হ্যা। যেমনটি হাদীসে রয়েছে। কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে, আল্লাহ তায়ালা তার আরশের ছায়ায় স্থান দিবেন। কিন্তু বোখারী মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, তিনি তার নিজ ছায়ায় স্থান দিবেন। সুতরাং ”আল্লাহ তায়ালার শান অনুযায়ী আল্লাহর ছায়া রয়েছে।”
[সূত্রঃ মাজমুউ ফাতাওয়া ও মাকালাত, খ., ২৮, পৃ., ৪০২।]
সালাফীদের মধ্যে আকিদাগত স্ববিরোধ:-
ইবনে উসাইমিনের বক্তব্য:
ইবনে উসাইমিনের মতে, এটি আল্লাহ তায়ালার নিজস্ব ছায়া নয়। বরং আল্লাহর সৃষ্ট ছায়া। তিনি আকিদাতুল ওয়াসিতিয়া এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন,
”সে দিন আল্লাহর ছায়া ব্যতীত অর্থাৎ আল্লাহর সৃষ্ট ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না। কেউ কেউ ধারণা রাখে যে, এটি আল্লাহর নিজস্ব ছায়া। নিশ্চয় এটি বাতিল ও ভ্রান্ত। কেননা, এর দ্বারা সূর্য আল্লাহর উপরে প্রভাব বিস্তার হওয়া আবশ্যক হয়।”
[সূত্রঃ শরহু আকিদাতিল ওয়াসিতিয়্যা, খ., ২, পৃ., ১৩৬।]
ইবনে উসাইমিন রিয়াজুস সালেহীন এর একটি ব্যাখ্যা লিখেছেন। রিয়াজুস সালেহীনের ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন,
“ছায়া দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, এমন ছায়া যা আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন সৃষ্টি করবেন। তার প্রিয় বান্দাদের যাকে ইচ্ছা এর নীচে ছায়া দান করবেন। এর দ্বারা আল্লাহর নিজের ছায়া উদ্দেশ্য নয়। ……যে ছায়া দ্বারা আল্লাহর নিজের ছায়া আছে বলে বিশ্বাস রাখে সে গাধার চেয়েও নির্বোধ”
[সূত্রঃ শরহু রিয়াজিস সালেহীন, খ., ৩, পৃ., ৩৪৭।]
শায়খ আব্দুর রহমান ইবনে নাসির আল-বাররাক এর বক্তব্য:
সালাফী শায়খ আব্দুর রহমান ইবনে নাসের আল-বাররাক বলেন,
”ছায়া হলো আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহর দিকে ছায়ার সম্পৃক্ততা মুলত: ছায়ার মর্যাদা ও আল্লাহর মালিকানাধীন বোঝানো উদ্দেশ্য। এই হাদীস থেকে বলা যাবে না যে, আল্লাহর নিজের ছায়া রয়েছে”
[সূত্রঃ ফাতহুল বারীর টীকা, ২য় খন্ড, পৃ., ৫০৩।]
শায়খ আলবানীর বক্তব্য:
সালাফীদের শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানী কিয়ামতের দিনের ছায়া সম্পর্কে বলে, আল্লাহর ছায়া দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর মালিকানাধীন ছায়া। যে ছায়ার মালিক আল্লাহ তায়ালা। এখানে আল্লাহর নিজের ছায়া উদ্দেশ্য নয়। তিনি লিখেছেন,
”আল্লাহর দিকে ছায়ার সম্পৃক্ততা আল্লাহর মালিকানা বোঝানোর জন্য। … এ ছায়া দ্বারা মুলত: আরশের ছায়া উদ্দেশ্য”
[সূত্রঃ মাউসুয়াতুল আলবানী, খ., ১, পৃ., ৩৬৬।]
ইস্তাওয়া শব্দের ভুল ব্যাখ্যায় সালাফীদের ভ্রান্ত আকিদা ও আকিদাগত মতবিরোধঃ
ক্বুরআ’নুল কারিমে বর্ণিত ‘ইস্তাওয়া’ শব্দের ভুল অর্থ ও সালাফীদের ভ্রান্ত মতবাদ:
ইবনে উসাইমিনের বক্তব্য:
সালাফীদের ইমাম ইবনে তাইমিয়া আল-আকিদাতুল ওযাসিতিয়্যা নামে একটি আকিদার কিতাব লিখেছে। আকিদাতুল ওয়াসিতিয়্যা ব্যাখ্যা লিখেছে ইবনে উসাইমিন। তিনি এর নাম দিয়েছেন, শরহুল আকিদাতিল ওয়াসিতিয়্যা। কিতাবটি দারু ইবনিল জাওযী প্রকাশ করেছে।
ইবনে উসাইমিন এ কিতাবে লিখেছে,
”ইস্তাওয়ার অর্থ হলো, উচু হওয়া ও স্থির হওয়া”
[সূত্রঃ শরহুল আকিদাতিল ওয়াসিতিয়্যা, খ., ১, পৃ., ৩৫৭, দারু ইবনিল জাওযী।]
ইবনে জিবরীনের বক্তব্য:
সালাফী শায়খ ইবনে জিবরীন আল-আকিদাতুল ওয়াসিতিয়্যার একটি ব্যাখ্যা লিখেছেন। তিনি এর নাম দিয়েছেন, আত-তালিকাতুজ জাকিয়্যা। তিনি এ কিতাবে লিখেছেন,
”অধিকাংশ আহলে সুন্নতের মতে “ইস্তাওয়া” এর অর্থ হলো স্থির হওয়া (এটা জঘন্যতম মিথ্যা কথা)”
[সূত্রঃ আত-তা’লিকাতুজ জাকিয়্যা, পৃ., ২১১-২১২, খ., ১।]
সালেহ আল-ফাউজানের বক্তব্য:
সালাফী শায়খ সালেহ আল-ফাউজান তার শরহু লুমআতিল ই’তেকাদ কিতাবে লিখেছে,
”সালাফে সালেহীন ইস্তাওয়ার একটি ব্যাখ্যা করেছেন ”স্থির হওয়া”
[সূত্রঃ শরহু লুময়াতিল ই’তেকাদ, পৃ., ৯১।]
সালাফী শায়খদের স্ববিরোধীতা:
পূর্বে যাকে আহলে সুন্নতের আকিদা, সালাফে সালেহীনের আকিদা হিসেবে উল্লেখ করা হলো, সে আকিদা সম্পর্কে সালাফী শায়খরা বলছেন, এসব আকিদা থেকে আমরা সম্পূর্ণ মুক্ত।
এধরনের দ্বিমুখী কথা সত্যিই বিস্ময়কর। সালাফীদের বিখ্যাত শায়খ, সউদি মুফতী বোর্ডের সদস্য ড. বকর আবু যায়েদ এই আকিদাকে সালাফীদের সম্পর্কে মিথ্যাচার বলে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ ইবনে তাইমিয়ার মতে আল্লাহ তায়ালা আরশে বসে আছেন। এমনকি তার মতে আল্লাহ তায়ালা মাছির পিঠেও বসতে পারেন। ইবনে তাইমিয়া যে আল্লাহর স্থির হওযার কথা বলেছেন, ড. বকর আবু যায়েদ এটি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তার মতে যারা ইবনে তাইমিয়া সম্পর্কে এধরনের কথা বলে তারা ইবনে তাইমিয়ার উপর মিথ্যাচার করে। কারণ ইবনে তাইমিয়া আল্লাহর স্থির হওয়ার আকিদা রাখতো না। ড. বকর আবু যায়েদ লিখছেন,
”কিছু বিভ্রান্ত লোক ইবনে তাইমিয়া সম্পর্কে বলেছে, তিনি আল্লাহর আরশের উপর স্থির হওয়ার কথা বলেছেন। এটি ইবনে তাইমিয়ার উপর মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই নয়”
[সূত্রঃ মু’জামুল মানাহিল লফজিয়্যা, পৃ., ৯১।]
আলবানীর বক্তব্য:
সালাফীদের শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানী লিখেছে,
”আল্লাহ তায়ালার ক্ষেত্রে স্থির হওয়ার কথা বলা বৈধ নয়। কারণ এটি মানুষের বৈশিষ্ট্য বা গুণ”
[সূত্রঃ মাওসুয়াতুল আলবানী, পৃ., ৩৪।]
ভ্রান্ত মতবাদ- ০৫:
আল্লাহ আরশের উপর বসে আছেন বলে সালাফীদের ভ্রান্ত আকিদা :-
ইস্তেওয়া শব্দের সঠিক অর্থ জেনে নিনঃ
নোটঃ আরশ আল্লাহর বাসস্থান নয়; বাসস্থানের কথা অমুসলিমেরা বলে। আল্লাহুস সামাদ, তিনি বাসস্থান থেকে অমুখাপেক্ষী। আল্লাহ্ তাঁর সৃষ্টির উপর ক্ষমতাবান।
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1852456931736410
_________
আল্লাহ সম্পর্কিত আকিদা : আল্লাহ তায়ালা স্থান ও দিক থেকে পবিত্র :-
http://goo.gl/Dv8hrt
________
এই পর্বে ইহুদী খৃষ্টান ধর্মের আকিদার সাথে মিল রেখে সালাফী, আহলে হাদিসদের আকিদা যে চলছে সেটা প্রমান করার প্রয়াস পাবো:-
ইসলাম ধর্মে তাদের বিপরীত করার আদেশ রয়েছে কিন্তু সালাফীরা তাদের আকিদাহকে ধরেছে।
ইরশাদ হয়েছে :
বলে দিনঃ অপবিত্র ও পবিত্র সমান নয়, যদিও অপবিত্রের প্রাচুর্য তোমাকে বিস্মিত করে। অতএব, হে বুদ্ধিমানগণ, আল্লাহকে ভয় কর-যাতে তোমরা মুক্তি পাও।
[সুরা আল মায়িদাহ্; ৫:৯৯-১০০।]
তোমরা অগ্নিপূজকদের বিপরীত কর।
[সূত্রঃ মুসলিম; ২/৫১০।]
প্রিয় নাবী কারিম (صلى الله عليه و آله و سلم) ইরশাদ করেন,
“তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের স্বভাবের অনুসরণ করবে, প্রতি পদে পদে, এমনকি তারা যদি কোন ধাব (গুইসাপের গর্ত)-এও প্রবেশ করে তবে তোমরাও তাই করবে।”
আমরা (সাহাবাগণ) জানতে চাইলাম, “হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি ইহুদী ও নাসারাদের অনুকরণের কথা বলছেন?” তিনি বললেন, “নয়তো কারা?” [সূত্রঃ বুখারী, মুসলিম।]
রসূলুল্লাহ (صلى الله عليه و آله و سلم) বলেন,
”যে ব্যক্তি যে জাতির সামঞ্জস্যতা অবলম্বন করবে সে কিয়ামতের দিন তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।”
[সূত্রঃ আবূ দাউদ, ৪/৪০৩১; মুসনাদে আহমদ, ২/৫০।]
এবার দেখুন, আরশে বসার ব্যাপারে ইহুদী আকিদাঃ
অল্ড টেস্টামেন্টের ফাস্ট কিং বইয়ে রয়েছে,
And Micaiah said, “Therefore hear the word of the LORD: I saw the LORD sitting on his throne, and all the host of heaven standing beside him on his right hand and on his left;
অর্থাৎঃ সুতরাং প্রভূর বাণী শোনো। আমি প্রভূকে তার কুরসীর উপর বসা দেখলাম এবং আসমানের সকল সৈন্য তার ডান ও বাম পাশে দাড়ানো ছিলো।
[সূত্রঃ অল্ড টেস্টামেন্ট, দি বুক অফ ফাস্ট কিং, পরিচ্ছেদ ২২, শ্লোক, ১৯।]
অনলাইন ভার্সন:
http://biblehub.com/1_kings/22-19.htm
অল্ড টেস্টামেন্টের দি বুক অব সামে রয়েছে,
you have sat on the throne, giving righteous judgment.
অর্থাৎঃ আপনি ন্যায়-পরায়ণ হিসেবে কুরসীতে উপবেশন করেছেন।
[সূত্রঃ বুক অব সাম, পরিচ্ছেদ, ৯, শ্লোক, ৪।]
অল্ড টেস্টামেন্টের বুক অব সামে রয়েছে,
God reigns over the nations; God sits on his holy throne.
অর্থাৎঃ প্রভূ জাতিসমূহের উপর তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করলেন, প্রভূ তার পবিত্র কুরসীতে বসলেন।
[সূত্রঃ বুক অব সাম, পরিচ্ছেদ, ৪৭, শ্লোক, ৮।]
অনলাইন ভার্সন:
http://biblehub.com/psalms/47-8.htm
বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্টে রয়েছে,
and crying out with a loud voice, “Salvation belongs to our God who sits on the throne
অর্থাৎঃ উচু স্বরে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো এবং বলল, আমাদের প্রভূর জন্য মুক্তি, যিনি তার কুরসীতে বসে আছেন।
[সূত্রঃ The Book of Revelation, পরিচ্ছেদ, ৭, শ্লোক, ১০।]
অনলাইন ভার্সন:
http://biblehub.com/revelation/7-10.htm
একই পরিচ্ছেদের ১৫ নং শ্লোকে রয়েছে,
“That is why they stand in front of God’s throne and serve him day and night in his Temple. And he who sits on the throne will give them shelter.
অর্থাৎ আরশে উপবেশনকারী তাদেরকে আশ্রয় দিবে।
[সূত্রঃ The Book of Revelation, পরিচ্ছেদ, ৭, শ্লোক, ১৫।]
অনলাইন ভার্সন,
http://biblehub.com/revelation/7-15.htm
একই বইয়ের ৪ নং পরিচ্ছেদে রয়েছে,
And when those beasts give glory and honour and thanks to him that sat on the throne, who liveth for ever and ever
অর্থাৎঃ তারা সেই সত্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলো যিনি আরশে বসে আছেন, যিনি চিরণ্জীব।
[সূত্রঃ The Book of Revelation, পরিচ্ছেদ, ৪, শ্লোক, ৯।]
http://biblehub.com/revelation/4-9.htm
কাররামিয়াদের আকিদা:
০১. মুহাম্মাদ ইবনে কাররামের একটি মৌলিক ভ্রান্ত আক্বিদা হলো, আল্লাহ তায়ালা দেহ ও শরীর বিশিষ্ট। তার দেহের একটি সীমা ও সমাপ্তি রয়েছে। তার মতে আল্লাহর দেহের নিচের দিকের কেবল সীমা ও সমাপ্তি রয়েছে, যেই দিক আরশের সাথে সংশ্লিষ্ট।
০২. ইবনে কাররামের আরেকটি আক্বিদা হলো, আল্লাহ তায়ালা আরশের উপরের অংশ স্পর্শ করে আছেন।
০৩. ইবনে কাররামের বিশ্বাস হলো, আল্লাহ তায়ালা আরশের উপর স্থির হয়ে আছেন। সত্ত্বাগতভাবে তিনি উপরের দিকে রয়েছেন। আরশ হলো আল্লাহর অবস্থানের স্থান।
বিস্তারিত দেখুন,
আল-ফারকু বাইনাল ফিরাক, পৃ., ২০৩, আল-মিলালু ওয়ান নিহাল, পৃ., ১০৮, ই’তেকাদু ফিরাকিল মুসলিমিন, পৃ., ১৭, আল-ফারকু বাইনাল ফিরাক, পৃ., ২০৪, আল-মিলালু ওয়ান নিহাল, পৃ., ১০৮।
তথাকথিত সালাফী আকিদা:
০১. সালাফীদের অন্যতম শায়খ হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী। তিনি বেশ কিছু কিতাব লিখেছেন। এসব কিতাবের অন্যতম একটি কিতাব হলো কিতাবুত তাউহীদ।
কিতাবুত তাউহীদের একটি ব্যাখ্যা লিখেছে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদীর নাতী শায়খ আব্দুর রহমান ইবনে হাসান।
তিনি কিতাবুত তাউহীদের এ ব্যাখ্যার নাম দিয়েছেন ফাতহুল মাজীদ। ফাতহুলী মাজীদ কিতাবুত তাউহীদের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ। এটি তাহকীক করে প্রকাশ করেছেন, শায়খ আব্দুল কাদের আর-নাউত।
ফাতহুল মাজীদের ৪৮৫ পৃষ্ঠায় আল্লাহর আরশে বসার কথা রয়েছে।
এখানে রয়েছে,
إذا جلس الرب علي الكرسي
অর্থাৎঃ “যখন প্রভূ কুরসীর উপর বসলেন”।
০২. সউদি সরকারের সাবেক প্রধান মুফতী সালাফীদের অন্যতম শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহীম আলুশ শায়খও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আল্লাহর আরশে বসার আকিদা বর্ণনা করেছেন।
কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা রাসূল স. কে মাকামে মাহমুদ বা প্রশংসনীয় মর্যাদা দ্বারা সম্মানিত করবেন।
মাকামে মাহমুদ এর অর্থ হলো, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত দিবসে রাসূল স. কে শাফায়াতে উজমা বা সবচেয়ে বড় শাফায়াতের ক্ষমতা দান করবেন। শায়খ মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহীম আলুশ শায়খ “মাকামে মাহমুদের” ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছেন,
”কেউ কেউ বলেছেন, মাকামে মাহমুদ হলো, ব্যাপক শাফায়াত বা সুপারিশ। কেউ কেউ বলেছেন, মাকামে মাহমুদ হলো, আল্লাহ তায়ালা রাসূল স. কে আরশের উপরে তার পাশে বসাবেন। এটি আহলে সুন্নতের প্রসিদ্ধ বক্তব্য” উভয় বক্তব্যের মাঝে কোন বৈপরীত্ব নেই। উভয়ের মাঝে এভাবে সমন্বয় করা সম্ভব যে উভয়টি রাসূল স. কে দেয়া হবে। তবে আল্লাহর পাশে রাসূল স. কে বসানো হবে, এই ব্যাখ্যাটি অধিক যুক্তিসঙ্গত।
[সূত্রঃ ফতোয়া ও রসাইল, পৃ., ১৩৬। শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহীম আলুশ শায়খ, তাহকীক মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহীম ইবনে কাসেম, প্রথম প্রকাশ, ১৩৯৯ হি:, মাতবায়াতুল হুকুমিয়া, মক্কা।]
০৩. সালাফীদের বিখ্যাত একজন শায়খ হলেন সালেহ আল-উসাইমিন।
শায়খ সালেহ আল-উসাইমিনের উস্তাদ হলেন, আব্দুর রহমান সা’দী। তিনিও আরব সালাফীদের মাঝে বেশ পরিচিত। আব্দুর রহমান সা’দীও আরশে বসার আকিদা পোষণ করেন। তিনি লিখেছেন,
”ইস্তেওয়ার একটি ব্যাখ্যা হলো, স্থির হওয়া বা বসা। এই ব্যাখ্যাটি সালাফ বা পূর্ববর্তীদের থেকে বর্ণিত”
[সূত্রঃ আল-আজইবাতুস সা’দিয়া আনিল মাসাইলিল কুয়েতিয়্যা, পৃ.১৪৭। তাহকীক, ড. ওলীদ আব্দুল্লাহ।]
০৪. বর্তমান সালাফীদের বিখ্যাত শায়খ হলেন সালেহ আল-উসাইমিন। তিনিওএই ইহুদীবাদী আকিদায় বিশ্বাসী ছিলেন। আল্লাহর আরশে বসার আকিদাটি তিনিও স্বীকৃতি দিয়েছেন। শায়খ সালেহ আল-উসাইমিন তার মাজমুউল ফতোয়ায় ইবনুল কাইয়্যিম এর বক্তব্য এনেছেন। ইবনে তাইমিয়ার বিখ্যাত ছাত্র ইবনুল কাইয়্যূমও আরশে বসার আকিদা রাখতো। শায়খ সালেহ আল-ফাউজান লিখেছেন,
”ইস্তাওয়া শব্দের আরেকটি ব্যাখ্যা হলো, বসা। ইবনুল কাইয়্যিম আস-সাওয়াইকুল মুরসালা (খ., ৪, পৃ., ১৩০৩) কিতাবে এই ব্যাখ্যাটি খারিজা ইবনে মুসআব থেকে বর্ণনা করেছেন। সূরা ত্বহার ৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি লিখেছেন, বসা ছাড়া কখনও কি ইস্তাওয়া হয়?
[সূত্রঃ মাজমুউ ফাতাওয়া ও রসাইল, ইবনে উসাইমিন, খ., ১, পৃ., ১৩৫, দারুল ওযাতন।]
০৫. সালাফীদের অন্যতম বিখ্যাত শায়খ হলেন শায়খ সালেহ আল-ফাউজান।
তিনি আব্দুল আজীজ বিন ফয়সাল আর-রাজেহীর একটি কিতাবের ভূমিকা লেখে দিয়েছে। কুদুমু কাতাইবিল জিহাদ নামক এই বইয়ে আব্দুল আজিজ রাজেহী আরশে বসার আকিদা সম্পর্কে লিখেছে,
“বসা ছাড়া কখনও কি ইস্তাওয়া হয়? এই কথাটি সঠিক। এর উপর কোন ধুলোবালি নেই। অর্থাৎ এটি নি:সন্দেহে সঠিক।”
[সূত্রঃ কুদুমু কাতাইবিল জিহাদ, পৃ., ১০১।]
০৬. ইবনে তাইমিয়ার বিখ্যাত ছাত্র হলেন ইবনুল কাইয়্যিম। নাওনিয়াতু ইবনিল কাইয়্যিম নামে তার একটি কিতাব রয়েছে।
শায়খ সালেহ আল-ফাউজান ইবনুল কাইয়্যিমের এ কিতাবের উপর সংক্ষিপ্ত টীকা লিখেছেন। তিনি এর নাম দিয়েছেন, আত-তা’লিকুল মুখতাসার আলাল কাসিদাতিত নাউনিয়্যাহ।
এ কিতাবে শায়খ ফাউজান আরশে বসার আকিদাটি স্বীকার করেছেন। তিনি লিখেছেন,
”মাকামে মাহমুদ এর ব্যাখ্যা হলো, আল্লাহ তায়ালা রাসূল স. কে আরশে নিজের পাশে বসাবেন।”
[সূত্রঃ আত-তালীকুল মুখতাসার, সালেহ আল-ফাউজান, পৃ., ৪৫৩।]
আশ্চর্যজনক স্ববিরোধীতাঃ
আকিদার ক্ষেত্রে সালাফী শায়খদের দোদুল্যমান অবস্থা দেখলে সত্যিই আশ্চর্য লাগে।
এদের নির্দিষ্ট কোন দিক নেই। এখন পূর্বে থাকলে কিছুক্ষণ পরে ঠিকই পশ্চিমে যায়। এধরনের স্ববিরোধী অবস্থান বড় বিস্ময়কর।
শায়খ সালেহ আল-ফাউজান অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় আল্লাহর বসার আকিদা স্বীকার করেছেন। যারা এটা অস্বীকার করে তাদেরকে দুর্বল মস্তিষ্কের আখ্যাযিত করেছেন। এমনকি তাদের কথা ধর্তব্য নয় বলেও রায় দিয়েছেন। অথচ তিনিই আবার লিখেছেন,
“প্রশ্ন: যে ব্যক্তি এই বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ ইস্তাওয়া গ্রহণ করেছেন, অর্থাৎ তিনি আরশে বসেছেন, তার সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী? এটা কি তা’বীল বা ব্যাখ্যার অন্তুর্ভূক্ত হবে?
০১. উত্তর: এটি বাতিল ও ভ্রান্ত। কেননা বসা দ্বারা ইস্তাওয়ার ব্যাখ্যা করা হয় না। আর আমরা নিজেদের পক্ষ থেকে কিছু বলি না।
[সূত্রঃ শরহু লুময়াতিল ই’তেকাদ, পৃ., ৩০৫।]
০২. শায়খ ইবনে জিবরীন সালাফীদের অন্যতম শায়খ।
তিনি আল-জওয়াবুল ফাইক ফির রদ্দি আলা মুবাদ্দিলিল হাকাইক নামে একটা পুস্তক লিখেছেন। এই পুস্তকে তিনি আল্লাহর বসার আকিদাটি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। এমনকি যারা এ আকীদাকে আহলে সুন্নতের আকিদা বা নজদের ওহাবী বা সালাফী আলেমদের আকিদা বলে থাকে, তাদেরকে মিথ্যুক বলেছেন।
তিনি লিখেছেন,
“সালাফে সালেহীনের কিতাবে ইস্তাওয়া শব্দের ব্যাখ্যায় বসার কোন অর্থ উল্লেখ নেই। সুতরাং আহলে সুন্নতের দিকে এই আকিদা সম্পৃক্ত করা কিংবা সালাফী আলেমদের দিকে এই আকিদা সম্পৃক্ত করা, তাদের সম্পর্কে মিথ্যাচার বৈ কিছুই নয়।“
০৩. শায়খ আলবানীর বক্তব্য:
শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানীর মতে যেসব হাদীসে স্পষ্টভাবে আল্লাহর দিকে বসার কথা উল্লেখ রয়েছে এগুলো জাল হওয়া বাঞ্ছনীয়। কেননা এসব হাদীসের বক্তব্য মুনকার। কেননা আল্লাহর আরশে বসার ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস নেই। আর বসার কথা যেসব হাদীসে রয়েছে, সেগুলো কখনও রাসূল স. এর হাদীস হতে পারে না।
কারণ আল্লাহর দিকে বসার সম্পৃক্ততাই প্রমাণ করে যে এটি রাসূল স. এঁর হাদীস নয়।
শায়খ আলবানীর সব লেখা সংকলন করে একটি মউসুয়া বের করা হয়েছে। এই মউসুয়ার প্রথম খন্ডে আকিদা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রথম খন্ডের ৩৪৩ পৃষ্ঠার শিরোনাম হলো,
“আল্লাহ তায়ালা জন্য বসার আকিদাটি ভিত্তিহীন”
এখানে শায়খ আলবানী বলেছে,
“আল্লাহর বসার ব্যাপারে কোন বিশুদ্ধ বর্ণনা নেই। সুতরাং আল্লাহর দিকে বসার আকিদা সম্বলিত হাদীস জাল হওয়াটাই বাঞ্চনীয়”
এছাড়া শায়খ আলবানী লিখেছে :
এ বর্ণনায় আল্লাহ তায়ালার দিকে বসার কথা সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এর দ্বারা আল্লাহ তায়ালা আরশে স্থির আছেন এটা সাব্যস্ত হয়। অথচ আল্লাহর বসার ব্যাপারে বিশুদ্ধ কোন বর্ণনা নেই। সুতরাং এটি বিশ্বাস করা এবং তা আল্লাহর দিকে সম্পৃক্ত করা বৈধ হবে না।
[সূত্রঃ মুখতাসারুল উলু, পৃ., ১৭, প্রথম সংস্করণ।]
ইস্তেওয়া শব্দের সঠিক অর্থ ও সালাফীদের অপপ্রচার :-
পবিত্র কুরআনের সূরা ত্বহার ৫ নং আযাতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى
অর্থাৎঃ “দয়াময় আল্লাহ তায়ালা আরশের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন”।
এই আয়াত ব্যবহার করে বাতিল আকিদার কিছু লোক বলে থাকে, আল্লাহ তায়ালা আরশে বসে আছেন নাউযুবিল্লাহ। এধরনের বাতিল বক্তব্যের সাথে এই আয়াতের কোন দূরতমত সম্পর্ক নেই। যারা এধরনের ভ্রান্ত ব্যাখ্যা করে মানুষের আকিদা নষ্ট করার চেষ্টা করছেে তাদের ব্যপারে সচেতন হওয়া আবশ্যক। আমরা ইস্তেওয়া শব্দের অর্থের উপর সংক্ষিপ্ত কিছু পর্যালোচনা বিগত পর্বে উল্লেখ করেছি। আগ্রহী পাঠকগণ প্রথম পর্ব দেখতে পারেন। আমরা এই ধারাহাবিক আলোচনায় ইনশাআল্লাহ অনেক মুফাসসিরিন গনের বক্তব্য উল্লেখ করবো, যারা প্রত্যেকেই ইস্তেওয়া শব্দের সঠিক অর্থ উল্লেখ করেছেন।
বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম ত্ববরানী (মৃত:৩৬০ হি:) তার তাফসীরে কাবীরে বলেন,
والاستواء: الاستيلاء، ولم يـزل الله سبحانه مستوليا على الأشياء كلها، إلا أن تخصيص العرش لتعظيم شأنه
অর্থাৎ ইস্তেওয়া শব্দের অর্থ, ইস্তিলা বা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহ তায়ালা সদা-সর্বদা সমস্ত বস্তুর উপর নিজের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত রেখেছেন। তবে এখানে বিশেষভাবে আরশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, আরশের গুরুত্ব ও মর্যাদা প্রকাশের উদ্দেশ্যে।
[আত-তাফসীরুল কাবীর, ইমাম ত্ববরানী, খ.৩, পৃ.৩৭২]
ইমাম আবু বকর জাসসাস রহ. [মৃত:৩৭০ হি:] এর তাফসীর:
ইমাম আবু বকর জাসসাস তার বিখ্যাত কিতাব আহকামুল কুরআনে লিখেছেন,
“: قوله تعالى: {الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى } [سورة طه:5] قال الحسن: استوى بلطفه وتدبيره، وقيل: استولى.اه
অর্থাৎ মহান আল্লাহর বাণী: দয়াময় আল্লাহ আরশের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন।(সূরা ত্ব-হা, আয়াত নং৫)। ইমাম হাসান বলেন, তিনি নিজের দয়া, নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার পূর্ণতা দান করেছেন। এবং কারও মতে ইস্তেওয়ার অর্থ হলো, কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
[সূত্রঃ আহকামুল কুরআন, খ., ৩, পৃ., ৩২৫]
ইমাম আবুল লায়স সামরকন্দী রহ(মৃত:৩৭৫ হি:) এর তাফসীর:
ইমাম আবুল লায়স বলেন,
ويقال استوى استولى
অর্থাৎ ইস্তেওয়ার আরেকটি অর্থ বলা হয়, ইস্তাওলা বা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
[সূত্রঃ তাফসীরে সমরকন্দী বা বাহরুল উলুম, খ., ২, পৃ., ৩৭৬।]
ইমাম আবু বকর ইবনে ফাউরক [মৃত:৪০৬ হি:] এঁর তাফসীর:
ইমাম আবু বকর ইবনে ফাউরক তার মুশকিলুল হাদীস কিতাবে বলেন,
: لأن استواءه على العرش سبحانه ليس على معنى التمكن والاستقرار، بل هو على معنى العلو بالقهر والتدبير وارتفاع الدرجة بالصفة، على الوجه الذي يقتضي مباينة الخلق. اهـ
অর্থাৎঃ আরশে র উপর আল্লাহর ইস্তেওয়া দ্বারা কখনও এটি উদ্দেশ্য নয় যে তিনি আরশের উপর অবস্থান করেন বা আরশের উপর স্থির হয়েছেন। বরং কর্তৃত্ব, নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতার দ্বারা সমুন্নত হওয়া এবং গুণগত মর্যাদা উদ্দেশ্য। কেননা আল্লাহ তায়ালা সমস্ত সৃষ্টি থেকে পৃথক ও ভিন্ন।
[সূত্রঃ মুশকিলুল হাদীস, পৃ., ২২৯।]
ইমাম আবু মনসুর নাইসাপুরী রহ. [মৃত: ৪২১] এঁর বক্তব্য:
ইমাম আবু মনসুর নাইসাপুরী রহ. বলেন,
إن كثيرا من متأخري أصحابنا ذهبوا إلى أن الاستواء هو القهر والغلبة
অর্থাৎঃ আমাদের পরবর্তী অনেক আলেম এমত গ্রহণ করেছেন যে, ইস্তেওয়া শব্দের অর্থ হলো, কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও প্রতাপ।
[সূত্রঃ আল-আসমা ওয়াস সিফাত, পৃ., ৩৭২]
ইমাম আবু মুহাম্মাদ জুয়াইনী (মৃত: ৪৩৮ হি:) এঁর বক্তব্য:
ইমাম জুয়াইনী রহ. বলেন,
“ইস্তেওয়া শব্দের অর্থ পূর্ণক্ষমতা দ্বারা সব কিছু নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেষ্টণ করা। এর দ্বারা কখনও আল্লাহর স্থান, দিক, অবস্থানের জায়গা কিংবা সীমা উদ্দশ্যে নয়।”
[সূত্রঃ ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাকিন, খ., ২, পৃ., ১১০।]
ইমাম আবুল হাসান মাওয়ারদী রহ. [মৃত: ৪৫০ হি:] এঁর তাফসীর:
ইমাম আবুল হাসান মাওয়ারদী রহ. বলেন,
: { ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ } [سورة الأعراف: 54]: فيه قولان: …والثاني: استولى على العرش كما قال الشاعر :
قد استوى بِشْرٌ على العِراقِ ** من غير سَيفٍ ودمٍ مُهراقِ”اهــ
অর্থাৎঃ পবিত্র কুরআনের বাণী: অত:পর আল্লাহ তায়ালা আরশের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করলেন। [সূরা আ’রাফ, ৫৪]। ইমাম মাওযারদী বলেন, ইস্তেওয়া শব্দের দু’টি অর্থ রয়েছে। …। দ্বিতীয় অর্থ হলো, আল্লাহ তায়ালা আরশের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। যেমন কবি বলেছেন,
বিশর ইরাকের উপর নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। কোন তরবারী চালনা কিংবা রক্তপাত ব্যতীতই।
[সূত্রঃ আন-নুকাতু ওয়াল উয়ূন, খ., ২, পৃ., ২২৯]
ইমাম আবু বকর বাইহাকী রহ. [মৃত: ৪৫৮ হি:] এঁর বক্তব্য:
ইমাম বাইহাকী রহ. বলেন
أن الاستواء هو القهر والغلبة، ومعناه أن الرحمن غلب العرش وقهره، وفائدته الإخبار عن قهره مملوكاته، وأنها لم تقهره، وإنما خص العرش بالذكر لأنه أعظم المملوكات، فنبه بالأعلى على الأدنى، قال: والاستواء بمعنى القهر والغلبة شائع في اللغة، كما يقال استوى فلان على الناحية إذا غلب أهلها، وقال الشاعر في بشر بن مروان: قد استوى بشر على العراق * * من غير سيف ودم مهراق. اهـ يريد أنه غلب أهله من غير محاربة
অর্থাৎ ইস্তেওয়া শব্দের অর্থ হলো, কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা বজায় রাখা। এর অর্থ হলো, আল্লাহ তায়ালা আরশের উপর নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং একে নিজের ক্ণমতার অধীন করেছেন। আয়াতে বিষয়টি উল্লেখের বিশেষ ফায়দা হলো, আল্লাহ তায়ালা এর মাধ্যমে জানিয়েছেন, আল্লাহর সমস্ত সৃষ্টি আল্লাহর ক্ণমতার অধীন। এবং তিনি কারও অধীন নন। আর এক্ণেত্রে বিশেষভাবে আরশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এজন্য যে, আরশ আল্লাহর সবচেয়ে বড় সৃষ্টি। সুতরাং তিনি সবচেয়ে বড় সৃষ্টির কথা উল্লেখ করে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, সমস্ত ছোট সৃষ্টিও আল্লাহর ক্ণমতা ও কর্তৃত্বের অধীন। কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার অর্থে ইস্তেওয়া শব্দটির ব্যবহার আরবী ভাষায় ব্যাপক পরিচিত। যেমন বলা হয়, , অমুক উক্ত অন্চলের উপর ইস্তেওয়া করেছে বা নিজের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেছে। বিশর ইবনে মারওয়ান সম্পর্কে কবি বলেন, বিশর ইরাকের উপর নিজের ক্ণমতা প্রতিষ্ঠা করেছে। কোন রক্তপাত ও যুদ্ধ-বিগ্রহ ছাড়াই। এখানে কবি
উদ্দেশ্য নিয়েছেন, কোন যুদ্ধ ছাড়া বিশর ইরাকের মানুষের উপর নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে।
[সূত্রঃ আল-আসমা ওয়াস সিফাত, পৃ., ৪১২।]
ইমাম আবুল হাসান নাইসাপুরী রহ. [মৃত: ৪৬৮ হি:]এঁর তাফসীর:
ইমাম আবুল হাসান নাইসাপুরী রহ. তাঁর আল-ওজীয নামক তাফসীরে লিখেছেন,
{ اسْتَوَى } أي استولى.اهـ
অর্থাৎঃ ইস্তেওয়া শব্দের অর্থ হলো ইস্তাউলা বা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
ইমাম আবু ইসহাক শিরাজী রহ. [মৃত: ৪৭৬ হি:] এঁর তাফসীর:
ইমাম আবু ইসহাক শিরাজী রহ. বলেন,
الاستواء بمعنى الاستيلاء، استوى على العرش أي استولى عليه، يقال استوى فلان على الملك أي استولى عليه
অর্থাৎঃ ইস্তেওয়া শব্দের অর্থ হলো কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। ইস্তাওয়া আলাল আরশ এর অর্থ হলো, আরশের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। আরবী ভাষায় বলা হয়, অমুক ব্যক্তি দেশে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে।
[সূত্রঃ আল-ওয়াজীয, খ., ২, পৃ., ১৫