শায়েখুল আকবর : মহিউদ্দিন ইবনে আরাবি

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

ভিক্ষুক দরজায় এসেছে। তিনি ঘরেই ছিলেন। ডাক শুনে বেরুলেন। রাজসিক যুবক। চোখে জ্ঞানের দ্যুতি।

– গরিবকে ভিক্ষা দিন!

– বাবা! ক্ষমা করবেন। ঘরে কিছুই নেই।

– মুসলিম কখনো নি:স্ব নয়। আপনার নবী (দ) তো একটি খেজুরের অর্ধেকও দান করেছেন।

– জ্বী বাবা, ঠিক বলেছেন। আমি নি:স্ব নই। আমার এই ঘর-ভিটে রয়েছে। এটাই গ্রহণ করুন।

যুবক এক কাপড়ে বেরিয়ে এলো। ক’হাত ঘরের বিনিময়ে তাঁকে বিশ্বনিখিল লিখে দেয়া হয়েছে যেন।

এখানে যতটা না তাঁর উদারতা, তার থেকে বেশি ছিল সম্মানবোধ। নিজের সম্মান না। যাঁর নামে ভিক্ষুক ভিক্ষা চাইছিল, তাঁর সম্মান। জ্বী, মদিনা-মুনিব সাল্লালাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এঁর নামে।

শুধু মদিনা-মুনিব (দ) এঁর সম্মানকে অক্ষুন্ন রাখতেই তিনি বাস্তুহারা হয়েছিলেন। আহ! কতটা গভীরে প্রোথিত ছিল তাঁদের নবীপ্রেম।

এ মহাত্ম্যার নাম মহিউদ্দীন ইবনে আরাবী (র)। কিছু নাম শুনলে শরীর শিউরে উঠে। ভয়ে বা আতংকে নয়, শ্রদ্ধায় আর সম্মানে। ইব্‌নে আরাবী সেরকমই একজন।

স্পেনকে সে যুগে ‘আন্দালুসিয়া’ বলা হত। যেমনটা, বঙ্গ-ভারত-পাকিস্তানকে ‘হিন্দ’ বলা হত। এই আন্দালুসিয়াতে ২৯ জুলাই ১১৬৫ ইঙ্গাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আন্দালুসিয়ান বলে অধিক সমাদৃত। যদিও তিনি খাঁটি আরব-বংশীয় ছিলেন।

ওসমানিয় (অটোমান) সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ‘ওসমান’। তাঁর পিতা ছিলেন ‘আর্তাগুল বেঁ’। আর্তাগুল ইবনে আরাবী’র হাতে বায়াত গ্রহণ করেন। পীরের কাছে শিষ্যত্ব গ্রহণ করাকেই ‘বায়াত’ বলে।

এজন্যই পরবর্তীতে ওসমানিয়রা সূফিগণকে অত্যন্ত মূল্যায়ন করতেন। সত্য বলতে : তিন-মহাদেশ শাসন করা এই সম্রাজ্য, ইবনে আরাবীর আদর্শেই প্রতিষ্ঠিত হয়। বিস্তৃত হয়। যেমনটা বটবৃক্ষকে আশ্রয় করে বেড়ে ওঠে স্বর্ণলতা। {যদিও একটি সময় পরে ওসমানিয়রা অতিক্ষুদ্র ক্ষেত্রে পদস্খলিত হয়}

ইবনে আরবী ছিলেন পরিব্রাজক। মানে দেশেদেশে ঘুরতেন। এভাবেই ঘুরতে ঘুরতে তিনি কোম নগরে পৌঁছান। আর এ শহরেই জন্মেছিলেন জালালুদ্দীন রুমি (র)। ইবনে আরাবী রুমি (র) এঁর পিতার আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। রুমি (র) তখন ছিলেন বালক। ইবনে আরাবী বালক রুমি’কে বুকে নিয়ে আশীর্বাদ করেন। বলা বাহুল্য, পরবর্তীতে ইবনে আরাবীর দর্শনের প্রভাবেই জালালুদ্দীন রুমি, মওলানা রুমি-তে পরিণত হন।

আমরা সুন্নি-সূফিরা যে আধ্যাত্মের চর্চা করি, তার দৈহিক কাঠামো বিনির্মিত হয় এ মহাত্ম্যার হাতে। তাই তাঁর উপাধী, শায়েখুল আকবর। শিক্ষকদের শিক্ষক।

ব্যক্তিগত ভাবে, ইমাম আ’লা হযরত এঁর পরেই, আমি সবচে বেশি রোমাঞ্চিত হই ইবনে আরাবী’র অতল রহস্য-সম্রাজ্যে।

আপনিও আমন্ত্রিত।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment