আসসলামু আলাইকুম ওয়া রাহমতুল্লাহি ওবারাকাতুহ
শরু করছি পরম করুণাময় সেই প্রেমময় জাল্লে জালালু আহাদময় অসীম দয়ালু আল্লাহ সুবাহানু তাআলা ও তার পেয়ারে নূরময় হাবীব শাফেয়ীন মুজনেবিন রাহমাতালাল্লিল আলামিন আহমদ মোস্তফা মুহাম্মদ মোস্তফা (সা:) উনার উপর দুরুদ পেশ করে এবং আমার দাদা হুজুর আক্তার উদ্দিন শাহ ও আমার মূর্শীদ কেবলা দয়াল মোখলেছ সাই এর সরণে…
(প্রসঙ্গ রাসূল (সা:)কেন দাড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করতে নিষেধ করেছেন সেই হাদীস গুলির সঠিক ব্যখ্যা)
আজকাল বাতিলরা কিছু কোরানের আয়াত আর হাদীস দেখলেই টেংরা মাছের মত লাফাতে থাকে লাফাতে লাফাতে নিজের বিপদ যে নিজেই ডেকে আনে তার টের ও পায়না কি বলতে গিয়ে কি যে বলে ওই খাটাশী জানে না কারণ কোরানের আয়াত এবং হাদীস পড়লেই হবেনা এগুলি প্রত্যেকটার ব্যখ্যা জানতে হবে তা না হলে বিপদে আছে কপালে যেমন ইমাম মুহাদ্দিন সুফিয়ান সাওরী (রা:)বলেন হাদীসের সঠিক ব্যখ্যা হাদীস শ্রবণ থেকে উত্তম-সূত্র-জামিউ বারামিল ইলমি ওরা কাদলিহী-২-১৭৫ পৃ: এবং ইমাম আবু হানীফা (রা:)বলেন যে ব্যক্তি হাদীস অনেস্বণ করল অতছ হাদীসের সঠিক ব্যখ্যা জানলো না সে তার পারিশ্রমকে মাটি করে দিলো এবং নিজের উপর বিপদ ডেকে আনলো-সূত্র-মানাকিবু ইমাম আবু হাণীফা-৩৭৭ পৃ:-সুবাহানাল্লাহ, পাঠকগণ আপনারাই চিন্তা করেন কত বড় মাপের এই দুই মুহাদ্দিস এত বড় কথা বলেছেন তা কল্পনা করা যায়না যারা নাকি হাদীস শাস্ত্রের শায়খন তারা যদি হাদীসের ব্যখ্যার উপর এত জোড় দেয় আর আজকালের কিছু কাঠ মোল্লা এবং তার চেলারা ও দেখি কথায় কথায় ফতোয়া দেয় সাবধান এসব কাঠ মোল্লা থেকে তেমনি ৩ টি হাদীসের ব্যখ্যা নিয়ে আমি অধম আপনাদের সামনে কিয়াম বা দাড়িয়ে সম্মান করতে রাসূল (সা:) কেন নিষেধ করেছেন তার ব্যখ্যাগুলি তুলে ধরলাম ভূল হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন-হাদীস গুলোর আলোচনা-
★ প্রথমত যে হাদীসটি তারা কিয়াম করার বিরুদ্ধে দলীল হিসেবে উল্লেখ করে, সেটার জবাবঃ-
عن انس قال لم يكن شخص احب اليهم من رسول الله صلى الله عليه وسلم وكانوا اذا رأوه لم يقوموا لما يعلمون من كراهيته لذالك، رواه الترمذي___
অর্থঃ- হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্নিত,,, তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে সাহাবীগণ সকল কিছুর চেয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসতেন,,, অথচ তারা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখতেন, তখন দাড়াতেন না,,, কারণ সাহাবীগণ জানতেন যে, তিনি ইহা অপছন্দ করতেন,,,।
[{( সুনানে তিরমিজি )}]
দলীলঃ- মিশকাতুল মাসাবীহ্,,, হাদীস নং- ৪৪৭৩,,,।
সংশ্লিষ্ট আলোচনাঃ- আরবের লোকদের অভ্যাস ছিল তাহারা তাহাদের মনিব, অহংকারী সরদারদের সম্মুখে অন্তত বিনয়ের সহিত দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াইয়া থাকিত,,, ইহাতে তাদের চরম লৌকিকতা,,, ইসলামী শিষ্টাচারীতার ইহার অবকাশ নাই, বরং ইসলাম হইলো সাদামাটা স্বভাবগত ধর্ম,,, হযরত আনাস (রাঃ) হাদীসের মানে হইলো, সাহাবীগণ আরবের রেওয়াজ ও নিয়ম অনুযায়ী অবনত মস্তকে অত্যন্ত অনুনয়-বিনয়ের সাথে মুর্তির মতো দাড়াইতে অভ্যস্ত ছিলেন, তাই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই নিয়মে দাঁড়াইতে কঠোরভাবে নিষেধ করিয়েছেন,,, ফলে সাহাবীগণ সেই নিয়মের বর্জন করিয়াছেন,,,।
মূলত যে কারণে সাহাবীগণ দাড়াতেন না, তাঁর ব্যাখ্যাঃ-
لم يقوموا لما يعلمون من كراهيته لذالك :- اي مخالفته لعادة المتكبرين والمتجبرين، بل اجتار الثابت علي عادة العرب في ترك التكلف في فيامهم و جلوسهم و اكلهم و شربهم ولبسهم و مشيهم ﻭﺳﺎئر افعالهم و اجلاقهم___
অর্থঃ- সাহাবীগণ দাড়াতেন না, কারণ তাঁরা জানতেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা অপছন্দ করেন,,, অর্থাৎ, আরবের কিছু সংখক অহংকারী গর্বকারী এবং দাম্ভিকদের বিরোধিতা করার জন্য, দাড়াতেন না,,, শুধু তাই নয়, বরং সাহাবীগণ অধিক জোরালোভাবে অগ্রাধিকার দিতেন,,, যেন তাঁরা নিজেরা আরবের অহংকারী, দাম্ভিকদের,,, দাড়ানোর নিয়ম, খাওয়ার নিয়ম, বাসার নিয়ম, পান করার নিয়ম, পোষাক পরার নিয়ম, হাটা চলার নিয়ম সকল প্রকার কাজের নিয়ম এবং আরবদের চরিত্র, আচরণ পরিহার করে,,, এবং সকল প্রকার নিয়মের বিরোধিতা করে,,,।
দলীলঃ- তুহফাতুল আহয়াযী বি শারহে জামিউত তিরমিজি,,, বৈরুত লেবাননের ছাপা,,, ৮ম খন্ড,,, ২৯ পৃষ্ঠা,,,।
★ দ্বিতীয়ত যে হাদীসটি তারা কিয়াম করার বিরুদ্ধে উল্লেখ করে, সেটার জবাবঃ-
عن معاوية قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من سره ان يتمثل له الرجال قياما فليتبوا مقعده من النار، رواه ابي داود___
অর্থঃ- হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) হতে বর্নিত,,, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এটায় আনন্দ পায় যে,,, তার জন্য লোকজন মুর্তির মতো দাড়াইয়া থাকুক,,, তাহলে তার জন্য এটাই উচিৎ যে, সে যেন জাহান্নামের মধ্যে তাহার বাসস্থান নির্ধারণ করিয়া নেয়,,, অর্থাৎ যে ব্যাক্তি ইচ্ছা করবে, আমার জন্য সকলেই দাড়িয়ে থাকুক, সে ব্যাক্তি জাহান্নামী,,,।
[{( সুনানে আবু দাউদ )}]
দলীলঃ- মিশকাতুল মাসাবীহ্,,, হাদীস নং- ৪৪৭৪,,,।
সংশ্লিষ্ট আলোচনাঃ- মানুষের মধ্যে কোন কোন লোকের এই প্রবনতাও আছে যে,,, সে কোথাও গেলে লোকজন তাহার সাম্মানে দন্ডায়মান হউক এবং তাহাকে কুর্নিশ করিয়া অভ্যর্থনা জানানো হউক, ইহাতে সে ব্যক্তি নিজের মধ্যে আনন্দ ও খুশি অনুভব করে,,, আর যদি তার জন্য কেউ না দাড়ায়, এজন্য সে ব্যক্তি রাগ হয়, তাহলে সে ব্যক্তি জাহান্নামী,,,।
মুলত যে কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এতো কঠিন কথা বলেছেন, তাঁর ব্যাখ্যাঃ-
وفي فتح الباري قال النبووي في الجواب عن ﻫﺬﺍ الحديث:- لا حاجة الي ما سواء ان معناه زجر المكلف ان يجب فيام الناس له، قال وليس فيه تعرض للقيام بنهي ولا غيره وهذا متفق عليه___
অর্থঃ- ফতুহুল বারী শরহে সহীহুল বুখারীতে, ইমাম নববী (রহঃ) এই হাদীসের জবাবে বলেন,,, কোন প্রয়োজন ছাড়া শুধু শুধু দাড়িয়ে থাকার ব্যাপারে এজন্যই এতো কঠোর নিষেধাজ্ঞা করা হয়েছে যে,,, যাতে মানুষগন তাঁর জন্য দাড়ানোকে ওয়াজিব বা অপরিহার্য না করে,,, অর্থাৎ এমনকি যেন মনে না করে যে,,, তাঁর জন্য দাড়াতেই হবে,,, ইমাম নববী (রহঃ) আরো বলেন,,, কেউ আসলে, তার জন্য দাড়িয়ে যাওয়াকে এখানে নিষেধ করা হয়নি এবং অন্যান্য প্রকার কিয়ামকেও নিষিদ্ধ করা হয়নি,,, আর এটাই ইমাম বুখারী এবং মুসলিম (রহঃ) বর্ননা করেছেন,,,।
দলীলঃ- আওনুল মা’আবুদ আলা শরহে সুনানে আবু দাউদ,,, বৈরুত লেবাননের ছাপা,,, ১ম খন্ড,,, ২৩৭০ পৃষ্ঠা,,,।
★ তৃতীয়ত যে হাদীসটি তারা কিয়াম করার বিপক্ষে উল্লেখ করে, সেটার জবাবঃ-
عن ابي امامة قال خرج رسول الله صلى الله عليه وسلم متوكئا علي عصا، فقمنا اليه، فقال :- لا تقومو كما يقوم الاعاجم ﻳﻌﻈﻢ بعضها ﺑﻌﻀﺎ، رواه ابي داود___
অর্থঃ- হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্নিত,,, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লাঠিতে ভর করিয়া ঘর হতে বাহিরে আসিলেন,,, তখন আমরা তাঁহার জন্য দাড়িয়ে গেলাম,,, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিলেন, তোমরা আজমী লোকদের মতো দাড়াইও না,,, আজমীরা যেভাবে একে অপরকে দাড়াইয়া সম্মান করে সেভাবে সম্মান প্রদর্শন করিও না,,,।
[{( সুনানে আবু দাউদ )}]
দলীলঃ- মিশকাতুল মাসাবীহ্,,, হাদীস নং- ৪৪৭৫,,,।
সংশ্লিষ্ট আলোচনাঃ- এই হাদীসে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে,,, আজমীদের নিয়মে একে অন্যের জন্য দাড়ানোকে নিষেধ করা হইয়াছে,,,
وفي حديث سعد دلالة علي ان قيام المرء بين بدي الرئيس الفاضل والوالي العادل وفيام المتعلم للمعلم مستحب غبر مكروه وقال البيهقي هذا القيام يكون علي وجه البر والاكرام كما كان قيام الانصار لسعد وقيام طلق لكعب بن مالك___
অর্থঃ- অন্য একটি সা’আদ (রাঃ) এর হাদীসের মধ্যমে দলীল পাওয়া যায় যে,,, কোন সম্মানিত মুরুব্বীর জন্য, ন্যায়-পরায়ণ বিচারকের জন্য, শাগরেদ উস্তাদের জন্য দাঁড়ানো মুস্তাহাব, ইহা মকরূহ নয়,,, ইমাম বায়হাকী (রহঃ) বলেন, এই দাড়ানোটা ন্যায়পরায়ণতা, উত্তম গুণ এবং উচ্চ মর্যাদা এসবকিছুর জন্য, যেমন আনসারগণ সা’আদ (রাঃ) এর জন্য সম্মানার্থে দাড়িয়েছিল,,, এবং কা’ব ইবনে মালেক (রাঃ) এর সম্মানার্থে দাড়িয়েছিল,,,।
মূলত এই হাদীসটিই বাতিল এবং অগ্রহণযোগ্যঃ-
فقمنا اليه، وفي المشكاة فقمنا له، قال القاري :- اي لتعظيمه، واحتاج بهذا الحديث علي منع القيام، واجاب عنه الطبري بانه حديث صعيف مضطرب السند فيه من لا يعرف كذا في فتح الباري، وقال ابن سعد في الطبقات اسمه نافع وكان ضعيفا منكر الحديث، وقال النسائي ضغيف___
অর্থঃ- মিশকাতু মাসাবীহের মধ্যে আছে,,, সাহাবীগণ নবীজীর জন্য দাড়িয়ে গেলেন,,, ইমাম মোল্লা আলী কারী (রহঃ) বলেন,,, অর্থাৎ সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্মানার্থে দাড়িয়ে গেলেন,,, এবং এইরকম সম্মানার্থে দাড়ানোকেই এই হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে,,, (এই কিতাবের লেখক বলতেছেন) আমি মোল্লা আলী কারী এর জবাব দিতেছি যে,,, তাবে তাবেঈনদের সমসাময়িক ইমাম ইবনে জারীর তাবারী (রহঃ) এই হাদীসটি দুর্বল সনদ দ্বারা প্রমানিত কিনা তা নিয়েও অনেক চিন্তিত,,, কারণ এই হাদীসটির সনদের কোন পরিচয় নাই,,, এবং ইবনে সা’আদ (রহঃ) তাবাকাত এর মধ্যে বলেন,,, এই হাদীসটি এমন দুর্বল হাদীস যা বাতিল, প্রত্যাখাত এবং অগ্রহণযোগ্য,,, এবং ইমাম নাসায়ী (রহঃ) বলেন,,, এই হাদীসটি যয়ীফ বা দুর্বল,,,।
দলীলঃ- আওনুল মা’আবুদ আলা শরহে সুনানে আবু দাউদ,,, বৈরুত লেবাননের ছাপা,,, ১ম খন্ড,,, ২৩৭১ পৃষ্ঠা,,,।
উক্ত দলীল দ্বারা স্পষ্ট প্রমানিত হলো যে,,, ওহাবীরা যে কিয়ামের বিপক্ষে যে তিনটি দলীল উপস্থাপন করে তাঁর একটিও মিলাদের কিয়ামকে বাধা দেয় না বরং সমর্থন করে,,,।
পরিশেষে আমি অধম এ টুকুই বলতে চায় সাবধান কেউ ফতোয়া দেওয়া থেকে কারণ ফতোয়া দেওয়া আপনার আর আমার কাজ না যারাই ইসলামকে কোরান হাদীস দিয়ে ফতোয়া দিয়ে গেছেন তাদেরটাই অনুসরণ করুন না হলে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনবেন তাই সাবধান। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুক আমিন-প্রচারে-মোখলেছিযয়া সূণ্নী খানকা শরীফ