♥রজব মাসের আদব♥
=====📝মুহাম্মদ আলী
إِنَّ عِدَّةَ ٱلشُّهُورِ عِندَ ٱللَّهِ ٱثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِى كِتَٰبِ ٱللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ مِنْهَآ أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَٰلِكَ ٱلدِّينُ ٱلْقَيِّمُ فَلَا تَظْلِمُوا۟ فِيهِنَّ أَنفُسَكُمْ وَقَٰتِلُوا۟ ٱلْمُشْرِكِينَ كَآفَّةً كَمَا يُقَٰتِلُونَكُمْ كَآفَّةً وَٱعْلَمُوٓا۟ أَنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلْمُتَّقِينَ
অর্থঃ নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না। আর মুশরিকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকীনদের সাথে রয়েছেন। ( সূরা তাওবা আয়াত: ৩৬) ( বিস্তারিত জানতে তাফসীর পড়ুন)
إِنَّ عِدَّةَ ٱلشُّهُورِ عِندَ ٱللَّهِ ٱثْنَا عَشَرَ شَهْرًا
“নিশ্চয় আল্লাহর নিকট মাস-গণনার মাস হল বারটি।” এখানে উল্লেখিত عِدَّةَ অর্থ গণনা। شُّهُورِ হল شَهْر- এর বহুবচন। অর্থাৎ, মাস। বাক্যের সারমর্ম হল, আল্লাহর কাছে মাসে সংখ্যা বারটি নির্ধারিত, এতে কম বেশী করার কারো ক্ষমতা নেই। অতঃপর فِى كِتَٰبِ ٱللَّه বলে স্পষ্ট করা হয় যে, বিষয়টি রোজে আযল অর্থাৎ, সৃষ্টির প্রথম দিনই লাওহে-মাহফুযে লিখত রয়েছে। এর পর يَوْمَ خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ ইঙ্গিত করা হয় যে, রোজে আযলে এ ব্যপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও মাসগুলোর ধারাবাহিকতা নির্ধারিত হয়।
আসমান ও যমীনের সৃষ্টি পরবর্তী মুহূর্তে। তার পর বলা হয়- مِنْهَآ أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ অর্থাৎ তন্মধ্যে চার মাস হল নিষিদ্ধ। যেহেতু এ চার মাস যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রক্তপাত হারাম। অর্থ হল, এই চারটি মাস সম্মানী, যেহেতু মাসগুলো অতীব বরকতময়। এতে এবাদতের সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। প্রথম অর্থ মতে যে হুকুম, তা ইসলামী শরিয়তে রহিত। তবে দ্বিতীয় অর্থ মতে আদব ও সম্মান প্রদর্শন এবং এবাদতে যত্নবান হওয়ার হুকুমটি ইসলামে বাকী রয়েছে।
বিদায় হজ্বের মাসে মিনা প্রান্তরে প্রদত্ত খোতবায় নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম) সম্মানিত মাসগুলোকে চিহ্নিত করে বলেন, ‘তিনটি মাস হল ধারাবাহিক — যিলকদ, যিলহজ্ব ও মহররম, অপরটি হল রজব। তবে রজব সম্পর্কে দ্বীমত রয়েছে। (জাহিলিয়াত যুগে) কতিপয় গোত্রের মতে রজব হল রমজান। আর মুযার গোত্রের ধারণামতে রজব হল জামাদিউস-সানী ও শা’বানের মধ্যবর্তী মাসটি। তাই নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম) খোতবায় “মুযার গোত্রের” রজব বলে বিষয়টি পরিস্কার করেদেন।
ذَٰلِكَ ٱلدِّينُ ٱلْقَيِّمُ
“এটিই হল সুপ্রতিষ্ঠত বিধান।” অর্থাৎ, মাসগুলোর ধারাবাহিকতা নির্ধারণ ও সম্মানিত মাসগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হুকুম-আহকামকে সৃষ্টির প্রথম পর্বের এলাহী নিয়মের সাথে সঙ্গতিশীল রখাই হল দ্বীনে-মুসতাকীম। এতে কোন মানুষের কম- বেশী কিংবা পরিবর্তন পরিবর্ধন করার অসুস্থ বিবেক ও মন্দ স্বভাবের আলামত। ُ فَلَا تَظْلِمُوا۟ فِيهِنَّ أَنفُسَكُم “সুতরাং তোমরা এ মাসগুলোতে নিজেদের প্রতি অবিচার করো না।” অর্থাৎ, এ পবিত্র মাসগুলোর যথাযথ আদব রক্ষা না করে এবং এবাদত বন্দেগীতে অলস থেকে নিজেদের ক্ষতি করো না।
ইমা জাসসাস (রহঃ) ‘আহকামুল কোরআন’ গ্রন্থে বলেন, কোরআনের এ বাক্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, এ মাসগুলোর এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যার ফলে এতে এবাদত করা হলে বাকী মাসগুলোতেও এবাদতের তাওফীক সাহস লাভ করা যায়। অনুরূপ কেউ এ মাসগুলোতেও পাপাচার থেকে নিজকে দূরে রাখতে পারলে বছরের বাকী মাসগুলোতেও পাপাচার থেকে দূরে থাকা সহজ হয়। তাই এ সুযোগের সদ্ব্যবহার থেকে বিরত থাকা খুবই অপূরণীয় ক্ষতি।
(তাফসীর মা’আরেফুল কোরআন)।