রাশেদ। এলাকার নামকরা মাস্তান। এমন কোনো কুকর্ম নেই যা তার দ্বারা সংগঠিত হয় নি। এলাকাবাসী তার পাপাচারে অতিষ্ঠ।
রাতে গান শুনলে তার ঘুমই আসত না। প্রতিদিনের মতো রাতে হেডফোন কানে লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পরল রাশেদ। ঘুমিয়ে যাওয়ার পর পরই এমন একটি ভয়ংকর স্বপ্ন দেখল রাশেদ, যা দেখার জন্য সে হয়তো কোনোদিনও প্রস্তুত ছিল না।
স্বপ্নটি পরদিন এলাকার ইমাম সাহেবের নিকট ঠিক এভাবে বর্ণনা করল,
“আমি যখন ঘুমিয়ে পরলাম তখন স্বপ্নে দেখলাম একটি নির্জন জঙ্গল দিয়ে একা একা হাঁটছি। পিছন থেকে একটি বাঘ আমাকে অনুসরণ করছে। বাঘ দেখলে কি অবস্থা হবে আমরা সবাই মোটামুটি আন্দাজ করতে পারি।
যাই হোক রাশেদ বলছে, তারপর আমি দৌড়াতে লাগলাম। দৌড়াতে দৌড়াতে একটি গর্তে সামনে এসে আটকে পরলাম। গর্তে একটি সাপ ফনা তুলে আমাকে দংশন করার জন্য যেন একদম প্রস্তুতি নিয়ে আছে আগে থেকে।
আমি আর কিছু ভাবতে পারছিলাম না কি করব! হঠাৎ ওপরে নজর পরতেই একটি গাছের ডাল দেখলাম এবং ঝুলে পরলাম ডালে। কিন্তু সেখানেও নিস্তার নেই। একটি সাদা একটি কালো ইদুর বসে বসে ডালটি কেটে ফেলছে।
আমি ভাবতে পারছিলাম না কি করব এখন, একদম নিরুপায় ছিলাম আমি।
রাশেদ বলছে, হঠাৎ আমার চোখ পরল একটি মৌচাকের দিকে। মধু খাওয়ায় আমি এতটাই বিভোর হয়ে পরেছিলাম যে, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম নিচে পরে গেলেই মৃত্যু অনিবার্য।
আমি লোভ-লালসায় মগ্ন থাকলেও ইঁদুরগুলো তাদের কাজ চালিয়ে যেতে লাগল। এক সময় তারা ডালটিকে কেটে ফেলল, আমি নিচে পরে গেলাম। বাঘটি তো অপেক্ষা করছিল এই সময়টার। সে আমাকে ছিড়ে ছিড়ে খেয়ে ফেলল।
আর বাকি অংশগুলো সাপটি গলাধঃকরণ করল। আহ! কি কঠিন মূহুর্ত ছিল তখন। ঘুম ভেঙে গেল কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। ঢক ঢক করে পানি খেয়ে নিলাম এক গ্লাস। দেখলাম শরীর ঘামছে।” এই বলা রাশেদ তার স্বপ্নের বর্ণনা শেষ করল।”
এবার ইমাম সাহেব তাকে বুঝাতে লাগলেন। “দেখ রাশেদ! তুমি যে জঙ্গলে হাটছিলে এটা মূলত আমাদের দুনিয়া যাতে আমরা বিচরণশীল। যেই বাঘটি তুমি দেখেছিলে সেটি হচ্ছে আমাদের মৃত্যু, যা সদা সর্বদা আমাদেরকে অনুসরণ করছে।
তারপর যে গর্তটি তুমি দেখেছিলে সেটি হচ্ছে আমাদের কবর। যেখানে আমাদের সবাইকে একা থাকতে হবে। যে সাপটি তুমি দেখেছিলে সেটা আমাদের মন্দ আমল, যা এই সাপ-বিচ্ছুর রুপ ধারণ করে আমাদেরকে দংশন করবে।
যে ইঁদুর দুটি ডাল কাটছিল সেগুলো হলো দিন এবং রাত। যা আমাদের জীবন হতে সময়গুলোকে কেটে দিচ্ছে। আর বাকি রইল মৌচাক। এটা হলো আমাদের টাকা, পয়সা। যেগুলোর লোভে পরে আমরা মৃত্যুকে ভুলে গেছি।
হায়! আফসোস।” রাশেদ ভয়ে কাঁপতে শুরু করল। ভাবল কি হবে আমার, আমি তো গুণাহের মাঝেই জীবন অতিবাহিত করছি। সে বলল “হুজুর আমাকে কি আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করবেন?”
হুজুর বললেন হতাশ হয়ো না, আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। তখনই রাশেদ তওবা করে নিল, এবং নেক আমল দ্বারা নিজেকে সাজিয়ে নিল। গুণাহ করা ছেড়ে দিল।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকেও নেককার পরহেজগার জীবন দান করুন। আমিন।
✍স্বাধীন আহমেদ।
[রাশেদ চরিত্র টি নিয়ে আরো লেখার চিন্তাভাবনা আছে। ইনশাআল্লাহ ]