শিয়া-রাফেজীদের মূলোৎপাটনে আ’লা হযরতের (রাঃ) ভূমিকা – সংকলনে হাফেজ মাওলানা মাসুম মুহাম্মদ ইমরান
ভূমিকাঃ
যখন এ উপমহাদেশে ইসলামী সালতানাতের সূর্য অস্তমিত হতে যাচ্ছিল, অন্ধকার ছেয়ে যাচ্ছিলো তখনই আল্লাহর রহমতের একটি সূর্য উদিত হল। আবার সেই আকাশকে আলোকিত করলো, সকলের মনে নতুন করে সাহস জোগালো। অন্ধকার আকাশে আলো জালানো সেই সূর্য আর কেউ নন, তিঁনি হলেন ইমামে আহলে সুন্নাত, আযিমুল বরকত শাহ আহমদ রেযা খাঁন ফাযেলে ব্রেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (১৮৫৬-১৯২১ ঈসায়ী)। খোদা প্রদত্ত অসাধারণ যোগ্যতা প্রজ্ঞা আর জ্ঞান দিয়ে তিনি উম্মতে মুহাম্মদীকে বাতিল অপশক্তি থেকে মুক্ত করেছিলেন। হক-বাতিল চিনিয়েছিলেন। সর্বোপরি বাতিল অপশক্তির জঘণ্য আকীদা ও বদ মতলতের জাল ছিন্ন করে তাদের মতবাদের মূলোৎপাটন করেছিলেন। এই মহান ব্যক্তিত্বের কর্ম তাঁকে যুগ যুগ ধরে আশেকে রাসূলদের মনে জাগিয়ে রেখেছে। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখিয়েছেন প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তাফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে। তাঁরই ওফাত শরীফের পর তাঁর যোগ্য উত্তরসূরী আলিম-ওলামা একইভাবে জাগতিক ভোগবিলাস, মূর্খতা ও অজ্ঞতায় নিমজ্জিত পথহারা মানুষদেরকে সঠিক পথ তথা জ্ঞান ও ঈমানের সন্ধান দিয়ে চলছেন যুগযুগ ধরে। তাই প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা দিয়েছেন-
ان العلماء ورثة الأنبياء وأن الأنبياء لم يُورثوا دينارا ولادرهما أنما ورثوا العلم فمن أخذ به اخذ بحظ وافر
“আলিমগণ হলেন নবীগণের উত্তরাধিকারী। আর নবীগণ কোন দিনার-দিরহাম রেখে যাননি; বরং রেখে গিয়েছেন জ্ঞান বা ইলমকে। সুতরাং যারা এ জ্ঞানকে গ্রহণ করবে সে যেন এ মিরাছের সিংহভাগের অধিকারী হলো।” [তিরমিজী, আবু দাঊদ, ইবনে মাজা] আর যে সমস্ত মহান মিনষী যুগ যুগ ধরে জ্ঞানের মশাল হাতে নিয়ে বিশ্বব্যাপি জ্ঞানের আলো বিতরণ করে আসছেন, যুগের মহান সংস্কারক ইমাম আহমদ রেজা খাঁন রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাদের অন্যতম।
আ’লা হযরত (রহ.) এর পরিচয়ঃ
আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা (র.)জন্ম ১২৭২ হি.(১৮৫৬ খ্রি.)ওফাত ১৩৪০হি.(১৯২১ খ্রি.) বিশ্বব্যাপী পরিচিত এক বিস্ময়কর অসাধারণ প্রতিভা। প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যের সর্বত্র আজ তাঁর চিন্তাধারা শিক্ষা ও জীবন দশর্ন সম্পর্কে আলোচনা ও গবেষণা চলছে। তাঁর জীবন কর্ম মূল্যায়ন ও অবদান সর্ম্পকে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৬ জন গবেষক ৩৬টি শিরোনামে পি-এইচ.ডি. ডিগ্রী অর্জন করেছেন, ২৭ জন গবেষক এম.ফিল ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন। আরেক গবেষক ড. মুহাম্মদ মুকাররম আহমদ “ইমাম আহমদ রেযা কী আদবী খিদমত” শিরোনামে ভারতের দিল্লী জওহারলাল ইউনিভার্সিটি হতে ১৯৯৮ খ্রি. ডি. লীট ডিগ্রী অর্জন করেন। ভারতের উত্তর প্রদেশের বেরেলী শহরে যদিও তাঁর আবির্ভাব; কিন্তু দেশ কাল ও ভৌগলিক সীমানার ঊর্দ্ধে তাঁর অবস্থান। এ জাতীয় মনীষীরা গোটা বিশ্বের সম্পদ। ১৩৪০ হিজরিতে বিশাল কর্মময় জীবনে মিল্লাত মাযহাবের জন্য জ্ঞান সমুদ্র রেখে তিনি ইহকাল ত্যাগ করেন। তিনি ইতিহাসের কিংবদন্তি। নবী মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুযোগ্য ইলমী উত্তরাধিকার হিসেবে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণে জ্ঞানী ওলামা-মাশায়েখসহ মুসলিম বিশ্বের এক বিশাল অংশের অন্তরাত্মা আজ তেজোদীপ্ত ও আলোকিত।
তরজমা কুরআন কানযুল ঈমান তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তিঃ
আ’লা হযরত অনূদিত তরজমা-ই কুরআন কানযুল ঈমান-এর সূচনা প্রসঙ্গে আল্লামা আবদুল মুবীন নোমানী বর্ণনা করেন, “কানযুল ঈমান লিখার সূচনা হয় জমাদিউল আখের ১৩৩০ হিজরিতে, অনুবাদ কর্ম সমাপ্ত হয় ২৮ জমাদিউল আখের ১৩৩১ হিজরিতে (মুতাবিক ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে) মাঝখানে কিছু দিন বিরতি ছিলো। বৎসরের কয়েক মাসের মধ্যেই অনুবাদ কর্ম সম্পন্ন হয়। এক্ষেত্রে পুরো এক বৎসর সময়ও ব্যয় হয়নি।
কানযুল ঈমান-এর উপর পি-এইচ.ডি.
আ’লা হযরতের জীবন ও কর্মের গবেষণা বিষয়ক, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এদারায়ে তাহকীকাতে ইমাম আহমদ রেযার সেক্রেটারী জেনারেল “মারেফে রেযা” মাসিক পত্রিকার সম্পাদক করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম এন্ড টেকনোলোজি বিভাগের প্রফেসর ড. মজিদ উল্লাহ কাদেরী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব খ্যাতিমান আ’লা হযরত গবেষক প্রফেসর মুহাম্মদ মাসউদ আহমদ (র.)’র তত্ত্বাবধানে ১৯৯৩ খ্রি. “কানযুল ঈমান আওর দিগর মারুফ উর্দু তারজুমে কুরআন কা তাকাবুলি জায়েযাহ” শিরোনামে পি-এইচ,ডি. ডিগ্রী অর্জন করেন। এ পর্যন্ত বাংলা ভাষাসহ পৃথিবীর ৭টি ভাষায় যথাক্রমে ইংরেজী, হিন্দি, গুজরাটি, সিন্ধু, ডাচ, তুর্কী ও বাংলা ভাষায় মোট ১৪ জন খ্যাতিমান আলেম ও গবেষক কানযুল ঈমান-এর অনুবাদ প্রকাশ করেছেন।
ফাতওয়াঃ
বিশ্ববরেণ্য আলেমেদ্বীন বোখারী শরীফের ব্যাখ্যাকারক আ’লা হযরত গবেষক ফকীহুল হিন্দ হযরত আল্লামা মুফতি শরীফুল হক আমজাদী (র.) এর বর্ণনা মতে, ১০ শাওয়াল ১২৭২ হিজরীতে তাঁর জন্ম, ২৫ সফর ১৩৪০ হিজরিতে তাঁর ওফাত। হিজরি সাল অনুপাতে তাঁর জীবনকাল ৬৭ বৎসর ৫ মাস ১৫দিন।
১৪ শাওয়াল ১২৮৬ হিজরিতে তিনি ফাতওয়া প্রণয়ন শুরু করেন। এ হিসেবে ১৩৪০ হিজরি পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৫৩ বৎসর ৬ মাস ১১ দিন সময়কাল পর্যন্ত ফাতওয়া প্রণয়নে দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় ৭৪ টির অধিক বিষয়ে সহস্রাধিক গ্রন্থ রচনার পাশাপাশি ফিক্হে হানফীর ইনসাইক্লোপিড়িয়া তথা বিশ্বকোষ নামে খ্যাত (العطايا النبوية فى الفتوي الرضوية) “আল আতায়া আন্ নবভীয়্যাহ ফিল ফাতাওয়া আর-রিজভীয়্যাহ” নামে বিশাল ফাতওয়া গ্রন্থ গ্রণয়ন করেন। লক্ষাধিক ফাতওয়ার বিশাল সম্ভার বর্তমানে ত্রিশ খন্ডে প্রকাশিত। পৃষ্ঠা সংখ্যা ২১,৬৫৬। সর্বমোট প্রশ্নত্তোর সংখ্যা ৬৮৪৭ যা ২০৬টি ফাতওয়া সংক্রান্ত পুস্তিকার বিশাল সম্ভার।ফিকহে হানফীর জগতে তাঁর অনন্য অবদান “ফাতওয়ায়ে রিজভীয়্যাহ”।
এছাড়াও আ’লা হযরত দৈনিক গড়ে ৫৬ পৃষ্ঠা লিখা নিয়মিত লিখেছেন। সেই অনুপাতে পৃষ্ঠা সংখ্যা দাঁড়ায় ১০,৬৫৮৪৩ (দশ লক্ষ পয়ষট্টি হাজার আটশত তেতাল্লিশ) পৃষ্ঠা।
আ’লা হযরতের ফিকহী মানসের উপর পি-এইচ.ডি. অর্জন
আল্লামা হাসান রেযা খান আজমী “ফকীহে ইসলাম ইমাম আহমদ রেযা খান” শিরোনামে ড. আতহার শের-এর তত্ত্বাবধানে ভারতের পাটনা ইউনিভার্সিটি হতে ১৯৭৯ খ্রি.পি-এইচ.ডি.ডিগ্রী অর্জন করেন।
নবী প্রশস্তির এক অমর কাব্য গ্রন্থ হাদায়েকে বখশিশঃ
হাদায়েকে বখশিশ নবী করীমের প্রশংসার প্রশস্তিতে লিখা আ’লা হযরত-এর অমর কাব্য সংকলন। তিনি রচনা করেন রসূলের প্রতি প্রেম ভালবাসার অপূর্ব নিদর্শন নাতিয়া কালাম।
“মোস্তফা জানে রহমত পেহ্ লাখো সালাম
শময়ে বযমে হেদায়ত পেহ্ লাখো সালাম।”
এমন শাশ্বত কাব্য পংক্তির কোন নজির নেই। শত সহস্রবার উচ্চারিত হয়েও এর আবেদন এতটুকু নিস্প্রভ হয়নি। রাসূলের সুমহান শান-মান, মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব অনুধাবন, আক্বিদাগত বিভ্রান্তি নিরসন ও বাতুলতার স্বরূপ উম্মোচনে তাঁর লিখনী এক অব্যর্থ প্রতিষেধক। তাঁর রচিত কবিতার ছত্রে ছত্রে নবী প্রেমের যে অনন্য সূর অনুরণিত হয়েছে তা তাঁর অকৃত্রিম আনুগত্য ও মুহব্বতের অক্ষয় শ্রুত ধ্বনি।
পৃথিবী কবি ও কাব্য কম দেখে নি; কিন্তু ইমাম আহমদ রেযার অন্তরাত্মা ছিলো খোদা প্রদত্ত অসাধারণ প্রতিভা, আশ্চর্য প্রভা ও প্রজ্ঞায় আলোকিত। ইমাম বেরলভীর কাব্য মানসের উপর পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু গবেষক এম.ফিল. ও পি-এইচ.ডি. ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। বার্মিং হাম ইউনিভাসির্টি (যুক্তরাষ্ট্র), পাঞ্জাব ইউনির্ভাসিটি (পাকিস্তান), মুসলিম ইউনিভাসির্টি (ভারত) এবং ময়শুর ইউনিভর্সিটি (ভারত)সহ বিশ্বের সর্বোচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কর্ম হয়েছে এবং হচ্ছে। সম্প্রতি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক মাওলানা নাসির উদ্দিন ড. প্রফেসর আবদুর রশীদ-এর তত্ত্বাবধানে বাংলা ভাষায় আ’লা হযরতের কাব্য সাহিত্যের উপর পি-এইচ.ডি.ডিগ্রী অর্জন করেন।
বিশ্ববরণ্যে বহু খ্যাতিমান আলেমেদ্বীন হাদায়েকে বখশিশ-এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁরা হলেন- আল্লামা মুফতি নসরুল্লাহ খান (করাচি) শায়খুল হাদীস আল্লামা ফয়েজ আহমদ ওয়েসী (ভাওয়ালপুর), আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ খান (লাহোর), আল্লামা গোলাম ইয়াসীন আমজাদী প্রমুখ। ইসলামী বিশ্বের প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ ইসলামী ঐতিহ্যের স্মারক মিসর আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়-এর অধ্যাপক প্রফেসর ড. হাফেয মুহাম্মদ মাহফুয ইমাম আহমদ রেযা প্রণীত অমর কাব্যের ৩৫০ পৃষ্ঠা সম্বলিত এক বিরাট সংকলন প্রকাশ করেন যা “বাসাতিনুল গুফরান” নামে ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত হয়েছে।
মিসর আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে আ’লা হযরত চর্চাঃ
বিশ্বের অন্যান্য বিদ্যাপীঠের মতো আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলী ইমাম আহমদ রেযাকে শ্রদ্ধা ও সম্মানের দৃষ্টিতে দেখেছেন। তাঁরা শুধু তাঁকে জ্ঞান বিজ্ঞানের পুরোধা স্বীকার করেছেন তা নয়; বরং তাঁরা তাঁকে চতুর্দশ শতাব্দীর মহান মুজাদ্দিদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
১৩৪০ হিজরি মুতাবিক ১৯২১ খ্রি. আ’লা হযরতের ইন্তেকালের পর হযরত শায়খ মুসা আশশামী আল আযহারী ইমাম আহমদ রেযা প্রণীত “আদ্দৌলাতুল মক্কীয়া” গ্রন্থে অভিমত ব্যক্ত করেন। “আমি আদ্দৌলাতুল মক্কীয়া” গ্রন্থ অধ্যয়ন করেছি, এটাকে নিয়ামক হিসেবে এবং সত্যান্বেষী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীদের অন্তরের মহৌষধ হিসেবে পেয়েছি। গ্রন্থ প্রণেতা শায়খ আহমদ রেযা খান ইমামদের ইমাম এ উম্মতের মুজাদ্দিদ তথা সংস্কারক। অনুরূপ আল-আযহার-এর অধ্যাপক শায়খ ইবরাহীম আবদুল মুতী আশ-শাফেয়ী স্বীয় অভিমত ব্যক্ত করে বলেন যে, “আদ্দৌলাতুল মক্কীয়া” গ্রন্থটি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য একটি উঁচুমানের স্তম্ভ। আল্লাহ তায়ালা এর জন্য ইমাম আহমদ রেযাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
জামেয়া আল-আযহারের অধ্যাপক শায়খ আবদুর রহমান আল হানাফী আল মিসরী ১৩২৯ হি. (১৯৯১ খ্রি.) স্বীয় অভিমত ব্যক্ত করেন- মদীনা, মনোয়ারার কতেক বিজ্ঞজন আদ্দৌলাতুল মক্কীয়া সম্পর্কে আমাকে অবহিত করলো। আমার জীবনের শপথ, গ্রন্থ প্রণেতা এতে অতীব অর্থবহ নির্ভরযোগ্য প্রমাণাদি সন্নিবেশিত করেছেন। আ’লা হযরতের ইন্তেকালের অন্তত ৪২ বৎসর পর ১৯৬৩ খ্রি. আ’লা হযরত (র.)’র প্রপৌত্র তাঁর ইলমী উত্তরাধীকার তাজুশ শরীয়্যাহ আল্লামা আখতার রেযা আল আযহারী বিশ্বের প্রাচীনতম সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ জামেয়াতুল আযহারে আ’লা হযরতকে নতুনরূপে আবিষ্কার করেন। ইমাম বেরলভীর সুবিশাল দ্বীনি খিদমত ও বহুমাত্রিক অবদানের পরিচিত করান।
আল্লামা আখতার রেযা খান আল-আযহারে ইসলামী কানুন ও শরীয়া বিভাগে অধ্যয়নরত অবস্থায়, পরীক্ষক মহোদয় উক্ত বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিকট ইলমুল কলাম বা আকিদা বিষয়ক কতিপয় জটিল কঠিন প্রশ্ন করলেন। আ্ল্লামা আযহারী ছাড়া কেউ উক্ত প্রশ্নমালার যথার্থ উত্তর দিতে পারেননি। তাঁর বিশুদ্ধ যথার্থ উত্তর শ্রবনে পরীক্ষক মহোদয় প্রশ্ন করলেন, আপনি তো হাদীস ও উসুলে হাদীস বিষয়ে পড়ালেখা করেছেন। ইলমুল কালাম তথা আকিদা বিষয়ক প্রশ্নাবলীর উত্তর দানে কীভাবে সক্ষম হলেন? তদুত্তরে বললেন, ‘আমি আমার বুযুর্গ পিতামহ ইমাম আহমদ রেযার প্রতিষ্ঠিত, জামেয়া রিজভীয়াহ মানযারুল ইসলাম বেরেলীতে কালাম শাস্ত্র অধ্যয়ন করেছি।
তাজুশ শরীয়্যাহ আল-আযহারের শায়খুল হাদীস আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ সামাহী ও প্রফেসর আল্লামা আবদুল গাফফার (রহ.) সহ অভিজ্ঞ তাফসীর ও হাদীস বিশারদ ও প্রাজ্ঞজনদের নিকট জ্ঞানার্জন করেন। ১৯৬৬ খ্রি. তিনি সর্বোচ্চ সমাপনী ডিগ্রীতে ১ম শ্রেণিতে ১ম স্থান অধিকার করার গৌরব অর্জন করায় তৎকালীন মিসরের প্রেসিডেন্ট কর্ণেল জামাল নাসের তাঁকে الدرع الأزهر তথা ফখরে আযহার এওয়ার্ড প্রদান করেন।
তাজুশ শরীয়্যাহ-এর সমসাময়িক ওলামা কেরামের মধ্যে সর্বপ্রথম প্রফেসর ড. শায়খ মহিউদ্দিন আলওয়ায়ী (আল আযহারের প্রফেসর) ইমাম আহমদ রেযার জীবন-কর্মের উপর আরবী ভাষায় এক দীর্ঘ প্রবন্ধ রচনা করেন। যা কায়রো-এর বহুল প্রচারিত “সওতুশ শারক” নামক পত্রিকায় ১৯৭০খ্রি. ফেব্রুয়ারী সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।
জামেয়াতুল আযহারে আ’লা হযরত বিষয়ক লিখিত গ্রন্থাবলীঃ
1) বাসতিনুল গুফরান (بساتين الغفران) হাদায়েক বখশিশ অবলম্বনে আরবি ভাষায় ৩৫০ পৃষ্ঠা সম্বলিত কাব্যানুবাদ গ্রন্থ। লেখক আল-আযহারের প্রফেসর ড. হাযেম মুহাম্মদ মাহফুয। গ্রন্থটি ১৪১৮হি. (১৯৯৭ খ্রি.)বাসাতিনুল গুফরান নামে প্রকাশিত হয়। ১৯৯৮ সনের ৬ জুন পাকিস্তানের করাচিতে অনুষ্ঠিত আ’লা হযরত কন্ফারেন্সে লেখককে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাঁকে রিসার্চ এওয়ার্ড সম্মানানা প্রদান করা হয়।
2) আদ দিরাসাতুর রেযভিয়া ফি মিসর আল-আরবিয়া (الدراسات الرضوية في مصر العربية) প্রফেসর ড. হাযেম আ’লা হযরতের জীবন-কর্মের উপর ‘আদদিরাসাতুর রেযভিয়াহ ফি মিসর আল-আরবিয়্যাহ’ শীর্ষক এক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধও রচনা করেন। যা ১৯৯৮ খ্রি. মে মাসে মিশরের কায়রো দারুস সিক্বাফাহ লিন-নশর ওয়াত তাওযীহ প্রকাশনা সংস্থা দপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত হয়।
3) আল ইমামুল আকবর আল মুজাদ্দিদ আহমদ রিযা খান ওয়াল আলামুল আরবি
(الإمام الأكبر المجدد أحمد رضا خان والعالم العربي)
গ্রন্থটির লেখক প্রফেসর ড. হাযেম মাহফুয মিসরী কর্তৃক গ্রন্থটি ১৯৯৮ সনে প্রকাশিত পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৪০।
4) আহমদ রেযা খান আল বেরলভী আল হিন্দি শায়খুল মাশায়িখ তাসাউফ আল ইসলামি ওয়া আযমু শুয়ারাইল মাদীহ আন-নবভী
(أحمد رضا خان البريلوي الهندي شيخ مشانخ التصوف الإسلامي وأعظم شعراء المديح النبوي)
ড.হাযেম মাহফুজ কর্তৃক লিখিত ইমাম আহমদ রেযার সূফীতত্ত্ব ও প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে রচিত কাব্যের আরবী সংকলন। যা ১৯৯৯ খ্রি. কায়রো থেকে প্রকাশিত হয়।
5) আল মানযুমাতুস সালামিয়া ফি মাদহি খায়রিল বারিয়্যা
(المنظومة السلامية في مدح خير البرية)
রাসূলুল্লাহর শানে আ’লা হযরত বিরচিত বিশ্বব্যাপী সমাদৃত সালামে রেযা খ্যাত ‘মুস্তফা জানে রহমাত পেহ্ লাখো সালাম’। ১৭১ টি পংক্তির আরবি কাব্যানুবাদ। আরবি ভাষার কাব্যানুবাদ করেন আল আযহারের খ্যাতিমান কবি প্রফেসর ড. হোসাইন মুজিব আল মিসরী।
6) আল ইমাম আহমদ রেযা বাইনা নাক্কাদিল আদব ফি মিসর আল-আযহার-
(الإمام أحمد رضا بين نقاد الأدب في مصر الأزهر)
মিসরীয় সাহিত্য সমালোচকদের দৃষ্টিতে ইমাম আহমদ রেযা শীর্ষক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধটি লিখেছেন প্রফেসর ড. হাযেম মাহফুয মিসরী।
7) আহমদ রেযা খান মিসবাহুন হিন্দিউন বি-লিসানিন আরবিইন্
(أحمد رضا خان مصباح هندي بلسان عربي)
আল আযহারের আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. রিজক মুরসী আবুল আব্বাস কর্তৃক ‘ভারতবর্ষের জ্ঞান জগতের উজ্জ্বল প্রদীপ ইমাম বেরলভীর আরবি ভাষায় তাঁর সুনিপুণ দক্ষতার বর্ণনা বিষয়ক অনন্য গ্রন্থ।
8) মাওলানা আহমদ রেযা খান ওয়াল লুগাতুল আরবিয়া
( مولانا أحمدرضا خان واللغة العربية)
“আরবি ভাষা ও আহমদ রেযা” শীর্ষক গবেষণামূলক প্রবন্ধটি লিখেছেন আল আযহারের অধ্যাপক প্রফেসর ড. হোসাইন মুজিব আল মিসরী।
9) মাওলানা আহমদ রেযা খান ওয়াল লুগাতুল আরবিয়া
(القاب مولانا الإمام عند علماء العرب)
আরব বিশ্বের ওলামা কেরামের নিকট ইমাম আহমদ রেযার ব্যক্তিত্ব ও অনন্য প্রতিভা বিভিন্ন সম্মানসূচক উপাধি ও অভিধায়ে ভূষিত। এ বিষয়ে প্রফেসর ড. হাযেম মাহফুজ কর্তৃক লিখিত প্রবন্ধ প্রনিধানযোগ্য।
10) ইমামুল আরব ওয়াল আজম মাওলানা আহমদ রেযা খান আল বেরলভী
(إمام العرب والعجم مولانا أحمد رضا خان البريلوي)
আল আযহারের প্রফেসর ড. নবীলা ইসহাক চৌধুরী আরব ও অনারবীয়দের ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরলভী (র.) সর্বজনগ্রাহ্য প্রতিভা ও অসাধারণ ব্যক্তিত্বের বর্ণনা বিষয়ক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ।
11) ওয়াজহুল হাজতি ইলা দারাসতি মাওলানা আহমদ রেযা খান
(وجه الحاجة إلى دراسة مولانا أحمد رضا خان)
প্রফেসর ড. হোসাইন মুজিব আল মিসরী মাওলানা আহমদ রেযার জীবন দর্শন চর্চার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক প্রবন্ধ লিখেছেন।
12) আল-আযহারের খ্যাতিমান প্রফেসর প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ড. হোসাইন মুজিব আল মিসরী মাওলানা আহমদ রেযার গবেষণা কর্মের সাথে সম্পৃক্ত হওয়াটা কেবল মিসরবাসীদের জন্য গর্বের বিষয় নয়; বরং তা গোটা আরববাসীকে ইমাম আহমদ রেযার চিন্তাধারা ও দর্শনকে চর্চার প্রতি আহবান। ড.মুজিব মিসরী আরব বিশ্বের জ্ঞানী-গুণী পন্ডিত মহলে সর্বত্র সমাদৃত। মিসর আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়, আউনুশ শমস বিশ্ববিদ্যালয়সহ বহু ইউনিভার্সিটিতে তাঁর ছাত্রগণ লেকচারার ও প্রফেসর পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। পৃথিবীর আটটি ভাষার উপর তাঁর অসামান্য দক্ষতা রয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় তাঁর রচিত গ্রন্থাবলীর সংখ্যা ষাটের অধিক। ইমাম আহমদ রেযার ফার্সি কাব্য সংকলন “আরমগানে রেযা” এর আরবি গদ্যানুবাদ করেছেন এই খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব প্রফেসর ড. হোসাইন মুজিব মিসরী। এছাড়া আরবি ফার্সী ও তুর্কী ভাষায় তাঁর আটটি কাব্য সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। প্রাচ্যের কবি ড. আল্লামা ইকবাল-এর পি-এইচ.ডি থিসিস তিনিই আরবিতে অনুবাদ করেছেন।
হারামাঈন শরীফাঈনে আ’লা হযরত চর্চাঃ
আ’লা হযরত সর্বপ্রথম ২৩ বৎসর বয়সে নিজ পিতা মাতার সাথে ১২৯৬ হি. (১৮৭৮খ্রি.) হজ্জে বায়তুল্লাহ ও যিয়ারতে মুস্তফার লক্ষ্যে হারামাঈন শরীফাঈনে গমন করেন। ১৩২৩ হি. (১৯০৫ খ্রি.) বড় ছাহেবজাদা হুজ্জাতুল ইসলাম মুফতি হামেদ রেযা খান কাদেরী (রহ.) কে সাথে নিয়ে হজ্জে বায়তুল্লাহ ও যিয়ারতে মুস্তফা সম্পন্ন করেন। এ বারে তিনি মক্কা শরীফে তিনমাস মদীনা মুনাওয়ারা শরীফে একত্রিশ দিন অবস্থানের সৌভাগ্য অর্জন করেন। এ সুদীর্ঘ সময় অবস্থানকালে সেখানকার আরব বিশ্বের খ্যাতিনামা ওলামায়ে কেরাম তাঁকে প্রাণঢালা অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন। শরয়ী বিভিন্ন জটিল কঠিন বিষয়াদি ও আকাইদ সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে আ’লা হযরত থেকে হাদীসের সনদ গ্রহণ করেন। আ’লা হযরতের প্রজ্ঞাপূর্ণ ও জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় তাঁরা মুগ্ধ হন। তাঁর ইলমী গভীরতা ও ফতোয়া প্রণয়নের দক্ষতায় তাঁরা বিস্মিত হন। কতিপয় পথভ্রষ্ট সম্প্রদায় কর্তৃক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শানে মানহানিকর, আপত্তিকর ধৃষ্টতাপূর্ণ ঈমান বিধ্বংসী বক্তব্য ও মন্তব্যের কারণে ইসলামি শরীয়তের আলোকে আ’লা হযরত “আল মুতামাদ আল মুস্তানাদ” ফাতওয়া গ্রন্থ রচনা করে তাদের প্রতি কুফুরি ফাতওয়া ব্যক্ত করেন, আ’লা হযরত প্রদত্ত এই ঐতিহাসিক ফাতওয়া হেরামাঈন শরীফাঈনের উচ্চ পর্যায়ের ওলামায়ে কেরামের সামনে পেশ করা হলে, ত্রিশের অধিক খ্যাতিসম্পন্ন উঁচুমানের বিজ্ঞ আলেম আ’লা হযরতের প্রদত্ত ফাতওয়ার সাথে ঐকমত্য পোষণ করেন এবং তাঁরা প্রত্যেকে লিখিতভাবে অভিমতপ্রদান করেন। নবীদ্রোহী ওহাবী নজদীদের উত্তরসূরী দেওবন্দী বাতিলদের স্বরূপ উন্মোচনে আ’লা হযরতের সাহসী ভূমিকাকে তাঁরা অভিনন্দন জানিয়েছেন। হেরামাঈন শরীফাঈনের ওলামায়ে কেরামের অভিমত সম্বলিত এ ফাতওয়া গ্রন্থটি ১৩২৪ হিজরী সনে “হুসামুল হারামাঈন আলা মানহারিল কুফুরি ওয়াল মায়ান” নামে প্রকাশিত হয়। যা ১৪১৭ হিজরী মোতাবিক ১৯৯৬ সনে ‘কুফর ও মিথ্যার গ্রীবাদেশে হেরামাঈন শরীফাঈন এর শাণিত তরবারী’ নামে অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল করিম নঈমী কাদেরী কর্তৃক অনূদিত ও প্রকাশিত হয়। আ’লা হযরত (রহ) মক্কা মুকাররমায় অবস্থানকালে প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন শায়খ আব্দুল্লাহ আবুল খায়র মিরদাদ (র.) অসংখ্যবার তাঁর সান্নিধ্য অর্জন করেন। ‘আদ্দৌলাতুল মাক্কিয়াহ’ প্রকাশকালে আ’লা হযরতের সাথে সম্পর্ক সূদৃঢ় হয়। একদিন শায়খ আব্দুল্লাহ মিরদাদ এবং শায়খ মুহাম্মদ আহমদ হামিদি আদাভী কাগজের নোট সম্পর্কে বারটি প্রশ্ন সম্বলিত আবেদন পেশ করেন তদুত্তরে আ’লা হযরত (র.) ‘কিফলুল ফকিহিল ফাহিম ফী আহকামি কিরতাসিদ দিরাহিম’ গ্রন্থ রচনা করেন।
শায়খ আল্লামা আবুল খায়ের বিন আব্দুল্লাহ মিরদাদ মসজিদে হেরেমের সম্মানিত খতিব এর অভিমত, নি:সন্দেহে তিনি (ইমাম আহমদ রেযা) বিজ্ঞ পন্ডিত, যিনি স্বীয় নয়নের জ্যোতিতে জটিল কঠিন বিষয়াদি সমাধানে সক্ষম। আহমদ রেযা যিনি তাঁর নামের স্বার্থক বাহক, তাঁর কথামালা মুনিমুক্তা সদৃশ্য, তিনি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়াবলীর আকর। তাঁর জ্ঞান প্রজ্ঞা সংরক্ষিত ভান্ডার হতে নির্বাচিত মারিফাতের সূর্য, যা দিবালোকের ন্যায় দীপ্তমান। যিনি জ্ঞানসমূহের জাহের-বাতেন উন্মোচনকারী। তাঁর সম্পর্কে যার অবগতি রয়েছে তার জন্য এ মন্তব্য করা উচিত যে, তিনি পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের জন্য অনেক কিছু রেখে গেছেন। অতঃপর নিমোক্ত পংক্তি বর্ণনা করেন,
ليس على الله بمستنكر + أن يجمع العالم في واحد
“আল্লাহর জন্য কঠিন নয় যে, তিনি একজন ব্যক্তির মধ্যে সমগ্র পৃথিবী একত্রিত করে দেবেন।”
মক্কা মুকাররমার প্রখ্যাত আলেম আল্লামা শায়খ সৈয়দ মুহাম্মদ আলভী মালেকী আ’লা হযরত সম্পর্কে নিম্নোক্ত অভিমত ব্যক্ত করনে-১৫
نحن نعرفه بتصنيفاته وتا ليفا ته حبه علامة السنة وبغضه علامة البدعة
“আমরা তাঁকে তাঁর রচনাবলীর ও সংকলিত গ্রন্থাবলীর দ্বারা চিনতে পেরেছি। তাঁর প্রতি ভালবাসা সুন্নতের নিদর্শন। তাঁর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ বিদআতীর লক্ষণ।”
আরব বিশ্বের ওলামা কেরামের অভিমত সম্বলিত আ’লা হযরত প্রণীত কিতাবাদি যা অনাদিকাল আরব বিশ্বে সুন্নীয়তের আদর্শ ও শিক্ষার প্রসারে দিশারীর ভূকিমা পালন করবে।
ইসলামী দুনিয়ায় তাঁর এ অসাধারণ ইলমী খিদমত অক্ষত ও অম্লান হয়ে থাকবে।
শিয়া-রাফেজীদের মূলোৎপাটনে আ’লা হযরত (রহ) এর ভূমিকাঃ
শিয়াদের কতিপয় কুফরী আক্বীদাঃ
কালিমা শরীফঃ শিয়াদের কালিমা শরীফ ভিন্ন। তাদের কালিমা শরীফ হলো “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মাদুর রাসুলুল্লাহ আলী ওয়ালী উল্লাহ।” কালিমা শরীফ নিয়ে তাদের বক্তব্য হলো, “আলী ওয়ালী উল্লাহ ব্যতীত কালিমা তাইয়্যিবা মিথ্যা।” (সূত্র: শিয়া মাযহাব হক্ব হ্যায়, পৃষ্ঠা ২)
রুকনঃ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের ৫ রুকনের সাথে তাদের রুকনের পার্থক্য রয়েছে। তাদের রুকনগুলো হলো-১. নামায ২. রোযা ৩. হজ্জ ৪. যাকাত ৫. বেলায়েত (সূত্র : উছুল কাফী)
নামাযঃ সুন্নীদের সাথে তাদের নামাযের পার্থক্য রয়েছে। যেমন- ১. সুন্নীদের ন্যায় ৫ ওয়াক্ত নামায থাকলেও আছর ও ইশার নামাযে নির্দিষ্ট সময়সূচি না থাকায় যথাক্রমে যোহর ও মাগরিবের সাথে একত্রে পড়ে।রমাদ্বান মাসে তারাবীহ নামায পড়ে না। ২. নামাযে বাম হাতের উপর ডান হাত বাঁধলে নামায ভঙ্গ হবে (সূত্র : তাফসীর আল ওয়াসীলা) ৩. নামাযে সূরা ফাতিহার পরে “আমিন” বললে নামায ভঙ্গ হবে কিন্তু তাকীয়া (অন্তরে যে বিশ্বাস তার বিপরীত কিছু বলা বা করা) করার সময় আমিন বলা জায়িয। (সূত্র : তাফসীর আল ওয়াসীলা)
আযানঃ সুন্নীদের সাথে তাদের আযানেরও পার্থক্য আছে। শিয়ারা আযানে “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ” এর পরে “আশহাদু আন্না আলিয়ান ওয়ালী উল্লাহ” এবং “হাইয়া আলাল ফালাহ” এর পরে “হাইয়া আল খায়ির আল আমল” পড়ে।
রোযাঃ শিয়ারা পশ্চিম আকাশের লালিমা দূর না পর্যন্ত ইফতার করে না। এ অবস্থাকে তারা গুরুবে ওয়াকিই (বাস্তবভাবে অস্ত) বলে।
যাকাতঃ শিয়াদের মতে, মোট ৯ প্রকার সম্পদের যাকাত ওয়াজিব। যথা- গম-যব, খুরমা-কিশমিশ, গরু, মহিষ, ভেড়া, বকরি, উট, স্বর্ণ ও রৌপ্য।
হজ্জঃ শিয়াদের হজ্জ নিয়ে কুফরী আক্বীদা রয়েছে। তাদের বক্তব্য হলো- “আরাফার দিনে আরাফার ময়দানে অবস্থানকারীগণ হচ্ছে জারজ সন্তান।” (সূত্র : বেহারুল আনওয়ার, আল মাজেলেসী) এছাড়া শিয়াদের হজ্জে মহিলা হাজীদের মাহরাম লাগে না।
শিয়া মতবাদ ইসলামের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ঃ
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ইসলামের আকিদা বিশ্বাসকে গোড়া থেকে স্বমূলে ধ্বংস করার জন্য এ মতবাদের সূচনা হয়। শিয়া মতবাদ সম্পর্কে অনেকের মৌলিক ধারণা না থাকার ফলে অনেকেই তাদেরকে ইসলামের অন্যান্য ভ্রান্ত ফেরকার মত একটি ফেরকা মনে করেন। কিন্তু বাস্তবে তাদের আকিদা বিশ্বাস এরচেয়ে আরো মারাত্মক। যা কুফুরি পর্যন্ত নিয়ে যায়। ইতিহাসে শিয়ারা কয়েকটি দলে বিভক্ত।
শিয়াদের দল উপদলঃ
শিয়াদের মধ্যে প্রথমত তিনটি দল রয়েছে;
এক. তাফযিলিয়া শিয়া। এরা হজরত আলী রাদি. কে শাইখাইনের (হযরত আবু বকর ও উমর রা.) উপর ফযিলত দিয়ে থাকে।
দুই. সাবইয়্যা শিয়া। এরা হজরত সালমান ফারসি, আবু জর গিফারি, মেকদাদ ও আম্মার রাদি. প্রমুখ অল্প সংখ্যক সাহাবি ব্যতীত অন্য সকল সাহাবি রাদি.কে মুনাফেক ও কাফের মনে করে।
তিন. গুলাত বা চরমপন্থী শিয়া। এদের কতক হজরত আলী রাদি. এর খোদা হওয়ার প্রবক্তা ছিল। এদের অনেকে আবার মনে করে, খোদা তার মধ্যে প্রবেশ করেছেন অর্থাৎ তিনি ছিলেন খোদার অবতার বা খোদার প্রকাশ। এভাবে নানা মতে ও বিশ্বাসে শিয়াদের ২৪টি উপদল ছিল। যাদের একটি দল ছিল ইমামিয়া। এরা শিয়াদের একটি বৃহৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। সাবইয়্যাদের ছিল ৩৯টি উপদল। ইমামিয়া দলের মধ্যে প্রধান ও প্রসিদ্ধ হল ৩টি উপদল। যথা
এক. ইছনা আশারিয়া।
দুই. ইসমাইলিয়া।
তিন. যায়দিয়া।
বর্তমানে ইছনা আশারিয়া (বার ইমামপন্থী) শিয়াদের অস্তিত্বই প্রবল। এদেরকে ইমামিয়াও বলা হয়। বর্তমানে ইছনা আশারিয়া এবং ইমামিয়া নাম দুটো প্রায়সমার্থবোধকে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক কালে সাধারণভাবে শিয়া বলতে এই ইছনা আশারিয়া বা ইমামিয়া শিয়াদেরকে বোঝানো হয়ে থাকে। শিয়াদের মধ্যে সবচেয়ে এদের সংখ্যাই অধিক। উপমহাদেশসহ মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র তাদের অনুসারি রয়েছে। বর্তমান ইরানে তারাই ক্ষমতাসীন। ইরাকেও প্রচুর সংখ্যক এরূপ শিয়া রয়েছে। ইমামপন্থি এসব শিয়াদের সাথে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বহু মৌলিক বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান হল তিনটি।
এক. ইমামত সংক্রান্ত আকিদা। এর অর্থ হল, আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের হেদায়েতের জন্য যেমন নবী রাসুলদের মনোনীত করেছেন, ঠিক তেমনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পর থেকে কেয়ামতের আগ পর্যন্ত মানুষের হেদায়েতের জন্য বারজন ইমাম মনোনীত করেছেন। দ্বাদশতম ইমামের উপর পৃথিবী শেষ হয়ে কেয়ামত হবে।
তাদের দাবি মতে, যে ইমামকে না মানবে সে কাফের, ইমামগণ দুনিয়া ও আখেরাতের মালিক এবং তারা যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন ও ক্ষমা করেন, ইমামদের আনুগত্য করা ফরজ, প্রত্যেক জুমার রাতে ইমামদের মেরাজ হয়, তারা আরশ পর্যন্ত পৌঁছেন, ইমাম ব্যতীত দুনিয়া কায়েম থাকতে পারে না, ইমামগণ যা ইচ্ছা হালাল ও হারাম করার ক্ষমতা রাখেন, ইমামগণ পয়গাম্বরদের মতই নিষ্পাপ ইত্যাদি।
দুই. সাহাবা বিদ্বেষ সংক্রান্ত আকিদা। অর্থাৎ হজরত আলী রাদি, -এর ইমামত না মানার কারণে খোলাফায়েরাশেদার বাকি তিনজন তথা হজরত আবু বকর, উমার ও উসমান রাদি, ও অন্যান্য সাহাবায়েকেরাম রাদি. নিশ্চিতই কাফের ও মুরতাদ। (নাউযুবিল্লাহ)
তিন. কুরআন বিকৃতি বিষয়ক আকিদা। অর্থাৎ তারা বিশ্বাস রাখে, মুসলমানদের নিকট সংরক্ষিত কুরআন বিকৃত। তাদের কুরআন বিকৃতির এ আকিদা ইমামত আকিদারই অবশ্যম্ভাবী ফলাফল। কেননা শিয়াদের ধারণায়কুরআন সংকলনকারী হজরত আবু বকর, উসমান ও তাদের সহযোগী সাহাবাগণ ছিলেন আলী বিদ্বেষী। ফলে কুরআন থেকে হজরত, আলী ও আহলে বাইতের ফযিলতমূলক বর্ণনাসমূহ পরিকল্পিতভাবে তারা বাদ দিয়েদিয়েছেন। তাই মুসলিমদের নিকট সংরক্ষিত কুরআন বিকৃত। তাদের আরো দাবি হল, এ কুরআনের প্রায়দুই তৃতীয়াংশ গায়েব করে দেয়া হয়েছে, আসল কুরআন ইমামে গায়েবের নিকট রয়েছে. কুরআন বিকৃতি সম্বন্ধে আলী (রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহু)ও বলে গেছেন, কুরআনে একটি সুরা ছিল যা বর্তমানে নেই ইত্যাদি।
নব ফিতনার বিরুদ্ধে আ’লা হযরতের কলমঃ
আ’লা হযরত রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু তাঁর সুচিন্তিত মতামত জ্ঞানগর্ব চিন্তাধারা ও ক্ষুরধার লিখনির মাধ্যমে ভারত উপমহাদেশে ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞানের অঙ্গনে এক নব জাগরণ সৃষ্টি করেন। যার জীবন্ত প্রমাণ বহন করছে তাঁর রচিত সহ¯্রাধিক গ্রন্থ-পুস্তক।
তিনি শুধুমাত্র গবেষণা, ফতোয়া ও পুস্তকাদি রচনায় আত্মনিয়োগ করেননি। বরং সমকালীন বিশ্বের ঘটনা প্রবাহ ও চলমান রাজনৈতিক, সমাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন।
তাই তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে আমেরিকার জ্যোতিষীর বিশ্বব্যাপি আতংক ছড়ানো সেই ‘কিয়ামতের পূর্বাভাস’ এর যৌক্তিক খণ্ডন ও বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল প্রমাণিত করতে। তাই তিনি তার সময়ে সৃষ্ট বিভিন্ন ফিতনা-ফেরকা, মতবাদ ও বিভ্রান্তির যথাযথ জবাব প্রদানে সদা তৎপর ছিলেন।
১৯০১ সালে যখন মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (১৮৩৯-১৯০৮ ইং) নিজেকে নবী দাবী করলো, তখন ইমাম আহমদ রেজা তার এই ভ্রান্ত মতবাদ খণ্ডনে স্বতন্ত্র পাঁচটি পুস্তক রচনা করেন-
جزا الله عدوه بأباءه ختم النبوة – ١ –
السوء والعقاب على المسيح الكذاب – ٢ –
قهر الديان على مرتد بقاديان – ٣ –
المبين ختم النبيين – ٤ –
الجراز الديانى على المرتد القاديانى – ٥ –
উল্লেখ্য যে, الجراز الديانى ইমাম আহমদ রেজার সর্বশেষ কিতাব, যা তিনি ইন্তেকালের কয়েকদিন পূর্বে লিখেছেন। তদ্রুপ তিনি স্যার সৈয়দ আহমদ (১৮১৮-১৮৯৮ ইং)’র (ঘঅঞটজওঝগ) বা দাহরিয়া মতবাদের বিরুদ্ধে কলম ধরেন। الألة القاهرة فى الرد على الكفرة النياشرة- সহ আরো অনেক পুস্তকাবলী রচনা করেন।
এমনিভাবে শিয়া সম্প্রদায়ের একটি গ্রুপ যখন আল্লাহ্ তা’আলা, তাঁর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, পবিত্র ক্বোরআন ও সাহাবায়ে কেরামকে (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম) নিয়ে ঈমান বিধ্বংসী নানা মন্তব্য করতে লাগল তখন তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়ে ইমাম আহমদ রেজা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি লিখেন-
الأدلة الطاعنة فى أذان الملاعنة – ١ –
مطلع القمرين فى أبانة سبقة العمرين – ٢ –
غاية التحقيق فى أمامة على والصديق – ٣ –
اعالى الأنادة فى تعزية الهند و بيان الشهادة – ٤ –
رد الرفضة – ٥ –
সহ প্রায় ২০টির অধিক কিতাব।
অনুরূপভাবে যখন তাসাউফের নামে কিছু সংখ্যক লোক শরিয়ত নির্দেশিত কর্মকাণ্ডকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে এবং বলছে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি কিছু আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। ইসলামের মূল হল একমাত্র তরিকত। তাদের বিভ্রান্তি স্বরূপ উম্মোচন করে তিনি লিখেছেন-
مقال عرفاء باعزاز شرع وعلماء – ١ –
نقاء السلاقة فى أحكام البيعة والخلافة – ٢ –
كشف حقائق واسرار دقائق – ٣ –
الياقوتة الواسطة فى قلب عقد الرابطة – ٤ –
সহ আরো অনেক পুস্তক। যা তাসাউফ’র প্রকৃত পরিচিতি তুলে ধরার পাশাপাশি তাসাউফের নামে ভন্ডামীর খোলস খুলে দেয়।
এ ছাড়াও যে সমস্ত খ্রিস্টান মিশনারী সংস্কৃতির নামে বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা প্রচার করে মুসলিম যুব সমাজকে ঈমান ও পবিত্র আদর্শ থেকে বিচ্যুৎ করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছিল তাদের বিরুদ্ধে কলম সম্রাট ইমাম আহমদ রেজা কলমের জেহাদ করেছেন-
ندم النصرانى والنفسيم الأيمانى – ١ –
سيف المصطفى على أديان الافتراء– ٢ –
কিতাবদ্বয় তার বাস্তব সাক্ষ্য বা প্রমাণ। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি তাঁর কলমের জেহাদ অব্যাহত রেখেছেন। ঐ সমস্ত সংস্থা, সংগঠন ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে যারা ইসলামের মুখোশ পরিধান করে ইংরেজদের কৃপা ও অনুগ্রহ পাবার আশায় ইসলামকে বিকৃত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত তাদের সেই ঘৃণ্য অপকর্মের স্বরূপ উম্মোচন করে দিয়ে তিনি বিশ্ব মুসলিম জাতিকে তাদের সম্পর্কে সতর্ক করে দিতে সদা সচেষ্ট ছিলেন।
এককথায় ইমাম আহমদ রেজা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র জীবদ্দশায় যখনই কোন ফিতনার উদ্ভব হয়েছে সাথে সাথে তিনি তার বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন এবং সেই ফিতনার মূল চেহরার সাথে বিশ্ব মুসলিমকে পরিচয় করে দিয়েছেন। যার ফলে অনেক ভ্রান্ত আক্বিদা পোষণকারী ও নবনব ফিতনার জন্মদাতারা ইমাম আহমদ রেজা রাহমাতুল্লাহি আলায়হির কলমের ভয়ে নিজেদের বদ-আক্বিদা প্রকাশ করার সাহস করেনি। তাঁর এ মহান সংস্কার মূলক কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ ভারত উপমহাদেশ সহ আরব ও আফ্রিকার বরণ্য আলেমগণ তাঁকে ‘‘মুজাদ্দিদ’’র উপাধিতে ভূষিত করেন।
আ’লা হযরতের উপর আরোপিত শিয়া অপবাদের দাঁতভাঙ্গা জবাবঃ
পেঁচক কুষ্মণ্ডক ওহাবী গংরা যখন আ’লা হযরতের শান মানের এই জাজ্বল্যমানতা দেখে যখন সহ্য করতে পারছেনা তখন তাঁর নামে মিথ্যা বানোয়াট, অপবাদ রটনা করছে। তাদের অনেক অপবাদের মধ্যে একটি হল আ’লা হযরত ছিলেন শিয়াপন্থী (!)
আ’লা হযরত শিয়া পন্থী ছিলেন এমন চিন্তা কেমন গোলাবী ওহাবী গংরাই বলতে পারে। কারণ মিথ্যা বানোয়াট কথা বলা তাদের মজ্জাগত বদ অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। আলা হযরত শিয়া এটা তো দূরের কথা উপরন্তু তিঁনি তো শিয়াদেরকে মুসলমান ঈমানদারই মনে করতেন না। তাদের সাথে বিবাহ, তাদের জবেহকৃত পশু ভক্ষণ, তাদের সাথে মেলামেশা ও তাদের ভ্রান্ত আকীদার খন্ডনে প্রায় তিনি প্রায় ২০ টি কিতাব রচনা করেছেন। শুধু লেখনী নয় তাদের সাথে মুনাজারা ও তাদের চেহারা দেখাকে পর্যন্ত বৈধ মনে করতেন না তিনি।
বাতিল ফিরকাসমূহের মধ্যে একটি ফিরকা হচ্ছে শিয়া। যারা বর্তমানে আমাদের দেশে বিদ্যমান। পূর্ববর্তী শিয়ারা দ্বীনের অবেক অত্যাবশ্যকীয় বিষয়কে সুস্পষ্টভাবে অস্বীকার করতো। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আলেমগণ তাদের ভ্রান্ত আকীদার খন্ডনে মহাপ্রলয় এনে দিলো তাদের উপর। কালের আবর্তনে তারা তাদের পূর্ববর্তী ভ্রান্ত আকীদার দিকে পুনরায় ফিরে গিয়েছে। তাদের ধর্মীয় গবেষক, মূর্খরা ও নর বারী সকলেই কুরআন শরীফের অপূর্নাঙ্গতার আকীদা পোষণ করে। তারা বলে যে সাহাবীরা কুরআন থেকে বহু সুরা ও আয়াত ফেলে দিয়েছে। তারা আমিরুল মু’মেনীন সৈয়্যদুনা আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ও সকল আইয়িম্মায়ে আতহার (নবী বংশের ইমাম গণ) কে পূর্ববর্তী সকল নবীগনের উপর শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদায় আসীন বলে বিশ্বাস করে (সালাওয়াতুল্লাহে তা’য়ালা ওয়া সালামুহু আলাইহিম)। এ দুটি কুফরি আকীদা থেকে বর্তমানে তাদের কেউ মুক্ত নয়। আল্লাহই সাহায্যকারী।
(আল মুসতানাদুল মু’তামাদ বিনায়ে নাজাতিল আবাদ কৃত আ’লা হযরত, আল মাজমাউল ইসলামি, মুবারকপুর, আজমগড় ভারত, পৃ. ২২৪)
উপর্যুক্ত বক্তব্য থেকে বুঝা যায় আ’লা হযরতের আকীদা শিয়াদের ব্যাপারে কেমন ছিল। বর্তমানকালে সকল শিয়াদেরকে তিনি কাফের মনে করতেন। সাথে সাথে তিনি তাদের কুফরি আকীদাগুলোকেও সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেন। এরপরেও তাকে শিয়া বলে আখ্যায়িত করা মূর্খতা ছাড়া কিছু নয়।
শিয়াদের খন্ডনে আ’লা হযরতের ২০ টি কিতাব রচনাঃ
শিয়া মতবাদের খন্ডনে-
1) رد الرفضة রাদ্দুল রাফাদ্বাহ, (১৩২০ হি.) – শিয়া মতবাদ খন্ডনে।
2) الادلة الطاعة فى اذان الملاعنة আল আদ্বিল্লাতুত ত্বায়াহ ফি আযানিল মুলায়িনাহ (১৩০৬ হি.) – শিয়াদের আযানের শব্দ পরিবর্তনের দাঁতভাঙ্গা জবাব।
3) اعالى الافادة فى تعزية الهند و بيان الشهادة আ-য়ালিল ইফাদাহ ফি তাজিয়াতিল হিন্দ ওয়া বয়ানিশ শাহাদাহ (১৩২১ হি.) – তাজিয়া ও শাহাদাতনামা পাঠের হুকুম
4) جزاء للّله عدوة بابائه ختم النبوة জাযাউল্লাহি আদুওয়াহ বি-ইবায়িহি খতমিন নবুওয়্যাহ। (১৩১৭) – কাদিয়ানীদের রদের সাথে শিয়াদের রদ।
শিয়াদের একটি দল তাফদ্বীলিয়াহ’র খন্ডনে-
5) الجرح الوالج فى بطن الخوارج আল জারহুল ওয়ালিজ ফি বতনিল খাওয়ারিজ (১৩০৫ হি.)
6) الصمصام الحدر بعلى حمق العيار المفتري আস সামসামুল হাদর বি-আলা হুক্বমিল আইয়্যারিল মুফতারি (১৩০৪ হি.)
7) الر ائحة العنبرية عن الجمرة الحيدريّة আর রায়িহাতুল আম্বারিয়্যাহ আনিল জামরাতিল হায়দারিয়্যাহ (১৩০০ হি.)
8) لمعة الشمعة لهدى شيعة الشنعة লুমআতিল শামআ লিহুদা শিয়ায়িশ শানআ (১৩১২ হি.)
9) شرح المطالب فى مبحث ايمان ابى طالب শরহুল মাতালিব ফি মাবহাসি ঈমানে আবি তালিব (১৩১২ হি.)
তিন খলিফার শানে-
10) غاية التحقيق فى امامة العلى والصديق গায়াতুত তাহক্বিক ফি ইমামাতিল আলি ওয়াস সিদ্দিক (১২৯৭ হি.) – প্রথম খলিফা কে? দালিলিক আলোচনা
11) اللام البهى فى تشبيه الصديق بالنبى আল লামুল বাহি ফি তাশবিহিস সিদ্দিক বিননাবি (১৩৯৭ হি.)
– হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)’র শান।
12) الزلال الانق من بحر سبقة الاتقى আযযুলাল আনকা মিন বাহরি সুবকাতিল আতকা (আরবি) (১৩০০ হি.)
13) مطلع القمرين ينفى ابانة سبقة العمرين মাতলাউল ক্বামারাঈন ইয়ানফি ইবানাতা সাবকাতিল ওমারাঈন (১২৯৭ হি.)
14) وجه المشو القبجلوة اسمأ الصديق والفاروق ওয়াজহুল মাশবিল ক্বাবঝালুওয়াহ আসমাউস সিদ্দিক ওয়াল ফারুক (১৩৯৭ হি.)
15) جمع القران وبم عزوه عثمان জামউল কুরআন ওয়া বিমা আজ্জুহু ওসমান (১৩২২ হি.)
হযরত আমিরে মুয়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)’র শানে-
16) البشرى العاجلة من نخف آجلة আল বুশরাল আজিলাহ মান নাহাফা আজিলাহ (১৩০০ হি.)
17) عرش الاعزاز والاكرام لاول ملوك الاسلام আরশুল ইজাজ ওয়াল ইকরাম লি আওয়্যালি মুলুকিল ইসলাম (১৩১২ হি.)
18) زب الاهواء الواهيه فى باب الامير معاوية জুব্বুল আহওয়াঈল ওয়াহিয়্যাহ ফি বাবিল আমির মুয়াবিয়া (১৩১২ হি.)
19) اعلام الصحابه الموافقين للامير معاوية و ام المؤمنين ইলামুস সাহাবাতিল মুওয়াফিকীন লিল আমির মুয়াবিয়া ওয়া উম্মিল মু’মেনীন (১৩১২ হি.)
20) الاحادث الرويه لمدح الامير معاوية আল আহাদিসুল রভিয়্যাহ লি মদহি আল আমির মুয়াবিয়া (১৩১৩ হি.)
শিয়া রাফেজীদের সাথে সম্মুখ মোনাজারায় আ’লা হযরতের জয় লাভঃ
তিঁনি যে শুধু শিয়াদের বিরূদ্ধে কিতাব লিখে তাদের ভ্রান্ত মতবাদ রদ করেছেন তা নয়, বরং তিঁনি সম্মুখ মুনাজারার মাধ্যমে শিয়াদের ভ্রান্ত মতবাদকে গুড়িয়ে দিয়েছেন। এ একটি মুনাজারার ঘটনা নিচে বিবৃত করলাম….
তাফদ্বীলিয়্যাহ ফেরকার সাথে মোনাযারা:
১৩০০ হিজরি সনে বেরেলি, বদায়ুন, সানবাল
ও রামপুরের শিয়ারা মাসআলায়ে তাফদ্বীলিয়্যাহ’র উপর আলা হযরত আহমদ রেযা বেরেলভী (রাহিমাহুল্লাহ)’র সাথে মোনাযারা বা সম্মুখ তর্কের ঘোষণা দিলো। শিয়া মোনাযের হিসেবে তৎকালীন শিয়াদের বড় আলেম মৌলভি মুহাম্মদ হাসান
সানবাহলিকে ঠিক করা হলো। এদিকে আ’লা হযরত (রাহিমাহুল্লাহ) গুরুতর অসুস্থাবস্থায় ডাক্তারের কঠোর নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মোনাযারা গ্রহণ করলেন। তিঁনি ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞার জবাবে বলেন-
مناظرہ کرتے ہوئے مجہے مرجانا منظور ہے اور مناظرہ سے انکار کر کے مجہے بپنا مقصود نہیں
“মোনাযারা করে যদি মরতে হয়, মরতে রাজি। মোনাযারা অস্বীকার করে বেঁচে থাকা? তা কখনো হতে পারে না।”
শিয়ারা আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)’র কাছে লিখলো, প্রশ্ন কি প্রথমে আমরা করবো, না কি আপনি করবেন? তার জবাবে আ’লা হযরত (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) শিয়া মোনাযের মৌলভি মুহাম্মদ হাসান সানবাহলির কাছে তিনটি প্রশ্ন লিখে পাঠিয়ে দিলেন।
লোকটি শিয়া মতবাদী হলেও বাস্তব সত্যকে অস্বীকার করতে পারলেন না। তিনি বললেন, কোনো আলেম তাফদ্বীলিয়্যাহ হযরত আলি (রাদ্বিয়ালাহু আনহু) কে অপর তিন খলিফার উপর শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া] আক্বিদা রেখে তাঁর জবাব দেয়া সম্ভব নয়। পরিশেষে তিনি গাড়ী নিয়ে আলা হযরতের কাছে এসে আত্মসমর্পণ করলেন। পরবর্তীতে সে মাওলানা সাহেবের লিখিত কিতাব “শরহে আক্বায়েদে নসফি”র ব্যাখ্যাগ্রন্থ “নাজমুল ফারায়েদে” উপর্যুক্ত আক্বিদার ক্ষেত্রে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের পক্ষে অভিমত পেশ করেন।
[হায়াতে আলা হযরত: আল্লামা আবদুল হাকিম শরফ কাদেরী, পৃ. ৭৭]
আলা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি যে কট্টর শিয়া বিরোধী ছিলেন তা জনৈক দেওবন্দী মৌলভীর ভাষ্যতেই স্পষ্ট হয়-
দেওবন্দী চিন্তাধারার সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আঞ্জুমানে সিপাহে সাহাবা’ পাকিস্তান এর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা নওয়াব ঝঙ্গভী বলেন- হিন্দুস্থানে যে সব আলেম শিয়াদের প্রতি কুফরির ফতোয়া আরোপ করেছেন তন্মধ্যে ব্রেলভী চিন্তাধারার আ’লা হযরত মাওলানা আহমদ রেযা খান ব্রেলভী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
[মাওলানা হক নওয়াব জঙ্গভী কী জাদ্দও জাহেদ আওর উনকা নসবুল আইন, ১৯৯০ ইং, পৃ. ২১]
মাসলাকে আ’লা হজরত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের এক যুগোপযোগী রূপরেখাঃ
মাসলাক মানে পথ বা পদ্ধতি। আর মাসলাকের আরেকটি অর্থ আন্দোলন। আবার মতভেদ সূত্রে, উলামাদের মাঝে যেই ইত্তিহাদ তৈরি হয়, তাকেও মাসলাক বলে।
প্রকৃতপক্ষে মাসলাকের মানে এই যে, উলামায়ে আহলে সুন্নাতের দ্বারা ইসলামের নামে প্রচলিত যেই ভ্রান্ত মতবাদ খণ্ডিত হয় অথবা যুগের মুজাদ্দিদ কর্তৃক যাকিছু মূলোৎপাটিত হয়, তা গ্রহণ করাটাই মাসলাক। আবার, এর বিপক্ষে অবস্থান করা আলেমদের প্রদর্শিত বিশ্বাসের পথকেও মাসলাক বলা হয়।
আহলে হকের ক্ষেত্রে, মাসলাক বলতে ইসলামের ভিন্ন কিছু বোঝায় না। এবং হকপন্থীদের কোনো মাসলাকই ইসলামের মূলধারা আহলে সুন্নাত থেকে পৃথক কিছু নয়। বরং যেসব মাসলাক বিশুদ্ধ আকিদা ও আ’মলের উপর প্রতিষ্ঠিত, তা সকলের জন্য গ্রহণ করা ওয়াজিব। আর এর বর্জন কোনোকোনো সময় কুফরের দিকে ঝুঁকায়।
ইমাম আহমাদ রেযা খান রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও মুজতাহিদ। আর তাঁর সংস্কার ছিল বাতিলের বদ আকিদার মূলোৎপাটন আর ইলমের বিপ্লব।
আজ থেকে প্রায় দেড় শতাধিক বছর আগে, আরবদেশীয় সৌদগোত্রের মদদে, করোনাভাইরাসের চাইতে ভয়ংকররূপে, ইবনে আবদুল ওহাবের মতবাদ যখন সৈয়দ আহমাদ বেরলোভী ও ইসমাইল দেহলোভী হয়ে দেওবন্দি উলামাদের মাধ্যমে ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেই কঠিন মুহূর্তে ইমাম আহমাদ রেযা খান রহমাতুল্লাহি আলাইহির কলম থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল।
ইমাম আ’লা হজরত-এঁর মাসলাক বলতে তাঁর সংস্কার, ইজতিহাদ ও ইলমি তাহকিক গ্রহণ করাকে বোঝায়। যা আকিদায়ে আহলে সুন্নাতের এক অনবদ্যরূপ। আর বাতিলের বদ আকিদা থেকে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট ও বিভ্রাটমুক্ত করার ইত্তিহাদকেই মাসলাকে আ’লা হজরত বলা হয়।
দেওবন্দী, কাদিয়ানী, সালাফী, শিয়া ও খারেজী সহ সমস্ত বদপন্থীদের কুফরি মতবাদ ও মার্কসবাদ, লেনিনবাদ সহ বস্তুবাদ ও নাস্তিক্যবাদ তথা সর্বপ্রকার বাতিল ফিরকা থেকে মুক্ত থাকার অদম্য আন্দোলন, সংগ্রাম ও ইত্তিহাদকেই মাসলাকে আ’লা হজরত নামে অভিহিত করা হয়।
মাসলাক নিয়ে অনেকের চুলকানি রয়েছে। পথভ্রষ্ট ফিরকা সালাফী-ওহাবীরা মাজহাবকে দীনের বিকৃতি বা বাইরের অংশ মনে করে। ঠিক সেভাবেই কেউকেউ মাসলাকের উল্টো ব্যাখ্যা করে এবং মাসলাককে ইসলামের মূলধারা আহলে সুন্নাতের বহির্ভূত বা বাড়াবাড়ি মনে করে।
মাসলাকে আ’লা হজরত কোনোদিক দিয়েই আহলে সুন্নাতের বিপরীত নয় বরং মাসলাকে আ’লা হজরত হচ্ছে আহলে সুন্নাতের এক যুগোপযোগী রূপরেখা।
শিয়া আকায়েদ ও আকায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের তুলনামূলক আলোচনাঃ
শিয়া আক্বাঈদ – ০১
শিয়াদের কালেমা-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ আলীউন ওয়াসিউল্লাহ ওয়া ওয়াসিও রাসুলিল্লাহ ওয়া খলীফাতুহু বেলাফাসলিন। অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। আলী আল্লাহর বন্ধু। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়াসিও তাঁর পরেই খলীফা। অন্য বর্ণনায়, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ ওয়া আলীউন খলীফাতুল্লাহ। (শিয়া-সুন্নী ইখতেলাফ, পৃষ্ঠা ১৬, মুসলিম সংস্কৃতির ইতিহাস, পৃষ্ঠা ৩২)।
আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা ‘আত
ঈমানের মূলমন্ত্র কালেমা-এ তাইয়্যেবা “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ।” অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসুল।
শিয়া আক্বাঈদ-০২
আকীদা-এ-ইমামত অর্থাৎ মুসলমানদের রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় যাবতীয় বিষয়ের একমাত্র কর্ণধার যিনি-তিনি ইমাম। এ ইমাম নবী রাসুলের ন্যায় আল্লাহর থেকে প্রেরিত এবং নিষ্পাপ। ইমামের আনুগত্য ফরয যেমন নবী রাসুলের আনুগত্য উম্মতের উপর ফরয। ইমামদের মর্যাদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমান এবং অন্যান্য নবীদের চেয়ে অনেক উর্ধ্বে। শুধু উম্মতের উপর নয় বরং সমগ্র পৃথিবীর উপর যে কেউ হকুমত (রাজত্ব) করবে, সে হক ধ্বংসকারী, যালিম ও সীমালংঘনকারী । ইমাম নবীর মতো শলীয়তের বিধান প্রবর্তন করেন এবং কোরআনের যে কোন বিধান যখন ইচ্ছা করেন মানসুখ বা রহিত করতে পারেন। (ইরানী ইনকিলাব, পৃষ্ঠা ২৮. ইখতেলাফ পৃষ্ঠা ৯, মুসলিম সংস্কৃতির ইতিহাস, পৃষ্ঠা ২৩৩)।
আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত
ইমাম খোলাফায়ে রাশেদীন-এর নির্বাচন পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবেন। তিনি তাঁর কার্যকলাপের জন্য জনগণের নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য। ইমামের জন্য নিষ্পাপ হওয়া জরুরী নয়। শুধু নবী-রাসুলগণই মাসুম বা নিস্পাপ । কোন ইমাম বা ওলী কোন নবীর স্তরে পৌছতেই পারে না। ইমামের মর্যাদা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমান মনে করা কিংবা অন্যান্য নবীদের চেয়ে উর্ধ্বে মনে করা নবী রাসূলগণের মহান মর্যাদার চরম অবমাননা;বিধায় কুফরী। শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে নির্বাচিত যে কোন মুসলমান, এমনকি নিগ্রো হাবশী দাসও খলীফা নির্বাচিত হতে পারেন। এমতাবস্থায়ও তার পূর্ণ অনুগত্য করা মুসলমানদের উপর একান্ত কৰ্তব্য । ইমাম কোরআন সুন্নাহর কোন বিধান মানসুখ বা রহিত করার নূ্ন্যতম ক্ষমতা রাখেন না। কোরআনের কোন বিধান রহিত করার অধিকার একমাত্র মহান আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের।
শিয়া আক্বাঈদ-০৩
শিয়াদের একটি বিরাট অংশ, বিশেষ করে ইসমাঈলিয়ারা বিশ্বাস করে যে, ইমাম ইসমাঈল আখেরী নবী। (মুসলিম সংস্কৃতির ইতিহাস, পৃষ্ঠা ২৩৩)
আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাতামুন্ নাবীয়ীন অর্থাৎ শেষ নবী। তার পর কোন নবীর আবির্ভাবের সম্ভাবনায় বিশ্বাস করা পবিত্র কোরআনের সরাসরি অস্বীকার । এটা নিঃসন্দেহে কুফরী।
শিয়া আক্বাঈদ-০৪
হযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর সকল সাহাবা কেরাম নিষ্পাপ ইমাম হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর হাতে বাইয়াত না করার কারণে কাফির এবং মুরতাদ হয়ে গেছেন। (শিয়াসুন্নী ইখতেলাফ, পৃষ্ঠা ১২)
অপর বর্ণনায় শুধুমাত্র তিনজন সাহাবী ইসলামের উপর অটল ছিলেন। ঐ তিনজন হলেন, হযরত মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ, হযরত আবুযার গিফারী ও হযরত সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহুম। (ইরানী ইনকিলাব,পৃষ্ঠা ২২০)।
আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত
হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর সকল সাহাবা ঈমান-ইসলামের উপর অটল অবিচল ছিলেন এবং প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বীন রক্ষায় জান-মাল দিয়ে জিহাদ করেছেন। হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুকে খলীফা নির্বাচিত করে সময়োচিত সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। শিয়াদের এ আক্বীদা হুযুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতের বিরুদ্ধে এক ধরণের প্রকাশ্য বিদ্রোহ। কোন মুসলমান বিশ্বাস করতে পারে না যে, তেইশ বছরে সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তৈরী সাহাবা কেরামের এ বিরাট জামাআত তার ওফাতের সাথে সাথে সকলেই পথভ্রষ্ট হয়ে গেছেন।
শিয়া আক্কাঈদ-০৫
তাহরীফে কোরআন। অর্থাৎ শিয়াদের মতে কোরআন শরীফ যেভাবে অবতীর্ণ হয়েছে, সেভাবে সংকলিত হয়নি; বরং, এতে অনেক বিকৃতি হয়েছে। কোরআন শরীফের সর্বমোট আয়াতের সংখ্যা ১৭,০০০ (সতর হাজার)। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর খেলাফত ও আহলে বায়তে রাসুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কিত আয়াত গুলো কোরআন শরীফ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। বর্তমান আয়াতের সর্বমোট সংখ্যা ৬,৬৬৬ (ছয় হাজার ছয়শত ছিষট্টি)। শিয়াদের হতে ১০,৩৩৪ (দশ হাজার তিনশত চৌত্ৰিশ) আয়াত বাদ দেয়া হয়েছে। যে বিশ্বাস করে যে, কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ হয়েছে সেভাবে সংকলিত হয়েছে সে বড় মিথ্যাবাদী। কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ হয়েছে, সেভাবে একমাত্র হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ও তৎপরবর্তী ইমামগণ সংকলন করেছেন। ঐ কোরআন নিয়ে তাদের ইমামে গায়েব (অদৃশ্য ইমাম) “সুররামানরা” পাহাড়ে অদৃশ্য হয়ে গেছেন। যখন তিনি আত্নপ্রকাশ করবেন, তখন “মাসহাফে আলী” বা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা অানহু কর্তৃক সংকলিত কোরআন নিয়ে আসবেন। (ইরানী ইন্কিলাব পৃষ্ঠা ২৫১, ইসলাম আওর খামেনী মাযহাব পৃষ্ঠা ৫৪ ও ৫৫)।
আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত
পবিত্র কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ হয়েছে, সেভাবে সংকলিত ও সংরক্ষিত। এ নিশ্চয়তা স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা দিয়েছেন।কোরআন শরীফের সর্বমোট আয়াত সংখ্যা ৬,৬৬৬ (ছয় হাজার ছয়শত ছিষট্টি)। আহলে বায়তে রাসুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা নবী বংশের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কিত আয়াত বৰ্তমানেও পবিত্র কোরআনে বিদ্যমান। হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহ ও সর্বশেষ হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতায় পবিত্র কোরআন যথাযথভাবে সংকলিত হয়েছে। ঐ কোরআন করিম অদ্যাবধি মুসলমানদের মধ্যে অবিকৃত রূপে বিদ্যমান। এতদ বিষয়ে বিশ্বাস ও ধ্যান-ধারণা অমূলক, মনগড়া, ভ্রান্ত ও বিভ্রান্তিকর। তার প্রমাণ প্রায় দেড়শত বছর পূর্বে শিয়াদের কোন কোন আলিম “কোরআন বিকৃতির” এ জঘন্য আকীদাকে ঘৃণ্য বলে মন্তব্য করেছেন। তাদের কিতাব “উসুলে কাফী” ও তাদের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও মুজতাহিদ নূরী তাবুরুসীর “ফাসলুল খেতাব ফী এসবাতে তাহরীফে কিতাবে রব্বীল আরবাব” নামক কিতাবে কোরআন শরীফ বিকৃত হবার বিষয়ে ভিত্তিহীন বর্ণনায় পরিপূর্ণ। (ইসলাম অাওর খামেনী মাযহাব পৃষ্ঠা ৫৪ ও ৫৫, ইরানী ইনকিলাব পৃষ্ঠা ২৬১ ও ২৬২)।
শিয়া আকাঈদ-০৬
শিয়াদের মতে হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু অ’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘গাদীরে খোম’ নামক স্থানে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে তাঁর পরবর্তী স্থলাভিষিক্ত ও খলীফা ঘোষণা করেছেন। সুতরাং খেলাফতের একমাত্র অধিকারী হযরত আলী রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহু। প্রথম তিনজন খলীফা যথাক্রমে হযরত আবু বকর সিদ্দিক, হযরত ওমর ফারুক-এ-আযম ও হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম খেলাফতের অবৈধ দাবীদার ও দখলদার। তাঁরা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে ষড়যন্ত্র মূলক খেলাফতের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। বিধায় তারা-যালিম, মুনাফিক ও জাহান্নামী। এতে শিয়াগণ হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর তুলনায় প্রথম দু’জন খলীফাকেই জঘন্য অপরাধী মনে করে। তারা বলে, হযরত আবু বকর সিদ্দীক, হযরত ওমর ফারুক-এ-আযম রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহুমা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহু ও আহলে বায়তে রাসূল (সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর অন্যায় ও যুলুম করেছে। হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহু মনগড়া হাদিসের মাধ্যমে হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহাকে তাঁর পিতার উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। (ইসলাম আওর খামেনী মাযহাব পৃষ্ঠা ৪৮)।
আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত
হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনের শেষদিকে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে মসজিদে নববী শরীফে তাঁর স্থলে ইমামতি প্রদানের মাধ্যমে তাঁর পরে হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর খেলাফতের দিকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং হযরত আলী রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহুও হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহুর খেলাফতের দলীল পেশ করেছেন। (তারীফুল খোলাফা)। ইমাম দারে কুতনী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হযরত আলী রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহুর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন আমরা হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট প্রবেশ করে আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমাদের জন্য খলীফা মনোনয়ন করে দিন। তিনি বললেন -“না” আল্লাহ তা’আলা যদি তোমাদের কল্যাণ কামনা করেন। তাহলে তোমাদের মধ্য থেকে সর্বোত্তম ব্যক্তিকে তোমাদের উপর খলীফা নিযুক্ত করবেন। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, আল্লাহ তা’আলা আমাদের মঙ্গল চেয়েছেন- অতঃপর হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে আমাদের উপর খলীফা নিযুক্ত করেছেন। সুন্নীদের মতে শ্রেষ্ঠত্ব, যোগ্যতা ও সার্বিক বিবেচনায় খোলাফায়ে রাশেদীন যথাক্রমে হযরত আবু বকর সিদ্দিক, হযরত ওমর ফারুক-এ-আযম, হযরত ওসমান ও হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম চারজনই বৈধ ও নির্বাচিত খলীফা। নবীদের পরে সর্বোত্তম ব্যক্তি এ চার জন। (শরহে আকাঈদ-এ-নাসাফী, মুসলিম সংস্কৃতির ইতিহাস, পৃষ্ঠা ২৩৩, ইসলাম আওর খামেনী মাযহাব, পৃষ্ঠা ২৫০)।
শিয়া আক্বাঈদ-০৭
শিয়াদের হাদিস বা সুন্নাহর পৃথক কিতাব রয়েছে; তারা সেহাহ সিত্তার হাদিস গ্রন্থগুলো মানে না। তাদের নিকট বিশুদ্ধ কিতাব, উসূলে কাফী, আল জামেউল কাফী, নাহজুল বালাগা ইত্যাদি।
আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত
সুন্নী মুসলমানদের নিকট পবিত্র কোরআনের পর বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থ বোখারী শরীফ। অতঃপর বাকী পাঁচটি কিতাব। যেগুলোকে “সেহাহ সিত্তা” বা হাদিস শাস্ত্রের ছয়টি বিশুদ্ধ কিতাব হিসেবে স্বীকৃত। এছাড়াও আরো অনেক বিশুদ্ধ হাদিসের কিতাব রয়েছে। শিয়াদের হাদিসগুলো মনগড়া ও জালকৃত।
শিয়া আক্বাঈদ-০৮
শিয়াদের কোরআনে “সূরাতুল বেলায়াত” নামে একটি সূরা রয়েছে। তাদের মতে এটা কোরআন শরীফ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। শিয়াদের প্রখ্যাত
মুজতাহিদ নুরী তাবরুসী “ফাসলুল খেতাব” নামক কিতাবে ঐ সুরা উল্লেখ করেছেন। যার প্রথম আয়াত নিম্নরূপ-
يا ايها الذين امنوا امنوا بالنبي وبالولي الذين بعثنا هما بهداياتكم الي صراط مستقيما
(ইরানী ইনকিলাব, পৃষ্ঠা ২৭৮ শিয়া সুন্নী ইখতেলাফ, পৃষ্ঠা ২৬)।
আক্বাায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত
সুন্নীদের মতে পবিত্র কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ হয়েছে সেভাবে অবিকৃত, সংরক্ষিত ও সংকলিত। “সুরাতুল বেলায়াত” শিয়াদের মনগড়া ও বানানো। যদিওবা এটা তাদের নির্ভরযোগ্য কিতাবে সংরক্ষিত আছে। শিয়াগণ কোরআন বিকৃতিতে বিশ্বাসী।
শিয়া আক্বাঈদ-০৯
শিয়াদের মতে “মোতা” বা সাময়িক বিয়ে বৈধ, বরং সাওয়াবের কাজ। অর্থাৎ একজন মুসলমান পুরুষ ও নারী অর্থের বিনিমযে় কিছুক্ষণ যৌনসঙ্গম করতে পারবে। (শিয়া আলেমদের সর্ব সম্মতি ক্রমে প্রকাশিত ইশতেহার, ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮৫,পাকিস্তান। ইসলাম আওর খামেনী মাযহাব, পৃষ্ঠা ৪৩৮, ইরানী ইনকিলাব, পৃষ্ঠা ৮৯)।
আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত
সুন্নীদের মতে ‘মোতা’ বা সাময়িক বিয়ে সম্পূর্ণভাবে হারাম। এ ধরণের সাময়িক বিয়ে আর যিনার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এ ধরণের সাময়িক বিয়ের বৈধতাদান ইসলাম ও মুসলমানদের চরিত্র ধ্বংসের কুট-কৌশল মাত্র । মোতা বা সাময়িক বিয়ে হারাম হওয়ার উপর ইজমা বা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
শিয়া আক্বাঈদ-১০
তাকীয়া অর্থাৎ আসল বিষয়কে গোপন করে, মুখে ভিন্ন ধরণের মত প্রকাশ করা শিয়াদের অন্যতম ধর্মীয় নীতি। অনুরূপভাবে “তাবাররা” অর্থাৎ শিয়া না এমন সব মুসলমানদের মনে প্রাণে ঘৃণা করা। যদিও সাহাবী হোক না কেন। এটাও তাদের উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় বিধান। (শিয়া ওলামাদের সম্মিলিত ইশতেহার, ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮৫, পাকিস্তান। ইসলাম আওর খামেনী মাযহাব, পৃষ্ঠা ৪৩৭ ও ৪৩৮)।
আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত
“তাকীয়া” চরম মোনাফেকী ও “তাবাররা” নিঃসন্দেহে হারাম। মুসলমানের মুহাব্বত ও শক্রতা হতে হবে আল্লাহর ওয়ান্তে ও ইসলামের স্বার্থে। তখনই মুসলমানের ঈমান কামিল ও পরিপূর্ণ হবে। শিয়াদের “তাবাররা মুসলমানদের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ ও হানাহানি সৃষ্টির এক নিরব হাতিয়ার মাত্র। শিয়াদের এমনি আরো অনেক ভ্রান্ত আক্বীদা ও বিশ্বাস রয়েছে। যা সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনা করা দুষ্কর।
আ‘লা হযরত কিংবদন্তি মহাপুরুষঃ
আ‘লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি হিজরি ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগে অর্থাৎ ১২৮৬ হিজরি সাল হতে তাঁর তাজদিদী (সংস্কার) কার্যক্রম শুরু করেন। আর হিজরি চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথম দশকে তাঁর তাজদিদী কার্যক্রম জনসমুক্ষে প্রকাশ পেতে থাকে। তিনি ১৩৪০ হিজরির ২৫ সফর (১৯২১ খ্রি.) ইন্তেকাল করেন। তাঁর শিক্ষা, আদর্শ, দর্শন ও লেখনি তাঁর যুগে যেমন বিশ্ব মুসলিম তথা বাংলা-পাক-ভারত উপমহাদেশের মুসলমানদেরকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছিলো। তেমনি বর্তমান যুগেও দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও দিতে থাকবে নিঃসন্দেহে। আ‘লা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলায়হি যে যুগে জন্মগ্রহণ করেন ওই যুগে অনেক জগৎ বিখ্যাত আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, সুফী, দার্শনিক, লেখক-গবেষক ছিলেন ঠিকই কিন্তু তিনি যেভাবে একাই ওহাবী-দেওবন্দী-শিয়া-কাদিয়ানী ইত্যাদি বাতিল ফিরকাগুলোর ভ্রান্ত মতবাদের সফল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তা অন্য কারো পক্ষে সম্ভব হয়নি। ফলে তাঁর যুগের সত্যান্বেষী সকল আলিম বিনা ইখতিলাফে (মতভিন্নতা) আ‘লা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলায়হিকে চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ বলে স্বীকার করে নেন।
উল্লেখ্য, আ‘লা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর সংস্কার কার্যক্রমের প্রধান দিক ছিলো আকাঈদের সংশোধন। ‘বিভক্ত করো, শাসন করো’ এ নীতির ওপর ইংরেজরা এ উপমহাদেশে আরব থেকে ওহাবী মতবাদকে আমদানী করে দেওবন্দী, কাদিয়ানী, বাহায়ী, আহলে হাদীস (সালাফী) ইত্যাদি নামে নতুন নতুন দল উপদল মুসলমানদের মাঝে সৃষ্টি করলো। এ দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে উপমহাদেশে ইংরেজরা নিজেদের প্রভূত্ব বিস্তার করে। ইংরেজদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় উপমহাদেশের মুসলিম জনজবীনে আরবের ওহাবী ইজম প্রচার ও কার্যকরী করার স্বপ্নে দেওবন্দীরা যে চক্রান্ত করেছিল, এর বিরুদ্ধে আ‘লা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলায়হি হিমালয়ের মত রুখে দাঁড়ান। তিনি ‘দেওবন্দী-ওহাবী’ ফিতনা প্রতিহত করতে সফল হন। এবং ইসলামের সঠিক রূপরেখা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আতের শিক্ষা, দর্শন ও আদর্শকে বিকৃতি হওয়া থেকে রক্ষা করেন। যদি এ উপমহাদেশে আ‘লা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর জন্ম না হতো, তবে এতদাঞ্চলের মুসলমানরা ‘দেওবন্দীয়াত’কে প্রকৃত ইসলাম বলে মনে করতো। আ‘লা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-ই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি ‘দেওবন্দীয়াত’ এবং ইসলামের মাঝে ভেদ টেনে দেন। বর্তমানেও যারা আ‘লা হযরত ও তাঁর যোগ্য উত্তর সূরি আলিম-উলামাদের লিটেরেচার অধ্যয়ন করেনি আর করলেও নিজেদের অক্ষিযুগল থেকে পক্ষপাতিত্বের চশমা সরাতে পারেনি তারা দেওবন্দীদের জুব্বা-দস্তারের ভেতরে আটকা পড়ে আছে। ফলে তারা সিরাতে মুস্তাকীম, তাকভীয়াতুল ঈমান, বারাহীনে কাতিয়া, হিফযুল ঈমান ও বেহেস্তী যেওরের ঈমান বিধ্বংসী কুফরী আকীদাগুলো দেখেনা। পবিত্র ক্বোরআন ও হাদীসের মুকাবেলায় তাদের কাছে ওই সব কিতাব অতি পবিত্র ও নির্ভুল। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মান-মর্যাদা হানি হলেও ওই কিতাবের লেখক তাদের কাছে নির্দোষ। অথচ এ ক্ষেত্রে আ‘লা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর শিক্ষা হলো, নবী-রাসূল ও সাহাবায়ে কিরাম সম্পর্কে যার থেকে সামান্যতমও অশোভন আচরণ লেখায় বা কথায় প্রকাশ পাবে, তাকে দুধের থেকে মাছি নিক্ষেপ করার মতো ছুড়ে ফেলতে হবে- সে যতো বড় আলিম, পীর, হোক না কেন। এটাই হচ্ছে প্রকৃত ঈমানের দাবী। যা আমরা সাহাবায়ে কিরামের জীবনে দেখতে পায়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র ক্বোরআনে মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘‘আপনি পাবেন না আল্লাহ্ ও আখিরাতে বিশ্বাসী এমনকোন সম্প্রদায়, যারা ভালোবাসে (বন্ধুত্ব রাখে) আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচারীদেরকে- হোক না ওই বিরুদ্ধাদচারীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভাই বা তাদের জাতি-গোত্র। এরা হচ্ছে ওই সব লোক, যাদের অন্তরে আল্লাহ্ ঈমান অঙ্কিত করে দিয়েছেন এবং তাঁর নিকট থেকে রূহ দ্বারা সাহায্য করেছেন।’’ [সূরা মুজাদালাহ্: ২২] তাই আ‘লা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর প্রচারিত শিক্ষা ও দর্শনের মাঝেই ঈমানের প্রকৃত স্বাদ নিহিত রয়েছে। এটা শুধু কথার কথা নয়, বরং তাঁর যুগের প্রকৃত হাদীস বিশারদ, হাফিযুল হাদীস আল্লামা ওয়াছি আহমদ মুহাদ্দিস ‘সূরতি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’-এর মতো জগত বিখ্যাত আলিমের উক্তিতে এ কথার সত্যতা মিলে। যেমন, একদিন সাইয়িদ মুহাম্মদ কাছ্ওয়াছভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি মুহাদ্দিস সূরতিকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হুযূর! আপনিতো মাওলানা ফযলে রহমান গঞ্জেমুরাদাবাদীর মুরীদ হওয়া সত্ত্বেও আ‘লা হযরতের সাথে আপনার যে আন্তরিকতা ও বন্ধুত্ব দেখছি তাতো অন্য কারো সাথে দেখি না। আপনার মজলিসে আ‘লা হযরতের স্মরণ ও তাঁর গুণগান করা আপনার জীবনের জন্য রূহের মর্যাদা রাখে এটা কেন? এ প্রশ্নের জবাবে মুহাদ্দিস সূরতি যে উপমাহীন জবাব দিয়েছিলেন তা স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মতো। তিনি বলেছেন- সব চেয়ে বড় সম্পদ ওই ইলম নয় যা আমি মৌলভী ইসহাক (বুখারী শরীফের ভাষ্যকার) থেকে অর্জন করেছি এবং ওই বায়আত নয়, যা গঞ্জেমুরাদাবাদী থেকে পেয়েছি। বরং ওটাই অমূল্য ঈমান- যা পরকালীন মুক্তির উপায় তা একমাত্র আমি আ‘লা হযরত থেকে পেয়েছি। আর আমার হৃদয়ে পুরোপুরিভাবে মর্যাদা সহকারে পবিত্র মদীনার ধ্যান-জ্ঞান উপস্থাপনকারী হলেন আ‘লা হযরত। এ কারণে তাঁর স্মরণ আমার অন্তরের ঈমানী দীপ্তি বৃদ্ধি করে এবং তাঁর প্রতিটি কথামালা আমার নিজের জন্য সঠিক পথের দিশা বলে জানি।’’
হাদীসে জিব্রাঈলের আলোকে ‘দ্বীন’ বলতে ঈমান, ইসলাম ও ইহসানের সমষ্টিকে বুঝায়। সংক্ষেপে ‘ঈমান’ বলতে বুঝায় আকীদাকে। ‘ইসলাম’ মানে আমলকে আর ইহসান হচ্ছে তাসাওউফ বা আধ্যাত্মবাদ। দ্বীনের এ তিনটি বিষয়ের আলোকে আ‘লা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলায়হিকে আমরা তিনটি রূপে দেখতে পাই। প্রথমত তিনি মুতাকাল্লিম বা আকীদা বিশ্লেষক, দ্বিতীয়ত তিনি ফকীহ বা মুজতাহিদ এবং তৃতীয়ত তিনি সূফী। দ্বীনের এ মহান তিনটি গুণ আ‘লা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর জীবন-কর্মে পূর্ণমাত্রায় বিকশিত হয়েছে। ফলে দ্বীনের পরিপূর্ণ ব্যাখ্যাকারী হিসেবে আ‘লা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলায়হি গোটা মুসলিম মিল্লাতের আদর্শ স্থানীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন।
মোটকথা আ‘লা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলায়হি মুসলিম মিল্লাতের বড় অমূল্য সম্পদ। তিনি উপমহাদেশের মুসলমানদের অন্তরে ইশকে রাসূলের আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সিরাতে মুস্তাকিম প্রদর্শন করেন। তিনি আমাদেরকে শিখিয়েছেন শুধু ক্বোরআনকে ধারণ করলে চলবে না বরং সাহেবে ক্বোরআনকেও বুকে ধারণ করতে হবে। তাওহীদের মর্যাদা রক্ষার নামে যখন রিসালতের মানহানি করা হচ্ছিলো তখন আযমতে রাসূলকে আ‘লা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলায়হি যেভাবে উপস্থাপন করেছিলেন তাঁর যুগে এভাবে অন্য কেউ উপস্থাপিত করতে পারেনি। তাই আ‘লা হযরতের দর্শন ও শিক্ষা আমাদের ঈমানের রক্ষাকবচ। শতবর্ষ নয় কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর দর্শন চির অম্লান ও শাশ্বত হয়ে থাকবে।
আহলে সুন্নাতের শীর্ষস্থানীয় আলিমদের দৃষ্টিতে ‘মাসলকে আ‘লা হযরত’
‘মাসলক’ শব্দের শাব্দিক অর্থ রাস্তা বা পথ, সুতরাং ‘মাসলকে আ‘লা হযরত’ এর অর্থ আ‘লা হযরতের পথ বা ত্বরীকা। আ‘লা হযরতের পথ হচ্ছে ওই পথ যা পূর্বসূরীদের পথ; যেমন, ইমামে আযম হুযুর সৈয়্যদুনা গাউসে আযম, খাজা গরীবে নেওয়াজ রিদ্ওয়ানুল্লাহি তা‘আলা আনহুম‘র পথ। অতএব, ‘মাসলকে আ‘লা হযরত’ বলতে কোন ক্ষতি বা নিষেধ নেই।
যখন মসলকে হানাফী ও সুন্নী নাম দিয়ে ইসলামের মৌলিক আক্বিদা ও বিশ্বাসের উপর আঘাত হেনে নতুন নতুন ফিতনা মাথাচড়া দিয়ে উঠতে লাগলো, যখন ওহাবী দেওবন্দী, কাদিয়ানী ইত্যাদি ভ্রান্তদলগুলো হানাফী দাবী করে তাদের মনগড়া আক্বিদা প্রচার করে সরলমনা মানুষকে ধোঁকা দিতে লাগলো, মহান আল্লাহ্ মিথ্যা বলতে পারেন বললো, কেউ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ইলমে গায়বকে অস্বীকার করলো, কেউ কেউ নবী হওয়ার মিথ্যা দাবী করলো, কেউ কেউ হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে শেষ নবী হওয়াকে অস্বীকার করলো। এভাবে যখনই বিভিন্ন মাতাবলম্বী বিভিন্নভাবে সঠিক দ্বীন ইসলামের উপর বিভিন্নভাবে আঘাত হানতে শুরু করলো তখন ওই সব বদমাযহাব থেকে সতর্ক করে এবং সব ধরনের উদ্ভূত ভ্রান্ত আক্বাইদ খণ্ডনে ইসলামের যে সঠিক রূপরেখা আ’লা হযরত উপস্থাপন করেছেন, তাই হলো ‘মসলকে আ’লা হযরত’ মসলকে আ’লা হযরত আলাদা কোন মসলক বা মাযহাব নয়; বরং তিনিই আহলে সুন্নাত তথা ইসলামের সঠিক মতাদর্শই বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছেন। এটাই হচ্ছে সত্যিকার মুসলমানদের অনুসৃত পথ ও মত। নিম্নে এ প্রসঙ্গে কিছু অভিমত পেশ করা হলো:
কাছওয়াছা শরীফের শ্রেষ্ঠতম বুযুর্গ বলেন, আমার মাস্লক শরীয়ত ও তরীকতে ওটাই যা হুযুর আ‘লা হযরত মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রেযা খাঁন ছাহেব বেরলভীর, [সূত্র: সুন্নি আওয়াজ, নাগপুর মে-জুন ১৯১৭] আহছানুল উলামা মারহারাভী রাহমতুল্লাহি আলায়হি বলেন, আমার যে মুরীদ ‘মাস্লকে আ‘লা হযরত’ থেকে বিন্দু পরিমাণ সরে যাবে আমি সেই মুরীদের উপর অসন্তুষ্ট, আমার কাছে তার কোন যিম্মাদারী নেই। আমার জীবনে এটা আমার উপদেশ এবং আমার ইন্তিকালের পর এটাই আমার ওসীয়ত যে, মাওলানা আহমদ রেযা ফাযেলে বেরলভীর মাস্লকের উপর দৃঢ়ভাবে অটল থাকুন। [মাসিক আশরাফিয়া সায়্যিদিন নম্বর পৃ: ৭১৬] মুহাদ্দিসে আযম হিন্দ কাছওয়াছভী বলেন, প্রকৃত সুন্নীয়ত এবং হানাফী কারা তা চেনার জন্য ইসলামী বিশ্বেও শীর্ষস্থানীয় আহলে সুন্নাতের মাশায়েখ হযরাত ‘মাস্লকে আ‘লা হযরত’ শব্দের প্রচলন শুরু করেন। এখন তা প্রকৃত সুন্নী ও নির্ভেজাল হানাফী হওয়ার আলামত। ‘মাস্লকে আ‘লা হযরত’ এই পরিভাষা বর্তমানে আসল সুন্নী হানাফী পরিচয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
মুবাল্লিগে ইসলাম হযরত মাওলানা শাহ আব্দুল আলীম সাহেব মিরাঠী রহমতুল্লাহি আলায়হি বলেন, আল হামদুলিল্লাহ, আমি মাসলকে আহলে সুন্নাতের উপর জিন্দা আছি আর মাসলকে আহলে সুন্নাত ওটাই যা মাসলকে আ‘লা হযরতই। যা আ‘লা হযরতের কিতাবসমূহের মধ্যে রয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ ওই মোতাবেক আমার জীবন অতিবাহিত হয়েছে, এবং আলহামদুলিল্লাহ শেষ সময়েও ওই ‘মাস্লকে আ‘লা হযরত’ এর উপর হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াল্লাম-এর পবিত্র কদমে খাতেমাহ বিলখায়র হবে।
[মাহনামা সুন্নী আওয়াজ জুলাই, সেপ্রেম্বর ১৯৯৭] হযরত মুহাদ্দিসে আযম পাকিস্তান বলেন, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন মিল্লাত আ‘লা হযরত আযীমুল বরকত মাওলানা শাহ্ আহমদ রেযা খাঁন ছাহেব রহমতুল্লাহি আলায়হির মাস্লকের উপর দৃঢ়ভাবে অটল থাক, তাঁর মাস্লকই সঠিক আহলে সুন্নাত ওয়ালজামাত। [মুহাদ্দিসে আযম পাকিস্তান, পৃ:১০০] রঈসুল কলম আল্লামা আরশাদুল কাদেরী আলায়হির রাহমাহ্ বলেন, একথা স্পষ্টই প্রমাণিত যে, আ‘লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা আহলে সুন্নাতের প্রকৃত দিশারী হওয়ার জন্যই তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রতি মুসলমানগণ শ্রদ্ধাশীল এবং প্রকৃত আহলে সুন্নাতের পরিচয়ে তাঁকেই মানদণ্ড হিসেবে স্বীকার করেন। তিনি তাঁর বিশাল রচনা সম্ভারের মাধ্যমে হক ও বাতিলের মাঝে এমন স্পষ্ট পার্থক্য বিবৃত করেছেন যাতে তাঁর চিন্তা-চেতনা, ধ্যান ধারণা প্রকৃত আহলে সুন্নাতের নিশান হয়ে গেছে। এ কারণেই ভ্রান্তদলগুলোর পার্থক্য নির্ণয়ে বেরেলী শব্দটি সংক্ষেপেই আমাদের পরিচয় বহন করে। আল্লাহ ও রাসুলের বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্ব এবং তাঁদের দুশমনদের সাথে দুশমনি পোষণ করার স্পষ্ট ব্যাখ্যাই হচ্ছে ‘মাসলকে আ‘লা হযরত’ [রাহনুমা আশরাফিয়া, সায়্যিদিন নম্বর পৃ: ৮৩৪] মুফতিয়ে আযম দিল্লী মুফতি মুহাম্মদ মাজহারুল্লাহ ছাহেব নকশবন্দী একটি চিঠিতে লিখেন, আশ্চর্য যে, হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত আ‘লা হযরত বেরলভীর ফাত্ওয়া থাকা সত্ত্বেও আমার নিকট ফাত্ওয়া চাওয়া হয়। আমার এবং আমার বাপ দাদার মসলক হচ্ছে তাই যা আ‘লা হযরত রহমতুল্লাহি আলায়হির। [রাহনুমা, সুন্নী আওয়াজ, সেপ্টেম্ব-অক্টোবর ১৯৯৫] আওলাদে রাসূল সৈয়দ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রহমতুল্লাহি আলায়হি জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার ভিত্তিপ্রস্তর দেয়ার সময় বলেন, ‘এই জামেয়ার ভিত্তি মসলকে আ‘লা হযরত এর উপর রাখা হলো।
সুন্নী পরিচয়ে ‘মসলকে আ‘লা হযরত’ এর শর্ত
ভারত বিভক্তির পূর্বে যখন ‘অল ইন্ডিয়া সুন্নি কনফারেন্স’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তখন সুন্নীর পরিচয় এভাবে তুলে ধরা হল, ‘মা আনা আলায়হি ওয়া আসহাবী’ অনুযায়ী হতে হবে, তাঁরা হচেছ আয়িম্যায়ে দ্বীন, খোলাফায়ে রাশেদীন, মাশায়েখে তরীকত এবং পরবর্তীদের মধ্যে হযরত শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী, হযরত বাহরুল উলূম ফিরিঙ্গী মাহল্লী, হযরত মাওলানা ফযলে হক খাযরাবাদী, মাওলানা শাহ্ ফযলে রসুল বদায়ূনী, হযরত মাওলানা ইরশাদ হোসাঈন রামপুরী, আ‘লা হযরত মাওলানা শাহ আহমদ রেযা খাঁন ইত্যাদি বুযূর্গানে আহলে সুন্নাতের যেই মসলক তাই হচ্ছে সুন্নীয়ত।
এই কনফারেন্সে স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন, সদরুশ শরীয়হ মাওলানা আমজাদ আলী, মুফতিয়ে আযম হিন্দ মাওলানা শাহ মোস্তাফা রেযা খাঁন, সদরুল আফাযিল মাওলানা নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী, রঈসুল মুতাকাল্লেমীন মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ সাহেব, আমীরে মিল্লাত পীর জামা‘আত আলী শাহ, মুবাল্লিগে ইসলাম মওলানা আব্দুল আলীম সাহেব, মুহাদ্দিস আযম পাকিস্তান মাওলানা সরদার আহমদ সাহেব, মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ আহমদ ক্বাদেরী, হযরত মুফতি মুহাম্মদ ওমর নঈমী মুরাদাবাদী সহ তরীকতের অনেক বুযুর্গ মাশায়েখ ও শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে আহলে সুন্নাত। [মাহনুমা সুন্নী আওয়াজ জুলাই সেপ্টেম্বর ১৯৯৭] উল্লেখিত বুযুর্গ ওলামায়ে কেরাম ছাড়াও বিশ্বের আরও অনেক আলেম ওলামা, পীর-মাশায়েখগণ ‘মাস্লকে আ‘লা হযরত’ এর উপর ঐক্যমত পোষণ করেছেন। এবং মাস্লকে আ‘লা হযরতের উপর অটল থাকার জন্য জোরালোভাবে নসীহত ও ওসিয়ত করেছেন। আল্লাহ পাকের দরবারে ফরিয়াদ, আমরা সুন্নী মুসলমানদেরকে যেন ‘মসলকে আ‘লা হযরতের উপর অটল রাখেন, আমিন।
শেষ কথাঃ
মুসলমানদের বিশাল ইতিহাসের দু’টি দিক সবিশেষ লক্ষ্যণীয়: একদিকে চরম সাফল্য ও গগণচুম্বী উন্নতি, অন্যদিকে মাঝে মধ্যে দুঃখজনক বিপর্যয় ও প্রতিকার যোগ্য অবনতি। যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলমানদের অন্তরে ইশ্ক্বে মোস্তফার নূর চমকিত ও সমুজ্জ্বল ছিলো, ততদিন পর্যন্ত রোম সম্রাট ক্বায়সার ও পারস্য সম্রাট কিসরার তাজ ও তখত (মুকুট ও সিংহাসন) মুসলামনদের পদ তলে দলিত হয়েছিলো, পক্ষান্তরে যখন মুসলমানদের হৃদয়-মন এ চির উজ্জ্বল নূরশূন্য হয়ে যেতে লাগলো তখন থেকে সুদূর পাশ্চাত্য (স্পেন) থেকে প্রাচ্যের বিশাল অঞ্চল পর্যন্ত লাঞ্ছনা ও অবমাননা যেন তাদের অদৃষ্টের লিপি হয়ে গেলো। ড. আল্লামা ইকবাল মুসলমানদের চরম উন্নতির কারণ ও অবস্থা এভাবে বর্ণনা করেছেন-
هر كه عشق مصطفے سامانِ اوست
بحرو بر گوشئه دامانِ اوست
অর্থ: যার নিকট ইশক্বে মোস্তফা অর্থাৎ বিশ্বনবীর অকৃত্রিম ভালবাসা ও অদম্য ইশক্বরূপী অতি মূল্যবান সম্পদ পাথেয় হিসেবে থাকে, বিশাল সমুদ্র ও বিস্তীর্ণ স্থলভাগ তার আঁচলের এ কোণায় এসে যায়।
যদি আমরা গভীর দৃষ্টিতে ইসলামের ইতিহাসের বিভিন্ন দিক দেখি ও উত্তমরূপে পর্যালোচনা করি, তবে ইসলামের প্রাথমিক যুগের মুনাফিক নেতা আবদুল্লাহ্ ইবনে উবাই ও ভ্রান্ত শিয়া নেতা (শিয়া মতবাদের প্রবর্তক) আবদুল্লাহ্ ইবনে সাবা থেকে আরম্ভ করে এ প্রায় শেষ যুগের ভন্ডনবী গোলাম আহমদ ক্বাদিয়ানী ও নাম সর্বস্ব (তথাকথিত) নজদী-সংস্কারক(!) পর্যন্ত এমন এক বিশ্রী ধারা বা পরম্পরাও চোখে পড়বে, যারা মুসলমানদের মধ্যে র’য়ে তাদের ঈমান ও ইয়াক্বীনকে লুণ্ঠন করতে থাকে। কিন্তু অন্য দিকে, খলিফাতুর রসূল সাইয়্যেদুনা সিদ্দিক্বে আকবার রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে আরম্ভ করে ইমামে আ’যম আবূ হানীফা আলায়হির রাহমাতু ওয়ার রিদ্বওয়ান পর্যন্ত, তারপর গাউসুল আ’যম শায়খ আবদুল ক্বাদির জীলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ও ইমাম আবুল মনসূর মা-তুরীদী থেকে আরম্ভ করে মুজাদ্দিদে আলফে সানী ও ইমাম আহমদ রেযা আলায়হির রাহমাহ্ ওয়ার রিদ্বওয়ান পর্যন্ত আমাদের ঈমান ও ইশক্বের এমন মজবুত শিকল বা পরম্পরা দৃষ্টিগোচর হয়, যা তাওহীদ ও রিসালাতের বিপক্ষে রচিত প্রতিটি ষড়যন্ত্রকে ফাঁশ ও অচল করে দিয়েছে। ইমাম আহমদ রেযা আলায়হির রাহমাহ্ ওয়ার রিদ্বওয়ান ওই শিকলের একটি মজবুত কড়ার নাম।বিশ্বব্যাপী ইসলামের সঠিক রূপ রেখা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের প্রচার প্রসারে যুগেযুগে যেসব মহান মনীষীরা বিশ্বের সুন্নী জনতার কাছে চিরস্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন। তাঁদের মধ্যে হিজরি চর্তুদশ শতাব্দির মুজাদ্দিদ ইমাম আহমদ রেযা (রঃ) অন্যতম। মোঘল সম্রাট আকবরের দ্বীনে ইলাহীর মাধ্যমে উপ মহাদেশের মুসলামানদের ধর্মীয় অঙ্গনে যে ফিতনা ফাসাদের সৃষ্টি হয়েছিল, মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রঃ) তার অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ও কর্ম প্রচেষ্টার দ্বারা এ বিরাট ফিতনা থেকে উপমহাদেশের মুসলমানকে রক্ষায় এগিয়ে আসেন। ঠিক একই ধারায় ইমাম আহমদ (রা.) ইংরেজ শাসন শোষণের দুর্যোগপূর্ণ মূহুর্তে এতদাঞ্চলের মুসলমানদের ঈমান, আক্বীদা, রাজনীতি, অর্থনীতি প্রভৃতি অঙ্গনে যে বিপ্লবী ভূমিকা পালন করেছেন তা আজ এক ঐতিহাসিক সত্যে পরিণত হতে চলছে। বিশেষতঃ ইংরেজরা এদেশে তাদের শাসন ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করে রাখার জন্য মুসলমানদের ইস্পাতকঠিন ঐক্যে ফাটল সৃষ্টির প্রয়াসে এক শ্রেণীর মৌলভীদের কে দিয়ে উপমহাদেশের মুসলমানদের শত বছরের আক্বীদাগত অঙ্গনে এক নতুন ধর্ম মতের প্রচলন করেন। তাদের মধ্যে ওহাবী, দেওবন্দী, কাদিয়ানী, রাফেযী, শিয়া অন্যতম। এসব বাতিল ফিরকার ভ্রান্ত মতবাদ থেকে উপমহাদেশসহ বিশ্বের মুসলমানদের আক্বীদা-আমল হিফাযতে ইমাম আহমদ রেযা (র.) তাঁর যুগে নিজে একাই ভূমিকা পালন করেন। তাঁর লেখিত দেড় সহস্রাধিক গ্রন্থাবলী আজও মুসলিম উম্মাহর ঈমান আমল হিফাযতের রক্ষাকবচ বলা চলে। তাঁর অমূল্য গ্রন্থাবলী ইসলামী জ্ঞান ভান্ডারকে করেছে সমৃদ্ধ। সুন্নিয়তের প্রচার-প্রসার ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে তাঁর জীবন দর্শনের ব্যাপক চর্চা ও গবেষণা বড় বেশী প্রয়োজন। কুরআন, হাদিস, তাফসীর, ফিকহশাস্ত্র, ধর্মতত্ব, সূফীতত্ব, ভাষাতত্ব, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতিসহ জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় তাঁর সদর্প বিচরণ, হানাফী মাযহাবের উপরলিখিত তাঁর ত্রিশ খন্ডের পঁচিশ সহস্রাধিক পৃষ্ঠা সম্বলিত বিশাল ফতওয়া গ্রন্থ ‘ফাতওয়ায়ে রেজভীয়্যাহ’ ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের এক প্রামাণ্য দলিল ।ইসলামের মূলস্রোত সুন্নি দর্শনকেনিয়েই তাঁর জ্ঞান গবেষণার জগৎ বিনির্মিত। হুব্বে রাসূল তথা নবী প্রেমই ছিল তাঁর জীবন সাধনার মূল উপজীব্য। তিনি সুন্নি ঐক্যের প্রতীক, সুন্নিয়াত ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদ্রষ্টা । মুসলিম উম্মাহর এ ক্রান্তিকালে সংকট উত্তোরণে তাঁর জীবন-দর্শনের যথার্থ অনুসরণ জাতিকে সঠিক পথের দিশা দিবে। মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর নেক নজর, ফয়ূজাত আমাদের দান করুন।
আমিন ইয়া রাব্বাল আলামিন।
তথ্যসূত্রঃ
1) কানযুল ঈমান খাযাইনুল ইরফান, বঙ্গানুবাদ, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান।
2) আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলায়হি: জীবন ও অবদান, অধ্যক্ষ মুহাম্মদ বদিউল আলম রিজভি। ২য় সংস্করণ ২৪ সফর ১৪৪২ হিজরি।
3) মারিফে রেযা, করাচি, দারুল উলুম মানযারুল ইসলাম শতবার্ষিকী সংখ্যা, জুলাই-সেপ্ট ২০০১,
পৃঃ ২০৮, ২০৯।
4) ফতোওয়ায়ে রিজভীয়্যাহ, ১০ম খন্ড, ইমাম আ’লা হযরত (র.)।
5) মালফুযাত ই আ’লা হযরত, শাহজাদা মাওলানা মুস্তফা রেযা বেরলভী (র.), অনুবাদ- মুজিবুর রহমান নেজামী, প্রকাশ- ২০১৩।
6) আ’লা হযরত কি নযরিয়াতে তা’লীম কি সীধা সীধা খুসুসিয়াত, সলিম উল্লাহ জুন্দরান, রিসার্চ জার্নাল পাকিস্তান এডুকেশন ফাউন্ডেশন ইসলামাবাদ, জুলাই ১৯৯৯।
7) প্রফেসর ড.মুহাম্মদ মসউদ আহমদ, ইমাম আহমদ রেযা আউর আলমে ইসলাম, করাচী,
১৯৮৪ সন, পৃঃ ১১৮।
8) ইসলামে নারী শিক্ষা, ড. মোহাম্মদ বাহা উদ্দিন, প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ১৯।
9) ইসলামে নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব, গাজী মো. রুম্মান ওয়াহেদ, ডেইলি-বাংলাদেশ.কম,
প্রকাশ ২০১৯।
10) ইমাম আহমদ রেযা খা’র জীবন ও কর্ম, সৈয়্যদ মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন, গবেষক, কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়।
11) নারীশিক্ষায় ইসলামের প্রেরণা, মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান, প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪।
12) ইমাম আহমদ রেযা খাঁন (র.)-এর প্রতি অপবাদের জবাব, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাসউদ আহমদ, অনুবাদক- কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন, প্রকাশ ২০১৮।
13) ষড়যন্ত্রের অন্তরালে অজানা ইতিহাস কৃত, অধ্যক্ষ মাওলানা বদিউল আলম রিজভী।
14) অপবাদের জবাব কৃত, অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ জসিম উদ্দীন রেজভী।
15) জীবন ও কারামত কৃত, মুহাম্মদ শামশুল আলম নঈমী।
16) উইকিপিডিয়া (ইংলিশ)।
17) উইকিপিয়া (বাংলা)।
18) Alahazrat.net ওয়েবসাইট।
19) মাসিক তরজুমান
20) Anjumantrust.org ওয়েবসাইট।