শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

এস এম শাহ মাহমুদ

শিক্ষাক্রম শব্দটি ইংরেজি প্রতিশব্দ ঈঁৎৎরপঁষঁস যা ল্যাটিন শব্দ ঈঁৎৎবৎব থেকে এসেছে। ‘ঈঁৎৎবৎব’ শব্দের অর্থ হচ্ছে দৌড়। ব্যাপক অর্থে এ শব্দটির অর্থ কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য দৌড়ের পথ। বিভিন্ন শিক্ষাবিদ, শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও চিন্তাবিদগণ শিক্ষাক্রমের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নি¤েœ কয়েকটি প্রামাণ্য সংজ্ঞা প্রদান করা হলো:

ক্স            ছাত্রদের শিক্ষাগ্রহণে এবং শিক্ষকের শিক্ষাদানের যোগ্য বিষয়বস্তুর সমষ্টিই শিক্ষাক্রম। ইহা এমন একটি সুপ্রশস্থ পথ যা তাদেরকে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে সাহায্য করে।

ক্স            শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশে এবং আচরণগত পরিবর্তন সাধনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় তার সমষ্টিই শিক্ষাক্রম।

ক্স            শিক্ষাক্রম হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য উপস্থাপিত শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুর সমষ্টি।

ক্স            শিক্ষার ব্যক্তিগত, সামাজিক ও ধর্মীয় উদ্দেশ্যের পরিপূরক সর্ববিধ অভিজ্ঞতাই হলো শিক্ষাক্রম।

এককথায় বলা যায় শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, বিষয়বস্তু, শিক্ষাদান পদ্ধতি, মূল্যায়ন কৌশল, শ্রেণি পাঠদান গবেষণা ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কর্মকান্ডের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শিক্ষার্থী-শিক্ষার্থী এবং আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক বিভিন্ন মিথষ্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকে তার সামগ্রিক রূপই হলো শিক্ষাক্রম।

শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: শিক্ষাক্রম প্রণয়নের জন্য সামাজিক বিভিন্ন পেক্ষাপট জরিপ করার পর যে বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ তাই হচ্ছে  শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছাড়া শিক্ষাক্রমের সফল বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণের সময় জাতীয় দর্শন হবে বিবেচনার প্রধান বিষয়বস্তু। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জাতির অর্থনৈতিক লক্ষ্য এবং সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ। বিভিন্ন আঞ্চলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশের সমন্বয় সাধন করাও অপরিহার্য। এসব উদ্দেশ্যাবলি শিক্ষার্থীদের  ব্যক্তিগত চাহিদা কীভাবে পূরণ করা সম্ভব হবে তা অবশ্যই বিবেচনা করে দেখতে হবে। শিক্ষার্থীর চাহিদা মেটানো অথবা উদ্দেশ্যসমূহ অর্জন করার উপায় হিসেবে কি ধরনের জ্ঞান ধারণা ও প্রযুক্তিগত ক্ষমতা প্রয়োজন তা অবশ্যই চিহ্নিত করতে হবে। শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে যে সব নীতিমালা অবলম্বন করা হয়ে থাকে তা সর্বস্তরের লোকের গোচরিভূত করার সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

বর্তমানে বাংলাদেশে দাখিল বা মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষাক্রমের যে সকল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ নির্ধারণ করা হয়েছে তা হলো:

ক্স            শিক্ষার্থীর ধর্মীয়, নৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মূলোবোধে উদ্দীপ্ত করা।

ক্স            শিক্ষার্থীর প্রাথমিক স্তরে অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গির  ভীতি দূর করা এবং এগুলোর সম্প্রসারণ ও সুসংহতকরণে সহায়তা করা।

ক্স            দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে ও সমকালীন জীবনের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীর নবতর জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করা।

ক্স            শিক্ষার্থীকে জীবনমূখী  বস্তুনিষ্ঠ ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশে সহায়তা করা।

ক্স            দাখিল বা মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করা বিশেষ করে প্রতিবেশি দেশ সমূহের শিক্ষা ব্যবস্থার সমমান সম্পন্ন করা।

ক্স            শিক্ষার্থীর অনুসদ্ধিৎসু মনোভাব ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠন এবং জীবনে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারে সমর্থ করা।

ক্স            উচ্চতর শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে পূর্ব প্রস্ততি গ্রহণে সহায়তা করা।

ক্স            জীবনমুখী বস্তুনিষ্ঠ এবং ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত জীবনের উপযোগী করে সম্পদে পরিণত করতে সহায়তা করা।

তাই বলা যায় যে, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষাক্রমের প্রাণ। সুতরাং শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে নির্ধারণ করতে হবে।

শিক্ষাক্রমের গুরুত্ব: শিক্ষাক্রমের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিশে^র বিভিন্ন বরেণ্য শিক্ষাবিদ এবং মনীষী তাঁদের সুচিন্তিত মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। বস্তুতঃ শিক্ষাক্রমের অন্তর্ভূক্ত বিষয়সমূহ শিক্ষার্থীর সুপ্ত গুণাবলি ও সম্ভাবনাময় প্রতিভার পূর্ণবিকাশ ও লালনের মাধ্যমে পরিপুষ্ট করে তোলে যাতে সমাজ ও ধর্ম জগতের কল্যাণকর কিছু করতে সমর্থ হয়। শিক্ষাক্রমের এ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিমার্জিত করার জন্য নি¤েœাক্ত দিকসমূহ বিচার বিবেচনায় শিক্ষাক্রমের গুরুত্ব অনভূত হয়:

ক্স            দেশপ্রেম ও সুনাগরিকত্ব: শিক্ষাক্রমের অন্তর্ভূক্ত বিষয়সমূহ অধ্যয়ন শেষে শিক্ষার্থীর মনে দেশপ্রেম ও সুনাগরিকত্ব জাগ্রত হবে। দেশপ্রেম এবং সুনাগরিকত্ব সৃষ্টির কর্মপ্রয়াসে শিক্ষাক্রমের গুরুত্ব অপরিসীম।

ক্স            ধর্মীয় ও  নৈতিক মূল্যবোধ: শিক্ষার্থীর ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ বিকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষাক্রমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শিক্ষার্থীর নৈতিকতাপূর্ণ জীবন বিকাশে শিক্ষাক্রম প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।

ক্স            সামাজিক রূপান্তরের হাতিয়ার রূপে শিক্ষা : শিক্ষাক্রমের অধীত জ্ঞানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সামাজিক আচার আচরণ রপ্ত করবে, সামাজিক সম্পদ সংরক্ষণ করবে। সর্বোপরি সমাজের প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধনের মাধ্যমে তাদের অবদান রাখবে।

ক্স            কায়িক শ্রমের মর্যাদা দান: সমাজের কোন কাজই ছোট নয়, কোন পেশাই অমর্যাদার নয়। শিক্ষাক্রমে বর্ণিত বিষয়, জ্ঞানের অনুধাবন করে শিক্ষার্থী এ সম্পর্কে যথার্থ উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়।

ক্স            নেতৃত্ব সংগঠনের গুণাবলি: একটি দেশ এবং জাতিকে তার ভবিষ্যত কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছতে হলে প্রয়োজন সঠিক নেতৃত্ব ও সংগঠনের গুণাবলি সম্পন্ন কর্মীবাহিনী। শিক্ষাক্রমে বর্ণিত দিক-নির্দেশনা এ ক্ষেত্রে অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

ক্স            বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার উন্নয়ন: বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা ছাড়া জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয় । আধুনিক শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীর বিজ্ঞান  ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা গ্রহণে সহয়তা করে।

ক্স            উন্নত জীবনবোধ সৃষ্টি: ব্যক্তি, পরিবার ও জাতির উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় উন্নত জীবনবোধের অধিকারী হতে পারে শিক্ষাক্রম তাই শিক্ষা দিয়ে থাকে।

ক্স            শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন: জাতীয় উন্নয়নের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থাকে সুষ্ঠু গতিশীল ও কর্মোপযোগী করে তোলা। এর জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও শিক্ষাদান পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষাদান করতে পারলে শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। আর এজন্য শিক্ষাক্রমে এর সঠিক দিক নির্দেশনা থাকে।

উপরিউক্ত বিষয়াবলি ছাড়াও শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীর প্র¯ুÍতি, মানসিক বিকাশ, মানব সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবহারের ধরণ, দেহমন গঠন, চরিত্র গঠন, সৎ ও কর্মময় জীবনযাপন, অন্যের প্রয়োজনে সংবেদনশীল হবার প্রস্তুটি ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভূক্ত থাকে। তাই বলা যায় যে, শিক্ষাক্রমের গুরুত্ব অপরিসীম।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment