সত্তর-৭০ হাজার নূরের পর্দা।
সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, মহান আল্লাহর নূরের পর্দা রয়েছে।
[দ্রষ্টব্যঃ মুসলিম, আস-সহীহ ১/১৬১]।
মিশকাত শরীফে ‘বাবে মসজিদ’ অধ্যায়ে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
হাদিসটি হলো-
হযরত আবু উমামা বাহেলী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বললেন, জনৈক ইয়াহুদি আলেম হুযুর (صلى الله عليه و آله وسلم) কে জিজ্ঞেস করলেন যে, জমিনের মধ্যে উত্তম স্থান কোনটি?
রাসূলে কারিমصلى الله عليه و آله وسلم তাকে বললেন, তুমি জিব্রাইল অালাইহিস সালাম আসা পর্যন্ত নীরব থাক এই বলে তিনি নিজে নীরব থাকলেন এবং ঐ আলেমও নীরব থাকলেন। অতঃপর জিব্রাইল আলাইহিস সালাম আসলেন। হুযুর রাসূলে কারিমصلى الله عليه و آله وسلم তখন বিষয়টি তার নিকট জিজ্ঞেস করলেন।
জিব্রাইল আলাইহিস সালাম বললেন, প্রশ্নকারী [অর্থাৎ, রাসূলে কারিমصلى الله عليه و آله وسلم ] অপেক্ষা প্রশ্নকৃত (জিব্রাইল আলাইহিস সালাম) ব্যক্তি অধিক জ্ঞাত নহে। তবে আপনি বললে আমি আমার প্রতিপালককে জিজ্ঞেস করব।
অতঃপর জিব্রাইল আলাইহিস্ সালাম বললেন, হে মুহাম্মাদ (অর্থাৎ প্রশংসিত)! আমি আল্লাহ্ পাকের এত নিকটবর্তী হয়েছিলাম, যতটা এর পূর্বে কখনও হই নি।
রাসূলে কারিমصلى الله عليه و آله وسلم জিজ্ঞেস করলেন, কিভাবে এবং কত নিকটে গিয়েছিলেন?
হযরত জিব্রাইল আলাইহিস্ সালাম বললেন, আমার এবং আল্লাহর মাঝে ৭০ হাজার নূরের পর্দা বাকী ছিল। তখন আল্লাহ্ পাক বললেন, যমিনের নিকৃষ্টতর স্থান হলো, বাজার সমূহ এবং যমিনের উৎকৃষ্টতর স্থান হলো, মসজিদ সমূহ।
[সূত্রঃ খতিব তিবরিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ, ১/২৩০পৃৃষ্ঠা, হা/ ৭৪১, আলবানী ওহাবী বলেছে, সনদটি হাসান; মুত্তাকী হিন্দী, কাঞ্জুল উম্মাল, ৪/১৩৯; ঈমাম আহমদ, আল মুসনাদ, ৪/৮১পৃৃষ্ঠা]।
অপর এক বর্ণনায় রয়েছে,
“হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে খোদাصلى الله عليه و آله وسلم ইরশাদ করেন, আল্লাহ্ পাক হযরত ঈসরাফিল ফিরিশ্তাকে সৃষ্টি করার দিন হতে তিনি নিজের দু’ই পায়ের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তিনি চোখ তুলেও অন্যদিকে তাকান না। তার ও তার প্রতিপালকের মাঝখানে সত্তরটি নূরের পর্দা রয়েছে। তিনি যে কোন একটি পর্দার নিকটবর্তী হলে তখনই তা তাকে পুড়িয়ে ফেলবেন।”
খতিব তিবরিযী রহমাতুল্লহি অালাইহি মুবারাক হাদিসটি বর্ণনা পূর্বক বলেন, উক্ত হাদিসটি ঈমাম তিরমিযী রহমাতুল্লহি আলাইহি বর্ণনা করে বলেছেন, হাদিসটি সহিহ্।
[সূত্রঃ খতিব তিবরিযী, মিশকাত শরীফ, ৪/৩৫২, হা/ ৫৭৩১; ঈমাম আবু ঈসা তিরমিযী, আস্ সুনান, বাদায়িল খালক্ ৪/৩৫১পৃৃষ্ঠা; বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ১/১৭৬পৃৃষ্ঠা, হা/ ১৫৭]।
অনুরুপ আরো হাদিস বর্ণিত হয়েছে,
হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলে কারিমصلى الله عليه و آله وسلم হযরত জিব্রাইল আলাইহিস্ সালামকে প্রশ্ন করলেন, আপনি কি আল্লাহ্ তায়ালাকে দেখেছেন? হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম উত্তরে বললেন, আমার এবং আমার প্রভূর মাঝে ৭০ টি নূরের হিযাব (পর্দা) রয়েছে, সবচেয়ে কাছের পর্দার নিকটবর্তীও যদি আমি হই তাহলে আমি জ্বলে ছাই হয়ে যাবো।”
[সূত্রঃ ঈমাম তাবারানী, মু’জামুল আওসাত, ৬/২৭৮পৃষ্ঠা, হা/ ৬৪০৭; ইবনে হাজর হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ১/৭৯পৃষ্ঠা, হা/ ২৫১; ঈমাম আবু নুঈম ইস্ফাহানী, হুলিয়াতুল আউলিয়া, ৪/ ৬৩পৃষ্ঠা; ঈমাম ইবনে হিব্বান, আজিমাত, ২/৬৭০পৃৃষ্ঠা; খতিব তিবরিযী, মিশকাত, বাদয়িল খালক্, ৪/৩৫১, হা/ ৫৭২৯-৫৭৩০; ঈমাম বাগাবী রহমাতুল্লহি আলাইহি, মাসাবীহুস সুন্নাহ, ৪/৩০, হা/ ৪৪৫৭; ঈমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামীন আন নুবালা, ৬/২৪১পৃৃষ্ঠা; ঈমাম মানাবী, ফায়জুল কাদির, ৪/৭৮পৃৃষ্ঠা]।
সত্তর-৭০ হাজার নূরের হিযাব বা পর্দা সম্পর্কে বিভিন্ন সনদে মুবারাক হাদিস বর্ণিত আছে-
০১. হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে।
[দ্রষ্টব্যঃ তাবারানী, মু’জামুল কাবীর, ১১/৩৭৯, হা/ ১২০৬১; ইবন্ আবি শায়খ্ ইস্ফাহানী, আল্ আযিমাত, ২/৭০০, বায়হাকী, শয়াবুল ঈমান, ১/৩১৫, হা/ ১৫৫]।
০২. প্রখ্যাত তাবেয়ী ঈমাম মুযাহীদ রহমাতুল্লহি আলাইহি সূত্রে।
[দ্রষ্টব্যঃ ইবন্ আবি শায়খ্ ইস্ফাহানী, আল্ আযিমাত, ২/৬৯৩]।
০৩. হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে;
[দ্রষ্টব্যঃ ইবনে হাজার হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ১/৭৯, হা/ ২৫৩]।
০৪. হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত সা’দ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উভয়ের সূত্রে।
[দ্রষ্টব্যঃ ঈমাম তাবারানী, মু’জামুল কাবীর, ১৩/৪১১পৃষ্ঠা, হা/ ১৪২৪৮; ইবনে হাজর হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ১/৭৯পৃষ্ঠা, হা/ ২৫২; ইবনে হাজর অাসকালানী, মুত্তালিবুল আলিয়া, ১২/৫৭৬, হা/ ৩০১৬; আবু ই’য়ালা, আল মুসনাদ, ১/৯০, হা/ ৮০; মুত্তাকী, হিন্দী, কাঞ্জুল উম্মাল, ১০/৩৬৯, হা/ ২৯৮৪৬ ও ২৯৮৪৭; ইবনে আছেম, আস্ সুন্নাহ্, ২/৩৬৬, হা/ ৭৮৮; রুহাইনী, আল্ মুসনাদ, ২/২১২, হা/ ১০৫৫]।
০৫. হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে;
[দ্রষ্টব্যঃ ইবনে হাজর হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ১/৭৯, হা/ ২৪৯]।
০৬. হযরত ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু অানহু সূত্রে;
[দ্রষ্টব্যঃ মুত্তাকী, হিন্দী, কাঞ্জুল উম্মাল, ১০/৩৬৯, হা/ ২৯৮৪৬ ও ২৯৮৪৭]।
০৭. তাবেয়ী হযরত যুরারাত ইবনে আউফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম থেকে মুরসাল হিসেবে অপর একটি সূত্রে।
[দ্রষ্টব্যঃ ঈমাম তাবারানী, মু’জামুল আওসাত, ৬/২৭৮পৃষ্ঠা, হা/ ৬৪০৭; ঈমাম আবু নুঈম ইস্ফাহানী, হুলিয়াতুল আউলিয়া, ৫/ ৫৫পৃষ্ঠা; ঈমাম আবি শায়খ ইস্ফাহানী, আজিমাত, ২/২৬৯পৃৃষ্ঠা; মুসলিম আনসারী দাওলাভী, আল্ কূনী ওয়াল্ আসমা, ৩/১০০৭পৃষ্ঠা, হা/ ১৭৬৫]।
প্রিয় পাঠক, হাদিসের সকল ঈমামগণ একমত যে, মুতাওয়াতির পর্যায়ের হাদিস অস্বিকারকারী কাফির। আর এ হাদিসটিও মুতাওয়াতির প্রমাণিত।