সেই ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছেন ইসলাম “শান্তির ধর্ম”। ইসলামের শিক্ষা হলো শান্তি,সম্প্রীতি,সহমর্মিতার প্রদর্শন
হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,যদি কোন মুসলিম বিনা কারনে কোন অমুসলিমকে হত্যা করে আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। ইসলাম আমাদের অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপর কঠোর হওয়া থেকে বারন করেন।নির্দিষ্ট সীমারেখায় তাদের সাথে সুব্যবহার,সমবেদনা ও সাহায্যের শিক্ষা দেয়।এটিই ইসলামের সৌন্দর্য।
কিন্তু ” শান্তি” এই শব্দটায় তখনই অন্যদিকে মোড় নেয় যখন ইসলামের উপর আঘাত আসে।তাই সব ক্ষেত্রে যেমন একই শব্দের একই অর্থ খাটে না,ঠিক তেমনি “শান্তি” শব্দটার ও সবক্ষেত্রে একই অর্থ খাটে না।
এখন আসুন ইতিহাসের পাতায় চোখ বুলিয়ে নেয়।
মক্কা বিজয়ের দিন যখন রাসূলে করীম ﷺ সাহাবায়ে কেরাম رضي الله عنه কে সাথে নিয়ে বিশাল লস্কর নিয়ে মক্কা শরীফে প্রবেশ করছিলেন,একটি কুকুর তার বাচ্চাসহ রাস্তার পাশে অবস্থান করছিল।
নবী করিম ﷺ সবাইকে থামিয়ে দিলেন যাতে সেই বাচ্চার কোন ক্ষতি না হয়।পুরো সময় জুড়ে যতসময় পুরো লস্কর প্রস্থান না করেন ততক্ষন পর্যন্ত একজন সাহাবী رضي الله عنهকে দায়িত্ব দিলেন যাতে তিনি সেই বাচ্চার খেয়াল রাখেন।কুকুর ও তার বাচ্চা উভয়ই বেচে গিয়েছিল সেদিন।
কিন্তু ৯ জন পুরুষ ও ৬ জন মহিলার জন্য নবী করিম ﷺ ঘোষনা দিলেন,তাদের যেখানেই পাওয়া যায় হত্যা করা হোক!
মক্কা বিজয়ের দিন নবী করিম ﷺ ঘোষনা দিলেন,তাদের ক্ষমা করে দেয়া হবে যারা আজ হাতিয়ার ফেলে দেবে,তাদের ও ক্ষমা করে দেয়া হবে যারা হযরত আবু সুফিয়ান رضي الله عنه’র ঘরে আশ্রয় নেবেন।ক্ষমার এক মহান দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেদিন।
কিন্তু একই দিনে আরো এক মহান দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।ইবনে খাতাল নামে এক ব্যক্তি ছিল।সে নবী করিম ﷺ শানে অবমাননা করে কবিতা লিখতো।সে জানতো আজ সবাই ক্ষমা পেলে ও সে পাবে না।লুকিয়ে গেলো কাবা শরীফের ভেতর।সে ভেবেছিল কাবা শরীফের ভেতর যেহেতু রক্তপাত হারাম তাই হয়তো সে বেঁচে যাবে।
নবী করিম ﷺ হুকুম দিলেন তাকে যেখানে পাওয়া যায় সেখানেই হত্যা করা হোক।সাহাবায়ে কেরাম رضي الله عنه অনেক খোজাখুজি করলেন।অবশেষে তাকে কাবা শরীফের ভেতর পেলেন। এখন যে বিষয় টা লিখতে যাচ্ছি তা খুব ভালভাবে পড়ুন।
নবী করিম ﷺ’র দরবারে যখন আরজ করলেন, সে কাবা শরীফের ভেতর লুকিয়ে আছে।এখন কি করা যায়?? যেহেতু কাবা শরীফের ভেতর রক্তপাত হারাম।একদিকে কাবা শরীফের গিলাফ অপরদিকে কাবা শরীফের পবিত্র দেয়াল। নবী করিম ﷺ হুকুম দিলেন তাকে সেখানেই কতল করো।
একবার ভাবুন,কুকুরের বাচ্চা রাস্তায় থেকে বেঁচে গেলো,কিন্তু মানুষ কাবা শরীফের ভেতর থেকে ও কেনো বাঁচলো না??? কারন কি??যাদের ক্ষমা করা হয়েছিল সেদিন তারা ঈমান আনেন নি তখন ও কিন্তু তারা কেউ রাসূল ﷺ’র শানে অবমাননা করেন নি।কিন্তু ইবনে খাতাল সে নবী করিম ﷺ’র শানে অবমাননা করে কবিতা লিখতো তাই কাবা শরীফের গিলাফের ভেতর লুকিয়ে ও সে বাচতে পারেনি।
আফসোস এর বিষয় হলো,আর আজ বলা হচ্ছে শান্তির কথা বলো? সহমর্মিতা দেখাও!!! আরে এর চেয়ে বড় সহমর্মিতা আর কোথায় আছে যেখানে হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,যদি কোন মুসলিম বিনা কারনে কোন অমুসলিমকে হত্যা করে আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।
শান্তির কথা অবশ্যই বলা হয়েছে।এর চেয়ে শান্তি ও সহমর্মিতার কথা আর কি হতে পারে যে কুকুর ও তার বাচ্চার দেখাশোনার জন্য সাহাবী رضي الله عنه দাঁড়িয়ে ছিলেন,সেই সকল সাহাবী رضي الله عنه যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজ আমি ও আপনি ইসলাম পেয়েছি।
শান্তির কথা বলছেন!!! যদি তাই হয়ে থাকে,বদরের ময়দান,উহুদের ময়দানে কি হয়েছিল???
ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক رضي الله عنه’র সাথে একবার তাঁর পুত্রের কথা হচ্ছিল।তাঁর পুত্র বললেন,”বাবা,যখন আমি ইসলামের শীতল ছায়াতলে আসি নি,তখন এক যুদ্ধে আপনি ইসলামের পক্ষে লড়ছিলেন।সে সময় আপনি বহুবার আমার তরবারির নিচে এসেছিলেন।কিন্তু বাবা সেদিন আমি আপনাকে আঘাত করতে পারেনি কারন আপনি আমার বাবা ছিলেন। এ কথা শুনে হযরত আবু বকর সিদ্দিক رضي الله عنه’র বললেন,”যদি সেদিন তুমি আমার তরবারির নিচে আসতে তাহলে “ছেলে” ভেবে আমি তোমাকে ছেড়ে দিতাম না।অবশ্যই তরবারি চালিয়ে দিতাম”।
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ফারুক رضي الله عنه নবীজি ﷺ’র শানে অবমাননা করায় নিজ বাবার মাথা শরীর থেকে আলাদা করে দিয়েছিলেন।
ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলি رضي الله عنه।একবার কাফিরদের পক্ষের এক পালোয়ান বড় তরবারি উঁচিয়ে হুংকার দিচ্ছিল,”এ মুসলমানেরা!! কে আছো?আমার সাথে লড়বে আজ? হযরত আলি رضي الله عنه তখন অল্প বয়সী ছিলেন।পবিত্র তরবারি নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন তার সামনে।পালোয়ান তাঁকে দেখে বললো,”তুমি আমার বিপক্ষে লড়বে!! তোমার সাথে আমি লড়তে চাই না,কারন তুমি আমার চেনাজানা একজনের পুত্র।তুমি সরে যাও
হযরত আলি رضي الله عنه জবান দিলেন,”তুই আমার সাথে হয়তো লড়তে চাস না,কিন্তু আমি অবশ্যই তোকে হত্যা করতে চাই,কারন তুই আমার নবী করিম ﷺ’র দুশমন”।এ কথা শুনে সে গর্জে উঠে আঘাত করতে গেলেই তার মাথা শরীর থেকে আলাদা করে দিলেন হযরত আলি رضي الله عنه
ইতিহাস থেকে তাহলে আমরা কি শিক্ষা পায়???
ক্ষমা ও সহমর্মিতা তার জন্য যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল ﷺ’র প্রেমিক
অবমাননাকারীর জন্য ক্ষমা নয়,হত্যায় নির্ধারিত
পরিশেষে কবি নজরুল রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহির সেই জগৎ বিখ্যাত উক্তি দিয়ে শেষ করতে চাই,
“রাসূল ﷺ’র অপমানে যদি কাঁদে না তোর মন
মুসলিম নয়,মুনাফিক তুই,
রাসূল ﷺ’র দুশমন”