শবে বারত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত একটি আলোচনা। এখান থেকে আপনি শবে বারতের পরিচয় জানতে পারবেন, সহীহ্ হাদিসের আলোকে শবে বারতের ফজিলত জানতে পারবেন, তারপর কুরআনের আলোকে শবে বারতের ফজিলত জানতে পারবেন, তারপর শবে বারতের আমল সম্পর্কে জানতে পারবেন।
শবে বারতের পরিচয়
________________
শবে বরাআত (شب براءت) শব্দটি ফারসী ভাষা হতে উদ্ভুত। শব (شب ) এবং বরাআত (براءت) এর সমন্বয়ে গঠিত। ‘‘শব’’ অর্থ রজনী বা রাত্রি। আর ‘বরাআত’ শব্দের অর্থ পবিত্রতা, নাজাত, মুক্তি, পরিত্রাণ ইত্যাদি। এর রাতে যেহেতু অগণিত মানবের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং বহু জাহান্নামীদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয়, এজন্যই রাত্রটি শবে বরাআত বা মুক্তির রজনী নামে পরিচিত। পরিভাষায় শবে বরাআত না বলে শবে বরাত বলা হয়।
তবে হাদীস শরীফে এ রাতের কোন নির্দিষ্ট নাম উল্লেখ করা হয়নি ليلة النصف من شعبان অর্থাৎ শা’বানের পঞ্চদশ রাত বলেই এর বিভিন্ন তাৎপর্য তুলে ধরা হয়েছে। আরবিতে ليلة النصف من شعبان বলা যেতে পারে আবার ليلة الراءت ও বলা যেতে পারে।
সহীহ্ হাদিসের আলোকে শবে বারতের ফজিলত
_____________________________________
১. এই রাতে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদেরকে বিশেষ ভাবে ক্ষমা করে থাকেন।
০১. হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) এর হাদীস-
(481/12 صحيح ابن حبان محققا)
-5665 – أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُعَافَى الْعَابِدُ بِصَيْدَا، وَابْنُ قُتَيْبَةَ وَغَيْرُهُ، قَالُوا: حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ خَالِدٍ الْأَزْرَقُ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو خُلَيْدٍ عُتْبَةُ بْنُ حَمَّادٍ، عَنِ الْأَوْزَاعِيِّ، وَابْنِ ثَوْبَانَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ مَكْحُولٍ، عَنْ مَالِكِ بْنِ يُخَامِرَ عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَطْلُعُ اللَّهُ إِلَى خَلْقِهِ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلَّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ»
অর্থ : হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ শা’বানের রাতে (শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতিত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।
_সহীহ ইবনে হিব্বান-১২/৪৮১, হাদীস-৫৬৬৫, কিতাবুস সুন্নাহ-১/২২৪, হাদীস-৫১২, আল ইহসান-৭/৪৭, মাওয়ারিদুয যমআন-৪৮৬, হাদীস-১৯৮০, মাজমাউ যাওয়াইদ-৮/৬৫, সিলসিলাতুস সহীহা-৩/১৩৫, হাদীস-১১৪৪, শোয়াবুল ঈমান-৩/৩৮২, হাদীস-৩৮৩৩, আল মু’জামুল কাবীর-২০/১০৮,১০৯, আততারগীব-২/২৪২ ইত্যাদি অসংখ্য কিতাব।
হাদীসটির মান :
হাদীসটি সম্পূর্ণ সহীহ
০১. ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ.-৩৫৪) বলেন, হাদীসটি সহীহ। সহীহ ইবনে হিব্বান-১২/৪৮১, হাদীস-৫৬৬৫।
০২. আহলে হাদীসদের মহাগুরু শায়খ নাসীর উদ্দীন আলবানী(১৪২০) বলেন-
(3/ 135 سلسلة الأحاديث الصحيحة وشيء من فقهها وفوائدها)
1144 -” يطلع الله تبارك وتعالى إلى خلقه ليلة النصف من شعبان، فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن “.
حديث صحيح، روي عن جماعة من الصحابة من طرق مختلفة يشد بعضها بعضا وهم معاذ ابن جبل وأبو ثعلبة الخشني وعبد الله بن عمرو وأبي موسى الأشعري وأبي هريرة وأبي بكر الصديق وعوف ابن مالك وعائشة.
উক্ত হাদীসটি সহীহ, যা সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এর এক বড় জামাত বর্ণনা করেছেন এবং একটি হাদীস অন্য হাদীস এর সনদকে আরো মজবুত করে তুলে। সাহাবীদের থেকে বর্ণনাকারীগণ হলেন (০১) হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) (০২) আবূ সালাবা আল খাসানী (রা.) (০৩) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (০৪) আবূ মূসা আল আশআরী (রা.) (০৫) আবূ হুরায়রা (রা.) (০৬) আবূ বকর সিদ্দীক (রা.) (০৭) আউফ ইবনে মালেক (রা.) (০৮) হযরত আয়েশা (রা.)। সিলসিলাতুস সহীহা-৩/১৩৫, হাদীস-১১৪৪।
০৩. আল্লামা মুনজেরী (রহ.-৬৫৬) বলেন উক্ত হাদীসটি সহীহ। আত তারগীব ওয়াত তারহীব-২/৭৩, হাদীস-১৫৪৬।
০৪. আল্লামা হায়সামী (রহ.-৮০৭) বলেন-
مجمع الزوائد ومنبع الفوائد 65/8)
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ وَالْأَوْسَطِ وَرِجَالُهُمَا ثِقَاتٌ.
উক্ত হাদীসটি ইমাম তাবরানী তার মুজামুল কাবীর ও আওসাতে সংকলন করেছেন, এবং সংকলিত হাদীস এর সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। মাজমাওজ যাওয়েদ-৮/৬৫, হাদীস-১২৯৬০।
০২. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) এর হাদীস-
مسند أحمد (6/ 197)
6642 – حدثنا حسن حدثنا ابن لَهِيعة حدثنا حييُّ بن عبد الله عن أبي عبد الرحمن الحُبُلّي عن عبد الله بن عمرو، أن رسول الله -صلي الله عليه وسلم – قال: “يطَّلعُ الله عَزَّ وَجَلَّ إلي خلقه ليلةَ النصف من شعبان، فيغفر لعباده، إلا لاثنين: مشاحنٍ، وقاتِلِ نفسٍ”.
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ১৫ই শা’বানের রাত্রে আল্লাহ পাক তার বান্দাদের ক্ষমা করে দেন দুই ব্যক্তি ছাড়া। এক. পরশ্রীকাতর। দুই. অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যাকারী।
মুসনাদে আহমদ-৬/১৯৭, হাদীস-৬৬৪২, মাজমাউস জাওয়ায়েদ-৮/৬৫, হাদীস-১২৯৬১, আত তারগীব ওয়াত তারহীব লিল মুনজেরী-৩/৩০৮, হাদীস-৪৮৯২। ইত্যাদি অসংখ্য কিতাব..।
হাদীসটির মান :
উক্ত হাদীসটি হাসান তথা প্রমাণযোগ্য।
হাদীস এর সূত্রের মাঝে একজন বর্ণনাকারী হলেন ‘‘ইবনে লাহিয়া’’ কতক ইমাম তার সিকাহ বা নির্ভর হওয়ার বিষয়ে দ্বিমত পোশন করেছেন কিন্তু সঠিক সমাধান আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.), ইমাম আবূ হাফস ওমর ইবনে শাহিন (রহ.), আহমদ ইবনে সালেহ আল মিসরী, তাকে সিকাহ বা নির্ভরযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে ওহাব আল মিসরী বলেন-الصادق البار ইমাম আব্দুর রহমান ইবনে ইউসূফ ইবনে খেরাশ (রহ.) বলেন-يكتب حديثه হফেজ যাহাবী (রহ.) বলেন-ذكره في الكاشف ، وقال : العمل على تضعيف حديثه আর আল্লামা হায়সামী (রহ.) বলেন-رَوَاهُ أَحْمَدُ، وَفِيهِ ابْنُ لَهِيعَةَ وَهُوَ لَيِّنُ الْحَدِيثِ، وَبَقِيَّةُ رِجَالِهِ وُثِّقُوا. অন্যত্র আল্লামা হায়সামী (রহ.) তার সূত্রে বর্ণিত হাদীসকে হাসান বলে মন্তব্য করেছেন। নিন্মে তার দুটি দৃষ্টান্ত দেয়া হলো।
০১. নং হাদীস-
مجمع الزوائد ومنبع الفوائد (1/ 53)
163 – «وَعَنْ جَابِرٍ – رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ – قَالَ: أَمَرَ النَّبِيُّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – سُحَيْمًا أَنْ يُؤَذِّنَ فِي النَّاسِ أَنْ ” لَا يَدْخُلَ الْجَنَّةَ إِلَّا مُؤْمِنٌ» “.
رَوَاهُ أَحْمَدُ، وَفِيهِ ابْنُ لَهِيعَةَ، وَإِسْنَادُهُ حَسَنٌ.
০২. নং হাদীস-
مجمع الزوائد ومنبع الفوائد (1/ 155)
702 – وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْحَارِثِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – قَالَ: ” «لَوَدِدْتُ أَنَّ بَيْنِي وَبَيْنَ أَهْلِ نَجْرَانَ حِجَابًا مِنْ شِدَّةِ مَا كَانُوا يُجَادِلُونَهُ» “.
رَوَاهُ الْبَزَّارُ وَالطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ، وَفِيهِ ابْنُ لَهِيعَةَ، وَحَدِيثُهُ حَسَنٌ.
এছাড়াও ইমাম মুসলিম (রহ.) তার সহীহ মুসলিমে ‘‘ইববে লাহিয়ার’ সনদে বর্ণিত হাদীসকে উল্লেখ করছেন-
صحيح مسلم (1/ 435)
197 – (624) حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ سَوَّادٍ الْعَامِرِيُّ، وَمُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ الْمُرَادِيُّ، وَأَحْمَدُ بْنُ عِيسَى، وَأَلْفَاظُهُمْ مُتَقَارِبَةٌ، قَالَ عَمْرٌو: أَخْبَرَنَا، وَقَالَ الْآخَرَانِ: حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي عَمْرُو بْنُ الْحَارِثِ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي حَبِيبٍ، أَنَّ مُوسَى بْنَ سَعْدٍ الْأَنْصَارِيَّ، حَدَّثَهُ عَنْ حَفْصِ بْنِ عُبَيْدِ اللهِ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّهُ قَالَ: ” صَلَّى لَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْعَصْرَ، فَلَمَّا انْصَرَفَ أَتَاهُ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سَلَمَةَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّا نُرِيدُ أَنْ نَنْحَرَ جَزُورًا لَنَا، وَنَحْنُ نُحِبُّ أَنْ تَحْضُرَهَا “، قَالَ: «نَعَمْ، فَانْطَلَقَ وَانْطَلَقْنَا مَعَهُ، فَوَجَدْنَا الْجَزُورَ لَمْ تُنْحَرْ، فَنُحِرَتْ، ثُمَّ قُطِّعَتْ، ثُمَّ طُبِخَ مِنْهَا، ثُمَّ أَكَلْنَا قَبْلَ أَنْ تَغِيبَ الشَّمْسُ» وقَالَ الْمُرَادِيُّ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، عَنِ ابْنِ لَهِيعَةَ، وَعَمْرِو بْنِ الْحَارِثِ فِي هَذَا الْحَدِيثِ
উক্ত হাদীসটিকে উল্লেখ করেছেন। (আর মুসলিম এর সকল হাদীস সহীহ তার মাঝে কোন সন্দেহ নেই) অতঃপর ইমাম মুসলিম (রহ.) নিজ উস্তাদ আল্লামা মুরাদী (রহ.-২৪৮) এর উক্তি উল্লেখ করেছেন যে, তিনি বলেন নিন্ম হাদীসটি আমি শুনেছি ইবনে ওহাব থেকে, তিনি ‘‘ইবনে লাহিয়া’’ থেকে, তিনি আমর ইবনে হারেস থেকে বর্ণনা করেছেন। প্রিয় পাঠক এখন আপনি নিজেই ভেবে দেখুন “ইবনে লাহিয়া” কি প্রমাণযোগ্য কি না? সহীহ মুসলিম-১/৪৩৫, হাদীস-৬২৪।
উল্লেখিত হাদিস দ্বয় জানা গেলো যে, এই রাতে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদেরকে বিশেষ ভাবে ক্ষমা করে থাকেন। এছাড়াও আরে অসংখ্য সহীহ্, হাসান ও যয়িফ হাদিস রয়েছে যেগুলোর দ্বারা এই রাতের মর্যাদা প্রকাশিত হয়।
কুরআনের আলোকে শবে বরাত ও তাঁর ফজিলত
______________________________________
(ক) শবে বরাত যে এক মহাগুরুত্বপূর্ণ রজনী তার দলীল কোরআন থেকে-
প্রথমত একটি বিষয় জানা প্রয়োজন যে, আমরা কসম করে থাকি মহান সত্ত্বা আল্লাহর নামে, আর সেই আল্লাহ নিজেই যদি তার কোন সৃষ্টিকে নিয়ে কসম করে, তাহলে তার মহত্ব কেমন হতে পারে?
আহলে হাদীস ভাইদের নয়নের শিরোমণী শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.) বলেন-
مجموع الفتاوى (1/ 290)
فَإِنَّ اللَّهَ يُقْسِمُ بِمَا يُقْسِمُ بِهِ مِنْ مَخْلُوقَاتِهِ لِأَنَّهَا آيَاتُهُ وَمَخْلُوقَاتُهُ. فَهِيَ دَلِيلٌ عَلَى رُبُوبِيَّتِهِ وَأُلُوهِيَّتِهِ وَوَحْدَانِيِّتِهِ وَعِلْمِهِ وَقُدْرَتِهِ وَمَشِيئَتِهِ وَرَحْمَتِهِ وَحِكْمَتِهِ وَعَظْمَتِهِ وَعِزَّتِهِ فَهُوَ سُبْحَانَهُ يُقْسِمُ بِهَا لِأَنَّ إقْسَامَهُ بِهَا تَعْظِيمٌ لَهُ سُبْحَانَهُ.
….মহান আল্লাহ তার সৃষ্টির কোন কিছু নিয়ে কসম করা, তা ঐ জিনিষের মহান গুরুত্ব সন্মান ইত্যাদির উপর বুঝায়….। মাজমুউল ফাতাওয়া-১/২৯০।
এখন দেখুন মহান আল্লাহ নিজেই পবিত্র কোরআনে শবে বরাত নিয়ে কসম করেছেন-
وقال العلامة الجرجاني رحمه الله (المتوفى: 471هـ) فى درج الدرر في تفسير الآي والسور (2/ 709)
2 – {وَلَيالٍ عَشْرٍ:} الظّاهر أنّهنّ ليالي (4) الأيام المعلومات، (5) ويجوز أن يكون المراد بهنّ ليلة الجائزة، وهي ليلة الفطر، وليلة المزدلفة، وهي ليلتا النّحر، وليالي منى، وهي ثلاث، وليلة النّصف من شعبان، وهي ليلة البراءة، وأربع ليال في العشر الأواخر من شهر رمضان اللّواتي إحداهن ليلة القدر.
(5) ينظر: تفسير ابن أبي حاتم (19233) عن ابن عباس، وتفسير الثعلبي 10/ 191، وتفسير السمعاني 6/ 217، والكشاف 4/ 749.
অর্থাৎ : পবিত্র কোরআনের সূরায়ে আল ফজরের শুরুতেই মহান আল্লাহ বলেন-শপথ দশ রাত্রির, উক্ত দশ রাত্রি সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে, কিন্তু আল্লামা জুরযানী (রহ.) বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ঐ সব রাত্রি যাতে পুরুস্কার ঘোষনা করা হয়েছে যেমন ….. শবে বরাত..। দারজুদ দুরার-২/৭০৯।
উল্লেখ যে উক্ত দশ রাত্রির ব্যাখ্যায় কোন কোন মুফাসসের বলেন, যিলহজের দশ রাত্রি, আবার কেউ বা বলেন, মাহে রমজানের শেষ দশ রাত্রি ইত্যাদি বিভিন্ন মতামত রয়েছে।
বিখ্যাত তাবেয়ী মাসরুককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল-
مصنف عبد الرزاق الصنعاني (4/ 376)
8120 – عَنْ مَعْمَرٍ، عَنِ الْأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي الضُّحَى قَالَ: سُئِلَ مَسْرُوقٌ عَنِ {الْفَجْرِ وَلَيَالٍ عَشْرٍ} [الفجر: 2] قَالَ: «هِيَ أَفْضَلُ أَيَّامِ السَّنَةِ»
{الْفَجْرِ وَلَيَالٍ عَشْرٍ}
এই আয়াত দ্বারা কি উদ্দেশ্য? তিনি বললেন বছরের সব উত্তম রাত্রিগুলো উদ্দেশ্য। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৪/৩৭৬, হাদীস-৮১২০। আর শবে বরাত বছরের একটি উত্তম রজনী তা আমরা হাদীস দ্বারা আলোচনা করেছি।
(খ) মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে আরোও বলেন-
تفسير ابن كثير (7/ 225)
حم (1) وَالْكِتابِ الْمُبِينِ (2) إِنَّا أَنْزَلْناهُ فِي لَيْلَةٍ مُبارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ (3) فِيها يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ (4)…………. إِنَّهَا لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ كَمَا رُوِيَ عَنْ عِكْرِمَةَ الخ
হা-মীম, শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, আমি একে নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। সূরা আদ দুখান-১-৪।
উক্ত আয়াতে ‘‘বরকতময় রাত’’ নিয়ে মুফাসিরদের মাঝে মতানক্য রয়েছে, কেউ বলেন, সেই রাত্রি হলো লাইলাতুল কদর আবার কেউ বা বলেন, শবে বরাত। কিন্তু লাইতালুল কদর এটি অধিক গ্রহণযোগ্য মত। তাফসীরে ইবনে কাসীর-৭/২২৫। আর এই ব্যাখ্যা আহলে হাদীসদের নয়নের শিরোমনি আব্দুর রহমান মুবারকপুরীও বলেছেন। (তুহফাতুল আহওয়াযী:৩/৩৬৭)
সারকথা হলো, পবিত্র কোরআনের ব্যাখ্যাবিদগণ কোন না কোন ভাবে পবিত্র কোরআন থেকেও শবে বরাতের দিকে ইংঙ্গিত দেয়ার চেষ্টা করেছেন। যা তার মহত্বের প্রতি ইংঙ্গিত বহন করে।
জয়িফ হাদিস আমল যোগ্য
____________________
০১.সুফিয়ান বিন উয়াইনা রহ. (মৃ: ১৯৮ হি.)
¤ হাদীস শাস্ত্রের বিখ্যাত ইমাম সুফিয়ান বিন উয়াইনা (রহ.) জইফ হাদীসের ব্যাপারে তার নিজস্ব উক্তি এভাবে ব্যক্ত করেন যে, ইয়াহইয়া ইবনুল মুগিরা বলেন- আমি একবার সুফিয়ান বিন উয়াইনা (রহ.) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন যে, তোমরা সুন্নতের (বিধান সম্পর্কীয়) বিষয়ে বাকিয়াহ হতে কোন কিছু গ্রহণ করো না। তবে তা যদি সওয়াব পাওয়া না পাওয়া বিষয়ক হয় তাহলে কোন সমস্যা নেই। (খুলাসাহ-৯, আল কিফায়াহ-১/১৩৪)
০২.ইয়াহইয়া বিন মাঈন (রহ.) (মৃ:২৩৩ হি.)
¤ হাদীস শাস্ত্রে কঠোর নীতি সম্পন্ন ইমাম হিসেবে খ্যাত ইমাম ইয়াহইয়া বিন মাঈন (রহ.) বিভিন্ন জইফ রাবি সম্পর্কে তার নীতি বর্ণনা করতে গিয়ে শায়েখ আলি বিন নায়েফ (রহ.) বলেন: ইয়াহইয়া বিন মাঈন রহ. সম্পর্কে উল্লেখ করা হয় যে, তিনি আহকাম, মাগাযি, রাকায়িক ইত্যাদির বিষয়ে কোন পার্থক্য করেন না। অর্থাৎ কোন ক্ষেত্রেই যইফ হাদীস কবুল করেন না। এই কথাটি প্রত্যাখ্যাত হয়ে যায় তার অন্যান্য উক্তি দ্বারা। * যেমন তিনি নাজিহ আবু মা’শার মাদানী সিন্ধি সম্পর্কে বলেন: ﻫﻮﺿﻌﻴﻒ، ﻳﻜﺘﺐ ﻣﻦ ﺣﺪﻳﺜﻪ ﺍﻟﺮﻗﺎﻕ সে যইফ রাবি তবে রিকাকের হাদীস তার থেকে নেয়া যাবে। * তিনি ইদ্রিস বিন সিনান সম্পর্কে বলেন, তার থেকে রিকাকের হাদীস নেয়া যাবে।(সিয়ারু আ’লামিন নুবালা-৩/৩২৫) * মুসা বিন ওবায়দা রবাযী সম্পর্কে বলেন, সে যইফ রাবি। তবে রিকাকের হাদীস তার থেকে নেয়া যাবে (আল-কামেল-১/৩৬৬) * জিয়াদ আল-বাকাই সম্পর্কে বলেন, বিশেষ করে মাগাযির ক্ষেত্রে তাকে নিয়ে কোন সমস্যা নেই। অন্যান্য ক্ষেত্রে তার থেকে হাদীস নেয়া যাবে না। (খুলাসাহ-২৫)
০৩. হাফেজ ইবনে আবদুল বার রহ.(মৃ:৪৬৩ হি.)
¤ মালেকী মাজহাবের মুখপাত্র হাফেজ ইবনে আবদুল বার রহ. যইফ হাদিস সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন: >>ফযীলতের হাদিসের জন্য ওই পর্যায়ের রাবি দরকার নেই যে পর্যায়ের রাবি আহকামের হাদিসগুলর ক্ষেত্রে দরকার (খুলাসাহ-১ ৬, হুকমুল আ’মালি বিল আহাদিসিয যইফা-৯)
০৪.আল্লামা ইবনে হাযম রহ.(মৃ:৫৫৬ হি.)
¤ যার ব্যাপারে একথার জোর দাবি করা হয় যে, তিনি যইফ হাদিস একদম কবুল করতেন না। তার সম্পর্কে শায়েখ আলি বিন নায়েফ আশ- শাহুদ রহ. বলেন:>> ইমাম ইবনে হাযম সম্পর্কে বলা হয় যে, তিনি যইফ হাদিস মোটেও মানেন না, এই কথাটা তার বক্তব্য দ্বারাই বাতিল হয়ে যায়। কারন তিনি বিতর নামাজে কুনুতের হাদিস উল্লেখ করে বলেন ‘কুনুত’ আল্লাহর জিকির এবং দুয়া। তাই আমরা তা পছন্দ করি। অথচ এই আসারটা ( ﺍﻻﺛﺮ ) যদিও দলিল যোগ্য নয়, কিন্তু এবিষয়ে রাসুল (স) থেকে আর কিছু পাওয়া যায় নি। ওঁদিকে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ) বলেন জইফ হাদিস আমার নিকট উত্তম, কিয়াস বা যুক্তি থেকে। আলি ইবনে হাযম রহ. বলেন আমরা একথাই গ্রহন করেছি। যদি ও হযরত ওমর (রা) হতে ভিন্ন কুনুত বর্ণিত হয়েছে। তবে আমাদের নিকট মুসনাদটাই উত্তম (খুলাসাহ-২৫,মুহাল্লা-৪/১৪৮)
০৫. ইবনে তাইমিয়া (মৃ:৭২৮ হি.)
¤ অষ্টম শতাব্দীর প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ, বাতিল বিরোধী ইবনে তাইমিয়া যার ব্যাপারে জইফ হাদিস কবুল না করার বিশোধগার সর্বজন বিদিত। তিনিও বজ্র কণ্ঠে স্বীয় মতকে এভাবে ব্যাক্ত করেছেন: >>আর ইসরাইলিয়াত বা এজাতীয় কোন বিষয়ের বর্ণনার ক্ষেত্রে রাবি যদি মিথ্যুক পর্যায়ে না হয় তাহলে তারগিব বা তারহিব জাতীয় বিষয়ে তাদের বর্ণনা গ্রহনযোগ্য। এবং তিনি আরো বলেন- যদি কোন মুস্তাহাব আমলের ফজিলত বা সওয়াব পাওয়া বা কোন অপছন্দনীয় আমলের অসঙ্গতি বা তার পরিণতি বিষয়ক কোন হাদিস বর্ণিত হয়, আর একথাও কোনভাবে জানা না যায় যে, সংশ্লিষ্ট হাদিসটি জাল, তাহলে উক্ত হাদিস মোতাবেক আমল করতে কোন সমস্যা নেই (মাজমু আতুল ফাতাওয়া-১/৭৬, খুলাসাহ-২৭)
এ ছাড়াও আরও অনেক যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসে কেরাম জইফ হাদিসকে গ্রহন করেছেন।
শবে বারতের আমলসমূহ
___________________
১/ শবে বারতের এক নাম্বার আমল_ এই রাত্রিতে নফল নামাজ আদায় করা এবং নামাজ গুলো ধীরস্বভাবে আদায় করা কিয়াম লম্বা হওয়া রুকু লম্বা হওয়া সিজদাহ্ গুলো লম্বা হওয়া। যেমন হাদিস শরীফে এসেছে আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন _
হযরত আয়েশা (রা.) এর হাদীস-
شعب الإيمان (5/ 361)
3554 – أَخْبَرَنَا أَبُو نَصْرِ بْنُ قَتَادَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو مَنْصُورٍ مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ الْأَزْهَرِيِّ الْهَرَوِيُّ، حَدَّثَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ إِدْرِيسَ، حَدَّثَنَا أَبُو عُبَيْدِ اللهِ ابْنُ أَخِي ابْنِ وَهْبٍ، حَدَّثَنَا عَمِّي، حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ صَالِحٍ، عَنِ الْعَلَاءِ بْنِ الْحَارِثِ، أَنَّ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ اللَّيْلِ يُصَلِّي فَأَطَالَ السُّجُودَ حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ قَدْ قُبِضَ، فَلَمَّا رَأَيْتُ ذَلِكَ قُمْتُ حَتَّى حَرَّكْتُ إِبْهَامَهُ فَتَحَرَّكَ، فَرَجَعْتُ، فَلَمَّا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ السُّجُودِ، وَفَرَغَ مِنْ صَلَاتِهِ، قَالَ: ” يَا عَائِشَةُ أَوْ يَا حُمَيْرَاءُ ظَنَنْتِ أَنَّ النَّبِيَّ خَاسَ بِكِ؟ “، قُلْتُ: لَا وَاللهِ يَا رَسُولَ اللهِ وَلَكِنِّي ظَنَنْتُ أَنَّكَ قُبِضْتَ لِطُولِ سُجُودِكَ، فَقَالَ: ” أَتَدْرِينَ أَيَّ لَيْلَةٍ هَذِهِ؟ “، قُلْتُ: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: ” هَذِهِ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَطْلُعُ عَلَى عِبَادِهِ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِلْمُسْتَغْفِرِينَ، وَيَرْحَمُ الْمُسْتَرْحِمِينَ، وَيُؤَخِّرُ أَهْلَ الْحِقْدِ كَمَا هُمْ “
অর্থ : হযরত আ’লা ইবনুল হারিছ (রাহ.) থেকে বর্ণিত, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাযে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যে, আমার আশঙ্কা হল, তাঁর হয়তো ইন্তেকাল হয়ে গেছে। আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়েশা! অথবা বলেছেন, ও হুমায়রা! তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না। নবীজী জিজ্ঞাসা বললেন, তুমি কি জান এটা কোন্ রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি তখন বললেন, এটা হল অর্ধ শা’বানের রাত। (শা’বানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত)। আল্লাহ তাআলা অর্ধ শা’বানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি প্রদান করেন, ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই। শুআবুল ঈমান, বায়হাকী-৫/৩৬১, হাদীস-৩৫৫৪, জমউল জাওয়ামি-১/১৮৫, আততারগীব ওয়াত তারহীব লিল মুনজেরী-২/২৪২।
হাদীসটির মান :
ইমাম বায়হাকী নিজেই উক্ত হাদীস উল্লেখ করে বলেন-
قُلْتُ: هَذَا مُرْسَلٌ جَيِّدٌ وَيُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ الْعَلَاء بْنُ الْحَارِثِ أَخَذَهُ مِنْ مَكْحُولٍ وَاللهُ أَعْلَمُ،
অর্থাৎ : উক্ত হাদীসটি (মুরসাল) সনদ অনেক উত্তম। অতএব হাদীসটি প্রমাণযোগ্য।
উল্লেখ্য যে কিছু কিছু ইমাম বলেছেন মুরসাল হাদীস প্রমাণযোগ্য নয়, তার সাথে আমাদের সালাফী ভাইগনও সুর মিলিয়ে হানাফীদের দলীলযোগ্য অনেক হাদীস এর ক্ষেত্রে আপত্তি উঠাতে চায়। যেমন উক্ত হাদীস এর ক্ষেত্রেও তারা বলে হাদীসটি মুরসাল তাই প্রমাণযোগ্য নয়?
জবাব : ০১ : ইমাম বায়হাকী (রহ.) বলেন উক্ত হাদীসটি মুরসাল কি না? তার মাঝেও সন্দেহ আছে। কেননা উক্ত হাদীস এর সূত্রে থাকা বর্ণনাকারী ‘আলা ইবনে হারেস’ যদি ‘‘মাকহুল’’ থেকে উক্ত হাদীস শুনে থাকে তাহলে হাদীসটি মুরসাল না। আর যদি না শুনে থাকেন তাহলে মুরসাল। শুআবুল ঈমান, বায়হাকী-৫/৩৬১, হাদীস-৩৫৫৪।
জবাব : ০২ : আহলে হাদীস ভাইদের অনেক ইমামগণ, বিশেষ করে শায়খ আলবানী ও বর্তমানে কথিত শায়খ মতিউর রহমান মাদানীসহ আরো অনেকেই যখন নিজ মতবাদের দলীল পেশ করতে গিয়ে মুরসাল হাদীস আসে, তখন তাদের মুখ থেকে শুনা যায় যে উক্ত হাদীসটি প্রমাণযোগ্য। কেননা ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) সহ আরো কতক ইমাম মুরসাল হাদীসকে প্রমাণযোগ্য বলেছেন।
দেখুন তার একটি দৃষ্টান্ত বুকের উপর হাত বাঁধার বিষয় নিয়ে-
سنن أبي داود (1/ 201)
759 – حَدَّثَنَا أَبُو تَوْبَةَ، حَدَّثَنَا الْهَيْثَمُ يَعْنِي ابْنَ حُمَيْدٍ، عَنْ ثَوْرٍ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ مُوسَى، عَنْ طَاوُسٍ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «يَضَعُ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى يَدِهِ الْيُسْرَى، ثُمَّ يَشُدُّ بَيْنَهُمَا عَلَى صَدْرِهِ وَهُوَ فِي الصَّلَاةِ»
_________
[حكم الألباني] : صحيح
হযরত তাউস (রহ.) রাসূল (সা.) এর থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় তিনি ডান হাতকে বাপ হাতের উপর রেখে, তার বুকের উপর মজবুত করে বাঁধতেন, আর তখন তিনি নামাযে ছিলেন। আবূ দাউদ-১/২০১, হাদীস-৭৫৯।
উক্ত হাদীসটি সর্ব সম্মত ভাবে মুরসাল তারপরও হাদীসটিকে শায়খ আলবানী নিজেও সহীহ বলেছেন।
এখন বলুন আহলে হাদীস ভাইগণ উল্লেখিত মুরসাল হাদীস বা হানাফীদের প্রমাণের জন্য অন্য অন্য মুরসাল হাদীস সম্পর্কে কি বলবেন? বলারতো কিছু নেই আসুন, এই সব দৃষ্টান্ত থেকে নিজের দিলকে হাসাদ মুক্ত করুন। আর ঈমানকে বিদ্বেষ থেকে মুক্ত করুন।
২/ শবে বারতের দুই নাম্বার আমল_ তাওবা ইস্তেগফার করা, নিজের গুনাহের জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। হাদিস শরীফে এসেছে হযরত আবু সা’লাবা (রাঃ) বর্ণনা করেন_
হযরত আবূ সা’লাবা (রা.) এর হাদীস-
شعب الإيمان (5/ 359)
3551 – أَخْبَرَنَا أَبُو طَاهِرٍ الْفَقِيهُ، أَخْبَرَنَا أَبُو حَامِدِ بْنُ بِلَالٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ الْأَحْمَسِيُ، حَدَّثَنَا الْمُحَارِبِيُّ، عَنِ الْأَحْوَصِ بْنِ حَكِيمٍ، عَنِ الْمُهَاصِرِ بْنِ حَبِيبٍ، عَنِ مَكْحُولٍ، عَنْ أَبِي ثَعْلَبَةَ الْخُشَنِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: ” إِذَا كَانَ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ اطَّلَعَ اللهُ إِلَى خَلْقِهِ فَيَغْفِرُ لِلْمُؤْمِنِ، وَيُمْلِي لِلْكَافِرِينَ، وَيَدَعُ أَهْلَ الْحِقْدِ بِحِقْدِهِمْ حَتَّى يَدَعُوهُ “
অর্থ : হযরত আবূ সা’লাবা (রা.) বলেন : রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ১৫ই শা’বানের রাতে আল্লাহ পাক বান্দাদের দিকে মনোনিবেশ করেন এবং মু’মিন বান্দাদের ক্ষমা করে দেন। অপরদিকে পরস্পর হিংসা বিদ্বেষপোষণকারীদের আপন অবস্থায় ছেড়ে দেন। অর্থাৎ যতক্ষণ না তারা তা থেকে বিরত হয়ে তওবা করতঃ ক্ষমা প্রার্থনা করে। শোয়াবুল ঈমান-৫/৩৫৯, হাদীস-৩৫৫১, কিতাবুস সুন্নাহ-১/২২৩, হাদীস-৫১১, আসসিলসিলাতুস সহীহাহ-৩/১৩৬, হাদীস-১১৪৪, আল মুজামুল কাবীর লিত তাবরানী-২০/২২৩, হাদীস-৫৯০, আন নুযুল দি দারে কুতনী-১৫৯, হাদীস-৭৮ ইত্যাদি অসংখ্য কিতাবে হাদীসটি উল্লেখ রয়েছে।
হাদীসটির মান :
উক্ত হাদীসটি তার সমর্থিত বর্ণনার কারণে হাসান তথা প্রমাণযোগ্য।
উল্লেখ্য যে উক্ত হাদীস এর সূত্রে একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন, ‘‘আহওয়াস ইবনে হাকীম’’ যার সিকাহ ও নির্ভর হওয়ার বিষয়ে জারাহ ও তাদিলের ইমামগণের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। কিন্তু সঠিক সমাধান হলো যা ইমাম দারে কুতনী বলেছেন-
وفيه الأحوص بن حكيم وهو ضعيف “انتهى
والأحوص بن حكيم: القول فيه قول الدارقطني:” يعتبر به إذا حدث عن ثقة “انتهى [التهذيب:1/168]، فمثله يحتج به في باب المتابعات والشواهد.
অর্থ : ‘‘আহওয়াস ইবনে হাকীম’’ যখন কোন নির্ভর বর্ণনাকারী থেকে বর্ণনা করেন, তখন তা গ্রহণযোগ্য আর ঐ ধরনের বর্ণনাগুলোর সমর্থিত বর্ণনা পাওয়া গেলে তা প্রমাণযোগ্য হয়ে থাকে। আত তাহযীব-১/১৬৮।
এখানে ইমাম দারে কুতনী (রহ.) এর সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ভাবে পাওয়া গিয়েছে তাই ‘‘আহওয়াস ইবনে হাকীম’’ এর মত বর্ণনাকারী থাকলেও হাদীসটি হাসান তথা প্রমাণযোগ্য হতে কোন বাঁধা বাকি রইলো না।
এছাড়াও ইমাম আহমদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল ইজলী (রহ.) তার সম্পর্কে বলেন-لا بأس به তার মাঝে কোন সমস্যা নেই, ইমাম সুফইয়ান ইবনে উয়াইনা বলেন-ثقة সে নির্ভরযোগ্য, ইমাম বুখারী (রহ.) এর উস্তাদ আলী ইবনে মাদীনি বলেন-صالح ، ومرة : ثقة সে সৎ আর কখনো বলতেন সে নির্ভরযোগ্য, ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আম্মার আল মাওসেলী (রহ.) বলেন-صالح সে সৎ।
৩/ শবে বারতের তিন নাম্বাট আমল- শবে বারতের আগের দিন থেকে পরের দিন পর্যন্ত তিন দিন রোজা রাখ। যেমন হাদিস শরীফে এসেছে হযরত আলী রাঃ বর্ণনা করেন_
হযরত আলী (রা.) এর হাদীস (শবে বরাতের পরদিন রোযা রাখা সম্পর্কে)।
سنن ابن ماجه (1/ 444)
1388 – حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ الْخَلَّالُ قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ قَالَ: أَنْبَأَنَا ابْنُ أَبِي سَبْرَةَ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ جَعْفَرٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، فَقُومُوا لَيْلَهَا وَصُومُوا نَهَارَهَا، فَإِنَّ اللَّهَ يَنْزِلُ فِيهَا لِغُرُوبِ الشَّمْسِ إِلَى سَمَاءِ الدُّنْيَا، فَيَقُولُ: أَلَا مِنْ مُسْتَغْفِرٍ لِي فَأَغْفِرَ لَهُ أَلَا مُسْتَرْزِقٌ فَأَرْزُقَهُ أَلَا مُبْتَلًى فَأُعَافِيَهُ أَلَا كَذَا أَلَا كَذَا، حَتَّى يَطْلُعَ الْفَجْرُ “
অর্থ : হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের ১৫তম রাত তোমাদের সম্মুখে এসে যায় তখন তোমরা সে রাতে নামায পড় এবং পরবর্তী দিনটিতে রোযা রাখ। কারণ সেদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ পাক প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং (বান্দাহদের ডেকে) বলতে থাকেন আছ কি কোন ক্ষমাপ্রার্থী যাকে আমি ক্ষমা করে দেব? আছ কি কোন রিযিক প্রার্থী যাকে আমি রিযিকের ব্যবস্থা করে দেব? আছ কি কোন বিপদগ্রস্ত যাকে আমি বিপদ মুক্ত করে দেব? এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত বলতেই থাকেন, আছ কি কেউ অমুক বস্তুর প্রার্থী? আছ কি কেউ অমুক বস্তুর প্রার্থী? (আমি যার সকল মনোস্কামনা পূর্ণ করে দেব?)-সুনানে ইবনে মাজাহ-১/৪৪৪, হাদীস-১৩৮৮, শোয়াবুল ঈমান,-৩/৩৭৮, হাদীস-৩৮২২-২৩।
উল্লেখ্য যে, শা’বানের শুরু থেকে সাতাইশ তারিখ পর্যন্ত- রোযা রাখার বিশেষ ফযীলতের কথা হাদীস শরীফে আছে।
তাছাড়া আইয়ামে বীয তথা প্রতি মাসের তেরো, চৌদ্দ ও পনেরো তারিখে রোযা রাখার ব্যাপারে হাদীস শরীফে উৎসাহিত করা হয়েছে। সেই সাথে উক্ত হাদীসটিতেও বিশেষভাবে পনেরো তারিখের রোযা রাখার নির্দেশনাও পাওয়া যায়।
অতএব বিভিন্ন সহীহ হাদীসে শা’বান মাসের রোযার সাধারণ ফযীলত এবং আইয়ামে বীযের রোযার ফযীলত উল্লেখিত হয়েছে পাশাপাশি উপরোক্ত হাদীসটিও বিদ্যমান রয়েছে তাই কেউ যদি এই সকল বিষয় বিবেচনায় রেখে পনেরো শা’বানের রোযা রাখেন তাহলে তিনি ছওয়াব পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।
৪/ শবে বারতের চতুর্থ আমল_ এই রাতে কবরস্থানে যাওয়া। যেরকম ভাবে আমার হদিস মধ্যে দেখতে পাই এই রাত্রিতে আল্লাহর রাসুল হুজরা মোবারকে ছিলেন না তারপর আম্মাজান আয়েশা রাঃ উনাকে দেখতে পান জান্নাতুল বাকীতে উনি আকাশের দিক তাকিয়ে আছেন। যেমন আম্মাজান আয়েশা রাঃ নিজেই বর্ণনা করেন_
হযরত আয়েশা (রা.) এর হাদীস-
سنن الترمذي (2/ 108)
739 – حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، قَالَ: أَخْبَرَنَا الحَجَّاجُ بْنُ أَرْطَاةَ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: فَقَدْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةً فَخَرَجْتُ، فَإِذَا هُوَ بِالبَقِيعِ، فَقَالَ: أَكُنْتِ تَخَافِينَ أَنْ يَحِيفَ اللَّهُ عَلَيْكِ وَرَسُولُهُ، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنِّي ظَنَنْتُ أَنَّكَ أَتَيْتَ بَعْضَ نِسَائِكَ، فَقَالَ: إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَنْزِلُ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَيَغْفِرُ لأَكْثَرَ مِنْ عَدَدِ شَعْرِ غَنَمِ كَلْبٍ.
অর্থ : হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, একরাতে আমি রাসূল (সা.) কে বিছানায় পেলাম না। তাই (খোজার উদ্দেশ্যে) বের হলাম। তখন দেখতে পেলাম তিনি জান্নাতুল বাকীতে আছেন। আমাকে দেখে তিনি বলে উঠলেন, তুমি কি এ আশঙ্কা করছো যে, আল্লাহ এবং তার রাসূল তোমার প্রতি অবিচার করবেন? আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধারণা করছিলাম, আপনি আপনার অন্য স্ত্রীর ঘরে তাশরীফ নিয়েছেন। রাসূল (সা.) বলেন, শা’বানের পনের তারিখ রাতে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং ‘বনু কালব’ গোত্রের ভেড়ার পশমের চেয়েও অধিক সংখ্যক লোককে মাফ করে দেন। তিরমিযী শরীফ: ১/১০৮, হাদীস-৭৩৯, ইবনে মাজা-১৩৮৫, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ-১০/৪৩৭, ৪৩৮, হাদীস-৯৯০৭, মুসনাদে আহমদ-৬/২৩৮, সিলসিলাতুস সহীহা-৩/১৩৮, হাদীস-১১৪৪।
ফায়দা : আরবের লোকেরা সাধারণতঃ বকরী পালন করে থাকত, প্রায় সকল গোত্রের লোকেরই বহু বকরীর মালিক ছিল, তম্মধ্যে ‘‘বনূ কালব’’ গোত্রের অধীনে সর্বাধিক বকরী ছিল। অত্র হাদীসে সেই ‘‘বনূ কালবের’’ সকল বকরীর গায়ের পশম অপেক্ষা অধিক পরিমাণ বান্দাহকে ক্ষমা করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
সতর্ক : তবে এই রাতে কবরস্থানে যাওয়াটা সুন্নাহ মনে করা যাবে না। কারণ পরে সাহাবায়ে কেরাম থেকে এই আমল পাওয়া যায় না। মুস্তাহাব মুস্তাহসান মনে করে করা যাবে এতে কোন সমস্যা নেই।
হাদীসটির মান :
উক্ত হাদীসটি হাসান (মুনকাতে) যা হানাফীদের নিকট প্রমাণযোগ্য। এই হাদীস এর সকল বর্ণনাকারী সিকাহ বা নির্ভরযোগ্য তার পাশাপশি তার সমর্থনে রয়েছে আরো একাধিক হাদীস।
ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ.) উক্ত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন-
المواهب اللدنية بالمنح المحمدية (3/ 300)
وصحح ابن حبان بعضها وخرجه فى صحيحه، ومن أمثلها- كما نبه عليه الحافظ ابن رجب- حديث عائشة قالت: فقدت النبى- صلى الله عليه وسلم-
অর্থাৎ : ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ.) শবে বরাত সম্পর্কে বর্ণিত কিছু হাদীসকে সহীহ বলেছেন এবং তার নিজ গ্রন্থে সংকলনও করেছেন। যেমন ইবনে রজব (রহ.) বলেন, হযরত আয়েশা (রা.) এর হাদীস। আমি একদা…….। (আল মাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ বিল মিনহীল মুহাম্মাদিয়া: ৩/৩০০)
এছাড়া ইমাম ইবনে মাজা (রহ.) তার সুনানে ইবনে মাজাতে, ইবনে আবী শাইবা তার মুছান্নাফে, ইমাম আহমদ তার মুসনাদে এছাড়া আরো অনেকেই হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কেউ হাদীসটিকে জাল বা অত্যাধিক দুর্বল বলেন নি। হাদীসটির বর্ণনাকারী ছিকাহ (বিশ্বস্ত) আর অন্য হাদীসের সহযোগিতায় হাদীসটি শক্তিশালী। এছাড়া আবু বকর (রা.) মু‘আজ বিন জাবাল (রা.) প্রমূখ প্রসিদ্ধ সাহাবী থেকে এরূপ বর্ণনা রয়েছে। সুতরাং নিঃসন্দেহে হাদীসটি হাসান ।
উল্লেখ্য যে ইমাম বুখারী (রহ.) (মুনকাতে) হাদীসকে যয়ীফ বলে থাকেন। তাই ইমাম তিরমিযী (রহ.) ও উক্ত হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম বুখারী (রহ.) এর যয়ীফ বলে মন্তব্যটি নকল করেছেন-
سنن الترمذي ت بشار (2/ 108)
وَسَمِعْتُ مُحَمَّدًا يُضَعِّفُ هَذَا الحَدِيثَ.
وقَالَ يَحْيَى بْنُ أَبِي كَثِيرٍ لَمْ يَسْمَعْ مِنْ عُرْوَةَ، وَالحَجَّاجُ بْنُ أَرْطَاةَ لَمْ يَسْمَعْ مِنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ.
তিরমিযী-২/১০৮। অতএব উক্ত ক্ষেত্রে শুধু ইমাম বুখারী (রহ.) এর কথা অনুসারে সিদ্ধান্ত হবে না। কেননা এটি মতানৈক্যধীন একটি বিষয়, যা অনেক ইমামদের নিকট গ্রহণযোগ্য। অতএব ইমাম বুখারী (রহ.) এর দোহাই দিয়ে উক্ত হাদীসকে যয়ীফ বলার সুযোগ কোথায়? যেখানে অন্য অন্য জারাহ তাদিলের ইমাম উক্ত হাদীসকে হাসান ও সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন।
উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে এ রাতের ফযীলত যেমন জানা যায় তদ্রূপ এ রাতের আমল কেমন হওয়া উচিত তাও বোঝা যায়। অর্থাৎ দীর্ঘ নামায পড়া, সেজদা দীর্ঘ হওয়া, দুআ ও ইস্তেগফার করা ইত্যাদি। মোটকথা, সহীহ হাদীস থাকা অবস্থায় শবে বরাতের ফযীলত ও গুরুত্বকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা এবং এ সংক্রান্ত সকল রেওয়ায়েতকে মওযূ বা যয়ীফ বলা যে কত বড় অন্যায়, তা তো বলাই বাহুল্য। আর যয়িফ হাদিস আমল যোগ্য তা আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক দ্বীন বুঝে আমল করা তাওফীক দান করুন। আমীন
আলোচনার সারসংক্ষেপ :-
____________________
১/ সহীহ্ হাদিসের আলোকে শবে বরাতের ফজিলত প্রমাণিত।
২/ কুরআনের আলোকে শবে বারতের ফজিলত প্রমাণিত।
৩/ শবে বারতের আমল সম্পর্কে জানা গেছে। আমল গুলো হলো_ এই রাতে দীর্ঘ নামাজ আদায় করা দীর্ঘ সেজদা হওয়া,দোয়া ইস্তেগফার যিকির আযকার করা, শবে বারতের আগে পরে তিন দিন রোজা রাখা (কেউ চাইলে আরো বেশিও রাখতে পারে), এই রাতে কবরস্থানে যাওয়া।
৪/ জয়িফ হাদিস আমল যোগ্য।
জুনায়েদ রাইসী
সদস্য – ইসলামি গবেষণা পরিষদ