শয়তানের দাবী

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তা‌‌আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  এরশাদ করেছেন- শয়তান বলে, ধনাঢ্য ব্যক্তি সফল হতে পারেনা, কারণ আমি তাকে তিন জিনিসের কোন একটিতে অবশ্যই ফাঁসিয়ে রাখি।

১। দুনিয়া ও তার মাল-সম্পদ তাঁর নজরে এমন সুন্দর, চাকচিক্যের করে তুলে ধরি যে, সে এটার হক আদায়ে গড়িমসি বা ত্রুটি করতে বাধ্য হয়ে যায়।
২। সম্পদ অর্জনের রাস্তা সহজ করে দেই, (যাতে সম্পদের আধিক্যতার অবৈধ-স্থানে ও ভুল পথে খরচ করতে অসুবিধে না হয়)।
৩। তাঁর অন্তর ধন-দৌলতের মুহব্বতে ভরপুর করে দেই, (যাতে সে হালাল-হারামের পার্থক্য ব্যতিরেকেই অধিক, অধিক মাল উপার্জনের চক্করে পড়ে থাকে।
তেজারত অগ্রগণ্য না এবাদত-
হযরত আবুদ্দারদা (রাঃ) বলেন যে, হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তা‌‌আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নবুয়্যত লাভের সময় আমি ব্যবসা করতাম (ঈমান আনয়নের পর) আমি খুবই চেষ্টা করলাম যে, এবাদত ও তেজারত উভয়টি এক সাথে চালাবো।
কিন্তু এটা খুবই মুশকিল মনে হলো এবং বুঝা গেল যে, একটি কে ছাড়তেই হবে। তাই আমি তেজারত (ব্যবসা) ছেড়ে এবাদত গ্রহণ করলাম।
আল-হামদুলিল্লাহ! আজকে আমি আমার সিদ্ধান্তের উপর খুবই সন্তষ্ট এবং অস্থিরতামুক্ত। আজকে আমার অন্তরে এতটুকুও ইচ্ছা হয়না যে, মছজিদের দরজায় আমার একটা দোকান থাকুক আর ওয়াক্ত মত জামাতের সাথে নামাজ আদায় করি এবং বাকী সময় দোকান চালাই। যদিও এতে দৈনিক চল্লিশ দীনার আমদানী হয়।
জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, আপনার এমনটি অবস্থা কেন হল? বললেন, আখেরাতের হিসাবের ভয়ে।
উপলব্ধি: এটা হযরত আবুদ্দারদা (রাঃ) এর ব্যক্তিগত কাজ ও খেয়াল। যা তাঁর পরিপূর্ণ ঈমান ও পূর্ণ খোদা ভীতির পরিচায়ক। এটা অনেক উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত। প্রত্যেক মানুষের পক্ষে এটার অনুসরণ করা সম্ভব নয়।
তেজারত (ব্যবসা-বণিজ্য) করা শুধু জায়েজই নয়, বরং ঈমানদারীর ব্যবসা দ্বীনের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যার ফজীলত বিভিন্ন হাদীছে বিদ্যমান আছে।
যেমন এক হাদিসে আছে যে –
হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তা‌‌আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  এরশাদ করেছেন_
اَنَا وَالتَّا جِرُ الصّدُّوْق كَهَا تَيْن فِى الْجَنَّةِ
“আমি এবং সত্যবাদী ঈমানদার ব্যবসায়ী জান্নাতে এত নিকটে হবো, যেমন এ দু’টি আঙ্গুলী”। এ সময়ে তিনি হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তা‌‌আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম)   শাহাদত ও মধ্যমাঙ্গুলী দু’টি উঠিয়ে দেখিয়েছেন।
মানুষের উপর যেমনিভাবে এবাদত করা ফরজ, তেমনি ভাবে হালাল রুজী উপার্জন করাও ফরজ।
আর হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তা‌‌আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যবসাকে সবচে অগ্রগণ্য ও উত্তম পেশা বলে অবহিত করেছেন। সুতরাং হাত পেতে পেট ভরে এবাদত করা এবং সদকা-খয়রাতের উপর জীবনাতিপাত করার চেয়ে অনেক গুনে উত্তম যে, এবাদতের সময় এবাদত করবে, আর বাকী সময় ঈমানদারীর সাথে তেজারত, (ব্যবসা) করে হালাল রুজী উপার্জন করবে। যেখানে যে ব্যবসা সম্পর্কে নিন্দা বা মন্দ বলা হয়েছে সেখানে সেই ব্যবসার উদ্দেশ্য, যে ব্যবসা শরীয়ত সম্মত নয় এবং আখেরাতকে ভুলিয়ে দেয়।
হযরত সর্দারে দু’আলম রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তা‌‌আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর দু’টি বিশেষ বৈশিষ্ট
হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তা‌‌আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-  এরশাদ করেছেন- দারীদ্রতা দুনিয়ার কষ্টের কারণ বটে কিন্তু আখেরাতে খুশী ও আনন্দের কারণ হবে, প্রাচুর্যতা দুনিয়ার জীবনে খুশী ও আনন্দের কারণ, কিন্তু আখেরাতের জীবনে কষ্টের কারণ হবে। তিনি হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তা‌‌আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-  আরো ফরমায়েছেন, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যে এক একটা বৈশিষ্ট্য থাকে, আমার বৈশিষ্ট্যতা হলো দু’টি ।
১। দারীদ্রতা ও ২। জেহাদ।
যে ব্যক্তি এ দু’টিকে পছন্দ করেছে, সে আমাকে ভালবেসেছে, আর যে ব্যক্তি এ দু’টোকে অপ্রিয় জেনেছে, সে আমাকে ঘৃণা করেছে। (নাউজবিল্লাহ্)।
উপলব্ধি : প্রত্যেক মুছলমানের উচিৎ যে, সে নিজে ধনী হলেও দারীদ্রতা ও দরীদ্রদেরকে ভালবাসবে, কেননা গরীবদের ভালবাসার মধ্যে মাহবুবে রাব্বুল আলামীন (সাল্লাল্লাহু তা‌‌আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-  এর ভালবাসা নিহিত রয়েছে।
আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তা‌‌আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-  কে দারীদ্রদের ভালবাসতে এবং তাদের সান্নিধ্য দিতে হুকুম দিয়েছেন।
হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তা‌‌আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-  এর খেদমতে একবার উয়াইনা ইবনে হুসাইন ফাযারী উপস্থিত হল, সে স্বীয় সমপ্রদায়ের নেতা ছিল। ঘটানাক্রমে সে সময় দরবারে নববীতে হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) হযরত সোহাইব রোমী (রাঃ) হযরত বেলাল হাবসী (রাঃ) প্রমূখ দরীদ্র সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) বসা ছিলেন, যাদের কাপড়-চোপড় ময়লা যুক্ত ও ঘর্মাক্ত ছিল।
তাদেরকে দেখে উয়াইনা বলল, আমাদের একটা মর্যাদা আছে, আমাদের আগমনে এসব লোককে সরিয়ে দিন। তাদের পরিহিত কাপড়ের কারণে আমাদেরকে তাদের সাথে বসা অপছন্দনীয়। এ প্রেক্ষিতে এ আয়াত শরীফ নাযিল হল _

وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاوْةِ وَالْعَشِىِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَه‘ وَلاَتَعْدُعَيْنَكَ عَنْهُمْ تُرِيْدُزِيْنَةَ الْحَيَواةِ الدُّنْيَا وَلاَتُطِعْ مَنْ اَغْفَلْنَا قَلْبَه‘ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ اَمْرُه‘فُرُطًا

“আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন, যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালন কর্তাকে তার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না, যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি। যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার আনুগত্য করবেন না”। সূরা কাহফ : আয়াত – ২৮।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment