নবুওয়াতপ্রাপ্তির প্রাক্কালে মুহাম্মদ (সা)-এর অবস্থা কিছু ভিন্ন হয়ে গেল। নির্জনতা ভাল লাগত। লোক-কোলাহলে অস্থিরতা বোধ করতেন। অন্তরে এক ধরনের শূন্যতা ও অপূর্ণতাবোধ তাঁকে আকুল করে রাখতো । তাই মাঝে মাঝে লোকালয় ছেড়ে দূরে মক্কার উপকন্ঠে জনবিরল পার্বত্য উপত্যকায় বা বিস্তীর্ণ সমভূমির দিকে তিনি চলে যেতেন। কোন গাছ বা পাথরের পাশ দিয়ে যখন তিনি অতিক্রম করতেন, সেগুলো তাঁকে সালাম দিত। আওয়াজ হতো- আস্সালামু আলাইকুম ইয়া রাসূলাল্লাহ। কোথা থেকে এ আওয়াজ ও সালাম আসে, কে দেয় দেখার জন্য তিনি চারদিকে চোখ ফেরাতেন, খুঁজতেন। কিন্তু শুধু গাছ বা পাথর ব্যতীত কিছুই তাঁর চোখে পড়ত না।
এভাবে যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা হতো তিনি দাঁড়িয়ে থাকতেন। চারদিকে দেখতেন এবং শুনতেন। তারপর এক রমযান মাসে যখন তিনি হেরার গুহায় ধ্যানে মগ্ন ছিলেন, আল্লাহ্ তা’আলার তরফ থেকে সম্মান ও মর্যদার বাণী ওহী নিয়ে জিবরাঈল আমীন (আ) আসলেন তাঁর কাছে। (ইব্ন ইসহাক)
★ বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনা মতে- রাসূল (সা) নিজেই ইরশাদ করেনঃ মক্কায় একটি পাথরকে আমার চেনা আছে, ওহী আসার আগে সেটি আমায় সালাম দিত। হাদীসের কোন গ্রন্থে এরুপ আছে যে, সেই পাথরটি ছিল হাজারে আসওয়াদ। (সীরাতে ইব্ন ইসহাক)
★ রাসূল (সা)-এর ক্ষেত্রে আল্লাহ্ পাক যেমন একটি খেজুর গাছের কান্ডকে ক্রন্দন করার ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন তেমনি গাছ ও পাথরকে কথা বলার ক্ষমতা দান করেছিলেন। তাতে বোঝা যায়, জিন ও ইনসানের উপর তখনও তাঁর নবুওয়াত ও রেসালাত প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু সৃষ্টি জগতের অন্য সকল কিছুর উপরই তা প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল। তারা সবাই রাসূল (সা)-এর উপর ঈমান এনেছিল এবং তাকে ভালবাসা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছিল। (ইব্ন ইসহাক)
রাসূল (সা)-এর নবুওয়াতের জীবনে পরবর্তীকালে এরুপ আরও বহু ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল।
★ হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথে যখন মক্কায় ছিলাম, তখন একদিন তিনি আমাদের নিয়ে শহরের একদিকে গেলেন। তাঁর সামনে যে বৃক্ষ, টিলা বা পাথর পড়ত সেই তাঁকে ‘আস্সাললামু আলাইকুম ইয়া রাসূলুল্লাহ্’ বলত। আমি নিজে তা শুনতাম। (বায়হাকী ও তিবরানী)
★ আবূ নায়ীম কর্তৃক বণিত অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে- রাসূল (সা) ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম’ বলে জওয়াব দিতেন। জিবরাঈল (আঃ) তাঁকে এ সালাম শিক্ষা দিয়েছিলেন। (খাসায়েসুল কোবরা)
তথ্যসূত্র
রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর জীবনে আল্লাহর কুদরত ও রুহানিয়াত (লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল গফুর হামিদী, প্রকাশকঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ)