শবে বরাতের তাৎপর্য ও বিরুদ্ধবাদীদের জবাব

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

بسم اللّه الرّحمن الرّحيم.

শবে বারাআত একটি ফার্সি শব্দ। শব অর্থ হল রাত এবং বারাআত অর্থ হল ভাগ্য।আরবীতে বলা হয় লাইলাতুল বারাআত। শবে বারাআত অর্থ شب جداىٔ শবে জুদায়ী شب دورى শবে দূরী شب فراق ফেরাক অর্থাৎ, বিচ্ছেদের রাত, দূরে চলে যাওয়ার রাত, পৃথক হওয়ার রাত।

(লুগাতের কিতাবসমূহ দ্রষ্টব্য)

★ নামকরণের তাৎপর্যঃ….

হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানী আল হাম্বলী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, “লাইলাতুল বারাআত নামকরণের তাৎপর্য হল এ রাতে দু’ধরনের বারাআত বা সম্পর্কচ্ছেদ হয়।অপরাধীরা আল্লাহ তা’য়ালার রহমত থেকে বঞ্চিত হয়।আর আল্লাহর অলীগণ (প্রিয়বান্দা) পার্থিব অপমান লাঞ্ছনা থেকে মুক্ত হয়ে যান।

(গুনিয়াতুত তালেবীন, পৃ. ৩৬৫)

যেহেতু এ রাতে মানুষের জন্ম মৃত্যু ও রিযিকের বার্ষিক বাজেট নির্ধারিত হয় এ অর্থে এ রাতকে ভাগ্য রজনী বলা হয়।

পারিভাষিক অর্থে শবে বারাআত বলতে বুঝায়ঃ

شب پانز ھم شعبان که دران شب ملاىٔكه بحكم الهى حساب عمر وتقسيم.

অর্থাৎ, শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত যে রাতে ফিরিশতাগণ আল্লাহ তা’য়ালার নির্দেশে মানুষের বয়স ও রিযিক বন্টন করে থাকেন।

(গিয়াসুল লুগাত দ্রষ্টব্য)

শবে বারাআতকে হাদীস শরীফে নিফসে শা’বান বলা হয়েছে। শা’বান (شعبن) শব্দটি আরবী। শা’বান নামকরণের তাৎপর্য সম্পর্কে রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ” হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “শা’বানকে এজন্য শা’বান নাম দেয়া হয়েছে।যেহেতু এ মাসে রমযানের অবধারিত কল্যাণ ও বরকত হাসিলের বিভিন্নমুখী দ্বার খুলে দেয়া হয়,আর রমযানকে রমযান নাম রাখার কারন হল এ মাসে গুনাহসমূহ জালিয়ে ভস্মিভূত করে দেয়া হয়।

(হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানী রহ. কৃতঃ গুনিয়াতুত তালেবীন, পৃ. ৪৪৫)

এ পবিত্র রজনীকে ১২ টি নামে আখ্যায়িত করা হয়। যেমন—

১. লাইলাতুল মুবারাকা বা বরকতময় রাত।

২. লাইলাতুল রহমাহ বা রহমত পাওয়ার রাত।

৩. লাইলাতুল বারাআতে বা পাপের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের রাত।

৪. লাইলাতুল চেক বা ছাড়পত্রের রাত।

৫. লাইলাতুল কিসমত বা বন্টনের রাত।

৬. লাইলাতুল তাকফীর বা গুনাহের কাফফারার রাত।

৭. লাইলাতুল ইযাবত বা দোয়া কবুলের রাত।

৮. লাইলাতুল ঈদিল মালাইকা বা ফিরিশতাদের ঈদের রাত।

৯. লাইলাতুল জায়েযা বা পুরস্কারের রাত।

১০. লাইলাতুল শাফায়া বা সুপারিশের রাত।

১১. লাইলাতুল গুফরান বা মার্জনার রাত।

১২. লাইলাতুল ইতেকেলে মিনান নীরান বা দোযখ হতে মুক্তির রাত।

(ফতোয়ায়ে দারুস সুন্নাত,পৃ. ১৪৭)

★ আল কুরআনের আলোকে শবে বারাআতঃ

আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, “আমি একে (কুরআনকে) নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে,নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী।এ রাতে প্রত্যেকে প্রজ্ঞাময় বিষয় স্থিরকৃত হয় আমারই আদেশে।আমি (ফেরেশতাদের) প্রেরণকারী। আপনার লালনকর্তার পক্ষ থেকে রহমত স্বরূপ তিঁনি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ। (সূরা দুখান, আয়াত ৩-৬)

প্রখ্যাত সাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস,হযরত আবু হুরায়রা,হযরত ইকরামা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন) সহ বহু সংখ্যক সাহাবী এবং তাবেয়ীর মতে, লাইলাতুল মুবারাকা দ্বারা চৌদ্দ শা’বান দিবাগত রাত বা শবে বারাআত বুঝানো হয়েছে যেমন—

قال ابن عبّاس رضى اللّه عنهما حٓمٓ يعنى قضى اللّه ماهو كاىٔنٌ الى يوم القيا مة والكتاب المبين يعنى القران فى ليلة مبركة هى ليلة النصف من شعبان وهى ليلة البرأة.

অর্থাৎ, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু বলেন, “হামীম অর্থাৎ আল্লাহ তা’য়ালা নির্ধারণ করেছেন কিয়ামত পর্যন্ত যা ঘটবে।সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ অর্থাৎ আল কুরআন, লাইলাতুল মুবারাকা হল শা’বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত আর তা-ই ‘লাইলাতুল বারাআত।

(ইমাম জালালউদ্দীন সুয়ুতী কৃতঃ তাফসীরে দুররে মানসুর, খন্ড- ০৭, পৃ. ৪০১)

* হযরত ইকরামা (রা.) বলেন, লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা শা’বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তা’য়ালা হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালামকে ঐ রাতে প্রথম আকাশে প্রেরণ করেন যেন লিখিত কুরআন পুনরায় আবৃতি করতে পারেন।এই রাতকে মুবারক নাম রাখার কারন হল এতে রয়েছে কল্যাণ ও বরকত এতে নাযিল হয় আল্লাহর রহমত এবং এ রাতে দোয়া কবুল হয়।

(তাফসীরে কাশফুল আসরার, খন্ড- ০৯, পৃ. ৯৮)

* আল্লামা ইসমাইল হাক্কী (রহ.) বলেন, ” লাইলাতুল মুবারাকা বলা হয় কারন এ রাতে খায়ের ও বরকত নাযিল হয়।সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর সৌন্দর্যের বরকত আরশের প্রতি কণা থেকে ভূতলের গভীরে পৌছে শবে কদরের মত।

(তাফসীরে রুহুল বয়ান, খন্ড- ০৮, পৃ. ৪০১)

* হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন— এক শা’বান থেকে অপর শা’বান পর্যন্ত মানুষের হায়াত চূড়ান্ত করা হয়। এমনকি একজন মানুষ বিবাহ করে এবং তার সন্তান হয় অথচ তার নাম মৃতের তালিকায় উঠে যায়।

(তাফসীরে দুররে মানসুর, খন্ড- ০৭, পৃ. ৪০১)

হাদীস শরীফে এ রাতের যে মর্যাদা আল্লাহর রাসুলের পক্ষ থেকে ঘোষিত হয়েছে এতে এ রাত যে মুবারক তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। কুরআন মাজীদের এ আয়াত— فيها يفرق كلّ امر حكيم অর্থাৎ, এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়।” এ ঘোষনা থেকে সহজেই অনুমেয় যে, এ রাত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

★ হাদীস শরীফের আলোকে শবে বারাআত:

১. ﻋﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﺑﻦ ﻳﺨﺎﻣﺮ ﻋﻦ ﻣﻌﺎﺫ ﺑﻦ ﺟﺒﻞ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ﻳﻄﻠﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻟﻰ ﺧﻠﻘﻪ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻟﺠﻤﻴﻊ ﺧﻠﻘﻪ ﺇﻻ ﻟﻤﺸﺮﻙ ﺃﻭ ﻣﺸﺎﺣﻦ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﺣﺒﺎﻥ ﻭﻏﻴﺮﻩ ﻭﺭﺟﺎﻟﻪ ﺛﻘﺎﺕ ﻭﺇﺳﻨﺎﺩﻩ ﻣﺘﺼﻞ ﻋﻠﻰ ﻣﺬﻫﺐ ﻣﺴﻠﻢ ﺍﻟﺬﻱ ﻫﻮ ﻣﺬﻫﺐ ﺍﻟﺠﻤﻬﻮﺭ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻌﻨﻌﻦ ﻭﻟﻢ ﻳﺠﺰﻡ ﺍﻟﺬﻫﺒﻲ ﺑﺄﻥ ﻣﻜﺤﻮﻻ ﻟﻢ ﻳﻠﻖ ﻣﺎﻟﻚ ﺑﻦ ﻳﺨﺎﻣﺮ ﻛﻤﺎ ﺯﻋﻢ ﻭﺇﻧﻤﺎ ﻗﺎﻟﻪ ﻋﻠﻰ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﺤﺴﺒﺎﻥ، ﺭﺍﺟﻊ : ﺳﻴﺮ ﺃﻋﻼﻡ ﺍﻟﺒﻼﺀ .

মুআয ইবনে জাবাল রা. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘‘আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির প্রতি (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে মাফ করে দেন।’’

(সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস ৫৬৬৫)

২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন-

ﻫﺬﻩ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﻳﻄﻠﻊ ﻋﻠﻰ ﻋﺒﺎﺩﻩ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻟﻠﻤﺴﺘﻐﻔﺮﻳﻦ ﻭﻳﺮﺣﻢ ﺍﻟﻤﺴﺘﺮﺣﻤﻴﻦ ﻭﻳﺆﺧﺮ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺤﻘﺪ ﻛﻤﺎ ﻫﻢ .

‘‘এটা হল অর্ধ-শাবানের রাত। (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত।) আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’’

(-শুয়াবুল ঈমান, বাইহাকী ৩/৩৮২-৩৮৩)

৩.

ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ، ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻓَﻘَﺪْﺕُ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺫَﺍﺕَ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ، ﻓَﺨَﺮَﺟْﺖُ ﺃَﻃْﻠُﺒُﻪُ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻫُﻮَ ﺑِﺎﻟْﺒَﻘِﻴﻊِ ﺭَﺍﻓِﻊٌ ﺭَﺃْﺳَﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ . ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔُ ﺃَﻛُﻨْﺖِ ﺗَﺨَﺎﻓِﻴﻦَ ﺃَﻥْ ﻳَﺤِﻴﻒَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻚِ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟُﻪُ؟ ﻗَﺎﻟَﺖْ، ﻗَﺪْ ﻗُﻠْﺖُ : ﻭَﻣَﺎ ﺑِﻲ ﺫَﻟِﻚَ، ﻭَﻟَﻜِﻨِّﻲ ﻇَﻨَﻨْﺖُ ﺃَﻧَّﻚَ ﺃَﺗَﻴْﺖَ ﺑَﻌْﺾَ ﻧِﺴَﺎﺋِﻚَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻳَﻨْﺰِﻝُ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻓَﻴَﻐْﻔِﺮُ ﻟِﺄَﻛْﺜَﺮَ ﻣِﻦْ ﻋَﺪَﺩِ ﺷَﻌَﺮِ ﻏَﻨَﻢِ ﻛَﻠْﺐٍ

উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেনন, একরাতে আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে ঘরে পেলামনা বা তাঁর খোঁজে বের হলাম। তখন দেখলাম তিনি জান্নাতুল বাক্বী কবরস্থানে আসমানেকে মাথা মুবারক উত্তোলন করে অবস্থান করছেন। আমাকে সেখানে দেখে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন- হে আয়েশা! তুমি কি এ ভয় করছ যে, আল্লাহ তাঁর রসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম তোমার প্রতি অবিচার করবে? তিনি আরজ করলেন আপনি বলছেন, এমন কিছু আসলে আমার মনে নেই বরং; আমি ধারণা করেছি যে, আপনি আপনার কোন স্ত্রীর হুজরায় তাশরীফ নিয়েছেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন- নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা শা’বানের পনেরতম রাতে প্রথম আসমানে তাশরীফ আনেন। অতঃপর বনী ক্বলব এর মেষগুলোর লোম এর সংখ্যার চেয়েও অধিক বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।

[ইবনে মাজা শরীফ,হাদীস নং-১৩৮৯; জামে আত তিরমিযি-৭৩৯; মুসান্নাফে আবী শায়বাহ-২৯৮৫৮; মুসনাদে আহমদ-২৬০১৮,২৬০৬০]

(৪)

ﻋَﻦْ ﻋَﻠِﻲِّ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﻃَﺎﻟِﺐٍ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ” ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻟَﻴْﻠَﺔُ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ، ﻓَﻘُﻮﻣُﻮﺍ ﻟَﻴْﻠَﻬَﺎ ﻭَﺻُﻮﻣُﻮﺍ ﻧَﻬَﺎﺭَﻫَﺎ، ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳَﻨْﺰِﻝُ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻟِﻐُﺮُﻭﺏِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲِ ﺇِﻟَﻰ ﺳَﻤَﺎﺀِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ، ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ : ﺃَﻟَﺎ ﻣِﻦْ ﻣُﺴْﺘَﻐْﻔِﺮٍ ﻟِﻲ ﻓَﺄَﻏْﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﺃَﻟَﺎ ﻣُﺴْﺘَﺮْﺯِﻕٌ ﻓَﺄَﺭْﺯُﻗَﻪُ ﺃَﻟَﺎ ﻣُﺒْﺘَﻠًﻰ ﻓَﺄُﻋَﺎﻓِﻴَﻪُ ﺃَﻟَﺎ ﻛَﺬَﺍ ﺃَﻟَﺎ ﻛَﺬَﺍ، ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻄْﻠُﻊَ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮُ

হযরত আলী ইবনে আবী তালিব রাদ্বিল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি অয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,যখন শাবানের পনেরতম রাত হয়, তখন তোমরা রাতে নামাজ পড় এবং রোজা রাখ। কেননা ঐ দিন সূর্যাস্তের সময় আল্লাহ তা’আলা প্রথম আসমানে তাশরীফ এনে বান্দাদের উদ্দেশ্যে বলেন- ক্ষমা প্রার্থনাকারী কেও আছ, আমি তাকে ক্ষমা করব, রিজিক আন্বেষণকারী কেও আছ, আমি তাকে রিজিক দিব, আসুস্থ কেও আছ আমি তাকে সুস্থতা দান করব, এভাবে অন্যান্য বিষয়েও বলতে থাকেন ফজর পর্যন্ত।

[ইবনে মাজাহ ,হাদীস নং-১৩৮৮; ফাকেহী আখবারে মক্কা-১৮৩৭,৩:৮৪; বায়হাক্বী ফাজায়িলুল আওকাত-২৪; শো’আবুল ঈমান-৩৫৪২; মিশকাত শরীফ-১১৫ পৃঃ, হাদীস নং-১৩০৮]

(৫)

ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ، ﻭَﻳُﺴَﻠِّﻤُﻬَﺎ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﺭْﺑَﺎﺑِﻬَﺎ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔِ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- আল্লাহ তায়ালা শ’বানের পনেরতম রাতে সিদ্ধান্তসমুহ চুড়ান্ত করেন এবং শবে ক্বদরে তা বাস্তবায়নকারী ফেরেশতাদের সোপর্দ করেন।

[তাফসীরে খাজিন ৪র্থ খণ্ড,পৃষ্ঠাঃ১১২/১১৬; তাফসীরে বগভী আল ইহিয়ায়ুত তুরাস, ৪:১৭৪, সুরা দুখান; তাফসীরে ক্বুরতুবী, ১৬:১২৭, সুরা দুখান; ইবনে আ’দিল আল লুবাব ফি উলুমিল কিতাব-১৭:৩১১]

(৬)

ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﻗَﺎﻝَ : ” ﺧَﻤْﺲُ ﻟَﻴَﺎﻝٍ ﻟَﺎ ﺗُﺮَﺩُّ ﻓِﻴﻬِﻦَّ ﺍﻟﺪُّﻋَﺎﺀَ : ﻟَﻴْﻠَﺔُ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ، ﻭَﺃَﻭَّﻝُ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣِﻦْ ﺭَﺟَﺐٍ، ﻭَﻟَﻴْﻠَﺔُ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ، ﻭَﻟَﻴْﻠَﺘَﻲِ ﺍﻟْﻌِﻴﺪَﻳْﻦِ ”

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন এমন পাঁচটি রাত আছে যে রাতগুলোয় দু’আ ফেরত হয়না। ওইগুলো হল- জুমু’আর রাত, রজব মাসের প্রথম রাত, শ’বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত এবং দুই ঈদের রাত অর্থাৎ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাত।

[মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, কিতাবুস সিয়াম হাদীস নং-৭৯২৭; বায়হাক্বী শো’আবুল ঈমান-৩৪৪০; ফাজায়িলুল আওকাত-১৪৯]

(৭)

ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦِ ﻋَﻤْﺮٍﻭ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ : ” ﻳَﻄَّﻠِﻊُ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺇِﻟَﻰ ﺧَﻠْﻘِﻪِ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﻓَﻴَﻐْﻔِﺮُ ﻟِﻌِﺒَﺎﺩِﻩِ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﺎﺛْﻨَﻴْﻦِ : ﻣُﺸَﺎﺣِﻦٍ، ﻭَﻗَﺎﺗِﻞِ ﻧَﻔْﺲٍ

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি অয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে স্বীয় মাখলুকের প্রতি রহমতের দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। অতঃপর দু শ্রেণীর বান্দা ব্যতীত সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। তারা হল মুসলমান ভাইয়ের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ পোষণকারী এবং অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যাকারী।

[মুসনাদে আহমদ-৬৬৪২; আত তাগরীব; হায়ছামী মাজমাউজ যাওয়ায়িদ-১২৯৬১; তাফসীরে রূহুল মা’আনী, সুরা দুখান, ১৮:৪২৩/১৩:১১০]

(৮)

ﻋَﻦْ ﻋَﻄَﺎﺀِ ﺑْﻦِ ﻳَﺴَﺎﺭٍ ﻗَﺎﻝَ : ﺗُﻨْﺴَﺦُ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﺍﻟْﺂﺟَﺎﻝُ، ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞَ ﻟﻴَﺨْﺮُﺝُ ﻣُﺴَﺎﻓِﺮًﺍ، ﻭَﻗَﺪْ ﻧُﺴِﺦَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺄَﺣْﻴَﺎﺀِ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺄَﻣْﻮَﺍﺕِ، ﻭَﻳَﺘَﺰَﻭَّﺝُ ﻭَﻗَﺪْ ﻧُﺴِﺦَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺄَﺣْﻴَﺎﺀِ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺄَﻣْﻮَﺍﺕِ

আতা বিন ইয়াসার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, শা’বানের মধ্য রজনীতে (শবে বরাতে) মানুষের হায়াত পূর্ণ করা হয়। অথচ লোকটি ভ্রমণকারী হিসেবে বের হয়েছে, এমতাবস্থায় তার হায়াত পূর্ণ করা হয়েছে এবং মৃত্যু তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং বিবাহ করেছে এমতাবস্থায় তার হায়াত শেষ করা হয়েছে ও মৃত্যু তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। অর্থাৎ জীবন, মৃত্যু ইত্যাদি এ রাতে নির্ধারিত হয়।

[মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, কিতাবুস সাওম-৭৯২৫; সুয়ুতী তাফসীরে দুররে মানসুর, সুরা দুখান-৭:৪০৩]

(৯)

ﻋَﻦ ﻋِﻜْﺮِﻣَﺔ } ﻓِﻴﻬَﺎ ﻳﻔﺮﻕ ﻛﻞ ﺃَﻣﺮ ﺣَﻜِﻴﻢ { ﻗَﺎﻝَ : ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔ ﺍﻟﻨّﺼْﻒ ﻣﻦ ﺷﻌْﺒَﺎﻥ ﻳﺒﺮﻡ ﺃَﻣﺮ ﺍﻟﺴّﻨﺔ ﻭﻳﻨﺴﺦ ﺍﻟْﺄَﺣْﻴَﺎﺀ ﻣﻦ ﺍﻟْﺄَﻣْﻮَﺍﺕ ﻭَﻳﻜْﺘﺐ ﺍﻟْﺤَﺎﺝ ﻓَﻠَﺎ ﻳُﺰَﺍﺩ ﻓﻴﻬﻢ ﻭَﻟَﺎ ﻳﻨﻘﺺ ﻣِﻨْﻬُﻢ ﺃﺣﺪ

হযরত ইকরামা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি সুরা দুখানের আয়াত (এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ কাজের ফয়সালা দেওয়া হয়। আয়াত-৪)এর তাফসীরে বলেন, শাবানের মধ্য রজনীতে আল্লাহ তায়ালা পরবর্তী বছরে যে সকল ঘটনা সংগঠিত হবে (বাজেট) তা লিপিবদ্ধ করবেন যারা মৃত্যু বরণ করবে তাদের মধ্য থেকে কারো কারো হায়াত বৃদ্ধি করা হবে এবং যারা আল্লাহর পবিত্র গৃহের তাওয়াফ করবে অর্থাৎ হজ্জ্ব আদায় করবে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা হবে। অতঃপর এদের মধ্যে কোন কিছু বৃদ্ধি পাবে না এবং তাদের মধ্য হতে কমতিও হবে না।

[সুয়ুতী আদ দুররুল মান্সুর,সুরা দুখান,৭:৪০১; শিহাব উদ্দীন আলুসী রুহুল মা’আনী, সুরা দুখান,১৩:১১২/১৮:৪২৭; ইবনে জারীর তাবারী তাফসীরে ত্ববারী জামেউল বয়ান, সুরা দুখান,২২:১০; তাফসীরে সা’লাবী ৮:৩৪৯; তাফসীরে বগভী, সুরা দুখান ৪:১৭৩; তাফসীরে মাযহারী ৮:৩৬৮]

(১০)

ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﺟﺎﺀﻧﻲ ﺟﺒﺮﻳﻞ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻭﻗﺎﻝ ﻳﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺍﺭﻓﻊ ﺭﺃﺳﻚ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﻓﻘﻠﺖ ﻣﺎ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﻗﺎﻝ ﻫﺬﻩ ﻟﻴﻠﺔ ﻳﻔﺘﺢ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻴﻬﺎ ﺛﻠﺜﻤﺎﺋﺔ ﺑﺎﺏ ﻣﻦ ﺃﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺮﺣﻤﺔ ﻳﻐﻔﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﺠﻤﻴﻊ ﻣﻦ ﻻ ﻳﺸﺮﻙ ﺑﻪ ﺷﻴﺌﺎ ﺇﻻ ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﺳﺎﺣﺮﺍ ﺃﻭ ﻛﺎﻫﻨﺎ ﺃﻭ ﻣﺼﺮﺍ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺰﻧﺎ ﺃﻭ ﻣﺪﻣﻦ ﺧﻤﺮ

হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, শা’বান মাসের অর্ধ রাতে (শবে বরাতে) জিবরাইল ফেরেশতা এসে আমাকে বললেন, হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম! আকাশের দিকে মস্তক উত্তোলন করুন। আমি বললাম এ রাত্রির বৈশিষ্ট্য কি? তদুত্তরে জিবরাইল আলাইহিস সালাম বলেন, এ রাতে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তিনশ রহমতের দরজা খুলে দিয়ে থাকেন, যারা আল্লাহ্ পাকের সাথে শিরক করে না, যাদুকর নয়, গণক নয়, যেনা করেনা ও মদ পান করেনা এসব বান্দাকে আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করে দেন।

[নুজহাতুল মাজালিস ওয়া মুনতাখাবুন নাফাইস, বাব, ফাদলু শ’বান ওয়া ফাদলু সালাতুত তাসবীহ, ১:১৪৬/১:১৬১]

(১১)

ﻋَﻦ ﺭَﺍﺷﺪ ﺑﻦ ﺳﻌﺪ ﺃَﻥ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳﻠﻢ ﻗَﺎﻝَ : ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔ ﺍﻟﻨّﺼْﻒ ﻣﻦ ﺷﻌْﺒَﺎﻥ ﻳﻮﺣﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺇِﻟَﻰ ﻣﻠﻚ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕ ﺑِﻘَﺒﺾ ﻛﻞ ﻧﻔﺲ ﻳُﺮِﻳﺪ ﻗﺒﻀﻬَﺎ ﻓِﻲ ﺗِﻠْﻚَ ﺍﻟﺴّﻨﺔ

রাশিদ বিন সা’দ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নিশ্চই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, শা’বানের মধ্য রজনীতে (শবে বরাতে) আল্লাহ্ তা’য়ালা মালাকুল মওতকে এ বছরে যে সকল লোকদের রুহ কবজ করা হবে তাদের নাম অবহিত করেন।

[সুয়ুতী আদ দুররুল মানসুর, সুরা দুখান,৭:৪০১; মাজালিসাতুল দায়নুরী ৩:৩০৩; কানযুল উম্মাল-৩৫১৭৬]

শবে বারাআত-এর রোযাঃ

ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﺼُﻮﻡُ ﺷَﻬْﺮًﺍ ﺃَﻛْﺜَﺮَ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺼُﻮﻡُ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﻛُﻠَّﻪ

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম শাবান মাসের চেয়ে অধিক রোজা অন্য কোন মাসে রাখতেননা, এমনকি তিনি পুরো শাবান মাস রোজা রাখতেন।

[সহিহ বুখারী, হাদীস নং-১৯৭0, সহীহ মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম, হাদীস নং-১১৫৭]

★ রহমত থেকে বঞ্চিত হবে কারা?

৬ প্রকার ব্যক্তিকে এদিনে ক্ষমা করা হবে না, তারা হল—

(১) মদ্যপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি।

(২) মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান।

(৩) ব্যভিচারী।

(৪) আত্মীয়ের বন্ধন ছিন্নকারী।

(৫) ছবি প্রস্তুতকারী।

(৬) চোগলখোর।

(ফাযায়েলুল আওকাত কৃত ইমাম বায়হাকী, ১ম খন্ড, হাদীস নং— ২৭)

অনুরূপ, গনক,যাদুকর,অহংকার সহকারে পায়জামা অথবা লুঙ্গি পায়ের গোড়ালীর নিচে পরিধানকারী ও কোন মুসলমানের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষনকারীও এ রাতে ক্ষমার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত থাকার অঙ্গিকার রয়েছে।

★ আমাদের করণীয় কাজসমূহঃ

পবিত্র শবে বরাত পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করে পরবর্তী দিনে পবিত্র রোযা রেখে মহান আল্লাহ পাক তাঁহার ও তঁহার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সন্তুষ্টি অর্জন করা। পবিত্র শবে বরাতে কোন কোন ইবাদত- বন্দেগী করতে হবে তা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ তাঁহাদের মধ্যে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। তবে ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য তাকীদ ও নির্দেশ করা হয়েছে। যেমন-

* পবিত্র শবে বরাতের নামায পড়বে। ৪, ৮, ১২ রাকায়াত। দুই দুই রাকায়াত করে।

* পবিত্র ছলাতুত তাসবীহ এর নামায পড়বে, যার দ্বারা মানুষের গুনাহখাতা ক্ষমা হয়।

* পবিত্র তাহাজ্জুদের নামায পড়বে, যা দ্বারা মহান আল্লাহ পাক এর নৈকট্য হাছিল হয়।

* পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবে, যার দ্বারা মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।

* মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ ও দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, যার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল, হযরত মুহাম্মদ [সঃ] এর খাছ সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।

* পবিত্র যিকির-আযকার করা, যার দ্বারা দিল ইছলাহ হয়।

* কবরস্থান যিয়ারত করা, যার দ্বারা মৃত্যুর কথা স্মরণ হয় এবং পবিত্র সুন্নত আদায় হয়।

* গরিব-মিসকীনকে দান ছদকা করবে ও লোকজনদের খাদ্য খাওয়ানো।

সর্বোপরি পুরো রাত্রিই অতিবাহিত করতে হবে পবিত্র যিকির-ফিকির, তওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে। যাতে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক হযরত মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।

★ বর্জনীয় কাজসমূহঃ

(১) আতশবাজী করা হারাম। আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন ব্রেলভী (আলাইহির রাহমা) বলেন, আতশবাজী যেভাবে বিবাহ ও শবে বারাআতে প্রচলিত রয়েছে নিঃসন্দেহে তা হারাম ও সম্পূর্ণ অপরাধ।কেননা এর মাধ্যমে সম্পদ নষ্ট হয়। (ফতোয়ায়ে রযভীয়াহ, ২৩ তম খন্ড, ২৭৯ পৃ)

এর মাধ্যমে অপব্যয় হয়। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, “নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই।

(সূরা ইসরা, আয়াত নং— ২৭)

(২) অপ্রয়োজনীয় আলোকসজ্জা। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী করা যেতে পারে।

(৩) কবরস্থানে মোমবাতি জ্বালানো। তবে শর্ত সাপেক্ষে জ্বালানো যাবে। যদি কেউ কবরে কুরআন তিলাওয়াত করে কিন্তু আলো না থাকে। অথবা যিয়ারতে সমস্যা হলে জ্বালানো যাবে।

(৪) মাযার যিয়ারতের নামে শরীয়ত বিরোধী কাজ না করা।

(৫) ইবাদত না করে মাযারে মাযারে ঘুড়ে বেঁড়ানো।

সুতরাং আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে সঠিকভাবে ইবাদত করার মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করার সৌভাগ্য নসিব করুন। আমিন…

[বিহুরমাতি সাইয়্যিদিল মুরসালিন]

[লিখাটি অবিকৃত অবস্থায় কপি বা শেয়ার করার অনুমতি রইল]

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment