রেজভীয়া দরবারের কিছু অপ্রিয় সত্যকথা
সাইয়্যিদ আব্দুল ক্বাইয়ুম আল্ – হোসাইনী রেজভী
( Sayeed Abdul Qayum Al-Hossainy ) ।
আমি ব্যক্তিগতভাবে রেজভীয়া দরবারের অন্য দশজন মুরিদ ও খলিফার মত নই । আমার মহান মুর্শিদ ক্বিবলার হায়াতে জিন্দেগীতে আমার বিরোদ্ধে শত শত বিচার দাখিল হয়েছে হুজুর ক্বিবলার দরবারে । আমার কঠোরতার জন্যে অনেকেই বহুবার চেষ্টা করেছেন ” ওরছ মোবারকের মঞ্চ পরিচালনার দায়িত্ব হতে আমাকে সরিয়ে দিতে । কিন্তু বাবাজান ক্বিবলা কখনোই কারো কথায় কোন কর্ণপাত করেননি । বরং তিনি আমাকে নীরবে ডেকে নিয়ে আমাকে শান্তনা দিতেন, পরামর্শ দিতেন এবং নিজের কঠোর সিদ্ধান্তে অটল থাকতে বলতেন ।
রাজনীতির ষোলকলার খেলাই আমি বুঝি । কারন, বাস্তব জীবনে আমি বহুদলের রাজনীতির পানিই পান করেছি এবং Political Science এ কিছুটা হলেও পড়াশোনা করেছিলাম ।
সমগ্রদেশে সুন্নী-ওহাবী সবাই ভালকরেই জানে যে, ৭২ বাতিল ফির্কার বিরোদ্ধে সারাদেশে সবচেয়ে কঠোর হল ” রেজভীয়া দরবার শরীফ ” । আক্বিদার বিষয়ে যে দরবার কখনোই কাউকে চুল পরিমাণেও ছাড় দেয়নি ও দিতেও জানেনা । এককথায় ” রেজভীয়া দরবার হল আক্বিদার বিষয়ে চির আপোষহীন বা গরমসুন্নী “।
তাই বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে সুন্নী আক্বিদা নিয়ে যতগুলো রাজনৈতিকদল প্রকাশ পেয়েছে , সবাই নিজ নিজ অবস্থান হতে রেজভীয়া দরবার শরীফকে কোন না কোনভাবে তাদের দলে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছে ।
রেজভীয়া দরবার শরীফ ৭২ বাতিলফির্কার বিরোদ্ধে আক্বিদার বিষয়ে যতটুকু কঠিন, আবার সুন্নী আক্বিদা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ততটুকুই উদার ।
বাবাজান ক্বিবলা ব্যক্তিগতভাবে কখনোই কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেননা । উনাকে এ ধরনের বিষয়ে কেউ কোন প্রশ্ন করলে, তিনি সোজাসাপটা জবাব দিতেন, ” বাবা, আমি কোন দল বুঝিনা, আমার দল একমাত্র আহলে ছুন্নাত ওয়া জামাআত ” ।
অনেক দল নিজেদের গুরুত্ব প্রমাণের জন্যে ও নবীপ্রেমিক সুন্নী জনগণের কাছে নিজেদেরকে সুন্নী হিসেবে উপস্থাপনের জন্যেই হুজুর ক্বিবলাকে দাওয়াত করেছেন এবং কখনো ” গ্র্যাণ্ড মুফতী “, কখনো ” ইমামে আহলে ছুন্নাত “, আবার কখনো প্রধান পৃষ্ঠপোষক করেছেন । মূলত: হুজুর ক্বিবলা কখনোই এগুলোর প্রতি যেমন আগ্রহী ছিলেননা, আবার তেমনি তিনি এগুলোর কোন ধারও ধারতেননা । তিনি সর্বদাই প্রিয়নবীজ্বির প্রেমের অথৈ সমুদ্রে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতেন । আর উনার এই সরলতা ও নবীপ্রেমের তন্ময়তার সুযোগে দরবারে এবং দরবারের বাহিরে কিছু অতিচালাক নিজেদের কূটনৈতিক খেল খেলেছেন স্বার্থকভাবে । কখনো হুজুর ক্বিবলার স্বাক্ষর নকল করেছে, কখনো ভূয়া কাগজে উনার নিকট হতে স্বাক্ষর নিয়েছেন, কখনো উনার অপছন্দনীয় স্থানে উনাকে যেতে বাধ্য করেছেন, আবার কখনোই উনার সরলতাকে পূঁজি করে অনেকের নানাধরনের স্বার্থ হাছিল করেছেন ।
এই কূটনীতিবিদেরা ভালকরেই জানতেন যে, হুজুর ক্বিবলা জাহেরী জগত ও বিষয়াবলীর চেয়ে প্রিয়নবীজ্বির ক্বদম মোবারকেই বেশি ডুবে থাকেন । তাই কেউ কখনো উনার পকেট হতে টাকা নিয়ে গেলেও, তিনি সেদিকে মনযোগী হতেননা । হুজুর ক্বিবলার হায়াতে জিন্দেগীর শেষ সময়গুলোতে এ ধরনের কাজ খুববেশি হয়েছে ।
তিনি খুব নীরবে ২/৩ জন মুরিদের কাছে এমন অনেক বিষয় ব্যক্ত করেছেন, এমনকি মনের কষ্টে তিনি নীরবে চোখের পানিও মুছেছেন ।
বাতিলদের বারবার আক্রমণে একসময়ে শারীরিকভাবে খুববেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়লেন এবং পঙ্গুত্ববরণ করলেন । তারপরেও ঈমান ও আক্বিদার বিষয়ে ছিলেন চিরঅটল ও আপোষহীন যোদ্ধা । জীবনের শেষ ওরছ মোবারকেও তিনি অসুস্থ্য অবস্থায় প্রথমরাতে প্রায় আড়াই ঘন্টা ও দ্বিতীয় রাতে প্রায় ২ ঘন্টা ঈমান এবং আমলের উপরে দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য রেখেছেন ও ঈমানী তারুণ্যে উচ্চস্বরে জিকিরের তালিম দিয়েছেন ।
হুজুর ক্বিবলার ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন বড় শাহজাদা হুজুর ক্বিবলা । তিনিও ছিলেন সরল ও শান্ত প্রকৃতির । তাই সকল রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সুন্নী সংগঠনগুলো উনার স্মরণাপন্ন হতেন এবং নিজেদের ইচ্ছেমত উনাকে নিজেদের সংগঠনের উচ্চতরপদে আসীন করতেন ।
এ বিষয়ে অনেকেই আমার পরামর্শ নিতেন বা সহযোগীতা কামনা করতেন । অনেক রাজনৈতিক দল উনার অনুপস্থিতিতেই প্রেসিডিয়াম সদস্যের তালিকায় উনার নাম দিয়ে রাখতেন । কারন, হুজুর ক্বিবলার নির্দেশে দরবারের সকল কার্যক্রমগুলো তিনিই পরিচালনা করতেন । বহু ভক্তরূপী স্বার্থবাজ উনার সরলতাকে পূঁজি করেও দরবারের ভেতরে, বাহিরে অনেক অঘটন ঘটিয়েছে । প্রায়সময় এসব বিষয়ে উনার সাথে আমার সরাসরি ও ফোনে বহুকথা হয়েছে । তিনি সহজেই সবাইকে বিশ্বাস করতেন । আর এ সুযোগে অনেকেই উনার সরলতা ও বিশ্বাসের ঘরে হয়তো নিজে চোরী করেছে বা সুযোগমত ডাকাত ঢুকিয়ে দিয়েছে । যার কারনে আজ রেজভীয়া দরবার বহুক্ষেত্রেই সমালোচিত ও বিভক্ত হয়ে পড়েছে । যার অনেককিছুই দূরে অবস্থানকারী সাধারণ মুরিদ ও সরল বিশ্বাসী খলিফাগণ জানেননা ।
একমাত্র সুন্নী আক্বিদার প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠা ছাড়া রেজভীয়া দরবার কোন দলকেই কখনো কোন প্রকার সমর্থণ করেনি এবং আজো করেনা । যদি কেউ ব্যক্তিগতভাবে রেজভীয়া দরবারের নীতি-আদর্শের বাহিরে কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষপাতিত্ব করেন, তাহলে বুঝতে হবে যে, তিনি মহান মুর্শিদ ক্বিবলার আদর্শচ্যুত ।
যখনি কোন দল, দরবার ও সংগঠনের মধ্যে কোন ধরনের বাতিল আক্বিদার প্রমান প্রকাশ পেয়েছে, তখনি রেজভীয়া দরবার নীতিগতভাবে ঐ দল, দরবার ও সংগঠনের উপর হতে সকল সমর্থণ প্রত্যাহার করেছে , করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে — ইনশাল্লাহ্ ।
পরিশেষে সবাই একটি কথা মনেরাখুন , ——- রেজভীয়া দরবার কোন দলের তল্পিবাহক নয়, বরং তা খালেছ সুন্নী আক্বিদার ধারক ও বাহক ।
#বিধায়, কোন দল, দরবার ও সংগঠনই রেজভীয়া দরবার শরীফকে নিয়ে কোনধরনের কূটচাল চালার চেষ্টা করাবেননা ।
মুর্শিদ ক্বিবলার জবানের বানী মোতাবিক আমাদের একমাত্র সংগঠনের নাম হল ” আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত ।
সুন্নীয়াতের বৃহত্তর স্বার্থে সকল সুন্নী জনতা ও দরবারের সবাই লেখাটি কপিপেষ্ট বা শেয়ার করুন ।