সর্বপ্রথম সৃষ্টি কি!!

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা বলেন, যিনি সব কিছুকে উত্তমরূপে সৃষ্টি করেছেন, আর মানুষ সৃষ্টির সূচনা করেছেন মাটি থেকে। অতঃপর তিনি তার (হযরত আদম আ. এঁর) বংশধর সৃষ্টি করেন তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস থেকে। (সূরা সেজদাহঃ ৭, ৮)

সুতরাং মানুষের ভেবে দেখা উচিত যে, তাকে কি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে? (সূরা আত-ত্বরিক ৫)

আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে, আমি তাকে পরীক্ষা করব, ফলে আমি তাকে বানিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। (সূরা দাহর ২)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা মানুষ সৃষ্টির সূচনা করেছেন হযরত আদম আঃ এঁর মাধ্যমে কিন্তু সর্বপ্রথম সৃষ্টিই উনি নন। সর্বপ্রথম সৃষ্টি হচ্ছে আমাদের নবীর নূর মোবারক। অতঃপর মানুষরুপে সর্বশেষ নবী হিসেবে উনাকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। আমাদের নবীর নব্যুয়ত তখনও নির্ধারিত ছিল যখন হযরত আদম আঃ মাটির খামীরার মধ্যে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তিনি ﷺ তখনও খ্বতামুন-নাব্যিয়িন ছিলেন যখন হযরত আদম আঃ মাটির খামীরার মধ্যে ছিলেন। (মুসনাদে আহমাদ ১৭১৫০, মুসতাদরেক হাকিম ৩৫৬৬, মুজামুল কাবীর ৬২৯, ইবনে হিব্বান ৬৪০৪, মিশকাত ৫৫১২)

উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠতম মুহাদ্দিস আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহঃ বলেন, ‘‘তিনি (ﷺ) সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম। রাসূল ﷺ বলেন, আল্লাহ্ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেছেন, তা হলো আমারই নূর। তিনি নবুওয়াত প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও সর্বপ্রথম। অতঃপর ইরশাদ ফরমান, আমি নবী ছিলাম যখন আদম আঃ এঁর সৃষ্টি সম্পন্ন হয়নি। তিনি নবীগণের নিকট থেকে অঙ্গীকার গ্রহণের দিন আল্লাহর বাণী ‘আমি কি তোমাদের রব নই?’ এর বেলায় সর্বপ্রথম ‘হ্যা’ বলে সম্মানিত উত্তরদাতা। তিনিই সর্বপ্রথম আল্লাহ তা‘য়ালার প্রতি ঈমান স্থাপনকারী।’’ {শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী : মাদারেজুন নবুওয়াত : ১/৬ পৃ.}

উল্লেখ্য যে,

যেমনিভাবে মাটি হতে সৃষ্টি হয়েও আদম আঃ মানুষ,

যেমনিভাবে আদম আ. এঁর বাম পাজরের হাড় থেকে সৃষ্টি হয়েও হাওয়া আ. মানুষ,

যেমনিভাবে আল্লাহর হুকুমে জিবরাইল আঃ এঁর “ফুক” এর মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েও ঈসা আ. মানুষ,

যেমনিভাবে নুতফা (বীর্য) থেকে সৃষ্টি হয়েও আমরা মানুষ,

তেমনিভাবে নূর দিয়ে তৈরি হয়েও প্রিয় নবী ﷺ মানুষ। কিন্তু তিনি আমাদের মত নন। নবীগণকে নিজেদের মত বলা, এটা কাফেরদের রীতি। প্রিয় নবী ﷺ এঁর বাশারিয়ত (মানুষ হওয়া) কে অস্বীকার করাও কুফরী বরং তিনি তো নূরের তৈরি বাশার (মানুষ)।

আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহঃ স্বীয় সিরাত গ্রন্থ ‘‘মাদারিজুন নবুয়ত’’ এর দ্বিতীয় খণ্ডের ২য় পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

‘‘জেনে রেখো, সর্বপ্রথম সৃষ্টি এবং কুল মাখলুকাত তথা আদম আঃ সৃষ্টিরও একমাত্র মাধ্যম নূরে মুহাম্মদী ﷺ। কেননা ‘সহীহ’ হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে- আল্লাহ্ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম আমার নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন এবং উর্ধ্ব ও নিম্ন জগতের সবই তাঁর ﷺ এর নূরে পাক ও মৌলিক সত্ত্বা থেকেই সৃষ্ট।’’ {শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী : মাদারেজুন নবুয়্যাত : ২/২ পৃ.}

সাহাবায়ে কেরাম যখন প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! আপনার নবুওয়াত কখন অবধারিত হয়েছে? তিনি ﷺ বললেনঃ যখন আদম (আঃ) তাঁর শরীর (দেহ) ও রুহের (আত্মা) মধ্যবর্তী ছিলেন। (সূনান আত তিরমিজী ৩৬০৯, মুসতাদরেক হাকিম ৪২৬৫)

জলিলুল কদর সাহাবী হযরত জাবির রা. যখন প্রিয় নবী ﷺ কে জিজ্ঞেস করেছিলেন আল্লাহ তায়া’লা সর্বপ্রথম কি সৃষ্টি করেছেন? তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছিলেন, সর্বপ্রথম সৃষ্টি হল নবী ﷺ এঁর নূর মোবারক। (ইমাম বুখারী রহঃ এঁর দাদা ওস্তাদ, মুহাদ্দিস আব্দুর রাজ্জাক রহঃ, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং ১৮)

নূর নিয়ে শুধু একটা হাদিসই এসেছে!!

উস্তাদবিহীন আলবানী সাহেবের মতামত কি এত বড় বড় মুজাদ্দিদ, মুহাদ্দিসদের চেয়েও বেশি গ্রহণযোগ্য!!

ত্রয়োদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আল্লামা শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী রহঃ স্বীয় ‘‘তাফসীরে আযিযী”তে বলেন, ‘রুহ জগতে (আলমে আরওয়াহে) সর্বপ্রথম যাকে সৃষ্টি করা হয়, তিনি হচ্ছেন রাসূল (ﷺ)।’ {শাহ আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী : তাফসীরে আযিযী: ৩০ পারা: পৃ-২১৯}

সর্বপ্রথম সৃষ্টি নিয়ে বর্ণনার ভিন্নতা রয়েছে। সবগুলোর সামঞ্জস্য স্থাপন করে, সহিহ বুখারীর প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহঃ বলেন,

“সর্বপ্রথম সৃষ্টি নিয়ে বর্ণনার ভিন্নতা রয়েছে তবে তার সারকথা যা আমি শরহু শামায়েলে তিরমিযিতে বর্ণনা করেছি তা হলো- সর্বপ্রথম সৃষ্টি হলো সেই নূর, যা থেকে নবীজি ﷺ কে সৃষ্টি করা হয়েছে। অতঃপর পানি তারপর আরশ।” (মেরকাত শরহে মেশকাত, ১ম খন্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা)

ইমাম কাস্তালানী রহঃ বলেন, ইমাম আবু ই’য়ালা রহঃ কে প্রশ্ন করা হয় মুসলিম ইমামগণের ইখতিলাফ যে রাসূল ﷺ এঁর নূর মোবারকের পর প্রথম কী কলম সৃষ্টি? অতঃপর হাফেয আবু ই’য়ালা হামদানী রহঃ বলেন, বিশুদ্ধ বর্ণনা হলো কলমের পূর্বে আরশ সৃষ্টি করা হয়েছে।’ {ইমাম কাস্তাল্লানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : ১ম খণ্ড : ৭২ পৃ. মাকতুবায়ে ইসলামিয়্যাহ, বৈরুত।}

“আর আমি মুসলমানদের মধ্যে প্রথম।”- এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে জালালাইনের হাশিয়াতে “রুহুল মা’আনী”র বরাতে উল্লেখ করা হয়েছে- প্রথম মুসলমান হওয়া দ্বারা এদিকেও ইঙ্গিত হতে পারে যে, সৃষ্টিজগতের মাঝে সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর নূর সৃষ্টি করা হয়েছে। এরপর সমস্ত নভোমণ্ডল, ভূমন্ডল ও অন্যান্য সৃষ্টিজগৎ অস্তিত্ব লাভ করেছে। (কেননা) এক হাদিসে বলা হয়েছে- আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম আমার (রাসূলুল্লাহ ﷺ’র) নূর সৃষ্টি করেছেন। (তাফসীরে জালালাইন (হাশিয়া), সূরা আনআম, আয়াত ১৬৩)

এছাড়াও

“(হে মাহবুব) আর স্মরণ করুন, যখন আমি নবীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম এবং আপনার কাছ থেকেও। আর নূহ, ইব্রাহিম, মূসা, ও মারইয়াম পুত্র ঈসার কাছ থেকেও।” – এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে জালালাইনের হাশিয়াতে তাফসীরে মাযহারীর বরাতে উল্লেখ করা হয়েছে সাধারণভাবে সমস্ত নবীগণের কথা উল্লেখের পর পাঁচজনের নাম আবার বিশেষভাবে এজন্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, (কারণ) নবীকূলের মধ্যে তারা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদার অধিকারী। এদের মধ্যে রাসূলে মাকবুল ﷺ এঁর আবির্ভাব সকলের শেষে হয়ে থাকলেও “وَمِنكَ “(এবং আপনার থেকেও) শব্দের মাধ্যমে নবীজিকে সর্বাগ্রে উল্লেখ করা হয়েছে। যার কারণ হাদিসের মধ্যে এরুপ বর্ণনা করা হয়েছে – (রাসূলে মাকবুল ﷺ বলেন) আমি (নবীকূলের মাঝে) সৃষ্টিগতভাবে সকলের আগে, কিন্তু আবির্ভাবগতভাবে নবুয়্যত প্রকাশের দিক দিয়ে (প্রেরণের দিক দিয়ে) সকলের পরে। (তাফসীরে জালালাইন (হাশিয়া), সূরা আহযাব, আয়াত ৭)

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment