(১) “কালেমা তৈয়্যোবার” লেখক মাওলানা আব্দুর রহীম বলেছেন, “শাফাআত অর্থ সাধারণ সুপারিশ- যা কবুল হতেও পারে- আবার নাও হতে পারে”।
এই তথ্য সম্পূর্ণ ভুল। বুখারী শরীফের হাদীসে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে আল্লাহ তায়ালা রোয হাশরে নবীজীর সিজদায় সন্তুষ্ট হয়ে বলবেন,
فَيَقُولُ يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ وَقُلْ يُسْمَعْ لَكَ وَسَلْ تُعْطَ وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ – অর্থাৎ- “হে প্রিয় হাবীব! আপনি সিজদা হতে মাথা তুলুন এবং যা বলার বলুন- তা গৃহীত হবে, যা চাওয়ার চান- তা দেয়া হবে, যা সুপারিশ করবেন- তা কবুল করা হবে”। (বুখারী পর্ব ৯৭ /৩৬ হাঃ ৭৫১০, মুসলিম হাঃ )
এখানে শাফাআত কবুল হওয়ার নিশ্চয়তা দুনিয়াতেই দেয়া হয়ে গেছে।
“কবুল হতে পারে- নাও হতে পারে” -এমন দোদোল্যমান কথা হাদীসে নেই।
(২) ”ইংল্যান্ডে ভাষণে” মিঃ মঊদূদী বলেছেন- ”নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরের কল্যাণ তো দূরের কথা- নিজের কল্যাণ-অকল্যাণ করতেও অক্ষম”। (লন্ডনের ভাষণ)।
তার এই কথা শানে রিসালাতের ওপর মারাত্মক আঘাত স্বরূপ। হাশরের ময়দানের বিপদ হলো সবচেয়ে বড় বিপদ। ঐ বিপদের বন্ধু ও কান্ডারী হবেন প্রিয়নবী মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সমস্ত হাশরবাসীই ঐ মহাবিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য তার দ্বারস্থ হবে। তিনিই তখন সুপারিশ করে বিচার অনুষ্ঠান শুরু করবেন। সুতরাং তিনি কল্যাণকারী।
(৩) যারা বলে- রাসূলের নিকট সাহায্য চাওয়া শিরক- তারাই হাশরের দিনে সাহায্যের জন্য বেশী পেরেশান হয়ে দৌড়াদৌড়ি করবে এবং নবীগণের দ্বারস্থ হবে। অবশেষে সব জায়গা থেকে নিরাশ হয়ে নবীজির কাছে যাবে। তখন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলবেন না যে, তোমরা তো দুনিয়াতে আমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করাকে শিরক বলেছিলে- কাজেই তামাদের জন্য সুপারিশ করবোনা। বরং তিনি দাস্ত-দুষমন নির্বিশেষে সকলের জন্যই সুপারিশ করবেন।
(৪) দুনিয়াতে যারা সুপারিশকে শিরক বলতো- তাদের ভাষ্যমতে সেই কথিত শিরক দিয়েই আল্লাহ তায়ালা বিচার শুরু করবেন। আমাদের মতে তা শিরক নয়। দুনিয়াতে নবীজির সাহায্য প্রার্থনা করা সাহাবীগণের সুন্নাত। তারা যেকোন বিপদে নবীজির দ্বারস্থ হতেন এবং হুযুরের কাছে প্রার্থনা করতেন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে নিয়ম কানুন বাতলে দিতেন।
(৫) আল্লাহ পাক নবীজিকে উছিলা বা মাধ্যম বানিয়ে গুনাহ ক্ষমার প্রার্থনা করার জন্য আমাদেরকে পাক কালামে শিক্ষা দিয়েছেন। আল্লাহ পাক বলেন,
وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذ ظَّلَمُواْ أَنفُسَهُمْ جَآؤُوكَ فَاسْتَغْفَرُواْ اللّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُواْ اللّهَ تَوَّابًا رَّحِيمًا
অর্থ- “তারা যদি গুনাহ করে ক্ষমার উদ্দেশ্যে আপনার দরবারে এসে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং আপনিও তাদের জন্য সুপারিশ করেন- তাহলে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবা কবুলকারী ও দয়ালু হিসাবে পাবে”। (সূরা নিসা, ৬৪ আয়াত)।
উক্ত আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল- নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু সংবাদদাতা নন – বরং তিনি সাহায্যকারীও বটে। বিপদে আপদে তিনি সাহায্যকারী।
শুধু মানুষ নয়- বনের হরিণী, পালের উট নিজেদের দুঃখ দুর্দশার কথা নবীজির দরবারে পেশ করতো এবং মুক্তি পেতো। প্রমাণিত হলো আমাদের নবী সাহায্যকারী নবী, ফরিয়াদ কবুলকারী নবী- সাহায্য প্রার্থনা তাঁর কাছেই করা যেতে পারে- যিনি দুঃখ বেদনা ও প্রয়োজনের সব কিছু জানেন। এটাই কালেমার দ্বিতীয়াংশের সারমর্ম।
সংক্ষেপে বুঝে নিন- কালেমার প্রথমাংশ হলো- পাসপোর্ট স্বরূপ এবং দ্বিতীয়াংশ হলো ভিসা স্বরূপ। ভ্রমণের জন্য যেমন পাসপোর্টের প্রয়োজন হয়- তেমনিভাবে ভিসারও প্রয়োজন হয়। ভিসা ছাড়া শুধু পাসপোর্টে ভ্রমণ করা যায় না। আল্লাহর কাছে যেতে হলে তার হাবীবের ভিসা লাগবে।