সমাজে ভুল চিন্তার কারণে সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

ভুল চিন্তা-১: হিলা বিয়ে কি নাজায়েজ?

সংশোধন: সমাজে প্রচলিত হিলা যা শর্ত চুক্তি বা আলোচনা করে করা হয়, সেগুলো নাজায়েজ ও লানতের কাজ। এরকম কন্ট্রাক্ট ম্যারিজ অবৈধ।

কিন্তু যদি কোনরূপ শর্ত চুক্তি বা আলোচনা ছাড়া শুধুমাত্র মনের মাঝে হালাল হবার নিয়তে অন্যত্র বিয়ে বসা যায়, তাহলে এমন বিয়ে বৈধ। (সুনানে নাসায়ী-৩৪১৩, মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক-৬/২৬৭ (১০৭৮৬)

এটাই অধিকাংশ আলেমের ফতোয়া। (বগভী; শরহুস সুন্নাহ-৯/১০১)

ভুল চিন্তা-২: হিলা বিয়েতে তিন মাস থাকতে হয় কি?

সংশোধন: শর্ত চুক্তি বা আলোচনা করে হিলা বিয়ে করলে তিন মাস কেন, বিশ বছর থাকলেও নাজায়েজ ও লানতী কাজ হবে। সাহাবী বলেন, “আমরা রাসূলের ﷺ যুগে এটাকে সিফাহ (যেনা) মনে করতাম, এমনকি কেউ যদি বিশ বছরও সংসার করে তবুও।” (আল-মুহাল্লা)

কিন্তু যদি শর্ত চুক্তি আলোচনা ছাড়া হালালা বিয়ে বসা যায়, তাহলে তিন মাসের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। বরং দুই একবার সহবাস করলেই হালাল হবে।

ভুল চিন্তা-৩: হিলা বিয়েতে সহবাস লাগে কি?

সংশোধন: হিলা বিয়েতে অবশ্যই লজ্জাস্থানে সহবাস করতে হবে, নতুবা স্ত্রী পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হবে না। (আল মাওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ-১/২৫৫)

রাসূল ﷺ বলেছেন, “যতক্ষণ না স্ত্রী দ্বিতীয় স্বামীর সাথে একে অন্যের স্বাদ (সহবাস) আস্বাদন না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হবে না।” (সহীহ বুখারী-৫২৬১)

এ বিষয়ে উম্মতের ইজমা বা ঐকমত্য রয়েছে। (আল-ইজমা-পৃ:৬৫, শরহে মুসলিম-৪/১০, মুখতাসার ফাতাওয়ায়ে মিসরিয়্যাহ-পৃ:৪৪৯, ফাতহুল বারী-৯/৫৬২-৫৬৩, আল-ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবাআহ-৪/৭৪, মাওসূআতুল ইজমা-৩/২৮২)

ভুল চিন্তা-৪: হিলা বিয়ের সহবাসে প্রটেকশন ব্যবহার করা যাবে কি?

সংশোধন : হ্যাঁ, প্রটেকশন ব্যবহারে কোন বাধা নেই। হিলা বিয়েতে কনডম ব্যবহার কিংবা জন্মনিরোধক পিল খেতে পারবে। নারীর লজ্জাস্থানের ভেতরে বীর্যপাত করা শর্ত নয় এবং বীর্যপাত ঘটানোও অধিকাংশ আলেমের মতে শর্ত নয়।

ভুল চিন্তা-৫: স্বামী লোক ঠিক করে দিতে পারবে কি?

সংশোধন: এটা অতি নির্লজ্জতা যে, স্বামী লোক ঠিক করবে!! এমনটা করলে স্বামী লানতের শিকার হবে। কেননা রাসূল ﷺ বলেছেন “যে হালাল করে যার জন্য হালাল করে, উভয়ের ওপর লানত বা অভিশাপ।” (ইবনে মাজাহ-১৯৩৫)

তাই স্ত্রীর কর্তব্য হল- নিজ থেকে আলেমের সাথে পরামর্শ করে কোনরূপ শর্ত চুক্তি আলোচনা কন্ট্রাক্ট ছাড়াই কারো সাথে বিয়ে বসা। তাতে স্বামী লানত বা অভিশাপ থেকে বাঁচবে, দ্বিতীয় স্বামীও বেঁচে যাবে। (নাইলুল আওতার-৬/১৬৬)

ভুল চিন্তা-৬: হিলা বিয়েতে তিন তালাকই নিতে হবে কি?

সংশোধন: না, তিন তালাকের প্রয়োজন নেই। বরং খোলা করার মাধ্যমে বা বায়েন তালাক নেবার মাধ্যমেও বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে। বরং এটাই উচিৎ। কেননা একসাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক হয়, কিন্তু তাতে গুনাহ হয়। আর একটি বায়েন তালাক নিলে স্ত্রী আগের স্বামীর জন্যও হালাল হতে পারবে, আবার স্বামী তাকে গ্রহণ না করলে বা কখনো তালাক দিলে দ্বিতীয় স্বামীটির সাথে পুনরায় বিয়ে করে সংসারের সুযোগ থাকবে।

ভুল চিন্তা-৭: মোহরানা ধার্য করতে হবে কি?

সংশোধন: হ্যাঁ, হিলা বিয়েতে মোহরানা ধার্য করতে হবে। কমপক্ষে দশ দিরহাম। স্ত্রী সে মোহরানার প্রাপ্য। কিন্তু সে স্বামী তালাক দিতে না চাইলে মোহরানা পূর্ণ বা আংশিক অংশ মাফের বিনিময়ে খোলা নিয়ে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে।

ভুল চিন্তা-৮: স্বামীকে জানাতে হবে কি?

সংশোধন: তিন তালাকের পর সে তো আপনার স্বামীই না, তাই তাকে জানানোরও প্রয়োজন নেই। বিশেষ করে সে যদি হারামভাবেই সংসার চালিয়ে যেতে জোর করে, হিলা বিয়ে মানবে না বা এটা করার পর সে আর সংসার করতে চাইবে না, অথবা বদনাম করবে, তাহলে স্বামীকে না জানিয়ে করা যাবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৪৭৫) তবে এসব সম্ভাবনা না থাকলে জানিয়ে করবেন। আমরা উভয়রকম স্বামীই দেখেছি।

ভুল চিন্তা-৯: তালাকের পর কতদিন পরে হিলা বিয়ে দেয়া যায়?

সংশোধন: অনেকে তালাকের পরই কয়েকদিনের ভেতর হিলা বিয়ে দেয়। এটা নাজায়েজ। এ বিয়ে হবেই না। তালাকের পর ইদ্দত পালন করতে হবে। তারপর স্ত্রী অন্যত্র বিয়ে বসতে পারবে। আবার যখন দ্বিতীয় স্বামী থেকে তালাক হবে, তখনও ইদ্দত পালনের পর আগের স্বামীর সাথে বিয়ে বসতে পারবে। ইদ্দত ছাড়া বিয়ে বসা যেনা ছাড়া কিছু না।

ভুল চিন্তা-১০: হিলা বিয়ে নারীর জন্য কি অপমানকর?

সংশোধন: হিলা বিয়ে মূলত পুরুষের শাস্তি। স্ত্রী অন্যত্র বিয়ে বসা পুরুষের জন্য কত বড় পানিশমেন্ট, সেটা পুরুষেরাই বোঝে। আজীবন জেল খাটাও এর থেকে কম কষ্টের।

অপরদিকে স্ত্রী অন্যত্র বিয়ে বসার দ্বারা সে পূর্বের স্বামীর সাথে পরের স্বামীর কমপেয়ার বা তুলনা করার সুযোগ পায়। পর্যবেক্ষণ করার পর যদি দ্বিতীয় স্বামীকে ভাল মনে হয় তাহলে সেখানে থেকে যাবে। এতে নারীরই লাভ। আর যদি আগের স্বামীকেই বেশি ভাল মনে হয়, তাহলে ফিরে গিয়ে সে স্বামীর সাথে আরোও ভালবাসা শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পাবে, কারণ সে তুলনা করে বুঝেছে তার এ স্বামীই বেশি উত্তম।

সুতরাং এখানে স্বামীর জন্য শাস্তি, কিন্তু স্ত্রীর জন্য লাভজনক।

⚠️ সতর্কতা: বহু হিলা বিয়ের সংবাদ জেনেছি যে, তারা নিজেরা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছে অথবা নাজায়েজ বা লানতী বানিয়ে ফেলেছে, কেউবা বিপদে পড়েছে! তাই যোগ্য অভিজ্ঞ আলেমের সাথে পরামর্শ করে তবেই সিদ্ধান্ত নেবেন, যাতে করে নাজায়েজ বিষয় থেকে বেঁচে শরীয়তসম্মত পন্থায় সহজভাবে সম্পাদন করে ফেলতে পারেন। তবে এ পথে না হাঁটাই বেটার অপশন। খুব বেশি পিছুটান না থাকলে তিন তালাক হয়ে গেলে আলাদা হয়ে যাওয়াই উচিৎ ও ফেরার চিন্তা বাদ দেয়া উচিৎ।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment