হযরত আবু বকর (রা.) ও হযরত উমর (রা.)
উপস্থিত না থাকার অভিযোগ*
মূল:
ফাওয়াদুন নাফিয়াহ প্রথম খণ্ড থেকে সংগৃহীত
লেখক:
শায়খ মুহাম্মদ নাফিঈ
অনুবাদক:-নাঈম আল-জা’ফরী
সম্পাদক: মওলানা মুহাম্মদ রুবাইয়াত বিন মূসা
بسم الله الرحمن الرحيم
نحمده ونصلي على رسوله الكريم
মহান আল্লাহর নামে আরম্ভ, যিনি পরম দয়ালু ও করুনাময়।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, সমস্ত বিশ্বজগতের পালনকর্তা। শেষ নবী (মুহাম্মদ সাঃ), তাঁর পরিবার এবং মহান সাহাবা (রাঃ) – এর সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির প্রতি লাখ দরুদ ও সালাম।
ভূমিকা:
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন,
كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلالِ وَالإكْرَامِ
ভূপৃষ্ঠের সব কিছুই ধ্বংসশীল, একমাত্র আপনার মহিমাময় ও মহানুভব পালনকর্তার সত্তা ছাড়া।
[ আল কুরআন: আর রাহমান, ৫৫/২৬-২৭]
আরো ইরশাদ করেন,
كُلُّ نَفْسٍۢ ذَآئِقَةُ ٱلْمَوْتِ
প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে।
[আল কুরআন : আলে ইমরান, ৩/১৮৫]
অন্যত্র ইরশাদ করেন,
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ ۖ فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً ۖ وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ.
আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ রয়েছে। যখন তাদের মেয়াদ এসে যাবে, তখন তারা না এক মুহূর্ত পিছে যেতে পারবে, আর না এগিয়ে আসতে পারবে।
[(ক) আল কুরআন : আল আ’রাফ, ৭/২৪। (খ) ইউনুস : ১০/৪৯]
কাজেই পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণকারী সকলেরই মৃত্যু হবে। নবী-রাসুলরা যেহেতু মানুষ ছিলেন, সেহেতু তাঁদের মৃত্যু হওয়া স্বাভাবিক । আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন,
إِنَّ الْمَوْتَ الَّذِي تَفِرُّونَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مُلاقِيكُمْ
যে মৃত্যু হতে তোমরা পলায়ন করছ, তা তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবেই।
[ আল কুরআন : আল জুম’আ, ৬২/ ৮]
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানবজাতিকে প্রথমে রুহের জগতে রেখেছিলেন, তারপর দুনিয়ার জগতে পাঠিয়েছেন, এরপর বারজাখ জগতে থাকতে হবে এবং সর্বশেষ আখিরাত বা পরকালীন জগতে যেতে হবে। মৃত্যু হলো পরজগতে যাওয়ার সেতুস্বরূপ। সাধারণ মানুষের মৃত্যু তাদের অজান্তে হলেও নবী-রাসূলদের তা পূর্বেই অবহিত করা হয়। বুখারী শরিফের বর্ণনামতে ,
لَمْ يُقْبَضْ نَبِيٌّ قَطُّ حَتَّى يَرَى مَقْعَدَهُ مِنْ الْجَنَّةِ ثُمَّ يُخَيَّرُ
কোন নবীরই (জান) কবয করা হয় না, যতক্ষণ না তাঁকে জান্নাতে তাঁর স্থান দেখানো হয়, আর তাঁকে (জীবন অথবা প্রস্থান) যে কোন একটিকে বেছে নেয়ার অধিকার না দেয়া হয়। [ (ক) বুখারি : ৮/১০৬, হাদিস নং ৬৫০৯। (খ) মুসলিম : ৪/১৮৯৪, হাদীস নং ২৪৪৪।]
বিশুদ্ধ হাদিস ও ঐতিহাসিকদের তথ্যমতে, নবীজি (সা.)-৬৩ বছর বয়সে ১১ হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার দ্বিপ্রহরে ইন্তেকাল করেন। আর দাফন হয়েছিল বুধবার এশার সময়। আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর, রাসুল (সাঃ)-এর কাছে একটি মিসওয়াক হাতে নিয়ে এসেছিলেন, রাসুল (সাঃ) বারবার মিসওয়াকের দিকে তাকাতে দেখে হযরত আয়েশা বলেন, ‘আপনি কি মিসওয়াক করবেন?’ তখন তিনি মাথা মোবারক নেড়ে সম্মতি জানালে হযরত আয়েশা (রাঃ) একটি মিসওয়াক নিয়ে মুখে চিবিয়ে নরম করে রাসুল (সাঃ)-কে দেন। তিনি সেই মিসওয়াক দিয়ে মিসওয়াক করেন। রোগযন্ত্রণা কখনো বৃদ্ধি পাচ্ছিল আবার কখনো হ্রাস পাচ্ছিল। ওফাতের দিন সোমবার তিনি অনেকটা সুস্থ ছিলেন। কিন্তু সময় যত গড়াতে থাকে, তিনি ততই ঘন ঘন বেহুঁশ হতে থাকেন। এ অবস্থায় তাঁর পবিত্র জবানে উচ্চারিত হতে থাকে, আল্লাহ যাঁদের প্রতি অনুকম্পা করেছেন, তাঁদের দলভুক্ত করুন, কখনো বলতে থাকেন, আল্লাহুম্মার রফিকাল আ’লা ‘হে আল্লাহ, আপনি মহান বন্ধু!’ আবার কখনো বলতে থাকেন, এখন আর কেউ নেই, তিনিই মহান বন্ধু। এ কথাটি তিনবার উচ্চারণ করেন। তখন তাঁর পবিত্র আত্মা প্রিয় বন্ধু আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যায়। রাসূল (সাঃ)-এর ইন্তেকালের পর সাহাবিরা তাঁর দাফনক্রিয়া সম্পন্ন করতে তিন দিন সময় পার করেছেন। এ কথাটি খুবই প্রচলিত। আসলে বাস্তবতা কি এমনই ছিল?
বিশুদ্ধ হাদিস ও ঐতিহাসিকদের তথ্যমতে, নবীজি (সাঃ)-এর ইন্তেকাল হয়েছিল সোমবার দ্বিপ্রহরে মতান্তরে বিকেলে আর দাফন হয়েছিল বুধবার এশার সময়। তাহলে আরবি হিসাবে (সূর্যাস্ত থেকে অপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত এক দিন ধরে) সোমবার দিনের ১ ঘণ্টা বা ২ ঘণ্টা, মঙ্গলবার (সোমবার সূর্যাস্তের পর থেকে মঙ্গলবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত) ২৪ ঘণ্টা এবং বুধবারের (মঙ্গলবার সূর্যাস্তের পর থেকে বুধবার সূর্যাস্তের পর থেকে এশা পর্যন্ত) ১ ঘণ্টা বা ২ ঘণ্টা (মোট ২৬ বা ২৮ ঘণ্টা)।
ওপরের বিবরণ থেকে দেখা যায়, আরবি হিসাবে তিন দিন (সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার), আর এই তিন দিন বিলম্ব হওয়ার অনেক যৌক্তিক কারণ রয়েছে, যা প্রামাণ্য সিরাত গ্রন্থসমূহে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। প্রিয় নবীজি (সাঃ) ইন্তেকালের আগে একাধিকবার অজ্ঞান হয়েছিলেন এবং পুনরায় সুস্থ হয়েছিলেন। তাই ১২ রবিউল আউয়াল ইন্তেকাল করলেও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দীর্ঘ সময় পর যখন তাঁর ইন্তেকাল নিশ্চিত হয়, তখন মধ্যরাত। মঙ্গলবার সকালবেলায় যখন তাঁর মৃত্যুর খবর সাহাবায়ে কিরাম শুনলেন, তখন অনেকেই তা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেননি। যেমন হজরত উমর (রাঃ) নবীজি (সাঃ)-এর ইন্তেকালের খবর শুনে পাগলপ্রায় হয়ে গেলেন। তিনি তরবারি নিয়ে বেড় হলেন আর বললেন,
من قال: إن محمدا قد مات قتلته بسيفي هذا
যে বলবে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ইন্তেকাল করেছেন, আমি তাকে এ তরবারি দিয়ে হত্যা করব। [ আশ শাহরাসতানী : আল মিলাল ওয়ান নিহাল, ১/২১]
এই অবস্থায় হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) সাহাবায়ে কিরামকে মসজিদে নববিতে ডেকে একত্র করে একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিলেন। তাতে তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন:
كُلُّ نَفْسٍۢ ذَآئِقَةُ ٱلْمَوْتِ
জীবনমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।’ [আল কুরআন : আলে ইমরান, ৩/১৮৫]
তিনি আরও বলেন, কোরআনে রয়েছে,
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ ۚ أَفَإِن مَّاتَ أَوْ قُتِلَ انقَلَبْتُمْ عَلَىٰ أَعْقَابِكُمْ ۚ وَمَن يَنقَلِبْ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ فَلَن يَضُرَّ اللَّهَ شَيْئًا ۗ وَسَيَجْزِي اللَّهُ الشَّاكِرِينَ
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) অবশ্যই একজন রাসুল, তাঁর পূর্বে বহু নবী (আঃ) ও রাসুল (আঃ) গত হয়েছেন। তবে যদি তিনি মৃত্যুবরণ করেন অথবা শহীদ হন, তবে কি তোমরা পেছন দিকে ফিরে যাবে? [আল কুরআন : আলে ইমরান, ৩/১৪৪]
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরও বলেছেন:
إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُمْ مَيِّتُونَ
হে নবী! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিশ্চয় আপনি মরণশীল এবং তারাও মরণশীল। [আল কুরআন : আলে ইমরান, ৩৯/৩০]
রাসুলুল্লাহ সাঃ এর জানাযায় আবু বকর ও উমর (রাঃ) উপস্থিত না হওয়া সম্পর্কিত অভিযোগ
গোসল, কাফন এবং দাফনে দেওয়ার সময় উপস্থিত না থাকার অভিযোগ।
সাহাবা (রাঃ) এর সমালোচকরা প্রথিতযশা সাহাবা (সায়্যিদুনা আবু বকর এবং সায়িদুনা উমর রাঃ) এর বিরুদ্ধে অভিযোগটি আরোপ করেছেন যে তাঁরা রসুলুল্লাহ সাঃ-এর গোসল, কাফন ও দাফনে অংশ নেননি। খেলাফতের বিষয়ে তাঁরা অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণে এ ফযিলত থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন; পরিবর্তে বানু সাইদা গোত্র দিকে এগিয়ে যাওয়া এবং সেখানে তাঁরা বিতর্কিত বিষয়ে সমাধানের জন্য চেষ্টা রত থাকা। অন্যদিকে, রাসুলুল্লাহ সাঃ এর গোসল, কাফন ও দাফন সায়্যিদুনা আলী (কঃ) সম্পন্ন করেছিলেন। বর্ণিত আছে,
عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ , عَنْ أَبِيهِ , أَنَّ أَبَا بَكْرٍ , وَعُمَرَ لَمْ يَشْهَدَا دَفْنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ” ; كَانَا فِي الْأَنْصَارِ فَدُفِنَ قَبْلَ أَنْ يَرْجِعَا
উরওয়া ইবনে হিশাম তাঁর পিতা সূত্রে বর্ণনা করেন, আবু বকর এবং উমর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর দাফন প্রত্যক্ষ করতে পারেন নি, তাঁরা আনসারদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং তাঁরা ফিরে আসার আগেই তাঁকে (রাসুলুল্লাহ সাঃ) দাফন করা হয়েছিল।
এই আপত্তিটি আরও জোরালো ও বাড়ানোর জন্য, যারা আপত্তি করেন তারা নিম্নলিখিত কবিতাটি রচনা করেছিল, যা তারা প্রায়শই আবৃত্তি করতো:
সাহাবা যখন যগৎ সংসারের খেলাফত নিচ্ছিলেন। একটি কাফন ছাড়া মোস্তফা সঃ একা শুয়ে ছিল।
উত্তর:
এই অভিযোগটি সম্পূর্ণ ঐতিহাসিক সত্যের পরিপন্থী, যেমনটি আমরা নিম্নলিখিত পৃষ্ঠাগুলিতে আলোচনা করব। এটি সিহাহ্-আল-সিত্তার কাছ থেকে নয়, বরং একটি বই থেকে প্রাপ্ত একটি বর্ণনার উপর ভিত্তি করে করা যা সঠিক উৎস থেকে তা বর্ননা করা হয়নি। এই বিভাগের বইগুলিতে, সমস্ত বর্ণনাকে একত্রিত করা হয়েছে এবং সমস্ত প্রকারের বিষয় সংকলিত করা হয়েছে (দায়িত্ব সহকারে পাঠকের ভরসা রাখার আগে তা প্রমাণ করার জন্য উপাদানের সত্যতা বা বিশুদ্ধতা যাচাই বাছাই এর জন্য সংকলক প্রয়োজন)।
শাহ আব্দুল আযীয রাহিমাহুল্লাহ তুহফাহ ইছনা আশারিয়ায় গ্রন্থে এটি উল্লেখ করেছেন,
على أن تكون الإلزامات التي يوردونها يزعمهم على أهل السنة والجماعة مطابقة لما في الكتب المعتبرة.
এই বইগুলোতে আহলে সুন্নাহর উপর শিয়ারা তাদের সমালোচনা ও আপত্তি জানিয়ে উদ্ধৃত করেছেন; প্রথমত, এগুলি বিরল এবং তাদের সংকলকগণ যেখানে যাহা সত্য আছে তা থেকে সংকলনের জন্য গ্রহণ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, তারা সমস্ত ধরণের বিশুদ্ধ এবং অপ্রমাণিত বিবরণ সংগ্রহ করেছিল, পরে এটি পর্যালোচনা করার ইচ্ছায় … (তাযকিরাতুল হুফফাজ খণ্ড ১/৬২)
তদুপরি, শাহ আব্দুল আযীয রহিমাহুল্লাহ উজালাহ নাফিয়ায় তে এ বিষয়টি পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, মুহাদ্দিসীনদের মতানুসারে এই বইগুলি তৃতীয় শ্রেণির পর্যায় পড়ে; এবং উপরে বর্ণিত বিবরণটি একই বিভাগের বইগুলি থেকে নেয়া। প্রত্যক ধরণের বর্ণনাকে এর মধ্যে সংকলিত করা হয়েছে এবং এর সংকলনে সত্যিকারের কোনও মানদণ্ড ধরা হয়নি।
তদুপরি, এটিকেও স্পষ্ট করে বলা দরকার যে ‘সমালোচকদের’ দ্বারা উপস্থাপিত এই বর্ণনাকে মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা এর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে যার মুনকাতী (বিচ্ছিন্ন) ইসনাদ রয়েছে এবং মতনটি শা’য (অস্বাভাবিক)।
আমরা প্রথমে এই বর্ণনাটি কিভাবে মুনকাতি বলে তা নিয়ে আলোচনা করব, তারপরে এই বর্ণনার অস্বাভাবিক প্রকৃতি সম্পর্কিত একটি ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করব, যা প্রমাণ করবে যে এই বর্ণনায় ঐতিহাসিক সত্যের বিরোধী এবং এটি গ্রহণযোগ্যতার যোগ্য নয়।
হতাশার কারণ:
বর্ণনাটি প্রচার করেছেন তাবেয়ী উরওয়া ইবনে যুবাইর এবং রসুলুল্লাহ সাঃ-এর ওফাতের সময়ে উরওয়া ইবনে যুবাইর তখনও জন্মগ্রহণ করেননি। প্রকৃতপক্ষে, উরওয়া ইবনে যুবাইর এর জীবনী প্রনেতাগণ লিখেছেন যে, সায়্যিদুনা উমর (রাঃ) -এর খেলাফাতের শেষের দিকে বা সায়্যিদুনা উসমান (রাঃ) এর খিলাফতের সূচনার দিকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। নির্দেশ করে:
১) তাযকিরাতুল হুফফাজ খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ৬২।
২) তাহাযীবুত তাহাযীব খণ্ড ৭ পৃষ্ঠা ১৮৩, ১৮৪।
সুতরাং, এটি নিশ্চিত যে ঘটনাটি সংঘটিত হওয়ার সময় বর্ণনাকারী উপস্থিত ছিলেন না। আমরা আরও জানতে পেরেছি যে এর পরে অন্য কেউ উরওয়া থেকে উল্লেখিত বর্ণনা করেছিল। এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে গেল যে এই বর্ণনাই মুনকাতি।
শা’য হওয়ার কারণ:
উপরিউক্ত বর্ণনাকারী শা’য হওয়ার কারণ হলো যে, এই বর্ণনার তুলনায়, এই ঘটনার সাথে অন্যান্য সুপরিচিত যে বর্ণনাগুলি রয়েছে সেগুলোর একটি ধারাবাহিক সনদ রয়েছে এবং সেগুলি সহীহ ও হাদীসের আলেমদের মতে গৃহীত হয়েছে। এই সুপরিচিত বর্ণনায় পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর ওফাতের সময় সায়্যিদুনা আবু বকর (রাঃ) এবং সায়্যিদুনা উমর (রাঃ) উপস্থিত ছিলেন।
পরবর্তীকালে হাদীসের বইগুলি থেকে নীচে কয়েকটি সুপরিচিত বর্ণনা উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে বিষয়টি স্পষ্ট।
অন্যান্য বিবরণ:
ইমাম আল-তিরমিযী রহিমাহুল্লাহ সালিম ইবনে উবাইদ আল আশজাই থেকে নিম্নলিখিত বর্ণনাটিকে লিপিবদ্ধ করেছেন, প্রথম উল্লেখ:
عن سالم بن عبيد (الاشجعي) وكانت له صحبة
সেলিম ইবনে উবাইদ আল আশজাই থেকে এবং তিনি ছিলেন সাহাবী।
রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর ওফাতের সময়কার পরিস্থিতি ও ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়ার সময়, সুফ্ফার সাহাবীদের মধ্যে থাকা সালিম ইবনে উবায়দ (রাঃ) (এই উভয় বর্ণনার বর্ণনাকারী) বলেন,
فَقَالَ: انْطَلْقِ فَانْطَلَقَتُ مَعَهُ وَجَاءَ وَالنَّاسُ قَدْ أَكَبُّوا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَفْرِجُوا لِي. قَالَ: فَأَفْرَجُوا لَهُ، فَجَاءَ حَتَّى أَكَبَّ عَلَيْهِ ثُمَّ لَمَسَهُ ثُمَّ قَالَ: {إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُمْ مَيِّتُونَ} فَقَالُوا: يَا صَاحِبَ رَسُولِ اللَّهِ أَقُبِضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: نَعَمْ. فَعَلِمُوا أَنْ قَدْ صَدَقَ. فَقَالُوا: يَا صَاحِبَ رَسُولِ اللَّهِ نُصَلِّي عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ : نَعَمْ. قَالُوا: كَيْفَ؟ قَالَ: يَدْخُلُ قَوْمٌ فَيُكَبِّرُونَ وَيَدْعُونَ ثُمَّ يَخْرُجُونَ حَتَّى يَدْخُلَ النَّاسُ. قَالُوا: يَا صَاحِبَ رَسُولِ اللَّهِ أَيُدْفَنُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالُوا: أَيْنَ؟ قَالَ: فِي الْمَكَانِ الَّذِي قَبَضَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِيهِ رُوحَهُ؛ فَإِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى لَمْ يَقْبِضْ رُوحَهُ إِلَّا فِي مَكَانٍ طَيِّبٍ. فَعَلِمُوا أَنْ قَدْ صَدَقَ. ثُمَّ أَمَرَهُمْ أَنْ يُغَسِّلَهُ بَنُو أَبِيهِ.
“আমি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর ইন্তেকাল সংবাদ আবু বকর (রাঃ) কে অবহিত করেছিলাম, সুতরাং তিনি (আবু বকর রাঃ) আমাকে বললেনঃ আমার সাথে এসো। সুতরাং আমি তাঁর সাথে সাথে গেলাম এবং যারা রাসুলুল্লাহ সাঃ এর ঘরে প্রবেশ করেছিল, তিনি সেই লোকদের ভিড়ের কাছে পৌঁছে গেলেন। তখন তিনি বলেছিলেন: ‘হে লোকেরা! আমার জন্য জায়গা করুন, ’সুতরাং তারা তাঁর যাবার জন্য জায়গা তৈরি করে দিল। আবু বকর (রাঃ) রসুলুল্লাহ সাঃ এর ঘরে প্রবেশ করে তাঁর দিকে তাকালেন, তিনি ঝুঁকে পড়ে রসুলুল্লাহ সাঃ-এর কপালে চুমু খেলেন। অতঃপর তিনি তেলাওয়াত করলেন: إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُمْ مَيِّتُونَ ‘নিশ্চয়ই আপনি ওফাত বরণ করবেন এবং তারাও মৃত্যু বরণ করবে’ উপস্থিত লোকেরা জিজ্ঞাসা করেছিল: “রাসুলুল্লাহ সাঃ এর কি সত্যি ওফাত হয়েছে?” তিনি বলেছিলেন: “হ্যাঁ, তাঁর ওফাত হয়েছে।” তারা জানত যে তিনি সত্য বলেছেন, (যদিও তারা এর আগে বিভ্রান্তিতে পড়েছিল)। ” লোকেরা তখন জিজ্ঞাসা করেছিল: ‘হে রাসূল সাঃ এর সাহাবী, আমরা কি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর উপর সালাত আদায় করব?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ!’ তাঁরা তখন জিজ্ঞাসা করেছিল: ‘নামাজের জানাযা কীভাবে হবে?’ তখন তিনি ব্যাখ্যা করলেন যে, একটি দল আসবে গৃহে প্রবেশ করবে; তারা তাকবির পাঠ করবে, প্রার্থনা করবে, দুরুদ পেশ করবে এবং তারপরে চলে যাবে। এর পরে আর একটি দল প্রবেশ করবে; তারা তাকবির পাঠ করবে, প্রার্থনা করবে, দুরুদ তেলাওয়াত করবে এবং তারপরে চলে যাবে। এইভাবে সবাই রসুলুল্লাহ সাঃ এর উপর সালাত আদায় করবে। ’ তখন উপস্থিত লোকেরা বলেছিল: ‘হে রসূল সা.-এর সাহাবী, রাসুলুল্লাহ সাঃ কে কী দাফন করা হবে?’ উত্তরে তিনি বললেন: ‘হ্যাঁ!’ তারা জিজ্ঞাসা করেছিল: ‘তাঁকে কোথায় দাফন করা হবে?’ তিনি জবাব দিয়েছিলেন: ‘আল্লাহ যে জায়গাটি তাঁর নবীর প্রাণ গ্রহণ করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাদের (নবীদের) প্রাণকে নিখুঁত স্থান ব্যতীত গ্রহণ করেন না।’ তারা জানত যে তিনি সত্য কথা বলছিলেন। এরপরে তিনি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর পিতৃকুলের আত্মীয়দের কে গোসল করানোর জন্য আদেশ দেন (সায়্যিদুনা আলী (আঃ) তাদের মধ্যে ছিলেন)। ” [ (ক) তিরমিযী : আশ শামায়িল পৃষ্ঠা ৬০০ হাদীস নং-৩৭৯, ৩৯৭। (খ) শরফুল মুস্তাফা, বর্ণনা নং-৮৫০, (গ) আল আনওয়ার ফী শামায়িলিন নাবিয়্যিল মুখতার, বর্ণনা নং-১২০৯, (ঘ) মাযমাউজ যাওয়ায়িদ- কিতাবুল খিলাফাহ খণ্ড ৫ পৃষ্ঠা ১৮২-১৮৩ ইবনে মাজাহ এবং তাবারানী থেকে
(ঙ) তাবারানী : আল মু’জামুল কাবীর, ৭/৫৬, হাদীস নং ৬৩৬৭। (চ) বায়হাকী : আস সুনানুল কুবরা, ৪/৪৮, হাদীস নং ৬৯০৬।]
বিখ্যাত মুহাদ্দিস নূরুদ্দীন আল-হাইছামী, ইবনে মাজাহ ও তাবারানীর থেকে এই ঘটনাটি নিম্নলিখিত ভাষায় প্রকাশ করেছেন,
وعن سالم عن عبيد وكان من أصحاب الصفة قَالَ: أَوْسِعُوا، فَأَوْسَعُوا لَهُ، فَأَكَبَّ عَلَيْهِ، وَمَسَّهُ، وَقَالَ: {إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُمْ مَيِّتُونَ} [الزمر: 30] قَالُوا: يَا صَاحِبَ رَسُولِ اللهِ، مَاتَ رَسُولُ اللهِ؟ قَالَ: نَعَمْ، فَعَلِمُوا أَنَّهُ كَمَا قَالَ، قَالُوا: يَا صَاحِبَ رَسُولِ اللهِ، أَنُصَلِّي عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالُوا: كَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْهِ؟ قَالَ: يَدْخُلُ قَوْمٌ فَيُكَبِّرُونَ، وَيَدْعُونَ وَيُصَلُّونَ، ثُمَّ يَنْصَرِفُونَ، وَيَجِيءُ آخَرُونُ، حَتَّى يَفْرُغُوا، قَالُوا: يَا صَاحِبَ رَسُولِ اللهِ، أَيُدْفَنُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالُوا: وَأَيْنَ يُدْفَنُ؟ قَالَ: حَيْثُ قُبِضَ، فَإِنَّ اللهَ تَعَالَى لَمْ يَقْبِضْهُ إِلَّا فِي بُقْعَةٍ طَيِّبَةٍ، فَعَلِمُوا أَنَّهُ كَمَا قَالَ، ثُمَّ قَامَ، فَقَالَ: عِنْدَكُمْ صَاحِبُكُمْ، فَأَمَرَهُمْ يُغَسِّلُونَهُ.
আরো এসেছে-
১-সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী- ৩/৩৯৫, بَابُ مَنْ يَكُونُ أَوْلَى بِغُسْلِ الْمَيِّتِ হাদীস নং-৬৬৫৬।
২-সুনানু বায়হাকী আল কুবরা- ৪/৩০, بَابُ الْجَمَاعَةِ يُصَلُّونَ عَلَى الْجِنَازَةِ أَفْذَاذًا হাদীস নং-৬৯০৬।
৩- সুনানু বায়হাকী আল কুবরা- ৮/১৪৫, بَابُ لَا يَصْلُحُ إِمَامَانِ فِي عَصْرٍ وَاحِدٍ হাদীস নং-১৬৫৪৯।
সায়্যিদা আয়েশা (রাঃ) এর বর্ণনা:
উপরিউক্ত বর্ণনাটি যেমন সেলিম ইবনে উবাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তেমনিভাবে সায়্যিদা আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,
لَمَّا قُبِضَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اخْتَلَفُوا فِي دَفْنِهِ، فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا مَا نَسِيتُهُ، قَالَ: مَا قَبَضَ اللَّهُ نَبِيًّا إِلاَّ فِي الْمَوْضِعِ الَّذِي يُحِبُّ أَنْ يُدْفَنَ فِيهِ، ادْفِنُوهُ فِي مَوْضِعِ فِرَاشِهِ.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাতের পর তাঁর দাফন সম্পর্কে মতবিরোধ দেখা দেয়। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমি এই বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিছু শুনেছি যা আমি ভুলি নাই। তা হলো, তিনি বলেছেন, যে স্থানে আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবীর দাফন হওয়া পছন্দ করেন সেই স্থানেই তাঁর রূহ কবয করেন। তোমরা তাকে তার শয্যাস্থানে দাফন কর। পরে সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর শয্যাস্থানে দাফন করেন। [ (ক) তিরমিযী : আস সুনান, ৩/৩২৯, হাদীস নং ১০১৮। (খ) আত তাবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ, ৩/১৬৮১, হাদীস নং ৫৯৬৩।]
সায়্যিদুনা ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস:
সালিম ইবনে উবাইদ ও সায়্যিদা আয়েশা (রাঃ) এর বর্ণনাটি প্রচারিত হয়েছে। এর পরে, সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর বর্ণনা উপস্থাপন করা হয়েছে, ইবনে মাজাহ থেকে:
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: لَمَّا أَرَادُوا أَنْ يَحْفِرُوا لِرَسُولِ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – بَعَثُوا إِلَى أَبِي عُبَيْدَةَ بْنِ الْجَرَّاحِ …….
لَقَدْ اخْتَلَفَ الْمُسْلِمُونَ فِي الْمَكَانِ الَّذِي يُحْفَرُ لَهُ، فَقَالَ قَائِلُونَ: يُدْفَنُ فِي مَسْجِدِهِ. وَقَالَ قَائِلُونَ: يُدْفَنُ مَعَ أَصْحَابِهِ. فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – يَقُولُ: “مَا قُبِضَ نَبِيٌّ إِلَّا دُفِنَ حَيْثُ يُقْبَضُ …الخ
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত: “যখন তারা রাসুলুল্লাহ সাঃ কে দাফনের পরিকল্পনা করেছিল, তখন তারা আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহকে ডেকে পাঠালেন … কোথায় তাঁকে দাফন করা উচিত তা নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে মতভেদ দেখা দিয়েছিল। কেউ কেউ বলেছিলেন যে তাঁকে মসজিদে সমাধিস্থ করা উচিত। কেউ কেউ বলেছিলেন যে তাঁর সাহাবার সাথে তাকে দাফন করা উচিত। আবু বকর বলেছেন: “আমি রাসূলুল্লাহ সা: কে বলতে শুনেছি: ‘যে স্থানে আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবীর দাফন হওয়া পছন্দ করেন সেই স্থানেই তাঁর রূহ কবয করেন।’ ”[ইবনে মাজাহ : আস সুনান, ১/৫২০, হাদীস নং ১৬২৮।]
সালাতুল জানাযা:
উপরে বর্ণিত বর্ণনাকারীগণ বাদ দিয়ে, সালাতুল জানাযার রূপ সম্পর্কিত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনাকে আবু ইয়ালা আল-মুসিলি নিম্নলিখিত শব্দগুলিতে বর্ণনা করেছেন:
ثُمَّ دَعِيَ النَّاسُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلُّونَ عَلَيْهِ إِرْسَالًا: الرِّجَالُ، حَتَّى إِذَا فُرِغَ مِنْهُمْ، أُدْخِلَ النِّسَاءُ، حَتَّى إِذَا فُرِغَ مِنَ النِّسَاءِ أُدْخِلَ الصِّبْيَانُ، وَلَمْ يَؤُمَّ النَّاسَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحَدٌ.
লোকেরা তখন দল বেঁধে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর গৃহে এসে দুরূদ প্রেরণ করেন। পুরুষরা প্রবেশ করলেন এবং সালাত পেশ করলেন। তাঁরা সম্পন্ন করার পরে, মহিলারা প্রবেশ করলেন এবং সালাত পেশ করলেন। এদের সম্পন্ন করার পরে, বাচ্চারা প্রবেশ করে সালাত পেশ করে। রাসুলুল্লাহ সাঃ এর উপর যে সালাত আদায় করা হয়েছিল, তার ইমামতি কেউ করেননি এবং
فَدُفِنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ أَوْسَطِ اللَّيْلِ لَيْلَةَ الْأَرْبِعَاءِ.
বুধবার মধ্যরাতে তাকে দাফন করা হয়েছে। [ আবু ইয়ালা : আল মুসনাদ, ১/৩১, হাদীস নং ২২]
সমর্থনকারী বিবরণী:
ইমাম মালিক রহ:
পূর্ববর্তী পৃষ্ঠাগুলিতে আমরা মুহাদ্দিসীন থেকে রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর ওফাত সম্পর্কিত বর্ণনার কথা উল্লেখ করেছি। আমরা ইমাম মালিক রহিমাহুল্লাহর সমর্থনকারী বর্ণনাকেও এখানে উল্লেখ করা যথাযথ বলে মনে করি, যেখানে বেশ কয়েকটি বিষয় পরিষ্কার করা হয়েছে। অধিকন্তু, এ উপলক্ষে সাইয়্যিদুনা আবু বকর (রাঃ) এর উপস্থিতি সুস্পষ্ট প্রমাণিত। ইমাম মালিক রহিমাহুল্লাহ বলেছেন:
وَدُفِنَ يَوْمَ الثُّلاَثَاءِ. وَصَلَّى النَّاسُ عَلَيْهِ أَفْذَاذاً. لاَ يَؤُمُّهُمْ أَحَدٌ.
فَقَالَ نَاسٌ: يُدْفَنُ عِنْدَ الْمِنْبَرِ.
وَقَالَ آخَرُونَ: يُدْفَنُ بِالْبَقِيعِ.
রসুলুল্লাহ সাঃ এর সোমবার ওফাত হয় এবং মঙ্গলবার তাঁকে দাফন করা হয়। তারা স্বতন্ত্রভাবে সালাত আল জানাযা আদায় করেন এবং যে সালাত আল জানাযা হয় তার কেউ ইমামতি দেয়নি। কিছু লোক বলেছিল যে রাসুলুল্লাহ সাঃ-কে মিম্বরের কাছে সমাহিত করা উচিত। আবার কেউ কেউ বলেছিলেন যে তাকে বকিতে দাফন করা উচিত।
فَجَاءَ أَبُو بَكْرٍ الصِّدِّيقُ، فَقَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ مَا دُفِنَ نَبِيٌّ قَطُّ إِلاَّ فِي مَكَانِهِ الَّذِي تُوُفِّيَ فِيهِ ، فَحُفِرَ لَهُ فِيهِ. فَلَمَّا كَانَ عِنْدَ غَسْلِهِ، أَرَادُوا نَزْعَ قَمِيصِهِ.فَسَمِعُوا صَوْتاً يَقُولُ: لاَ تَنْزِعُوا الْقَمِيصَ. فَلَمْ يُنْزَعِ الْقَمِيصُ، وَغُسِلَ، وَهُوَ عَلَيْهِ صلى الله عليه وسلم.
এরপর সায়্যিদুনা আবু বকর (রাঃ) আসলেন, তিনি বলেন:
“আমি রাসুলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছি যে নবী যেখানে মারা গেছেন সেখানে তাকে দাফন করা উচিত।” সুতরাং সেখানে তাঁর জন্য কবর খনন করা হয়েছিল। গোসলের সময় তারা তাঁর পরিধেয় পোশাকটি সরিয়ে ফেলতে চেয়েছিল। তারা একটি কন্ঠস্বর শুনেছিল: “সাবধান – পরিধেয় পোশাকটি সরিয়ে ফেলবেন না।” সুতরাং তারা পরিধেয় পোশাকটি সরিয়ে ফেলেিন এবং তারা তা গায়ের উপর থাকা অবস্থায় গোসাল দিল। [ মালিক : আল মুওয়াত্তা, ১/২৩১, হাদীস নং ২৭]
ইতিহাসবিদ ও জীবনচরিত্র রচয়িতাগণ:
হাদীসের কিতাবে যেসব বর্ণনা এসেছে। ঠিক একই বর্ণনা পাওয়া যায় সীরাত ও তারীখের কিতাবেও। যেমন-
১-সীরাতে ইবনে হিশাম-২/৬৬৩।
২-তারীখে ইবনে জারীর তাবারী-৩/২০৫।
পাঠকগণ এই ইস্যুতে মুহাদ্দিসীননের বর্ণনার পাশাপাশি তাঁদের ব্যাখ্যাও অধ্যয়ন করেছেন। এখন, শরীয়ার আলেমের, ইতিহাসবিদের এবং জীবনচরিত্র রচয়িতাগণের বর্ণনাগুলি উল্লেখ করা হবে, যাতে পাঠকগণ এ বিষয়টি সম্পর্কে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারেন। মনে রাখবেন, উপরোক্ত বিষয়গুলি প্রমাণ করার জন্য নীচের উল্লেখগুলি সহায়তার খাতিরে সরবরাহ করা হয়েছে।
ইবনে ইসহাক (জন্ম ৭০৪ খ্রিষ্টাব্দে, রাসূলুল্লাহ সাঃ এর ওফাতের ৭২ বৎসর পরে)
তাঁর সিরাতু রাসুলিল্লাহ (সাঃ) গ্রন্থে রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর ওফাতের উপর লিখেছেন:
আল-যুহরি বলেন, এবং আবু হুরায়রা সূত্রে সাইদ আল-মুসাইয়্যির রাঃ আমাকে বলেছেন,
فَلَمَّا تُوُفِّيَ قَامَ عُمَرُ فَقَالَ: إِنَّ رِجَالًا مِنَ الْمُنَافِقِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – تُوُفِّيَ، وَإِنَّهُ وَاللَّهِ مَا مَاتَ، وَلَكِنَّهُ ذَهَبَ إِلَى رَبِّهِ كَمَا ذَهَبَ مُوسَى بْنُ عِمْرَانَ، وَاللَّهِ لَيَرْجِعَنَّ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – فَلَيَقْطَعَنَّ أَيْدِي رِجَالٍ وَأَرْجُلَهُمْ زَعَمُوا أَنَّهُ مَاتَ
রাসূলুল্লাহ সাঃ এর শেষ নিশ্বাস ত্যাগের পর হযরত উমর রাঃ উঠে দাঁড়িয়ে, ‘কোনো কোনো মুনাফিক দাবী করবে রাসূল সাঃ গতায়ু হয়েছেন। কিন্তু আল্লাহর কসম, রাসূল সাঃ মৃত নন, তিনি গেছেন তাঁর প্রভুর কাছে। যেমনটি গিয়েছিলেন মুসা ইবনে ইমরান (আঃ)। আল্লাহর ওয়াস্তে রাসূল সাঃ ফিরে আসবেন। ফিরে এসে যারা দাবি করে রাসুল সাঃ মৃত, তাদের হাত-পা কেটে দেবেন।’
وَأَقْبَلَ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ يُكَلِّمُ النَّاسَ، فَدَخَلَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – وَهُوَ مُسَجًّى فِي نَاحِيَةِ الْبَيْتِ، فَكَشَفَ عَنْ وَجْهِهِ ثُمَّ قَبَّلَهُ، وَقَالَ: بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي، طِبْتَ حَيًّا وَمَيِّتًا أَمَّا الْمَوْتَةُ الَّتِي كَتَبَ اللَّهُ عَلَيْكَ فَقَدْ ذُقْتَهَا
হযরত আবু বকর রাঃ মসজিদের দরজায় এসে দাঁড়ালেন। উমর রাঃ তখনের বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। ওদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে তিনি চলে এলেন আয়েশার রাঃ এর ঘরে রাসুল সাঃ এ কাছে। ইয়েমেনি এক চাদরে তাঁর দেহ আবৃত ছিল। তিনি কাছে গেলেন, মুখ থেকে আবরণ সরিয়ে তাঁকে চুম্বন করলেন। বললেন, ‘আপনি আমার কছে আমার মা-বাবার চেয়েও প্রিয়। আল্লাহর বিধানে আপনি মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেছেন। মৃত্যু দ্বিতীয়বার আপনার কাছে আসবে না।’
ثُمَّ رَدَّ الثَّوْبَ عَلَى وَجْهِهِ، ثُمَّ خَرَجَ وَعُمَرُ يُكَلِّمُ النَّاسَ، فَأَمَرَهُ بِالسُّكُوتِ فَأَبَى، فَأَقْبَلَ أَبُو بَكْرٍ عَلَى النَّاسِ، فَلَمَّا سَمِعَ النَّاسُ كَلَامَهُ أَقْبَلُوا عَلَيْهِ وَتَرَكُوا عُمَرَ، فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ: أَيُّهَا النَّاسُ، مَنْ كَانَ يَعْبُدُ مُحَمَّدًا فَإِنَّ مُحَمَّدًا قَدْ مَاتَ، وَمَنْ كَانَ يَعْبُدُ اللَّهَ فَإِنَّ اللَّهَ حَيٌّ لَا يَمُوتُ، ثُمَّ تَلَا هَذِهِ الْآيَةَ: {وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِنْ مَاتَ أَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ وَمَنْ يَنْقَلِبْ عَلَى عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَضُرَّ اللَّهَ شَيْئًا وَسَيَجْزِي اللَّهُ الشَّاكِرِينَ} [آل عمران: 144] . قَالَ: فَوَاللَّهِ لَكَأَنَّ النَّاسَ مَا سَمِعُوهَا إِلَّا مِنْهُ. قَالَ عُمَرُ: فَوَاللَّهِ مَا هُوَ إِلَّا إِذْ سَمِعْتُهَا فَعَقِرْتُ حَتَّى وَقَعْتُ عَلَى الْأَرْضِ مَا تَحْمِلُنِي رِجْلَايَ، وَقَدْ عَلِمْتُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – قَدْ مَاتَ
তারপর আবরণটি স্বস্থানে রেখে দিয়ে তিনি বের হয়ে এলেন। হযরত উমর রাঃ তখনো বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। হযরত আবু বকর রাঃ বললেন, ‘আস্তে উমর, একটু চুপ করুন।’ হযরত উমর রাঃ শুনলেন না। তিনি বলেই চললেন। আবু বকর রাঃ দেখলেন, তিনি চুপ করবেন না। তখন তিনি এগিয়ে গেলেন। তাঁর কথা শুনে লোকজন হযরত উমর রাঃ কে ত্যাগ করে তাঁর দিকে এগিয়ে এলো। আল্লাহর প্রতি শোকর গুজার করে, তাঁর হামদ উচ্চারণ করে তিনি বললেন, ‘হে ইনসান, কেউ যদি মুহাম্মদ সাঃ এর ইবাদত করেন, মুহাম্মদ সাঃ এখন মৃত। কেউ যদি আল্লাহর ইবাদত করেন, আল্লাহ জীবিত, আল্লাহ অমর।’ তারপর কুরআনের এই আয়াত আবৃত্তি করলেন, ‘মুহাম্মদ রাসুল ব্যতীত আর কিছুই নন। তাঁর আগে বহু রাসুল গত হয়েছে। সুতরাং তিনি যদি মারা যান অথবা নিহত হন, তবে তোমারা কি পৃষ্ঠ প্রদশর্ন করবে? এবং কেউ পৃষ্ঠ প্রদর্শণ করলে সে কখনো আল্লাহর ক্ষতি করতে পাবেব না এবং আল্লাহ শিগ্গীরি কৃতজ্ঞদের পুরস্কৃত করবেন। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৪৪) আল্লাহর কসম, তখন মনে হয়েছিল, হযরত আবু বকর রাঃ এই আয়াত আবৃত্তি করার আগে কেউ জানতই না যে রাসুল সাঃ সম্পর্কে এই আয়ত নাজিল হয়েছিল। তাঁর কাছ থেকে শুনে সেই আয়াত ফিরতে লাগল মানুষের মুখে মুখে। হযরত উমর রাঃ বললেন, ‘আল্লাহর কসম, আবু বকর রাঃ এর কণ্ঠে এই আয়াতের আবৃত্তি শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম, কাঁপতে লাগলাম, যখন জানলাম, সত্যিই রাসুল সাঃ ইন্তেকাল করেছেন, আমি মাটিতে পড়ে গেলাম।’
ইবনে হিশাম ও ইবনে জারির তাবারী রহঃ
আবু মুহাম্মাদ আবদ আল-মালিক ইবনে হিশাম আল মুয়াফিরী (মৃত্যু: ২১৩-২১৮ হিজরী) তাঁর বিখ্যাত সিরাতু ইবনি হিশাম গ্রহন্থে রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর ওফাতের উপর লিখেছেন:
وقد كان المسلمون اختلفوا في دفنه وقال قائل ندفنه في مسجده (عند المنبر) وقال قائل ندفنه مع أصحابه (بالبقيع) وقال أبو بكر إني سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ما قبض نبي الا دفن حيث يقبض ، فرفع فراش رسول الله صلى الله عليه وسلم الذي توفي عليه فحفر له تحته ثم دخل الناس على رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلون عليه أرسالا دخل الرجال حتى إذا فرغوا دخل النساء حتى إذا فرغ النساء
أدخل الصبيان ولم يؤم الناس على رسول الله صلى الله عليه وسلم أحد.
রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর দাফন সম্পর্কে মুসলমানদের মধ্যে মতভেদ ছিল। কেউ কেউ বলেছিলেন যে তাঁকে মসজিদ আল-নববীতে দাফন করা উচিত, আবার কেউ কেউ বলেছিলেন যে তাঁকে তাঁর সহচরদের সাথে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা উচিত। আবু বকর বলেছেন: “আমি রাসুলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, যে স্থানে আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবীর দাফন হওয়া পছন্দ করেন সেই স্থানেই তাঁর রূহ কবয করেন।” রাসুলুল্লাহ সাঃ এর যে বিছানায় তাঁর ওফাত হয়েছিল সেটিকে তুলে নিয়ে তার নীচে কবর খুঁড়ে দেওয়া হয়েছিল। লোকেরা তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ এর গৃহে প্রবেশ করল এবং দলে দলে নামাজ আল জানাযা আদায় করল। পুরুষরা প্রবেশ করল, এবং তারাপর মহিলাদের প্রবেশের পরে, শিশুরা প্রবেশ করল এবং রাসূলুল্লাহ সাঃ-এর উপরে কেউ ছালাত আল-জানাযা পরিচালনা করল না [সিরাতু ইবনে হিশাম খণ্ড ২ পৃষ্ঠা ৬৬৩, তারিখ ইবনে জারির তাবারি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২০৫]
ইবনে সাদ, আল-বালাজুরী এবং অন্যদের:
এ সম্পর্কে ইবনে সা’দ, আল-বালাজুরী ও অন্যান্যদের বর্ণনা নীচের পাঠ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে:
لَمَّا كُفِّنَ رَسُولُ اللَّهِ صلّى الله عليه وسلم وَوُضِعَ عَلَى سَرِيرِهِ دَخَلَ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ فَقَالَا: «السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ» ، وَمَعَهُمَا نَفَرٌ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ قَدْرَ مَا يَسَعُ الْبَيْتُ , فَسَلَّمُوا كَمَا سَلَّمَ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَصَفُّوا صُفُوفًا , لَا يَؤُمُّهُمْ عَلَيْهِ أَحَدٌ , فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَهُمَا فِي الصَّفِّ الْأَوَّلِ حِيَالَ رَسُولِ اللَّهِ صلّى الله عليه وسلم: ” اللَّهُمَّ إِنَّا نَشْهَدُ أَنْ قَدْ بَلَّغَ مَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ، وَنَصَحَ لِأُمَّتِهِ، وَجَاهَدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ حَتَّى أَعَزَّ اللَّهُ دِينَهُ، وَتَمَّتْ كَلِمَاتُهُ، فَآمَنَ بِهِ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ , فَاجْعَلْنَا يَا إِلَهَنَا مِمَّنْ يَتَّبِعُ الْقَوْلَ الَّذِي أُنْزِلَ مَعَهُ، وَاجْمَعْ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُ حَتَّى يَعْرِفَنَا وَنَعْرِفَهُ، فَإِنَّهُ كَانَ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفًا رَحِيمًا , لَا نَبْتَغِي بِالْإِيمَانِ بَدَلًا، وَلَا نَشْتَرِي بِهِ ثَمَنًا أَبَدًا , فَيَقُولُ النَّاسُ: آمِينَ آمِينَ ثُمَّ يَخْرُجُونَ وَيَدْخُلُ آخَرُونَ، حَتَّى صَلَّوْا عَلَيْهِ , الرِّجَالُ ثُمَّ النِّسَاءُ ثُمَّ الصِّبْيَانُ , فَلَمَّا فَرَغُوا مِنَ الصَّلَاةِ تَكَلَّمُوا فِي مَوْضِعِ قَبْرِهِ ” …الخ
যখন রাসুলুল্লাহ সাঃ কে কাফন পরিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হল, তখন আবু বকর ও উমর (রাঃ) ঘরে প্রবেশ করলেন এবং বললেনঃ হে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার উপর আল্লাহর রহমত ও দোয়া করুন। তাঁদের সাথে মুহাজিরিনের একটি দল ছিল যারা ঘরটি পরিপূর্ণ করেছিল। আবু বকর ও উমর (রাঃ) যেমনভাবে সালাম করলেন তেমনি তাঁরা সালাম করলেন। তারা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল এবং কেউ তাদের নেতৃত্ব দেয় নি। আবু বকর এবং উমর (রাঃ) প্রথম সারিতে ছিলেন, তারা বলেছেন: “হে আল্লাহ, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে রাসূলের উপরে যা কিছু নাযিল হয়েছিল, তিনি তা জানিয়েছিলেন এবং তিনি তাঁর জাতির জন্য শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন এবং তিনি আল্লাহ তায়ালার পথে অগ্রসর হন যতক্ষণ না আল্লাহ তায়ালা তাঁর ধর্মকে সম্মান না করেছেন।” লোকেরা বলছিল: “আমিন, আমিন।” তারপর তাঁরা চলে গেলেন এবং অন্যরা প্রবেশ করল। পুরুষরা প্রথমে ছালাত আল জানাযা, পরে মহিলাদের এবং অবশেষে বাচ্চাদের নামায আদায় করল। তারা যখন সবাই সালাহ শেষ করেল, তারা কবরের স্থান সম্পর্কে কথা বলছিল। [(ক) ইবনে সা’দ: আত তাবাকাত, ২/২৯০। (খ) কিতাব আনসাব আল আশরাফ ১/৫৭৪। (গ) ইবনে কাছির : আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৫/২৬৫। (ঘ) সিরাহ হালাবিয়াহ লিআলী ইবনে ইবরাহীম, ৩/৩৯৪]
শরীয়াহ ও ইতিহাসের অন্যান্য আলেমগণ উল্লেখ করেছেন যে নামাযের জানাযা একই পদ্ধতিতে আদায় করা হয়েছিল। তাদের সমস্ত পাঠ্য উদ্ধৃতি আনলে অযথা এই গ্রন্থটি দীর্ঘায়িত করবে, সুতরাং কেবল উল্লেখ যোগ্য অংশ গুলি উল্লেখ করা হয়েছিল।
বর্ণনার সারসংক্ষেপ:
সংক্ষেপে হাদিসের পন্ডিতদের মতে এবং সুপরিচিত ও গ্রহণযোগ্য বর্ণনাসমূহ থেকে এটি প্রমাণিত হয়েছে, পাশাপাশি শরিয়তের আলেম ও জীবনচরিত্র রচয়িতাগণের সহায়ক বর্ণনার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে; যে সাইয়্যিদুনা আবু বকর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর ওফাতের সময় উপস্থিত ছিলেন। এ উপলক্ষে তিনি শরিয়তের বিভিন্ন আইন সম্পর্কে সহয়তা প্রদান করেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ:
•১) তিনি রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর মৃত্যু যাচাই করেছেন।
•২) তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর নিকটাত্মীয়রা গোসলের অনুষ্ঠানের সর্বাধিক যোগ্য।
•৩) তিনি ছালাত আল জানাযা নিয়ম ও পদ্ধতি উল্লেখ করেছিলেন।
•৪) তিনি হাদীসের আলোকে রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর সমাধিস্থানের স্থান সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দিয়ে ছিলেন।
উপরোক্ত সকল বিষয়ে সাইয়্যিদুনা আবু বকর (রাঃ) যা কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তার সবই সম্পাদিত হয়েছিল।
আরও সমর্থনকারী দৃষ্টান্ত:
আমরা হাদিসের বই থেকে আরও সমর্থনকারী উদাহরণ উপস্থাপনকে সঠিক মনে করি। তবে আলোচনাকে দীর্ঘায়িত করা এড়াতে আমরা আল-মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাহের একটি সমর্থনমূলক বর্ণনা উপস্থাপন করছি। ইবনে আবী শায়বাহ রহিমাহুল্লাহ তাঁর একটি এসনাদ সহকারে লিপিবদ্ধ করেছেন:
أَنَّهُمْ شَكُّوا فِي قَبْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيْنَ يَدْفِنُونَهُ؟ فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِنَّ النَّبِيَّ لَا يُحَوَّلُ عَنْ مَكَانِهِ , يُدْفَنُ حَيْثُ يَمُوتُ» فَنَحَّوْا فِرَاشَهُ فَحَفَرُوا لَهُ مَوْضِعَ فِرَاشِهِ
তাঁরা রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সমাধি সম্পর্কে তাদের অভিযোগ উল্লেখ করেছে: “তারা কোথায় তাকে দাফন করবে?” আবু বকর বলেছেন: “আমি রাসুলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, ‘একজন নবী কে সরানো হয় না তাঁর বাসস্থান থেকে, সেখানেই তাকে দাফন করা হয় যেখানে তার ওফাত হয়েছে ।’ ” সুতরাং, তার বিছানা যে জায়গাটিতে ছিল, সেখানটায় খনন করা হয়েছিল। [ ইবনু আবী শায়বা : আল-মুসান্নাফ, ইবনে আবী শায়বা, ৭/৪২৭, হাদীস নং ৩৭০২২।]
মূল্যায়নসূচক টীকা:
যে আপত্তিজনক বর্ণনাটি সমালোচকরা অনুসন্ধান করেছেন এবং উপস্থাপন করেছেন তা একই লেখক (ইবনে আবী শায়বাহ রহিমাহুল্লাহ) এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং একই রচনায় এটিও পাওয়া যায়। আমরাও ইবনে আবী শায়বাহের অনুরূপ বর্ণনার উল্লেখ করেছি এবং তাও একই কাজ থেকে।
তবে উভয় বর্ণনার বিষয়ই পরস্পরবিরোধী। কারণ এই বর্ণনায় (উপরে আমাদের দ্বারা বর্ণিত) স্পষ্ট করে দিয়েছে যে রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর ওফাত সময় সাইয়্যিদুনা আবু বকর (রাঃ) উপস্থিত ছিলেন এবং দাফন করার স্থানটি নির্দিষ্ট করা এবং তিনি যে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন সে অনুসারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল , যা পরবর্তী সময়ে কার্যকর হয়েছিল।
সুতরাং, সায়্যিদুনা আবু বকর (রাঃ) এর বিরুদ্ধে যে আপত্তি উত্থাপন করা হয়েছিল যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর গোসল, কাফন এবং সালাত আল জানাযার জন্য উপস্থিত ছিলেন না তা মনগড়া এবং কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। সুপরিচিত ও গ্রহণযোগ্য বর্ণনার সাথে তুলনা করার সময় প্রবক্তার যে বর্ণনাটি উপস্থাপন করেছেন তারও কোন ভিত্তি নেই এবং পরেরটি শাহেদ কে আখ্যায়িত করা হবে। (এমন বর্ণনা যা আরও নির্ভরযোগ্য বর্ণনার সাথে বিরোধী।)
একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি:
হাদীসের বিদ্বানদের মতে, এমন একটি নীতি রয়েছে যা এরকম একটি উপলক্ষে প্রয়োগ করা প্রয়োজন:
الثقة إذا شذ لا يقبل ما شذ فيه
যখন একজন নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী কিছু বিরোধপূর্ণ বর্ণনা করে, যা কিছু বিরোধী তা তার কাছ থেকে গৃহীত হয় না।
যদি কোনও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী থাকে এবং তিনি সুপরিচিত বর্ণনার তুলনায় বিরল বিবরণ দেন – তবে তা গ্রহণ করা হয় না। সুতরাং, এই নীতির আলোকে, শাহেদ বর্ণনাকে গ্রহণযোগ্যতার যোগ্য নয় কারণ এটি অন্যান্য সহীহ ও সুপরিচিত বর্ণনার বিরোধী, যা নিয়ে তর্ক করা যায় না।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি:
এই মুহূর্তে আর একটি নীতির দিকে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন। রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর ওফাতের সময় যে সাহাবা উপস্থিত ছিলেন, যেমন উম্মুল মু’মিনিন সায়্যিদাহ আয়েশা, সালিম ইবনে উবাইদ আল আশজাই এবং সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ), তারা বর্ণনা করেন যে সায়্যিদুনা আবু বকর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাঃ এর গোসল, কাফন ও দাফনের সময় সায়্যিদুনা উমর (রাঃ) সহ অন্য সাহাবাদের মতো উপস্থিত ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, এই কাজগুলি সায়্যিদুনা আবু বকর (রাঃ) এর পরামর্শ অনুসারে পরিচালিত হয়েছিল, যেমনটি আমরা আগে পড়েছি। সমালোচনার বর্ণনাটি একজন তাবিয়ী থেকে বর্ণিত। এই হলো উরওয়ার বক্তব্য (যে সায়্যিদুনা আবু বকর এবং সায়িদুনা উমর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সা: এর দাফনের জন্য উপস্থিত ছিলেন না)।
সুতরাং, ঘটনার সাথে জড়িতদের বক্তব্য এবং তাবিয়ীর বক্তব্যের মধ্যে একটি বৈপরীত্য রয়েছে।
এই জাতীয় পরিস্থিতিতে, পণ্ডিতগণ প্রয়োগ করা এই নীতিটি ব্যাখ্যা করেন:
وقول الصحابي رضي الله عنه مقدم على قول التابعي
একজন সাহাবীর বক্তব্যকে একজন তাবিয়ীর বক্তব্যের চেয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। [ ইবনে কাছির : আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া খণ্ড ৫/২৩৬]
উপসংহারটি হলো রাসুলুল্লাহ সাঃ এর ওফাতের সাথে সম্পর্কিত ঘটনাটিতে, অংশগ্রহণকারী সাহাবা (রাঃ)গণ প্রত্যক্ষদর্শীর ভূমিকায় ছিলেন, যদিও ওই সময়ে তাবিয়ীগণ অনুপস্থিত ছিলেন এবং তিনি ঘটনাটি কেবল যা শুনেছিলেন তাই বর্ণনা করেছেন।
অতএব, এই ক্ষেত্রে, উপরিউক্ত নীতি অনুসারে উপস্থিত সাহাবা (রাঃ) যে ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছেন তা গ্রহণ করা হবে এবং তার পক্ষে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং তাবিয়ীর বক্তব্য বাদ দেওয়া হবে এবং গ্রহণ করা হবেনা।
তারপরেও, এই বিষয়টির দিকে আমাদের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন; এখনো পর্যন্ত আমাদের জানামতে, উরওয়ার বক্তব্যটির পক্ষে সমর্থনকারী কোন বিবরণ নেই। যখন সমর্থনকারী বিবরণ পাওয়া যায় না তখন গ্রহণযোগ্যতার হিসাবে উপযুক্ত নয়, এই প্রকৃতির বিবরণ গ্রহণ করার পক্ষে এটি যথেষ্ট।
আলোচনার একটি সারসংক্ষেপ:
বিখ্যাত আলেম আবু আল-মুজাফফর আল-আসফারা’ইনি (মৃত্যু ৪৭১ হিজরী) তাঁর বিখ্যাত রচনা আল-তাবসির ফী-আল-দ্বীন, পৃষ্ঠা ২৫-২৬। রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর ওফাতের বিবরণ উল্লেখ করেছেন। আসফারা’ইনী বলেছেন যে রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর ইন্তেকালে, রাসূলুল্লাহ সাঃ-এর দাফনের জায়গা এবং রাসুলুল্লাহ সাঃ এর খলিফা সম্পর্কে সাহাবা (রাঃ) -এর মধ্যে সাময়িক মতপার্থক্য দেখা দেয়, এ সমস্ত বিষয় সৈয়্যদুনা আবু বকর (রাঃ) এর আশীর্বাদে সমাধান করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে, তিনি নিম্নলিখিত লেখাগুলিতে এটি উল্লেখ করেছেন:
১। এই উপলক্ষে রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর ইন্তেকাল সম্পর্কিত উপস্থিতদের মধ্যে মতভেদ ছিল:
وارتفع هَذَا الْخلاف ببركات أبي بكر الصّديق رَضِي الله عَنهُ.
এই মতপার্থক্যটি আল্লাহ, আবু বকর (রাঃ) এর নেয়ামতের মাধ্যমে সমাধান করেছিলেন।
অধিকন্তু, আবু বকর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর ওফাত যাচাই করেছেন এবং তাতে বিভ্রান্তির অবসান ঘটে।
২। দাফনের স্থান সম্পর্কে তখন মতভেদ ছিল:
فَزَالَ هَذَا الْخلاف ببركة الصّديق رضي الله عنه.
এই মতবিরোধটি আবু বকর (রাঃ) এর আশীর্বাদে মুছে ফেলা হয়েছিল (তিনি দাফনের স্থান নির্ধারণ করেছিলেন)।
৩। একইভাবে, রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর ইন্তেকালের পর খেলাফত সম্পর্কে মুহাজিরীন ও আনসারদের মধ্যে মতভেদ হয়ে ছিল এবং:
وَاتَّفَقُوا على قَوْله فَزَالَ هَذَا الْخلاف أَيْضا ببركة الصّديق.
সাহাবা (রাঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ) এর বক্তব্যের উপর একমত হয়েছিলেন, (তিনি হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন: ‘নেতৃবৃন্দ কুরাইশ থেকে আগত,’) সুতরাং আবু বকর (রাঃ) এর আশীর্বাদেও এই মতপার্থক্য দূর করা হয়েছিল।
[ আসফারাইনী : কিতাবুত তাবসীর ফি দ্বীনী ওয়াত তামিযীল ফিরকাতিন নাজিয়াতি আনিল ফিরাকিল হালিকীন, ১/১৯]
সংক্ষেপে, মতামতের যে মতভেদ দেখা দেয়, সেগুলি সায়্যিদুনা আবু বকর (রাঃ) এর তত্বাবধান এর দ্বারা এবং তাঁর আশির্বাদের মাধ্যমে এই বিষয়গুলিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা তাঁর উপর সন্তুষ্ট থাকুন।
মন্তব্য মূল্যায়ন:
এটা লক্ষ্য করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে ইসলামে খিলাফাত (এবং ইমামাত) এর একটি মহান মর্যাদা রয়েছে এবং দ্বীনের চিরস্থায়ীত্ব এটির উপর নির্ভর করে। দ্বীন হলো সেই নির্দিষ্ট সত্তা, যার জন্য আল্লাহ তায়ালা বিশেষত তাঁর রসুল সাঃ কে প্রেরণ করেছেন। এটি কোনও সাধারণ কাজ নয়।
যদি খিলাফতের দায়িত্ব পালনের জন্য, সায়্যিদুনা আবু বকর (রাঃ), সায়্যিদুনা উমর (রাঃ) এবং অন্যরা বনু সাইদা গোত্রের নিকট যান, তখন তা ছিল ইসলামের জন্য জরুরী কাজ।
একসাথে এটি একটি বাস্তবতাও যে খিলাফতের বিষয়টি নির্ধারিত হওয়ার পরে সায়্যিদুনা আবু বকর (রাঃ) এবং সায়্যিদুনা উমর (রাঃ) কাফন ও দাফন ইত্যাদিতে অংশ নিয়েছিলেন যেমন পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং, এই মুহূর্তে আপত্তি উত্থাপন করার কোন সুযোগ নেই।
পাল্টা যুক্তি:
প্রদত্ত সমালোচনার প্রতিক্রিয়াটি আমাদের গ্রন্থগুলি থেকে, সুপরিচিত এবং খাঁটি বর্ণনার আলোকে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং এর জন্য সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য। বিতর্কের বিধানটি হ’ল কোনও ব্যক্তি ব্যবহার করে সমালোচনা এবং আপত্তির প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন যা তাঁর মতে গৃহীত হয়। সুতরাং, এই বিধান অনুসারে, আমরা উত্তরটি সম্পূর্ণ করেছি।
এই বিষয়টি আরও জোরালোভাবে বুঝার জন্য, আমরা শিয়া বইয়ের প্রতিক্রিয়াগুলি তাদের নিস্তব্ধ করার জন্য উল্লেখ করেছি। তাদের গ্রন্থে বলা হয়েছে যে সায়্যিদুনা আবু বকর এবং সায়্যিদুনা উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সমাধিতে উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা ও অন্যান্য সাহাবা (রাঃ) এবং উপস্থিত সাহাবাদের কেউই এই ফজিলত থেকে বঞ্চিত ছিলেন না। এতে সকলেই অংশ নিয়েছিলেন।
এই বর্ণনা শিয়া বইয়ে খুব বিশদভাবে পাওয়া যায়। যাইহোক, তাদের বই থেকে তিনটি উল্লেখ করাই যথেষ্ট যাতে এগুলিকে ব্যবহার করে তাদের চুপ করানো যায়।
নীচে দেওয়া বিবরণ থেকে, এটি প্রমাণিত হবে যে সায়্যিদুনা আবু বকর এবং সায়্যিদুনা উমর (রাঃ) রসুলুল্লাহ (দ) এর জানাযায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং অন্যান্য সাহাবা (রাঃ) উপস্থিত ছিলেন।
১। সুলাইম ইবনে কায়েস আল-হিলালি বলেছেন,
ثم أدخل عشرة من المهاجرين وعشرة من الأنصار فكانوا يدخلون ويدعون ويخرجون حتى لم يبق أحد شهد من المهاجرين والأنصار إلا صلى عليه
অতঃপর মুহাজিরীনের দশজন এবং আনসারের দশজন ভিতরে প্রবেশ করলেন, তাঁরা ভিতরে প্রার্থনা করলেন এবং পরে চলে গেলেন। তাঁদের এ পদ্ধতি অব্যাহত রইল যতক্ষণ না মুহাজিরীন ও আনসারদের কেউই বাদ রইল, তবে তাঁরা তাঁর উপর দরূদ প্রেরণ করলেন। [কিতাব সুলাইম ইবনে কায়েস আল-হিলালী পৃষ্ঠা ৭০]
২। ইমাম মুহাম্মাদ আল-বাকির রহিমাহুল্লাহ বলেছেন:
لما قبض النبي صلى الله عليه وسلم صلت عليه الملائكة والمهاجرون والأنصار فوجا فوجا
রাসূলুল্লাহ সাঃ যখন ইন্তেকাল করেন, তখন ফেরেশতাগণ, মুহাজিরীন ও আনসার দলে দলে তাঁর উপর দরুদ প্রেরণ করলেন। (উসূলুল কাফি পৃষ্ঠা ২৮৬)
৩। ইমাম মুহাম্মাদ আল-বাকির রহিমাহুল্লাহ বলেছেন,
রসুলুল্লাহ সাঃ এর জানাযার রূপটি ছিল দশজন লোক ঘরে প্রবেশ করেছেন এবং তাঁরা ইমাম ছাড়াই সালাত আদায় করছেন। এটি সোমবার, সোমবার সন্ধ্যায় এবং মঙ্গলবার, সন্ধ্যা অবধি অব্যাহত ছিল। মদীনা ও মদিনার উপকণ্ঠের সমস্ত শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক, পুরুষ ও মহিলা সকলেই এভাবে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর উপর সালাত আদায় পড়েছেন। (হায়াতুল কুলূব, খণ্ড ২ পৃষ্ঠা ৮৬৬)
উপরিউক্ত সংক্ষিপ্ত সারটি হ’ল সায়্যিদুনা আলী (কঃ) মুহাজিরিনের দশজনকে এবং আনসারদের দশজনকে ঘরে প্রবেশ করে জানাযার অনুমতি দিতেন এবং তাঁরা বেরিয়ে আসতেন। এই ব্যবস্থা অব্যাহত ছিল যতক্ষণ না মুহাজিরিন ও আনসারদের মধ্যে সবাই যারা রসুলুল্লাহ সাঃ এর উপর সালাত আদায় করেছেন।
উপসংহারে, শিয়াগণ তাদের ইমামগণ ও তাদের মুজতাহিদীন থেকে বর্ণিত নির্ভরযোগ্য বর্ণনাগুলি এটিকে পরিস্কারভাবে স্পষ্ট করে দেয় যে এই উপলক্ষে সমস্ত মুহাজিরিন, আনসার ও সমগ্র মদীনাবাসী রসুলুল্লাহ সাঃ এর সালাত আল-জানাযায় অংশ নিয়েছিলেন কেউই বাদ ছিলেন না। এই পুণ্য থেকে বঞ্চিত হননি। সবার আগে ছিলেন হযরত আবু বকর এবং হযরত উমর (রাঃ) । এটা নিশ্চিত যে তাঁরা রসুলুল্লাহ সাঃ এর জানাযায় অংশ নিয়েছিলেন কারণ এই তথ্যসূত্রগুলিতে, কোনও ধরণের বর্জনের উল্লেখ নেই। এই বাস্তবতা থাকা সত্ত্বেও, যদি কোনও ব্যক্তি আপত্তিতে থাকে, তবে এটি প্রতিবন্ধকতা, অজ্ঞতা এবং জেদ, যেটার কোনও প্রতিকার নেই।
শেষ কথা:
পাঠকদের অবহিত করা উপযুক্ত মনে করি যে, আমরা আমাদের কাজের মধ্যে যে আপত্তির জবাবটি উল্লেখ করেছি তা হলো সিরাহ সায়্যিদুনা আলী গ্রন্থের, রাসুলুল্লাহ সাঃ-এর ওফাত নিয়ে আলোচনা অধ্যায় থেকে। তবে যাতে পাঠকবৃন্দ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, জ্ঞান বৃদ্ধি পায় এবং বিভ্রান্তিতে যেন না পড়েন, সে জন্য এটি এখানে বিশদভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
—-শেষ—–