প্রিয় পাঠক আজকের পোষ্টে আলোচনা করব সংসার জীবনে স্ত্রীর কর্তব্য । স্ত্রী যদি তার এই কর্তব্যগুলি পালন করে তাহলে সংসারে অশান্তি থাকবেনা সুখ শান্তিতে ভরে যাবে । ইনশাআল্লাহ ।
১. স্বামীকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকবে
ইমাম আহমদ ও অন্যান্য মুহাদ্দিস বর্ণনা করেন, “দুনিয়াতে যে নারী তার স্বামীকে কষ্ট দেয়, জান্নাতে তার হুরগণ (স্ত্রীগণ) সে নারীকে লক্ষ্য করে বলে, তাকে কষ্ট দিও না। সে তো তোমার কাছে ক’দিনের মেহমান মাত্র, অতি শীঘ্রই তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবে।”[17) তাই অকারনে স্বামীকে কষ্ট দেওয়া যাবে না।
২ . স্বামীর কৃতজ্ঞ হবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তা‘আলা সে নারীর দিকে দৃষ্টি দিবেন না, যে নিজ স্বামীর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না, অথচ সে স্বামী ব্যতীত স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমি জাহান্নাম কয়েক বার দেখেছি, কিন্তু আজকের ন্যায় ভয়ানক দৃশ্য আর কোনো দিন দেখি নি। তার মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি দেখেছি। জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল কেন? তিনি বললেন, তাদের না শোকরিয়ার কারণে। জিজ্ঞাসা করা হলো, তারা কি আল্লাহর না শোকরি করে? বললেন, না, তারা স্বামীর না শোকরি করে, তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না। তুমি যদি তাদের কারো ওপর যুগ-যুগ ধরে ইহসান কর, অতঃপর কোনো দিন তোমার কাছে তার বাসনা পূর্ণ না হলে সে বলবে, আজ পর্যন্ত তোমার কাছে কোনো কল্যাণই পেলাম না।”
তাই সব সময় স্বামীর কৃতজ্ঞতা হবে ।
৩. স্বামীর কাছে তালাক চাওয়া থেকে বেঁচে থাকবে ।
অনেক নারী আছে স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে বিতর্ক হলে কথায় কথায় বলে তুমি আমাকে তালাক দিয়ে দাও তুমি আমাকে ছেড়ে দাও আমি তোমার সঙ্গে থাকতে চাইনা ইত্যাদি ।
ইমাম তিরমিযী,ও ইমাম আবু দাউদ সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, “যে নারী কোনো কারণ ছাড়া স্বামীর কাছে তালাক তলব করল, তার ওপর জান্নাতের ঘ্রাণ পর্যন্ত হারাম।”
অকারনে স্বামীর স্বামীর কাছে তালাক তলব করা বা চাওয়া যাবে না । তবে যদি এমন হয় স্বামী স্ত্রীর মাঝে মিল হচ্ছে না সর্বদাই ঝামেলা আর ঝামেলা । যদি বোঝা যায় যে দুজনের মাঝে সংসার করা সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে সেই ক্ষেত্রে দুই পরিবারের মাঝে কথা বলে ফয়সালা করে নেওয়া উত্তম হবে ।
৪. অবৈধ কাজে স্বামীর আনুগত্য করবে না ।
স্বামী যদি কোন অন্যায় বা অবৈধ কাজের জন্য আদেশ দেয় তাহলে
স্ত্রী সে কথা শুনবে না ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহর অবাধ্যতায় মানুষের আনুগত্য করা যাবে না।”
অর্থাৎ যে কাজ করলে আল্লাহ নারাজ হয়ে যান সেই কাজের বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করা যাবে না বা স্বামীর হুকুম শোনা যাবেনা ।
বাকি ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য করতে হবে এবং তার কথা শুনতে হবে ।
৫. স্বামীর অনুমতি নিয়ে নফল রোজা রাখবে
সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কোনো নারী স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত সাওম রাখবে না।”
অর্থাৎ কোনো স্ত্রী যদি নফল রোজা রাখতে চাই তাহলে অবশ্যই স্বামীর কাছে অনুমতি নেবে আর যদি এমন হয় যে মাঝে মাঝে রোজা রেখে থাকে শামী কিছু বলে না তবে অনুমতি না দিলেও চলবে । ফরজ রোজার ক্ষেত্রে স্বামীর অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ এটা ফরজ রোজা ।
৬.স্বামী-স্ত্রীর একান্ত গোপনীয়তা প্রকাশ করবে না
আসমা বিনতে ইয়াযিদ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কিছু পুরুষ আছে যারা নিজ স্ত্রীর সাথে কৃত আচরণের কথা বলে বেড়ায়, তদ্রুপ কিছু নারীও আছে যারা আপন স্বামীর গোপন ব্যাপারগুলো প্রচার করে বেড়ায়?! এ কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেল, কেউ কোনো শব্দ করল না। আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! নারী-পুরুষেরা এমন করে থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এমন করো না। এটা তো শয়তানের মতো যে রাস্তার মাঝে নারী শয়তানের সাক্ষাৎ পেল, আর অমনি তাকে জড়িয়ে ধরল, এদিকে লোকজন তাদের দিকে তাকিয়ে আছে!”
অর্থাৎ এ কাজটি হোতি জঘন্যতম শয়তানি কাজ । রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম স্বামী-স্ত্রীর মাঝে গোপনীয়তাঃ অন্যের সামনে বর্ণনা করতে বারণ করেছেন ।
৭. স্বামীর অনুমতি ব্যতীত কাউকে তার ঘরে ঢুকতে দেবেনা
সহীহ বুখারীতে আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “নারী তার স্বামীর উপস্থিতিতে অনুমিত ছাড়া সাওম পালন করবে না এবং তার অনুমতি ছাড়া তার ঘরে কাউকে প্রবেশ করতে দিবে না।”[25]
৮. স্বামীর অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বেরও হবেনা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “তোমরা ঘরে অবস্থান কর”ইবন কাসীর রহ. এর ব্যাখ্যায় বলেন, “তোমরা ঘরকে আঁকড়িয়ে ধর, কোনো প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয়ো না।”
নারীর জন্য স্বামীর আনুগত্য যেমন ওয়াজিব, তেমন ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য তার অনুমতি ওয়াজিব।
প্রত্যেক স্ত্রী সংসার জীবনে অবশ্যই এ বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য রেখে জীবন যাপন করবে ইনশাল্লাহ সংসারে সুখ শান্তিতে ভরে যাবে ।