রাসূল (ﷺ)-এর কিছু চারিত্রিক গুণাবলী
তিনি রহমানের গুণে গুণান্বিত ছিলেন। তাঁর স্বভাব-চরিত্র হুবহু কোরআনে পাকের অনুরূপ ছিল। সকল প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য গুণাবলী তাঁর মধ্যে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। এজন্য তিনি উভয়কালের সরদার হয়েছেন। আল্লাহর কাছেও তিনি
الْأَحْزَانِ، جَلُّ نَظَرِه الْمُلَاحَظَةُ أَىْ مُعَظَّمُ نَظْرِه بِلِحَاظِ الْعَيْنِ أَىْ شِقِّهَا وَلَمْ يَكُنْ كَنَظْرَةِ اَهْلِ الْحَرْصِ اِذَا تَكَلَّمَ رُوِّىَ الْنُوْرُ يَخْرُجُ مِنْ بَيْنِ ثَنَايَاهُ وَكَانَتْ اَصَابِعُهُ كَانَّهَا قَضْبَانُ فِضُّهُ اَلْيَنُ مِنَ الْحَرِيْرِ كَانَّهَا كَفُّ عَطَّارٍ يَضَعُ يَدَهُ عَلٰى رَأْسِ الصَّبِىِّ فَيُعْرَفُ مِنْ بَيْنِ الصِّبْيَانِ بِرِيْحِهَا، وَعِرَقُهُ كَالْلُّؤْلُؤِ فِى الْبِيَاضِ وَكَالْمِسْكِ فِى الرَّائِحَةِ يَقُوْلُ وَاصِفُهُ لَمْ اَرَ قَبْلَهُ وَلَابَعْدَهُ مِثْلَهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
مَوْلَايَا صَلِّ وَسَلِّمْ دَائِمًا أبَدًا ۞
عَلٰى حَبِيْبِكَ خَيْرِ الْخَلْقِ كُلِّهِم
اُذْكُرْ لَـنَا شَيْئًا مِنْ اَوْصَافِـهِ الْخُلُقِيَّـةِ ؟
كَانَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُتَخَلَّقًا بِاَخْلَاقِ الرَّحْمٰنِ اِذْ كَانَ خُلُقُهُ الْقُرْآنَ قَــدْحُوِىَ الْكَمَالَاتِ الْبَاطِنِيَّةِ وَالظَّاهِرِيَّةِ وَبِهَاسَادَ اَهْلَ
সবচেয়ে দানশীল ও সর্বাধিক সম্মানিত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-‘এবং নিশ্চয় আপনি সুমহান চরিত্রের অধিকারী।’➥আল-কুরআন, সূরা ক্বলম, আয়াত: ৪
এতদসত্ত্বেও তিনি অধিক বিনয়ী ছিলেন, তিনি রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের দেখতে যেতেন, জানাযায় উপস্থিত হতেন, ফকির-মিসকিনদের ভালবাসতেন, তাদের সাথে মজলিসে বসতেন, বাজার থেকে পরিবার পরিজনের জিনিসপত্র নিজ হাতে বহন করতেন, ধনী-দরিদ্র সবার সাথে করমর্দন করতেন, যারা তাঁর সাথে সাক্ষাতে আসতেন প্রথমে সালাম দিতেন ও করমর্দান করতেন, গাধায় আরোহী হতেন, দাওয়াত গ্রহণ করতেন যদিও যবের একটি রুটির দাওয়াত হয়। তিনি বলতেন-‘ছাগলের একটি পাও হাদিয়া বা দাওয়াতে দেয়া হলে তিনি তা গ্রহণ করবেন।’ তিনি নিজ কাপড় সেলাই করতেন, ছাগলের দুধ দোহাতেন, নিজের কাজ নিজে করতেন। কেউ প্রয়োজনে কিছু চাইলে মোচন করতেন বা সান্তনা মূলক জবাব দিতেন। কোন সমাবেশে গমন করলে খালিস্থানে বসে পড়তেন। উপস্থিত সমাবেশের সদস্যবৃন্দ ও সভাসদ সকলের স্বীয় মর্যাদানুযায়ী সম্মান ও শুভেচ্ছা দিতেন।
الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ، وَكَانَ اَكْرَمَ عَلٰى اللهِ مِنْ كُلِّ كَرِيْمٍ قَالَ اللهُ تَعَالٰى وَإِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِيْمٍ وَكَانَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُتَوَاضِعًا يَعُوْدُ الْمَرِيْضَ وَيَشْهَدُ الْجَنَازَةَ وَيَحُبُّ الْفُقْرَاءَ وَالْمَسَاكِيْنَ وَيَجْلُسُ مَعَهُمْ وَيَحْمَلُ بِضَاعَتَهُ مِنَ السَّوْقِ اِلٰى اَهْلِه وَيُصَافِحُ الْفَقِيْرَ وَالْغَنِىَّ وَيَبْدَأُ مَنْ لَقِيَهُ بِالسَّلَامِ وَالْمُصَافَحَةِ وَيَرْكَبُ الْحَمِيْرَ وَيَجِيْبُ الدَّعْوَةَ وَلَوْ كَانَتْ اِلٰى خُبْزِ شَعِيْرٍ وَقَالَ لَوْ اُهْدِىَ اِلَىَّ كَرَاعٌ اَىْ رِجْلُ شَاةٍ لَقَبِلْتُ وَلَوْدُعِيْتُ اِلَيْهِ لَأَجَبْتُ وَكَانَ يُفَلِّـىْ ثَوْبَهُ وَيَحْلُبُ الشَّاةَ وَيَخْدُمُ نَفْسَهُ مِنْ غَيْرِ مُبَالَاةٍ وَمَنْ سَالَهُ حَاجَةً لَايَرُدُّهُ اِلَّا بِهَا. اَوْ بِقَوْلٍ مُؤْنِسٍ ، وَاِذَا اَنْتَهٰى اِلٰى قَوْمٍ جَلَسَ حَيْثُ يَنْتَهِىْ بِه الْمَجْلِسُ اَىْ جَلَسَ فِىْ الْمَكَانِ الْخَالِىْ مِنْهُ
তাই মজলিসের প্রত্যেকেই মনে করতেন তিনিই হুযুর পাকের নিকট অন্যের তুলনায় অধিক সম্মানিত ও সমাদৃত। কোন মজলিস তিনি ত্যাগ করা ব্যতীত তাঁকে কেউ ত্যাগ করে যেতেন না। কেউ কিছু বললে শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাঝখানে তিনি কিছু বলতেন না, যাতে তার বক্তব্যের বিঘ্নতা না ঘটে। সহচরদের মধ্যে কেউ অনুপস্থিত থাকলে তার খবরা-খবর নিতেন। প্রত্যেকের স্ব স্ব মান-সম্মান, জ্ঞান ও গুণ মোতাবেক তাদের ন্যায্য হাদিয়া, উপঢৌকন, সম্মান সূচক উপাধি ইত্যাদি প্রদান করতেন। কারো প্রতি ঘৃণা করতেন না। অনর্থক কথা থেকে বিরত থাকতেন। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের সম্মানিত ব্যক্তিদের যথাযথ সম্মান করতেন এবং জ্ঞান, লজ্জা, ধৈর্য্য ও আমানতদারীর মজলিস অনুরূপভাবে অন্যান্য মজলিসের পরিচালনার দায়িত্ব ও জিম্মাদারী তাদের ওপর ন্যস্ত করতেন। তিনি অন্যায়ভাবে কারো মোকাবেলা করতেন না, মন্দের শাস্তি মন্দ দ্বারা দিতেন না বরং ক্ষমা ও সমাধান করে দিতেন। জিহাদ ব্যতীত কখনো কাউকে নিজ হাতে শাস্তি দিতে না। কারো গোপনীয় বিষয় ও রক্ত তালাশ করেন নি। হ্যাঁ! তবে যে সব বিষয়ে বান্দার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে পূণ্য নিহিত রয়েছে।
তিনি বদান্যতা ও কল্যাণে সর্বাপেক্ষা
وَيَعْطِىْ كُلَّ اَحَدٍ مِنْ جُلَسَائِه نَصِيْبًا مِنَ الْاِكْرَامِ وَالْاِقْبَالِ حَتّٰى يَحْسِبُ كُلُّ مِنْهُمْ اَنَّهُ اَكْرَمُ عَلَيْهِ مِنْ كُلِّ مَنْ فِى الْمَجْلِسِ مِنَ الرِّجَالِ مَنْ جَالَسَهُ اَوْ فَاَوَضَهُ أَىْ قَابَلَهُ لَايَنْصَرِفُ عَنْهُ حَتّٰى يَكُوْنَ هُوَالْمُنْصَرِفُ وَلَا يُقْطَعُ عَلٰى اَحَدٍ حَدِيْثَهُ حَتّٰى يَسْكُتَ عَنْهُ وَيَتَفَقَّدُ اَصْحَابَهُ أَىْ يَسْأَلُ عَمَّنْ غَابَ مِنْهُمْ وَيَبْذُلُ لِكُلِّ مَا يَلِيْقُ لَـهُ مِنَ الْاَقْوَالِ وَالْاَفْعَالِ وَيُوْ فَدُهُمْ أَىْ يُعْطِيْهِمْ وَلَا يُنَفَّرُهُمْ وَيَمْنَعُ لِسَانَهُ عَمَّا لَا يَعْنِيْهِ وَيُكْرِمُ كَرِيْمَ كُلِّ قَوْمٍ وَعَلَيْهِمْ يُؤَلِّيْهِ مَجْلِسَهُ مَجْلِسَ،
عِلْمٍ وَحَيَاءٍ وَصَبْرٍ وَاَمَانَةٍ وَمَا كَانَ مِثْلَ ذٰلِكَ وَكَانَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَايُقَابِلُ اَحَدًا بِمَكْرُوْهٍ وَلَا يَجْزِىْ بِالسَّيِّئَةِ السَّيِّئَةَ وَلٰكِنْ يَعْفُوْ وَيَصْفَحُ وَمَا ضَـرَبَ بِيَدِه شَيْئًا قَطُّ اِلَّا فِـىْ
অগ্রগামী ছিলেন এবং কুমারী মহিলার চেয়েও অধিক লজ্জাশীল ছিলেন। উম্মুল মু’মেনীন হযরত আয়শা ছিদ্দিকা (رضي الله عنه) বলেন- ‘আমি কখনো আল্লাহর রাসুলের (ﷺ) লজ্জাস্থান দেখিনি।’ তিনি রসিকতা করতেন কিন্তু সর্বদা সত্যই বলতেন। রূপক অর্থ ব্যবহার করতেন ঠিকই কিন্তু সত্যই বলতেন। সাহাবাদের মজলিসে তিনি যখন বক্তব্য রাখতেন তাঁরা পরিপূর্ণ নিরবতা ও পূর্ণ স্থিরতার সাথে মাথা এভাবে ঝুঁকিয়ে রাখতেন যেন মাথার ওপর পাখি অবস্থান করছে। তিনি বক্তব্য শেষ করলে তাঁরা কথা বলতেন। আরববাসীদের মন্দ ব্যবহার, অশালীন ও অভদ্র আচরণে ধৈর্য্য ধারণ করতেন। খাদেমকে কখনো ধমক দেননি, কৃতকর্মের কেফিয়ত চাননি এবং একথাও বলেননি তুমি কেন এরকম করেছ❓ বর্জনকৃত বিষয়ে কখনো একথা বলেননি তুমি কেন বর্জন করেছ❓ বরং বলতেন যে ভাগ্যে থাকলে হয়ে যাবে। তাঁকে কাফিরদের ক্ষেত্রে বদ্দোয়া করার অনুরোধ করা হলে তিনি বলতেন, ‘আমাকে তো রহমত স্বরূপ প্রেরণ করা হয়েছে। হে আল্লাহ! আমার সম্প্রদায়কে হিদায়াত করুন, কেননা তারা বুঝতেছে না।’ তিনি অশালীন, কৃপণ ও কাপুরুষ ছিলেন না। মানুষকে ভয় প্রদর্শন করতে না। নিজকে তাদের অনিষ্টা
اَلْجِهَادِ وَمَا طَلَبَ عَوْرَةَ اَحَدٍ وَلَا دَمَهُ اِلَّا فِيْمَا رَجَابِه ثَوَابَ رَبِّ الْعِبَادِ.
وَكَانَ اَجْوَدَ النَّاسِ بِالْخَيْرِ وَكَانَ حَيَاءُهُ مِنَ الْبِكْرِ فِىْ خِدْرِهَا اَشَدَّ وَاَعْظَمَ وَقَدْ قَالَتْ عَائِشَةُ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا مَا رَأَيْتُ فُرْجَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ صَلَّى اللهُ تَعَالٰى عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْزَحُ وَلَايَقُوْلُ اِلَّا حَقًّا وَيُوَرِّىْ وَلَا يَقُوْلُ اِلَّا صَدْقًا اِذَا تَكَلَّمَ اَطْرَقَ جُلَسَاؤُهُ كَاَنَّمَا عَلٰى رُؤُسِهِمِ الْطَّيْرُ وَاِذَا سَكَتَ تَكَلَّمُوْا. يَصْبِرُ لِلْعَرِيْبِ عَلٰى الْجَفْوَاةِ اَىْ السَّقْطَةِ الْعَلَطَةِ فِى الْمَنْطِقِ وَلَا اِنْتَهَرَ خَادِمًا وَلَا قَالَ لَهُ فِىْ شَيْئٍ صَنَعَهُ لِمَ صَنَعْتَهُ وَلَا فِىْ شَيْئٍ تَرَكَهُ لِمَ تَرَكْتَهُ؟ بَلْ يَقُوْلُ لَوْ قُدِّرَ يَكُوْنُ، وَلَمَّا قِيْلَ لَهُ اُدْعُ عَلٰى الْكُفَّارِ قَالَ اِنَّمَا بُعِثْتُ رَحْمَةً اَللّٰهُمَّ اِهْدِ قَوْمِىْ فَاِنَّهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ. وَلَمْ يَكُنْ فَحَّاشًا اَىْ كَثِيْرَالْفَحْشِ
থেকে হিফাযতে রাখতেন। আল্লাহর জিকির ব্যতীত উঠা-বসা করতেন না। শক্রতের মাঝে একাকি চলাফেরা করতেন আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ আস্থা হেতেু তাদেরকে পরোয়া করতেন। কবর জিয়ারত করতেন, কবরবাসীদের সালাম দিতেন এবং তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করতেন। সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় থাকতেন, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদাচরণ করতেন, এমনকি স্ত্রীদের সাথেও। শান্ত ও রাগান্বিত সর্বাবস্থায় সত্য কথাই বলতেন। যখন ওয়াজ করতেন স্বীয় চক্ষুদ্বয় লাল হয়ে যেত, আওয়াজ বড় হয়ে যেত, মনে হত যেন তিনি সৈন্যদলকে ভয় প্রদর্শন করছেন। নিজের জন্য এবং নিজের সাহায্যের জন্য রাগ করতেন না। যখন খুশি হতেন চেহারা খুবই উজ্জ্বল হত, মনে হত চন্দ্রের টুকরো। সামনের থেকে কাউকে দূরীভূত করতেন না, পিছনে চলার থেকে বারণ করতেন। তিনি বলতেন, ‘আমার পিছনে ফিরিস্তাদের জন্য খালি রাখুন।’ লাব্বাইক ব্যতীত কারো সাড়ার উত্তর দিতেন না। খাদেমদের সাথে খেতে বসতেন। হে মাওলা! সদা-সর্বদা রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন সৃষ্টিকুলের সর্বশ্রেষ্ঠ আপনার হাবীবের ওপর।