বাব নং ৯১. ১. রোযার ফযীলত
৬- كِتَابُ الصَّوْمِ
১- بَابُ مَا جَاءَ فِي فَضْلِ الصَّوْمِ
٢٠١- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ أَبِيْ صَالِحٍ الزَّيَّاتِ، عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : «يَقُوْلُ اللهُ تَعَالَىٰ: كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ، إِلَّا الصِّيَامَ، فَهُوَ لِيْ، وَأَنَا أَجْزِيْ بِهِ».
২০১. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আতা থেকে, তিনি আবু সালেহ যাইয়্যাত থেকে, তিনি আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, মানুষের সমস্ত আমল তার নিজের জন্য, কেবল রোযা ব্যতীত। কেননা, রোযা আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর পুরস্কার দান করবো।
(বুখারী, ১/২৫৫/১৭৮৩ ও সহীহ ইবনে খোযাইমা, ৩/১৯৬/১৮৯৬)
ব্যাখ্যা: এই হাদিসে অন্যান্য আমল ও ইবাদতের উপর রোযার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে। অন্যান্য ইবাদতে রিয়া বা লোক দেখানোর অবকাশ থাকে, ফলে ঐ ইবাদত আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হয়না। কিন্তু রোযা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাখা হয়। এতে রিয়া থাকেনা।
❏বায়হাকী শুয়াবুল ঈমান গ্রন্থে হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে মারফু হাদিস বর্ণনা করেছেন-
الصيام لارياء فيه قال الله تعالى هو لى وانا اجزى به يدع طعامه وشرابه اجلى
“রোযার মধ্যে রিয়া নেই। আল্লাহ বলেন, রোযা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো। রোযা পালনকারী আমার জন্যই পানাহার ত্যাগ করে।” ১৭৩
➥ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله), (৪৫৮ হিঃ) শুয়াবুল ঈমান, খন্ড ৩, পৃষ্ঠাঃ ২৯৯, হাদীস নং ৩৫৯৩
এছাড়া হাদিসের দ্বারা এদিকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, মানুষের আমলের প্রতিদান তার কষ্ট ও পরিশ্রমের দৃষ্টিকোণ থেকে দশ হতে সাতশগুণ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। কিন্তু রোযার প্রতিদানের কোন পরিমাণ নেই। আল্লাহ স্বীয় করুণা দ্বারা যে পরিমাণ ইচ্ছা, দান করবেন।
٢٠٢- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ إسْمَاعِيْلَ، عَنْ أَبِيْ صَالِحٍ، عَنْ أُمِّ هَانِئٍ ، قَالَتْ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : «مَا مِنْ مُؤْمِنٍ جَاعَ يَوْمًا، فَاجْتَنَبَ الْـمَحَارِمَ، وَلَـمْ يَأْكُلْ مَالَ الْـمُسْلِمِيْنَ بَاطِلًا، إِلَّا أَطْعَمَهُ اللهُ تَعَالَىٰ مِنْ ثِمَارِ الْـجَنَّةِ».
২০২. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা ইসমাঈল থেকে, তিনি আবু সালেহ থেকে, তিনি উম্মে হানী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, কোন মু‘মিন ব্যক্তি সারাদিন অভুক্ত থাকে এবং হারাম কাজ থেকে মুক্ত থাকে, অবৈধভাবে কোন মুসলমানের সম্পদ খায় না, তাহলে আল্লাহ তাকে বেহেস্তের ফল থেকে আহার করাবেন।
٢٠٣- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ الْـحِمْيَرِيِّ ، عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ، قَالَ لِرَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِهِ يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ: «مُرْ قَوْمَكَ، فَلْيَصُوْمُوْا هَذَا الْيَوْمَ»، قَالَ: «إِنَّهُمْ طَعِمُوْا»، قَالَ: قَالَ: «وَإِنْ كَانَ قَدْ طَعِمُوْا».
২০৩. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা ইব্রাহীম থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি হুমাইদ ইবনে আব্দুর রহমান হিমাইরী (رضي الله عنه) থেকে, তিনি রাসূল (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) আশুরার দিন তাঁর সাহাবীগণের মধ্যে একজনকে বললেন, তোমার স¤প্রদায়কে আজকে রোযা-রাখার নির্দেশ দাও। সাহাবী আরয করলেন, তারা তো আহার করে ফেলেছে। তখন তিনি বললেন, যদিও তারা খাবার খেয়ে থাকে। অর্থাৎ ঐ দিনের বাকী অংশে তারা কিছুই খাবে না।
ব্যাখ্যা: এই বিধান রমযানের রোযা ফরয হওয়ার পূর্বে। তখন আশুরার রোযা ফরয ছিল। রমযানের রোযা ফরয হওয়ার পর আশুরার রোযা ইচ্ছাধীন হয়ে গেল।
٢٠٤- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنِ الْـهَيْثَمِ، عَنْ مُوْسَىٰ بْنِ طَلْحَةَ، عَنِ ابْنِ الْـحَوْتَكِيَّةِ، عَنْ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ: أُتِيَ رَسُوْلُ اللهِ بِأَرْنَبٍ، فَأَمَرَ أَصْحَابَهُ، فَأَكَلُوْا، وَقَالَ لِلَّذِيْ جَاءَ بِهَا: «مَالِكَ لَا تَأْكُلْ مِنْهَا»؟ قَالَ: إِنِّيْ صَائِمٌ، قَالَ: «وَمَا صَوْمُكَ»؟ قَالَ: تَطَوُّعٌ، قَالَ: «فَهَلَّا الْبِيْضَ».
২০৪. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা (رضي الله عنه) হায়শাম থেকে, তিনি মুসা ইবনে তালহা থেকে, তিনি ইবনে হাওতাকিয়া থেকে, তিনি ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ’র খেদমতে (রান্না করা) খরগোশ পেশ করা হয়। তিনি তাঁর সাহাবাদেরকে বললেন, খাও। তখন তাঁরা খাওয়া আরম্ভ করেন। রাসূল (ﷺ) (এই খাবার নিয়ে) আগমনকারীকে বললেন, তুমি কেন খাচ্ছ না? তিনি বলেন, আমি রোযা রেখেছি। রাসূল (ﷺ) বললেন, এটা কিসের রোযা? তিনি বলেন নফল রোযা। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, আইয়্যামে বীযের রোযা কেন রাখনা?
(মুসনাদে আবী ইয়ালা, ১/১৬৬/১৮৫)
ব্যাখ্যা: এখানে কয়েকটি বিষয়ে ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে।
প্রথমত আইয়্যামে বীযের ফযীলত উপরোক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। প্রতি আরবী মাসের তের, চৌদ্দ ও পনের তারিখ হলো আইয়্যামে বীয।
দ্বিতীয়ত খরগোশের গোশত খাওয়া প্রসঙ্গে। হানাফী মাযহাবে খরগোশের গোশত খাওয়া মুবাহ।
উপরোক্ত হাদিসই এর প্রমাণ। তৃতীয়ত নফল রোযা সম্পর্কিত। এ বিষয়ে দু’টি হাদিস বর্ণিত আছে। একটি হলো সর্ব সম্মতিক্রমে ওযরের কারণে যেমন মেহমানদারী ইত্যাদির কারণে রোযা ভঙ্গ করা যাবে। বিভিন্ন হাদিসে এর প্রমাণ রয়েছে। চতুর্থ বিষয় হলো উক্ত রোযার কাযা ওয়াজিব হবে কিনা?
❏হানাফী মাযহাব অনুযায়ী এর কাযা ওয়াজিব হবে। হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) বর্ণিত হাদিস দ্বারা এর প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন, আমি এবং হযরত হাফসা (رضي الله عنه) রোযা ছিলাম। আমাদের নিকট তখন এমন কিছু খাবার এল যা আমাদের নিকট খুবই প্রিয় ছিল। আমরা তা খেয়ে ফেললাম। হযরত হাফসা (رضي الله عنه) এই ঘটনা রাসূল (ﷺ) কে বললে তিনি এই রোযার পরির্বতে অন্যদিন রোযা রাখার নির্দেশ দান করেন। আমর সাধারণত ওয়াজিবের জন্য এসে থাকে। তাই এখানেও ওয়াজিব হওয়াকেই প্রমাণ করে।
٢٠٥- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَبْدِ اللهِ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ : «إِنَّ بِلَالًا يُنَادِيْ بِلَيْلٍ، فَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا حَتَّىٰ يُنَادِيَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُوْمٍ، فَإِنَّهُ يُؤَذِّنُ، وَقَدْ حَلَّتِ الصَّلَاةُ».
২০৫. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আব্দুল্লাহ থেকে, তিনি ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে, বিলাল যখন রাতে আযান দিতে থাকে তখন তোমরা পানাহার করতে থাক। যতক্ষণ পর্যন্ত ইবনে উম্মে মকতুম আযান না দেয়। কেননা, যখন সে আযান দেয় তখন নামাযের ওয়াক্ত হয়ে যায়।
(বুখারী, ১/২৫৭/১৭৯৭ ও সহীহ ইবনে খুযাইমা, ৩/২১১/১৯৩১)
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদিস একই বাক্য সহকারে বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী ও অন্য হাদিস গ্রন্থে বর্ণিত আছে। এর মধ্যে একটি বির্তক মাসয়ালা রয়েছে। ইমাম শাফেঈ, ইমাম মালিক ও ইমাম আহমদ (رحمة الله)’র মতে ফজরের নামাযের আযান ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে অর্থাৎ সুবাহ সাদিকের আগে দেওয়া জায়েয আছে।
❏ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র মতে ফজর নামাযসহ অন্য যে কোন নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার পূূর্বে আযান দেওয়া জায়েয নেই। উপরে বর্ণিত হাদিস দ্বারা তিনজন ইমাম দলীল পেশ করেন। ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র মতের স্বপক্ষে অনেক সহীহ হাদিস বর্ণিত আছে। যেমন আবু দাউদ শরীফে হযরত শাদ্দাদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, হযরত বিলাল (رضي الله عنه) একবার সুবাহ সাদিকের পূর্বে ফজরের আযান দেন। তখন রাসূল (ﷺ) তাঁকে নির্দেশ দান করেন, যেন তিনি চিৎকার করে এই ঘোষণা দেন যে, আমি ভুলক্রমে সময় হওয়ার পূর্বেই আযান দিয়ে ফেলেছি। এটা শুধু এজন্য, যাতে মানুষের ভুল ধারণা দূর হয়ে যায় এবং যেন মনে না করে যে, ওয়াক্ত আসার পূর্বে আযান জায়েয আছে।
❏ইমামত্রয়ের দলীল উপরোক্ত হাদিসের জওয়াবে বলা যায়, উক্ত ঘটনা ছিল রমযান মাসের। যেমন ইমাম মুহাম্মদ (رحمة الله) এর ব্যাখ্যায় বলেছেন- পবিত্র রমযান মাসে হযরত বিলাল (رضي الله عنه)’র আযান সাহরী খাওয়ার জন্য একটি আহ্বানের মত ছিল, এটা ফজরের আযান ছিলনা। ফজরের আযান দিতেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মকতুম (رضي الله عنه)। তিনি আযান দিতেন সুবাহ সাদিক হলে। ফলে তখন অবশ্যই সাহরি খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।