রাসূলুল্লাহ ﷺ কি লা’নত করতেন…?

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

রাসূলুল্লাহ ﷺ কি লা’নত (অভিসম্পাত) করতেন…? কারা লা’নতযোগ্য…?

আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলা হলো, ইয়া রসূলাল্লাহ ﷺ! আপনি মুশরিকদের উপর বদদু’আ করুন। তিনি বললেন, আমি তো লা’নতকারীরূপে প্রেরিত হইনি; বরং প্রেরিত হয়েছি রহমতস্বরূপ। (সহীহ মুসলিম ৬৫০৭)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা বলেন,

“আমি আপনাকে জগতসমূহের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।” (সূরা আম্বিয়াঃ ১০৭)

রহমতের নবী ﷺ কাফের মুশরিকদের উপরও সচরাচর লানত করতেন না। কিন্তু হ্যাঁ, রাসূলুল্লাহ ﷺ কিছু কাফেরদের জন্য বদদুআ ও লা’নত করেছিলেন কেননা তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে বেঈমানী করেছিল, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে অনেক কষ্ট দিয়েছিল।

রাসূলুল্লাহ ﷺ এক মাস পর্যন্ত রুকুর পরে কুনূত পড়েন। তিনি বনূ সুলাইম গোত্রসমূহের বিরুদ্ধে দু‘আ করেছিলেন। (কারণ) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ চল্লিশজন কিংবা সত্তর জন ক্বারী কয়েকজন মুশরিকের কাছে পাঠালেন। তখন বনূ সুলাইমের লোকেরা তাঁদেরকে হামলা করে হত্যা করে। অথচ তাদের এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর মধ্যে সন্ধি ছিল। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে এ ক্বারীদের জন্য যতটা ব্যথিত দেখেছি আর কারো জন্য এতখানি ব্যথিত দেখিনি। (সহীহ বুখারী ৩১৭০)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা বলেন,

“নিশ্চয় যারা কষ্ট দেয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে, তাদের উপর আল্লাহ’র লানত (অভিসম্পাত) দুনিয়া ও আখিরাতে এবং আল্লাহ তাদের জন্য লাঞ্চনার শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।” (সূরা আহযাবঃ ৫৭)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, কোন মু’মিনকে লা‘নত করা তাকে হত্যা করার শামিল। (সহীহ বুখারী ৬৬৫২)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ লানতকারীরা কিয়ামত দিবসে সুপারিশকারী ও সাক্ষ্যদাতা হতে পারবে না।

(সহীহ মুসলিম ৬৫০৬, আল-আদাবুল মুফরাদ ৩১৭)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ তোমরা পরস্পর পরস্পরকে আল্লাহ’র লানত, তার গযব ও জাহান্নামের বদ-দুআ করো না। (সূনান আত তিরমিজী ১৯৭৬)

আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) বলেন, আবূ বকর (রাঃ) তাঁর কোন গোলামকে লানত করেন। নবী ﷺ বলেনঃ

হে আবূ বকর! কাবার প্রভুর কসম! একই ব্যক্তি একই সাথে সিদ্দীক ও লানতকারী হতে পারে না। তিনি দুই বা তিনবার একথা বলেন। আবূ বকর (রাঃ) সেদিনই ঐ গোলামকে আযাদ করে দেন এবং নবী ﷺ এঁর নিকট এসে বলেন, আমি আর কখনো এরূপ আচরণ করবো না। (আল আদাবুল মুফরাদ ৩২০, মিশকাত ৪৮৬৮)

একবার ঈদুল আযহা অথবা ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি মহিলাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেনঃ হে মহিলা সমাজ! তোমার সাদক্বা করতে থাক। কারণ আমি দেখেছি জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই অধিক। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেনঃ কী কারণে, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! তিনি বললেনঃ তোমরা অধিক পরিমানে অভিশাপ (লানত) দিয়ে থাক আর স্বামীর অকৃতজ্ঞ হও।… (সহীহ বুখারী ৩০৪)

আনাস (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ গালি-গালাজকারী, অশালীন ও লা‘নতকারী ছিলেন না। তিনি আমাদের কারো উপর অসন্তুষ্ট হলে, শুধু এতটুকু বলতেন, তার কী হলো। তার কপাল ধূলিমলিন হোক।

(সহীহ বুখারী ৬০৩১)

কিন্তু রাগান্বিত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ কয়েকজন মুসলমানকেও তিরস্কার করেছিলেন। তিনিও মানুষ কিন্তু আমাদের মত সাধারণ নয়। আমরা কাউকে লা’নত করলে সেটা লা’নত-ই, যাকে লা’নত করলাম সে যদি লা’নতের যোগ্য হয় তাহলে তা তার উপর পড়বে অন্যথায় নিজের উপর এসে পড়বে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ রাগান্বিত হয়ে কোন মুসলমানকে অভিসম্পাত, তিরস্কার অথবা বদদুআ করে ফেললেও সেগুলো তাদের জন্য হবে পবিত্রতা, পুরস্কার ও রহমত স্বরূপ।

আম্মাজান আয়িশা (রাঃ) বলেন, একদা দু’জন লোক রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দরবারে আসলো। তারা তার সঙ্গে কোন বিষয়ে আলোচনা করল। তা কী ছিল, আমি জানি না। অতঃপর তারা তাকে রাগান্বিত করেছিল। তিনি তাদের উভয়কে অভিসম্পাত করলেন এবং তিরস্কার করলেন। যখন তারা বের হয়ে গেল আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ﷺ! সবাই আপনার কাছ থেকে কল্যাণ লাভ করল। আর এরা দুজনে কিছুই পাবে না। তিনি ﷺ বললেন, সে কী ব্যাপার! তিনি [‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] বললেন, আপনি তো তাদের উভয়কে অভিসম্পাত করেছেন এবং ধিক্কার দিয়েছেন। রসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তুমি কি জান আমার প্রতিপালকের সঙ্গে এ বিষয়ে আমার কী শর্তাশর্তি হয়েছে? আমি বলেছিলাম, “হে আল্লাহ! আমি একজন মানুষ। আমি কোন মুসলিমকে লা’নত করলে কিংবা তিরস্কার করলে তা তুমি তার জন্য পবিত্রতা ও পুরস্কার বানিয়ে দিও।” (সহীহ মুসলিম ৬৫০৮, পরিচ্ছেদঃ যাদের উপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন, তিরস্কার করেছেন অথবা বদদুআ করেছেন; অথচ তারা এর যোগ্য নয়, তাদের জন্য তা হবে পবিত্রতা, পুরস্কার ও রহমত স্বরূপ)

আবার, অসংখ্য গুনাহ রয়েছে যেগুলোর কারণে আল্লাহ’র লানত বর্ষিত হয়। এছাড়াও স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ সৌন্দর্যের জন্যে উল্কি অঙ্কণকারী ও উল্কি গ্রহণকারী, ভ্রূ উত্তোলনকারী নারী এবং দাঁত সরু করে মাঝে ফাঁক সৃষ্টিকারী নারী, যা আল্লাহর সৃষ্টিকে বদলে দেয়, ঘুষ দাতা, ঘুষ গ্রহীতা, সুদগ্রহীতা, সুদদাতা, সুদ লেনদেনের লেখক ও সাক্ষীদ্বয়কে এভাবে অনেক গুনাহে লিপ্ত সম্প্রদায়কে লানত করেছেন, এর দ্বারা উক্ত গুনাহগুলোর ভয়াবহতা উপলব্ধি করা যায়। এভাবে নবী ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি আমার সাহাবাগণকে গালি দেবে, তার উপর আল্লাহ, ফিরিশতাবর্গ এবং সমগ্র মানবজাতির লানত (অভিশাপ) হোক। যে ব্যক্তি লূত (আলায়হিস সালাম)-এঁর সম্প্রদায়ের ন্যায় অপকর্মে লিপ্ত হয়, তার ওপর আল্লাহর লা‘নত…..

গুনাহে লিপ্ত পাপিষ্ঠ ঈমানদার ব্যক্তি, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ কে ভালবাসে তাকে লা’নত করা যাবে না।

‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ-এঁর যুগে এক ব্যক্তি ছিল যার নাম ‘আবদুল্লাহ্ আর ডাকনাম ছিল হিমার। তিনি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-কে হাসাতেন। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ শরাব পান করার অপরাধে তাকে বেত্রাঘাত করেছিলেন। একদিন তাকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় আনা হল। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে চাবুক মারার আদেশ দিলেন। তাকে চাবুক মারা হল। তখন দলের মাঝ থেকে এক লোক বলল, হে আল্লাহ্! তার উপর লা‘নত বর্ষণ করুন! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তাকে কতবার যে আনা হল! তখন নবী ﷺ বললেনঃ তাকে লা‘নত করো না। আল্লাহর কসম! আমি জানি যে, সে আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলকে ভালবাসে। (সহীহ বুখারী ৬৭৮০)

(উল্লেখ্য যে, ইনিও সাহাবী ছিলেন। সাহাবীরা গুনাহ করতে পারেন, অনেকের দ্বারা গুনাহ সংঘটিত হয়েছেও, শুধুমাত্র নবীগণ মাসুম। কিন্তু সাহাবীগণ, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা’র প্রিয় হাবিব ﷺ এঁর সাহচর্য লাভ করার কারণে তাঁদের দ্বারা যেসব গুনাহ সংঘটিত হয়েছে, সেগুলোকে মাফ করে দেয়া হয়েছে, তাদেরকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না)

আবার, সর্বসম্মতিক্রমে নির্ধারিত হারাম কাজকে কেউ হালাল মনে করলে সেটা কুফরী। জালেম, ফাসেক ইয়াজিদ (লা’নাতুল্লাহি আলায়হি) কে কেউ কেউ তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে কাফের বলেছেন। অনেকেই তারা তার উপর লানত বর্ষণ করে।

তিন শ্রেণির মানুষ- যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শানে বিয়াদবীকারী, আহলে বাইতের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী ও সাহাবায়ে কেরামের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী; এদের দেখলে অনিয়ন্ত্রিতভাবেই লা’নতের শব্দ উচ্চারিত হয়ে যায়; আশা করি যে, এসব শ্রেণির লোকগুলো লা’নতযোগ্য এবং তাদের জন্য উচ্চারিত লা’নত নিজের উপর ফিরে আসবে না। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে এমন কেউ উক্ত কাজগুলোতে লিপ্ত হতে পারে না, আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালবাসা না থাকলে তারা মুমিন হতে পারে না। এই তিন শ্রেণির মানুষের আমল কোন কাজে আসবেনা এবং তাদের উপর আল্লাহ’র লানত বর্ষিত হয় কারণ এরা উক্ত কাজগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসূলকে কষ্ট দেয় আর “নিশ্চয় যারা কষ্ট দেয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে, তাদের উপর আল্লাহর লানত (অভিসম্পাত) দুনিয়া ও আখিরাতে এবং আল্লাহ তাদের জন্য লাঞ্চনার শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।”

(সূরা আহযাবঃ ৫৭)

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a reply

  • Default Comments (0)
  • Facebook Comments