যা যা আলোচিত হয়েছে :
১) নবী বিদ্বেষীদের দাঁতভাঙা জবাব :
আমরা হলাম নফসের তাড়নায় কামভাবে জর্জড়িত মানুষ, হাজার হাজার দোষ-গুনে ভরা সাধারন মানুষ,,
সেখানে যারা পরম পবিত্র মানব সত্ত্বা রাসুলুল্লাহ (সা) কে আমাদের মত মানুষ মনে করে তাদের জবাব।
২) রাসুলুল্লাহ (সা) এর একাধিক বিবাহের উদ্দেশ্য গুলো পর্যালোচনা করে নবীদ্রোহী ও নাস্তিকদের দাঁতভাঙা জবাব।
TOPICS → 1
আমরা সবাই মানুষ ও আল্লাহর সাধারন বান্দা তাই আমাদের বিবেক বুদ্ধি সব জায়গায় গিয়ে কাজ করে না।
আর এজন্যই পথভ্রষ্ট ও হেদায়াত বঞ্চিত মানুষগুলো রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে আমাদের মত দোষ-গুন আর রক্ত মাংসের গড়া একজন সাধারন মানুষের মতই দেখেন।
→ কিন্তু যারা আল্লাহর হেদায়াত প্রাপ্ত ও আল্লাহর বন্ধু তারা যেখানে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন সেখানে
★ সমস্ত সৃষ্টির আদিতে যিনি সৃষ্ট
★ সমস্ত সৃষ্টির মূলে যিনি সৃষ্ট
★ সমস্ত সৃষ্টি যার উসীলায় সৃষ্ট
★ সে নবীর মর্যাদা কতটুকু তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না।
তিনি হলেন আমাদের নবী মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সা) যিনি সর্বোচ্চ মর্যাদাবান ও বেমিসাল (অতুলনীয়) মাখলুক (সৃষ্টি)।
এমন নবীর শান আমি কি লিখব যার শান সম্পর্কে ইমামে আজম ইমাম নুমান বিন সাবিত (আবু হানিফা রা.) এর কাসীদায়ে নুমানের কয়েকটা লাইন উদৃত্তি দিচ্ছি । এই লাইনগুলো পড়লে ইমানদারগন অন্তরে প্রশান্তি লাভ করে আর বেইমান গন শিরিকের ভয় করে (ওহাবী-সালাফীরা)
যিনি ৫ লক্ষেরও অধিক হাদিসের হাফেজ ছিলেন কোন বেয়াদব শয়তান ছাড়া আর কেউ তার ভুল ধরবে না নিশ্চয়ই।
কাসীদায়ে নুমানের পংতি নং ৪১,৪২ এ কথা গুলো আছে সেই কথাগুলো আল কুরআনে আছে আল্লাহর শানে আল্লাহ নিজেই ব্যবহার করেছেন এই ভাবে কিন্তু এখানে ইমাম আবু হানিফা (রহ) রাসুলুল্লাহ (সা) এর শানে এই ভাবে বলেছেন যদি আমরা সুন্নীরা এভাবে বলতাম নির্ঘাত ওহাবীরা শিরিক বলে ফতোয়া দিত কিন্তু এখন কি বলবে তারা? আসলে এখানে ইমামে আজম রাসুলের প্রতি যে অঘাত প্রেম ভালবাসা ও শ্রদ্ধা অত্যন্ত সুন্দর ভাবে এর পরিপুর্ন বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছেন।
TOPICS → 2
→ এক নজরে সম্মানিত উম্মাহাতুল মুমে’নীনগন (আল কুরআনে ঘোষিত → সমস্ত মুমিনগনের মাতাগন ) এর নাম :-
১. খাদিজা বিনতু খুওয়াইলিদ (৫৯৫-৬১৯)
২. সাওদা বিনতু জামা (৬১৯-৬৩২)
৩. আয়িশা (৬১৯-৬৩২)
৪. হাফসা বিনতু উমর (৬২৪-৬৩২)
৫. জয়নব বিনতু খুযায়মা (৬২৫-৬২৭)
৬. উম্মে সালামা হিন্দ বিনতু আবি উমাইয়া (৬২৯-৬৩২)
৭. জয়নব বিনতু জাহশ (৬২৭-৬৩২)
৮. জুওয়াইরিয়া বিনতু আল-হারিস (৬২৮-৬৩২)
৯. রামালাহ বিনতু আবী-সুফিয়ান (৬২৮-৬৩২)
১০. রায়হানা বিনতু জায়েদ (৬২৯-৬৩১)
১১. সাফিয়া বিনতু হুওয়াই (৬২৯-৬৩২)
১২. মাইমুনা বিনতু আল-হারিস (৬৩০-৬৩২)
১৩. মারিয়া আল-কিবতিয়া (৬৩০-৬৩২)
→ সন্তান পুত্রগণ: কাসিম, আব্দুল্লাহ, ইব্রাহিম
→ কন্যাগণ: জয়নব, রুকাইয়াহ, উম্মে কুলসুম, ফাতিমা
(আল্লাহ পাক ওনাদের সকলের উপর শান্তি ও রহমত ভর্ষিত করুন)
সংক্ষিপ্ত আলোচনা :
বিশ্ব নবী হুজুর (সা:) এর বহু বিবাহ সম্পর্কে ইতিহাস যাহা সাক্ষ্য দিতেছে তাহার উদ্ধৃতি নিম্নে দেওয়া হল।
→ 1.
বিশ্ব নবী হুজুরে করিম (সা:) এর বয়স যখন ২৫ বছর তখন ৪০ বছর বয়স্কা নারী হযরত খাদিজাতুল কোবরা (রা:) এর সাথে প্রথম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত হুজুর পাক (সা:) অন্য কোন নারীকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহন করেন নাই।
→ 2.
যখন হযরত খাদিজাতুল কোবরা (রা:) ইন্তেকাল করেন তখন হুজুর পাক (সা:) হযরত সওদা (রা:) কে বিবাহ করেন। তিনি এক স্বামী হতে বিধবা ছিলেন।
→ 3.
তার পর হযরত আবু বকর (রা:) এর গভীর আগ্রহে, ওনার অনুরোধ ও ইচ্ছায় ২য় হিজরীতে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তখন মা আয়শা সিদ্দিকা (রা:) নাবালিকা ছিলেন। বিবাহের পর পূর্ণ ২ বৎসর অতিবাহিত হওয়ার পর বিশ্ব নবীর ঘরে মা আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) আসেন। নবী করিম (সা:) এর স্ত্রীগনের মধ্যে শুধু হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) ই ছিলেন এক মাত্র কুমারী। আর বাকী সব স্ত্রীগনই ছিলেন এক বা একাধিক স্বামী হতে বিধবা বা তালাক গৃহীতা।
→ 4.
তৃতীয় হিজরীতে হুজুর পাক (সা:) হযরত ওমর (রা:) এর কণ্যা হযরত হাফসা (রা:) কে বিবাহ করেন। তিনি তা করেন হযরত ওমর (রা:) একান্ত আগ্রহের কারণে। হযরত ওমর (রা:) আবু বকর (রা:) এর মত নবী করিম (সা:) এর শশুর হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। হাফসা (রা:) এক স্বামী হইতে বিধবা ছিলেন।
→ 5.
এই সনে অর্থাৎ হিজরীর তৃতীয় সনে জয়নব বিনতে খোজায়মা (রা:) কেও হুজুর পাক (সা:) বিবাহ করেন। তিনি তিন স্বামী হতে বিধবা ছিলেন। এবং বিয়ের তিন মাস পর তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
→ 6.
উক্ত সনে হুজুর পাক (সা:) আর একটি বিবাহ করেন তিনি হলেন হযরত উম্মে সালমা (রা:)। তিনি এক স্বামী হতে বিধবা ছিলেন।
→ 7.
পঞ্চম হিজরীতে হুজুর পাক (সা:) এর সাথে স্বয়ং আল্লাহ পাক হযরত জয়নব (রা:) কে বিবাহ পড়িয়ে দেন। তিনি নিজ স্বামী হতে তালাক গ্রহীতা ছিলেন।
→ 8.
এই হিজরীতে হযরত জুয়াইরিয়া (রা:) কে হুজুর পাক (সা:) নিজ আকদ নিকাহতে স্থান দিয়েছিলেন।
→ 9.
এই সনে হুজুর পাক (সা:) হযরত উম্মে হাবিবা (রা:) কেও বিবাহ করেন। তাহার স্বামী ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেছিলেন। ফলে তিনি অসহায় হয়ে পড়েন।
→ 10.
সর্ব শেষ হযরত মায়মুনা (রা:) কে হুজুর পাক (সা:) ৭ম হিজরীতে স্ত্রী রুপে গ্রহণ করেন। তিনি দুই স্বামী হইতে বিধবা ছিলেন।
আলোচনাঃ-
নাস্তিক ও বেয়াদব দের উদ্দেশ্যে বলছি,
কাম ভাবের তাড়নায় যদি হুজুর পাক (সা:) বহু বিবাহ করিতেন তাহলে যৌবনের এক বড় অংশ অর্থাৎ ২৫ হইতে ৫০ বৎসরের বয়স পর্যন্ত শুধু মাত্র একজন বৎসর বয়স্কা বিধবা নারীর সহচরে কাটাইতেন না। তাই না?
আর উম্মুল মু’মেনীন হযরত খাদিজাতুল কুবরা (রা:) হুজুর পাক (সা:) হতে ১৫ বছরের বড় ছিলেন।
→ আর প্রিয় নবীজি (সা:) যদি চাইতেন সমগ্র পৃথীবীর মধ্যে যত সংখ্যক সর্বাধিক সুন্দরী ও কুমারী কন্যাগন রয়েছে তারা তাদের নিজেকে রাসুলের খেদমতে ওনার কদমে স্বপে দিতেন, তিনি ইচ্ছানুয়ী বিয়ে করতে পারতেন কিন্তু তিনি তা না করে বিধবা বা তালাক প্রাপ্ত মহিলাদের বিয়ে করেছিলেন কেন? এই চিন্তা কি মাথায় একবারও আসে না? কারন তাদের কেউ কেউ ছিল অসহায় ও দরিদ্র।
যদি নবীজি (সা) চাইতেন সাহাবীদের মধ্যে অনেক সাহাবীর কুমারী কণ্যা ছিল যারা রাসুলের জন্য জীবন পর্যন্ত কোরবানী করতে প্রস্তুত ছিলেন, তাদের কন্যাদেরও তিনি বিবাহ করিতে পারিতেন। কিন্তু নবী করিম (সা:) শুধু মাত্র মা আয়েশা (রা:) কে কুমারী অবস্থায় বিবাহ করেছিলেন। বাকিরা বিধবা ও তালাক গ্রহিতা ছিলেন। আর অন্যান্য সাহাবীদের কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন সাহাবীগনের বিনীত অনুরোধে।
নবী করিম (সা:) এর বহু বিবাহের কারন ছিল নিম্ন রুপ, যেমন :
(১) প্রিয় নবীজি তাদের কে এই কারনে বিবাহ করেছিলেন যে তাদের মধ্যে অনেকেই হুজুর পাক (সা:) এর পবিত্র আশ্রয় গ্রহন করতে চেয়েছিলেন। আর রাসুল (সা) যেখানে কোন কথাই আল্লাহর আদেশ/হুকুম ব্যাতীত বলতেন না সেখানে তিনি যত সংখ্যক বিয়ে করেছিলেন সব আল্লাহর ইচ্ছাতেই করেছিলেন।
(২) নবী করিম (সা:) মেয়ে লোকদের জন্য ও নবী হইয়া প্রেরিত হইয়া ছিলেন। মেয়ে লোকদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মাছয়ালার ওয়াকেফ হাল বয়ান করিয়া দিয়াছেন। যেমন কতিপয় বিষয় তিনি নারীগনের নিকট বর্ননা করতে লজ্জাবোধ করতেন সেগুলো উম্মাহাতুল মুমেনিনগন নারীদের বুঝিয়ে দিতেন।
(৩) অনেকেই আবার অভিভাবকহীনা ছিলেন। মাথা গুজিবার কোন জায়গা ছিলনা, ঠাই ছিল না । তারা প্রিয় নবীজির আশ্রিত হতে চেয়েছিলেন। তাই নবীজিতাদের আশ্রয় দানের জন্য স্ত্রী হিসাবে গ্রহন করিয়া ছিলেন। রাসুল ছিলেন তাদের জন্য একমাত্র সাহারা (আশ্রয়)
(৪) কেহ কেহ বড় বড় সরদারদের কন্যা ছিলেন তারা মুসলমানদের হাতে আসার পর কাহার অধীনে আশ্রিত হতে চাইত না আবার অনেকে কাহার অধিনে থাকার শোভা পাইতেছিলনা। ইত্যাদি কারনে হুজুর (সা:) তাদের বিবাহ করে ছিলেন।
(৫) কেহ কেহ বাদী ছিলেন হুজুর পাক (সা:) তাদের মুক্ত করে দিয়ে বিবাহ করেছিলেন। ইহা দ্বারা প্রমানিত হয় যে, ইসলাম গোলামী প্রথাকে পছন্দ করে না।
(৬) তাছাড়া আল্লাহ পাক নবী করিম (সা:) এর জন্য অগনিত স্ত্রী লোক জায়েজ করে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি ১৩ জনের বেশি বিয়ে করেন নি তাও কি উদ্দেশ্য ছিল তা উপরে বর্নিত হয়েছে।
যেমন আল্লাহ পাক বলেছেন,
অর্থাৎ আপনি যাকে ইচ্ছা বিবাহ করিতে পারেন তাতে কোন আপত্তি নাই।
★ আল্লামা কুরতবী ও ইমাম খাত্তাবী একটি ছহিহ রেওয়ায়েত নকল করিয়াছেন যে,
“ হুজুর করিম (সা:) শরীর মোবারকে ৪০ জন জান্নাতী পুরুষের শক্তি ছিল। আর একজন নিম্নতম জান্নাতী পুরুষের শরীরে কমপক্ষে ১০০ জন দুনিয়ার পুরুষের সমপরিমান শক্তি থাকে। “`
↓
★ ইহা থেকে বলা যায় যে, হুজর পাক (সা:) এর শরীর মোবারকে (৪০* ১০০) = ৪০০০ হাজার সু-পুরুষের শক্তি ছিল।
★ আল্লাহ পাক দুনিয়ার একজন সাধারন মুসলমান পুরুষের জন্যও ৪ জন স্ত্রী গ্রহন করা জায়েজ করিয়াছেন। সে হিসাবে নবী করিম (সা:) এর ১৬,০০০ (ষোল হাজার) স্ত্রীর প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সে স্থলে নবী করিম (সা:) মাত্র ৯/১১/১৩ জন স্ত্রীর উপর যথেষ্ট ছিলেন।
আর তাহারাও আবার এক বা একাধিক স্বামী হতে বিধবা ছিলেন যারা ছিল অত্যন্ত অসহায় ও অনেকে আশ্রয়হীনা, আবার কেউ কেউ তালাকপ্রাপ্ত ।
ইহা দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, নবী করিম (সা:) কতই না ধৈর্য্যশীল ছিলেন। জ্ঞানী লোকেরাই ইহা বুঝিতে পারিবেন।
আর ধোকাবাজদের ধোকাবাজিতে পড়ার কোন সুযোগ নাই। যাহারা নবী করিম (সা:) এর সম্পর্কে এবং তাহার পুত:পবিত্র ও সমস্ত মুমিনের মাতা স্বরুপ ওনার মহাসম্মানিত স্ত্রীগনকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন তাদের আমি ধিক্কার জানাই। তারা মোটেও ইমানদার নয়।
তাদের উপর আল্লাহ পাক ও সমস্ত ফেরেশতা ও সৃষ্টিকুলের লানত হোক।